তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ১৯

তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ১৯
Israt Bintey Ishaque

প্রোফাইলে রূপক এর ছবি থাকার কারণে খুব সহজেই খুঁজে পায় রাহা। রূপক এর একেকটা পোস্ট এর মাঝে মাস খানেক ফারাক। এর মানে হচ্ছে রূপক খুব কম ফেবুতে পোস্ট করে। তবে যেটা চোখে পড়ার মতো সেটা হচ্ছে গতকাল রাত বারোটায় রূপক একজন কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট করেছে। আর যে আইডি কে ট্যাগ করা হয়েছে সেই আইডির নাম “রুপকথা” !

পোস্ট টা এরকম_
সুনশান-নিস্তব্ধ চারপাশে অন্ধকার, অন্ধকারে ক্যালেন্ডারের পাতায় থাকা তারিখ গুলো নিয়ম মেনেই পাল্টে যায়, বাহিরে ঝিঝি পোকার ডাক আর ঘরের ভেতরের দেওয়াল ঘড়ি টিপ্পনী শব্দ। ঘড়ির টিপ্পনী শব্দ বারো টা বাজিয়েই স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেলো আজ নাকি খুদে লেখিকার আগমনী দিন। শুভ হোক শুভ দিন, ভাইয়ার পক্ষ থেকে জানাই “শুভ জন্মদিন “।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

(এই লেখাটি নিজে লিখে আমার সেজ দুলাভাই আমার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন, সেটাই কপি করলাম)
রাহা তৎক্ষণাৎ রুপকথা নামক আইডিতে ঢুকে গেল। ঢুকে যা বুঝলো, এই সেই রাইটার “রুপকথা” যাকে তার ভাইয়া নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। কিন্তু রূপক এর সাথে কি সম্পর্ক? ব্যাপারটা মোটেও খোলাসা হয় না রাহার কাছে।
একজন কাজের মেয়ে দরজায় কড়াঘাত করে বলল,

—” নতুন ভাবী? আপনারে চাচা নিচে যেতে বলেছেন।
রাহা ফোন রেখে বলল,
—” আচ্ছা আমি আসছি, তুমি যাও।
—” জ্বি আচ্ছা।
রাহা কিছুক্ষণ রুমে পায়চারি করে নিচে নেমে আসে। সাজ্জাদ হোসেন দেখে বললেন,

—” বৌমা এসো, বসো তোমার সাথে গল্প করি। নজরাত চলে যাওয়ার পর থেকে আমি বড্ড একা হয়ে গেছি বুঝলে?
রাহা হেসে বরাবর সোফায় বসে। তারপর দুঃখ প্রকাশ করে বলল,
—” আমি আপনার কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারছি বাবা। তবে এখন আমি এসে গেছি। আপনি যখন চাইবেন তখনি আমি আপনার সাথে বসে গল্প করবো।
সাজ্জাদ হোসেন ভীষণ আনন্দিত হলেন। বাচ্চাদের মত করে বললেন,
—” সাথে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে আরো জমে যাবে তাই না?
রাহা মুচকি হেসে মাথা উপরনিচ করে। সাজ্জাদ হোসেন সম্মতি পেয়ে কাজের মেয়ে আঁখি কে ডেকে বললেন, দুই মগ কফি বানিয়ে দিতে। এর ফাঁকে তারা বিভিন্ন কথা বলতে শুরু করে। রাহা হঠাৎ বলে,

—” রুপকথা কে? আপনি তাকে চিনে..
সাজ্জাদ হোসেন বিষ্ময় নিয়ে বললেন,
—” সেকি বৌমা তুমি জানো না নজরাত এর আসল নাম “রুপকথা”!
রাহা আকাশ সম বিষ্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়! সাজ্জাদ হোসেন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। তিনি কিছু বুঝতে পারছেন না। রাহা শশব্যস্তে বলল,
—” কি বলছেন বাবা?

সামান্য কম্পিত কন্ঠস্বর তার। নতচক্ষু নিয়ে অকপটে গভীর, অস্ফুট গলায় আবারো বলল,
—” তাহলে এতো কিছু মুখ বুজে সহ্য করার কারণ কি ছিল? যদি ও সেই রাইটার রুপকথাই হবে!
রাহা অস্ফুট কন্ঠের কথা কিছুই বুঝতে পারছেন না সাজ্জাদ হোসেন। তিনি স্নিগ্ধ, কোমল স্বরে বললেন,
—” বৌমা তোমার কি শরীর খারাপ করছে? রূপক কে খবর দিব?
রাহা ক্রমে বিষ্ময়ে স্থির হয়ে যাচ্ছে। চোখ ক্রমে বিস্ফোরিত হচ্ছে। মাথায় হাত রেখে ব্যগ্র গলায় বলল,
—” না বাবা আমার কিছু হয়নি। আপনি চিন্তিত হবেন না। কিছু যদি মনে না করেন আমি কি আমার রুমে যেতে পারি?
—” হ্যাঁ হ্যাঁ তাই যাও।

ছেলের ভাবগতি থেকে সাজেদা চৌধুরী মনে মনে ভীষণ পুলক অনুভব করছেন। তার বুঝতে বাকি নেই ছেলে এখন ব‌উকে চোখে হারায়। তিন জনেই খাবার খাওয়া শুরু করেন। খাবার খাওয়ার মাঝে সাজেদা চৌধুরী বললেন,
—” রাদ তুই কিন্তু কিছু সুন্নাত খুব সহজেই পালন করতে পারিস।
রাদ জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে রইল। সাজেদা চৌধুরী ভাতের লোকমা শেষ করে বললেন,
খাবার খাওয়া শেষে এই নিয়ে কথা বলবো ইনশা আল্লাহ।

তারপর তারা খাওয়া শেষ করলো। খাওয়া শেষে রেস্তোরাঁর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নজরাত তার বাবা কে কল করে কথা বলে কিছুক্ষণ। বেলকনির পরিবেশটা বেশ মনমুগ্ধ। সেখানে দাঁড়িয়ে যান্ত্রিক শহরটা রঙ বেরঙের লাইটের আলোয় ঝিকমিক করতে দেখা যাচ্ছে। নজরাত রেলিং গেসে দাঁড়িয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। এই ছোট্ট জীবনে আপনজনদের থেকে চাওয়ার থেকেই বেশি পেয়েছে সে। তার আর কোন বড় পাওয়া নেই। সব ইচ্ছে ই পুরুন করেছেন মহান রাব্বুল আলামীন। “আলহামদুলিল্লাহ”।

আজকের দিনে তার আগমন ঘটেছিল এই সুন্দর ভুবনে। তার প্রিয় ভাইটি রাত বারোটা বাজতেই সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ছোট বেলায় এই দিনটি বেশ ঘটা করে পালন করা হতো। তারপর যখন নজরাত বুঝতে শিখেছে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য হ‌ওয়া শিখেছে তখন থেকে জন্মদিন পালন করা বন্ধ করে দিয়েছে নজরাত।

কেননা ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই। জন্মদিন পালনের গুরুত্ব যদি ইসলামে থাকত, তা হলে সাহাবায়ে কেরাম (রা.), তাবেয়ি, তাবে তাবেইনদের থেকে এটি পালনের প্রমাণ মিলত। তারা জন্মদিন পালন করবেন তো দূরের কথা, কারও কারও জন্মসন জানা গেলেও কোন মাসের কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন তা অবধি জানা যায়নি। এমনকি আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

রূপক বাসায় ফিরে রাদ দশটা নাগাদ। সাজ্জাদ হোসেন জানান যে রাহার শরীরটা বোধ হয় ভালো না। সাথে ছেলেকে একটু কঠোরভাবে বলেন, সদ্য বিয়ে করেছ তুমি। পরিবার ছেড়ে আসা মেয়েটাকে কোথাও একটু সঙ্গ দিবে তা নয় বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছ। এগুলো কি তোমার কাছে ঠিক বলে মনে হচ্ছে? ভেবে দেখ। তিনি চলে গেলে রূপক দ্রুত পায়ে উপরে উঠে। রুমের দরজা ভেজানো দেখে শব্দবিহীন ভিতরে ঢুকে। রাহা ইজিচেয়ারে আধশোয়া হয়ে চোখের পাতা বন্ধ করে আছে। রূপক ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে উদ্বিগ্ন গলায় বলল,

—” তোমার কি শরীর খারাপ করছে? বাবা বলল।
রাহা চোখ মেলে তাকায়, খুব অন্যমনা হয়ে দেওয়ালের দিকে চেয়ে রইল, জবাব দিল না। অনেকক্ষণ বাদে হঠাৎ বলল,
—” আমাকে আমার বাসায় নিয়ে যাবেন?
রূপক বিব্রত ও হতচকিত হয়ে বলল,

—” রাত তো কম হয়নি। এখন যেতে চাইছো কেন? আগামীকাল সকালে গেলে হয় না?
—” কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে! ভালো লাগছে না।
—” বেশি খারাপ লাগছে? ডাক্তার ডাকবো কি?
—” না না তার প্রয়োজন নেই।
—” খাবার খেয়েছো?
—” খাবো না। ঘুমাবো একটু।

তারপর রাহা চেয়ার ছেড়ে টলমলে পায়ে হেঁটে বিছানায় শুয়ে পড়ল। রূপক খাবারের জন্য আর জোর করল না। তার গায়ে ব্লাঙ্কেড জড়িয়ে দিয়ে বাথরুমে গেল ফ্রেশ আসতে।
ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিল। নিজেও না খেয়ে রাহা পাশে খাটের বাজুতে বালিশের ঠেকা দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে। তারপর মৃদুস্বরে বলে,

—” ঘুমিয়ে পড়েছ?
রাহার থেকে কোন সারা শব্দ পেল না। তাই আর একটু গেসে বসে। রাহার মাথায় আলতো হাত রাখে। এতে খানিকটা কেপে উঠে রাহা। রূপক বুঝতে পারে রাহা ঘুমায়নি এখনো। তবে হাত সরায় না। চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলে, ঘুমাও তাহলে ভালো লাগবে।

হঠাৎ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে থুতনি রাখে রাদ শাহমাত। দৃষ্টি তার নজরাত যেদিকে রেখেছে সেদিকে। নজরাত আকস্মিক এই সম্মহনে কেঁপে উঠে। পরক্ষনেই বুঝতে পারে এটা তার অর্ধাঙ্গ। প্রথমে নজরাত ই বলে পরিবেশটা বেশ মনমুগ্ধকর তাই না?
রাদ শাহমাত গাঢ় স্বরে বলে,

—” হুম, পাশে আপনি থাকবে সব সুন্দর।
আকস্মিক ওই তরল মন্তব্যে লজ্জা পেল
নজরাত। দৃষ্টি তার নত হল। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
—” আজকের দিনে আপনি আমাকে অজান্তেই সারপ্রাইজ দিলেন। জানেন?
রাদ শাহমাত ভ্রু কুঁচকে তাকায় নজরাত এর দিকে। গাঢ় স্বরে প্রশ্ন করে,
—” আজকে কি ছিল?
—” আমার জন্মদিন।

তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ১৮

বেশ চমকায় রাদ শাহমাত। নজরাত কে ছেড়ে মুখমুখী দাঁড়িয়ে বলল,
—” আগে বললেন না যে? আগে জানলে আয়োজন টা অন্যরকম করতে পারতাম।
—” তার প্রয়োজন নেই। এতেই আমি খুশি।
—” আপনি তো খুব সুখী মানুষ!
—” মানে?
—” বাদ দিন। চলুন মা ডাকছে, কি যেন বলবেন তখন বললেন।….

তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ২০