তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ শেষ পর্ব || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ শেষ পর্ব 
Suraiya Aayat

আজ সানা আর আহানের বিয়ে ,সানার বাড়িতে তুমুল তোড়জোড় , আরু ওর নিজের বাসায় গেছে ,ও বর পক্ষ আর আরিশ কন্যা পক্ষ , আরু আরিশকে বর পক্ষের মধ্যে আনতে চেয়েছিল কিন্তু আরিশ আসেনি যতই হোক ওর একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা ৷

আরু একটা লাল রঙের টুকটুকে শাড়ি পরে সম্পূর্ণ রেডি হয়ে গেছে, পার্লার থেকেই সেজছ এসেছে ওর একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা ৷ মাথায় বেলি ফুলের মালা টা দিতে দিতেই হঠাৎ ফোনে ফোন আসতেই আরু তাড়াতাড়ি গিয়ে ফোনটা ধরল , নিশ্চয়ই আরিশ ফোন করেছে, এতদিনে আরিস এর সঙ্গে সম্পর্কটা ওর অনেক সহজ হয়েছে আগের মত আরু আরিশের সাথে খারাপ ব্যবহার করে না , সব সময় আরিশকে কাছে কাছেই পেতে চাই তবে আরিশ নিজে থেকেই ওর দূরত্বটা বজায় রাখে বলে ব্যাপারটা আরূ মোটেই পছন্দ করে না , আরু মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে যে ও আজকে আরিশকে জানাবে যে ও আরিশকে ঠিক কতটা ভালোবাসে ৷

তাড়াতাড়ি ফোনের কাছে গিয়ে ছুটে দেখলো আরিশ ফোন করেছে , তাড়াতাড়ি কলটা রিসিভ করে বলতে শুরু করল
‘ হঠাৎ আমাকে মনে পড়ল! বউকে বুঝি চোখে হারাচ্ছেন ? ‘
এই কয়েকদিনের মধ্যে আরু আরিসের সাথে বেশ খানিকটা মজার মজার কথা বলেছে তবে আরিশ ত শুনে হাসেনা বা কোন পতিক্রিয় দেইনা দেখঊ আরু খুব বিরক্ত হয় ‌৷ আরু আরেকটু ঘাঁটিয়ে বলল,,,,
‘ কি হলো বলুন খুব মিস করছেন তাইনা?’
বারবার এর মতো আরিশ আরুর কথা উপেক্ষা করে বলে উঠলো

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ তোমরা বাসার থেকে কখন বার হবে আই মিন আহান কখন পৌছাবে এখানে?’
আরু চুলের গেঁথে থাকা বেলিফুল টা হাত দিয়ে খানিকটা ঠিক করে নিয়ে একটু মুচকি হেসে বলল ‘এইতো ভাইয়া আর দশ মিনিটের মধ্যে বার হবে ৷ আর আমিও ৷’
‘ আচ্ছা তাড়াতাড়ি এসো আর সাবধানে এসো সকলকে নিয়ে ৷ তোমার সাথে আজকে আমার একটা কথা আছে ৷’
কথাটা শুনেই আরু খুশির সাথে উৎফুল্লতা নিয়ে বলে উঠল
‘ তা কি বলবেন বলুন বলুন আমিও শুনি ৷’
আরিশ খানিকটা গম্ভীর স্বরে বলল
‘ জানতে পারবে পরে ৷’
‘ আচ্ছা একটা কথা বলবেন?'(আনমনা হয়ে)

‘আচ্ছা সেই দিনের রাতে আমাকে আপনার এতোটা কাছে টেনে নেওয়ার পরও কেন দিনের পর দিন বারবার এভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন আমাকে ৷’
‘হয়তো আমি আর চাইনা যে বারবার আমি তোমাতে আসক্ত হয়,আর তোমাকে কাছে টেনে নেওয়ার মতো অঘটনটা আর দ্বিতীয় বার করি ৷ সেই দিন আমি জানি না কি হয়েছিলো আমার কিন্ত তার জন্য নিজেকে আমি কখনো ক্ষমা করতে পারবো না ৷’
কথটা বলে আরূকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরিশ ফোনটা কেটে দিলো ৷
হঠাৎ করে অপর পাশ থেকে ফোনটা টুক করে কেটে যাওয়ার কারণে আর ওর বুকের ভিতরটা ধ্বক করে উঠলো, আরিশের কথার সাথে সাথে আরু নিজেও আবেগের মধ্যে দিয়ে চলছিলো ৷
তবু নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে আর রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরু
পুরনো সেই দিনটার কথা আরূ ভাবতে গেলেই আরুর ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালো আরশিয়ান ৷
আরু হাত ধরে ডাকতে ডাকতে বলল,,,,,

‘ মাম্মাম ওই দেখো না আইসক্রিম, আমি আইসক্রিম খাবো ৷’
ছেলের কথায় আরুর ঘোয কাটলো , তাড়াতাড়ি করে হাটু গেড়ে আরশিয়ানের দিকে ঝুকে বলল
‘ কি হয়ছে আব্বু, তুমি কি কিছু খাবে?’
‘ মাম্মাম আমি আইসক্রিম খাবো , ওই দেখো সামনে !'(সামনের দিকে লক্ষ করে )
‘ নিশ্চিই খাবে, কেন নই ৷ চলো, আজ তোমার সাথে তোমার মাম্মাম ও আইসক্রিম খাবে ৷’
‘ ইয়ে কি মজা, আমার মাম্মাম ও আজকে আইসক্রিম খাবে !’

আরু ছেলের কপালে ভালোবাসার পরশ একে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো ৷
আরু ছেলের সাথে সামনে এগিয়ে গিয়ে আইসক্রিমের দোকান গেলো ৷
আরু ছোট্ট আশিয়ান কে কোলে তুলে নিয়ে আসিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
‘ আমার ছোট্ট প্রিন্স টা কোন আইসক্রিম খাবে?’
‘ তুমি যা খাবে আমিও তাই খাবে আমিও তাই খাব ৷’
আরু ওর ছেলের দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আবার দোকানদারের দিকে তাকিয়ে বলল
‘ মামা দুটো কোন আইসক্রিম দেন তো ৷’
‘ আচ্ছা আপা ৷’

বলে দোকানদারকে দুটো কোন আইসক্রিম দিল আরুর হাতে ৷ আইসক্রিম নিয়ে একটা ছেলের হাতে আর একটা নিজে নিল ৷
আর্শিয়ান আরুকে নামানোর জন্য ইশারা করতেই আরু নামিয়ে দিল আরশিয়ানকে ৷
দোকানদারকে টাকা দিয়ে আরু পাশের দিকে তাকিয়ে যখন ওর ছেলেকে ওর পাশে দেখলনা তখন মুহুর্তের মধ্যে আরুর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো, এদিক ওদিক তাকাতেই আরশিয়ানকে দেখতে পেলো ৷ আরশিয়ান ওর সামনের দিকে থাকা একটা মেয়ের দিকে ছুটে যাচ্ছে ৷

ছোট্ট চার বছর বয়সী আরশিয়ান গিয়ে সেই মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে খানিকটা পর মেয়েটার গালদুটো আলতো করে টেনে দিয়ে বলল
‘ তুই জানিস তোকে আমি কত মিস করেছিলাম ! একদিন দেখা হয়নি মনে হচ্ছে তোকে কতো দিন দেখা হয়নি ৷’
মেয়েটা আরশিয়ানের কথা শুনে মুখে হাত দিয়ে চেপে রেখে খিলখিল করে হাসছে , আর আরশিয়ান তা দেখে মেয়েটাকে ধমক দিচ্ছে ৷
ছেলেরা এমন কান্ড দেখে আরু এতোটুকুও অবাক হলো না, ছেলেটা একদম তার বাবার মতো হয়েছে ৷এতো অল্প বয়সে ছেলেটা মধ্যে কতটা আবেগ কাজ করে তা আরশিয়ানকে দেখলে বোঝা যায় ৷

হঠাৎ আচমকাই কাঁধে কারোর স্পর্শ পেতেই আরু চমকে উঠলো , স্পর্শটা অনুভব করতেই মনের ভিতর হাজারো কল্পনার উদয় হলো, স্পর্শটার সাথে একবার হলেও পরিচিত হয়েছে আরু , খুব ই চেনা ৷ ঝট করে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে মানুষটাকে দেখতেই আরু কয়েকপা পিছনে সরে গেল ৷ আজ দীর্ঘ পাঁচ বছর পর মানুষটার সাথে ওর দেখা ৷
মোটা ফ্রেমের চশমা টা দিয়ে আরুর নজর সামনে থাকা মানুষটার দিকে স্থির , সামনে থাকা মানুষটা হয়তো তার প্রতি অনেকটা অবেগি চোখে তাকিয়ে আছে ৷
সামনে থাকা মানুষটা খানিকটা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
‘ কেমন আছো আরু?’

লোকটার কথার পরিবর্তে আরু কিছু বলল না ,আরু বেশ অনেকক্ষণ ধরে চুপ করে থাকল আর ওর এই প্রবল নিস্তব্ধতা দেখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি অনুতপ্ত সুরে বলে উঠলো
‘ জানি তুমি হয়তো এখনো আমাকে মন থেকে ক্ষমা করতে পারোনি , আর এটাই স্বাভাবিক ৷ সেদিন যদি আমি সঠিক সময়ে,,,,’
কথাটা বলতেই আরু ইলমাসকে থামিয়ে দিয়ে বলল ‘সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলাটা সৎসাহস টা যখন আপনার নেই তখন অযথা এখন আমাকে আর কোন কাহিনী শুনিয়ে লাভ নেই রায়হান ইলমাজ ৷’

ইলমাজ আরুর কথার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলছে না , আরূকে ও আজ থামাতে চাইছেনা, আজ আরুকে ও বলতে দেবে, প্রাণখুলে জানাতে দেবে আরুর মনের অভিযোগ ইলমাজের প্রতি, হয়তো এটা শুনে আজ ইলমাজ অনুতপ্ত হবে যেমনটা এতদিন আরিশ তার নিজের কাজকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে এসেছিল ৷
আরু এবার খানিকটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল

‘ আমার সবথেকে বড় কি ভুল কি জানেন? উনাকে চলে যেতে দেখে আমি সেদিন থেমে গিয়েছিলাম, উনার হাতটা ধরে আটকাতে পারিনি , আপনার কাছ থেকে সবটা শুনবো আর সেখানের এই ত্রিকোন প্রেমের সমাপ্তি ঘটাবো ব’লেই সেদিন ওখানে একরোখা হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম , যদি জানতাম যে আজ যদি মানুষটার হাত ধরে তাকে থামিয়ে না দিই তাহলে সে যে এত দূরে চলে যাবে তাহলে আপনার কথার অপেক্ষা তো দূরে থাক আপনার সামনে দাড়াতাম না এক মূহুর্তের জন্যও ৷’
‘ খুব ঘৃণা হয় তাই না?’

‘ ঘৃণা শব্দটাও আপনার জন্য খুবই কম ইলমাজ, আপনি কি পারতেন না ওনাকে আগে থেকে সবটা জানিয়ে দিতে যে আপনি বিবাহিত আপনার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল মৃন্ময়ীর সাথে, সে আপনার অর্ধাঙ্গিনী ৷কেন আপনি সেদিন সবটা জেনেও কেন আরিসের থেকে সবটা লুকিয়ে গিয়েছিলেন ইলমাজ বলুন ! আপনি যদি ওনাকে আগে থেকে সবটা জানিয়ে দিতেন তাহলে না আজকে উনি আমাকে ছেড়ে কোন অচেনা পথে হাঁটা দিতে আর না আপনি আজ নিজের এই কাজের জন্য অনুতপ্ত হতেন ৷ আপনার প্রতি ওনার এই ব্যাভিচারের জন্য অনুতপ্ত হয়ে সেদিন আমাকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তবে আজ তো আপনি আপনার কাজের জন্য অনুতপ্ত তাহলে আপনি অনুতপ্ততা থেকে নিজেকে বাঁচাতে আজ আপনি কি পারবেন আমার জীবনে ওনাকে ফিরিয়ে এনে দিতে ! পারবেন বলুন ? পারবেন না তাইতো ! জানি তো আমি পারবেন না , কারন যে নিজে থেকে হারিয়ে যাই সেকখনো ফিরে আসে না ৷’

ইলমা আজ বাকরুদ্ধ ৷ আরুকে আজ দাউদাউ করে জ্বলে উঠতে দেখে ইহমাজের বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে ৷
আরু খানিকটা তাচ্ছিল্যমাখা হাসি হাসতে লাগলো, ‘ ‘আসলে জানেন কি সবার মধ্যে সেই ক্ষমতাটুকু থাকেনা নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার , ওনার মাঝে সেই ক্ষমতাটুকু ছিল তাই উনি নিজের কে নিজের ভালবাসার সবথেকে প্রিয় মানুষটাকে অন্যের হাতে তুলে দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি, অবশ্য উনিও হয়তো জানতেন না যে আমি ওনাকে ঠিক কতটা ভালবাসতাম , যদি জানতেন তাহলে হয়তো কখনো আমাকে একা ফেলে চলে যেতেন না সেদিন, পারতেন না আমাকে একা একলা পথে ছেড়ে দিতে ৷’

খানিকটা থেমে ইলমাজ বলে উঠলো,
‘ সেদিন আমি তোমাদের দু’জনকেই সবটা বলতে চেয়েছিলাম একসাথে কিন্তু আরিশ কিছু না শুনেই তো চলে গেল সেদিন
ইলমাজকে আরু থামিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,,
‘ আর সেদিন আপনি বিজয়ী হয়েছেন ইলমাজ ৷’
‘তুমি আবার আমাকে ভুল বুঝছো ৷’
‘আমি কিছু ভুল বুজছি না, আপনি আমার ভুলটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন , আর আপনি যা করেছেন তার ক্ষমা আমি আপনাকে কখনো করবো না ৷’
বলে আরু ঘৃনা ভরা দৃষ্টি ইলমাজের ওপর নিক্ষেপ করে আরশিয়ানের কাছে গিয়ে আরশিয়ানের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসলো, আলাদা হয়ে গেল মেহুল এর হাত আরশিয়ানের হাত থেকে ৷
‘ আরশিয়ান কাদোকাদো কন্ঠে বলল
‘মাম্মাম আমি মেহুলকে ছেড়ে যাবো না ৷’
ইলমাজ ছোট্ট ছেলের কাতোরউক্তি দেখছে কেবল, তার ছোট্ট মেয়েটাও ফুঁপিয়ে কাদছে ৷ এই ছোট মনেও বিচ্ছেদের ব্যাথাটা খুবই গুরূতর ৷

আরু চলে যাচ্ছে আর ইলমাজ আর ওর মেয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে, ছোট্ট আরশিয়ান পিছন ঘুরে মেহুলের দিকে তাকিয়ে কাদছে আর দূর থেকে আরুর কন্ঠে ধ্বনিত একটা বাক্যই ইলমাজের কানে আসছে
‘ ভালোবাসা নামক এই মিথ্যা খেলাঘরে নিজের মেয়েটাকে টেনে আনবেন না, অন্যথায় আরো দুটো জীবন নষ্ট হবে, ভালোবাসা একটা মিথ্যা নাটক যেই নাটকে একদিন আমিও শামিল হয়ে নিজের প্রিয় মানুষটাকে হারিয়েছিলাম ৷ ভালোবাসা নামক বস্তুটা বড়োই মিথ্যা ৷’

আরু চলে যাচ্ছে আরশিয়ান কে নিয়ে আর ওর কান্নামিশ্রিত আওয়াজ ভেসে আসছে ইলমাজের কানে ৷ ইলমাজের চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো, আজ ওদের জীবনের ত্রিকোন প্রেমের সম্পর্ক আঘাত করলো শিশু দুটো মনকে ৷
বাইরে শনশন করে হাওয়া বইছে ,আজ ফাল্গুনের শেষের দিন, আজকে বড্ড বেশি মনে পড়ছে পুরনো সব,কথা ৷
আরিশের সেই ছোট ছোট দুষ্টুমি ভরা কথাবাত্রা , আরশির খুনসুটি, আরিশের সেই বেশি বেশি রাগ অভিমান , আরুর উপরে নিজের অধিকার খাটানো সবকিছুই যেন একটা ডায়েরির খোলা পাতার মতো লাগছে আরুর কাছে, যেটাকে যেন আরু স্পষ্ট ভাবে পড়তে পারছে আর অনুভব করতে পারছে,আথ আরিশের উপস্থিতি ও নিজের সাথে অনুভব করতে পারছে ৷ আরিশ আজ ওর সাথে না থাকলে আরিসের স্মৃতি চিহ্ন বহন করে বেড়াচ্ছে আরু , আরশিয়ান হলো আরিশের জ্বলন্ত স্মৃতিচিহ্ন ৷ আজও আরুর মনে পড়ে সেদিনের কথা যেদিন আরুর কথায় সম্মতি দিয়ে আরিশ নিজেকে আটকে রাখতে পারে নি, বড্ড বেশি আবেগী হয়ে নিজের ভালোবাসাটাকে সপে দিয়েছিল আরুর কাছে , আর তার এই মধুর ফল হল আরশিয়ান ৷ আরু ওর বাকী জীবনটুকু আরশিয়ানকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই ৷ যদিও জানে না যে আরিশ আর কখনো ফিরে আসবে কি, তবুও মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা আরিশের সেই সুপ্ত ভালোবাসা মাঝে মঝে জানান দেই যে আরিশ ফিরবে তবে কবে?

ব্যালকনিতে আরিশ সিগারেটের ধোঁয়া গুলো উড়িয়ে দিচ্ছে , আরু গায়ে চাদর টেনে শুয়ে আছে চুপচাপ ,নিজের মনকে যেন এখনও বুঝে ওঠা বড্ড বেশি ক্লান্তিকর বলে মনে হচ্ছে আরুর ৷ আরিশ এখনো ঘরে ঢুকলো না , বেশ খানিকক্ষণ পর বিছানা ছেড়ে উঠলো আরু, মানুষটা একের পর একটা সিগারেট টেনেই চলেছে সেটার আর থামার নাম নেই দেখে আরু আর সহ্য করতে পারলো না দ্রুতপায়ে ব্যালকনিতে গিয়ে আরুর হাত থেকে সিগারেট টেনে বাইরে ফেলে দিয়ে আরিশের জামার কলার টা শক্ত করে চেপে ধরে বলল

‘ কিসের এত তৃপ্তি দেই এই সিগারেট যেটা আপনি আমার মাঝে খুঁজে পান না, আমি কি পারিনা আপনার সমস্ত ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা কে মিটাতে? আপনি না নিজেই চেয়েছিলেন আমাকে নিজের করে পাওয়ার তাহলে কেন এত দূরে সরে যাচ্ছেন আমার থেকে ? আমাকে ভয় পেয়ে যে আমি কি ভাববো?নিজের অধিকারটা নিজে খাটিয়ে রাখতে দিতে জানেন না? নিজেকে আমার থেকে আসক্ত হওয়ার থেকে আটকাচ্ছেন কেন? আরুপাখি নামক এই জ্বলন্ত নেশা টা কি খুবই বেশি আসক্তিকর যে আপনি একবার এই নেশায় নিজেকে আসক্ত করলে আর নিজেকে ফেরাতে পারবেন না ! তেমনি যদি হয় তাহলে আসক্ত করুণ না নিজেকে আরুপাখি নামক নেশায় !

আরিশ আরুর দিকে অবাক আর মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে ,মেয়েটা অনেক আবেগ নিয়ে কথা বলছে তা হয়তো আরু নিজেও জানেনা ৷ তবে মেয়েটা নিজেকে যখ আরিশের কাছে সঁপে দিতে চাইছে তখন কিসের এতো নিষেধজ্ঞা?
বাইরের শীতল হাওয়াটা আরিশের শরীরের সাথে ওর মনটাকেও ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে ,উথাল পাথাল করে দিচ্ছে সমস্তটাকে ৷ নিজেকে আর কোন ভাবেই আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না , নিজের মনের সাথে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে আরিশ আচমকায় আরুকে কোলে তুলে নিল , আরুও শক্ত করে আরিশের কলারটা চেপে ধরেছে , যদিও এটা খুবই বিশ্বাসযোগ্য একটা হাত যা ধরলে কখনো ছাড়বে না ৷

‘ আজ নিজেকে তোমাতেই আসক্ত করবো আরুপাখি, এই দূরত্ব যে আর সয়না ৷'( নেশা ভরা কন্ঠে আরিশ বলে উঠলো )
আরিশের কথার পরিবর্তে আরু কিছু বলল না, চুপচাপ আরিশের বুকে নিজের মাথাটার স্থান দিয়েছিল সেদিন ৷ আরু সেদিন আরিশকে বলতে পারেনি যে ও আরিশকে ঠিক কতটা ভালোবাসে, সেদিন যদি বলতে পারত তাহলে হয়তো মানুষটার আজ কাঁধে মাথা রেখে আজ নিশ্চিন্তে চোখটা বন্ধ করে ফাল্গুনের এই বাতাসটাকে উপভোগ করতে পারতো ৷

কথাগুলো ভেবে আরু বেলকনি থেকে উঠে গেল, বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা হাওয়া বইছে , রুমের ভিতর ছোট্ট আসিয়ান ঘুমিয়ে আছে, আরশিয়ানের দিকে তাকাতেই আরিশেরমমুখটা আরুর চোখের সামনে যেন ভেসে উঠলো ৷ কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটার চোখমুখ শুকিয়ে গেছে, যখন জেনেছিলো যে মেহুলের সাথে ও যেন আর কখনো কথা না বলে তখন অঝোযে কেদেছিল আরশিয়ান, মেহুল যে ওর বেস্টফ্রেন্ড, মেহুলই যে একমাত্র ওর খেলার সাথী তা কি ওর মা জানে না !

তৃপ্তি ভরা দৃষ্টিতে আরশিয়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে আরু ধীরপায়ে আরশিয়ানের কাছে এগিয়ে গিয়ে আরশিয়ানের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিল, তারপর আর সেখান থেকে সরে এসে ড্রয়ার থেকে ডায়েরীটা বের করে আবার বেলকুনিতে গিয়ে বসলো ৷ ডায়েরীটা ও পেয়েছিলো আরিসের নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পর ৷ টানা এক সপ্তাহ আরিশকে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও যখন খুজে না পেলে আরিশকে তখন আরু হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে সব জায়গায় আরিশের পাসপোর্ট খুজছিলো এটা জানার জন্য যে আরিশ বাইরে কোথাও চলে গেছে কি তা জানার জন্য, তখন হাতড়াতে হাতড়াতে আরিশের এই ডাইরিটা আরু সেদিন পেয়েছিলো ৷ ডাইরির পাতাগুলো উল্টাতে উল্টাতে শেষের পাতাটাই এসে আরু আর সেদিন নিজের চোখের জলটাকে ধরে রাখতে পারেনি , ডাইরিটা বুকে জড়িয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে ছিলো কেবল ৷

বরপক্ষ অনেকক্ষণ আগেই আরিসের বাড়িতে চলে এসেছে, সারা বিয়ে বাড়িতে হইহল্লা , সকলে আনন্দে ব্যস্ত কেউ বা বিয়ে দেখায় ব্যস্ত , সকল ব্যস্ততার মাঝখানে হঠাৎ আরুর ফোনে ফোন আসতেই আরু ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল আরিশ ফোন করেছে , এতক্ষণ এবাড়িতে এলো এখনো আরিসেল সঙ্গে ওর দেখা হয় নি, মানুষটার সাথে দেখা করার জন্য মনটা আনচান করছে আর তার থেকেও বেশি উত্তেজনা কাজ করছে মানুষটাকে নিজের ভালোবাসার কথাটা জানাবে বলে ৷
আরু উত্তেজিত হয়ে বললো

‘ কোথায় আপনি ? আপনাকে তো একবারও দেখলাম না ৷’
আরিস একটু নরম সুরেই বলল
‘ রাস্তায় তোমার জন্য অপেক্ষা করছি রাস্তায় এসো ৷’
আরু একটু অবাক হয়ে বলল
‘ আপনি ভরা বিয়ে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় কি করছেন?’
‘ বলেছিলাম না তোমাকে একটা কথা বলবো , আর তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার আছে ৷’
আরু খুশি হয়ে বলল
‘ আপনি সত্তিই সারপ্রাইজ দেবেন ?আচ্ছা আমি এক্ষুনি আসছি আপনি জাস্ট দু মিনিট ওয়েট করুন ৷’
আরিসের কলটা ধরে রেখে আরু দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তার সামনে এলো , রাস্তায় এসে আরিশকে কোথায় দেখলোনা , আর তা দেখে ফোনটা কানে নিয়ে বলল ‘কোথায় আপনি আপনাকে তো কোথাও দেখছি না!’
‘ তোমার ডান দিকে তাকাও ৷’

আরুশি ডান দিকে তাকিয়ে দেখলো আরিস কানে ফোন ধরে দাঁড়িয়ে আছে, পিছন থেকে এক রাশ আলো আরিসের শরীরের ওপর পড়ে আরিশের সৌন্দর্যটা যেধ দ্বিগুণ করে দিয়েছে ৷
আরিশ কে দেখে আরু খানিকটা দৌড়ে ছুটে গেল ৷ আরিশ আর ওর মাঝে এক হাতের মধ্যে দূরত্ব ৷ আরুর হৃদসপন্দন দ্রুত হচ্ছে , বুকের ধুকপুকানি গুলোও ক্রমশ বেড়েই চলেছে ৷
আরিশ নরম সুরে বলল

‘ সারপ্রাইজ এর জন্য তুমি খুবই উত্তেজিত তোমাকে দেখে বুঝতে তা পারছি, তবে আর বেশিক্ষণ ওয়েট করবো না তোমাকে ৷’
আরু এক গাল হেসে বলল তা
‘ তো জানাব কোথায় আমার সারপ্রাইজ?’
আরিশ মুচকি হেসে বলল
‘ সত্যি বলতে কি জানো এই আমি নামক মানুষটাই তোমার জীবন একটা বড়ো সারপ্রাইজ ৷ কখনো বা তোমার জীবন থেকে তোমার সব থেকে কাছের মানুষকে কেড়ে নিই আবার কখনো বা তাকে তোমার জীবনে ফিরিয়ে দেবার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায় ৷ বড়ই অদ্ভুত তাইনা!’

আরিশের কথার ঘোরপ্যাঁচ আরু কিছুই বুঝতে পারলো না , আমতা আমতা করে বলল
‘ আপনি কি বলতে চাইছেন ঠিক বুঝলাম না !’
‘ খুব ভালোবাসো ইলমাজকে তাইনা! খুব করে চাও তাকে তাই না !’
আরিশের মুখ থেকে এমন কথা শুনে আরুর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো, সারা শরীর জুড়ে কাঁপুনি হচ্ছে , আরিশের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস পায়নি আরু ৷

আরু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
‘ আপনি এসব কি বলছেন?’
আরিশ মুচকি হেসে বলল
‘ ভালোবাসার কথা শুনলে সকলেই এমনটা ঘাবড়ে যাই আমি জানি, সে তুমিই বলো আর আমিই বলি আর যেই বলুক না কেনো ৷ তুমি খুব বেশী করে চাও ইলমাজকে নিজের জীবনে ফিরে পেতে , তাই হয়তো আজ আমি তোমার জীবন থেকে সরে যাচ্ছি আর তোমার কাঙ্খিত মানুষটাকে তোমার জীবনে ফিরিয়ে দিচ্ছি ৷

আমি জানি আমি হয়তো তোমাকে ভালবাসতে পারিনি সেজন্যই হয়তো তুমি আমাকে ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে পারোনি , আমি জানি আমি ব্যর্থ প্রেমিক , আর ব্যর্থ প্রেমিকরাই বারবার সফলতা অর্জন করার জন্যই ছিনিয়ে নিতে বা কেড়ে নিতে কখনও দ্বিধাবোধ করে না যেমনটা আমিও করিনি কিন্তু বিশ্বাস করো যখন জানলাম যে তুমি এখনো ইলমাসকে চাও তখন নিজের মনের কাছে নিজেই হেরে গিয়েছিলাম , বারবার মনে হয়েছিল যে জোর করে কখনো কোনো কিছু অর্জন করা যাই না,সবকিছু পেয়েও তার সুখটা অনুভব করা যায় না আর সেই কারণেই হয়তো তুমি আজও আমাকে ভালোবাসতে পারোনি ৷

তুমি আমাকে ভালবাসনি তাতে আমার কোন অভিযোগ নেই তবে আমার নিজের প্রতি নিজের অভিযোগ থেকেই যাবে যে আমার ভালোবাসাটা আমি তোমাকে বোঝাতে পারিনি সে দিক থেকে আমি ব্যর্থ ৷ আর বেশি কিছু বলে তোমাকে আমার এই মিথ্যা আবেগে জড়াবো না , ভালো থেকো আর নিজের জীবনে কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে ভালোবেসে তাকে ভালো রেখো ৷’
আরিসের কথায় আরু বাকরুদ্ধ , মানুষটা অনর্গল যা বলে গেল তা ওর কল্পনাতীত , এই মুহূর্তে অন্তত এমন কিছু আশা করেনি আরু , আর মানুষটা কেন বারবার বলছে যে সেই আরুকে ইলমাজের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে ? কই আরু তো একবারও তাকে বলেনি যে ও ইলমাজের কাছে ফিরে যেতে চাই, আর আরু নিজেও তো চায়না ইলমাজের কাছে ফিরে যেতে তাহলে মানুষটা নিজে কেন ফিরিয়ে দিতে চাইছে আজ ইলমাজের কাছে ?

আরু আরিশকে কিছু বলতে যাবে তখনই আরুশির চোখদুটি আরিশের চোখদুটির দিকে তাকিয়ে থেমে গেল, কোনও কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না ,চোখ দুটিতে আজ ব্যর্থতার ছাপ ৷
‘ ভালো থেকো আরুপাখি , আর আমার সুপ্ত ভালোবাসা তোমার জন্য ৷’
কথাটা বলে আরিস একপা একপা করে ক্রমশ এগোতে এগোতে ছায়ার মাঝে মিলিয়ে গেল কোন এক অদৃশ্য পথে যেখান থেকে হয়তো আর সম্ভব হয়নি আরুর আরিশকে ফিরে পাওয়ার…..
আরোশী আরিশের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল যতক্ষন আরিসের ছায়ামূর্তিটা মিলিয়ে যায় , হঠাৎ কারোর উপস্থিতি অনুভব করে আরু সামনের দিকে তাকিয়ে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল ৷ হুইলচেয়ারে বসে আছে মানুষটা, তার গায়ে একটা শাল জড়ানো , চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা , আজকের ইলমাজের সাথে পুরনো দিনের সেই প্রেমিক ইলমাজের এর কোন মিল নেই আরুর চোখে ৷

আরু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
‘ আপনি!’
‘ হে আমি রায়হান ইলমাজ , তোমার সে ব্যর্থ প্রেমিক যে তোমাকে ভালবাসলেও ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে পারেনি , হ্যাঁ আমিই সেই ব্যর্থ প্রেমিক যে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়েও দিনের পর দিন গুনেছি তোমার অপেক্ষায় , একটিবার হয়তো তুমি আসবে আমার কাছে, কোথাও না কোথাও মনের একটা ক্ষীন আশা ছিল ৷ দিনের-পর-দিন বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে তোমার জন্য দিন গুনে ছিলাম , তোমার অপেক্ষায় নিজেকে মগ্ন করেছিলাম, হ্যাঁ আমি সেই ব্যর্থ প্রেমিক যে তোমাকে না পাওয়ার ব্যাথাটা গুরুতর ছিল তাই ব্যাথাটা কে মুছে ফেলার জন্য হয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেছে ৷’

ইলমাজের কথার ঘোরপ্যাঁচ আরূর কাছে যেন জলের মত পরিস্কার , বুঝতে পারছে যে ইলমাজ ঠিক কি বোঝাতে চাইছে ৷ মৃন্ময়ী সাথে আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় এক বছর হতে চলল, মৃন্ময়ী প্রথমদিকে দেখাশোনা করত ইলমাজের তারপর ধীরে ধীরে মৃন্ময়ী সংস্পর্শে অনেকটাই মানসিক দিক থেকে সুস্থতা লাভ করে ইলমাজ ৷ মৃন্ময়ী ইলমাজকে ভালবাসতো কিন্তু কখনো তা প্রকাশ করেনি, হঠাৎই ইলমাজ একদিন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ায়সে আর ইলমাজকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি ৷
আরুর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে, কাঁপা কাঁপা গলায় বললো

‘ কেন ফিরে এলেন আবার?কেন কেড়ে নিলেন ওনাকে আমার কাছ থেকে?
আপনি বিবাহিত এটা কেন আপনি উনাকে বলেননি? উনি যদি এ কথাটা জানত তাহলে উনি আজকে আমাকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য মানুষের কাছে সঁপে দিত না ৷ কেন বলেননি আপনি বলুন ! কেন ?কেন? কেন ?’

কথাটা বলে আরু রাস্তায় বসে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো , চোখ থেকে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে, মানুষটা ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে তার থেকে আর তাকে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা হয়তো আরুর ধরাছোঁয়ার বাইরে ৷
পুরনো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে আসছে, চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া অঝোর ধারার নোনাজলগুলো আরু মুছে নিয়ে ডাইরির শেষ পাতা টা খুললো, যেখানে আরিশ এর তীব্র বেদনা ফুটে উঠেছে ৷

‘ মাঝে মাঝে কিছু চাওয়া পাওয়ার গুরুত্ব খানিকটা হলেও কমিয়ে দিতে হয়
না হলে চাওয়া পাওয়া গুলোর মূল্য খানিকটা কমে যায় ৷
নিজের চাওয়া পাওয়া গুলো কে যদি আমি বিস্তৃর্ণ খোলা প্রান্তের মাঝে দুবাহু দিয়ে প্রসারিত করতে চাই তবে প্রিয় সেটা আমার ব্যর্থতা !
শুধুই কি এটা ব্যর্থতা !

কেন এই ব্যর্থতা এই প্রশ্নটা কি তুমি আমাকে করো ?
তবে কেন এ ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক যেখানে প্রেয়সির ঠোঁটের এক চিলতে হাসি খানিকটা মুগ্ধ নয়নে দেখার জন্য আমার এই নিজেকে দমিয়ে রাখার সত্তা ৷
তুমি কি কখনো জানতে চেয়েছ যে এই ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক কতটা বেদনাদায়ক কতটা কষ্টকর ! যেখানে আছে প্রতিটা মুহুর্তে তোমাকে আসক্ত না হওয়ার বেদনা ৷

তুমি কি কখনো জানতে চেয়েছ যে আমি তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি, আর কেন আমার এই দূরে থাকা ! জানি তুমি জানতে চাও নি তাই নিজেই এই শতবর্ষের অসমাপ্ত দিগন্ত প্রান্তের ন্যায় ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছি হয়তো সেখান থেকে তোমাকে আর আলতো স্পর্শে কাঁপা কাঁপা আঙ্গুলদ্বয় দিয়ে ছুঁয়ে বলা হবে না যে’ ভালোবাসি ‘ ৷
তোমার দেওয়া ত্রিকোণ প্রেমের কষ্টকে ভালোবাসা হিসাবে গ্রহণ করেছি, হয়তো যেদিন তুমি তা বুঝবে সেদিন হয়তো আমি হারিয়ে যাব দূরের কোনো না ফেরার দেশে , থেকে যাবে আমার এই সুপ্ত অনুভূতি আমার ডায়েরির পাতায় একটা অসমাপ্ত লিখন হয়ে যে লিখুন হয়তো তোমাকে উদ্দেশ্য করে লিখলেও তুমি অব্দি পৌছাবে না ৷
ইতি,,,,
তোমার এই ব্যর্থ প্রেমিক নামক মিঃঅভদ্র

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ১২

__”ভালোবাসি প্রিয় ! তোমার এ মায়ায় না জড়ালেও পারতে !”
ডাইরিটা আরু শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো, এটাই আরশের লেখা শেষ স্মৃতি ৷ চোখটা বন্ধ করে আরু ফুপিয়ে কাঁদতেই আরুর গায়ে কোন কিছুর হালকা স্পর্শ পেয়ে আরু তৎক্ষণাৎ চোখের জলটা মুছে নিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো আরশিয়ান দাঁড়িয়ে আছে , আরশিয়ান আরুর গায়ে চাদরটা দিয়ে আরুর কোলে মাথা রেখে বলল

‘ ও মাম্মাম তুমি আর কেদোনা, তুমি কাঁদলে যে আমার খুব কষ্ট হয় ! তুমি দেখো একদিন নিশ্চয়ই আমার পাপা ফিরে আসবে সেদিন আমাদের আর আমাদের কোনো দুঃখ কষ্ট থাকবে না, আর তোমার চোখ দিয়েও জল গড়াবে না ,আমাকেও স্কুলে কেউ বলবে না যে আমার পাপা নেই, পাপা আমাদেরকে অনেক ভালোবাসে, আমিও পাপাকে অনেক ভালোবাসি তাহলে পাপা কেন ফিরে আসে না?’
‘হয়তো আমাতে আসক্ত হওয়ার ভয়ে !’
#তোমার_নেশায়_আসক্ত শব্দটা যে বড্ড ভয়ংকর !

(লেখাঃ সুরাইয়া আয়াত) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন