তোমাকে চাই পর্ব ৩+৪

 তোমাকে চাই পর্ব ৩+৪
লেখনীতে Alisha Rahman Fiza

সেন্টারে পৌছে অধরা গাড়ি থেকে সবার আগে নেমে পরলো অধরাকে নামতে দেখে রক্তিম বললো,
~যেখানে দাঁড়িয়ে আছিস সেখানেই থাকবি।আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।
অধরা বললো,
~সবাই ভিতরে আমি এখানে কী করবো?
পৃথুলা বললো,
~হ্যাঁ রক্তিম। অধরা চলে যাক আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
রক্তিম এবার ধমক দিয়ে বললো,
~পৃথুলা তুই আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা আমার মুখ থেকে এমন ভয়াবহ কিছু বের হয়ে যাবে।যেটা তোর জন্য অনেক অপমানজনক হবে
পৃথুলা একবার অধরার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলো ভিতরে।অধরার দিকে গরম চোখে তাকালো রক্তিম অধরা চুপ হয়ে সেখানেই দাড়িয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর রক্তিম গাড়ি পার্ক করে অধরার কাছে চলে আসে অধরা রক্তিমকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে হালকা মেরুন রঙ্গের পাঞ্জাবি পরেছে রক্তিম হাতে কালো ঘড়ি চুলগুলো সুন্দর করে সেট করা আছে।রক্তিম অধরার এহেন চাহনি দেখে বললো,

~এখানেই দাড়িয়ে থাকবি নাকি ভিতরেও যাবি।
অধরা চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
~হুম আপনিই তো দাড়িয়ে থাকতে বলেছেন।
রক্তিম কথা না বাড়িয়ে হাঁটা ধরলো অধরাও তার পিছে পিছে হাঁটা ধরলো।সেন্টারের ভিতরে ডুকতেই রক্তিমকে তার ফ্রেন্ড সার্কেল ঘিরে ধরলো অধরা তাদের থেকে সরে আসলো একবার রক্তিমের হাসি-মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো।অধরা মনে মনে বললো,
~মানুষটা বড্ড ফেমাস এমন মানুষের আশেপাশে থাকলে নিজেকে খুকি মনে হয়।
অধরার ভাবনার মাঝে শাওন এসে বললো,
~কীরে দেখেছিস আমার ভাইয়ের দাপট একদম বাঘ তার আগমনে সবাই কেমন করছে।
অধরা বললো,
~শুনো শাওন ভাইয়া সে সবার সাহায্য করে এলাকার প্রতিটা মানুষ তাকে ভালোবাসে তাই তার এতোটা চাহিদা।
শাওন বললো,
~কতো মেয়ে যে পাগল ভাইয়ের জন্য হিসেব নেই।
অধরা মুচকও হেসে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~কোটিপতির মেয়ে আছে নাকি লাইনে থাকলে বিয়ে করিয়ে দেও দেখবে বড়চাচি তোমায় মাথায় নিয়ে নাচবে।
বলেই অধরা ইরার কাছে চলে গেলো এতটুকু কথা বলতে অধরার অনেক কষ্ট হয়েছে কিন্তু সে এই কষ্টকে নিজের মনে ঘর বানাতে দিবে না।”বামুন হয়ে সে চাঁদের আশা করে না” অধরা ইরার পাশে এসে দাড়ালো।শাওন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রক্তিমের কাছে চলে গেলো তার মনটা একটু হলেও খারাপ হয়ে গেছে।
রক্তিম সবার সাথে কথা বলছে বেশ শালীন ভাবে নিজের কাজ করছে বেশ বিচক্ষণতা দিয়ে।রক্তিমের বন্ধুরা তার কাছে এসে দাড়ালো বলতে গেলে রক্তিমের নিজের এক গ্যাং রয়েছে সেই স্কুল লাইফ থেকে তারা সবাই একসাথে।তাদের মধ্যে থেকে শওকত রক্তিমের অনেক কাছের শওকত রক্তিমের পিঠ চাপরে বললো,

~তা বোনের বিয়ে দেখে আমাদের ভুলে গেলি?
রক্তিম বললো,
~তোদের সাথে বসে থাকলে আমার কাজও বসে থাকবে।
মাহাদী বললো,
~দোস্ত গায়ে হলুদ তো সেই ছিল আর বিয়ের অনুষ্ঠান তো আরো বেশি জোস।
ফারাবী বললো,
~তোর কাছে তো সবই জোস।এই রক্তিম শোন আমি কিন্তু ডবল খাবো
রক্তিম বললো,
~খাদক কোথাকার আচ্ছা তোরা enjoy কর আমি আসছি।
শওকত বললো,
~চল আমিও যাবো তোর সাথে।
শওকত আর রক্তিম খাবার অ্যারেঞ্জমেন্ট দেখছে শওকত বললো,
~অধরা তোর দেওয়া ড্রেসটা পরেনি কেন?
রক্তিম বললো,
~আমার ড্রেস থেকেও দামী ড্রেস সে পরে আছে।চাচা তাকে ওই ড্রেসটা দিয়েছে।
শওকত বললো,
~রক্তিম কোনোকিছু নিয়ে এতো দেরি করা ভালো না।পরে কিন্তু অবস্থা খারাপ হবে।
রক্তিম বললো,
~এই রক্তিম হোসেন কোনো কাজ অসম্পূর্ণ রাখেনা।

শাওন এক কোণায় দাড়িয়ে তার মা ইলিনা চৌধুরীর অহংকার দেখছে এলাকার মানুষদের কাছে নিজ গহনার প্রশংসা করতে করতে অস্থির সে।শাওন ইলিনা চৌধুরীর কাছে গিয়ে বললো,
~মা, চলো আমার সাথে কয়েকটা ছবি তুলো।
ইলিনা চৌধুরী খুশিতে খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন,
~বাবা তুই আমার সাথে ছবি তুলবি লক্ষ্মী বাবা আমার।
শাওন বললো,
~তা তো তুলতেই সব গহনার হিসাব আমি রাখতে চাই যাতে আমার বউয়ের বেলায় কোনো গহনার কমতি যাতে না হয়।
শাওনের কথা শুনে ইলিনা চৌধুরীর হাসি মাখা মুখ চুপসে গেলো সে বললো,
~আমার গহনা তোর বউকে দিতে যাবো কেন?তুই দিবি তোর বউকে।
শাওন বললো,
~তাহলে এসব গহনা কী করবে বুড়ো বয়সে পরে ঘুরবে?
ইলিনা চৌধুরী বললো,
~যাহ তো এখান থেকে তোর কথা শুনে আবার মুড নষ্ট করতে চাই না।
শাওন বললো,
~ওকে তুমি থাকো তোমার মুড নিয়ে।
শাওন উল্টোপথে হাঁটা ধরলো প্রিয়া স্টেজে নানান ধরনের ছবি তুলতে ব্যস্ত ইরাও রয়েছে তার সাথে পৃথুলা একা দাড়িয়ে নিজ ইচ্ছা মতো ছবি তুলছে

অধরাকে প্রিয়া ডেকে নিয়ে নিজের সাথে দাড় করিয়ে ছবি তুলতে লাগলো তখনই শাওন এসে বললো,
~বরযাত্রা এসে পরেছে।ইরা, অধরা তাড়াতাড়ি নিচে চল।
বাহিরে আতঁশবাজির আওয়াজ আসছে ইরা আর অধরা নিচে নেমে গেইট ধরে দাড়িয়ে আছে আজ কোনো মতেই তারা ছাড় দিবেনা।রক্তিম আর শাওন তাদের আশেপাশেই আছে যদি কোনো সমস্যা হয় তারা সামলিয়ে নিবে।রক্তিম অধরার কাছাকাছি দাড়িয়ে আছে রায়হান গাড়ি থেকে নামতেই সবাই হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠলো রায়হান ইর আর অধরার সামনে এসে দাড়ালো সাথে আছে রাহাত আর তার বন্ধুরা।রায়হান বললো,
~শালী সাহেবা কী চাই আপনাদের?বউ যে আমার অপেক্ষা করছে।
অধরা বললো,
~ওগো দুলাভাই বউয়ের কাছে তো যেতে পারবেন না। যদি শালী সাহেবাদের হাতে দেন ১০,০০০ টাকা তবেই খুলবে বউয়ের কাছে যাওয়ার দুয়ার।
রাহাত বললো,
~আরে ভাইয়া রে তোর শালীরা জোস কবিতা বলতে পারে।
অধরা রাহাত কে ইগনোর করে বললো,
~দিবেন তো শালীদের হাতে নগদ টাকা।
রায়হান বললো,
~না দিয়ে কী উপায় আছে আমার?
ইরা বললো,
~আহারে বেচারা পায়না যে বউয়ের দেখা।

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো রায়হান পকেট থেকে টাকা বের করে অধরার হাতে দিয়ে দিলো অতঃপর রায়হান ভিতরে ঢোকার সুযোগ পেলে।অধরা হাতের জিনিস টেবিলে রেখে যেই না চলে আসতে নিবে তখনই রাহাত এসে বললো,
~অধরা আজও তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তা রূপের রহস্য কী?
অধরা বললো,
~২ গ্লাস করোল্লার জুস প্রতিদিন আপনার এই বোরিং চেহারা একদম সুন্দর হয়ে যাবে।
অধরা এতটুকু বলে সেখান থেকে চলে আসে রাহাত সেখানেই দাড়িয়ে নিজ অপমানের জন্য ফুসছে।
রক্তিম অধরাকে এতো রাগী মুডে দেখে তার কাছে চলে আসে অধরা রক্তিমকে দেখে নিজেকে সামলে নিলো।রাহাতের কথা শুনে আর তার ব্যবহারে রাগ হচ্ছে প্রচুর রক্তিম অধরার পাশে দাড়িয়ে বললো,
~কী হয়েছে?
অধরা বললো,
~না কিছু না।
রক্তিম বললো,
~একদম মিথ্যা বলবিনা রাহাত কিছু করেছে?
অধরা অবাক চোখে রক্তিমের দিকে তাকালো রক্তিম বললো,
~কি করেছে?
অধরা জানে রক্তিম জানলে এখানে অনেক খারাপ কিছু হয়ে যাবে তাই অধরা বললো,
~কিছু না আপনি শুধু শুধু এসব ভেবে মাথা নষ্ট করবেন না।
অধরা নিজ কথা শেষ করে সেখান থেকে চলে গেলো রক্তিম নাক ফুলিয়ে ফোন বের করে শওকত কে ফোন করে বললো,
~রাহাত ছেলেটার উপর নজর রাখবি।
বলেই সে খট করে ফোন রেখে মেহমানদের কাছে চলে যায়।

প্রিয়া আর রায়হানের বিয়ের কার্যক্রম শুরু হলো কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলো প্রিয়াকে কবুল বলতে বলা হয় সে কিছুক্ষন সময় নিয়ে কবুল বলে দেয়।রায়হানের কাছে গিয়ে তাকে কবুল বলতে বললে সে দ্রুত কবুল বলে দেয়।সবাই তাদের মন ভরে দোয়া করে দেয় যাতে তাদের বিবাহিত জীবন সুখের হোক।বিয়ের সব কাজ শেষ হওয়ার পর সবাই খেতে বসলো অধরা, ইরা অতিথি আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত।হঠাৎ রাহাত অধরাকে ডেকে তার টেবিলের সামনে নিয়ে আসে আর বললো,
~অধরা,তুমি যদি আমার প্লেটে খাবার পরিবেশন করতে তাহলে আমার জীবন ধন্য হয়ে যেতো।
অধরা না চাইতেও রাহাতের প্লেটে খাবার তুলে দিতে লাগলো রাহাত অধরার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছে হঠাৎ সে অধরার হাত ধরে ফেলে অধরা বড় বড় চোখে রাহাতের দিকে তাকাতেই সে হাত ছেড়ে দুষ্ট হেসে বললো,

~ভুলে হাত লেগে গেছে।
অধরা সেখান থেকে দ্রুত পায়ে হেঁটে ইরার কাছে চলে যায়।সবাই ব্যস্ত থাকার কারণে এ ঘটনা কারো চোখে পরেনি কিন্তু একজনের চোখ এসব এড়ায়নি ব্যক্তির চোখ লালবর্ণ ধারন করেছে রাগে তার সমস্ত শরীর কাঁপছে তবুও নিজেকে ঠান্ডা রাখছে।সেই ব্যক্তিটি আর কেউ না রক্তিম সে রাগ কন্ট্রোল করার জন্য হাতে থাকা গ্লাসটা ফ্লোরে আছাড় মেরে ফেলে দেয় চেচামেচিতে কেউই খেয়াল করেনি। শওকত এসে রক্তিমকে সেখান থেকে নিয়ে চলে আসে সেন্টারের বাহিরে খালি জায়গা টায় নিয়ে যায় রক্তিমকে।রক্তিম বললো,
~শওকত,আমি ওকে জানে মেরে ফেলবো কতো বড় সাহস আমি ওকে ছাড়বো না।

শওকত রক্তিমের এ রূপ দেখে শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~দোস্ত তুই শান্ত হ তোর বোনের বিয়ে সব নষ্ট হয়ে যাবে।
রক্তিম চোখ বন্ধ করে নিজের রাগকে সামলাতে লাগলো রক্তিম শওকতের কাঁধে হাত রেখে বললো,
~চল ভিতরে আমি ঠিক আছি।
শওকত বললো,
~ঠিক আছে মাথা ঠান্ডা রাখবি।
রক্তিমকে নিয়ে শওকত ভিতরে চলে আসলো সবাই ব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করছে।
বিদায়ের সময় চলে আসলো প্রিয়া আইয়ুব হোসেন কে ধরে চোখের পানি ফেলছে। জোহোরা খাতুন মেয়ের জন্য কাঁদছে এতো আদরের মেয়ে আজ পরের ঘরে চলে যাচ্ছে।প্রিয়া অধরা আর ইরাকে ধরে অনেক কান্না করলো পৃথুলাও প্রিয়ার জন্য দুফোটা চোখের পানি ফেললো।সবার থেকে বিদায় নিয়ে প্রিয়া রক্তিমের হাত ধরে বললো,
~ভাইয়া রাগ সামলে রাখবে এতো রাগ ভালো না।
রক্তিম বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~চেষ্টা করবো।
রক্তিম প্রিয়াকে রায়হানের হাতে তুলে দিলো প্রিয়া আর রায়হান গাড়িতে বসে পরলো। রক্তিম গাড়ির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো সব মেহমানদের বিদায় দিতে লাগলো রাহাত রক্তিমের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
~Bye bro.কালকে দেখা হবে আমাদের বাসায়।

রক্তিম রাহাতের হাতের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে শক্ত করে তার হাতটা ধরে মুচরে দিলে যাতে করে রাহাত ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো আর আহহ বলে আস্তে করে চিৎকার করে উঠলো।রক্তিম হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললো,
~sorry bro.আসলে ভুলে এমনটা হয়ে গেছে।
রাহাত হাত ঝাড়া দিতে দিতে বলে,
~its okay.
বলেই সে গাড়িতে উঠে পরলো রক্তিম বাঁকা হেসে গাড়ির দিকে তাকিয়ে রইলো।সব কাজ শেষ করে সবাই বাসায় ফিরে আসলো সবাই বেশ ক্লান্ত তাই যে যার রুমে চলে গেলো অধরা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো অধরা ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রক্তিম ফোন করেছে।অধরা একটু চিন্তায় পরে গেলো সে মনে মনে বললো,
~রক্তিম ভাইয়া আমাকে এখন কেন ফোন করছে?
আবারো ফোনটা বেজে উঠলো অধরা ফোন রিসিভ করতেই রক্তিম বলে উঠলো,

~ছাদে আয় তোর সাথে কথা আছে।
অধরা বললো,
~এত রাতে ছাদে আমি আসতে পারবো না।
রক্তিম শক্ত কন্ঠে বললো,
~আমি তোর রুমে চলে আসবো তখন যেটা হবে সেটা তুই সামলাবি।
অধরা হতভম্বের মতো চুপ করে রইলো রক্তিম আবার বললো,
~কী করবি তাড়াতাড়ি বল।
অধরা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
~আসছি আমি।
অধরার কথা শুনে রক্তিম ফোন কেটে দিলো অধরা ওড়ানাট মাথায় জড়িয়ে দরজা খুলে ছাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরলো।
অধরার মনটা ঢিপঢিপ করছে না জানি কী হয়?অধরা সিড়ি বেয়ে ছাদের দরজা ঠেলে ভিতরে চলে গেলো সামনে তাকিয়ে দেখলো রক্তিম
রক্তিম ছাদের রেলিং ধরে আকাশপাণে তাকিয়ে আছে পাঞ্জাবিটা পাল্টে অফ হোয়াইট রঙ্গের শার্ট আর টাউজার পরে আছে।হাতে তার সেই কালো ঘড়ি অধরা বুঝে না এই ঘড়িটা এতো স্পেশাল কেন তার কাছে?সবসময় এটা পরেই থাকতে হবে অধরা নিজ ভাবনা থেকে বের হয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো রক্তিমের কাছে তার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে অধরা দাড়ালো।রক্তিম আকাশপাণে তাকিয়ে থেকেই বললো,

~চাচা,যে বাসা থেকে চলে যেতে চাইছে এটাকে তুই জানিস?
রক্তিমের প্রশ্নে অনেকটাই ঘাবড়ে গেলো সে কারণ রক্তিমের কন্ঠাটা তার কাছে ভালো ঠেকছেনা।অধরা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~জানি।
রক্তিম একইভাবে দাড়িয়ে রইলো আর বললো,
~এই ভাবনাটা চাচার মনে উদয় হলো কী করে তা কী জানতে পারি?
অধরা একটু পিছিয়ে গিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
~আমি বলেছি তাই।
রক্তিম এবার বাঁকা হেসে অধরার দিকে ফিরে দাড়ালো অধরা মাথানিচু করে দাড়িয়ে আছে রক্তিম বললো,
~কত বড় হয়েগেছিস তাই না অধরা?
রক্তিমের কথা শুনে অধরা চুপ করে রইলো রক্তিম বললো,
~এতো বড় হয়েগেছিস যে এখন আলাদা থাকার প্ল্যান করছিস।
অধরা মাথানিচু রেখে বললো,

~আমি নিজের ইচ্ছাই এমন করছিনা আপনার মা আর ছোট চাচী সবসময় আমার মাকে অপমান করে।আমি কিছু বলতে পারিনা বাবা আপনাদের অমতে কিছু বলতে পারে না এবং কী নিজ মেয়ের ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা।আপনি আমার জায়গায় হলে কী এসব মেনে নিতেন?আমি তো খুব ভালো কলেজে চান্স পেয়েছিলাম ছোট চাচার কথায় বাবা আমাকে সেই কলেজে ভর্তি করালো এসবের কোনো জবাব আছে।
একনাগাড়ে কথা গুলো বলে অধরা হুহু করে কেঁদে উঠলো রক্তিম ভাবলেশহীন ভাবে সব কথা শুনলো তারপর অধরার কাছে গিয়ে বললো,
~শাওন,ইরা,প্রিয়াকে ছাড়া থাকতে পারবি?আমার কথা তো বাদ দিলাম কারণ আমি তো তোর লিস্টে পরিনা।এখন তুই বল ওদের ছাড়া থাকতে পারবি?
অধরা অশ্রুসিক্ত নয়নে রক্তিমের দিকে মাথা তুলে তাকালো রক্তিম সেই চোখের গভীরতা মাপতে থাকলো অধরা কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো,
~তাদের ছাড়া থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে যাবে মানুষ তো অভ্যাসের দাস।কতো কিছু অভ্যাসে পরিণত করেছি তা আপনি জানেন না।
অধরার কথা শুনে রক্তিমের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় হাত দুটো মুঠো করে বললো,
~চলে যা আমার সামনে থেকে।

বলেই সে আবার রেলিং ধরে আকাশ-পাণে তাকিয়ে রইলো অধরা একবার রক্তিমের দিকে তাকিয়ে থেকে দৌড়ে ছাদ থেকে চলে আসে নিজ রুমে।দরজাটা বন্ধ করে ঢুলুঢুলু পায়ে হেঁটে ড্রয়ারটা খুলে একটা ডাইরি বের করলো আর তাতে লিখলো,
“মনের আঙ্গিনায় তোমার প্রবেশ নিষিদ্ধ করলাম আমি
জানি এতে মন পুড়বে তবুও চাই দূরে থাকো তুমি আমার থেকে”
এতটুকু লিখতেই অধরার চোখের পানি গুলো ডাইরির পাতা গুলোকে ভিজিয়ে দিলো।অধরা স্টাডি টেবিলে মাথা রেখে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো।
রক্তিম এখনো ছাদে দাড়িয়ে আছে তখনই কেউ তার কাঁধে হাত রাখে রক্তিম সেই হাতের মালিকে দিকে তাকিয়ে দেখে সে আর কেউ নয় শাওন।রক্তিম আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
~রাত কয়টা বাজে এখন পর্যন্ত কেন ঘুমাসনি?
শাওন বললো,
~পানি নিতে এসেছিলাম তারপর দেখলাম তোমার ঘরের দরজা খোলা তাই ভাবলাম তুমি ছাদে।
রক্তিম বললো,
~ঘরে গিয়ে শুয়ে পর।
শাওন বললো,
~কেন ভাইয়া নিজ অনুভূতি কেন লুকিয়ে বেড়াও?এতে তোমারই ক্ষতি।
রক্তিম মেকি হেসে বললো,
~লাভ-ক্ষতি জানিনা আমি কিন্তু যেটা একবার ভেবেছি সেটা আমি করে ছাড়বো।

শাওন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~চলো ভাইয়া নিচে যাই।
রক্তিম বললো,
~তুই যা আমি আসছি।
শাওন একবার রক্তিমের দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে সেখান থেকে চলে গেলো।রক্তিম রাতের আধারে ছাদে দাড়িয়ে রইলো আর মনে মনে বললো,
~প্রিয়তমার কাছে যাওয়ার সময় এসে পরেছে।
আযানের শব্দে অধরার ঘুম ভেঙ্গে যায় সে চোখ খুলে নিজেকে স্টাডি টেবিলে আবিষ্কার করলো কিছুক্ষন ভাবার পর অধরার কালকে রাতের কথা সব মনে যায়।অধরার মনটা বিষাদে ভরে উঠে সে চেয়ার ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে বাহিরে এসে নামাজ পরে নিলো।মনটাকপ শান্ত করে সে বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে পরলো ভোরের শুভ্রতা দেখল তার মনটা ভালো হয়ে যায়।হিমেল হাওয়া অধরার শরীরকে ছুয়ে যাচ্ছে অধরা চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে।কিছুক্ষণ এভাবে থেকে সে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো রক্তিম বাসার ভিতরে প্রবেশ করছে পরণে তার সাদা পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি অধরা একধ্যানে সেখানে তাকিয়ে রইলো।রক্তিম চোখ তুলে অধরার বারান্দার দিকে তাকাতেই তাদের চোখে চোখ পরে গেলো অধরা নিজের চোখ সরিয়ে দ্রুত গতিতে ঘরের ভিতর ডুকল পরলো।রক্তিম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভিতরে চলে আসলো সিড়ি বেয়ে নিজ রুমে যেতে নিলো তখনই পৃথুলা এসে রক্তিমকে জড়িয়ে ধরলল।ঘটনার আকস্মিকতায় রক্তিম হকচকিয়ে গেলো রক্তিম পৃথুলাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বললো,

~বেয়াদব মেয়ে এতো বড় সাহস কী করে হয় রক্তিম হোসেনকে স্পর্শ করার?
পৃথুলা রক্তিমের দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে রক্তিমের দিকে এতে রক্তিম আরো রেগে গিয়ে বললো,
~ফুপি তোকে কোনো শিক্ষা দিতে পারেনি অন্যের সন্তানদের লেকচার ঠিকই দিতে পারে কিন্তু নিজ সন্তানকে কোনে শিক্ষা দিতে পারেনি।
বলেই সে গটগট করে নিজ রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো পৃথুলার চোখ লাল বর্ণ ধারণ করলো সে মনে মনে বললো,
~আজ তুমি বলে ছেড়ে দিলাম রক্তিম কিন্তু অন্য কেউ হলে হয়তো
এতটুকু ভেবে পৃথুলা সেখান থেকে চলে যায় তাদের এই ঘটনা কেউ একজন আড়াল থেকে দেখছে সেই ব্যক্তিটি আর কেউ না পৃথুলার মা রোকেয়া হোসেন।সে রাগে ফুসছে আর মনে মনে বললো,
~এটার জন্য শাস্তি তো পেতে হবেই।
অধরা মায়ের সাথে নাস্তা তৈরি করতে সাহায্য করছে সবাই এখনো ঘুমে কুপোকাত।তাহিদা ইসলাম বললেন,
~কফিটা রক্তিমকে দিয়ে আয় বেচারা সকাল থেকে কাজ করছে।
অধরা রুটি বেলতে বেলতে বললো,
~মা,তুমি দিয়ে আসো আমি এগুলো দেখছি।
তাহিদা ইসলাম বললেন,

~অধরা,আজকাল তুই না শব্দটা অনেক ব্যবহার করছিস আমি যা বলেছি তাই করবি।
অধরা কফির মগটা নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে রক্তিমের ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
আইয়ুব হোসেন নিজ ঘরে বসে জোহোরা খাতুনকে বলছেন,
~তৈয়ুব, বাসা থেকে চলে যেতে চায়।
জোহোরা খাতুন মনে মনে খুশি হয়ে যায় এই কথাটা শুনে কিন্তু নিজ খুশিকে দমিয়ে রেখে বললেন,
~দেখেছেন তাহিদার কাজ আমার ভালো দেবরটার মাথা খেয়েছে আর ওর মেয়ে তো আরেক
জোহোরা খাতুনের কথা শেষ করতে না দিয়ে আইয়ুব হোসেন বললেন,
~এসব কথা রাখো আমি তৈয়ুবকে কোথাও যেতে দিবো না ভুলে যেও না বাবা ওকে অনেক সম্পত্তি দিয়ে গেছে আমরা ওকে এ ব্যাপারে কিছুই জানতে দেয়নি।
জোহোরা খাতুন বললেন,
~আপনি কী করতে চাইছেন?
আইয়ুব হোসেন হেসে বললেন,
~সময় হলে সব বুঝবে।
অধরা রক্তিমের ঘরের সামনে এসে দরজায় টোকা দিতেই ভিতর থেকে রক্তিম বললো,
~চলে আয়।
অধরা দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকে দেখলো

রক্তিম ডিভানে বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে অধরা বললো,
~আপনার কফি।
রক্তিম বললো,
~টেবিলে রেখে দে।
অধরা কফির মগটা টেবিলে রেখে চলে যেতে নিবে তখনই রক্তিম বললো,
~আমার শার্টটা আইরন করে দে বের করে রাখা আছে।
অধরা কিছু না বলে শার্টটা হাতে নিয়ে চলে যেতে রক্তিম তাকে থামিয়ে বললো,
~এখানেই কর আর দ্রুত করবি।
অধরা বললো,
~আমার রুমে গিয়ে করি?
রক্তিম বললো,
~নাহ।

অধরা বাধ্য হয়ে রক্তিমের ঘরেই আইরন করা শুরু করলো রক্তিম তা দেখে মুচকি হেসে নিজ কাজে মনোযোগ দিলো।
সবাই একসাথে নাস্তা করতে বসেছে আইয়ুব হোসেন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
~আজ প্রিয়া শশুড় বাড়ি যেতে হবে রাতে সবাই যেন তৈরি থাকে আর হ্যা রক্তিম তুমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসবে।
রক্তিম বললো,
~ok বাবা আমি চলে আসবো তাড়াতাড়ি।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~আমি চাই সবাই সেখানে শালীন ভাবেই যাবে কোনো ধরনের সমস্যা আমি চাই না।
রোকেয়া হোসেন বললেন,
~বড় ভাইজান আমার যে আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~রুমে আয়।
আইয়ুব হোসেন চেয়ার ছেড়ে নিজ রুমে চলে গেলো রোকেয়া হোসেন বাঁকা হেসে তার পিছে পিছে চললেন।
রক্তিম অফিসে যাওয়ার জন্য বের হবে তখন সে উচ্চস্বরে অধরার নাম ধরে ডেকে উঠলো।অধরা হাতের কাজ ফেলে দরজার সামনে চলে আসলো রক্তিম বললো,

~আমার দেওয়া ড্রেসটা আজ পরবি কথাটা মনে থাকে যেনো মনে থাকে।
অধরাকে কিছু না বলতে দিয়েই রক্তিন সেখান থেকে চলে গেলো অধরা রক্তিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
রোকেয়া হোসেন কাঁদো কাঁদো হয়ে আইয়ুব হোসেনকে বললেন,
~বড়ভাইজান আপনি তো জানেন পৃথুলার বাবা নেই কতো কষ্ট করে আমি তাকে মানুষ করেছি।এখন ওর বিয়ের বয়স হয়েছে আমি চাইছি পৃথুলা আর রক্তিমের বিয়েটা যাতে হয়ে যায়।
আইয়ুব হোসেন বোনের সকল পরিকল্পনা বুঝে নিলেন সে বললেন,
~এতো তাড়াহুড়ার কোনো কারণ নেই আমি এখন এসব নিয়ে ভাবছিনা।
রোকেয়া হোসেন বললেন,
~ভাইজান কী ভুলে যাচ্ছেন আমার ভাগের সব সম্পত্তি আপনাকে কেন দিয়েছিলাম?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~ভুলতে চাইলেও তুমি ভুলতে দেওনা।
রোকেয়া হোসেন বললেন,
~না ভোলাই ভালো ভাইজান।

ইরা আর অধরা একসাথে বসে কথা বলছে নানান বিষয়ে পৃথুলা সেখানে উপস্থিত হলো।পৃথুলা বললো,
~অধরা,তোমাকে মা ডাকছে।
অধরা বললো,
~আসছি আপু।
অধরা তাদের রেখে চলে গেলো রোকেয়া হোসেনের ঘরে আর বললো,
~ফুপি আমায় ডেকেছেন।
রোকেয়া হোসেন বললেন,
~হ্যাঁ ভিতরে আয় তো।
অধরা ভিতরে এসে বিছানার পাশে দাড়ালো রোকেয়া হোসেন ব্যাগ থেকে তার মোবাইল বের করে বললেন,
~তোর কয়েকটা ছবি তুলবো অনেক ভালো ছেলের খোজ পেয়েছি ভাবছি তোর কথা বলবো।
অধরা আকাশ থেকে পরলো এমন কথা শুনে সে সঙ্গে সঙ্গে বললো,
~কী বলছেন ফুপি?আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা।
রোকেয়া হোসেন বিরক্তি নিয়প বললেন,
~দেখলেই কী বিয়ে হয়ে যাবে নাকি?এতো ভাবিস না
অধরা কাঠ কাঠ গলায় বলে দিলো,

 তোমাকে চাই পর্ব ১+২

~আমাকে মাফ করবেন এসবে আমি নেই।
বলেই সে গটগট করে সেখান থেকে চলে গেলো রোকেয়া হোসেন অধরার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে বললো,
~আগুন তো দুই সাইড থেকেই মনে হয় লেগেছে।
অধরা আর রোকেয়া হোসেনের সব কথা শাওন শুনে ফেলেছে তাই সে দ্রুত তার ফোন বের করে রক্তিমকে সবটা জানিয়ে দেয়।
অধরা নিজ রুমে এসে পায়চারি করতে থাকে তার মনের ভিতর একটাই প্রশ্ন তার ফুপি এসব ভাবছে কেন?আর বাবা যদি রাজি হয়ে যায় তাহলে কী হবে?অধরা আর ভাবতে পারলোনা সে ফ্লোরে বসে পরলে তার ইচ্ছা করছে নিজের সবটি চুল ছিড়ে ফেলতে।
রক্তিম অফিস থেকে ফিরে এসেছে শাওন তার রুমে বসে আছে রক্তিমের এমন ঠান্ডা attitude দেখে সে অনেকটাই অবাক হয়ে আছে।শাওন বললো,

~ভাইয়া কোনো কিছু বলছো না যে?
রক্তিম বললো,
~আগে আমাকে রেডি তো হতে দে বোনের বাড়ি যাচ্ছি আজ।
শাওন বললো,
~নির্ঘাত বড় কিছু করবে তুমি?
রক্তিম চুল সেট করতে করতে বললো,
~কিছুই করবো না তুই এতো টেনশন নিস না।
শাওন বললো,
~যাই ফুপির জন্য গাড়ি ঠিক করে রাখি আজকেই এই বাসায় ফুপির শেষ দিন।
রক্তিম কিছু না বলে বাঁকা হেসে একবার আয়নায় নিজেকে দেখে রুম থেকে বের হয়ে আসে।অধরা রক্তিমের দেওয়া কালো গাউনটা করেছে তাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে ইরা অধরাকে দেখে বললো,

~আপুকে আজ ফাটাফাটি লাগছে।
অধরা বললো,
~তোকেও আজ অনেক সুন্দর লাগছে।
কথা বলতে বলতে তারা বের হয়ে আসলো রুম থেকে তখনই অধরার পা গাউনে আঁটকে সে পরে যেতে নিল কিন্তু এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত অধরাকে ধরে ফেললো।
অধরা মুখ তুলে সেই ব্যক্তিটি কে দেখে তার দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইলো কারণ সেই মানুষটি হচ্ছে

 তোমাকে চাই পর্ব ৫+৬