তোমাকে চাই পর্ব ৫+৬

 তোমাকে চাই পর্ব ৫+৬
লেখনীতে Alisha Rahman Fiza

সেই মানুষটি হচ্ছে রক্তিম হ্যাঁ রক্তিম তাকে দুহাতে আকড়ে ধরে আছে।ইরা এই অবস্থা দেখে মুখ টিপে হেসে সেখান থেকে চলে যায় রক্তিম অধরার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে যেই চোখের চাহনিতে তার সর্বনাশ নিশ্চিত সেই চোখে রক্তিম বার বার ডুবে মরতে চায়।অধরা রক্তিমকে ধীর কন্ঠে বললো,
~আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে বড় চাচা অপেক্ষা করছে।
অধরার কথা রক্তিমের কান পর্যন্ত পৌছাতেই সে অধরাকে ছেড়ে দিলো। অধরা আর কোনোদিক না তাকিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে আসলো রক্তিমও তার পিছে পিছে চলে আসলো। সবাই যে যার মতো গাড়িতে বসে পরেছে রক্তিম তার গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে অধরা,ইরা,শাওন একসাথে তার গাড়িতে উঠে পরলো অধরা উঠতে চাইনি কিন্তু ইরার কারণে তাকেও সেই গাড়িতে বসতে হয়েছে।রক্তিম ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিতে নিবে তখনই পৃথুলা এসে গাড়ির সামনে দাড়িয়ে পরলো রক্তিম রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,

~idiot মেয়ে এভাবে গাড়ির সামনে আসার মানে কী?
পৃথুলা বললো,
~আমি তোমাদের সাথে যাবো। শাওন তুই পিছনে গিয়ে বসে পর।
শাওন বললো,
~অ্যাঁ তুমি কিছু বলছো?আসলে আজকে গোসল করার সময় কানে পানি চলে গেছে তাই শুনতে পারছিনা ঠিক মতো।আরেকবার বলো
পৃথুলা বিরক্তি নিয়ে বললো,
~শাওন মজা করবিনা যাহ পিছনে গিয়ে বসে পর।
শাওন বললো,
~কী করবো তোমার মাথায় বাঁশ দিয়ে বারি দিবো কী বলছো আপাজন এসব?
পৃথুলা এআার রেগে গিয়ে বললো,
~আস্তো শয়তান একটা।
এতটুকু বলে পৃথুলা পিছনে চলে গেলো ইরা আর অধরার সাথে বসে পরলো শাওনের কাজে ইরা আর অধরা মুখ টিপে হাসছে।শাওন মনে মনে বললো,
~তুমি চলো ঢালে ঢালে আমি চলি পাতায় পাতায়।
রক্তিম বললো,
~শেষ হয়েছে নাটক এখন কী গাড়ি স্টার্ট দিবো?
শাওন বললো,
~অবশ্যই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রক্তিম নাক ফুলিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো ইরা আর অধরা নানান কথায় ব্যস্ত পৃথুলা ফোন টিপছে।শাওন আর রক্তিম কথা বলছে কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা প্রিয়ার শশুর বাড়ি চলে আসলো।ইরা,অধরা,শাওন গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে চলে গেলো কিন্তু পৃথুলা সেই গাড়িতে বসে রইলো রক্তিম বললো,
~তুই কী গাড়ি থেকে নামবিনা?
পৃথুলা ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিলো,
~নাহ।
রক্তিম বললো,
~ওকে গাড়ি লক করে আমি চলে যাচ্ছি তোর ঢঙ্গ দেখার সময় আমার নেই।
বলেই সে গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখনই পৃথুলা রক্তিমের কলার চেপে ধরলো পিছন থেকে আর বললো,
~তুমি এখানেই থাকবে আমরা আজ ভিতরে যাবোনা।
রক্তিমের মেজাজ গরম হয়ে গেলো সে পৃথুলার হাত কলার থেকে ছাড়িয়ে অনেক শক্ত করে চেপে ধরলে
ব্যাথায় পৃথুলা কুকিয়ে উঠলো রক্তিম দাঁত কিড়মিড় করে বললো,

~আর কোনোদিন এরকম আচরণ করলে তোর পুরো মুখের গঠন আমি চেঞ্জ করে দিবো।
এতটুকু বলে পৃথুলাকে ছেড়ে দিয়ে রক্তিম গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো পৃথুলা হাত ধরে রক্তিমের যাওয়ার পাণে তাকিয়ে রইলো।
অধরাকে দেখে প্রিয়া অনেক খুশি তিনবোন ব্যস্ত নিজেদের কথা নিয়ে হঠাৎ রাহাত সেখানে উপস্থিত হলো অধরা তাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।রাহাত বাঁকা হেসে বললো,
~আরে ভাবী আপনার বোনদের কী এভাবেই দাড় করিয়ে রাখবেন এদের যত্ন সহকারে আপনার রুমে নিয়ে যান।
প্রিয়া বললো,
~তাতো নিয়ে যাবো রাহাত তোমার এতো টেনশন করতে হবে না।
রাহাত বললো,
~কী যে বলেন ভাবী আমি না ভাবলে কে ভাববে বলেন?
ইরা বললো,
~আপনি এতো ভাবতে যেয়েন না আবার পাগল হয়ে যাবেন প্রিয়া আপু তোমার মনে আছে আমাদের বাসার কাছে একটা পাগল ছিল সে পাগল হয়েছিল কেন জানে সে অনেক ভাবতো শেষে মাথায় এতো জোর দেওয়ার কারণে বেচারা এখন পাগল।
ইরার কথা শুনে অধরা আর প্রিয়া মুখ টিপে হাসলো রাহাত লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে চলে আসলো।

প্রিয়া আর রায়হানকে নিয়ে সবাই রওনা দিলো বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ম অনুযায়ী আজ প্রিয়া তার বাবার বাসায় যাবে।প্রিয়া আর রায়হান রক্তিমের গাড়িতেই বসে পরে সবাই আড্ডা দিতে দিতে বাসায় পৌছে যায়।বাসায় পৌছে যার যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরে রক্তিম ফ্রেশ হয়ে চলে যায় সোজা রোকেয়া হোসেনের রুমে সেখানে গিয়ে দরজায় টোকা দিতেই ভিতর থেকে শব্দ আসলো,
~ভিতরে এসে পরো।
রক্তিম দরজা ঠেলল ভিতরে প্রবেশ করলো রোকেয়া হোসেন রক্তিমকে দেখে অবাক হয়ে বললেন,
~রক্তিম তুই এতো রাতে?
রক্তিম বললো,
~ঘুরিয়ে পেচিয়ে এতো কথা বলতে আমি পছন্দ করিনা আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে কালই এ বাসা থেকে চলে যাবেন।
রোকেয়া হোসেন বললেন,
~তুই কী আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস?
রক্তিম বললো,
~আমি দুধ-কলা দিয়ে কোনো সাপ পুষতে চাই না।
রোকেয়া হোসেন এবার রেগে গিয়ে বললেন,
~মুখ সামলিয়ে কথা বলবি।
রক্তিম বাঁকা হেসে বললো,

~আপনি কী করেছেন তা আপনি ভালো মতোই জানেন বাবার ব্যবসা যে আপনার জন্য ক্ষতি বহন করছে তা আমি জানি মালভরতি গাড়ি আপনি গায়েব করিয়েছেন আমার কাছে তার প্রমাণও আছে।
রোকেয়া হোসেন শুকনো ঢোক গিলে বললেন,
~এসব কী বলছিস?ভাইজানের সাথে এমন হয়েছে তা তো আমি জানতাম না।
রক্তিম বললো,
~আগামীকাল পর্যন্ত সময় তারপর খেলা আমি শুরু করবো মনে থাকে যাতে।
এতটুকু বলে রক্তিম রুম থেকে বের হয়ে যায় রোকেয়া হোসেন বিছানায় বসে ভাবতে থাকে এতো সুন্দর ভাবে সব পরিকল্পনা করে কাজটা করা হলো রক্তিম কীভাবে জানতে পারলো?
রক্তিম রুমে এসে বারান্দায় দাড়িয়ে রইলো সে মনে মনে বললো,
~নিজের মানুষরাই সবচেয়ে কাছের শত্রু হয়ে থাকে।
সকালে নাস্তা শেষ কর প্রিয়া,রায়হান,অধরা,শাওন,ইরা
একসাথে বসে ঘুরতে যাওয়ার প্লানিং করছে। শাওন বললো,

~প্রিয়া শোন আমরা একটা রির্সোটে ঘুরতে গেলে কেমন হয়?
প্রিয়া বললো,
~আইডিয়াটা খারাপ না যাওয়া যায়।
ইরা বললো,
~আমার বান্ধবী তার পরিবার নিয়ে কিছুদিন আগেই একটা রির্সোটটে ঘুরতে গিয়েছিল।আর রির্সোটটা খুবই সুন্দর
অধরা তাদের কথা চুপচাপ শুনে যাচ্ছে তখনই সেখানে উপস্থিত হলো রক্তিম অফিসের জন্য সে বের হবে।প্রিয়া বললো,
~ভাইয়া, আমরা রির্সোটে ঘুরতে যেতে চাই।
রক্তিম বললো,
~ঠিক আছে অফিসে দুদিনের বন্ধ আছে তাহলে আজকে বিকেলে রওনা দিতে হবে।শাওন সব অ্যারেঞ্জ মেন্ট করে রাখবে।
শাওন বললো,
~নো টেনশন সব কাজ খাল্লাস করে দিবো।
অধরা এখনো চুপ করে বসে আছে কারণ সে যেতে চায় না সে তার বাবার কাছে এসব ব্যাপারের জন্য টাকা চাইতে পারবেনা।রক্তিম একবার অধরার দিকে তাকিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো রোকেয়া হোসেন ব্যাগ পত্র নিয়ে সবার থেকে বিদায় নিলো আর আইয়ুব হোসেনকে বললেন,

~ভাইজান মেয়েটাকে অনেক বুঝালাম কিন্তু সে যেতেই চাইছেনা।আপনি একটু ওর খেয়াল রাখবেন।
জোহোরা খাতুন বললেন,
~আপা কোনো চিন্তা করবেন না আমরা সবাই পৃথুলার খেয়াল রাখবো।
রোকেয়া হোসেন বের হয়ে গেলেন নিজ বাসার উদ্দেশ্যে আইয়ুব হোসেন অনেকটাই অবাক হলেন রোকেয়া হোসেনের এভাবে চলে যাওয়া দেখে।
অধরা তাহিদা ইসলামকে বললো,
~মা,আমার পরীক্ষা শুরু হবে তাই ভাবছি প্রিয়া আপুদের সাথে আমি যাবো না।
তাহিদা ইসলাম মেয়ের কথা বুঝতে পেরে বললেন,
~তুই টাকার চিন্তা করিস না আমি একটা ব্যবস্থা করবো।
অধরা বললো,
~ওসব কিছু না মা আমিই যেতে চাই না।

তাদের কথার মাঝেই রুমে প্রবেশ করলো ইরা আর বললো,
~আপু, রক্তিম ভাইয়া তোমাকে ফোন করছে তুমি ধরছোনা কেন? এই নেও আমার ফোন দিয়ে কথা বলো
অধরা ইরার ফোন হাতে নিয়ে কানে ধরতেই রক্তিম বললো,
~আমি যা বলছি কান খুলে শুনবি আমাদের সাথে তুইও যাবি যদি শুনেছি মুখ দিয়ে না তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
বলেই সে খট করে ফোন রেখে দিলো অধরা কান থেকে ফোন নামিয়প ইরার হাতে দিয়ে বললো,
~ইরা,আমি তোদের সাথে যেতে পারবো না আমার পরীক্ষা।
ইরা হতভম্বের মতো সেখানেই দাড়িয়ে রইলো অধরা রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো ছাদে। ছাদে দাড়িয়ে সে ভাবলো,
~এইবার কোনো ক্রমেই আমি তার কথা শুনবোনা।
প্রিয়া, রায়হান,শাওন তারা অনেক চেষ্টা করেছে অধরাকে মানানোর কিন্তু সে এবার নিজ মতামত চেঞ্জ করবেনা তাই প্রিয়া বললো,
~আমরাও যাবো না তাহলে।
অধরা বললো,

~তোমরা যদি আমার কারণে প্ল্যান ক্যান্সেল করো আমি কারো সাথে কথা বলবো না।
তখনই রুমে রক্তিম প্রবেশ করলো সে এসে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
~তোরা বাহিরে যা আমি দেখছি ব্যাপার টা।
রক্তিমের কথায় বাধ্য হয়ে সবাই বাহিরে চলে গেলো অধরা একজায়গায় গুটিশুটি হয়ে বসে আছে।রক্তিম অধরার কাছে গিয়ে বললো,
~আমার কথাটা না শুনে ঠিক করলিনা এখন আমি চাচাকে গিয়ে বলে দিবো তার মেয়ে কতোটা মহান এটার পর চাচা যে কী পরিমাণ কষ্ট পাবে তা তুই জানিস ভালো মতো।
অধরা চোখ তুলে রক্তিমের দিকে তাকালো তারপর বললো,
~আপনি বাবাকে কিছুই বলবেন না।
রক্তিম বললো,
~কেন?
অধরা বললো,
~আমি যাবো।
রক্তিম বাঁকা হেসে বললো,
~ঠিক আছে তাহলে তো সব কিছু ঠিকই হয়ে গেলো।
অতঃপর বিকেলবেলা সবাই ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসলে হলরুমে শাওন রক্তিমের রুমে গিয়ে বললো,
~পৃথুলা আপাজান যে আমাদের সাথে যাবে তা কী আপনি জানেন?
রক্তিম বললো,
~জানি।
শাওন বললো,
~তুমি এখন কী করবে?
রক্তিম বললো,
~ধাক্কা মেরে সুইমিংপুলে ফেলে দিবো।
শাওন বললো,
~বেশ ভালো বুদ্ধি।
রক্তিমের বন্ধু শওকতও তাদের সাথে যাবে রক্তিম একটা মিনি বাস বুক করেছে বড়রা কেউই যাবে না।
সবাই এক এক করে বাসে চড়ে বসলো ইরা শাওনের পাশে বসে পরলো অধরা একা বসে আছে তার পাশের সীট খালি রক্তিম অধরার পাশে বসতেই সে নড়েচড়ে বসলো। পৃথুলা এসব দেখে শুধু ফুসছে সে কিছুই করতে পারছেনা পৃথুলার পাশে শওকত বসেছে।
অধরা একবার রক্তিমের দিকে তাকিয়ে আবার বাহিরে তাকালো বাস চলতে শুরু করলো।

রক্তিম ফোন টিপছে অধরা বাহিরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত প্রিয়া আর রায়হান ভালোবাসাময় খুনশুটিতে ব্যস্ত শাওন, ইরা আর শওকত কথায় ব্যস্ত পৃথুলা তাদের মধ্যে থেকে বোর হচ্ছে।শওকত বললো,
~পৃথুলা,শুনলাম যে তুমি খুব ভালো গান করো তাহলে একটু আমাদেরও শোনাও।
পৃথুলা বললো,
~আমার মাথাটা ধরেছে তোমরা প্লিজ চুপ থাকো।
শাওন বললো,
~আপাজান হাসপাতালে রেখে যাই আপনাকে সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসেন আমাদের মাঝে।
পৃথুলা বললো,
~বাজে কথা বন্ধ করো।
ইরা এবার রেগে গিয়ে বললো,
~আপু,তুমি সবসময় শাওন ভাইয়ার সাথে এভাবে কথা বলো আমি এবার মায়ের কাছে বিচার দিবো তোমার নামে।
শওকত বললো,

~আরে পিচ্চি এতো রাগ করছো কেন? শাওন এবার আমরা চুপ থাকি।
শাওন ইরার হাত ধরে সামনে টেনে বসালো পৃথুলা কানে ইয়ারফোন গুজে বসে রইলো।
অধরা ঝুমছে তার এখন ঘুম পাচ্ছে অধরা সীটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বুজে শুয়ে পরলো।গাড়ির ঝাঁকুনিতে অধরার মাথা রক্তিমের কাঁধে চলে আসে।অধরাও ঘুমের ঘোরে রক্তিমের হাত আকড়ে ধরে রক্তিম হাতে থাকা মোবাইল রেখে দিলো তারপর অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।যেন সে এটারই অপেক্ষা করছিল রক্তিম জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে সন্ধ্যা আকাশটা দেখতে অনেক ভালো লাগছে পাশে আছে তার প্রেয়সী।রক্তিম নিজেও চোখ বুজে নিলো পরম আবেশে তারা পিছনের সীটে বসার ফলে কেউই তাদের খেয়াল করছেনা।

রাত ৮টায় তারা রির্সোটে পৌছালো ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিতেই অধরার ঘুম ভেঙ্গে গেলো তখনই তার নজর পরলো রক্তিমের উপর সে প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পরক্ষণেই তার সব মনে পরে যায়।সে রক্তিমের হাত সরাতেই রক্তিম চোখ খুলে তাকালো তখনই ড্রাইভার বলে উঠলো,
~আমরা চলে এসেছি।
রক্তিম একবার ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে অধরা দিকে চোখ ফিরিয়ে দেখলো
দেখলো অধরা নিজ সীট থেকে উঠে বাস থেকে নিচে নেমে পরলো রক্তিমও বাস থেকে নেমে পরলো।এক এক করে সবাই বাস থেকে নেমে পরলো ব্যাগ নিয়ে রির্সোটের ভিতরে চলে গেলো।অধরা ইরার সাথে হেঁটে চলছে রক্তিম শওকতের সাথে কথা বলছে আড়চোখে অধরার দিকে তাকাচ্ছে।রির্সোটে গিয়ে রুমের চাবি নিয়ে রক্তিম সবার মাঝে চলে আসলো যার যার রুমের চাবি তাদের দিয়ে দিলো অধরা আর ইরা একই রুমে থাকবে।রক্তিম আর শওকত তাদের পাশের রুমটা নিয়েছে রক্তিম বললো,
~সবাই ফ্রেশ হয়ে চলে আসো একসাথে ডিনার করবো আমরা।
সবাই রুমে চলে গেলো অধরা রুমে এসেই ফ্রেশ হয়ে বসে পরলো ইরা তা দেখে বললো,

~আপু, তোমার কী মন খারাপ?
অধরা বললো,
~নাহ ইরা একটা কথা সত্যি সত্যি বলবি?
ইরা বললো,
~কী কথা আপু?
অধরা বললো,
~তুই আমার পাশের সীটে আজ বসলিনা কেন?
ইরা অধরার কথায় শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~খেয়াল করিনি আপু শাওন ভাইয়ের পাশে বসে পরেছিলাম তো তাই।
অধরা বললো,

~ইরা আমার সাথে আর কোনোদিন মিথ্যা বলবিনা আর আজ যেটা হয়েছে সেটা কোনোদিন করার চেষ্টা করবিনা।এসব যদি বড়চাচী জানে তাহলে আমার অবস্থা অনেক খারাপ হবে আমি চাই না এসব অশান্তি হোক।
বলেই অধরা বারান্দায় চলে আসলো ইরা একবার সেদিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
সবাই একসাথে ডিনারের জন্য বসেছে খোলা আকাশের নিচে সবাই বসে আছে।অধরা ইরার পাশে বসে আছে মুখটা তার ফ্যাকাশে হয়ে আছে হঠাৎ প্রিয়া বলে উঠলো,
~আমি শুনেছি এখানে একটা খুব সুন্দর পার্ক আছে আমরা কালকে সেখানে গিয়ে একবার ঘুরে আসি।
রক্তিম বললো,
~এখান থেকে বেশি সময় লাগবেনা মনে হচ্ছে সকাল ১০ টায় বের হলে খুব তাড়াতাড়ি পৌছে যেতে পারবো।
পৃথুলা বললো,
~আমার তো নৌকা ভ্রমণ করতে মন চাইছে চলো না সবাই আজ রাতে নৌকা ভ্রমণ করি এই রির্সোটেই সব ব্যবস্থা করা আছে।
রক্তিম বললো,

~আজ সবাই ক্লান্ত কালকে পার্ক থেকে এসে অবশ্যই সবাই নৌকা ভ্রমণে বের হবো।
সবাই রক্তিমের সাথে সহমত পোষন করলো ডিনার শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো অধরা ইরার সাথে কথা বলতে বলতে রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই রক্তিম পিছন থেকে বললো,
~অধরা,তোর সাথে আমার কথা আছে।
অধরা পিছন ফিরে একবার রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি খুব ক্লান্ত ঘুমাতে চাই।
ইরা বললো,
~আপু, একটু শুনে আসো ভাইয়া ডাকছে।
অধরা চোখ বড় বড় করে ইরার দিকে তাকাতেই সে চুপসে যায় রক্তিম তা দেখে বলে,
~চোখ বড় করে লাভ নেই ইরা তুই রুমে যা অধরা আমার সাথে যাবে।
অধরা এবার একটু রেগে গিয়ে বললো,
~আমি যাবো না কোথাও চল ইরা।
এতটুকু বলেই অধরা তার পাশে তাকালো আর দেখলো ইরা তার পাশে নেই।

ইরা তো অনেক আগেই এখান থেকে চলে গেছে বেচারি ওদের মাঝপ থাকতে চায় না তাই।রক্তিম অধরার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এসে অধরার হাত ধরে তার সাথে নিয়ে আসলো।রক্তিম অধরাকে নিয়ে রির্সোটের সুইমিংপুল সাইডে চলে গেলো অধরা রক্তিমকে কড়া গলায় বলে উঠলো,
~আমার হাত ছাড়ুন ভাইয়া এসব কেউ দেখলে আমার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে।
বলেই সে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো রক্তিম এবার রেগে গিয়ে অধরার হাত শক্ত করে ধরে নিজের কাছে টেনে এনে বললো,
~সবার কথা তোর শুনতে হবে এমন তো কোথাও লেখা নেই।ভালো কথা তুই শুনতে চাস না আর খারাপ কথা তোর কানে ঘর করে বসে থাকে।
অধরা অবাক নয়নে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে আছে রক্তিমের এমন ব্যবহার সে কোনোদিন আশা করেনি।
অধরা বললো,

~আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?
রক্তিম অধরাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যপাশ ঘুরে বললো,
~আমার সাথে রাতের আকাশ দেখবি অধরা?রাতের আকাশটা দেখতে খুবই সুন্দর।
অধরা রক্তিমের কথায় বিষম খেলো সে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো রক্তিমের দিকে। রক্তিম সুইমিংপুলে পা ভিজিয়ে বসে পরলো তারপর অধরাকে বললো,
~আয় আমার পাশে বস।
অধরাও নির্বাক হয়ে রক্তিম থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে বসে পরলো আকাশের চাঁদটার প্রতিচ্ছবি পানিতে ভেসে উঠেছে একদম পূর্ণিমার রাত আজ।
অধরা রক্তিমকে দেখতে ব্যস্ত নীল রঙ্গের শার্টটায় তাকে খুব মানিয়েছে অধরা শার্টটা খুব ধ্যান ধরে দেখলো তখনই সে খেয়াল করলো এই শার্টটা অধরা রক্তিমকে গিফট করেছিল তার জন্মদিনে। অধরা বললো,
~এই শার্টটা তো আমি আরো দুবছর আগে গিফট করেছিলাম আপনি এখনো সামলে রেখেছেন।
রক্তিম বললো,

~প্রিয় মানুষের দেওয়া জিনিস সামলে রাখতে জানি আমি।
অধরা রক্তিমের কথা শুনে সুইমিংপুলের পানির দিকে তাকিয়ে রইলো।রক্তিম বললো,
~তোর মন কেন খারাপ আমি কী জানতে পারি?
অধরা পানিতে পা নাড়াতে নাড়াতে বললো,
~জার্নি করে এসেছি তাই এমন লাগছে।
রক্তিম বললো,
~মিথ্যা বললে পেটে পোকা হয় ভুলে গেছিস দাদী বলতো যে।
অধরা হেসে বললো,
~হুম মনে আছে দাদী থাকতে সব ঠিক ছিল এখন তো সব
অধরা কথাটি শেষ না করেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রক্তিম স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে আছে যদি এই পানির মতো অধরার মনটাও দেখতে পারতো তাহলে হয়তো অধরার সব কষ্ট হয়তো দূর করে দিতে পারবো।
অধরা অন্যদিকে মুখ করে বললো,
~ঠান্ডা লাগছে ভাইয়া আমি রুমে যেতে চাই।
রক্তিম বললো,
~ঠিক আছে চল।
বলেই সে দাড়িয়ে পরলো নিজ হাতটা অধরার দিকে এগিয়ে দিলো অধরা একবার রক্তিমের দিকে তাকিয়ে সেই হাতটা আকড়ে ধরলো অধরা দাড়িয়ে পরতেই তার পা পিছলে যায় সে রক্তিমের উপর পরে যায়।রক্তিম অধরাকে শক্ত করে ধরে নিজেকে ব্যালেন্স করে ফেলে।অধরা রক্তিমের শার্ট আকড়ে ধরে আছে সে রক্তিমের চোখের দিকে তাকাতেই নিজ ধ্যান থেকে বের হয়ে আসলো।অধরা রক্তিম থেকে দূরে সরে আসলো রক্তিম বললো,
~যা রুমে চলে যা।
অধরা আর এক সেকেন্ডও সেখানে আর দাড়ালোনা দৌড়ে রুমে চলে আসলো।তাদের এই ঘটনা দূর থেকে কেউ ক্যামেরাবন্দী করে ফেলেছে সেই মানুষটার মনে যে প্রতিশোধের আগুন বইছে সে আর কেউ নয় পৃথুলা। সে মনে মনে বললো,
~এই ছবি গুলো বড় মামীকে না দেখালে বড্ড অপরাধ হয়ে যাবে।

সকালে সবাই নাস্তা করেই বের হয়ে যায় পার্কের উদ্দেশ্যে গাড়ি বুক করা হয়েছে সবাই গাড়িতে বসে পরেছে। ইরা এবার অধরার পাশে বসেছে পৃথুলা রক্তিমের সাথে বসতে চাইলেও শওকতের জন্য তা পারেনি শাওন আর পৃথুলা একসাথে বসেছে শাওন পৃথুলাকে বললো,
~আপাজান,কেমন আছেন?
পৃথুলা বললো,
~শাওন,কোনো ধরনের বেয়াদবি করবেনা।
শাওন বললো,
~এতো সুন্দর শ্রদ্ধা জানিয়ে কথা বললাম এটাকে বেয়াদবি বলে দিলে।
পৃথুলা বিরক্তি নিয়ে প্রিয়াকে বললো,
~প্রিয়া,তুমি যদি মাইন্ড না করো তাহলে রায়হান শাওনের সাথে বসুক আমি তোমার সাথে চলে আসি।
প্রিয়া রায়হানের হাত ধরে বললো,
~পৃথুলা আপু,নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে আমাদের আলাদা কেন থাকবো?
পৃথুলা নাক ফুলিয়ে বললো,

~ওকে ফাইন আমি সামনে ড্রাইভারের সাথে বসে পরবো।
বলেই সে দাড়িয়ে পরলো কিন্তু উঁচু হিলের জুতা পরার কারণে পৃথুলা হোঁচট খেয়ে পরে যায় তা দেখে সবাই মুখ টিপে হেসে ফেললো অধরা সীট থেকে উঠে পৃথুলাকে আকড়ে ধরে বললো,
~আপু,তুমি কোথাও ব্যাথা পাওনি তো?
পৃথুলা কোমড় ধরে অধরাকে ধমকে বললো,
~Stupid মেয়ে পরে গেছি আমি অবশ্যই ব্যাথা পেয়েছি।
পৃথুলার ব্যবহার দেখে ভড়কে উঠলো রক্তিম সে রেগে গিয়ে বললো,
~পৃথুলা,তোমার সাহায্য করার জন্য মেয়েটা এগিয়ে এসেছে আর তুমি।অধরা নিজ সীটে গিয়ে বসে পর এইসব মানুষদের সাহায্য করার কোনো দরকার নেই।
অধরা রক্তিমের কথা অগ্রাহ্য করে পৃথুলাকে নিজের সীটে বসিয়ে দিয়ে বললো,
~আপু,তুমি এখানে বসো আমি শাওন ভাইয়ার সাথে বসে পরবো।
অধরা শাওনের পাশের সীটে বসে পরলো রক্তিম রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
~সব নাটক শেষ হলে গাড়ি স্টার্ট করুন।
গাড়ি চলতে শুরু করলো সবাই আড্ডা দিচ্ছে তো গান গাইছে কিছুক্ষণ পর সবাই নিজ গন্তব্যে পৌছে গেলো।
সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরলো পার্কের ভিতরে প্রবেশ করতেই সবাই ঘুরতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। ইরা বললো,
~অধরা আপু,আমার ছবি তুলে দিবে কতো সুন্দর দৃশ্য দেখেছো।
অধরা বললো,
~গ্রামীণ ভাবে সব সাজানো হয়েছে।
ইরা বললো,
~অনেক সুন্দর আপু।তোমার তো এগুলো খুব পছন্দ

 তোমাকে চাই পর্ব ৩+৪

সারাদিন সবাই পার্কে কাটিয়ে রাতের খাবার খেয়ে রওনা দেয় রির্সোটের উদ্দেশ্যে। রক্তিম সবার উদ্দেশ্যে বললো,
~সবাই কী নৌকা ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত?
রায়হান বললো,
~আসলে ভাইয়া আমি আর প্রিয়া আলাদা একটা নৌকা নিতে চাই।
রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~কোনো চিন্তা করোনা সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রির্সোট পৌছে সবাই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নৌকা ভ্রমনের জন্য একত্রিত হয়ে চলে আসলো রির্সোটের অনেক ভিতরে।সেখানে গিয়ে দেখলো পানির চারপাশে আলোকিত করা আছে পুলের পাড়েই নৌকা গুলো বাঁধা আছে।প্রিয়া আর রায়হানের জন আলাদা করে একটা নৌকা সাজানো হয়েছে তারা সেটায় উঠে পরলো।আরেকটা নৌকায় শাওন, ইরা,শওকত উঠে পরলো অধরা যখন উঠতে যাবে তাদের সাথে তখনই শাওন পৃথুলার হাত ধরে তাদের নৌকায় উঠিয়ে বললো,
~এক নৌকায় চার জনের বেশি উঠতে পারবেনা।তুই আর রক্তিম ভাইয়া আলাদা নৌকায় চলে আয়।
পৃথুলা বললো,

~আমি তোদের সাথে যাবো না।
শাওন মাঝিকে বললো,
~আরে ভাই নৌকা কী দাড় করিয়ে রাখবেন?
শাওনের বলতে দেরি মাঝির নৌকা চালাতে দেরি হয়নি।পৃথুলা আর কিছুই করতে পারিনি সে নৌকায় দাড়িয়ে রক্তিম আর অধরার দিকে তাকিয়ে রইলো।
অধরা বললো,
~আমি রুমে চলে যাবো নৌকা ভ্রমণ করবো না।
রক্তিম বললো,
~তাহলে চল আমি আর তুই মিলে রেস্টুরেন্টে বসে থাকি।
তখনই অধরার মোবাইলে ম্যাসেজ আসলো শাওনের অধরা তা দেখতে লাগলো তাতে লেখা আছে
“আপু,আমার মোবাইলটা তোমার ব্যাগে প্লিজ সাবধানে নিয়ে আসবে তাই শাওন ভাইয়ার মোবাইল দিয়ে ম্যাসেজ করলাম”।
অধরা বিরক্তি নিয়ে বললো,
~আমাদের যেতে হবে ইরার ফোন আমার কাছে ওদের নৌকা কতদূর পর্যন্ত গিয়েছে?
রক্তিম বললো,
~বেশিদূরে যায়নি চল নৌকায় উঠতে হবে।
অধরা আর রক্তিম একসাথে নৌকায় উঠে পরলো মাঝি নৌকা চালাতে শুরু করলো প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার থেকে অধরা এখন বেশি চিন্তিত কারণ

 তোমাকে চাই পর্ব ৭+৮