তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১২

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১২
জাবিন মাছুরা

-কি হয়েছে তোর? আমি কি তোকে কিছু বলেছি? (ত্বকি)
ভাইয়ার নরম কন্ঠে আমার হৃদয়ের বেদনা আরো বাড়িয়ে তুলল।আমি দ্বিগুন বেগে,দুই হাত দিয়ে মুখে চেপে ধরে কাঁদতে লাগলাম।
ত্বকি কিছুক্ষণ নিরব থেকে মেঘার কান্না দেখতে লাগলো।মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
একপর্যায়ে ত্বকি আর সহ্য করতে পারল না।রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,

-কী হয়েছে বলবি নাকি থাপ্পড় খাবি?(ত্বকি)
ভাইয়ার রাগ দেখে আমি দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম।ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে ইচ্ছে মতো কাঁদতে লাগলাম।।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেঘার হঠাৎ করে ওয়াশরুমের ঢোকাতে ত্বকি ভয় গেল।আসলেই কি সে মেঘাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে?হয়তো ভিন্ন কোনো কারনও থাকতে পারে।নানারকম চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার।

ক্লান্ত শরীর নিয়ে ওয়াশরুমের দরজার দাড়াল সে।আতঙ্ক ভরা কন্ঠে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে উঠলো,
-মেঘা, দরজা খুল।(ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
-অপেন দ্যা ডোর, প্লিজ।(ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
মেঘার নিরবতা ত্বকি মেনে নিতে পারল না।কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো,

-দরজা খুলবি?নাকি ভেঙে ফেলব।(ত্বকি)
বলেই ত্বকি দরজা ধাক্কাতে লাগল।
ভাইয়া অনেক জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।মনে হলো দরজা ভেঙে যাবে।তাই একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দিলাম।ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগলাম।

ত্বকি মেঘার কাছে এসে চোখে পানি মুছে দিতে দিতে বলে উঠলো,
-কী হয়েছে তোমার?এভাবে কাঁদছ কেন?আমি কি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি?(ত্বকি)
ভাইয়ার মুখে জীবনের প্রথম তুমি শব্দটা শুনে আমি অবাক হয়ে উঠলাম।মাথাটা কেমন যেন ঘুরতে লাগলো।
ত্বকি আবারো নরম শুরে বলল,
-বলো না?(ত্বকি)
আমার মনের মধ্যে শীতল হাওয়া বয়ে গেল।মন চাইলো তাকে সব বলে দেই।তাই নাক টেনে বলে উঠলাম,
-ভাইয়া আমাকে না,, (মেঘা)
ত্বকি ভয় পেয়ে বলে বলে উঠলো,
-হুম, বলো। (ত্বকি)
-আজকে আমাকে হৃদ স্যার আজেবাজে কথা বলেছে।(মেঘা)
নাক টেনে টেনে ভাইয়াকে আজকে ঘটনা সব খুলে বললাম।

আমার সম্পন্ন কথা শুনে ভাইয়ার চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেলো।অতিরিক্ত রাগে তার সারা শরীর কাঁপতে লাগলো।দাঁতে দাঁত চেপে আমাকে বলতে লাগল,
-কালকে থেকে তোর কোচিং এ যাওয়া বন্ধ।আর যাবি না।সো, কান্না বাদ দে।(ত্বকি)
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম।
-চোখ মুছ।তোর চোখ থেকে যদি আর এক ফোঁটা পানি পড়ে, তাহলে তোর খবর আছে।(ত্বকি)
আমি শত করেও কান্না থামতে পারলাম না।

ত্বকি মেঘার পরিস্থিতি বুঝতে পেরে কিছু বললো না।নিজের প্রতি বিরক্ত সে।আজকে যদি ত্বকি মেঘার সাথে যেত, তাহলে এত বড়ো বিপদে পড়তে হতো না মেঘাকে।বাচ্চা মেয়েটার মনে নিশ্চই আঘাত লেগেছে।এর প্রভাব মেঘার পড়া লেখাও পড়েত পারে।
ত্বকি মেঘার মন ভালো করতে, পকেট থেকে তার ফোন বের করে দিয়ে বলে উঠলো,
-ধর, গেম খেল।(মেঘা)
ভাইয়ার ফোন হাতে নিলাম না।সে যে তার ফোন আমাকে দিচ্ছে তা আমি মেনে নিতে পারছি না।
-আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।কান্নাকাটি বাদ দিয়ে রেস্ট নে।আমি এলে পড়েতে বসবি।(ত্বকি)
কথাগুলো বলেই ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

ভাইয়ার ফোনটা হাতে নিতেই মনটা খুশিতে ভরে উঠলো।জীবনে কইত না ইচ্ছে ছিল, ভাইয়ার ফোন চালাব।আহ্, কি মজা ভাইয়া আমাকে তার ফোন দিয়েছে।
ফোন হাতে নিয়ে ছোফায় বসে পড়লাম।হাতটা কাঁপছে।গেম খেলার জন্য ফোনটা পেলেও আমি গেম না খেললাম না।প্রথমেই গ্যালারিতে ঢুকলাম।কিন্তু গ্যালারি লক করা ছিল তাই কিছু দেখতে পারলাম না।মনটা খারাপ হয়ে গেল।
হঠাৎ রুমে তিথি আপু প্রবেশ করল।আমার পাশে বসে বলতে লাগল,

-হাই হাই, ভাইয়া ফোন তোর হাতে কেন?(তিথি)
-সে আমাকে দিয়েছে।(মেঘা)
-তাই? (তিথি)
-হুম।(মেঘা)
-ওই, ভাইয়া কোথায় গিয়েছে রে? (তিথি)
-আমি জানি না।আমাকে বলে নি।কেন কি হয়েছে আপু?(মেঘা)
-না কিছু হয় নি।যাওয়া আগে আমাকে তোর রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।(তিথি)

-ও।আচ্ছা আপু তোমারা আজকে থাকবে?(মেঘা)
আপু আমার কথা শুনে মন খারাপ করে বলে উঠলো,
-যানিনা রে।তোর স্বামী জানে।(তিথি)
-প্লিজ, আপু আজকে থেকে যাও।(মেঘা)
-আচ্ছা আমি ভাইয়াকে রিকুয়েস্ট করব থাকার জন্যে।মনে হয় থাকতে দেবে না।(তিথি)
ফোনে আর গেম খেলা হলো না।আপুর সাথে গল্প করতে করতে রাতে খাবারের সময় হয়ে গেলো।আম্মু ডাকে আমি আর আপু খাবার রুমে গিয়ে খেতে বসে পড়লাম।

-মেঘা, ত্বকি কোথায়?(মেঘার মা)
-যানি না আম্মু।(মেঘা)
– ত্বকিকে কল দে তো। (মেঘার মা)
-আম্মু ভাইয়া ফোন রেখে গিয়েছে।(মেঘা)
-আচ্ছা।তোরা খাওয়া শুরু কর।(ত্বকির মা)
তিথি আপু খাওয়া শুরু করল কিন্তু আমি খেলাম না।
-মেঘা, খাচ্ছিস না কেন? (তিথি)

-আপু পরে খাব।ভাইয়া আসুক।(মেঘা)
আপু আমার কথা শুনে খাওয়া বাদ দিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে আমার দিকে তাকাল।আপুর তাকানোর ধরন দেখে আমি প্রচুর লজ্জা পেলাম।কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম।
হঠাৎ আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-মেঘা, তোর গাল লাল হয়ে উঠেছে কেন?আমি তো তোকে লজ্জা পাবার মতো কিছু বলি নি।(তিথি)
-নিশ্চুপ(মেঘা)
-তাহলে, লজ্জা পাচ্ছিস কেন?(তিথি)
আপুর কথার আমার কাছে কোন উওর নেই।আপুর কথা মাঝে আম্মু বলে উঠলো,
-মেঘা,প্লেট দে আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি। (মেঘার মা)
বলেই আম্মু আমার পাশের চেয়ারে বসে খাবার মাখতে শুরু করল।

আম্মু যখন মুখের সামনে খাবার এগিয়ে দিল তখন আর আমি না খেয়ে থাকতে পারলাম না।ভাইয়াকে রেখেই খাওয়া শেষ করে ফেললাম।

তিথি আপু আর আমি আমার রুমে একসাথে শুয়ে শুয়ে গল্প করছি।একটু আগে ভাইয়া চলে এসেছে।সে অনুমতি দিয়েছে তাই আজকে তিথি আপু আমাদের বাসায় থাকবে।সে বাইরে থেকে এসে কিছু খায় নি।আম্মুকে বলেছে, বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে।আমাকে বলেছে যাতে রেডি হয়ে থাকি।সকালে ফজরের আযানের পরেই ওই বাড়িতে নিয়ে যাবে।

সকাল আইটার দিকে আমারা বাড়িতে চলে এসেছি।আমার আম্মুও সাথে এসেছে।মামি তো আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই দিয়েছিল।তিথি আপু বাসায় আসে নি,ভার্সিটিতে চলে গিয়েছে।

ভাইয়ার রুমে এসে সুন্দর করে ঘর গোছায়ে পড়তে বসলাম।এত পর রুমটা দেখে আনন্দ লাগছে।টেবিলে বসে পড়তে লাগলাম।ভাইয়া ওয়াশরুমের গিয়েছে গোসল করতে।

মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম।ভাইয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল।আমি আর পড়ায় মনোযোগ দিতে পড়লাম না।আড় চোখে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম।আর সেদিন রাতের ভাইয়ার করা পাগলামি গুলো মনে করতে লাগলাম।মনের ভিতর ভালো লাগার ভিন্ন এক অস্থিরতা কাজ করছে। হঠাৎ করে ভাইয়া আমার পাশে এসে বসলো।হাত থেকে বই নিয়ে প্রশ্ন করলেন,
-পৃথিবীর ব্যাসাধ কত?(ত্বকি)
ভাইয়া আচমকা প্রশ্ন করায় আমি ঘাবড়ে গেলাম।আমার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটলো।মনে করার চেষ্টা করেও, মনে করতে পারলাম না।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১১

প্রায় পাঁচ মিনিট হয়ে গিয়েছে মেঘা এখানো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি নি।ত্বকি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না।পাশে থেকে স্কেল নিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
-হাত পাত।(ত্বকি)
ভাইয়ার হাতে স্কেল দেখে আমি কাঁপতে শুরু করলাম।চোখ বন্ধ করে হাত পেতে দিলাম।
এদিকে,
তিথি ক্লাসে বসে বান্ধবীদের সাথে গল্প করছে।আজকে নাকি তাদের ডিপার্টমেন্টে নতুন শিক্ষক আসবে।সবাই আগ্রহ নিয়ে টিচারের অপেক্ষা করছে।তিথি ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট তাই সে কোন টিচারকে চিনে না।

ক্লাসে টিচার ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে পড়ল।টিচাররের কন্ঠে স্বর পেয়ে তিথির ভিতরে ধক করে উঠলো।সেই চেনা পরিচিত কন্ঠে পেয়ে নত দৃষ্টি সরিয়ে সামনে থাকা মানুষটির দিকে তাকালো সে।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর নিজের প্রথম আবাকের মানুষটিকে দেখে অস্থির হয়ে উঠলো সে।লোকটার বয়স বেড়ে গিয়েছে।মাথার চুলগুলো হাল্কা সাদা বর্ন ধারন করেছে।
এরপরেও তিথির কাছে মানুষটিকে সেই আগের প্রেমে পড়ে যাওয়া যুবকের মতোই লাগছে।তিথি চোখে সেই ব্যথাময় অতীত ভেসে উঠলো।বুকের মাঝে ব্যথা অনুভব হতে লাগলো।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১৩