তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ১০ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ১০
Suraiya Aayat

‘ আমার তোমাদের সকলকে কিছু বলার আছে ৷’
আরিশের কথা শুনে খানিকটা ভ্রু কুঁচকে তাকালো সবাই, এই মুহূর্তে আরিসের মুখ দেখে বোঝা সম্ভব নয় যে আরিশ কি বুঝাতে চাইছে তবুও অপেক্ষা করছে আরিসের মুখ থেকে শোনার জন্য ৷ আরু মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে যে আরিশ যদি অন্য কাউকে বিয়ের কথা বলে তাহলে সকলের সামনে সপাটে চড় মারবে কারণ ওর জন্যই আজকে আরু সবার সামনে অপমানিত আর একজন কলঙ্কিত নারী হিসেবে পরিচিত হয়েছে তাই এত সহজে ছেড়ে দেওয়া যায় না আরিশকে ৷ মুখটা গম্ভীর করে রেখেছে আরিশ, আরুর দিকে এক বারের জন্যও তাকায়নি সেই জিনিসটা লক্ষ্য করছে আরু , ব্যাপরটা আরুর রাগের মাত্রাটাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে ৷

‘ আমি তোমাদের সবাইকে একটা কথা বলার জন্য ডাকলাম ৷’
‘ হ্যাঁ বল, কি কথা বলবি আমরা তো এটা জানার জন্য বসে আছি ৷’
আরিশ এবার হালকা চোখে আরুর দিকে তাকিয়ে চোখ টা ঘুরিয়ে নিয়ে বলল
‘ আমি সানার বিয়ে ঠিক করেছি ৷’
কথাটা শুনে আরিশের বাবা আফজাল খান বললেন ‘ ‘কে সেই ছেলেটা?’
‘ ছেলেটাকে তোমরা সকলেই চেনো , আহান ৷’

আফজাল খান এবার খানিকটা রাগী গলায় বললেন ‘আমি কখনোই আমার মেয়েকে আহানের সাথে বিয়ে দেব না ৷’
কথাটা শুনে আরু খানিকটা অবাক হল তার সাথে খানিকটা রাগও হল , কারন আহানের মাঝে খারাপটা কী আছে যে সানার সাথে আহানের বিয়ে দেওয়া যায় না ৷
আরু বুঝতে পারলো যে তার মানে আহানের সাথে সানার নিশ্চয় কোনো একটা সম্পর্ক ছিল না হলে আরিশ কখনো ওদের বিয়ের কথা বলত না ৷
আরিশ এবার ঠান্ডা গলায় বলল
‘ সমস্যা কি?’
আফজাল খান এবার একটু কড়া গলায় বললেন ‘সমস্যা কিছুই নেই , আমি চাইনা আত্মীয়তার মধ্যে আর কোনো সম্পর্ক ৷”
কথাটা শোনা মাত্রই আরিশ এবার উঠে দাঁড়িয়ে রেগে ঝড়ের গতিতে বলতে লাগলো
‘ আত্মীয়তার সম্পর্কের মধ্যে তোমার যখন মেনে নিতে এতোই অসুবিধা তাহলে নিজের ছেলের বউকে কেন মেনে নিয়েছ? ও তো আমাদের আত্মীয় মধ্যেই পড়ে তাই না ! তারমানে তুমি বলো এখন আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিই? তোমার কথার মানে তো এটাই দাড়ায় ?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ডিভোর্স কথাটা শুনে আরুর বুকের ভেতর ধক করে উঠল, ও কখনো ভাবেনি যে আরিশ ওকে কখনো এমন কিছু বলবে ৷ চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরু ৷
অনিকা খান এবার আফজাল খানকে হাত ধরে বললেন
‘তুমি এমন করছ কেন আমার সমস্যাটা কোথায় আর আহান যথেষ্ট ভালো একটা ছেলে ৷ আর ও তো মেডিকেলের লাস্ট ইয়ার, আর একবছর পরেই তো জব পেয়ে যাবে তাইনা ?’
আফজাল খান আরিসের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন
‘ আমার মোটেও তার অভ্য৷সগুলো ভালো লাগে না ৷”

কথাটা শুনে আরুর রাগ চলে এল, ও নিজে কিছু বলতে যাবে তার আগে আরিশ হো হো করে হেসে বলে উঠলো
‘ স্বভাব চরিত্রের কথা বল! তাহলে তো তোমার নিজের ছেলেই একটা ক্যারেক্টার লেস আর সবথেকে বাজে একটা মানুষ , একটা ক্যারেক্টার লেস, চরিত্রহীন ছেলে জন্ম দিয়েছো তুমি ৷ তাহলে এটাই কি এনাফ নয় তোমার আমাকে ঘৃনা করার জন্য ৷ একমাত্র ক্যারেক্টারলেস ছেলেই পারে বিয়ের আসর থেকে একটা মেয়েকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে জোর করে বিয়ে করতে ৷ এই বিয়েটা আরু নিজে থেকে করতে চাইনি এই বিয়েটা আমি ওকে জোর করে করেছি ৷ বিয়ের আগে ওর সাথে আমার কোন শারীরীক সম্পর্ক ছিল না যাতে ও আজ আমার বাচ্চার মা হবে, একপ্রকার জোর করে ওকে আমি বিয়ে করেছি ,তার ভালোবাসাকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছি, আমি অপরাধী, তার চোখের জলটা ঊবল আজ আমার কারনেই ঝরে ৷ আমি সবথেকে খারাপ ৷’

মনে মনে ভাবা কথাগুলো আরিশের ভীষণভাবে বলতে ইচ্ছে করছিল জোর গলায় কারণ ও যা যা করেছে তার কোনো ক্ষমা হয় না, এগুলো বলে ওর নিজেকে যদি একটু হালকা লাগতো আর তা শুনে যদি আরু ওর প্রতি ঘৃণা নিয়ে চলে যেত তাহলে হয়তো তাতে ঐকটু শান্তি পেতো , সমস্ত কথাগুলো আরিশ চাইলেও বলতে পারছিনা শুধু ভাবছে এই কথাগুলো ওর পরিবারের লোকজন শুনলে হয়ত মেনে নিতে পারবে না , খুব কষ্ট পাবে তারা ৷
আরিশ এবার ঘোর কাটিয়ে বলল

‘ সমস্যা কি বাবা?’
‘ সমস্যা কিছুই নেই আত্মীয়তার মাঝখানে সম্পর্ক হবে আবার সেইখানেই আমার একটু অসুবিধা ৷’
‘ আমার আর আরুর সম্পর্কটাওতো আত্মীয়তার তাহলে তুমি কি এ বিয়েতে খুশি না নাকি আমি নিজে ইচ্ছা করে বিয়েটা করেছি বলে তুমি মানতে বাধ্য হয়েছে কোনটা?’
‘ আমার কোন সমস্যা নেই , যদি সানা রাজি হয় তো !’
‘সানা কোন আপত্তি করবে বলে আমার মনে হয়না, তুমি তাড়াতাড়ি দুই পরিবারকে এক জায়গায় বসে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যবস্থা করো ৷’
আরিশ লক্ষ্য করলো হঠাৎ আরু সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে দৌড়ে উপরে চলে যাচ্ছে,

‘ ওর কি হলো ? তাহলে কি আরু বিয়েতে খুশি না?
এমনটা যদি হয়ে থাকে তাহলে আরুর সাথে এই ব্যাপার নিয়ে কথা বলবো, কারন এখানে দুটো জীবনের ব্যাপার কোনো ভাবেই আমি চায়না যে ওদের মাঝেখানে আর অন্য কোন দূরত্ব তৈরি হোক ৷'(আরিশ মনে মনে ভাবলো ৷)
রুমের ভিতর গিয়ে আরু এক প্রকার নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে , বিছানার ওপর ওড়নাটা ফেলে দিয়ে বেডের উপরে উঠে উড়ুধুড়ু নাচছে, আরু খুব খুশি হয়েছে এটা শুনে, সানা আজকের পর থেকে ওর আরো কাছের একজন মানুষ হয়ে যাবে , ওর ভাইয়ের বউ হবে ভাবতেই খুশি লাগছে আরূর ৷
হঠাৎ দরজার পঁ্য৷চ করে আওয়াজ হতেই আরু খানিকটা ভরকে গেল , অগোছালো চুল গুলোকে ঠিক করে সামনে তাকাতেই আরিশকে দেখতে পেলো ৷

আরিশ দরজাটা খুলে দেখল আরূ ডান্স করছে, আর গায়ের পোশাকের যা-তা অবস্থা পুরো অগোছালো , চুলগুলো উসকো খুসকো , চোখে মুখে খুশির ছাপ, তা দেখে আরিশের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আরু ভীষণভাবে চাই যেন বিয়েটা হয় ৷
আরু আরিশকে দেখে লজ্জা পেয়ে গেল তারপর খেয়াল করলো ওর গায়ে ওড়না নেই, ঝটপট করে ওড়নার দিকে নজর যেতেই দেখল বিছানার এক কোণে পড়ে আছে ওড়না, তা দেখে আর ঝটপট করে সেটা নিতে গেলে প্লাজোটা পায়ের তলায় বেঁধে গিয়ে আরু বেডের উপর থেকে নিচে পড়ে গেল ৷ আঃ করে শব্দ করে উঠল,

এতক্ষণে আরিশ বুঝতে পারল যে আরূ পড়ে গেছে , তাড়াতাড়ি করে আরূকে মেঝে থেকে তুলে বিছানায় বসালো ৷
আরূ ব্যথা পেয়েছে , আরিশের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে আর চোখটা বন্ধ করে আছে, মাঝে মাঝে চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে ৷
আরিশ ও আরুর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াচ্ছেনা, আগের মতো অবস্থাতেই বসে আছে আরূ , আরু এবার চোখ খুলে আরিশের দিকে তাকাতেই আরিশ বলে উঠলো,

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ৯

‘ পরশু আম্মুর কাছে বলবে যে বিছানা থেকে পড়ে গেছ তারপরে বেবিটা মিসক্যারেজ হয়ে গেছে ৷’
কথাটা বলেই আরুর হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷ হঠাৎ এমন কিছুতে আরু হতবাক হয়ে গেল, ভেবেছিল আরিশ হয়ত বলবে
‘ খুবই ব্যাথা পেয়েছো?’

কিন্তু তা হয়নি আরিশ উল্টে আরেকটা নতুন সাজানো কাহিনী ওকে বলে গেল , নিজের অজান্তে চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ছে তা কি ব্যথা পেয়ে নাকি আরিশের ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে সেটা আরু বুঝতে চাইছে না ৷
ব্যথাটা খুব বেশি পেয়েছে,কোমরটা টনটন করছে , কোনরকমে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হেঁটে হেঁটে ব্যালকনিতে গেল ৷ সেখান থেকে আরিশকে দেখা যাচ্ছে ৷
কারোর সঙ্গে ফোনে কথা বলছে হয়তো আর সেটা আরু ভালই বুঝতে পারছে ৷ আরিশের মুখে একরাশ হাসি আর ওর মুখে অজানা এক কষ্টের ছাপ ৷

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ১১