তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ৯ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ৯
Suraiya Aayat

ঘরে বসে আছে আরূ আর শরীরটা ক্রমাগত থর থর করে কাঁপছে , অজানা কোন এক সুপ্ত ভয় লাগা জনিত অদ্ভুত এক অনুভুতি হচ্ছে , কি করবে তা নিয়ে একপ্রকার দ্বিধার মধ্যে আছে আরু তবে যে সিদ্ধান্তটা নেবে সেটা সঠিকভাবে নেবে দ্বিতীয়বার জীবনে আর কোন ভুল করতে না হয় ৷
শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়, হঠাৎ করেই বমি হয়ে গেল ৷ নিলুফার ইয়াসমিন কিছুক্ষণ আগে আরূর কাছে বসে এইসময়ের(গর্ভবতী) কিছু সাবধানতা বাণী দিয়ে চলে গেছেন, ৷

অনিকা খান অনেক আগেই মেডিসিন দিয়ে গেছেন সেটা হাতের পাশেই রয়েছে, আরু চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে চোখটা বন্ধ করে নিল ৷
হঠাৎ করে অনিকা খান তাড়াহুড়ো করতে করতে এসে আরূর পাশে বসে আরুর গালে হাত রেখে বললেন
‘ এখন কেমন লাগছে?’
আরু চোখটা বন্ধ করে রেখে বলল
‘ আগের থেকে ভালো লাগছে ফুপি তুমি অযথা চিন্তা করো না ৷'(উনার হাতে হাত রেখে)
হঠাৎ ওনার নজর ওষুধটার ওপর পড়তেই উনি আরু ওদিকে কুঞ্চিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন

‘ তুই কি আমার কথা শোনার প্রয়োজন মনে করিস না নাকি?’
আরু এবার খানিকটা থতমত খেয়ে বললো
‘ আমার মনে ছিল না মামনি, মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে ৷’
‘ বুঝেছি আমি বললে তো শুনবি না , আরিশ বললে শুনবি , আর সেই ব্যবস্থাই করেছি ৷’
‘ মানে? ‘
‘ আরিশকে ফোন করেছি, এক্ষুনি চলে আসবে ৷’
আরু খানিকটা ভাঙ্গা গলায় বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ ওনাকে আবার বলার প্রয়োজন কি ছিল, আমি তো ঠিক আছে তাই না !’
‘ একটা থাপ্পর দেবো যদি আর একটা উল্টাপাল্টা কথা বলিস ৷ তুই এখানে বস আর কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে আরিশ তারপর দেখ ও তোকে ঔষুধ খাইয়েই ছাড়বে, সে জোর করে হলেও ৷’
কথাটা বলে অনিকা খান রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন , উনি চলে যেতে আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
‘ আবার কেন !’
এই মুহূর্তে হঠাৎ করে আরিশের প্রতি একরাশ বিরক্তির উদ্ভব হলো ৷
খানিকটা চুপচাপ বসে থাকতেই হঠাৎ কানে সিঁড়ি দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে কারোর উঠে আসার পদধ্বনি শুনতেই আরু বুঝতে পারল আরিশ এসেছে ৷

দুটো ধাপের সিঁড়ি আরিশ লাফিয়ে লাফিয়ে একধাপে পার করছে , মনে হচ্ছে যেন এই মুহূর্তে আরুর পাশে ও না থাকলে আরূর বড়সড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে ,সেই আশঙকায় তাড়াহুড়ো করে আরুর কাছে যাচ্ছে ৷
আরু রুমের এসে থেমে গেল , দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বুকে হাত রেখে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো , নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করছে , তবুও কোনোভাবে আরূর সামনে নিজেকে আরূর প্রতি দুর্বলতা কে প্রকাশ করবে না তাতে আরূ যদি বিরক্ত হয় আর আরিশ আরুকে কোনভাবেই বিরক্তির মাঝে ফেলতে চায় না বলে নিজেকে দমিয়ে রেখেছে, নিজেকে আরূর থেকে দূরে সরিয়ে রাখা খুব কষ্টকর তবুও অভ্যাস করে নিতে হবে এটাতেই ৷

হঠাৎ করে পদধ্বনিটা থেমে যেতেই আরুর কপালে ভাঁজ গুলো গভীরতর হলো, তাহলে কি ও কোন ভুল কিছু শুনলো !
আরিশ নিজেকে কোনক্রমে শান্ত করে রুমের ভিতরে ঢুকতেই আরু চমকে উঠলো, তাহলে ও ঠিকই বুঝেছে ৷ আরিশকে নিশ্চপ্রান লাগছে, থমকে গেছে কেমন , তা আরু আরিশের মুখ দেখে ভালোই বুঝতে পারলো ৷
আরিশ আরুর সামনের সোফার হাতলের উপরে বসে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল

‘ এখন কেমন আছো?’
আরু একটা জিনিস খেয়াল করলো আরিশ কথা বলার সময় একটিবারও আরূর চোখের দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে কথা বলেনি , হয়ত নিজের কথাটাই ভীষণভাবে রাখছে আরিশ ৷ আরিশ ওকে বলেছিল যে আর কখনো এমন কোন কাজ করবে না যাতে আরু বিরক্ত হয়ে যাই ৷ একটা বড়ো ঝড় যেন আরিশকে থামিয়ে দিয়েছে ৷ আরিশের এই নিশ্তব্ধতা হয়তো আরু নিজেও পছন্দ করে না ৷
আরু খানিকটা থেমে বললো
‘ ভালো আছি ৷’

আরিস এক পলক আরূর মুখের দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আরু খুব অবাক হলো ৷ আরিশের তরফ থেকে এই ধরনের ব্যবহার গুলোই খুবই অবাক হচ্ছে আরু ৷ মানুষটা কি তাহলে একেবারেই ওর থেকে দূরে সরে গেল? অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছে হয়তো আরিশের এর ব্যবহার গুলো ওকে বড্ড অবাক করছে ৷
আরিশ চলে যেতেই দেখল বিছানার পাশে আরুর হাতের পাশে ঔষুধ রয়েছে , তা দেখে বিছানা থেকে ওষুধ টা তুলে নিয়ে আরুর দিকে হাত বাড়িয়ে ধরে বললো

‘ এটা এখন তোমার সব থেকে বেশি দরকার, এটা খেয়ে নাও ৷’
আরিশের এমন কণ্ঠস্বর শুনে আরুর গলা শুকিয়ে আসছে, এর আগে কখনো এমন কন্ঠে আরিশকে কখনো কথা বলতে দেখেনি, মানুষটা কি তাহলে একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে নাকি সে আর আরুর প্রতি ইনটারেসটেড নয় , কোনটা ?আরুর মনে প্রশ্ন জাগছে ৷
আরু অনেকখন ধরে আরিশের দিকে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে, মানুষটার চোখটা ছলছল যেন গভীর বর্ষা নেমে আসছে ৷ আরুর এমন চাহনি দেখে আরিশ বলে উঠলো

‘ আচ্ছা সরি ৷ আমার জোর করাটা উচিত হয়নি ৷ সব অধিকারটুকু সবার থাকে না ৷’
কথাটা বলে ওষুধ টা আগের জায়গায় রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরু ৷
আরু আরিসের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়েছে, পলকও পড়ছে না,ওর মনে এখন ঘটে যাওয়া অনুভুতিটা খুব অদ্ভুত ৷
ওষুধ টা হাতে নিয়ে টেবিলের ওপর থেকে গ্লাসটা নিয়ে ওষুধটা খেয়ে নিলে, তারপর খোলা জানালার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল , সবকিছু কেন এমন এলোমেলো ?

রাত অনেক হলো আরিশ এখনো বাড়ি ফেরেনি ,ঘরে খাওয়ার জলটা শেষ হয়ে গেছে, আরূর গলা শুকিয়ে এসেছে, বোতলের জলটাও শেষ হয়ে গেছে দেখে বোতল টা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে একবার ঘড়ির দিকে তাকালো , সময় এগারোটা জানান দিচ্ছে, আজ এত রাত হয়ে গেল এখনো আরিশ ফিরল না , এমনটা কখনো হয়না যে আরিশ লেটে ফেরে, খুব প্রয়োজন ছাড়া ৷ আরু ঘড়ির দিক থেকে চোখটা নামিয়ে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলেই হঠাৎ করে ফিসফিস করে কারোর গলার আওয়াজ আসতেই ওর পা দুটো থেমে গেল ৷

আওয়াজ টা কোথা থেকে আসছে তা শোনার জন্য খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে তার উৎস খোঁজার জন্য এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলো ব্যালকনি থেকে আওয়াজটা আসছে, আর ধোঁয়া জাতীয় জিনিস বাতাসে ভাসছে ৷ ব্যাপারটা আসলে কি তা দেখার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ পুরুষালী কণ্ঠস্বর পেয়ে থমকে গেল, বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো ৷
ভয়ে ভয়ে আরো কাছে এগিয়ে যেতেই আরু শুনতে পেলো,,,

‘ আমি কালকেই বাসায় বিয়ের কথা বলবো তুমি কোন চিন্তা করো না ৷ আমি তো আছি, আরুর ও অমত দেওয়ার কোন কারন আমি দেখছি না , ওউ হয়তো বিয়েটা হতে দিতে চাই ৷’
কতটা শুনে আরু ওর ওড়নাটা খামচে ধরলো কোন এক অজানা কারনে ৷
‘ উনি কার বিয়ের কথা বলছেন? উনি কি আবার বিয়ে করবেন? আমি না করতেই অন্য একজনকে বিয়ে!’ চরিত্রহীন মানুষ ৷'(মনে মেনে)
আরুর মনে আরিশের প্রতি আবার ঘৄনা আর রাগ তৌরি হলো, আর নীচে গিয়ে জল আনলো না , রুমের দরজা লক করে শুয়ে পড়লো যাতে রাতে আরিশ আর রুমে ঢুকতে না পারে ৷

‘ সানাকে অনেক ভালোবাসো তাইনা ?’
‘ হমম ৷ যেমনটা তুমি আরুকে বাসো ৷’
‘ আমি আর ভালোবাসতে পারলাম কই !’
কথাটা বলে আরিশ একটা তাচ্ছিল্ল্যর হাসি হাসলো ৷
‘ এমন বলছো কেন ?’
‘ আমার কথা ছাড়ো, এমনি বললাম ৷’
‘ তাই বলো !’
‘ কালকে বাসায় জানাবো ,চিন্তা নেই ৷’
‘ আচ্ছা, অপেক্ষায় থাকবো ভালো কিছুর ৷’
‘হমমম’

.আরিশ ফোনটা কেটে দিয়ে সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়াটা বতাসে ওড়ালো ৷ ওর বড্ড কষ্ট হচ্ছে, অফিসে গিয়ে অনেক কেদেছে ৷
আরুকে আহানের সামনে আরু বলে ডাকলো কারন ওর আরুকে ভালোবেসে ডাকা নামটাও চাইনি যে আর কেউ শুনুক ৷তাই আরু বলেই ডেকেছে ৷
আরিশ অনেকখন ফিরেছে তবে রুমে যাইনি হয়তো আরু বিরক্ত হবে এই ভেবে ৷আর এদিকে আরু না চাইতেও দরজার দিকে তাকিয়ে ছিল মানুষটার ফেরার ৷
আজ রাতটা ও এখানেই কাটাবে, বাইরে খোলা আকাশে, রাত জেগৈ একরাশ জোছনা বিলাস করবে আর তারাদের সাথে কথোপকথনে মত্ত হবে ৷
রাত বাড়ছে , আরুর চোখে ঘুম নেই, বড্ড শূন্যতা অনুভব করছে কিছুর, আজ আরিশের প্রতি ঘৄনার তুলনায় রাগ নামক বস্তুটা বেশি কাজ করছে ৷

আরু বারবার এপাশ ওপাশ করছে, না পেরে বিছানা ছেড়ে ওঠে গায়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো ৷আরিশ পাইচারি করছে , তা দেখে আরু চটজলদি পায়ে আরিশের কাছে গিয়ে ধমকের সুরে বলল,,,,
‘ এত রাতে এখানে কি করছেন? আর হাতে সিগারেট কেনো?’
আরুর কথায় আরিশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল, অজানা ভয়ে হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে থতমত মুখ করে বলল,,,,
‘ একটাই খেয়েছি ৷'( আজ হঠাৎই মিথ্যা বলল আরিশ, ও মিথ্যা খুব কম বলে )
‘ মিথ্যা কেন বলছেন? আমি এর অগেও আপনাকে খেতে দেখেছি ৷’
‘ তুমি কি করে দেখলে?’
আরু বোকা বনে গেল,নিজের জালে নিজেই ফেসে গেল ৷ কোনরাকম সামলাতে আরিশের টাই টা ধরে খানিকটা ওর কাছে টেনে বলল,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ৮

‘ 2য় বউ কিন্ত সব কিছু সহ্য করবে না !’
‘ সেটা কে ?’
‘ আমার শতীন ৷’
কথাটা বলে আরিশকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে বললল,,,,
‘ চুপচাপ ঘুমান ৷’
ও নিজেও ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো ৷

আরিশ আরুর কাজে রিতীমতো অবাক ৷ এতো রাতে আরুর এমন উদ্ভট ব্যাবহার দেখে ভাবলো আরুর ওপর জিন আসর করেছে , তাই আর কোন কথা না বাড়িয়ে আরুর থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো ৷
আরুর হঠাৎ মনে হলো যে ও এতোখন কি কি পাগলমি করেছে ! কথাটা ভাবতেই খুব রাগ লাগছে তবে আরিশের কাচুমচু ফেস দেখে ওর খুব হাসি পাচ্ছে ৷ বুঝলো যে হাজারো চিন্তা মাথায় থাকার দরুন ওর মুড সুইং হচ্ছে ৷ কালকে আবার আরিশের ওপর রেগে থাকবে এটা ভেবে আরু ঘুমিয়ে পড়লো ৷ আর আরিশ যদি আবার অন্য কাউকে বিয়ের কথা বলে তাহলে সবার সামনেই থাপ্পড় মারবে এতদিন কেবল চড়টা চর দেওয়ালের মাঝেই সীমাবদ্দ ছিলো, এগুলো মনে মনে ঠিক করে নিচ্ছে ৷
আরিশ শুয়ে আছে আর ভাবছে, এগুলো হয়তো আরুর সাময়িকের ভ্রম,রাত পোহালেই হয়তো আরুর এই অধিকার ফলানোর ঘোরটা কেটে যাবে , তখন হয়তো আরিশকে নিজে থেকেই অনেকটা দূরে সরিয়ে দেবে

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ১০