তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১১

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১১
জাবিন মাছুরা

আমি প্লেট রাখতে রান্না ঘরে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই, হাতে টান অনুভব করলাম।ভাইয়া বাচ্চাদের মতো টেনে টেনে বলতে লাগলেন,
-বউ আমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিস।আমাকে আ,,
কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে না পেয়ে পিছন ফিরে তাকালাম।সে কথা শেষ না করেই ঘুমের ঘোরে তলিয়ে গিয়েছে।ভাইয়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।তার হাতের বন্ধন থেকে আস্তে করে আমার হাতটা ছাড়ালাম।আমি আর দেরি না করলাম না খাবারের প্লেট রান্না ঘরে রেখে আম্মুর রুমে চলে এলাম।আম্মু লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছে।আমি বিছানার এক পাশে গিয়ে চুপটি করে শুয়ে পড়লাম।

বৃষ্টি থেমে গিয়েছে।চারপাশে নিস্তদ্ধ পরিবেশ।আমার চোখে ঘুম নেই।ভাইয়ার কথা চিন্তা হচ্ছে।লোকটার প্রতিটি কথায় আমার শরীর কম্পনিত করে তোলে।নিজেকে কেমন হারিয়ে ফেলি।
জোর করে চোখ বন্ধ করে রেখেছি।কিন্তু ঘুম আসছেই না।নিজের প্রতি প্রচুর বিরক্ত হচ্ছি।মনে হচ্ছে আমি বড়ো কোন অপরাধ করে ফেলেছি।আমার উচিত ছিল ভাইয়ার খেয়াল রাখা।আমি তা না করে আম্মুর কাছে ঘুমতে চলে এলাম।আমি একদম ঠিক করি নি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভাইয়ার চিন্তায় সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারি নি।ফজরের আযান কানে যেতেই আর শুয়ে থাকতে পারলাম না।বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলাম।

নামাজ শেষে ভাইয়াকে দেখতে রুমে এলাম।সে এলোমেলো হয়ে শুয়ে।মুখে তার গম্ভীর ভাব।খুব অভিমান হচ্ছে তার উপর।তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে টেবিল থেকে বই খাতা নিয়ে আম্মুর রুমে চলে এলাম।

সকাল বেলা মোবাইল ফোনের বিরক্তিকর আওয়াজ কানে যেতেই ত্বকির ঘুম ভেঙে গেল।আস্তে করে শুয়া থেকে উঠে বসল।মাথাটা প্রচন্ড ভারী ভারী লাগছে তার।চারপাশে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে মনে হলো সে নিজের ঘরে নেই।মিনিট পাঁচেক পর ত্বকির রাতের কথা মনে পড়ে গেল।সে হসপিটাল শেষ করে মেঘার কাছে এসেছিল।কিন্তু মেঘা তো ঘরে নেই।কোথায় গেল মেয়েটা?
ত্বকি মেঘার কথা ভাবতে ভাবতে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেল।ওয়াশরুমের আয়নাতে নিজের পরিস্থিতি দেখে অবাক হয়ে উঠলো সে।উল্টো করে শার্ট পড়া দেখে নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে তার।শার্ট ঠিক করে পড়ে ফ্রেশ হয়ে মেঘাকে খোঁজার উদ্দেশ্য বের হলো।

সকালের নাস্তা করে একা একা কোচিং এ চলে এসেছি।ভাইয়াকে ডাকি নি।ক্লাসে শত চেষ্টা করূও মনোযোগ দিতে পারছি না।কারন নিজেকে কেমন যেন অসহায় লাগছে।ভাইয়ার উপর অভিমান করে একা একা আসা একদমই ঠিক হয় নি।

সারা বাড়িতে মেঘাকে খুঁজে পেল না ত্বকি।বিরক্ত নিয়ে রান্না চলে এলো।মেঘার মা রান্না করছে।কিন্তু আশেপাশে কোথাও মেঘা নেই।মেঘাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে বলে উঠলো,
-ফুপি, (ত্বকি)
মেঘার মা ত্বকির কন্ঠে পেয়ে পিছন ফিরে ত্বকির দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,
-উঠে গিয়েছিস বাবা, তুই যে রাতে এখানে ছিলি আমি জানতাম না।কোচিং এ যাওয়ার আগে মেঘা বলল, যে তুই রাতে এখানে এসেছিস।(মেঘার মা)
-তারমানে মেঘা বাসায় নেই।কোচিং এ চলে গিয়েছে?(ত্বকি)
-হ্যাঁ রে।(মেঘার মা)
মেঘা যে তাকে না বলে, একা একা চলে গিয়েছে বিষয়টা ভেবেই রেগে গেল সে।কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখে রাগ কন্টল করার চেষ্টা করল।

কোচিং শেষ করে মাএ বাইরে বের হলাম।আজকে হ্রদ স্যারের তাকানের ধরন একদম ভালো লাগে নি।
বাইরে দাঁড়িয়ে আছি গাড়ির অপেক্ষা করছি।বুক ভরা আশা নিয়ে বের হয়েছিলাম,ভেবেছিলাম ভাইয়া আমাকে নিতে আসবে।কিন্তু না সে আসে নি।তার উপর অভিমানটি আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেল।

গাড়ি না পেয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।হঠাৎ হ্রদ স্যারের আওয়াজ পেয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে পড়লাম।ভিতরে এক ধরনের ভয় হানা দিল।স্যার আমার কাছে এসে বলে উঠলো,
-মেঘা,আমি তোমাকে ভালবাসি।তোমাকে বিয়ে করতে চাই।তুমি রাজি তো?(ত্বকি)
স্যারের কথা শুনে আমার অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল।হাটতে শক্তি পাচ্ছি না।নিজেকে শক্ত করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
-স্যার, আমি বিবাহিত।তাই এই ধরনের আজেবাজে কথা আমাকে বলবেন না।(মেঘা)
-মিথ্যা বলছো কেন?(হ্রদ)

-সত্যি বলছি।(মেঘা)
-তা শুনি তোমার স্বামীর নাম কি?(হ্রদ)
আমি চোখ বন্ধ করে বলে উঠলাম,
-ত্বকি ভাইয়া।(মেঘা)
হ্রদ স্যার আমার কথা শুনে কাছে চলে এসে চিৎকার করে বলে উঠলেন,
-মানি না কোন বিয়ে।তুমি শুধু আমার।দরকার পড়লে তোমার স্বামীকে সরিয়ে ফেলব।দেখে নিও তুমি আমারই থাকবে।(হ্রদ)
আমি কান্না করে দিলাম।স্যারের কোন কথা না শুনে, এক দৌড়ে রিক্সায় এসে বসলাম।

বাড়িতে ঢুকেই আম্মুর সাথে কথা না বলে রুমে চলে এলাম।ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে ইচ্ছে মতো কাঁদতে লাগলাম।

ত্বকি ওপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে পরিস্কার হয়ে মেঘার মাকে কল করল।কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না।ত্বকির টেনশন যেনো আরো বেড়ে গেল।মেঘার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে তার।মেঘাকে কোচিং থেকে আনতে যাওয়ার জন্য, যেতে চাইলেও ইমারজেন্সি সার্জারি থাকাতে যাওয়া হয়ে উঠে নি।

দুপুরে কিছু চিন্তায় কিছু খেতে পারি নি।ভাইয়া এখানো আসে নি।ভিতর থেকে শুধু কান্না পাচ্ছে।আজ হয়তো বাবা বেঁচে থাকলে এমন দিন দেখতে হতো না।ত্বকি ভাইয়াকেও বিয়ে করতে হতো না।

সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।ভাইয়া এখনো পর্যন্ত একবারও আমার খোঁজ নেন নি।ভালো লাগছে না।মন খারাপ তাই রুম থেকে বেরিয়ে সারা বাড়ি ঘুরতে লাগলাম।চাচির রুমের সামনে যেতেই চাচির কথা মনে পড়ে গেল।প্রায় তিনমাস হলো চাচিকে দেখি না।চাচি প্রেগনেন্ট তাই বাবার তার বাড়িতে গিয়েছ।চাচু বিদেশে থাকে।আর আমার বুড়ো দাদিটাও কিছুদিন হলো গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন।সবার কথা মনে করে কাঁদতে লাগলাম।

আমার মন খারাপ বুঝতে পেরে আম্মু আমার সাথে কোন কথা বলে নি।নামাজ পড়ে রুমে এসে বই খুলে পড়েতে বসলাম।
হঠাৎ কোথায় থেকে যেন তিথি আপু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
-ভাবি, কেমন আছিস?তোকে না অনেক মিস করছি রে।(তিথি)
-ভালো আপু।তুমি কেমন আছো?(মেঘা)
-ভালো।তোর বলে মন খারাপ।তাই চলে এলাম।অবশ্য ভাইয়াই আমাদের নিয়ে এসেছে।(তিথি)
তারমানে আপুর সাথে ভাইয়াও এসেছে।
-কিরে তোর চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে কেন?(তিথি)
-এমনেই।পরীক্ষার চাপ তো তাই।(মেঘা)

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১০

আপুর সাথে প্রায় এক ঘন্টা কথা বললাম।ভিতরটা অনেক হাল্কা হলো।
আমাদের কথা বলার মাঝখানে ভাইয়া রুমে চলে এলো।ভাইয়াকে দেখে মনটা আবার খারপ হয়ে।আজকে যদি সে আমার সাথে থাকতো তাহলে এত বড়ো বিপদে পড়তে হতো না আমাকে।
ভাইয়াকে দেখে আপু রুম থেকে বেরিয়ে গেল।আমিও বিছানা থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা পড়লাম।দরজার সামনে আসতেই ত্বকি ভাইয়া গম্ভীর কন্ঠে শুনে দাড়িয়ে পড়লাম।

-মেঘা, (ত্বকি)
-নিশ্চুপ(মেঘা)
ভাইয়ার আমার পাশে এসে বলে উঠলো,
-কোথায় পালিয়ে যাচ্ছিস?(ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
-আজকে, আমাকে না বলে কোচিং গিয়েছেস কেন?(ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
আমার নিরবতা ভাইয়ার একদম পছন্দ হলো না।তাই সে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
-স্টুপিড, কথা বলছিস না কেন?(ত্বকি)
ভাইয়ার ধমক শুনে আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম।

মেঘাকে কাঁদতে দেখে ত্বকির বুকের ভেতরে ব্যথা অনুভব করতে লাগল।সে মেঘার চোখের পানি সহ্য করতে পারল না।মেঘার কাছে গিয়ে নরম শুরে বলে উঠলো,
-কি হয়েছে তোর।কাঁদছিস কেন?আমি কি,,

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১২