তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২২ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২২
Suraiya Aayat

তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল আরূ, বাড়ির গাড়ি নিয়ে আসেনি , আসলে যদি আবার কোন রকম সমস্যা হয় সেই কারণে ৷ গায়ে হলুদের পোশাক আর আরিশ ওকে সময় দিয়েছে মাত্র 30 মিনিট ৷ ফোন কেটে দেওয়ার সাথে সাথেই ছুটেছে আরূ, অলরেডি 5 মিনিট সময় নষ্ট করে ফেলেছে ও , আর মাত্র 25 মিনিট আছে ওর কাছে, আরিশের ধানমন্ডির বাসায় আরূ আগে কখনো যাইনি তাই জানেও না কোথায় যেতে হবে, কোনোক্রমে একটা সিএনজি নিয়ে তাতে উঠে পড়ল আরূ ৷

গাড়িতে উঠতেই দেখল ফোনে আরিশ লোকেশন পাঠিয়েছে তাই ওর আর অসুবিধা হলো না আরিশের বাড়ি খুজতে ৷ এই মুহূর্তে সানার কাছে ফোন করে জানতে চাইলে সানা হাজারটা প্রশ্ন করবে যে ও কোথাই , কেন হঠাৎ চলে গেলো, ব্লা ব্লা ,,,,, আর এত কিছুর উত্তর দেওয়া এখন আরূর পক্ষে সম্ভব নয় বলে আরিসের দেওয়া লোকেশনটা অনুযায়ী ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলল ৷

__” মামা এই লোকেশন টা যেতে কতক্ষণ লাগবে?”
উনি ফোনের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন,,,,
__” 35 মিনিট মত লাগবে ৷”
আরূ হকচকিয়ে বলল,,,,
__” মামা প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি পৌছাবেন, আমাকে তাড়াতাড়ি ওখানে পৌঁছাতে হবে ৷ এমারজেনসি ৷”
গাড়ির ড্রাইভার আরূর দিকে একটু বাকা চোখে তাকিয়ে বললেন,,,,,
__” দেখে তো মনে হচ্ছে তোমার আজকে হলুদ , তা বিয়ে বাড়ি থেকে পালাচ্ছো মেয়ে ?”
আরুর বলার মত আর কিছু নেই , চাইলেই তো আর এখন সবটা ড্রাইভার মামাকে বলা যায় না তার জন্য কোনোক্রমে বলল,,,,
__” মামা আমার একটা ইমার্জেন্সি কাজ পড়ে গেছে তাই যেতে হচ্ছে তা ছাড়া অন্য কিছু নয় ৷ সেখান থেকে ফিরে গিয়ে হলুদ হবে ৷”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__” ওহ আচ্ছা !”
ড্রাইভার ও যেন আরূর কথা বিশ্বাস করলেন না সেটা আরূ বেশ ভালই বুঝতে পারল ওনার হাবভাব দেখে ৷ তবুও এখন কে কী ভাবল না ভাবল তা নিয়ে এই মুহূর্তে ওর কোনো মাথাব্যথা নেই ৷
মনে মনে চিন্তা হচ্ছে এই ভেবে যে যদি 30 মিনিটের বেশি লেগে যায় আরিশের বাড়িতে পৌঁছাতে তাহলে দেরি হয়ে যাবে আর তাহলে আরিশ বলেছে টাফ পানিশমেন্ট দিবে , এটাসেটা ভেবে আরো মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আরূর ৷ তাহলে কি পুরো বাসা পরিষ্কার করাবেন আমাকে দিয়ে ?”
কথাগুলো ভাবলেই আরূর গলা শুকিয়ে আসছে ৷

প্রায় তিরিশ মিনিট পর আরু আরিশের ধানমন্ডির বাসায় পৌঁছালো, অলরেডি পাঁচ মিনিট ও লেট, না জানি এই 5 মিনিটের সময় দেরির মাশুল ওকে কি করে দিতে হয় ৷
বাসার গেট খুলে ঢুকতেই দেখল বাসায় কোন আলো জ্বলছে না, বাইরে থেকে দেখে মনে হবে যে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের বসবাস নেই সেখানে ৷ আরু এসব দেখে চমকে উঠলো, বাসাটা খুব বড় একদম ওর মনের মত কিন্তু আপাতত এই ভাবনাগুলোকে ফেলে রেখে ফোনের ফ্ল্যাশ টা জালিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো আরু ৷
বাড়ির ঢোকার মেইন দরজাটা খুলতেই হঠাৎ ওর ফোনে ফোন আসতেই আরূ কেঁপে উঠলো,,,,, ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল মি অভদ্র লেখাটা ভেসে আসছে৷
তাড়াতাড়ি করে ফোনটা ধরতেই আরিশ বলে উঠলো,,,,

___” ইউ আর 5 মিনিট লেট,,,,,,”
__” আপনি কি করে জানলেন?”
__” আপনার কি মনে হয় এটা আমার জন্য কি খুব টাফ আপনার প্রত্যেকটা পদক্ষেপের খবর নেওয়া ৷
সে যাই হোক পানিশমেন্ট কি হবে সেটা আমি পরে দেখে নেব আপাতত সিঁড়ি দিয়ে উঠে প্রথমে যে ঘরটা দেখতে পাবেন সেই ঘরটাতে যাবেন ৷”
আরূ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,
__” বাসায় কেউ নেই , কোন আলো জ্বলছে না আমার খুব ভয় লাগছে ৷”
আরিশ হো হো করে হেসে উঠলো ,,,,,,
__” আপনিও ভয় পান মিস আরুশি ?”
অন্ধকারের মাঝখানে আরিসের হাসির শব্দ শুনে আরুর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো, কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,
__” আমিও মানুষ তাই ভয় না পাওয়ার কি আছে !”
__” হোয়াটএভার ! তাড়াতাড়ি এসে রুমটা পরিষ্কার করে দিয়ে তারপর যেখানে খুশি যান, আপনার তো আজকে আবার হলুদ !”
__” আমি আসছি ৷”

বলে ফোনটা কেটে দিল আরূ , ফোনের ফ্ল্যাশ জালিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে আর সরা শরীর ছমছম করছে, বাড়িতে একটা জনমানুষও নেই , সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই দেখল প্রথমে একটা রুম , বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আরিশ এটার কথাই বলেছে ৷
ধীর পায়ে রুমের দরজাটা খুলতেই নিস্তব্ধতার মাঝে প্যাচ প্যাচ করে দরজার আওয়াজ শুনে আরূ একটা শুকনো ঢোক গিলল….

রুমের ভিতরে ঢুকে দরজাটা হাত দিয়ে আলতো করে ঠেলে দিতেই দরজাটা ধাম করে বন্ধ হয়ে গেল , তাতে আরেকদফা চমকে উঠলো আরূ ৷ এখন সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে চারিদিকে মোমবাতি জ্বলছে ছোট ছোট , পায়ের কাছে লাল রংয়ের গোলাপ ফুলের পাপড়িতে ভরা তা যেন যাওয়ার জন্য একটা সামনের দিকে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে ৷ মোমবাতির আলোতে ঘরের ফটো ফ্রেমের বর্ডারগুলো জ্বলজ্বল করছে,আর নাকে হালকা মিষ্টি সুগন্ধ ভেসে আসছে চারি পাশ থেকে…..
হঠাৎ ওর কাধের থেকে চুল সরিয়ে সারা পিঠে আর গলায় গরম নিশ্বাস পড়তেই চোখজোড়া বন্ধ করে নিল আরূ , ঠান্ডা শীতল হাত দুটো ওর হাতজোড়াকে শক্ত করে আবদ্ধ করে নিয়েছে ৷ আস্তে আস্তে ওর শরীরের সাথে লেপটে থাকা মানুষটার উষ্ণ ঠোটের স্পর্শগুলোও বেড়ে চলেছে, সারা শরীর থরথর করে কাপছে , পা দুটো যেনো ক্রমশ অবশ হয়ে আসছে ৷
গলায় আর সারা পিঠ জুড়ে উষ্ন ছোয়াগুলো যতই বেড়ে চলেছে আরূর শরীরের কম্পন এর মাত্রা ততই বেড়ে চলেছে ৷ হঠাৎ ওকে জড়িয়ে ধরে থাকা মানুষটি তার নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো,,,,,

আজ জিদ কার রাহা হে দিল,,,,,
আজ জিদ কার রাহা হে দিল,,,,,
ও মুঝমে তু হো ভি যা সামিল,,,,,
আজ জিদ কার রাহা হে দিল,,,,,

গলাটা শুনতেই আরূ আরূ চোখ দুটো খুলে ফেলল, এটা যে ওর প্রিয় মানুষটার কন্ঠ, যাকে ও নিজের থেকেও বেশি চায় , এটা তারই ছোয়া , কিন্তু আরিশ এখন সেখানে কি করে এলো এটা ভেবে আরু অবাক হয়ে যাচ্ছে ৷ আর পারছে না কোনভাবেই নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে তাড়াতাড়ি করে আরিশের দিকে ঘুরতেই আরিশ আরূর কোমরটা ধরে আরূকে আরো নিজের কাছে নিয়ে আসলো ৷
__” আপনি এখানে কিভাবে ?”(কাঁপা কাঁপা গলায় ) আপনিতো কক্সবাজার ছিলেন আর এখানে কি করে এলেন ? আর আপনি তো ,,,,,,”
আরিশ আরুর ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল ,,,, ,

__” আজ আমি বলবো শুধু আর তুমি শুনবে আরু পাখি , শুধু শুনবে আর অনুভব করবে আমার ভালোবাসা…..”
__” আপনি এসব কি বলছেন? আর এসবের মানে কি ? আপনি আবার আমর সাথে মজা করছেন তাইনা ?”
আরূ নিজেকে আরিশের থেকে ছাড়াতে গেলে আরিশ আরূর চুলের মুঠি ধরে আরূকে ওর মুখের সামনে এনে বলল,,,,
__” ভালোবাসি আরুপাখি , অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে ৷ তোমার নেশায় যে আমি আসক্ত সেটা কি তুমি বোঝনা নাকি কখনো বুঝতে চাওনি , আমি এতবার বুঝেনা সত্ত্বেও তুমি কখনও বোঝনি তার পানিশমেন্ট হিসেবে তোমার কি কোনো শাস্তি প্রাপ্য নয়?”

আরিশের কথা শুনে আরূ যেন আকাশ থেকে পড়লো, কখনো আশা করিনি যে আরিশ এমনটা ওকে বলবে ৷ এতদিন শুধু ওই আরিশকে পাওয়ার আশায় ছিল , আজ আরিশ ও ওকে পেতে চাই সেটা ওর কাছে কল্পনার মত লাগছে সম্পূন্ন ৷
আজ আরুর চোখে জল তবে আজ তা দুঃখের নয় আনন্দের ৷ এই মূহূর্তটাকে কিভাবে ভাষায় প্রকাশ করবে তার বর্ণমালা হয়তো ওর শব্দ ভান্ডারে নেই….
আরূর চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল ৷

__” আপনি এসব কি বলছেন?”
আরিশ আরূর অশ্রূসিক্ত চোখের পাতায় ভালোবাসার পরশ একে বলল,,,,
__” নিজের জীবনের থেকেও তোমাকে বেশি ভালোবাসি আরুপাখি , নিজের জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে তোমাকে চাই, তোমাকে নিজের করে পেতে চাই , ভালোবাসতে চাই , পৃথিবীর সমস্ত সুখ তোমার কাছে এনে দিতে চাই , নিজেকে তোমার কাছে সঁপে দিতে চাই , তোমার আসক্তিতে কেবল আমি থাকতে চাই , তা তুমি চাও বা না চাও ৷ তুমি শুধু আমার , শুধু আমার ৷ আমার সানশাইন শুধু আমার , আবরার আরিসের ৷”

আরু এবার আরিশকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল অঝোরে , আরিসের বুকে কাঁদছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে অঝোর ধরায় জল গড়িয়ে পড়ছে, এমন অনুভূতি কখনো হয়নি , এতটা কষ্ট পাওয়ার পর যখন এতটা সুখ অনুভব করছে তখন আজও চোখের জলের ধারাটা বাধ মানতে চাইছে না কোনভাবেই ৷ এ আনন্দের সময়টাকে যে কিভাবে ভাষার প্রকাশ করবে তাও জানা নেই ওর ৷
আরিশ আরূকে নিজের বুকের সাথে আরো শক্ত করে চেপে ধরল ৷
__” ভালোবাসো না আমায়?”
__” না ভালোবাসি না আপনাকে, আপনি খুব পচা, খুব খারাপ , পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্ট আর খারাপ মানুষ আপনি ৷ আপনি শুধু বারবার আমাকে কষ্ট দেন ৷ আপনার জন্য আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি তা কি আপনি জানেন ? আপনি হলেন মিস্টার অভদ্র ৷”
আরিশ এবার মুচকি হেসে বলল,,,,,

__” এই মিস্টার অভদ্রটা যে কতটা দূর অবধি অভদ্র হতে পারে তার আজকে তোমাকে দেখাবো আমি ৷”
আরূ লজ্জা পেয়ে আরিসকে আরো শক্ত করে জাপ্টে জড়িয়ে ধরল,,,,
__” কি হলো আরুপাখি তাকাও আমার দিকে ৷”
আরূ লজ্জায় আরিশের দিকে তাকাচ্ছে না , লজ্জায় আরিশের বুকে মুখ গুঁজে রেখেছে ও ৷
__” কি হলো তাকাও, তুমি না তাকালে যে এই মিস্টার অভদ্রতা তার অফুরন্ত অভদ্রতমি গুলো শুরু করতে পারছে না ৷”
আরু আরিশের সাথে নিজেকে আরো মিশিয়ে নিলো ৷
__” বুঝেছি এভাবে হবেনা আরূপাখি, আমাকেই ব্যবস্থা করতে হবে ৷”
বলে আরূক কোলে তুলে নিলো ৷

আরূ ভয়ে চোখ বন্ধ করে আরিশের জামার কলার ধরে শক্ত করে জাপটে ধরেছে যদিও মানুষটার উপর বিশ্বাস আছে সম্পূর্ণ ৷
আরিশ আরূকে নিয়ে গিয়ে বিছানার মাঝে শুইয়ে দিল ৷ সম্পূর্ণ ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজানো বিছানা, এ এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর অনুভূতি যা ঘটছে ৷
__” কি হলো আরূপাখি তাকাও ৷”
আরূ চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়ালো যার অর্থ ও চোখ খুলবে না ৷
__” যা করার আমাকেই যখন করতে হবে তখন দেরি কিসের ৷ আর আমার আবার ধৈর্য জিনিসটা কম কোনকিছুতেই বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারিনা তাই নিজের অধিকারটা নিজেই খাটাতে হবে বুঝতে পারছি ৷
বলে আরিশ আরূর কম্পমান ঠোঁট জোড়া দখল করে নিল ৷

আরিশ এমনটা করাই আরূ শক্ত করে আরিসের শার্টটা খামচে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে দিল আরিশকে সম্পূর্ণভাবে ৷ এ এক অদ্ভুত অনুভূতি যার সঙ্গে আরূ এর আগে পরিচিত হলেও তখন আরু সজ্ঞানে ছিল না তাই অনুভূতির স্বাদ টা এমনভাবে গ্রহণ করতে পারেনি তবে আজকে নিজেকে আরিশের ভালোবাসায় রাঙাতে চায়…….
বেশ কিছুক্ষণ পর আরিশ আরুকে ছেড়ে দিল , আর একই অবস্থানে থেকে আরূর ঠোঁটটা আলতো করে মুছে দিয়ে বলল,,,,,
__” ভালোবাসি ৷”
আরূ আরিশকে জাপটে জরিয়ে ধরে বলল..
__” এবার প্লিজ আলোটা জালান, আমার ভয় লাগছে ৷”
আরিশ কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,,
__”লাইক সিরিয়াসলি আরূপাখি তোমার অন্ধকারে ভয় লাগছে?”
__” ভয় লাগছে তাই প্লিজ ৷”

আরিশ এবার আরূর হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে দাঁড় করালো সেই দেওয়ালের সামনে যেখানে রয়েছে ওর কুড়ি বছর ধরে সাজানো ক্যাকটাসের রাশি, আর এই দিনটার অপেক্ষায় ছিল এতদিন ৷
রুমের আলোটা জ্বালাতেই আরুর চোখের ওপরে একগুচ্ছ আলোর রশ্মি এসে পড়তেই চোখটা বন্ধ করে নিল আরূ ৷ বেশ কিছুক্ষন পর নিজেকে স্থির করে নিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল,
কাঁদো কাঁদো চোখে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,, __” এইগুলো তো !”
আরিশ আরূকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,, __” আপনার প্রিয় ক্যাকটাস ম্যাডাম , যেগুলো আমি দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে আপনাকে উপহার দেবো বলে সাজিয়ে রেখেছি ৷”
আরূ এবার কেঁদে ফেলল,,,,

__” এমন পাগলামো কেন করেন যাতে আমিও পাগল হয়ে যাই ৷”
আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” পাগলামো দেখতে চাও? ওয়েট !”
বলে আরুকে সামনের দিকে তাকাতে বলল,,,, আরু তাকিয়ে তো অবাক, ওখানে আরূর সব ছবি ফ্রেমভন্দি করা , যেখানে ওর সবস্মৃতি ক্যাপচার করা আছে ওর ছোট থেকে বড় বেলার সমস্ত ছবি সেখানে আছে ৷
__” কেমন লাগলো আমার পাগলামো আরূপাখি?”
আরূ চোখের জলটা মুছে বলল,,,,,
__” কেন এতটা ভালবাসেন আমায়? বলুন কেন? আমি তার উত্তর চাই ৷”
__” ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসবো এটাই তো স্বাভাবিক তাই না !”
__” তবে ওই ফটো ফ্রেম টা ফাঁকা রেখেছেন কেন? ”
__” ওই ফটো ফ্রেমটাতে যে ছবিটা দরকার ছিল সেটা আমি পেয়ে গেছি তাই এই মুহূর্তেই ছবিটা লাগানো সম্ভব নয় কালকের মধ্যে ছবিটা ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাবে ৷ তবে আগে আমাদের হলুদটা সেরে নিই, তোমার তো আবার বিয়েযকরার অনেক শখ

আরূ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,,,,
__” আপনি আমাকে বিয়ে করবেন!”
আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” সেটা পরে দেখা যাবে ৷”
আরু ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,
__” এটা আপনার কেমন উত্তর ৷”
আরিশ মুচকি হেসে টেবিলের উপরে থাকা হলুদের বাটিটা এনে আরুর দিকে ইশারা করে ওকে হলুদ মাখাতে বলল ৷
আরূ একটু অবাক হয়েই আরিশের মুখে হলুদটা মাখিয়ে দিল ৷
__” কি হলো আপনি কিছু বলছেন না যে, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না?”( দৃঢ় সুরে)
আরিশ আরুর পেটে হালকা করে স্লাইড করে কোমরটা জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে এনে নিজের গালে থাকা হলুদটা আরুর মুখে মাখিয়ে দিল , আর বলল,,,,,

__” নাহ! ভালোবাসলেই যে কাউকে বিয়ে করতে হবে এটা আরিশ খানের ডিকসনারিতে লেখা নেই ৷”
আরিশের বলা না শব্দটা শুনে আরুর সমগ্র দুনিয়াটা পালটে গেল ,,,,,,,তাহলে আরিশ এতখন ওর অনুভূতিগুলো নিয়ে বরাবরের মতোই আজো মজা করলো?
আরিশ কে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে আরিশের গালে ঠাস করে একটা চড় মারলো আরু ৷
__” মানুষের অনুভূতির কি আপনার কাছে কোন দাম নেই ? সমস্তটাই কি ছেলে খেলা মনে করেছেন? এভাবে একটা মেয়ের অনভুতি নিয়ে খেলার অধিকার আপনাকে কে দেয় ? কোথায় পান সেই অধিকার?”

আরিশ মুচকি একটা হাসি দিয়ে আরুশির কাছে গিয়ে আচমকাই আরুকে কোলে তুলে নিল তারপরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের সমস্ত ভার আরুর ওপর ছেড়ে দিয়ে আরুল গালে আলতো করে হাত দিয়ে বলল ,,,,,,,
__” অধিকার কাউকে দিতে হয় না , অধিকারটা নিজে তৈরি করে নিতে হয় আর সেটুকু সাহস আরিশ খানের আছে ৷”
আরু আরিশকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইলেও আরিশকে সরাতে পারল না তবুও চেষ্টা করল,,,,,
__” আপনি মানুষ নন , আপনার মন বলে কিছু নেই , মানুষের ভালবাসার কোন দাম নেই আপনার কাছে ৷ আপনি কারোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নন ৷’

বলে ধাক্কা মেরে আরাশকে সরিয়ে দিতেই বিছানা থেকে নিচে নামতে গেল ৷ আরিশ আরুর কোমরে থাকা কোমর বন্ধনীটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে টান দিয়ে আটকাতে গেলেই পুঁথিগুলো সব ছিড়ে নীচে পড়ে গেল , আর আরুর পেটে আছড়ে গেছে অনেকটাই ৷
আছড়ে যাওয়ার জায়গা গুলো থেকে ছিটেফোটা রক্ত বের হচ্ছে আর জালা করছে প্রচন্ড…
আরু আরিশের চোখে চোখ রেখে কাদোকাদো হয়ৈ বলল,,,,
__” শুধু এটুকুই বলবো অন্যকে বারবার আহত করে নিজে সুখী হওয়া যায় না, আল্লাহ আপনাকে ভাল রাখুক এই কামনা করি ৷” বলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে গিয়ে দরজাটা খুলতে গেলেই দরজাটা আর খুললো না, অনেকবার চেষ্টা করছে দরজাটা খোলার তবুও পারছে না…..

আরিশ ধীর পায়ে আরুর কাছে গিয়ে আরুর চুলে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,
__” এসেছো আমার ইচ্ছায় আর যাবেও আমার ইচ্ছায় তাই অযথা বেশি জেদ করে আমার থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো না পরিণতিতে আমি ভয়ঙ্কর কিছু করে ফেললে তখন তার দায় আমাকে দিতে পারবে না তুমি ৷”
কথাটা শুনেই আরুর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো,,,,

কি করবে এখন কিছুই বুঝতে পারছে না, না পারছে চলে যেতে আর না পারছে আরিশকে সহ্য করতে ৷
আরুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরিশ আবার কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলো আরুকে তারপর আরুর পেট থেকে শাড়িটা অল্প সরিয়ে কাটা জায়গায় মলম লাগায়ে দিলো ৷
কাছুখন পর আরুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আরুর গলায় মুখ ডুবিয়ে বলতে লাগলো,,,,
__” কখনো আমার থেকে পালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখিওনা তাহলে তার পরিনতি হবে ভয়ংকর ৷এবার ঘুমিয়ে পড়ো আরুপাখি নাহলে কালকে বাসরের সময়ে আর ঘুমাতে পারবে না ৷”

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২১

আরু কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না, মানুষটা কে ও কখনই বুঝে উঠতে পারিনি আর এখন আরো বড্ড বেশি রহস্যময় লাগছে আরিশকে ৷ কখনো ভালোবাসছে আবার কখনো সাইকো টাইপের ব্যাবহার করছে ৷
যদিও বা ওর চোখে আজ আর ঘুম আসবে না, আরিশ এমনভাবে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে মনে হয় না যতক্ষণ না আরূ ঘুমাবে ততক্ষণ আরিস ওকে ছাড়বে, তবুও নির্ঘুম চোখে যে কতটা সময় পার করেছে তা ওর ধারনাতে নেই……

রাত12.30,,,,,
__” আন্টি কোনো চিন্তা করবেন না আমাদের কে নিয়ে ৷ও ঘুমাচ্ছে , আর কালকে সঠিক সময়ের মধ্যেই ও বাড়ি পৌঁছে যাবে, শুধু কালকের দিনের জন্য ওকে একটু সামলে রাখবেন তারপর ওর সব দায়িত্ব আমার……(আরূর দিকে তাকিয়ে)
__” আমার মেয়েটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে বাবা, আর এই কদিনে ও অনেক কষ্ট পেয়েছে , তুমি একটু ওর খেয়াল রেখো ৷”(আরুর মা কাদতে কাদতে)
__” দোয়া করবেন যেন ভালো থাকি৷”
__” আমিন, দোয়া রইলো ৷”
আরিশ ফোনটা কেটে আরুর পাশে গিয়ে বসলো আরু আরুর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো,,,,আজ আরিশের চোখের কোনেও জল,,,ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার অনন্দে ,দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসানে আজ আরুকে ও নিজের কাছে পেয়েছে

আরূকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো আরিশ,,,,
__” বড্ড বেশি ভালোবাসি আমার এই ছোট্ট আরূপাখিটাকে, তুমিই যে আমার অদ্ভুদ নেশা -আসক্তি ৷”

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ২৩