তোমার নিরব অভিমানীনি গল্পের লিংক || Israt Bintey Ishaque

তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ১
Israt Bintey Ishaque

স্বামী আর তার গার্লফ্রেন্ড এর মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে, রেস্তোরাঁর এক‌ই টেবিলে বসে আছে নজরাত!নিরবতা ভেঙ্গে তার স্বামী “রাদ শাহমাত” বললো,
—” ও আমার গার্লফ্রেন্ড রুপকথা! আপনি আমাদের মাঝে ঝামেলা হয়ে না আসলে খুব শিঘ্রই আমরা বিয়ে করতাম! এখন এর সমাধান আপনার কাছে!
প্রশ্নসিক্ত নয়নে তাকায় নজরাত।এর মানে, কি সেই সমাধান?রাদ শাহমাত কিছু বলার পূর্বেই তার গার্লফ্রেন্ড রুপকথা বললো,

—“ডিবোর্স দিবেন আপনি ওকে! এটাই এক এবং একমাত্র সমাধান। এবং ইমিডিয়েটলি ডিভোর্স চাই আমি! “রাদ” বেব তুমি এই কথাটা ভালো করে এই মেয়ের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দাও।
রাদ শাহমাত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। অতঃপর নজরাত কে পুনরায় রিপিট করে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

—“আমি আজকের মধ্যেই ডিভোর্স চাই! বিয়েটা সম্পূর্ণ আমার মতের বিরুদ্ধে হয়েছে। তাছাড়া বিয়ের পূর্বেই আমি আপনাকে বলেছিলাম আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি! তারপরও নির্ল’জ্জের মতো কিভাবে বিয়ে করতে পারলেন আপনি?এর শাস্তি স্বরূপ ডিভোর্স চাই আমি!
রুপকথা তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

—“বুঝলে এতো টাকা পয়সা দেখলে এদের মতো মেয়েদের মাথা ঠিক থাকে না! তোমাকে আমি আগেই সাবধান করেছিলাম রাদ। তুমি তোমার মায়ের ভুল সিদ্ধান্ত মেনে নিলে।

নিকাবের আড়ালে ঠোঁট কামড়ে,কান্না এবং রা’গ দুটোই সংবরণ করে চলেছে নজরাত।তাকে যে কিছুতেই উত্তেজিত হ‌ওয়া যাবে না। মহান রাব্বুল আলামীনের উপর ভরসা রেখে এগিয়ে যেতে হবে দূর্গম পথে।তাই আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

—“ইসলাম নারী-পুরুষের বিবাহকে একটি পবিত্র বন্ধন মনে করে। এই বন্ধনের পবিত্রতা ও শুদ্ধতার উপর তাদের ভবিষ্যৎ বংশ ধারার পবিত্রতা নির্ভর করে। এর ভিত্তিতেই তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ণীত হয়। তাই এহেন বন্ধনকে ছিন্ন করা ইসলাম পছন্দ করে না। ইসলাম কেবল অনন্যোপায় অবস্থায় তালাক বৈধ করেছে। আপনি একজন পরনারীর জন্য আপনার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন না! আমি সেটা মেনেও নিব না কিছুতেই!

নজরাত আন্দাজ করতে পারছে সামনে থাকা দুজন ব্যক্তি নজরাতের উপর ক্ষি’প্ত নয়নে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তার কিছু করার নেই। বিয়েটা যখন হয়েই গেছে তখন সে অন্যান্য মেয়েদের মতো চুপচাপ সব কিছু মেনে নিবে না।
আকস্মিক বিকট শব্দে মাথা তুলে তাকায় নজরাত!রাদ শাহমাত সামনে থাকা টেবিলে সজোরে ঘু’সি মা’রে যার ফলে এই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে! কিছুটা ভয়ে কেঁপে উঠলো নজরাত।
রাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

—“কতো টাকা লাগবে আপনার?
নজরাত শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রাদ দিগুন রে’গে গেল।তীব্র ক্ষো’ভ প্রকাশ করে আবারো বললো,
—“ঠিক কতো টাকা পেলে আমাকে মুক্তি দিবেন বলেন?দশ লক্ষ?বিশ লক্ষ? নাকি আরো বেশি?
—“আপনাকে দিয়ে দিন! কথা দিচ্ছি চলে যাবো আমি!

নজরাত এর এহেন কথায় নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে আছে রাদ। হয়তো কিছু বলার মত ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তার গার্লফ্রেন্ড রুপকথা চুপ করে বসে থাকতে পারলো না, রগচটা নয়নে নজরাত এর দিকে তাকিয়ে বললো,
—“হেঁয়ালি করছেন আমাদের সাথে? নাকি আরো টাকা লাগবে? আচ্ছা এবার বুঝতে পারছি আপনি কেন বললেন,

“আপনাকে দিয়ে দিন” আসলে রাদ কে পাওয়া মানেই তো ওর সমস্ত সম্পত্তি পাওয়া!আর তাই আপনি সব কিছু নিজের দখলে আনার প্লান করছেন বাহ্! চমৎকার! আপনার পরিকল্পনার তারিফ না করে পারছি না।লোভি কোথাকার।
শেষের কথাটা তাচ্ছিল্য করেই বললো রুপকথা।নজরাত তাদের সামনে মোটেও রাগলো না স্থির চোখ দুটো বার কয়েক এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে সংযত করে দৃঢ় কন্ঠে বললো,

—“আপনার বলা কথা গুলো কিন্তু আপনাকেও বলতে পারি আমি!সে অধিকার আমার আছে
কিন্তু আপনার নেই!
তারপর উঠে দাঁড়ায় নজরাত।আর এক মুহূর্তও এখানে থাকতে চাই না সে।তাই দ্রুত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে রেস্তোরাঁর বাহিরের দিকে। পিছনে এতটুকু কথা শুনতে পেল, রুপকথা বলছে,
—“এই দু-টাকার মেয়েটা আমাকে এভাবে কথা শুনালো তুমি কিছু বললে না রাত?

রেস্তোরাঁয় থেকে বেরিয়ে সোজা একটা পার্কে চলে এলো নজরাত। এই সময় মানুষের গতানুগতি নেই বললেই চলে। এমন গাছের ছায়ায় আবৃত নিরিবিলি পরিবেশ এখন ভিশন প্রয়োজন ছিল তার।তাই এখানে আসা। একটা বেঞ্চে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগের কথা গুলো ভাবতেই চোখ দুটো ভরে গেল পানিতে। চিৎকার কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

অনেকে বলে কাঁদলে হালকা লাগে। কিন্তু পাবলিক প্লেসে এরকমটা করা দৃষ্টিকটু হবে তাই যথা সম্ভব নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত নজরাত। তবুও কষ্টে বুকটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। বাহিরে যতটা না স্ট্রং ভিতরে ঠিক ততটাই ভাঙ্গুর সে।
বিয়ের পূর্বেই বুঝে গিয়েছিল রাদ শাহমাত বিয়েতে রাজি নন!দুটো পরিবারের কথা চিন্তা করে বিয়েটা এক প্রকার বাধ্য হয়েই করতে হয়েছে তাকে!তার কিছু করার ছিল না। একদিকে বাবা আরেক দিকে মায়ের মতো শ্বাশুড়ি মা, এদের কথা ফেলতে পারেনি নজরাত।

নজরাত চলে যাওয়ার পর রুপকথা ভ্রুকুটি করে বলে,
—“তুমি এভাবে বিবশ হয়ে বসে আছো কেন? নাকি বিয়ে করে এখন আর আমাকে চাইছো না?
কিছুটা তাচ্ছিল্যের সহিত বললো,

হুজুরনী ব‌উয়ের প্রেমে পড়ে গেলে নাকি? আমি পুরনো হয়ে গেছি তাই না?তোমরা পুরুষ জাত টাই এরকম, তোমরা নিত্য নতুন নারীতে আসক্ত হয়ে পরো!তখন আমার মতো মেয়েরা পুরোনো হয়ে যায় তোমাদের কাছে!
রুপকথার এরুপ কথায় রাদ আমার উপর আরো ক্ষি’প্ত হয়ে উঠে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

—“দুই দিনের মধ্যে আমি ডিভোর্স দিয়ে তোমাকে প্রমাণ দিব, সব ছেলেরা এক নয়।
তারপর গটগট পায়ে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়ি ফুল স্পীডে চালু করে রাদ।

রাদ চলে যা‌ওয়ার পর রুপকথা উল্লাসে ফেটে পড়ে!গগন বিহারী হাসিতে ঝংকার তুলে! রেস্তোরাঁর আলাদা কেবিন হ‌ওয়াতে সেই পৈশা’চিক আনন্দ কারো নজরে পড়ে না। সাথে সাথে কাউকে কল করে আসতে বলে এখানে। আজকে একটা পার্টি থ্রু না করলে চলে? কখনোই না আনন্দ মিছিল করতে অবশ্যই পার্টির প্রয়োজন।
এর কিছুক্ষণ পর রুপকথার একজন ছেলে বন্ধু আসে রেস্তোরাঁয়!তার সাথে হাগ করে পুনরায় চেয়ারে বসে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তারা।

চারিদিকে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হতে বুঝলো আসর নামাযের আযান হচ্ছে।তাই চোখ মুখ মুছে উঠে দাঁড়ায় নজরাত। বাসায় ফিরতে হবে দ্রুত না হয় নামায কাজা হয়ে যাবে। সামনের দিকে পা বাড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিলো আব্বুর কাছে যাবে। এখন কিছুতেই রাদ দের বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না তার।রাদ এর মুখোমুখি হতে একদম ইচ্ছে করছে না। মুখোমুখি হলে আবারো সেই একরাশ তেতো অনুভূতি!যা নজরাত কে ভিতরে ভিতরে মুষড়ে দিতে যথেষ্ট।তাই পার্কের বাহিরে এসে একটা বাসে উঠে বসলো।

ত্রিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেল বাসায়। সাজ্জাদ হোসেন দরজা খুলতেই সালাম দিলো। সাজ্জাদ হোসেন মেয়েকে দেখে যারপরনাই বিস্মিত!বিষ্মিত হবে না ই বা কেন?বৌ-ভাত অনুষ্ঠানের পর এখনো দুদিন ও হয়নি নজরাত শ্বশুরবাড়ি গিয়েছে। তার উপর খবর না দিয়ে হুট করে চলে এসেছে।যে কেউ বিষ্মিত হবে।
নিজেকে যতটা সম্ভব বাবার সামনে নরমাল রাখলো। মুখে হাসি ফুটিয়ে জরিয়ে ধরে বললো,

—“মেয়েকে দেখে খুশি হ‌ওনি বুঝি? এমনি করে পর করে দিলে?
সাজ্জাদ হোসেন মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
—“নারে মা তুই যখন খুশি তোর বাসায় আসবি। আমি তো শুধু..
আর কিছু বলতে না দিয়ে নজরাত বললো,

—“হয়েছে তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। আমি নামায পড়ে আসছি দু’জনে একসাথে আড্ডা দিতে দিতে কফি খাবো।
সাজ্জাদ হোসেন কে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না‌।এই বলে চলে আসলো নিজের রুমে।দম ফেলে অযু করে এসে নামায পড়লো।

নামায শেষ হতেই সাজ্জাদ হোসেন কফি নিয়ে হাজির হন। তারপর, রুমের ছোট বেলকনি কাম ছাদে বাবা মেয়ে দুলনায় বসে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে টুকটাক কথা বলছে।এর মাঝে ফোনের রিং টোন বেজে উঠল।নজরাত মগ হাতে রুমে আসলো।

বিছানা থেকে ফোন তুলে রিসিভ করতেই যা শুনলো তাতে প্রস্তুত ছিলো না মোটেও। ফলশ্রুতিতে হাত থেকে কফির মগ টা ফ্লোরে পরে টুকরো টুকরো হয়ে গেল!গরম কফি খানিকটা ছিটে ফোঁটা নজরাত এর পায়ে পরলো, সেদিকে তার কোন ভ্রক্ষেপ নেই। সাথে সাথে সাজ্জাদ হোসেন দৌড়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে?

নজরাত ধরা গলায় বললো,
—“তোমার জামাইর এক্সিডেন্ট হয়েছে আব্বু! ইমারজেন্সি দুই ব্যাগ র’ক্ত লাগবে!…..

তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ২