তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ৮ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ৮
Suraiya Aayat

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে হঠাৎ একজন অপরিচিত মহিলার কণ্ঠস্বরে গুঞ্জন শুনে আরু থেমে গেল , তারা যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছে আরু নিজেও তা নিয়ে দোটানার মধ্যে পড়ে গেছে ৷
‘ অনিক আপা তোমার ছেলে আরিশ বড্ড ভালো, আজকালকার ছেলেরা অনেকেই আছে খুব বেয়াদব কারোর কথা শুনতে চায় না কিন্তু সেখানে আরিশ একদম অন্যরকম , তোমার বৌমা অনেক ভাগ্যবতী যেসে আরিশের মতো একটা ছেলেকে নিজের জামাই হিসাবে পেয়েছ ৷’

‘ নিজের ছেলে বলে বলছি না , আরিস কে নিয়ে আমার খুব গর্ব হয় , আরূ কে ও খুব ভালোবাসে কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেবেনা আমি জানি ৷’
অনিকা খানের এই কথাটা শুনে আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিল ৷

‘ আর বোলো না আপা সবার কপাল কি আর আমার মত খারাপ হয় ! আমার বউ মা টা তো আমার ছেলেটাকে ছেড়ে চলে গেল ৷ আমার ছেলেটাকে তো জানোই কেমন স্বভাব চরিত্র তার , আরিশ এর মতো সেও খুব নম্র সভ্য কিন্তু তার বউয়ের মনে যে এমনটা ছিল সেটা কে জানতো বলো ! স্বামী থাকতে অন্য একজন পর পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে আবার তারপর ঘরে কোলের বাচ্চা ফেলে রেখে তার সাথে বেরিয়ে গেল এই সমস্ত কথা ভাবলেই আমি শিউরে উঠি ৷ এই একটা দিন যে আমি কিভাবে পার করেছি সেটা আমি জানি, ছেলেটাকে কতবার বলেছি দ্বিতীয়বার বিয়ে করার কথা সেই বউ তো তার নিজের মতো সুখে আছে এবার আমার ছেলেটাও না হয় নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিক, কিন্তু তার একই কথা সবাই আসবে বারবার ওর জীবনে আর তার আগের বউ এর মতো হবে যারা তোকে ছেড়ে চলে যাবে বারবার ৷ একজনের মন ভাঙার অধিকারটা কারোর নেই , আজ তার বউয়ের পরকীয়ার কারণেই ছোট বাচ্চা মেয়েটা মায়ের ভালোবাসা পায় না আদর পায় না, আমার ছেলেটা যদিও তা বুঝতে দেই না ৷ তবুও!’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“পরকীয়া” কথাটা শুনেই আরূর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো ৷ পরকীয়া মানে হলো ত্রিকোণ প্রেম , যেখানে স্বামী স্ত্রীকে ভালোবাসলেও বা স্ত্রী স্বামীকে ভালোবাসলেও অন্য একজন তৄতীয় ব্যাক্তি তাদের সম্পর্কের মাঝে থাকে ৷ পরকীয়া ইসলামের চোখে অত্যন্ত গুনাহর কাজ, সমাজের মানুষ তাদেরকে ভালোবাসে না যারা পরকীয়ার মত নোংরা একটা সম্পর্কে জড়িত থাকে , কিন্তু আরূর জীবন যে ত্রিকোন সম্পর্কে জড়িয়ে আছে সেটাকে কি পরকীয়া বলা চলে ! এমন তো নয় যে আবার ফিরে পেতে চায় ইলমাজকে , তার সঙ্গে আবার সংসার করতে চাই ,আবার এমনটাও তো নয় যে সে আরিশ কে ছেড়ে চলে যাচ্ছে ইলমাজ এর কাছে, তাহলে পরকীয়া না করলেও ওইটা কি একটা পাপের মতো কাজ নয় কি?

এই কথাগুলো আরু মনে মনে ভাবছে , আর ওর মনের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে একটাই উত্তর আসছে যে ও যেটা করছে সেটা ঠিক না, আরিশ যা করেছে তা তো আরূকে ভালবেসেই করেছে তার পরিবর্তে এমন একটা ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো একেবারেই উচিত নয় , তাহলে আরু কী আর ইলমাজের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না? আল্লাহও হয়তো চায়না যে আরু ইলমাজের সাথে দেখা দেখা করুক তাই জন্যই কি আরু এত চেষ্টার পরেও ইলমাজকে খুঁজে পাইনি ! এগুলো নিছকই কোন কাকতালীয় ঘটনা নয় ,এগুলো হয়তো বিধির বিধান , আর আরু সেই বিধানকে লংঘন করছে এতে মারাত্মক পাপ করার সাথে সাথে আরিশের মনেও কষ্ট দিচ্ছে তার ক্ষমা হয়তো কখনো হবে না ৷

কথাগুলো ভাবছে আরু আর বারবার শিউরে উঠছে ও , ও যা করছে সেটা ঠিক করছে না ৷
আরুর এসব ভাবনার মাঝখানে হঠাৎ অপরিচিত মহিলা কন্ঠে কন্ঠস্বর ভেসে আসলো
‘ আল্লাহ করুক আপনার ভউমা যেন কখনো এমনটা না করে , আপনার সংসারটা যেন আমার মত কখনো ভেসে না যায় আপা, এরকম ঘটনা যে কতটা কষ্ট দেই সেটা আমার ছেলে খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছে ৷’
বলে চোখের জলটা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে নিলেন ৷

আরু ভয়ে আর অনুশোচনায় নিজের সালোয়ার-কামিজের ওড়নাটা চেপে ধরেছে , হাত ,মুখ বারবার ঘেমে যাচ্ছে , সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে, সত্যিই তো সবাই যেখানে আরিশে মেনে নিয়েছে সেখানে কেন ও মেনে নিতে পারছে না ! তাছাড়া এখন যদি ও ইলমাজকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে সেটাতো পরকীয়া, ওউ সমাজের সেই সব খারাপ নারীদের মাঝে একজন ৷
‘ আপা আপনার বউমার সাথে আলাপ করাবেন না ?’
‘ হ্যাঁ নিশ্চয়ই করাবো কেন নই, আমি এখুনি ডাকছি ৷’

কথাটা শুনে আরু পিছন দিকে সরে গিয়ে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকালো, এখন যে অবস্থায় আরু আছে এই অবস্থায় নিজেকে কোনোভাবে নীচ থেকে আরুর উপস্থিতি বুঝতে পারা সম্ভব নয় ৷ আরুর বুকের ভেতর ধক ধক করছে, থরথর করে কাঁপছে হাত পা, যেকোনো মুহূর্তের মধ্যে অনিকা খান ওকে ডাকবে, তার আগেই ওকে নিজেকে শান্ত করতে হবে, নিজের মাঝে উথাল পাথাল টাকা কমাতে হবে ৷
অনিকা খান উচ্চঃস্বরে ডাকলেন
‘ আরু মা একটু নিচে আয় , তোর নিলুফার আন্টি তোর সঙ্গে দেখা করবে ৷’
কথাটা শুনে আরু কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলো
‘ হ্যাঁ আসছি ফুপি ৷’

কথাটা বলার পর কয়েক সেকেন্ড পর আরু সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো, নিলুফার ইয়াসমিনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে আরু আর বারবার তার বলা কথাগুলো ওর চোখে ভেসে উঠছে আর জানান দিচ্ছে যে ও আরিশের সাথে যেমনটা করছে সেটা ঠিক নয় , আরিশকে ও বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ৷
আরু গিয়ে উনার পায়ে সালাম করতেই উনি আরুকে ধরে উনার পাশে বসিয়ে আরুর কপালে চুমু দিয়ে বললেন
‘ আপা আপনার বৌমা মাশাআল্লাহ , অনেক ভালো আর নম্র সভ্য ৷ আরিশ আর আপনার বৌমাকে খুব ভালো মানাবে , তাদের দুজনকে পাশাপাশি না দেখেও বুঝতে পারছি ৷ আল্লাহ নিজের হাতে তৈরি করেছেন ওদের জোড়া এত সুন্দর ভাবে যা দেখলে মন জুড়িয়ে যায় ৷’
অনিকা খান মুচকি হেসে উনাকে বললেন

‘ দোয়া করবেন যেন সারাজীবন সুখে থাকে ৷তোমরা একটু বসো আমি তোমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসি , সকাল বেলা ছেলেটা নাস্তা করে যাইনি, ওকে নিয়ে আর পারা যায় না ৷ আচ্ছা বসো তোমাদের জন্য কিছু নিয়ে আসি ৷’
বলে অনিকা খান কিচেনে চলে গেলেন ৷
নিলুফার ইয়াসমিন আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন
‘ শুনলাম তুমি নাকি অন্তঃসত্ত্বা, তা তোমার কয় মাস চলছে মা ?’
কথাটা শুনে আরু ঘাবড়ে গেল চোখ মুখ শুকিয়ে আসছে ,গলাটা শুকিয়ে কাঠ , শুকনো ঠোঁটটা জিভ দিয়ে খানিকটা ভিজিয়ে নিয়ে একটু থতমত খেয়ে বললো

‘ এই তো আন্টি তিন মাস ৷’
‘ তুমি সাবধানে থেকো মা , এই সময়ে আমার খুব বমি হতো, তোমার ও আ খুব বমি টমি হয় ?’
‘ হ্যাঁ আন্টি ওই মাঝে মাঝে ৷’
‘ এই সময় নিজের একটু যত্ন নেবে, আর নিজের জামাইকে বেশি বেশি করে জালাবে কেমন ! আচ্ছা আরিশ তোমার সব আবদার পূরণ করে তো নাকি?’
আরু কাঁপতে কাঁপতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো যে হ্যাঁ , যদিও বা কখনো আরিসের এতটা কাছাকাছি ওর যাওয়া হয়নি যে আরিশকে ও ওর নিজের মনের কথাটা বলতে পারবে ৷
নিলুফার ইয়াসমিন আরুর সাথে টুকটাক কিছু কথা বলছেন হঠাৎ উনা বলে উঠলেন

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ৭

‘ তোমাকে একটা কথা বলি ?’
_’ হমমম বলুন ৷’
‘ তোমার স্বামী খুব ভালো একজন মানুষ, তুমি খুব ভাগ্যবতী যে আরিশের এর মত একজন স্বামী পেয়েছো, কখনো যেন অন্য কাউকে আবার ভালোবেসোনা, এগুলো খুব গুনাহর কাজ ৷’
কথাটা শুনতেই আরুর সারা শরীর জুড়ে কাপাকাপি শুরু হয়ে গেলো , এক অজানা ভয় কাজ করছে ওর মধ্যে, উনি আরো কিছু বলতে যাবে না হঠাৎ করে আরু মুখ চেপে ওয়াক ওয়াক করতে করতে দৌড়ালো, ওর বমি বমি পাচ্ছে , আরু দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল ৷

বাথরুমে গিয়ে হড়হড় করে বমি করে দিল তারপরে কিছুক্ষণ নিজেকে স্বাভাবিক করে হাত মুখ ধুয়ে বাথরুমের দেওয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে আর নিজেকে কেমন মনে হচ্ছে , দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হঠাৎ ঢুকরে কেঁদে দিলো , তারপর নিজে নিজেই বলতে লাগল
‘ কেন আমার সাথে এমন টা হলো? কি দোষ ছিল আমার? কাউকে ভালোবাসা সেটা কি অপরাধের? না আমি ওনাকে উনাকে মেনে নিতে পারছি আর না আমি ওনার থেকে দূরে সরে যেতে পারছি, অদ্ভুত এক বেড়াজালে আবদ্ধ আমি ৷ দোটানার মধ্যে পড়ে গেছি আমি , এবার কি করবো? আজ ইলমাজ আমার জীবনে নেই , আর না কখনো আমার জীবনে ফিরে আসবে ! আমার জীবনে বর্তমানে যার বসবাস তাকে কি আমি নিজের করে নিব নাকি ফিরিয়ে দেবো তাকে ? কি করবো আমি ?”

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ৯