তোমাকে চাই পর্ব ১৫+১৬

তোমাকে চাই পর্ব ১৫+১৬
লেখনীতে Alisha Rahman Fiza

শওকতের পুরো শার্ট আমের আচারে মাখামাখি ইরা তা দেখে একটু ভয়ই পেলো।ইরা আমতা আমতা করে বললো,
~আমি ইচ্ছে করে করিনি আসলে পা পিচলে এই অবস্থা হয়েছে সরি।
শওকত ইরার নরম কন্ঠের কথা শুনে হালকা হেসে বললো,
~কোনো সমস্যা নেই আমি শার্ট চেঞ্জ করে নিচ্ছি।
ইরা আলতো হেসে বললো,
~আপনি শার্ট খুলে আমার রুমে রেখে দিয়েন আমি ধুয়ে দিবো নে।
শওকত মুচকি হেসে ইরাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো ইরা সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে গেলো।সবাই ছাদের মাঝ বরাবর বসে আছে পাটি বিছিয়ে নানান রকমের খাবার সাজিয়ে রাখা হয়েছে।অধরা নাদিয়া একসাথে বসে আড্ডা করছে অধরা বললো,
~সিয়াম ভাইয়া দেশে কবে ফিরবেন(সিয়াম হচ্ছে অধরার বড় মামার ছেলে)।
নাদিয়া বললো,

~আমাকে বললো আগামী মাসে এখন তো কিছুই বলছেনা এসব বিষয়ে।
অধরা বললো,
~তোদের বাসাটা খালি খালি লাগে তুইও কোচিং, কলেজ এতে ব্যস্ত থাকিস আর সিয়াম ভাইয়া তো নেই।ছোট মামা-মামীরও কোনো সন্তান হলো না
নাদিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~ছোট চাচীর জন্য খারাপ লাগে বেচারি সারারাত জায়নামাজে বসে কাঁদতে থাকে।আমরা সবাই থাকলেও তার নিজেকে একা লাগে মনটা বড্ড পোড়ায় এ কথাগুলো ভাবলে।
অধরা বললো,
~চিন্তা করিসনা দেখবি আল্লাহ তার কথা অবশ্যই শুনবে।
হঠাৎ শাওন বলে উঠলো,
~নাদিয়া তোমাদের বাসায় না তেঁতুল গাছ ছিল আগে?
নাদিয়া বললো,
~ভাইয়া কেটে ফেলেছে তার ঘর নতুন ভাবে তৈরি করা হয়েছে ওই তেঁতুল গাছটা মাঝখানে বাঁধ সাজছিল তাউ কেটে ফেলেছে।
শাওন বললো,
~আমি ছোট বেলায় অনেক এসেছি তোমাদের বাসায় তখন তুমি অনেক ছোট ছিলে।
নাদিয়া হেসে বললো,
~আপনি আমার থেকে গুনে গুনে ৫বছরের বড় আমি তো ছোট থাকবোই।
শাওন একটু ইতস্তত বোধ করলো তারপর বললো,
~তুমি কী আমায় বুড়ো বলছো?
নাদিয়া বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~একবারও সেই শব্দ উচ্চারণ করিনি।
সবাই গোল হয়ে বসে আড্ডা করছে মজা করছে রক্তিম খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে এই ভাবছে এতো ঘটনার পিছনে কে আছে?কার মাথায় এতো খেলা চলছে?রক্তিম কিছু একটা ভাবতে ফোন বের করে তার পুলিশ বন্ধুকে কল করলো তারপর বললো,
~দোস্ত ফুপিদের খোজখবর রাখবি কে তাদের সাথে দেখা করতে আসে কেন আসে?সব ডিটেইলস আমি চাই।
তার পুলিশ বন্ধুটি হ্যাঁ বলে আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দেয়। অধরা রক্তিমকে এতো চিন্তিত দেখে অধরা রক্তিমের পাশে দাড়িয়ে তার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
~আপনি এতো টেনশন নিবেন না।সব ঠিক হয়ে যাবে
রক্তিম অধরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে অধরার কপালে ওষ্ঠজোড়া ছুইয়ে বললো,
~তোমার এই শান্তিময় চেহারা দেখে আমার সকল চিন্তা চলে যায়।
অধরা রক্তিমের পেটে হালকা ঘুষি মেরে বললো,
~এতোটা না বললেও পারবেন এককেবারে মুখ দিয়ে মধু বইছে।
রক্তিম হেসে অধরাকে জড়িয়ে ধরলো অধরাও রক্তিমকে দুইহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

সকাল বেলা আইয়ুব হোসেন রেডি হচ্ছেন আয়নার সামনে দাড়িয়ে জোহোরা খাতুন ঘরে প্রবেশ করলো আর বললো,
~আজ আমরা গাজীপুর যাচ্ছি আপনার আর তৌহিদের খাবার কাজের লোকেরা রান্না করে দিবে।
আইয়ুব হোসেন শরীরে দেওয়া শালটা ঠিকঠাক করে নিয়ে বললো,
~তোমরা একা যাবে কেন আমরাও সাথে চলি?
জোহোরা খাতুনের অন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো সে বললো,
~আপনার যাওয়ার কোনো দরকার আমি দেখছিনা আর সেখানে উল্টোপাল্টা কিছু করার কোনো দিক আমি দিবোনা আপনাকে।
আইয়ুব হোসেন হালকা হেসে বললো,
~তুমি তো জানো আমার কিছু করার হলে এখান থেকে বসে বসে করে ফেলবো।
জোহোরা খাতুন বললেন,
~নিচু মনের মানুষ আপনি।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তা তো তুমিই ভালো জানো।

আইয়ুব হোসেন ঘর থেকে বের হয়ে একদম বাসা থেকে বের হয়ে আসলো গাড়িতে বসে ড্রাইভার কে বললো,
~থানার দিকে চলো।
ড্রাইভার তার কথা মতো গাড়ি চালাতে লাগলো থানা পৌছে আইয়ুব হোসেন গাড়ি থেকে নেমে থানার ভিতর প্রবেশ করে একজনকে জিজ্ঞেস করলেন,
~কিডন্যাপিং কেসে মা-মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সাথে দেখা করবো।
সেই লোকটি বললো,
~একটু টাকা ছাড়লে সব ব্যবস্থা করে দিবো।
আইয়ুব হোসেন ৫০০০ টাকা সেই লোকটির হাতে দিয়ে দিলেন।সেইলোকটি বললো,
~আসেন আমার সাথে।
আইয়ুব হোসেন সেই লোকটির পিছে পিছে একটা হাজতের সামনে এসে দাড় করালেন।রোকেয়া হোসেন
আইয়ুব হোসেনকে দেখে বললেন,
~আরে ভাইজান যে,এই পৃথুলা দেখ কে এসেছে?
পৃথুলা বসা থেকে দাড়িয়ে বললো,
~তোমার ভাই কেন এসেছে জিজ্ঞেস করো তো মা?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~আমি এখানে এসেছি তোমাদের সাথে কথা বলতে।
রোকেয়া হোসেন হেসে বললেন,

~মুখ বন্ধ রাখতে বলবেন নাকি ভাইজান?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তোমাদের জামিনের ব্যবস্থা করা হয়ে গেছে আর এই শহর ছাড়ারও ব্যবস্থা করে দিয়েছি চুপচাপ যেভাবে বলছি তাই করবে।
পৃথুলা বললো,
~৫০ লাখ টাকা সাথে দিয়ে দেন তাহলে কেসটা আরো ভালো হয়ে যাবে।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~ঠিক আছে তাই হবে।
বলেই সে সেখান থেকে চলে গেলো পৃথুলা রোকেয়া হোসেনকে বললো,
~তোমার ভাই বাঘ থেকে এখন ভেজা বিড়াল হয়ে গেছে।
অধরা, রক্তিম,প্রিয়া সবাই মিলে নাস্তা করে বের হয়েছে বাগানবিলাস করতে অধরার নানুবাসার ঠিক সামনে অনেক বড় বাগান রয়েছে।সবাই সেখানে ঘুরতে গেছে কতো ধরনের ফুল আছে আবার ফলের গাছও আছে।অধরা নয়নতারা গাছের সামনে এসে ফুলগুলোকে ছুয়ে দিচ্ছে রক্তিম একধ্যানে অধরাকে দেখতে ব্যস্ত।ইরা শওকতের সাথে এই শীতের সকালে হেঁটে যাচ্ছে বাগানের মাঝখান দিয়ে।ইরা বললো,

~প্রকৃতির কাছে আসলে মনটা বেশ ভালো হয়ে যায়।
শওকত বললো,
~প্রিয়া মানুষ কাছে থাকলে সব সুন্দরই মনে হয়।
ইরা শওকতের কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,
~এখানে আপনার কাছের মানুষ নিজ স্ত্রী কে নিয়ে ব্যস্ত।
ইরা হাত দিয়ে ইশারা করে রক্তিমের দিকে দেখালো শওকত তা দেখে বললো,
~আমার কী এখানে শুধু রক্তিমই কাছের মানুষ আরো অনেকে আছে।
ইরা বললো,
~তাই তা কাছের মানুষদের লিস্ট টা কী জানতে পারি?

শওকত মাথা চুলকে বললো,
~অনেকেই আছে এখন বলা যাবে না।
ইরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নাদিয়া সেখানে এসে বললো,
~ইরা,সর্বনাশ হয়েছে শাওন ভাইয়া গাছ থেকে পরে গেছে।
ইরা বললো,
~কী বলছো চলো শাওন ভাইয়ার কাছে।
তারা সকলে দৌড়ে সেখানে পৌছে যায় শাওন গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।রক্তিম শাওনের কাছে গিয়ে বললো,
~তুই এই গাছে কেন উঠতে গেলি?
শাওন বললো,
~সুখের ঠেলায় এমনেই উঠেছিলাম উঁচু থেকে বাগানের দৃশ্য দেখতে কেমন লাগে সেটাই দেখতে চেয়েছিলাম।
অধরা বললো,
~ভাইয়া কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?
শাওন বললো,
~পা টা মনে হয় মচকে গেছে।
প্রিয়া বললো,
~বেশি উড়তে গেলে এমনই হয়।
শাওন বললো,

~তোকে নিয়ে উড়তে গেছি বেশি কথা বললে একদম মরিচের জুস খাইয়ে দিবো।বাবুর জন্য থাপ্পড় মারবো না।
রায়হান বললো,
~শওকত ওকে রুমে নিয়ে যাও আমি ডক্টর নিয়ে আসছি।
নাদিয়া বললো,
~আরে এতোকিছু করতে হবে না সরিষার তেল দিয়ে পা ম্যাস্যাজ করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
রক্তিম বললো,
~আমারও তাই মনে হয় চলো বাসায় যাই।
সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো শাওনকে শওকত বাসায় পৌছে রুমে নিয়ে গিয়ে শুয়ে পরলো।নাদিয়া গরম সরিষার তেল এনে দিয়ে বললো,
~পা ভালো মতো ঢলে দিবেন শওকত ভাইয়া তাহলে দেখবের ঠিক হয়ে যাবে।
শাওন বললো,
~আমার ক্ষতি হলে তোমার দোষ দেখে নিয়ো।
নাদিয়া বললো,
~পায়ের সাথে সাথে মাথাও গেছে সরিষার তেল দিলে কীসের ক্ষতি হবে?
শওকত বললো,
~শাওন,তুমি চুপ থাকো আমি দেখছি।

শওকত শাওনের পা তেল দিয়ে ঢলে দিলো নাদিয়া একটা প্যানকিলার শাওনের হাতে দিয়ে বললো,
~খেয়ে নিন একদম ঠিক হয়ে যাবেন।
জোহোরা খাতুন,তাহিদা ইসলাম,ইলিনা চৌধুরী,তৈয়ব হোসেন গাজীপুর পৌছে অধরার নানুদের বাসায় পৌছে গেছে।তাদের সবার সাথে কুশলাদি করে ভিতরে প্রবেশ করতে বললেন অধরার বড়মামা আর ছোটমামা।
অধরা সবাইকে দেখে অনেক খুশি হলো জোহোরা খাতুন অধরার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
~তুই কেমন আছিস?
অধরা বললো,
~ভালো বড়চাচী।
সবাই ভিতরে সোফার রুমে বসে পরলো হরেক রকমের পিঠা সাজিয়ে নিয়ে আসলেন অধরার মামীরা।ইলিনা চৌধুরী বললেন,
~এতো বছর হয়ে গেছে বাসার কোনো পরিবর্তন হয়নি।আপনারা কবে একটু নিজেদের গ্রাম্য করে রাখবেন।
অধরার নানু বললেন,
~মারে এসব করতে টাকা লাগে তা এখন নেই আল্লাহ তা আলা চাইলে সব হবে।
ইলিনা চৌধুরী পিঠার দিকে তাকিয়ে বললো,
~কত ধরনের পিঠা আছে এখানে আমার তো সবই ফেভারিট।
তাহিদা ইসলাম মায়ের কাছে গিয়ে বললেন,
~মা,তোমাদের উপরে চাপ ফেলেদিলাম।
অধরার নানু বললেন,
~না এসব কী বলিস?কত বছর পর তোরা এই বাসায় এসেছিস আমি অনেক খুশি হয়েছি।তোর ননদ কেন আসলোনা ওর মেয়েটাকেও তো দেখলাম না?
তাহিদা ইসলাম আমতা আমতা করে বললেন,

~ওনাদের কাজ আছে তাই আসতে পারেনি।
অধরার নানু বললেন,
~শোন আজকে রাতের জন্য ভূনা খিচুরী,ইলিশ মাছ ভাজা,গরুর কলিজা ভূনা আর ভরতা রান্না করবো ঠিক আছে না?
তাহিদা ইসলাম বললেন,
~অবশ্যই ঠিক আছে।
অধরার নানু বললেন,
~ছোট বউমা আমার সাথে এসো সবার থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
অধরার ছোট মামী শাশুড়ির কাছে চলে আসলেন আর কাজে চলে গেলেন।জোহোরা খাতুন চিন্তিত হয়ে বসে আছেন অনেক বেশি ভয় করছে কারণ তার কাছে খবর এসেছে রোকেয়া হোসেন জামিন পেয়েছে এই কাজ কে করেছে সেটাও জানে রক্তিমকে জানিয়ে দেয়া দরকার রোকেয়া হোসেনের কথাটা।
রক্তিম বারান্দায় দাড়িয়ে আছে তখনই তার ফোনটা বেজে উঠলো সে ফোন বের করে দেখলো তার পুলিশ বন্ধু ফোন করেছে রক্তিম ফোন রিসিভ করতেই সেই পুলিশ বন্ধুই তাকে সব বলে দেয় তখন রক্তিম অবাক হয়ে বললো,
~কে তাদের জামিনের ব্যবস্থা করেছে?
পুলিশ বন্ধুটি জানালো কে করিয়েছে তার কোনো খোজ নেই রক্তিম সব শুনে ফোন রেখে দিলো তার মাথায় এখন নানান টেনশন কাজ করছে।

রাতের বেলা সবাই খাবার শেষ করে বসে বসে কথা বলছে তখনই বাসার দরজা খটখটের আওয়াজ আসলো।অধরার বড় মামা দরজা খুলে দিতেই সামনে থাকা দুই ব্যক্তিকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।জোহোরা খাতুন বাহিরে এসে একজনকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন কারণ
কারণ আইয়ুব হোসেন এসেছেন তার সাথে এসেছেন তৌহিদ হোসেন জোহোরা খাতুন ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
~আপনারা আসবেন তাতো আগে বললেন নি?
আইয়ুব হোসেন হেসে বললেন,
~ভাবলাম সারপ্রাইজ দিবো তাই এসে পরলাম আর আমি প্ল্যান করেছি আমরা সবাই মিলে বান্দরবন ঘুরতে যাবো।
জোহোরা খাতুনের অন্তরআত্মা আরো কেঁপে উঠলো সে একবার আইয়ুব হোসেনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে শয়তানি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে।অধরার বড় মামা বললেন,
~আপনারা ভিতরে আসুন এখানে দাড়িয়ে থাকবেন না।
তারা ভিতরে প্রবেশ করতেই সবাই তাদের দেখে অবাক হলো কিন্তু খুশিও হলো।রক্তিম সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে তার বাবার আগমনে তাকে ভাবনায় ফেলে দিলো।যে মানুষ এতো বছরে কোনোদিন এই বাসায় পা পর্যন্ত রাখেননি সে আজ এবাসায় থাকবে।রক্তিমের চিন্তিত মুখ দেখে অধরা ফিসফিস করে বললো,

~কী ভাবছেন আপনি?
রক্তিম বললো,
~কিছু না।
অধরা মুচকি হেসে আবারো আড্ডায় মনোযোগ দিলো এতো মানুষের জন্য সবাইকে আলাদা আলাদা রুম দেওয়া সম্ভব নয় তাই সবাই মিলেমিশে থাকবে।জোহোরা খাতুন পানির জগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করে বললো,
~আপনি কী করতে যাচ্ছেন?
আইয়ুব হোসেন বিছানায় হেলান দিয়ে বললো,
~আমি কী করছি?আমি তো পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে চাচ্ছি।
জোহোরা খাতুন রেগে গিয়ে বললো,
~অনেক করেছেন আর কিছু করতে যাবেন না রক্তিমের মুখে আজ আমি সন্দেহ দেখেছি।দয়া করুন এসব ছেড়ে দিন রক্তিম আপনাকে ছাড়বেনা।
আইয়ুব হোসেন না বুঝার ভান করে বললেন,
~এসব কথা কেন বলছো?আমি কী করেছি?সবসময় তোমার কথা শুনি বলে আজও শুনবো কখনো না।
বলেই সে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন আইয়ুব হোসেনের এহেন ব্যবহারে জোহোরা খাতুন স্তব্ধ হয়ে গেছে এই লোকটা অশান্তি করেই ছাড়বে।জোহোরা খাতুন বললেন,

~এখন সব রক্তিমকে বলতে হবে এছাড়া কোনো উপায় নেই।
আইয়ুব হোসেন সবাইকে জানিয়ে দিলেন তারা বান্দরবন যাচ্ছে অধরার মামারাও যাবে শুধু অধরার নানু যাবেনা সে বাসায় থাকবে।রক্তিম বললো,
~কবে যাওয়ার প্লানিং করেছো?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~১দিন পর রওনা দিবো।
রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~ঠিক আছে।
প্রিয়া,রায়হান,ইরা,শওকত,শাওন সবাই খুশি হয়েছে এই প্ল্যানে কিন্তু তারা জানেনা কতোটা ভয়াবহ কাজ করতে যাচ্ছে আইয়ুব হোসেন।আইয়ুব হোসেন সবার খুশি দেখে বাঁকা হেসে বললেন,
~সবাই যেমন হাসতে হাসতে যাবে তেমনি কাঁদতে কাঁদতে ফিরবে।
রক্তিম বারান্দায় দাড়িয়ে সব ঘটনা ভাবছে সবাই অনেক খুশির মধ্যে দিয়ে সময় কাটাচ্ছে তবুও তার মনটা হালকা লাগছেনা কোথাও কী যেন ভুল হচ্ছে।হঠাৎ অধরা এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~এতো কী ভাবছেন ঘরে যে বউ একা রয়েছে তা কী জানেন না?
অধরার দুহাত রক্তিমের বুকে রাখা রক্তিম সেই হাত দুটো ধরে বললো,
~ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারবোনা।

অধরা বললো,
~ভুলেই তো গিয়েছেন এসব ডায়লগ মারলেও কোনো লাভ নেই।
রক্তিম অধরাকে সামনে টেনে নিয়ে আসলো তারপর কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
~আমি ডায়লগ মারছে?
অধরা বললো,
~তো কী?আপনি আমাকে প্রমিজ করেছিলেন আমার পরীক্ষা শেষে আপনি আমাকে নিয়ে রাতের শহর দেখতে বের হবেন।করেছেন আপনি সেটা?
রক্তিম বললো,
~যাহ এটা তো ভুলেই গিয়েছিলাম সরি।
অধরা বললো,
~তাহলে কবে নিয়ে যাবেন?
রক্তিম বললো,
~যবে তোমার ইচ্ছে।
অধরা খুশি হয়ে বললো,
~এখনই যাবো শীতের রাতে গাড়ি নিয়ে ঘুরার মজাই আলাদা।
রক্তিম বললো,
~এখন যাবে?এতো রাতে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।
অধরা বললো,
~এখন যদি না নিয়ে যান তাহলে আমি আপনার সাথে কথা বলবোনা।
রক্তিম হেসে বললো,
~ঠিক আছে চলো আমি গাড়ির চাবি নিয়ে আসছি।তুমি সোয়েটার পরে নিবে বুঝেছো?
অধরা বললো,
~ঠিক আছে।
কিছুক্ষন পর অধরা আর রক্তিম বাসা থেকে বের হয়ে আসলো অধরার কাছে বাসার এক্সট্রা চাবি আছে তাই কোনো সমস্যা হয়নি।রক্তিম আর অধরা গাড়িতে বসে পরলো।ঠান্ডা বাতাসে মৃদু কেঁপে উঠছে দুজনার শরীর।রাস্তা পুরো ফাঁকা শীতের রাতের রাস্তার নিস্তব্ধতা অধরাকে মুগ্ধ করছে।অধরা প্রাণ খুলে শ্বাস নিয়ে রক্তিমকে বললো,

~ব্যস্ততার দিন গুলো থেকে আমার কাছে নিস্তব্ধতার রাত অনেক প্রিয়।
রক্তিম বললো,
~কেন?
অধরা বললো,
~এইযে আপনি আমার পাশে আছেন আমার সব কথা আমি শুনছি আপনি আমার কথাগুলো শুনছেন।এতে যে ভালোলাগা কাজ করছে তা আর কিছুর মধ্যে নেই।
রক্তিম বললো,
~আজকাল আমি ব্যস্ত থাকিনা তুমি ব্যস্ত থাকো সবাই তোমাকে ঘিরে থাকে আমাকে নয়।
অধরা বললো,
~আপনি যে সবসময় বাংলার পেঁচার মতো করে রাখেন কি ভাবতে থাকেন আপনি এতো?
রক্তিন বললো,
~সময় হলে সব জানাবো।
অধরা আর কথা বাড়ালোনা রক্তিমের কাঁধে মাথা রেখে সব চিন্তা নিশেষ করে দিলো।হঠাৎ অধরার নজরে পরলো চায়ের দোকান অধরা রক্তিমকে বললো,
~গাড়ি থামান ওই যে দেখেন চায়ের দোকান।
রক্তিম বললো,
~এতো রাতে চায়ের দোকান খোলা?
অধরা বললো,
~এতে আপনার কী চলেন চা খেয়ে আসি।
রক্তিম গাড়ি থামিয়ে অধরাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরলো তারপর সেই চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে পরলো।চায়ের দোকানের মালিল তার ফোকলা দাঁতে হেসে বললো,
~চা দিম আপনাগো?
রক্তিম বললো,
~দুই কাপ চা দিন।আর এতো রাতে দোকান করছেন যে?
দোকানী বললো,
~আপনাগো মতো অনেক মানুষ রাতের শহর দেখতে বের হয় তাগো সেবার লেইগা খোলা রাখি।
রক্তিম আর কিছু বললোনা দোকানি চা দিলে রক্তিম আর অধরা চা শেষ করে দোকানিকে টাকা দিয়ে গাড়িতে বসে পরে।রক্তিম বললো,
~এবার বাসায় যাওয়া যাক?
অধরা বললো,
~ঠিক আছে।
রক্তিম বাসার উদ্দেশ্যে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো অধরা জানালা বাহিরে তাকিয়ে রইলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে শাওন বুঝতে পারলো তার পায়ের ব্যাথাটা একদমই চলে গেছে।সে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে সোজা খাবার টেবিলে বসে বললো,
~ছোট চাচী ক্ষুধা লেগেছে নাস্তা দেও।
রান্নাঘর থেকে তাহিদা ইসলামের বদলে নাদিয়া বের হয়ে আসলো শাওন নাদিয়াকে দেখে অবাক হলো ওড়না কোমড়ে গুজে রেখেছে হাতে ময়দা লেগে আছে।শাওনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নাদিয়া বললো,
~আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
শাওন চমকে উঠলো নাদিয়ার কথায় সে আমতা আমতা করে বললো,
~আসলে আমি ভেবেছি ছোট চাচী রান্নাঘরে তাই।
নাদিয়া মুচকি হেসে বললো,
~ফুপি ছাদে গিয়েছে কাপড় শুকাতে।আপনি একটু অপেক্ষা করুন নাস্তা তৈরি হয়ে যাবে।
শাওন বললো,
~তুমি নাস্তা বানাচ্ছো?
নাদিয়া বললো,
~আমি একা না মা,চাচী,ফুপিও আছে সাথে।
শাওন বললো,
~আচ্ছা বুঝতে পেরেছি শুনো ধন্যবাদ আমার পায়ের ব্যাথা অনেকটাই কমে গেছে।
নাদিয়া বললো,

~ঘরোয়া চিকিৎসা অনেক সময় কাজে লেগে যা বুঝতে পেরেছেন।
এতোটুকু বলে নাদিয়া রান্নাঘরে চলে যায় শাওন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
~মেয়েটার বুদ্ধি আছে ঘরের কাজও করে পারে যার ঘরে বউ হয়ে যাবে অনেক ভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি।
সবাই মিলে নাস্তা শেষ করে যে যার রুমে চলে যায় প্যাকিং করতে জোহোরা খাতুন সুযোগ বুঝে চলে যায় রক্তিমের রুমে।রক্তিম কিছু কাজ করছে তখনই জোহোরা খাতুন ঘরে প্রবেশ করে বললো,
~রক্তিম তোর সাথে কথা আছে।
রক্তিম হাতের কাজ সাইডে রেখে বললো,
~বলো মা কী বলবে?
জোহোরা খাতুন শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলতে নিবে তখনই আইয়ুব হোসেন ঘরে প্রবেশ করে বললেন,
~এসে পরেছো ছেলের কান ভরতে?
জোহোরা খাতুন আইয়ুব হোসেনকে দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায়।রক্তিম বাবার কথা শুনে বললো,
~কী হয়েছে বাবা?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তোমার মা বলছে সে এখন শপিং করতে চায় আমি বললাম কালকে জার্নি করবে আজ এতো প্রেসার নেওয়ার দরকার নেই।উনি রাজি না সে নিজেরটাই করবে
রক্তিম হালকা হেসে বললো,
~মা,বাবা ঠিক বলেছে আজ কোথাও যাওয়ার দরকার নেই তুমি রেস্ট নেও।
জোহোরা খাতুন মুচকি হেসে বললেন,
~ঠিক আছে বাবা। প্রিয়ার জন্য টেনশন হচ্ছে এতো দূর জার্নি করবে
রক্তিম বললো,
~আল্লাহ ভরসা সব ঠিক হবে মা তুমি টেনশন কম নেও।

তোমাকে চাই পর্ব ১৩+১৪

জোহোরা খাতুন ভয়ে ভয়ে ঘরে এসে করলেন আইয়ুব হোসেন তার সাথে কথা বলবেন তাই তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।জোহোরা খাতুন ঘরে প্রবেশ করতেই আইয়ুব হোসেন অতি শীতল গলায় বললেন,
~কী বলতে গিয়েছিলে?
জোহোরা খাতুন বললেন,
~আপনি ভুল ভাবছেন আমি কিছু বলতে যায়নি।
আইয়ুন হোসেন বললেন,
~চোরের মতো রক্তিমের ঘরে ডুকেছো তুমি আর বলছো কিছু বলতে যাওনি?
জোহোরা খাতুন এবার হাতজোড় করে বললেন,
~আমি জানি কেন আপনও সবাইকে নিয়ে বান্দরবন যাচ্ছেন আপনি ওখানে অধরার ক্ষতি করবেন।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~কতসুন্দর পাহাড় সেখান থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার মজাই আলাদা কী বলো?
জোহোরা খাতুন বিছানায় বসে বললেন,
~ভুল আমারই আপনার অন্যায়কে প্রশয় দিতে দিতে আপনার হাত বড় করে দিয়েছি।
আইয়ুব হোসেন বললেন,

~এসব ন্যাকামী করে লাভ নেই ব্যাগ গুছিয়ে ফেলো। আর মুখ বন্ধ রাখো নাহলে তোমাকেও আমি ছাড় দিবো না।
এতটুকু বলে সে চলে গেলো জোহোরা খাতুন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখর পানি ফেললো।
রাতে অধরা রক্তিমের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে অধরা বললো,
~বড়চাচী অনেক টেনশনে থাকে আজকাল মনে হয়।
রক্তিম বললো,
~হয়তো প্রিয়াকে নিয়ে।
অধরা বললো,
~তাকে আজ আমি কান্না করতেও দেখেছিলাম।
রক্তিম একটু অবাক হলো পরক্ষণেই পরিস্থিতি সামলাতে সে বললো,
~তুমি এসব ভেবোনা আমি কথা বলনো মায়ের সাথে।
অধরা রক্তিমকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~ঠিক আছে।

তোমাকে চাই শেষ পর্ব