তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ১৮

তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ১৮
Israt Bintey Ishaque

রূপক কিছুক্ষণ এক্সারসাইজ করে সবে মাত্র বসেছে গার্ডেনের বেঞ্চে। তখন রাহা কফি হাতে এদিকে আসে। রূপক এর দিকে কফি বারিয়ে দিয়ে বলল,
—” আপনার কফি।
—” উঁহু! আপনার নয় বলো তোমার!
রাহা খানিকটা থতমত খেয়ে গেল। উসখুস করে বলল,
—” ত.. তোমার কফি।
—” উঁহু আমার না তোমার!
এমন হেঁয়ালি কথা বুঝতে পারলো না রাহা। প্রশ্নাত্তুক চোখে চেয়ে রইল। তখন একজন কাজের লোক কফি নিয়ে এসে বললেন,

—” রূপ বাবা তোমার কফি।
রূপক সৌজন্য হেসে কফি হাতে নিল। যা দেখে রাহার আশ্চার্যের শেষ নেই। যদি তার বানানো কফি নাই বা নিবে তবে কেন তাকে দিয়ে কফি বানালো? লোকটা চলে যেতে রূপক তার পাশে বসতে বলল রাহা কে। রাহা বাধ্য মেয়ের মত বসলো। তারপর রূপক বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

—” ওটা তুমি খাও।
রাহা একটু গম্ভীর মুখে বলল,
—” আমি কিছুক্ষণ আগেই কফি খেয়েছি।
—” আমাকে রেখে খেয়েছো বিদায় এখন আবার খাবে। নাও শুরু কর?
রাহা খানিকটা বিরক্ত হল। যা তার মুখ চোখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। রূপক তা দেখে আড়ালে ঠোঁট কামড়ে হাসে। রাহার চোখে চোখ রেখে ইশারা করে কফি খাওয়ার জন্য। সাথে নিজেও কফির মগে চুমুক দেয়।
অগত্যা রাহাকে আবার কফির মগে চুমুক দিতেই হলো। এক চুমুক দিয়ে বসে রইল চুপটি করে। এদিকে রূপক এর কফি প্রায় শেষের দিকে। রাহা কে বসে থাকতে দেখে বলল,

—” কি হলো? খাচ্ছ না কেন? দেখ অপচয় আমি একদম পছন্দ করি না।
রাহা অবুঝের মতো নাক, চোখ বিকৃত করে বলল,
—” বিষাদ! মুখে দেওয়া যাচ্ছে না।
রূপক একটু মজা পাওয়ার হাঁসি হেঁসে বলল,
—” কেন বলোতো? কফিটা তো তুমি ই বানিয়েছো তাই না? বাই এনি চান্স তুমি কি কফি বানাতে পারো না নাকি আমার জন্য ইচ্ছে করে…
রাহা ব্যতিব্যস্থ হয়ে বলল,

—” না না ওরকম কিছু না। আমি আসলে কোন দিন বানায়নি তো তাই তেতো হয়ে গেছে।
রূপক মাথা দুলিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
—” এবার বুঝলে তোমার বানানো কফি কেন আমি খায়নি?
রাহা মাথা নিচু করে বসে রইল চুপটি করে। মেয়ে হয়ে এই সামান্য কাজ পারে না সত্যি সে লজ্জিত, ভীষণ লজ্জিত।
রূপক হাত ঘড়ি দেখে বলল,

—” নাস্তা তৈরি হয়েছে কিনা দেখ গিয়ে! আমি নাস্তা করে বের হব।
রাহা জ্বি, আচ্ছা বলে চলে যেতে নিলে রূপক অস্ফুট গলায় বলল,
—” তিনি আমো!
রাহা থেমে বলল,
—” মানে?
—” না কিছু না যাও।
রাহা মাথা নেড়ে চলে যায় ঘরে।

রাদ শাহমাত আলতো করে অধরযুগল ছুঁয়ে দেয় নজরাত এর কপালে। নজরাত মুচকি হেসে আরো আড়ষ্ট ভাবে দাঁড়ায়। তার মাথায় ঘন চুল, তবে কোঁকড়ানো বলে চুল খুব বড় হয়নি। কোমড় অবধি মেঘের মতো ছড়িয়ে আছে যা থেকে টুপ টুপ করে পানি ঝরে পড়ছে।
রাদ শাহমাত দুষ্টু হেসে বলল,

—” আমাকে কি সারাজীবন বাসায় বসিয়ে রাখার পরিকল্পনা করছেন নাকি? না মানে এমনি করে যদি অফিসের লেইট হয়ে যায় তবে কি আমাকে অফিসে রাখবে? একদম ছাঁটাই করে দিবে। তখন তো বাসায় থেকে সারাক্ষণ আপনার আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াবো।
রাদ শাহমাত এর এহেন মন্তব্যে নজরাত এর লজ্জায় রক্তিম মুখশ্রী হয়ে উঠে। রাদ শাহমাত কে ছেড়ে খানিকটা দূরে সরে বলল,

—” যান।
—” তোমার মুখে জান শুনতে কিন্তু সেই লাগে!
নজরাত তৎক্ষণাৎ মাথা তুলে বলল,
—” আমি যেতে বলেছি, অন্য কিছু নয়।
রাদ শাহমাত হেঁসে নজরাত কে একবার হাগ করে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
নজরাত আবারো বেলকনির গ্রিল দিয়ে তার যাওয়া দেখলো।

বিকাল বেলা রাদ শাহমাত কল করে নজরাত কে বলল সে যেন তৈরি হয়ে থাকে। রাদ শাহমাত গাড়ি পাঠাবে তাকে নিয়ে যেতে। নজরাত ঠিক আছে বলে শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে গেল। তাঁকেও তৈরি হতে বলে নিজে তৈরি হয়ে নিল।
ব‌উমার এক কথায় তৈরি হয়ে নিল সাজেদা চৌধুরী। নজরাত এর উপর পূর্ণ আস্থা আছে তার। তবে গাড়িতে বসে জিজ্ঞাসা করল,

—” আমরা কোথায় যাচ্ছি ব‌উমা?
নজরাত হেসে বলে আমি নিজেও জানি না মা। তবে আপনার খুব ভালো লাগবে।
গাড়িটা এসে থামে রাদ শাহমাত এর অফিসের সামনে। এর দু-মিনিটের মাথায় রাদ শাহমাত গাড়িতে উঠবে তখন মাকে দেখতে পেয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। খুক খুক কেশে নজরাত এর দিকে চেয়ে ক্ষীণ একটু হেসে বলল,
—” আমি সামনে বসছি।

তারপর দরজাটা পুনরায় বন্ধ করে সামনে ড্রাইভারের সাথে গিয়ে বসে। সাজেদা চৌধুরী ছেলে কে দেখে অনেকখানি অবাক হল। বুঝতে পারলো না কি হচ্ছে? কি হতে চলেছে।
নজরাত বাহিরে চেয়ে থেকে রাদ শাহমাত এর কথা মনে করে হাসে। তখন ফোনের মেসেজ টোন বেজে ওঠে। নজরাত ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল রাদ শাহমাত এর মেসেজ। সে লিখেছে, মাকে নিয়ে আসবে বললে না কেন? নজরাত হেসে রিপ্লাই করে, আমি চেয়েছি মা ও আমার সাথে কিছু সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করুন।

রাদ আবারো মেসেজ দিল, তো ম্যাডাম আপনি কি করে জানেন যে আপনি সুন্দর কিছু মুহূর্ত উপভোগ করতে চলেছেন?
নজরাত তখন বলে, এগুলো নিয়ে লিখতে লিখতে বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা হয়ে গেছে!
“লিখতে লিখতে! মানে”?

নজরাত ভরকালো, দমে যাওয়া হাতে টাইপ করতে পারলো না। ফোন রেখে দিল। রাদ শাহমাত অপেক্ষা করেও আর রিপ্লাই পেল না। দেখতে দেখতে তারা একটা বিশাল বড় রেস্তরাঁর সামনে এসে পৌঁছায়। রাদ শাহমাত নিজে নেমে এসে দরজা খুলে মাকে আর নজরাত কে নামতে সাহায্য করে। তারপর তারা রেস্তোরাঁয় ঢুকে। রাদ শাহমাত আলাদা করে স্পেশাল কেবিন বুকিং করে রেখেছে। সেখানে তাদের নিয়ে গিয়ে বসায়। সাজেদা চৌধুরী এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছেন যেন। পাঁচ ছয় মাসে ছেলেকে এতোটা প্রাণজ্জ্বল দেখেনি তাই। তা-ও আবার নজরাত কে সাথে নিয়ে ডিনারের আয়োজন? আশ্চর্য হলেও তিনি ভীষণ খুশি।

ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হয় মার্চ মাস চলমান। এখন শীতের প্রকোপ অনেকটাই কমে এসেছে। তবে বাহিরে বের হলে শীত অনুভব হয়। নদীর পানি থেকে হালকা বাতাস বইছে।
বন্ধুদের সাথে নদীর তীরে বসে আড্ডা দিচ্ছে রূপক। প্রত্যেকের হাতে হাতে কফি। হালকা শীতের মাঝে বেশ আরাম পাচ্ছে কফিতে চুমুক দিতে। রূপক এর একজন বন্ধু প্রনয় বলল,
—” ফাইনালি নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পেলি বল?
আরেকজন ঠাট্টা করে বলল,

—” বাসর রাতে বিড়াল কেমন মারলি বল? হা হা হা…
রূপক ফিচেল হেসে বলল,
—” না বিড়াল মারিনি।
—” মারিসনি! সেকি কেন?
রূপক ঝুড়ির দিকে তাক করে প্লাস্টিকের কফি গ্লাস টা ঢিল ছুড়ে বলল,
—” আলাদা রুমে ছিলাম!

এ কথা শুনে বারো জোড়া চোখ বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে রূপক এর দিকে। তাদের বিষ্ময়ের যেন অন্ত নেই। প্রনয় উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
—” এরকম করার কারণ কি? তুই তো মেয়েটাকে সেই কলেজ জীবন থেকে পছন্দ করিস। ভালোও বাসিস। তবে?
সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে চেয়ে আছে রূপক এর জবাব এর আশায়। রূপক এর মুখের হাসি ধীরে ধীরে মুছে গিয়ে একটু কঠোরতা ফুটল।
ভাঙা গলায় বলল,

—” দু-দুবার ও আমাকে অপমান করে বিয়েতে নাকোজ করেছে। শুধুমাত্র ভালোবাসার জন্য আমি সেই সব কিছু ভুলে ওকে বিয়ে করেছি। সব সময় আমি যে ভালোবেসে ওর অন্যায় গুলো মেনে নিব এমনটা হলে তো হয় না। আমি চাই ও আমাকে ভালোবাসুক। আমার কথা চিন্তা করুক। আর তাই কিছুদিন ওকে এভাবেই বুঝাবো আমি!
সবাই এবার নিশ্চিন্তের শ্বাস ফেলে। প্রথমে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। ভেবেছিল বন্ধু আবার প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠলো না তো? এখন তারা নিশ্চিন্ত।

তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ১৭

সেই সকালে বের হয়েছে রূপক। তার কোন হদিস নেই। এখন রাত নয়টা বেজে চার মিনিট। রাহা বিরক্ত হয়ে ফোন ইউজ করছে। নিউজ ফিড স্ক্রল করতে করতে রূপক এর আইডি ঘাঁটতে ইচ্ছে হলো তার। সার্চ করে খুঁজতে খুঁজতে একসময় পেয়ে গেল আইডি। তারপর আইডিতে ঢুকে যা দেখতে পেল তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না রাহা!…..

তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ১৯