তোমাকে চাই পর্ব ৭+৮

 তোমাকে চাই পর্ব ৭+৮
লেখনীতে Alisha Rahman Fiza

কারণ এসব যদি একবার জোহোরা খাতুন টের পেয়ে যায় তাহলে অবস্থা খুবই খারাপ হবে।অধরা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ইরাদের খুজতে লাগলো হঠাৎ ইরা কন্ঠ শুনে অধরা পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো ইরাদের নৌকা একদম তাদের নৌকার সাথেই। পৃথুলা অগ্নি দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে অধরা নিজ ব্যাগ থেকে ইরার ফোন বের করে বললো,
~তোর ফোনের জন্য এই পথে আসা হয়েছে।
ইরা বললো,
~শাওন ভাইয়ার হাতে দিয়ে দেও।
অধরা ফোনটা শাওনের হাতে দিয়ে দিলো শাওন বললো,
~এই নে তোর ফোন এখন শুরু কর মডেলিং আমিও দেখি কতদূর যায়।
ইরা ভেংচি কেটে ছবি তুলতে অধরা রক্তিমকে বললো,
~আমাকে পাড়ে নামিয়ে দিন ভালো লাগছেনা।
শাওন অধরার কথা শুনে বললো,
~দেখ অধরা এতদূর এসে পরেছিস তাই ইনজয় কর আর শোন রির্সোটটা অনেক নিড়িবিড়ি তাই তুই একা থাকতে পারবিনা।
রক্তিম বললো,

~কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই ফিরে যাবো তুই একটু অপেক্ষা কর।
অধরা আর কথা না বাড়িয়ে নৌকার একপাশে বসে রইলো পুলের পানিতে হাত নাড়াচাড়া করতে লাগলো রক্তিমও একপাশে বসে রইলো অধরা একধ্যানে পানির দিকে তাকিয়ে আছে তার হাতে কিছু ফুলের পাপড়ি লাগতেই সে মুচকি হেসে সেই পাপড়ি হাতে নিয়ে নেয়।রক্তিম অধরার অগোচরে সেই দৃশ্যটি ক্যামেরায় বন্দি করে ফেলে সবাই নৌকা ভ্রমণ শেষ করে একসাথে পুলের পাড়ে এসে দাড়িয়ে পরলো।শওকত বললো,
~সবাই যেহেতু এখন ক্লান্ত তাই যার যার রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেও কালকে সকালে বাসার জন্য রওনা দিতে হবে।
রায়হান বললো,
~কালকে সকালে রওনা দিলে আমরা দুপুর পর্যন্ত পৌছে যেতে পারবো আমার অনেক জরুরি মিটিং আছে।এখনই ম্যাসেজ এসেছে
রক্তিম বললো,
~তাহলে সবাই সকাল বেলায় তৈরি থাকবে আমরা সবাই রওনা হবো।
সবাই রুমে চলে আসলো তারপর ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে শুয়ে পরলো।রক্তিম বারান্দায় দাড়িয়ে বিশাল এই আকাশটাকে খুবই তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে শওকত তার পাশে নিকোটিনের ধোঁয়া ছেড়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~কী এতো ভাবছিস?
রক্তিম গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~বাবার সাথে কথা বলতে হবে এখনই উত্তম সময় যদি দেরি করে ফেলি তাহলে সময় হাত থেকে চলে যাবে।
শওকত বললো,
~তোর মা রাজী হবে না রক্তিম সে অধরাকে মেনে নিবে না।
রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~তুই কী জানোস মা পৃথুলাকে পছন্দ করে নিজ ছেলের বউ হিসেবে?
শওকত হাতে থাকা সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বললো,
~নাহ এসব জানিনা।
রক্তিম তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললো,
~ফুপি নিজ সম্পত্তি আমার বাবার নামে করে দিয়েছি আর নিজ মেয়েকে করে দিতে চায় আমার নামে।
শওকত বললো,
~তোর বাবা কেন এসব মেনে নিচ্ছে?
রক্তিম বললো,
~টাকার নেশা তাকে আকড়িয়ে ধরেছে।
শওত রক্তিমের কাঁধে হাত রেখে বললো,
~শোন দোস্ত যদি সোজা আঙ্গুলে ঘি না বের হয় তাহলে আঙ্গুল বাঁকা করতে হয়।
রক্তিম বললো,
~তা আমি জানি আর এতে আমি মাস্টারি করে ফেলেছি।

সকালে সবাই রওনা দিয়ে দেয় বাসার উদ্দেশ্যে সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে ইরা অধরার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। সবার চোখেই ঘুমে ভরপুর এই দুদিন অনেকটাই তারা ব্যস্ত ছিল যার কারণে এতোটা ক্লান্ত তাদের শরীর।এসবের মাঝেই অধরার ফোনটা বেজে উঠলো অধরা মোবাইলটা বের করে দেখলো তাহিদা ইসলামের ফোন করছে। অধরা ফোন রিসিভ করতেই তাহিদা ইসলাম বললেন,
~তোদের পৌছাতে কতোটা সময় লাগবে?
অধরা বললো,
~দুপুর হয়ে যাবে মা।
তাহিদা ইসলাম খুশি হয়ে বললেন,
~যাক ভালো হলো আজ বিকেলে মেহমান আসবে তাই জিজ্ঞেস করলাম।
অধরা ভ্রুকুচকে বললো,
~কারা আসবে মা?
তাহিদা ইসলাম বললেন,
~এতো কথা শুনে তোর লাভ নেই ঠিকঠাক মতো পৌছে যা তোরা।
বলেই সে ফোনটা রেখে দিলো অধরা ব্যাগে ফোনটা রেখে সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
ঠিক ১২ টায় তারা বাসার সামনে এসে পৌছালে সবাই বাস থেকে নেমে বাসার ভিতরে চলে গেলো।কলিংবেল বাজাতেই ইলিনা চৌধুরি দরজা খুলে দিলো সবাইকে দেখে সে হালকা হেসে বললো,

~কেমন গেলো তোদের ভ্রমণ?
শাওন বললো,
~খুব ভালো মা।এখন শোন খুব ক্ষিদে পেয়েছে খাবার দেও টেবিলে।
ইলিনা চৌধুরী বললেন,
~আহারে আমার ছেলেটা এই দুদিনে কতোটা শুকিয়ে গেছে।
শাওন এবার বললো,
~এখন over acting হচ্ছে।
সবাই শাওনের কথা শুনে হোহো করে হেসে উঠলো তাহিদা ইসলাম,জোহোরা খাতুন টেবিলে খাবার দিয়ে বললেন,
~যা তোরা ফ্রেশ হয়ে নে খাবার দিয়েছি টেবিলে।
জোহোরা খাতুন অধরাকে দেখে বললেন,
~অধরা,চুল সুন্দর করে সেম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবি।আজ বাসাশ মেহমান আসবে
রক্তিম ভ্রুকুচকে বললো,
~বাসায় মেহমান আসবে এতে অধরা কেন ভালো করে চুল সেম্পু করবে?আর কারা আসবে?
জোহোরা খাতুন বললেন,
~বেশি কথা বলবিনা যখন আসবে তখন দেখে নিবি।
রক্তিমের মনে একটা সন্দেহের বীজ বপন হয়ে পরলো সে গটগট করে নিজ রুমে চলে গেলো।অধরা শাওয়ার নিয়ে চুল আছড়িয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তাহিদা ইসলাম রুমে এসে হাজির একহাতে খাবারের প্লেট তো আরেক হাতে শাড়ি।অধরা শোয়া থেকে উঠে পরলো তাহিদা ইসলাম প্লেটটা অধরার হাতে দিয়ে বললো,
~খেয়ে নে।
আর শাড়িটা বিছানার উপরে রেখে বললো,
~অধরা,আজ বিকেলে এই শাড়িটা পরবি।
অধরা বললো,
~শাড়ি কেন পরবো?
তাহিদা ইসলাম বললেন,
~মায়ের কথার উপর এতো কথা বলতে হয় না যা বলেছি তাই করবে।
বলেই সে রুম থেকে চলে গেলো অধরা তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে রইলো

রক্তিম বিছানায় একহাত মাথায় তুলো শুয়ে আছে তখনই দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো জোহোরা খাতুন।রক্তিম কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো জোহোরা খাতুন দাড়িয়ে আছে।রক্তিম বললো,
~কোনো কাজ আছে?
জোহোরা খাতুন ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~রক্তিম,একটু তোর মামা বাড়ি যেতে হবে তোর নানী তোকে দেখতে চেয়েছে।
রক্তিম মাথা থেকে হাত সরিয়ে বললো,
~তোমরা যে পরিকল্পনা করেছো তা আমি হতে দিবো না।
জোহোরা খাতুন ভয় পেয়ে বললো,
~কীসের পরিকল্পনা এসব কী বলছিস?তোর নানী তোকে দেখতে চেয়েছে অনেক জরুরি কথা আছে তোর সাথে।
রক্তিম বললো,
~আজ যাবো না কালকে যাবো।
জোহোরা খাতুন বললেন,
~এভাবে বলিস না তোর নানীর শরীরটা বেশি একটা ভালো না তোকে দেখতে চেয়েছে বাবা।আজই চলে যা
রক্তিম বললো,
~ঠিক আছে শওকতকে নিয়ে চলে যাবো।

জোহোরা খাতুন ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।রক্তিম তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
~তোমরা যা ভেবেছো তার থেকে একটু বেশি আমি ভেবে রেখেছি।
রক্তিম গায়ে শার্ট জড়িয়ে বের হয়ে আসলো রুম থেকে তারপর সোজা বাসার বাহিরে চলে আসলো।
বিকেলবেলা অধরা শাড়ি পরে বসে আছে পাত্রপক্ষের সামনে অধরা কখনো ভাবিনি যে তার সাথে আজ এমন হবে।কিছুক্ষন আগে তাহিদা ইসলাম শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে তাকে বাহিরে নিয়ে আসে।
অধরা দেখে তিনজন লোক সোফায় বসে আছে একজন মহিলা দুজন পুরুষ একজনের বয়স ২৭ কী ২৮।অধরা একবার তাহিদা ইসলামের দিকে তাকালো সে চোখ দিয়ে ইশারা করলো সালাম দিতে অধরা সবাইকে সালাম দিলো জোহোরা খাতুন সবার সাথে অধরার পরিচয় করিয়ে দিলেন।মহিলার নাম আসমা জাহান সে ছেলের মা, ছেলের বাবার নাম ইকবাল রহমান আর ছেলের নাম ইফতি রহমান।অধরা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে তার মনে এক অজনা ভয় লাজ করছে মনে হচ্ছে এখনিই কোনো তুফান এসে পরবে।
আসমা জাহান অধরার পাশে বসে বললেন,

~মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে প্রিয়ার বিয়ের সময় দেখেই আমার মন জিতে নিয়েছে।
অধরা চুপ করে বসে আছে ইকবাল রহমান অধরার বাবা তৈয়ব হোসেনকে বললেন,
~আপনাদের মতামতের আশায় আছি আমরা।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~আমার অনেক ইচ্ছ মেয়ে পড়াশোন করুক এখন বিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।
ইফতি তাদের কথার মাঝেই বলে উঠলো,
~আঙ্কেল আমাদের এই বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~কিছু মনে করবেনা বাবা বিয়ের পর যদি তোমার মতামত পরিবর্তন হয়ে যায় তখন আমি কী করবো?
ইফতি বললো,
~আঙ্কেল আমি এতোটাও নিচু মনমানসিকতা নিয়ে বড় হয়নি যে ওয়াদা দিয়ে ওয়াদা ভেঙ্গে ফেলবো।
তৈয়ব হোসেন বললেন,

~আমি আমার বড় ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে অবশ্যই আপনাদের জানিয়ে দিবো।
তখনই কেউ থেকে বলে উঠলো,
~বাকি সবার মতামত আমি জানিনা আমার মতামত এখনই শুনে যান এই বিয়ে কোনো মতেই হবে না।
ব্যক্তিটির কণ্ঠস্বর শুনে সবাই সেখানে তাকালো অধরা ছলছল নয়নে সেঔ ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে রইলো।
তৈয়ব হোসেন অনেক বিব্রতবোধ করছেন তাই তিনি বললেন,
~রক্তিম,তুমি এভাবে কেন বলছো?
সামনে থাকা ব্যক্তিটি আর কেউ নয় রক্তিম সে তৈয়ব হোসেনের কথা শুনে বললো,
~চাচা,আমার যা বলার আমি বলেছি আর আপনি কী আমার মতামত ছাড়াই অধরার বিয়ে দিয়ে দিবেন?
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~এমন কিছু না।শাওন রক্তিমকে ঘরে নিয়ে যাও
শাওন রক্তিমের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে রক্তিম রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাতেই শাওন দুকদম পিছিয়ে গেলো।রক্তিম জোহোরা খাতুনের সামনে দাড়িয়ে বললো,
~এর জন্যই কী আমাকে বাসা থেকে বাহিরে পাঠানো হয়েছে?
জোহোরা খাতুন আমতা আমতা করে বললেন,
~মেহমানদের সামনে এরকম কেন করছিস?
রক্তিম বললো,
~তাহলে তাদের যেতে বলো বসিয়ে কেন রেখেছো?
ইকবাল রহমান বললেন,
~আমরা আজ আসি পরে কথা বলবো এ বিষয়ে।

বলেই তারা চলে গেলো যাওয়ার আগে ইফতি একবার অধরার দিকে তাকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।রক্তিমের চোখে তা এড়ায়নি রক্তিম অধরাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আরো রেগে গেলো চরম ভাবে একটা ধমকে উঠলো সে,
~এই মেয়ে এখানে বসে আছিস কেন?ভিতরে যাবি এখনই
রক্তিমের ধমক শুনে অধরা কেঁপে উঠে তৈয়ব হোসেন বললেন,
~এভাবে কথা বলছো কেন রক্তিম?মেয়ে আমার সিদ্ধান্ত আমার হবে।
রক্তিম বললো,
~আপনার মেয়ে মানলাম কিন্তু এতগুলো বছর যে আমি আগলিয়ে রাখলাম।
তৈয়ব হোসেন বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে রইলো রক্তিমের দিকে তারপর বললো,
~বড়ভাবি,আপনার ছেলেকে নিয়ে যান এখান থেকে আমার হাত উঠে যাবে।
জোহোরা খাতুন রক্তিমের হাত ধরে বললো,
~চল বাবা ভিতরে আমার কথাটা রাখ।
রক্তিম দ্বিগুন রেগে গিয়ে বললো,
~আমি কেন তোমার কথা রাখবো তুমি রেখেছো আমার কথা?তুমি জানতেনা সব তবুও তুমি এমন একটা কাজ করলে।
অধরা তাদের কথোপকথন শুনতে পারলো না সে ধীরপায়ে সেখান থেকে নিজ রুমে চলে আসলো ইরা তার পিছন পিছন চলে গেলো।
রক্তিম বললো,

~আজ সন্ধ্যায় বাবা বাসায় আসার আমরা কথা বলবো।এর একটা বিহিত আমি করেই ছাড়বো।
রক্তিম নিজ কথা শেষ করে গটগট করে অধরার রুমের দিকে চলে গেলো তা দেখে তৈয়ব হোসেন বললেন,
~খবরদার আমার মেয়ের কাছে তুমি যাবে না।আমি আর এই বাসায় থাকবোনা তাহিদা তুমি অধরাকে নিয়ে এখনি তোমার মায়ের বাসায় চলে যাবে।
তাহিদা ইসলাম কেঁদে কেঁদে বললেন,
~এসব আপনি কী বলছেন?
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~দ্রুত কাজ করো আমি অধরাকে দেখে আসছি।
রক্তিম অধরার ঘরে এসে দেখলো অধরা চুপচাপ বসে আছে আর হাতের চুড়ি খুলছে ইরা তার পাশে বসে আছে।রক্তিম বললো,
~ইরা,বাহিরে যা।
ইরা একবার অধরার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।রক্তিম অধরার কাছে গিয়ে বললো,
~তুই কেন ওদের সামনে গিয়েছিলি?
অধরা কিছু বললো না সে চুপ করে বসে রইলো

অধরাকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে রক্তিমের রাগটা আরো বেড়ে গেলো সে এবার নিজের হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেললো অধরার হাত ধরে নিজের একদম কাছে দাড় করিয়ে বললো,
~মুখে কুলুপ এঁটেছিস?কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি মুখ খুলে কিছু বল।
অধরা নির্বাক হয়ে বললো,
~আমার পথ থেকে সরে যান আপনি জানেন না কতো বড় ঝড় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে অতীতের পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখেন বাবা আজ কতোটা অপদস্ত হয়। একমাত্র কারণ হচ্ছে সে নিজের মনকে প্রাধান্য দিয়েছে তাই আজও সে কথা শুনছে শুধু সে না আমিও শুনছি।চলে যান এ ঘর থেকে আপনার মা আপনাকে রাজকুমারী দেখে বিয়ে দিয়ে দিবে।আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না নাহলে এমন জায়গায় গিয়ে লুকালো আর দেখা পাবেন না।
অধরার বলা প্রতিটও শব্দ রক্তিমের কানে বাজছে সে ধীরে ধীরে অধরার হাত ছেড়ে দিলো অধরা চুড়ি গুলো হাতে নিয়ে ড্রয়ারে রেখে দিলো। রক্তিম এখনো চুপ করে দাড়িয়ে আছে তখনই ঘরে প্রবেশ করলো তৈয়ব হোসেন সে এসে রক্তিমের সামনে দাড়িয়ে বললেন
~আমার মেয়ের ঘর থেকে বের হয়ে যাও এতোদিন সব সহ্য করেছি আর না বের হও।অধরা ব্যাগ গুছিয়ে নে তুই আর তোর মা নানু বাসায় যাবি।

অধরা মাথাদুলিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পরলো রক্তিম বললো,
~আপনারা কোথাও যেতে পারবেন না।আমি সেই ব্যবস্থা করবো আমাকে দূর্বল ভাববেন না চাচা।আমি যেকোনো কিছু করে ফেলবো তারপর চোখের পানি ফেললোও লাভ হবে না।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~তোমার বাবার সাথে কথা বলতেই হবে বড় ভাইজান কিছুক্ষন পরই চলে আসবে সে পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো।
রক্তিম অধরার ঘর থেকে চলে গেলো তৈয়ব হোসেন বিছানায় বসে আজকের ঘটনা বিশ্লেষণ করতে লাগলেন।
বাসায় পৌছে আইয়ুব হোসেন বুঝতে পারলেন বাসার পরিবেশ বেশি একটা শোচনীয় না তাই সে চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে পরলেন।জোহোরা খাতুন স্বামীর খাবার প্লেটে তুলে দিচ্ছেন তখনই রক্তিম এসে পাশের চেয়ারে বসে পরলো আর বললো,

~বাবা,তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~খাবার শেষ করে কথা বলছি।
রক্তিম বললো,
~ঠিক আছে আমি তোমার রুমে চলে আসবো।
কিছছুক্ষন পর রক্তিম আইয়ুব হোসেনের রুমে চলে আসলো আইয়ুব হোসেন বললেন,
~কী কথা দ্রুত বলো।
রক্তিম বললো,
~আমি অধরাকে বিয়ে করবো।
আইয়ুব হোসেন ছেলের কথা শুনে হালকা হেসে বললেন,
~এইসব বাচ্চামি করে না বাবা তুমি তো এতোটাও ছোট নও।
রক্তিম বললো,
~সব জেনে শুনে এমন কথা বলছো কেন?আমার মনের কথা তোমরা জানতে বাবা।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~হয়না বাবা এইটা তোমার জন্য পৃথুলা পারফেক্ট।
রক্তিম চোয়াল শক্ত করে বললো,
~পৃথুলা?ওকে আমি কোনোদিন বিয়ে করবোনা বাবা।ফুপির সম্পত্তি তুমি নিয়েছো আমি না আর শোন তোমার বোন যে কতোটুকু নিচ তা তুমি জানো না।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তুমি সব জানো?
রক্তিম বাঁকা হেসে বললো,
~তোমরা কোন রাস্তা দিয়ে হাঁটো তাও আমি জানি।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তাহলে আর অমত করো না।

রক্তিম বললো,
~তুমি আবারও সেই একই কাজ করছো কিন্তু আমি এতোটাও কাঁচা খেলোয়াড় না অধরার সাথে আমার বিয়ে না হলে আমি তোমার সব তাসেরঘর ভেঙ্গে গুড়িগুড়ি করে দিবো।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~আমাকে ধমকি দিচ্ছো?
রক্তিম বললো,
~উহু সাবধান করছি।
আইয়ুব হোসেন আর কিছু বললেন না সে গভীর ভাবনায় তলিয়ে গেলো রক্তিম তার রুম থেকে বের হয়ে আসলো।অধরা, তাহিদা ইসলাম আর তৈয়ব হোসেন আইয়ুব হোসেন থেকে বিদায় নিতে এসেছেন আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তৈয়ব,যা হয়েছে ভুলে যা আমি তোকে আশ্বাস দিচ্ছি সব ঠিক হয়ে যাবে।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~মাফ করবেন আমি আর থাকছিনা এখানে।
রক্তিম দেওয়ালে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে অধরার দিকে তাকিয়প আছে।অধরা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে ইরা অধরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~প্লিজ আপু যেও না আমাকে ছেড়ে।
শাওন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে সব দেখছে অধরা ইরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~আমাদের নতুন বাসায় তুই আসবি কিন্তু।
ইরা ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে রক্তিমকে ঠান্ডা দেখে আইয়ুব হোসেনের বুক কাঁপছে না জানি এই ছেলে কী করে ফেলে?ইলিনা চৌধুরী বললেন,

~তোমরা আবার এ বাড়ি ভুলে যেও না আসা যাওয়া করো।
তখনই রক্তিম বললো,
~অবশ্যই আসবে তারা মেয়েকে দেখতে তো আসতে হবেই।
পৃথুলা বললো,
~এসব কী বলছো অধরাও তাদের সাথে যাবে।
রক্তিম বললো,
~আমার বউকে আমি অনুমতি দেইনি এই বাড়ি থেকে বের হওয়ার।
সবাই রক্তিমের কথা শুনে অবাক হয়ে পরলো এসব কী বলছে?অধরা রক্তিমের দিকে তাকাতেই রক্তিম বললো,
~এই মুর্হুতে আমার আর অধরার বিয়ে হবে।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~তুমি কী বলছো এসব?
রক্তিম তৈয়ব হোসেনের হাত ধরে বললো,
~চাচা,আমি কী ছেলে হিসেবে খারাপ যে আপনি আপনার মেয়েকে আমার কাছে বিয়ে দিতে চাইছেন না?
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~এমন কোনো কথা না বাবা তোমার মা কোনোদিন আমার বউকে মেনে নেইনি সে কীভাবে আমার মেয়েকে ছেলেরবউ হিসেবে মেনে নিবে?
রক্তিম বললো,

 তোমাকে চাই পর্ব ৫+৬

~সমস্যা এতটুকু তাই তো?
জোহোরা খাতুন বললেন,
~আমি কোনোদিন অধরাকে মেনে নিবো না।
রক্তিম বললো,
~মা যদি মনে করে থাকো আমি তোমায় রিকোয়েস্ট করবো তা ভেবে না।তোমার নীতি এবাসায় চলতে পারে আমার উপর না ছোট থেকে তোমার অবিচার দেখেছি আর না।
জোহোরা খাতুন বললেন,
~তুই আমার অমতে বিয়ে করবি?
রক্তিমের কিছু বলার আগে তার অধরা বললো,
~বাবা,আমাদের দেরি হচ্ছে চলো।
রক্তিম বললো,
~তুই কী শুনতে পাসনি আমি কী বলেছি?
অধরা বললো,
~আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না। আপনার প্রতি আমার কোনো অনুভূতি নেই তাহলে সংসার করবো কী করে?
রক্তিম বললো,
~মিথ্যা খুব গুছিয়ে বলতে শিখেছিস তুই।
অধরা বললো,

~এটা আপনার ব্যাপার এখন আমাদের যেতে দিন নাহলে খুব খারাপ হবে আমি নিজের ক্ষতি করে ফেলবো।
অধরার কথা শুনে জোহোরা খাতুন আর পৃথুলা বাঁকা হাসে কারণ তাদের প্ল্যান একদম সঠিক কাজ করছে।
কিছুক্ষন আগে জোহোরা খাতুন অধরার ঘরে গিয়ে তাকে বলছিল,
~অধরা,আমি তোকে জানাতে চাই তোর বাবা আমার স্বামীর থেকে ৫লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছে।এখন যদি তোর বাবার কাছে সেই টাকা আমরা চেয়ে বসি তাহলে কোথা থেকে দিবে তোর বাবা তখন তো দোকানটাও হাত থেকে চলে যাবে তখন কী হবে?
অধরা বললো,

~আপনি কী চান?
জোহোরা খাতুন বললেন,
~এখন চুপচাপ তুই এ বাসা থেকে চলে যাবি।তারপর আমি সব সামলে নিবো।
অধরা বললো,
~তাই হবে।
জোহোরা খাতুন বাঁকা হেসে বললেন,
~তাহলে সেই কথাই থাকলো।
বর্তমান
অধরা দরজা পেরিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলো রক্তিম সেই দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

 তোমাকে চাই পর্ব ৯+১০