তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ১২ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ১২
Suraiya Aayat

প্রতিদিনের ধারাবাহিক নিয়মমাফিক আরু আর আরিশ দুজনে পরস্পরের বিপরীত দিকে মুখ করে শুয়ে আছে, দুজনের মাঝখানে দূরত্বটা বেশ ভালো ৷ সবুজ ডিম লাইটের আলোটা সারা ঘরেজুড়ে রঙিন আলোয় আলোকিত করে দিচ্ছে তাতে আরুর মুখটা যেন আরো বেশি উজ্জ্বল আর মায়াময়ী লাগছে ৷ আরিশ বারবার নিজেকে আরুর মাঝে আশক্ত করতে চাই কিন্তু সে যে চাইলেও পারবেনা ৷

আরুর কোমরটা ব্যথায় টনটন করছে, কষ্টগুলোকে নিজের মনের মাঝে জমিয়ে রেখে দিয়েছে কারোর কাছে তার নিজের কষ্টটাকে প্রকাশ করবে না বলেই ঠিক করেছে কারণ কেউ কারোর কষ্টের মর্যাদা দিতে জানে না ৷
বারবার ঘুমানোর চেষ্টা করছে তবুও যেন চোখে ঘুমটা আসছেনা , কোমরটা ব্যথায় টনটন করছে , মাঝে মাঝে চোখের কোন বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে ব্যথায় , শরীরের তাপমাত্রাও খানিকটা বেড়ে গেছে , জ্বর জ্বর ভাব নিয়ে শুয়ে আছে ৷ বিছানা থেকে উঠে ওষুধ খাবে তার ও কোন উপায় নেই ৷

আরু আরিশের ব্যাবহারের কারণে মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছে , মানুষ কখনো আর শত্রুকে এমন ভাবে উপেক্ষা করে না যেভাবে আরিশ আরুকে উপেক্ষা করে গেছে ৷
মনের আকাশে কালো মেঘ জমেছে, সেই মেঘকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য কি আরিশ কখনো আসবে সেটা আরু জানেনা ৷ যে মানুষটা কয়েকদিন আগেই তাকে পাওয়ার জন্য এতটা ব্যাকুল ছিল আজ তারই এমন নিস্তব্ধত হয়ে দূরে সরে যাওয়া টা আরু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না……

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরিশের মনটাও চঞ্চল , কোনভাবেই নিজের অশান্ত মনটাকে শান্ত করতে পারছেনা আরিশ,পাশের মানুষটা কোমরের ব্যথায় প্রচন্ড হারে যে কষ্ট পাচ্ছে সেটা মাঝখানের দূরত্ব ভেদ করেও আরিশ বুঝতে পারছে ৷ আরিশ এবার উঠে বসে খানিকটা দূরে উঠে বসলো , তারপর খানিকটা চুপ করে থেকে আরুর দিকে বারবার উঁকি দিচ্ছে দেখার জন্য যে আরু ঘুমিয়েছে কি ৷ আরুর দিকে একবার তাকিয়ে দেখল যে আরু ঘুমোচ্ছে আর ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে আরিশ আস্তে আস্তে ধীরে বিছানা থেকে নামল তারপর ফার্স্ট এইড বক্স থেকে ব্যথার মলম আর স্প্রে টা নিয়ে আরুর পাশে শান্ত হয়ে বসলো, বেশি নড়াচড়া করলে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায় তার জন্যই এতই সাবধানতা অবলম্বন ৷

আরুও আরিশের এই উপস্থিতি বুঝতে পারছে ৷ আরিশ মলমটা নিয়ে আরূর কোমর থেকে শাড়ির আঁচলটা সামান্য সরিয়ে দিয়ে মলমটা হাতে নিয়ে আরুর কোমরে দিতে গেলেই হঠাৎ করে আরু বলে উঠলো
‘ মলম দেওয়ার কোন দরকার নেই ৷ আমার আর ব্যথা নেই , সব ব্যথা নির্মূল হয়ে গেছে ৷’
হঠাৎ করে আচমকাই আরুর কণ্ঠস্বর পেয়ে আরিশ চমকে গেল ৷ তাহলে কি এখন আরু ওকে এই একটা এই কাজের জন্য আবার ওকে ক্যারেক্টারলেস, আর খারাপ কিছু মন্তব্য করবে ৷ ও ভেবেছিল আরু হয়তো ঘুমোচ্ছে আর সেই ফাঁকে মলমটা দিয়ে দিলে আরু বুঝতে পারবেনা, কিন্তু আরু যে জেগে আছে সেটা হয়তো আরিশ তখন বুঝতে পারেনি ৷
আরিশ এবার থতমত হয়ে বসে রইল, কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না , কিছু বললে আরু যদি আবার কোন উল্টোপাল্টা কথা শোনায় তখন !

আরশের নিরবতা দেখে আরু কঠিন সুরে বলল ‘ ‘যেখানকার জিনিস সেখানেই রেখে এসে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ুন ৷’
‘খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছো ,মলমটা লাগানো দরকার ৷’
আরু হাতের উপরাংশ দিয়ে চোখটা মুছে নিয়ে বলল ‘আমি কি বলেছি যে আমি ব্যথা পেয়েছি ?’
একটু কঠিন স্বরে ৷
‘ না বললেও কিছু জিনিস বুঝে নিতে হয় ,মলমটা নিয়ে আবার আরুর কোমরে সামান্য স্পর্শ করতে আরু আহহ বলে জোরে শব্দ করে উঠলো, ব্যথায় কুকিয়ে যাচ্ছে ৷

আরুর এমন আর্তনাদ শুনে আরিশের বুকের ভিতরে যেন কেঁপে উঠলো তাড়াতাড়ি করে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললো
‘ আই এম রিয়েলি সরি , আমি জানতাম না যে তোমার ব্যাথাটা এত বেশি ৷’
আরুর চোখের কোনে জল চলে এসেছে ,উঠে বসতে যেতেই আরিশ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল
‘ ওঠার দরকার নেই , আমি স্প্রে করে দিচ্ছি ৷’
আরু এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল

‘ হে আমার মত বাচ্চা মেয়েকে কাঁদাতেই তো আপনার ভালো লাগে তাই না ! আমার কষ্টটা আর কিভাবে বুঝবেন! তখন যে আমি পড়ে গেলাম , ব্যথা পেয়েছি সেটা কি একবারো আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন ? আপনি আমার সাথে তখন যেমন ব্যবহার করলেন মানুষ নিজের শত্রুর সাথেও হয়তো এমন ব্যবহার করে না ৷আপনি খুব পচা ৷’
আরুর কথায় অভিমানে সুর শুনে আরিশ বুঝতে পারলো যে মেয়েটা ওর ব্যবহারে বড্ড কষ্ট পেয়েছে ৷ সত্যিই তো ওর একবার অন্তত জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছে কিনা ৷

আরূর কথা শুনে আরিশের হাসিও পাচ্ছে আবার কান্না পাচ্ছে , মেয়েটার বাচ্চা স্বভাবটা এখনো যায়নি তবে এখন যদি আরুর কথায় খিলখিল করে হেসে ফেলে তাহলে সেটা আরুর সামনে ওর দুর্বলতা প্রকাশ করা হবে তাই আরিশ এবার কথাটাকে ঘোরানোর জন্য খানিকটা দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলো
‘ তারমানে তুমি আম্মুকে বলো নি যে তুমি ব্যাথা পেয়েছো তাই তো !’
‘ না বলিনি ৷’
আরু এবার খানিকটা ঝটপটানি করে উঠে পড়ল বিছানা থেকে , ব্যথা পেলেও যেন রাগের ঠেলায় ব্যথা কম অনুভব করছে আর রাগ বেশি হচ্ছে ৷
আরিশের টি-শার্টটা ধরে নিজের কাছে টেনে এনে বলল

‘ আপনার আম্মুকে কেন বলতে যাবো আমি? আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেননি কেন সেটা আগে বলুন ! আপনার কি আমার প্রতি কোন অধিকার নেই? কেন জিজ্ঞাসা করেননি বলুন ?’
আযিশকে একপ্রকার ঝাঁকুনি দিয়ে কথাগুলো বলছে আরূ ৷ আরুর এমন রূপ দেখে আরিশ অবাক হলো, মেয়েটার কি প্রতিরাত্রে জিনের আসর করে যে মেয়েটা প্রত্যেকে রাত্রেবেলা এমন উদ্ভট উদ্ভট ব্যবহার করে ওর সাথে ৷
‘ কি করছো আরুপাখি ? বেশি নড়াচড়া করো না তুমি ব্যথা পাবে ৷’
আরু আরিশকে আরো খানিকটা কাছে টেনে নিয়ে বল
‘ কেন আমাকে ভালোবাসেন না আর আগের মত ? কেন সবসময় দূরে দূরে থাকেন? আপনার কি আর ইচ্ছা করে না আমাকে ভালবাসতে?’

আরুর নরম কন্ঠের ভাষা গুলো যেন তীব্র আর্তনাদের প্রকাশ ঘটাচ্ছে, মেয়েটার মনটা বড্ড অস্থির কখন কি বলে হয়ত নিজেই বোঝে না, কথাগুলো ভেবে আরিশ বলে উঠলো
‘ তোমার হয়তো জ্বর হয়েছে আর সেই জন্য এসব বলছে তুমি, এখন ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো ৷’
‘ কেন আমাকে কি আর ভালোবাসা যায় না?’
আরুর কথাটাকে কাটানোর জন্য আরিশ বলে উঠল ‘ ইলমাজের সাথে দেখা হয়েছে ?

ইলমাজের কথাটা শুনতে আরূ অবাক হয়ে গেছে, আরিশের জামা টা ছেড়ে দিলো ৷ ইলমাজকে যে ও খুজতে গিয়েছিলো তা আরিশ কিভাবে জানলো তা নিয়ে আরুর মনে প্রশ্ন জাগছে ৷ তাহলেও কি ইলমাজ দেখেছে যে ওই ইলমাজের বাড়িতে গিয়েছিল ওর খোঁজ নিতে , তার জন্যই কি ওর আরুর থেকে এই দুরে সরে আসা ?
আরু এবার খানিকটা কিন্তু কিন্তু করে বললো
‘ না দেখা হয়নি, সে তার নিজের বাসা চেঞ্জ করেছে ৷ আর আপনার আমার জীবনে ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে কথা না বললেই ভালো , সেটা না হয় আমার উপরেই ছেড়ে দিন ৷’

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ১১

বলে আরু পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল ৷ মনে মনে এখন আরিশের উপর এক গাদা রাগ হচ্ছে ৷ কেন ওদের কথার মাঝখানে আবার ইলমাজের কথা টেনে আনবে ও ?
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে আছে, মেয়েটা এক পাশ ফিরে শুয়ে আছে ৷ আরিশ বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনিতে গেল, সিগারেটটা ধরিয়ে দিয়ে তার ধোয়া বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে আর তার গন্ধ আরুর নাকে পৌঁছেতেই আরুর মনটা খানিকটা নরম হয়ে গেল, মনের মাঝে তীব্র ইচ্ছা জাগলো আরিশের কাছে গিয়ে তার হাত থেকে সিগারেটটা টেনে ছুড়েফেলে দিতে আর বলতে যে

‘ কেন এই ধোয়ার নেশাটা আমার নেশার থেকেও আপনার কাছে বেশি প্রশান্তির ?’
আরিশের মাঝে এত পরিবর্তন হঠাৎ করে সেটা কেন তা আরু জানতে চাই ৷
সিগারেটের ধোঁয়া টা বেলকনি জুড়ে একরাশ বিষাক্ত ধোঁয়ার আবরণ তৈরি করছে আর সেই নেশায় আরিশ নিজেকে ডুবিয়ে দিচ্ছে বারবার ৷

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ শেষ পর্ব