তোমাকে চাই পর্ব ৯+১০

 তোমাকে চাই পর্ব ৯+১০
লেখনীতে Alisha Rahman Fiza

অধরা বাসার বাহিরে পা রাখতেই কেউ তার হাত পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অধরা মনটা আনচান করে উঠলো।সে পিছন ফিরে দেখলো রক্তিম দাড়িয়ে আছে তার হাত ধরে অধরা এবার রেগে গিয়ে বললো,
~আপনি তো দেখছি বড্ড অসহ্য লোক এভাবে হাত ধরে দাড়িয়ে আছেন কেন?
রক্তিম বাঁকা হেসে বললো,
~আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই।
অধরা বললো,
~অনেক নাটক দেখিয়েছেন আর কোনো নাটক আমি দেখতে চাই না।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~রক্তিম,এখন কিন্তু অনেক হয়ে যাচ্ছে তুমি তো ছোট বাচ্চা নও যে জেদ ধরে বসে আছো আশেপাশের লোক দেখছে।
রক্তিম ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
~তাতে আমার কিছু যায় আসে না চাচা।আপনি ভালো মতো জানেন আমি মানুষদের কথা কানে নেই না।
পৃথুলা এগিয়ে এসে বললো,

~অধরার কথা তো কানে নেও সে কী বলেছে শুনোনি?
রক্তিম বললো,
~আমি ঠিক শুনেছি আর কে তাকে এসব বলিয়েছে তাও জানি পৃথুলা তুই যদি হাজার চাল চালতে পারিস আমি কী একটা চাল চালতে পারবোনা?
পৃথুলা ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
~কীসব আবোলতাবোল বলছো?আমি কী করেছি?
রক্তিম পৃথুলার কথা অগ্রাহ্য করে অধরাকে বললো,
~তুই এতো বোকা কেন?চাচা বাবার থেকে টাকা নিয়েছে তা ঠিক আছে কিন্তু সেই টাকার বিনিময়ে চাচীর সব গহনা বাবার কাছে আর শোন দোকান কোথাও যাবে না আমি তা গ্যারান্টি দিচ্ছি।
অধরা অবাক নয়নে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে রইলো জোহোরা খাতুন মিনমিন করে বললেন,
~সব জলে ভেসে গেলো আমার।
অধরা বললো,
~তবুও আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।
রক্তিম শাওনের দিকে ইশারা করতেই সে মুচকি হেসে কোথাও চলে গেলো রক্তিম বললো,
~ঠিক আছে কোনো সমস্যা নেই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তখনই রক্তিম অধরার হাত ধরে তাকে আচমকা কোলে তুলে নিলো এতে সবাই অবাক হয়ে গেলো শাওন ততক্ষণে গাড়ি নিয়ে হাজির। রক্তিম এক সেকেন্ডও দেরি না করে অধরাকে গাড়িতে তুলে নিলো শাওন ধুম সে গাড়ি চালাতে শুরু করলো চোখের পলকে ধুলোয় মিশে গেলো গাড়িটা সবাই অবাক নয়নে সেখানে দাড়িয়ে রইলো।
রক্তিম অধরাকে কোলে নিয়েই গাড়িতে বসে আছে তা দেখে শাওন মিটমিট করে হাসছে অধরা এখনো অবাক হয়ে আছে।রক্তিমের কথায় তার ধ্যান ভাঙ্গলো রক্তিম বললো,
~শাওন,সামনে শওকত আছে ওকে গাড়িতে তুলে নিস।
অধরা এবার চিল্লিয়ে বললো,
~আপনি একটা খারাপ লোক।আমাকে দিয়ে আসেন মায়ের কাছে।
রক্তিম অধরাকে পাশের সীটে বসিয়ে দিয়ে বললো,
~বিয়ে হবে তারপর যাবে।
অধরা বললো,
~বিয়ে করবোনা কেন করবো আপনাকে বিয়ে?
রক্তিম শাওনকে বললো,
~শাওন তুই একটা গাড়টা সাইড করে রাখ আর শওকত কাছেই আছে ওর সাথে গিয়ে কথা বল।
শাওন মুচকি হেসে বললো,
~ok bro.

শাওন গাড়ি থেকে নামতেই রক্তিম অধরাকল বুকের সাথে মিশিয়ে বললো,
~আমি তো জানি আমি খারাপ কোনো ভালো গুন আমার নেই সেই খারাপ আমি টাকেই তো তুই ভালোবাসিস।
অধরা রক্তিমের শার্ট চোখের পানিতে ভিজিয়ে দিলো রক্তিম বললো,
~তুই কী মনে করিস আমি সব ভুলে গেছি সেই ছোটবেলায় যখন দাদী বলতো তুই আমার বউ হবি তখন তুই লজ্জা পেয়ে চাচীর শাড়ির আঁচল ধরে দাড়িয়ে থাকতি।আমি তো সেসময় থেকে নিজেকে তোর বর মেনে নিয়েছি তোর ডাইরির প্রতিটা ভাজে আমি তাও আমি জানি।আমাকে তুই এতোও বোকা ভাবিস না সময়ের সাথে সাথে আমরা বড় হয়েছি কিন্তু আমাদের অনুভূতি সেই একই আছে। কী এখনো আমার দূরে ঠেলে দিবি?আমি তোকে ওয়াদা করছি সব ঠিক করে দেবো একবার আমাদের বিয়েটা হয়ে যাক তারপর সব ঠিক করে দিবো।
রক্তিম কথা বলা শেষ করে অধরার দুবাহুডর ধরে বললো,

~ঠিক আছে আমি তোকে বাসায় দিয়ে আসবো কিন্তু মনে রাখবি আর কোনো দিন এই রক্তিম হোসেনের চেহারা দেখতে পারবিনা।
বলেই রক্তিম গাড়ি থেকে নামতে নিবে তখনই অধরা রক্তিমের শার্ট খামচে ধরে বললো,
~আমারও সব মনে আছে কিন্তু বড় চাচী আমাকে মেনে নিবে না।
রক্তিম অধরাকে আবার জড়িয়ে ধরে বললো,
~বলেছিনা সব ঠিক করে দিবো ভরসা রাখ আমার উপর।
অধরা রক্তিমকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো রক্তিম অধরার চুলে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
~ভালোবাসি প্রেয়সী ❤️❤️।
অধরা রক্তিমের বুকে মুখ গুজে বললো,
~আমিও ❤️।
রক্তিম মুচকি হেসে অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

অধরা,রক্তিম,শাওন,শওকত এখন দাড়িয়ে আছে কাজী অফিসের সামনে অধরা রক্তিমের হাত শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে।শাওন বললো,
~ভাইয়া সব ব্যবস্থা হয়ে আছে কাজটা শেষ করে নেও।
রক্তিম বললো,
~তা তো করবোই।
শাওন তার ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
~এই ইরাটা আমায় পাগল তুলে করেছে কখন থেকে ফোন করছে যেমন লাগছে ওর বিয়েতে ওকে দাওয়াত দেয়নি।
শওকত বললো,
~এভাবে বলোনা বেচারী ছোট মানুষ।
শাওন তার এক ভ্রু উঠিয়ে বললো,
~আজকাল ইরার হয়ে তুমি অনেক কথা বলছো ব্যাপারটা ভালো ঠেকছে না।
শওকত আমতা আমতা করে বললো,
~ধূর মিয়া তুইও কী বলছিস?ওই দেখ ফারাবি আর মাহদিও এসে পরেছে
শাওন সামনে তাকিয়ে দেখলো আসলেই ফারাবি আর মাহাদি এসে পরেছে।রক্তিম আর অধরা কাজীর সামনে বসে আছে কিছুমুর্হূতের মধ্যেই তাদের বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হলো অধরা একবার রক্তিমের দিকে তাকালো রক্তিম অধরার হাত শক্ত করে ধরে তাকে বললো,
~আমরা আজ বাসায় যাবো না ফারাবির ফার্ম হাউসে থাকবো।
অধরা বললো,

~বাবা- মা?
রক্তিম বললো,
~তাদের শাওন সব বলে দিবে আগামীকাল আমরা বাসায় যাবো।
অধরা আর কিছু বললো না চুপচাপ গাড়িতে বসে পরলো রক্তিম তার পাশে বসে পরলো শাওন তাদের র্ফাম হাউসে রেখে বাসায় চলে গেলো।
ফারাবি রক্তিমকে ফার্ম হাউসের চাবি দিয়ে বললো,
~আমি খাবার রান্নাঘরে রেখেছি আর শোন তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে দেখলে খুশি হবি।
রক্তিম কিছু বলবে তার আগেই ফারাবি চলে গেলো রক্তিম চাবি দিয়ে গেইট খুললো তারা ভিতরে ডুকলো রক্তিম অধরাকে বললো,
~তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও রুম ওইদিকে।
অধরা বললো,

~আপনি আমাকে তুমি কেন বলছেন?
রক্তিম বললো,
~গাধী তুমি আমার বউ এখন কেন তুই করে বলবো?
অধরা মুখ ফুলিয়ে বললো,
~বউকে কেউ গাধীও বলে না।
রক্তিম হেসে অধরার গালে ঠোঁট ছুইয়ে দিতেই অধরা গালে হাত দিয়ে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে রইলো।রক্তিম বললো,
~রুমে তোর সব প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা আছে ফ্রেশ হয়ে নে।
অধরা রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকতেই তার চোখ ছানাবড়া পুরো রুম ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় হার্ট শেপ ফুল দিয়ে সাজানো।অধরা রুম থেকে বের হয়ে আসলো সে দৌড়ে রুম থেকে রক্তিমের কাছে চলে আসলো।হাপিয়ে হাপিয়ে বললো,
~রুমে এসব কী সাজিয়েছেন?
রক্তিম ভ্রুকুচকে বললো,
~কী সাজিয়েছি মানে?
অধরা বললো,
~সবই তো করে রেখেছেন আগে থেকে।

রক্তিম বললো,
~চলো দেখে আসি কী সাজিয়েছি আমি?
অধরা বললো,
~আপনি যান।
রক্তিম মাথা চুলকে রুমের দিকে হাঁটা ধরলো দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকতেই রক্তিমের মুখ হা হয়ে গেলো রক্তিমের বুঝতে বাকি রইলো না এসব কে করেছে।রক্তিম কার্বাড থেকে অধরার সব জিনিসপত্র নিয়ে অধরার কাছে চলে গেলো অধরা সেখানেই দাড়িয়ে আছে।রক্তিম অধরার হাতে সব দিয়ে বললো,
~অন্য রুমটায় চলে যাও আমি সব পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
অধরা আর কোনো কথা না বলে অন্য রুমে চলে গেলো।রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঝাড়ু হাতে নিয়ে কাজে লেগে পরলো আর মনে মনে ফারাবিকে গালি দিতে লাগলো তার জন্য বিয়ের প্রথম দিন ঘর ঝাড়ু দিতে হচ্ছে।
শাওন বাসায় পৌছে সবাইকে সব বলে দিয়েছে শাওনের কথা শুনে জোহোরা খাতুন মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো।পৃথুলা ঘর বন্দি হয়ে বসে রইলো আইয়ুব হোসেন বললেন,

~যা হয়েছে তা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই রক্তিম কোথায়?
শাওন বললো,
~আগামীকাল চলে আসবে।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~কালকে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবোনা শাওন।আমার মেয়ে কোথায়?
শাওন বললো,
~চিন্তা করবেন না চাচা অধরা ঠিক আছে।
পুরো বাসায় নিস্তব্ধতা ছেয়ে পরেছে সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে।ইরা শাওনের ঘরে গিয়ে বললো,
~ভাইয়া আমাকে কেন বাদ দিলে?
শাওন বললো,
~সবকিছু তাড়াহুড়া করে করা হয়েছে তাই আর কী।
ইরা বললো,
~অবশেষে তাদের বিয়েটা হয়ে গেলো আমি অনেক খুশি।
শাওন বললো,
~আমিও।
রক্তিম ঘর পরিষ্কার করে ফোন নিয়ে ফারাবিকে কল করে আচ্ছা মতো ঝেড়ে রুমে আসতেই অবাক হয়ে গেলো। অধরা আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে হালকা গোলাপী রঙ্গের ড্রেস পরেছে সে তাকে দেখতে একদম একটা তড়তাজা ফুলের মতো লাগছে।
অধরার নজর আয়নায় পরতে সে দেখতে পেলো রক্তিম তার দিকে তাকিয়ে আছে অধরা নিচু স্বরে বললো,
~খাবার কী রান্না করতে হবে?
রক্তিমের ধ্যান ভেঙ্গে গেলো সে বললো,
~নাহ ফারাবি দিয়ে গেছে টেবিলে রাখা আছে।
অধরা বললো,
~রাত অনেক হয়েছে খাবার খেয়ে শুয়ে পরি।
রক্তিম বললো,
~অবশ্যই।
অধরা আর রক্তিম খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলো অধরা বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পরলো রক্তিম সোফায় শুয়ে পরলো।

তাদের মধ্যে আলাদা এক জড়তা কাজ করছে কী যেন তাদের বাঁধা দিচ্ছে।অধরার ঘুম আসছেনা সে এপাশ ফিরে দেখলো রক্তিম তার দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনই অপ্রস্তুত হয়ে পরলে রক্তিম বললো,
~তোমার ঘুম আসছেনা?
অধরা বললো,
~বাসার কথা মনে পরছে?
রক্তিম বললো,
~বাসার কথা মনে পরছে কেন?তুমি তো খুব সুন্দর বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলে।
অধরা বললো,
~সেসময় তো রেগে ছিলাম তাই।
রক্তিম বললো,
~চন্দ্রবিলাস করবে?বারান্দা থেকে চাঁদটা খুব সুন্দর দেখা যায়।
অধরা বললো,
~ঠিক আছে।
দুজনই বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো রক্তিম বললো,
~গান হলে মন্দ হয় না।
অধরা বললো,

~রুপকথার জগতে গানটা আমার খুব পছন্দ।
রক্তিম মুচকি হেসে তার ফোনে “রুপকথার জগতে” গানটা ছেড়ে দিলো অধরা গানের সাথে গুনগুন করছে আর চাঁদের দিকে তাকিয়ে রক্তিম তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
পৃথুলা রোকেয়া হোসেনকে ফোনে বলছে,
~মা,তুমি তো বলেছিলে সব তোমার প্ল্যান অনুযায়ী হচ্ছে তাহলে এটা কীভাবে হলো?
রোকেয়া হোসেন বললো,
~তুই চিন্তা করিস না মা আমি কাল সকালেই আসছি।
পৃথুলা বললো,
~সব শেষ হয়ে গেছে এখন এসে কী করবে?
বলেই সে খট করে ফোন রেখে দিলো বালিশে মুখ গুজে শুয়ে পরলো।
জোহোরা খাতুন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
~এখন কী হবে?আপনি রোকেয়া আপাকে কী জবাব দিবেন?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~আহা আমি কী ওদের নিজ ইচ্ছায় বিয়ে দিয়েছে রক্তিম নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করেছে তুমি এতো ভেবো না তো।ঘুমাও আর ঘুমাতে দেও
জোহোরা খাতুন বিড়বিড় বললেন,

~অনেক বড় তুফান আসছে যা সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিবে।আমাদের ধ্বংস দেখছি আমি
সকালের মিষ্টি রোদ ঘরের জানালা ভেদ করে প্রবেশ করেছে শীতের সকালটা যে কতোটা সুন্দর হয় তা যে দেখেছে সেই জানে।পাখির কিচিরমিচির শব্দ আশেপাশের পরিবেশকে আরো মুগ্ধ করেছে হালকা ঠান্ডা বাতাস দেহকে বিমোহিত করছে।সেই হাওয়া রক্তিমের শরীরে লাগতেই সে কেঁপে উঠলো গায়ের চাদরটা ভালোমতো জড়িয়ে নিতেই কারো মুখের শব্দ শুনতেই চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলো অধরা দাড়িয়ে আছে তার চোখে-মুখে বিরক্তি মাখা রক্তিম সেটাকে স্বপ্ন ভেবে অধরার হাত টেনে ধরে বললো,
~তুমি কিন্তু আমাকে অনেক জ্বালাতন করছো এর পরিণাম ভালো হবে না শ্রেয়সী।
অধরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রক্তিমের জোর সে একটা চিমটি কাটতেই রক্তিম অধরার হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে পরলো তারপর গালে হাত দিয়ে বললো,

~কে করেছে এইটা?একদম গাল লাল করে দিবো থাপ্পড়িয়ে।
অধরা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~আমি কী জানি মশাও তো হতে পারে তাই না?
রক্তিম অধরার বোকা বোকা কথার কোনো মানে বুঝলোনা অধরা সেই বিষয় থেকে দূরে সরে এসে বললো,
~ব্রাশ কোথায়? সকাল বেলা সব জায়গা খুজে ফেলেছি কোথায় রেখেছেন?
রক্তিম অধরার কথা শুনে আড়মোড়া ভেঙ্গে বললো,
~কার্বাডের যেকোনো একটা শপিং ব্যাগে আছে।
অধরা রক্তিমের উপর প্রচুর বিরক্ত সে ধীর পায়ে কার্বাড খুলে সকল শপিং ব্যাগ খুলে ব্রাশ খুজে পেলো। অধরা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের পানি বসালো পুরো রান্নাঘর খুজে সে শুধু চা বানানোর জিনিস গুলো পেলো।অধরা চা তৈরি করে আবার রুমে চলে আসলো রক্তিম এখনো উপুর হয়ে ঘুমিয়ে আছে।অধরা বিছানা গুছাতে গুছাতে জোরে জোরে বললো,
~সকাল ১০টা বাজে নাস্তা কী পাবো নাকি একদম দুপুরের খাবার নসীবে জুটবে।
রক্তিম অধরার কথা শুনতে পেয়ে ধরফরিয়ে সোফা থেকে উঠে দাড়ালো তারপর কার্বাড থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।অধরা বিছানা ঠিক করে সোফা গুছিয়ে রাখলো তখনই কলিংবেলের শব্দ পেলো অধরা।সে রুম থেকে বের হয়ে দরজার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,

~কে?বাহিরে।
বাহির থেকে শওকত বললো,
~ভাবি,আমি শওকত।
অধরা দরজা খুলে দিতেই শওকতের হাসি-হাসি মুখ দেখতে পেলো।অধরা বললো,
~ভাইয়া ভিতরে আসুন।
শওকত ভিতরে ডুকে হাতে থাকা টিফিন অধরার হাতে দিয়ে বললো,
~মা,আপনাদের জন্য নাস্তা পাঠিয়েছে।
অধরা টিফিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
~ধন্যবাদ ভাইয়া।
শওকত অধরার দিকে তাকিয়ে বললো,
~সাহেব কোথায়?
অধরা কিছু বলবে তার আগেই রক্তিম চলে আসে শওকত রক্তিমকে দেখে বললো,
~সকাল কয়টা বাজে ভাবিকে এখন পর্যন্ত না খাইয়ে রেখেছিস।
রক্তিম বললো,
~তুই খাবার নিয়ে আসবি সেই আবাস আমি আগেই পেয়েছি তাই এতো কষ্ট করলাম না।
অধরা নাস্তা সাজিয়ে দুজনকে ডেকে একসাথে বসে নাস্তা করে নিলো।শওকত রক্তিমকে বললো,
~আন্টি অনেক চিন্তিত তুই একটা ফোন দিয়ে কথা বলে নে।
রক্তিম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
~একটুপর বাসায় চলে যাবো আমরা।
শওকত রক্তিমের হাতে হাত রেখে বললো,
~তুই মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করবি সবাই আগুন হলে পানি কোথা থেকে পাবি?
রক্তিম চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে বললো,
~পানি রান্নাঘরে কাজ করছে সবাইকে ঠান্ডা করার দায়িত্ব সে পেয়েছে।

রোকেয়া হোসেন সোফায় বসে আছে তার চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে কেউ এটা বুঝতে পারছেনা অধরা আর রক্তিমের বিয়ের কারণে সে এতোটা রেগে আছে কেন?
শুধু রক্তিমের বাবা-মা জানে আসল কারণ কী?তাহিদা ইসলাম ননাশের এতো রাগ দেখে বললেন,
~আপা,আমি জানি বাচ্চারা ভুল করেছে এর মানে এ নয় যে আমরাও ভুল করবো।
রোকেয়া হোসেন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
~তোমার তো খুশিতে নাচতে মন চাইছে এটাই তো চেয়েছিলে রক্তিমকে হাত করে সব কিছু ছিনিয়ে নিবে।যেমন মা তেমন মেয়ে
তাহিদা ইসলাম মাথা নিচু করে ফুপিয়ে উঠলেন এবার আর তৈয়ব হোসেন চুপ থাকলেন না সে হুংকার ছেড়ে বললেন,
~আপা,অনেক হয়েছে আপনি অনেক বলেছেন এতোগুলো বছর শুধু আপনাদের শুনেছি আর না।যদি আপনারা লিমিট ক্রস করেন আমিও চুপ থাকবোনা।
রোকেয়া হোসেন হা হয়ে গেলেন ছোট ভাইয়ের এহেন আচরণ দেখে সে কোনোদিনও ভাবেননি তার হাতের পুতুল এভাবে কথা বলবে।আইয়ুব হোসেন পরিবেশকে সামলাতে বললেন,
~রোকেয়া,তুমি কিন্তু বেশি বলছো রক্তিম অধরাকে ভালোবাসে তাই বিয়ে করেছে এটাতে ভুল কী?
রোকেয়া হোসেনের যেনো সবার কথায় রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে সে সোফা থেকে দাড়িয়ে বললো,
~বড় ভাইজান আমার মুখ খুলতে আপনি আমায় বাধ্য করছেন।
জোহোরা খাতুন এবার ভয় পেয়ে গেলেন সে আইয়ুব হোসেনের কাছে গিয়ে দাড়ালেন আইয়ুব হোসেন বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বললেন,
~আমি জানি তো তুমি কী বলবে? এই তো যে তোমার সম্পত্তি আমি নিয়েছি আর তোমাকে ওয়াদা করেছি যে রক্তিমের বিয়ে পৃথুলার সাথে হবে তাই তো?

আইয়ুব হোসেনের কথা শুনে সবাই আকাশ থেকে পরলো তৌহিদ হোসেন বললেন,
~এসব কী হচ্ছে?
ইলিনা চৌধুরী বললেন,
~তলে তলে এতো কিছু হয়ে আছে বাহ জানতাম না তো।
শাওন আর ইরা চুপ করে দাড়িয়ে আছে পৃথুলা নিজ রুমে বসে সবই শুনছে রোকেয়া হোসেন চুপ হয়ে আছে কী বলবে?বুঝতে পারছেনা।আইয়ুব হোসেন বললেন,
~রোকেয়া, আমি কিন্তু তোমার কাছে যাইনি বরং তুমিই আমার কাছে এসেছিলে তোমার মেয়ের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে এখন যদি তুমি চাও তাহলে তোমার সব কিছু ফিরিয়ে দিবো।তবে আমার যে কোটি কোটি টাকার মাল তুমি চুরি করেছে তার ভরপাই কে করবে?
রোকেয়া হোসেন বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে সাথে সবাই অবাক হয়ে আছে।আইয়ুব হোসেন দাত কিড়মিড় করে বললেন,
~তুমি কী মনে করেছো আমি জানি না?সব জানি আমি কিন্তু চুপ ছিলাম কারণ তোমাকে অপমান করতে চাই না।আর আমি হাওয়ায় কথা বলিনা যাকে দিয়ে তুমি কাজটা করিয়েছো সে সব স্বীকার করছে এখন বল আমি কী করবো?
রোকেয়া হোসেন ভয়ে কুঁকড়ে গেলো সে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে আইয়ুব হোসেন বললেন,
~আমার সাথে চালাকি করতে আসবেনা তোমরা যদি ডালে ডালে চলো তাহলে আমি পাতায় পাতায় থাকি।
এতটুকু বলে সে নিজ রুমে চলে গেলো জোহোরা খাতুন তার পিছে পিছে রুমে চলে আসলো।

রক্তিম অধরাকে নিয়ে রওনা দিয়েছে বাসার উদ্দেশ্যে অধরার বুকটা ধুকপুক করছে কী হবে এই ভেবে?অধরার চিন্তিত চেহারা দেখে রক্তিম তার এক হাত আকড়ে ধরে বললো,
~এতো চিন্তা করছো কেন?সব ঠিক হবে
অধরা বললো,
~বাবা আমাদের মেহে নিবে আমার কেন মন বলছে সে অনেক রেগে আছে।
রক্তিম বললো,
~এতো ভাবতে পারো তুমি বুঝিনা কীভাবে এতো শক্তি পাও।দেখবে সব ঠিকঠাক হবে
অধরা বললো,
~আপনার তো সবসময়ই মনে হয় আমি বেশি চিন্তা করি।আর এইসব চিন্তা আপনার জন্যই আসে একেকটা কাজ বাড়িয়ে আমার মাথা নষ্ট করে ফেলেন।
রক্তিম অধরার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো অধরা মুখ ফুলিয়ে বললো,
~কী বিশ্রী হাসি ছি।

অধরার কথায় রক্তিম আরো জোরে জোরে হাসতে থাকে।কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা দুজন বাসায় পৌছে গেলো রক্তিম গাড়ি ঠিক জায়গায় রেখে অধরাকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই তৈয়ব হোসেনের সাথে প্রথমে দেখা হলো অধরা বাবাকে দেখে দৌড়ে তার কাছে চলে গেলো তৈয়ব হোসেনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।তৈয়ব হোসেন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~কতটা টেনশনে ছিলাম আমি একবারও আমার কথা মনে পরেনি।
অধরা বললো,
~আমাকে মাফ করে দেও আমি ভুল করেছি।
তৈয়ব হোসেন অধরার দুবাহুডর ধরে বললেন,
~আমি তোর উপর কোনোদিন অভিমান করতে পারিনা এইটা তুই জানিস।
সবাই হলরুমে একত্রিত হলো রোকেয়া হোসেন অধরা আর রক্তিমকে একসাথে দেখে ফুসছে।আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তোমরা যা করার করেছো এখন বড় হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে আমি চাই একটা অনুষ্ঠান করা হোক সবাইকে সবটা জানানো দরকার।
তৈয়ব হোসেন বললেন,

~আপনার সাথে আমি একমত।
জোহোরা খাতুন বললেন,
~আমি প্রিয়াকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি সে চলে আসবে।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~রক্তিন,আমি চাই তুমি অধরাকে নিয়ে অনুষ্ঠানের জন্য সব কিছু নতুন কিনে দিবে।আমার একমাত্র ছেলের বউ অধরা কোনো কমতি রাখতে চাইনা।
পৃথুলা রুম থেকে বের হয়ে সবার সামনে এসে বললো,
~আপনি চিন্তা করবেন না বড় মামা আমি নিজে সব দেখে করবো।
সবাই পৃথুলার কথা শুনে অবাক হলো রক্তিমের মনে সন্দেহের বীজ বুনতে লাগলো।তাও সে চুপ করে রইলো সে চায় না এখন পরিবেশ খারাপ হোক।

 তোমাকে চাই পর্ব ৭+৮

রোকেয়া হোসেন বিড়বিড় করে বললেন,
~মেয়ের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
আইয়ুন হোসেন বললেন,
~তাহলে ২দিন পর অনুষ্ঠান করা হবে।জোহোরা,তাহিদা,ইলিনা সব কিছু তোমরা সামলাবে।
তিনজনই মাথা দুলালো রোকেয়া হোসেন বললেন,
~আমি এইসবে নেই আজই আমি চলে যাবো এই পরিবার আমার নয়।
পৃথুলা বললো,
~তুমি চলে যাও মা।আমি অনুষ্ঠানের পর চলে আসবো
রোকেয়া হোসেন কিছু না বলে গটগট করে সেখান থেকে চলে আসলো।অধরা নিজ রুমে চলে আসলো শাওয়ার নিলে হালকা বেগুনে রঙ্গের ড্রেশ পরে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে লাগলো।তখনই ঘরের দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো জোহোরা খাতুন তাকে দেখে অধরা একটু ভয় পেলো জোহোরা খাতুন হাতে থাকা শাড়িটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
~এই শাড়িটা পরে বাহিরে আসো প্রতিবেশিরা আসবে আমি জানি তারা তোমাকে আগে থেকেই চিনে কিন্তু আজ তোমাকে বউ রুপে দেখতে চায়।

তারপর হাতে থাকা একটা বক্স অধরাকে দিয়ে বললো,
~এতে চেইন,বালি,চুরি,নাকফুল আছে রেডি হয়ে এসে পরো আর শোন রক্তিমের ঘরে চলে যাও তার রুম থেকে বের হবে নাহলে আবার কথা বানাতে সময় লাগবেনা এগুলোর।
বলেই সে গটগট করে চলে গেলো অধরা তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে রইলো।
একটুপর ইরা এসে অধরাকে রক্তিমের ঘরে নিয়ে যায় ইরা রক্তিমকে বললো,
~ভাইয়া বাহিরে যাও আপুকে রেডি করাবো।
রক্তিম বললো,
~আমার সামনে করা কী সমস্যা?
অধরা মনে মনে বললো,
~অসভ্য একটা।
ইরা বললো,
~যাও তো ভাইয়া।বড়চাচী আমার বকবে দেরি করলে
রক্তিম ল্যাপটপ বিছানায় রেখে উঠে দাড়ালো দরজার সামনে এসে ইরার অগোচরে অধরার গালে ঠোঁট ছুইয়ে দৌড়ে পালালো।অধরা হা হয়ে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে রইলো

 তোমাকে চাই পর্ব ১১+১২