তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৯

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৯
জাবিন মাছুরা

আজকে নিশ্চই আমার খবর আছে।ভাইয়া মুখটা দেখার মতো। আমি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থেকে ক্লাসে চলে এলাম।আসার সময় পিছনে এক পলক তাকিয়ে দেখলাম হ্রদ স্যার ভাইয়া সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন।

প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ক্লাস শেষ হলো। ক্লাস থেকে বের হয়ে বাইরে দাঁড়ালাম। ভেবেছিলাম ভাইয়া আমাকে নিতে আসেনি। কিন্তু একটু দূরে ভাইয়ার গাড়ি রাখা আছে, তাই বুঝতে পারলাম ভাইয়া আমাকে নিতে এসেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসলাম। ইচ্ছে হয়েছিল রিক্সায় যাব। পরে ভেবে দেখলাম ভাইয়াকে আজকে অনেক রাগীয়েছি।এখন যদি আবার তাকে রাগায় তাহলে নিশ্চিত আমাকে মেরে ফেলে দিবে।

গাড়িতে বসে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার দিকে একপল তাকিয়ে দেখলাম, তার মুখ প্রচন্ড লাল হয়ে আছে। গম্ভীর মুখ করে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। চোখে মুখে রাগ বিদ্যমান। তার দিকে তাকিয়ে আমি ভয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।

কিছুক্ষণ পর লক্ষ করলাম গাড়িতে ভাইয়াদের বাড়িতে যাবার রাস্তায় চলছে না। মনে মধ্যে একরাশ ভয় হানা দিল।ভাইয়া আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।ভয়ে আমার অস্থির লাগতে শুরু করল। তাও কিছু বললাম না চুপ করে বসে রইলাম।

গাড়িটা যখন আমার সেই চেনা পরিচিত রাস্তার চলতে লাগল তখন ভয় এক নিমিষেই হারিয়ে গেল। বুঝতে পারলাম ভাইয়া আমাকে আমার বাসার নিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের বাড়ির সামনে এসেই ভাইয়া গাড়ি থামালেন।এত দিন পর নিজের বাড়ি দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে বলে উঠলো,
-স্টুপিড, গাড়ি থেকে নাম। (ত্বকি)
ভাইয়ার ধমক শুনে আমি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নামলাম।

বাড়ির ভিতরে না ঢুকে, ভাইয়া আম্মুকে ডাক দিল।সাথে সাথে আম্মু গেটের সামনে চলে এসে বলে উঠলো,
-ভিতরে আয় ত্বকি। (মেঘার মা)
আম্মু কথা শুনে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
– না ফুপি, আমি আর ভিতরে না গেলাম।আমি একটু কাজ আছে।(ত্বকি)
-আচ্ছা।(মেঘার আম্মু)
ভাইয়ার ভিতরে এলেন না। গাড়িতে উঠার আগে আমাকে আস্তে করে বলে গেলেন।
-আজকে থেকে তুই এই বাড়িতে থাকবি।আমি তোকে বিরক্ত করতে আর আসব না। পড়াশোনা ঠিক মতো করবি।(ত্বকি)
কথাগুলো বলেই ভাইয়া গাড়িতে উঠে পড়লেন। আমি আম্মুর সাথে কথা না বলে দৌড়ে আমার রুমে চলে এলাম।

এতদিন পরে নিজের রুমটা দেখে খুশি হওয়ার কথা কিন্তু আমি খুশি হতে পারছি না। ভাইয়া বলা প্রতিটি কথা আমার কানে বেজে চলছে। আমি কি খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাকে। সামন্য কাজিন বলাতে তার এত রাগ।

দুপুরে খাওয়া শেষে রুমে আসার জন্যে পা বাড়াতে ফোন বেজে উঠলো।
মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। ভাবলাম ভাইয়া ফোন দিয়েছে। কিন্তু না, ভাইয়া ফোন করে নি। মামি ফোন করেছে।প্রথমে ফোন রিসিভ না করলেও পরে ঠিকি করলাম।
মামিকে সামল দিয়ে বলে উঠলাম,
-কেমন আছো?(মেঘা)
মামি আমার কন্ঠো পেয়ে কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,
-আম্মু,তুই কি সকালে আমার কথায় রাগ করেছিস? (ত্বকির না)
আম্মু কথা শুনে আমি কি বলব ভেবে পেলাম না চুপ করে রইলাম।
-সকালের জন্য সরি। তোর মাকে মাফ করে দে প্লিজ। আমার তোকে ওভাবে বলা একদম ঠিক হয়নি। (ত্বকি আম্মু)

-সরি বলতে হবে না।তুমি এই বাড়িতে চলে এসো(মেঘা)
আম্মু আমার কথায় হাল্কা হেসে দিয়ে বলে উঠলো,
-কীভাবে আসব রে পাগলী। ত্বকি তো যেতে দিবে না। (ত্বকির আম্মু)
আম্মুর কথা শুনে আমার কান্না চলে এলো। কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠলাম,
-আম্মু, ভাইয়া আমাকে এই বাড়িতে নিয়ে এলো কেন? আমি তো তোমাদের সাথে থাকতে চেয়েছিলাম। (মেঘা)

-দূর আম্মু, কান্না করবি না। দেখ, তুই যদি এ বাড়িতে থাকিস তাহলে তোর পড়া হবে না। তাই পরীক্ষা পর্যন্ত একটু কষ্ট কর। (ত্বকির মা)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
-তোকে অনেক মিস করবে রে আম্মু। (ত্বকির মা)
-আমিও তোমাকে অনেক মিস করব। (মেঘা)
-আজকে তুই নেই বলে তোর নানুমনি মিশুরা সবাই চলে যাচ্ছে। পুরো বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে।
-হুম। তুমি কিন্তু আমাকে দেখতে আসবে। (মেঘা)
-হ্যাঁ আসব তো।(ত্বকির মা)
আম্মু সাথে কথা বলা শেষ করে রুমে এসে বই বের করে পড়তে বসলাম।

পড়েতে পড়তে কখন যে রাত হয়ে গেল একদম ঠিক পেলাম না । আম্মু আমার জন্য প্লেটে করে খাবার নিয়ে রুমে এসে বলে উঠলো,
-মেঘা, তুই কি আমার উপর রেগে আছিস? (মেঘার মা)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
আমি কোন কথা বললাম না। হঠাৎ আম্মু কান্না করে দিয়ে বলে উঠলো,
-আমি তোর সিদ্ধান্ত না নিয়ে সেদিন তোকে ত্বকির সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি।আমাকে মাফ করে দে। (মেঘার মা)

আম্মুর কান্না দেখে আমিও কান্না আটকে রাখতে পারলাম না। আম্মু জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম।
-মেঘা, কান্না করে না।(মেঘার আম্মু)
আমি আরো জড়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আম্মুকে। কান্না করতে করতে বলতে লাগলাম,
-সরি আম্মু। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে।(মেঘা)
-তুই কেন সরি বলছিস? (মেঘার মা)
-আমি যে তোমার সাথে এতোদিন কথা বলি নি। (মেঘা)
-আমি তো জানতাম আমি মেয়ে আমার সাথে রাগ করে বেশিদিন থাকতে পারবে না। (মেঘার মা)
-হুম। (মেঘা)

-এখন তাড়াতাড়ি হা কর। কতদিন ধরে তোকে খাইয়ে দেই না। (মেঘার আম্মু)
আম্মু কথা মতো হা করে খেতে লাগলাম। আম্মু আমাকে যত্ন করে খাইয়ে দিতে লাগল। আমি খাওয়ার সাথে পড়তে লাগলাম।
অনেটা খাবার শেষ করার পর আমি আর খেতে পারলাম না। মুখ কুঁচকে আম্মুকে বলে উঠলাম ,
-আম্মু, আমি আর খাব না। (মেঘা)
আম্মু আমার হাতে পানির গ্লাস দিয়ে বলে উঠলো,
-এত কম খেলে তোকে তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না। (মেঘার আম্মু)
আমি আম্মুর কথায় কোন গুরুত্ব দিলাম না।
-আমি কিন্তু ত্বকির কাছে বিচার দিব যে তুই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস না। (মেঘার মা)
আম্মুর কথা শুনে ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেল। সে একবারও ফোন করে নি। লোকটাকে কি আমি অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।

আম্মু আমাকে খাইয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।ভাইয়া কথা অনেক মনে পড়ছে।হাজার চেষ্টা করেও পড়ার মধ্যে মনোযোগ দিতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পড়ে আম্মু রুমে গিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়লাম।

সকাল বেলা আম্মুর ডাকে ঘুম ভেঙে গেল। আম্মু আমাকে বলছে,
-মেঘা, উঠ কোচিং এ যাবি না? (মেঘার মা)
আম্মু ডাকে আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। হাল্কা নাস্তা করে রেডি হয়ে নিলাম। ভেবেছিলাম ভাইয়া আমাকে নিতে আসবে। কিন্তু ভাইয়া আসে নি। তাই কিছুক্ষণ ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়লাম কোচিং এর উদ্দেশ্যে।

আজকে কোচিং এ প্রথম ক্লাস হ্রদ স্যার পেলেন। স্যার পড়াচ্ছিলেন আর আমার দিকে বার বার তাকিয়ে দেখছিলেন।স্যারের তাকানোর ধরন আমার একদম পছন্দ হয় নি। কোন পড়াই বুঝতে পারি নি।বিরক্ত নিয়ে ক্লাস শেষ করলাম।

ক্লাস শেষে কোচিং থেকে বেরিয়ে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে পড়লাম। মনে মনে আশা করেছিলাম, ভাইয়া আমাকে নিতে আসবে। কিন্তু না, ভাইয়া এখানো আমাকে নিতে আসলেন না। বাধ্য হয়ে একা একাই বাসায় চলে এলাম।

চারপাশে হাল্কা অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছে। মনে হয় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। কোচিং থেকে এসে আমি ঘুমিয়েছিলাম।অনেক দেরি হয়ে গেল। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।তারপরে আম্মুর কিছুটা সময় আম্মুর সাথে গল্প করে রুমে এসে পড়তে বসলাম।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৮

হঠাৎ বাতাসে জানালার পর্দা উড়েতে লাগল। আমি চেয়ার থেকে উঠে জানালা বন্ধ করে দিলাম।
নিশ্চিত আজকে প্রচুর বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি পড়বে ভাবতেই ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেল। ভাইয়া কি বাসায় নাকি হসপিটালে?
দৌড়ে আম্মু রুমে গিয়ে ফোন নিয়ে এলাম। আমার মনটা কেমন যেন কু ডাকছে। ভাইয়াকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
ফোনে কল লিস্টে ভাইয়ার নাম্বার বের করলাম। ফোন দিতে গিয়ে আর দিলাম না। ভাইয়ার উপর প্রচন্ড অভিমান হলো। সে তো আমার খোঁজ নেয় নি তাহলে আমি কেন নিব।

ত্বকি বৃষ্টি মধ্যে হাঁটছে। সারা শরীর তার ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে। তারপরে সে হেঁটেই চলছে। চোখ মুখ তার শুকিয়ে গিয়েছে।

চেয়ারে বসে ফোন হাতে নিয়ে ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম।হঠাৎ দরজায় চাপানোর শব্দ পেয়ে আমি ছিট্টে উঠলাম। দরজার দিয়ে তাকাতেই আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। কারন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ত্বকি ভাইয়া। তাকে দেখেই আমার বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো।ভাইয়ার সারা শরীর ভিজে গিয়েছে। পরেনের সাদা শার্টা গায়ের সাথে লেগে গিয়েছে। চোখ দুটো তার লাল হয়ে রয়েছে।
ভাইয়া আমার দিকে ঢুলতে ঢুলতে এগিয়ে আসতে লাগলেন। বাচ্চাদের মতো ঠোঁট-ওল্টে যা বলে উঠলেন,
-বউ, তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিস না। (ত্বকি)
ভাইয়ার মুখে,,

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ১০