তোমাতে বিভোর পর্ব ১২ || Sapna Farin

তোমাতে বিভোর পর্ব ১২
Sapna Farin

–“ছোট ম্যাডাম আপনার অবস্থা দেখে!আমার মনে খুলে ফ্লোরে বসে কেঁদে যেতে ইচ্ছে করছে।কি করবো বলেন?আপনাকে ঘুম থেকে উঠানোর দ্বায়িত্ব,আমার উপর এসে পড়েছে।আপনার জন্য আমার চাকরিটা না চলে যায়!কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি কোন সারা দিচ্ছেন না।দু’একটা শব্দ বলে আবার ঘুমিয়ে যাচ্ছেন।এভাবে চলে বলেন!মেহমান আপনার জন্য আসছে।এখানে আপনি বলে যাচ্ছেন মেহমান আসবে আপনার কি?আপনার কথা শুনে আমার এখন উপরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।আপনি তো আছেন আপনার মতো।কিসের মেহমান আসবে কিভাবে জানবেন।আপনি তো সময় মতো বাসায় থাকেন না।”

–লতার কথা গুলো আভার কান পর্যন্ত পৌছাঁলো না।তার কোন ভ্রুক্ষেপ হলো না।সে আড়মোড়া হয়ে ঘুমিয়ে যায়।আভার এমন অবস্থা দেখে লতার চোখ গুলো গোলগোল হয়ে যায়।মুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে।কপাল বেয়ে কয়েক ফোটা ঘাম গড়িয়ে পড়ে।তখন সে বলে উঠে।

–“ছোট ম্যাডাম মেহমান আপনার জন্য আসছে।আপনাকে দেখতে আপনার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।ছেলেপক্ষ আপনাকে দেখতে আসছে।উঠেন তাড়াতাড়ি।দেরি হলো আজকে শেষ রক্ষা হবেনা আমার।অনেক কথা শুনতে হবে আমাকে বড় সাহেবের কাছে থেকে।মনে হয় আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি বেজে যাবে আপনার জন্য।এমন করবেন না ছোট ম্যাডাম দয়া করে উঠেন।তারা মনে হয় এসে পড়লো।এভাবে আপনি ঘুমিয়ে থাকলে আপনার সাথে।আমার চাকরির বারোটা বেজে যাবে।দয়া করে উঠেন।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–তার কথাগুলো শুনে আভার কোন ভ্রুক্ষেপ হচ্ছেনা।সে ঘুমের দেশে তলিয়ে আছে।তখন আভার অবস্থা দেখে।লতা বিড়বিড় করে বলে উঠে।
–“যার বিয়ের কথা চলছে তার কোন চিন্তা ভাবনা দেখতে পাচ্ছিনা।সে খুব আরাম করে ঘুমাচ্ছে।সব চিন্তা আমার!সে এভাবে ঘুমিয়ে থাকলে শেষমেশ আমার চাকরিটা হারাতে না হয়।এভাবে ঘুমিয়ে থাকলে ছেলেপক্ষের সামনে কিভাবে যাবে?এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে হবেনা।তাড়াতাড়ি আমাকে কিছু করতে হবে।পড়ে যা হবার হবে এখন তাকে ঘুম থেকে উঠানো জরুরি।

–কথা গুলো বলে লতা।কাঁপা কাঁপা হাতে আভার মুখে গ্লাস ভর্তি পানি ছুড়ে মারতে।আভা হকচকিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে।আভার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে উত্তেজিত হয়ে বলে।

–“তোমার সাহস কি করে হয় লতা?আমার মুখে এভাবে পানি ছুড়ে মারার।তোমার দিন দিন খুব সাহস বেড়ে যাচ্ছে!নিজের চাকরিটা কি হারানোর খুব ইচ্ছে হয়েছে।দেখো আজকে ড্যাড কে বলে তোমার ব্যবস্থা করছি।”
–কথা গুলো আভা রেগেমেগে আগুন হয়ে চলে যাচ্ছিলো।তখন লতা তার রাস্তা আটকে দিয়ে করুণ কন্ঠে বলে।
–“ছোট ম্যাডাম আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করেন।আমি ইচ্ছে করে এসব করেনি।এছাড়া আমার আর কোন রাস্তা খোলা ছিলোনা।কখন থেকে আপনাকে ডেকে যাচ্ছি।আপনার ঘুম ভাঙছে না।ছেলেপক্ষ মনে হয় এসে পড়লো।”

–লতার কথা শুনে আভা লতার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলে।
–“ছেলেপক্ষ মানে কিসের ছেলেপক্ষ এখানে কেন আসছে?”
–আভার কথা শুনে লতা ভেবাচেকা খেয়ে বলে।
–“ছোট ম্যাডাম আপনার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ছেলেপক্ষ আসছে আপনাকে দেখতে।তারজন্য ত আপনাকে এমন করে ঘুম থেকে উঠানো।”

–লতার কথা শুনে আভার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে।সে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“কি?সত্যি।”
–“জ্বি ছোট ম্যাডাম।”
–আভা খুশিতে আত্নহারা হয়ে।আচমকা লতা কে আঁকড়ে ধরে বলে।
–“লতা তুমি আমাকে আগে বলবেনা।তার মানে আহান আসছে ড্যাডের কাছে আমাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।”
–আভার অবস্থা দেখে লতা কিছু বুঝতে পারেনা।তখন সে বলে।
–“ছোট ম্যাডাম কে আসছে জানিনা।শুধু জানি আপনার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ছেলেপক্ষ আসছে।তারজন্য বড় সাহেব আপনাকে ডাকছে।আপনি এসব কি বলছেন কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।”
–“ওহ্ তোমাকে বুঝতে হবেনা লতা।ড্যাড কোথায়?”
–“বড় সাহেব ড্রয়িং রুমে বসে আছে।”

–“আচ্ছা।”
–আভা ছুটে চলে যায় তার বার কাছে।লতা ভেবাচেকা খেয়ে আভার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে।
–“ছোট ম্যাডাম কে আজকে অনেক খুশি মনে হচ্ছে।এভাবে যেন সবকিছু মিটে যায়।আজকে বড় ম্যাডাম বেঁচে থাকলে সে অবশ্যই অনেক খুশি হতো।আসলে সব ভাগ্য!সবকিছু সবার জীবনে থাকেনা।কিন্তু আমাদের ছোট ম্যাডাম আভা সব সময় যেন এমন হাসিখুশি থাকে।”
–কথা গুলো বলতে লতার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।সে নিজের চোখের অশ্রু মুছে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।

–আভা ছুটে গিয়ে পিছনে থেকে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলে।
–“ড্যাড তুমি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলে।লতা সে কথা আগে বলবে তো আমাকে।তার সব কথার মাঝখানে কিছু কথা গুলিয়ে ফেলেছিল।আচ্ছা ড্যাড বলো কি বলবে?”
–মেয়ের কথা শুনে মি.অয়ন সাহেব মেয়ের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে থেকে।তাকে গম্ভীর গলায় বলে।
–“আজকে তোমার মা বেঁচে থাকলে।হয়তো সে অবশ্য কথা গুলো বলতো তোমাকে।আজকে ছেলেপক্ষ তোমাকে দেখতে আসছে।বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।আশা করি তাদের সামনে তুমি আমার মান
সম্মান রাখবে।”

–কথা গুলো বলতে মি. অয়ন সাহেবের চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।আভা বাবার চোখে অশ্রু দেখে বাবার পাশে বসে তার অশ্রু মুছে দিয়ে। উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“কি হয়েছে ড্যাড তুমি এভাবে বলছো কেন?তুমি জানোনা আভা তার ড্যাড কে কতো ভালোবাসে।তুমিতো আমার সবকিছু আমার ড্যাড মম আমার পুরো পৃথিবী।তুমি দয়া করে এভাবে বলোনা।”
–আভার কথা শুনে মি. অয়ন সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে।

–“তোমার মা চলে যাবার পড়ে বাবা এবং মায়ের দ্বায়িত্ব নিজে পালন করার চেষ্টা করেছি।নিজেকে নিয়ে কখনো ভাবেনি।সবকিছু তোমার জন্য করেছি।কিন্তু মাঝেমধ্যে নিজেকে খুব লুজার মনে হয়।মনে হয় অতিরিক্ত ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে বিগড়ে দিয়েছি।তোমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছি।আজকে রেনুমা বেঁচে থাকলে।হয়তো সে তোমাকে তার মতো করে বড় করে তুলতে।কিন্তু সে তো অনেক বছর আগে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।মাঝেমধ্যে বাবা হিসাবে নিজেকে ব্যার্থ মনে হয়।মনে হয় আমার কোন ভুল ছিলো যার জন্য তোমাকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারেনি।”

–কথা গুলো বলতে মি. অয়ন সাহেব ডুকরে কেঁদে উঠে।বুকের ভিতরে অনেক জমানো কষ্ট গুলো যেন আজকে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে।বাবার এমন অবস্থা দেখে আভা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে।
–“ড্যাড তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে আমাকে কে দেখবে।তোমার মেয়ে আভা যে তোমাকে খুব ভালোবাসে।তোমার মেয়ে আভা তোমাকে কথা দিচ্ছে ড্যাড।সে এখন থেকে তোমার সব কথা শুনবে।তোমার কথার বাহিরে কখনো যাবেনা।”
–মেয়ের কথা শুনে মি. অয়ন সাহেব আভা কে আঁকড়ে ধরে বলে।
–“আমার আভার সুবুদ্ধি হয়েছে।এভাবে সব সময় থেকে।”

— মুহূর্তের মাঝে বাবা মেয়ের অভিমান অভিযোগ গুলো হারিয়ে গেলো।বাবা মেয়ের মাঝে ভাব হয়ে গেলো।তখন মি. অয়ন সাহেব নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।
–“আভা তুমি গিয়ে রেডি হয়ে আসো।মেহমান আসার সময় হয়ে এলো।আশা করি তুমি আমার মান রাখবে।”
–বাবার কথা শুনে আভার হুশ হলো।সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।
–“হুম ড্যাড।”
–আভা চলে যায়।তখন মি. অয়ন সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে।

–“সবকিছু ঠিক ভাবে যেন হয়ে যায়।রুদ্রের সাথে আভার বিয়ে দিতে পারলে।সব চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারবো।”
–আভা ছুটে রুমে চলে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে।নিজেকে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যায়।সে আজকে খুশতে আত্নহারা হয়ে গেছে।তখন সে বিড়বিড় করে বলে উঠে।
–“এতো অপেক্ষার প্রতিক্ষার শেষ হবে আজকে।আহান সত্যি আমাকে খুব ভালোবাসে।আমার কথা মতো আমার জন্য ড্যাডের কাছে আজকে আমাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছে।আজকে আভা কতোটা খুশি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবোনা আহান।আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে চলেছে।তুমি এলে আজকে ড্যাড কে আমাদের ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিবো।তখন দেখবে ড্যাড আমাদের খুব ধুমধাম করে বিয়ে দিবে।”

তোমাতে বিভোর পর্ব ১১

–কথা গুলো বলতে আভা কল্পনার মাঝখানে হারিয়ে যায়।স্বপ্নের মধ্যে তার ভালোবাসার মানুষ কে নিয়ে সংসার সাজাচ্ছে।তখন কারো ডাক শুনে সে কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসে।
–“ছোট ম্যাডাম এখনো বসে আছেন কেন?তাড়াতাড়ি করেন বড় সাহেব রেডি হতে বলেছে।আমাকে দেখতে বললো আপনার কিছু লাগবে কিনা।”
–লতার কথা শুনে আভা ভ্রুকুচকে তার দিকে তাকিয়ে বলে।
–“ওহ্ লতা তুমি!তুমি এমন কেন বলতো?যখন তখন আমার ভাবনার মাঝখানে চলে আসো।আমার কিছু লাগবে না।আমাকে আমার মতো রেডি হতে দিবে।তুমি এখন আসো।”
–আভার কথা শুনে লতা উত্তেজিত হয়ে বলে।

–“ছোট ম্যাডাম আজকে আপনার কি হয়েছে।ঘুম থেকে উঠার পড়ে কি ভুলবাল বলছেন।আপনার শরীর খারাপ হয়েছে কি?বড় সাহেব কে বলবো।ডাক্তার কে ফোন করতে।”
–লতার কথা শুনে আভা লতার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে।
–“লতা তুমি বেশি বুঝতে পারো এতো বুঝতে তোমাকে কে বলেছে।ড্যাড কে কিছু বলতে হবেনা।তুমি এখন যেতে পারো।”
–“আচ্ছা ম্যাডাম।”
–লতা চলে যায়।আভা সাজারো দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় ধপাস করে উবু হয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে।
–“অসুখ তো হয়েছে আমার প্রেমের অসুখ।সে অসুখ তো কেবল আমার ভালোবাসার ডাক্তার সাড়াতে পারে।”

তোমাতে বিভোর পর্ব ১৩