তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১০

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১০
জাবিন মাছুরা

ভাইয়া আমার দিকে ঢুলতে ঢুলতে এগিয়ে আসতে লাগলেন।বাচ্চাদের মতো ঠোঁট-ওল্টে যা বলে উঠলেন,
-বউ, তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিস না।(ত্বকি)
ভাইয়ার মুখে বউ শব্দটা শুনে আমার সারা শরীর শিউরে উঠলো।হাত পা অবস হয়ে আসতে লাগলো।আমি যেন আমার কানকে বিশ্বাস করাতে পারছি না।ভাইয়ার মাথা কি ঠিক আছে।

ভাইয়া আমার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগলেন।আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।মাথা কাজ কাজ করা একদম বন্ধ করে দিয়েছে।ভাইয়া তার ভেজা শরীর নিয়ে আমার কাছে এসে পড়ল।হঠাৎ করে আমার হাত ধরে নরম কন্ঠে বলে উঠলো,
-বউ, তুই কি আমাকে কখনো আমাকে বুঝবি না? (ত্বকি)
ভাইয়ার ছোঁয়া পেয়ে আমার সারা শরীরের লোমগুলি খাড়া হয়ে উঠেলো।কারন ভাইয়ার হাত অতিরিক্ত গমর।আমার বুঝতে বাকি রইল না যে ভাইয়া জ্বর এসেছে।ভাইয়া আবার ঠোঁট-ওল্টে বলে উঠলেন,
-বউ, তুই আমাকে একটুও বুঝিস না।আমাকে শুরু কষ্ট দিস।আমাকে কষ্ট দিতে কি তোর ভালো লাগে?(ত্বকি)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভাইয়া কি বলছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।আমি কি সত্যিই তাকে কষ্ট দেই।
ভাইয়া কোন কথাই আমার মাথায় ঢুকছে না।তার অবস্থা দেখে আমার কান্না পাচ্ছে।বৃষ্টিতে ভেজার জন্য ভাইয়ার চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে রয়েছে।তার ঠোঁট দুটো শুকিয়ে গিয়েছে।আমি মাথা নিচু করে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম।ভালো করে খেয়াল করতে মনে হলো, ভাইয়া ভেজা কাপড়ে থাকলে তো তার জ্বর কমবে না।

তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ভাইয়া কাপড় চেন্জ করতে বলব।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ভাইয়কে বললাম,
-ভাইয়া, প্লিজ জামা-কাপড় চেন্জ করুন।(মেঘা)
ভাইয়া আমার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে উঠলো।চোখ দুটো ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-চেন্জ করতে পারব না।(ত্বকি)
ভাইয়ার কথা শুনে আমি কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠলাম,
-প্লিজ ভাইয়া।আমি তো আপনার কাছে কোনদিন কিছু চাই নি।(মেঘা)
ভাইয়া আমার কথা শুনে আমার থেকে দূরে সরে দাঁড়াল।গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

-ওকে করব।কিন্তু একটা শর্ত আছে।(ত্বকি)
ভাইয়ার শর্তের কথা না শুনে আমি রাজি হয়ে গেলাম। আস্তে করে বলে উঠলাম,
-আপনার সব শর্তে আমি রাজি আছি।(মেঘা)
-সত্যি বলছিস তো?(ত্বকি)
-হুম।(মেঘা)
ভাইয়াকে কিছু বলতে না দিয়ে আমি ভাইয়ার জন্য এক সেট কাপড় বের করে দিলাম।মাঝে মাঝে ভাইয়া আমাদের বাসায় থাকতেন তাই আগে থেকেই তার কাপড় ছিল।
ভাইয়া হাতে কাপড় দিলাম।সে কাপড় নিয়ে ঢুলতে ঢুলতে বাতরুমে ঢুকে পড়লেন।বোধহয় তার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।

ভাইয়া বাতরুমে যাওয়া পরে আমি বিছানা গুছিয়ে ছোফায় গিয়ে বসলাম।হঠাৎ ভাইয়ার ফোন বেজে উঠলো।সে এখনো চেন্জ করে বের হয় নি।তাই বাধ্য হয়েও কল রিসিভ করলাম।
ফোন রিসিভ করতেই আম্মুর কন্ঠ পেলাম।আম্মু অস্থির হয়ে বলতে লাগলেন,
-বাবা, তুই কোথায়?ফোন ধরছিস না কেন?(ত্বকির মা)
আমি আম্মুর কথার জবাবে বলে উঠলাম,
-আম্মু, ভাইয়া আমাদের বাসায়।(মেঘা)

মেঘার কথা শুনে ত্বকির মার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।তিনি নিশ্চিত হলেন।মনে মনে অনেক খুশি হলো।হেসে দিয়ে মেঘাকে বলে উঠলো,
-ত্বকি তোর কাছে গিয়েছে?(ত্বকির মা)
-হুম, আম্মু।(মেঘা)
-কখন গিয়েছে?(ত্বকির মা)
-এই মাএ।(মেঘা)
ত্বকি মা অনুরোধ করে মেঘাকে বলে উঠলেন,
-মেঘা, শোন ত্বকি মনে হয় কিছু খায় নি।ওকে কিছু খাইয়ে দিস।আর রাতে তোর কাছে রেখে দিবি।বের হতে দিবি না।ঠিক আছে।(ত্বকির মা)

আম্মুর কথা শুনে আমি বুঝতে পারলাম সে অনেক চিন্তিত। তাই ভাইয়ার জ্বরের কথা আম্মুকে জানালাম না।
-ঠিক আছে আম্মু।তুমি চিন্তা করো না।আমি ভাইয়ার খেয়াল রাখব।(মেঘা)
-আমার সোনা মা।আচ্ছা মা রাখি, তুই ত্বকিকে খেতে দে।(ত্বকির মা)
-হুম, বাই ভালো থেকো।(মেঘা)
আম্মুর সাথে কথা বলা শেষ করে রান্না ঘরে চলে এলাম।বিকেলে আম্মুর অনেক মাথা ব্যাথা করছে তাই আর তাকে বললাম না যে ভাইয়া এসেছে।
ভাইয়ার কথা ভাইয়ার জন্য খাবার গরম করলাম। তারপর সুন্দর করে সার্ভ করে রুমে নিয়ে এলাম।

ভাইয়া বাতরুম থেকে বেরিয়ে বিছানায় চোখ বুজে এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে।চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। ভালো করে লক্ষ্য করতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। এত পরিপাটি ভাইয়া সে কিনা শার্ট উলটো করে পড়েছে।

আমি খাবার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।ভাইয়াকে এক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম।তাকে দেখে অনেক খারাপ লাগছে।কেন সে বৃষ্টিতে ভিজতে গেল।না ভিজলে কি হতো না।জ্বর আসলে তো তারই কষ্ট হবে।

কিছুক্ষণ পর হাতে থাকা খাবার নিয়ে ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম।টেবিলে খাবারের প্লেট রেখে আস্তে করে ভাইয়াকে ডাক দিলাম,
-ভাইয়া,,(মেঘা)
আমার কন্ঠ পেয়ে ভাইয়া নড়েচড়ে উঠলো।কিন্তু চোখ খুলল না।অনেক জ্বর হওয়ার কারনে সে চোখ খুলতে পারছে না।আমি তার জ্বর পরিমাণ করতে, তার কপালের দিকে হাত এগিয়ে দিলাম।আমার হাত অতিরিক্ত হাড়ে কেঁপে চলছে।

কপালে হাত দিতেই, ভাইয়া আমার হাত খপ করে ধরে ফেললেন।আমি ভয়ে পেয়ে গেলাম।ভাইয়া আমার হাত ধরে আস্তে করে উঠে বসলেন।আমার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
-আমার কপালে হাত দিয়েছিস কেন?আমাকে বিরক্ত করতে তোর ভালো লাগে?(ত্বকি)
ভাইয়া এই জ্বরের মধ্যেও আমাকে বকা দিতে ভুলেন নি।আমি তার দিকে না তাকিয়ে তুতলে তুতলে বলে উঠলাম,

-ভাইয়া, আপনি রাতের খাবার খেয়েছেন?(মেঘা)
ভাইয়ার আমার কথায় অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো,
-না।সারাদিনে কিছু খাই নি।(ত্বকি)
ভাইয়ার কথায় নিজের অজান্তেই খারাপ লাগতে শুরু করল।আমি ভাইয়ার সামনে খাবারের প্লেট এগিয়ে বলে উঠলাম,
-খেয়ে নিন।(মেঘা)
ভাইয়া প্লেটের দিকে একপল তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো,
-না। আমি খাব না।(ত্বকি)

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৯

ভাইয়ার করার শুনে চুপ করে রইলাম।প্রায় পাঁচ মিনিট পরে ভাইয়া বাচ্চাদের মতো বলে উঠলেন,
-বউ, আমাকে খাইয়ে দে।আমি তোর হাতে খাব।(ত্বকি)
ত্বকি ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ আপনাআপনি বড়ো হয়ে গেল।আবার তার মুখ থেকে বউ ডাকটা শুনে আমি শিউরে উঠলাম।লোকটা কি বউ বউ করে আমাকে মারার ধান্দায় আছে।
ভাইয়া আমাকে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায়ে থাকতে দেখে আবার বলে উঠলেন,
-খাইয়ে না দিলে আমি কিন্তু তোর সাথে আর কথা বলব না।(ত্বকি)
ভাইয়া পাগলামো আমি মেনে নিতে পারছি না।যে মানুষটা সারাদিন আমার সাথে রাগ করে থাকে।ধমক দেওয়া ছাড়া একটা কথাও বলে না।তাই এত পরিবর্তন আমি মেনে নিতে পারছি না।

আমি বাধ্য হয়ে খাবারের প্লেট হাতে নিলাম।হাত দিয়ে খাবার মাখতে লাগলাম।নিজেকে কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে।খাবার তুলে ভাইয়ার মুখের সামনে ধরতেই ভাইয়া বাচ্চাদের মতো খেতে লাগলেন।
আমি তো অবাকের শেষের পর্যায়ে।ভাইয়াকে যে কোনদিন আমি খাইয়ে দিব তা কখনো কল্পনাও করি নি।
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।খাওয়া শেষ করেই ভাইয়া চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লেন।
আমি প্লেট রান্না ঘরে যাওয়া জন্য পা বাড়াতে হাতে টান অনুভব করলাম।ভাইয়া বাচ্চাদের মতো টেনে টেনে বলতে লাগলেন,
-বউ,আমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিস?আমাকে আ,,

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১১