তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৮

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৮
জাবিন মাছুরা

– স্টপ, (ত্বকি)
ভাইয়া ধমক শুনে চুপ হয়ে গেলাম। তিথি আপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আপু মুখের উপর বালিশ চেপে হাসছে। রাফিন ভাইয়াকে দেখে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।

তিথি আপুর হাসি দেখে আমার বিরক্ত লাগছে। আমি কি কোন হাসির গল্প বলেছি? আপু তো হাসি থামাতেই পারছে না। ভাইয়া আপুকে হাসতে দেখে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,
-তিথি, ঘর থেকে বের হ।(ত্বকি)
তিথি আপু হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
– যাচ্ছি। (ত্বকি)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আপু রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ভাইয়া বলে উঠলো,
-শোন, মেঘার জন্য খাবার পাঠিয়ে দিবি।ও এখন পড়তে বসবে, ওকে আর বের হতে দিব না। (ত্বকি)
-ঠিক আছে।(তিথি)
আপু রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি চুপ চাপ গিয়ে টেবিলে বসে বই বের করতে লাগলাম। ভাইয়া আমার সামনে চেয়ার টেনে বসলেন। রসায়ন বই হাতে নিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলেন,
-এতক্ষণ কি করছিলি? (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)

-তোকে না আমি পড়তে বসতে বলেছিলাম। পড়তে বসিস নি কেন?
-নিশ্চুপ (মেঘা)
-কথা বলছিস না কেন? (ত্বকি)
ভাইয়ার ধমক শুনে আমি ছিট্টে উঠলাম। কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম। ভাইয়া কিছুটা সময় চোখ বন্ধ করে রইলেন। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রচুর রেগে আছেন। হঠাৎ করে ভাইয়া নরম কন্ঠে বলে উঠলো,
-মেঘা, (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
-তুই কি কখনো আমাকে বুঝবি না? (ত্বকি )

ভাইয়ার কথাটা আমার বুকে গিয়ে বিঁধল। নিচে থেকে চোখ তুলে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
ভাইয়া আমার দিকে না তাকিয়ে বলতে লাগল,
-দেখ মঘা, তোর পরীক্ষার আর বেশি দিন নেই। এখন যদি পড়া লেখা না করিস তাহলে তো তোরই ক্ষতি হবে।(মেঘা)
আমি কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলাম,
-আসলে ভাইয়া মিশু আপুরা,,(মেঘা)
আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে ভাইয়া বলে উঠলেন,
-চুপ, একটা কথাও বলবি না।(ত্বকি)
আমি আর কোন কথা বললাম না। ভাইয়া কয়টা অংক দাগ দিয়ে দিলেন। আমি অংক করতে শুরু করলাম।

ভাইয়া মনোযোগ দিয়ে ফোন স্কোল করছেন। অনেক কষ্ট করে অংক গুলো শেষ করে ভাইয়াকে আস্তে করে বলে উঠলাম,
-হয়েছে।(মেঘা)
ভাইয়া আমার আওয়াজ পেয়ে ফোন থেকে চোখ তুলে আমার দিকে তাকালেন।আমার হাত থেকে খাতা নিয়ে দেখতে লাগলেন।

ভাইয়া অংক দেখা শেষ হওয়ার আগেই তিথি আপু আমার জন্য খাবার নিয়ে চলে এলো। আস্তে করে টেবিলের উপর খাবার রেখে কোন কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
খাবারের ঘ্রাণ পেয়ে আমর অস্থির লাগতে শুরু করল। কারন নাক বলে দিল প্লেটের ভিতরে আমার সবচেয়ে অপছন্দের খাবার বিরিয়ানি রাখা আছে। বিরিয়ানির গন্ধে আমার প্রচুর বমি বমি পাচ্ছে। আমি দাত চেপে বসে আছি।

ভাইয়া খাতা দেখতে দেখতে বলে উঠলো,
-যা হাত ধুয়ে আয়। (ত্বকি)
আমি ভাইয়া কথা শুনে আর দেরি হাত ধুয়ে এলাম।কিন্তু প্লেটে হাত দিলাম না।
হঠাৎ করে ভাইয়া বলে উঠলো,
-কিরে খাচ্ছিস না কেন? (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
-আমাকে দেখে আবার লজ্জা পাচ্ছিস না তো?(ত্বকি)
-ভাইয়া, আমি খাব না। (মেঘা)
আমার কথা শুনে ভাইয়া অংক দেখা বাদ দিয়ে গম্ভীর মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-খাবি না। কেন? (ত্বকি)

-ভাইয়া বিরিয়ানি আমার কাছে ভালো লাগে না। আমি খাব না প্লিজ। (মেঘা)
আমার মুখ থেকে খাব না শুনে ভাইয়া রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
-কোন কথা না। খাওয়া শুরু কর। (ত্বকি)
ভাইয়া দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
-ভাইয়া, আমি শুধু লবণ আর পানি দিয়ে ভাত খাব। আপনি তো জানেন আমি বিরিয়ানি খেতে পারি না।
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

-কি বললি? আবার বল। (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
-তুই খাবি না?
আমি সাহস নিয়ে উওর দিলাম,
-নাআ(মেঘা)
-বাহ, সাহস তো দেখি অনেক বেড়ে গিয়েছে।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে কাঁপতে শুরু করলাম। ভাইয়া খাতা রেখে দিয়ে উঠে দাড়াল। আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠলো,
-তোর ওজন কত? (ত্বকি)
আমি ভয়ে ভয়ে বলে উঠলাম,

-৩২ কেজি। (মেঘা)
-আল্লাহ, কত ওজন। এবার বল তোর হাইট কত?(ত্বকি)
-৫ ফুট তিন। (মেঘা)
ভাইয়া আমার আরো কাছে বলে উঠলো,
-ছিঃ, তোর বলতে লজ্জা লাগছে না। তোর চেয়ে রাফিনের ওজন বেশি। রাফিনের কাছ থেকে তোর খাওয়া শেখা উচিত। (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
-চুপচাপ খাওয়া শুরু করবি নাকি আমি অন্য ব্যাবস্থা নিব? (ত্বকি)
ভাইয়া শেষ কথাটা আমার বেশি সুবিধাজনক লাগল না। তাই বাধ্য হয়ে খাওয়া শুরু করলাম।

অনেক কষ্ট করে পুরোটা বিরিয়ানি শেষ করলাম। এখন প্রচুর বমি পাচ্ছে সাথে অনেক অস্থির লাগছে।
অনেক জানতে ইচ্ছে করল যে ভাইয়া খেয়েছে কি না। তাই ভয়ের সাথে বলে উঠলাম,
-ভাইয়া, আপনি খেয়েছেন। (মেঘা)
আমার কথা শুনে ভাইয়া বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো,
-তোর না জানলেও হবে। (ত্বকি)
ভাইয়ার এমন উওর আমি আশা করিনি।মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল। অস্থিরতা যেন আরও বেড়ে গেল।আর কোন কথা বললাম না, পড়েতে শুরু করলাম।

প্রায় রাত একটা বাজতে চলে। এখনো পড়ছি। ভাইয়া ছোফায় বসে লেপটপে কাজ করছেন। তার চোখে ঘুম নেই। কিন্তু আমি আর জেগে থাকতে
পারছি না। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।
ত্বকি মেঘার ঘুম মাখা মুখ দেখে বলে উঠলো,
-আর পড়তে হবে না। যা ঘুমিয়ে পড়। (ত্বকি)
ভাইয়া অনুমতি পেয়ে উঠে দাঁড়ালাম।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
-আপনি কোথায় ঘুমোবেন?এই রুমে? (মেঘা)
আমার কথা শুনে ভাইয়া বিরক্তির সাথে বলে উঠলো,

-তোর কি মনে হয় আমি তোর সাথে ঘুমোব?কোনদিন ও না। তোর সাথে ঘুমিনোর চেয়ে রাস্তায় যেয়ে ঘুমোন অনেক বেটার।(ত্বকি)
কথাগুলো একদমে বলেই ভাইয়া ছোফা থেকে উঠে বেলকনিতে চলে গেলেন। আমি আর কান্না কাটকে রাখতে পারলাম না। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে মুখ বুজে কাঁদতে লাগলাম। মানুষটা এমন কেন? আমার সাথে কি একটু ভালো করে কথা বলতে পারে না। তার এত ওয়েট কেন? আমি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েলাম।

ফজরের আযানের আওয়াজ পেয়েই আমার ঘুম ভেঙে গেল। আস্তে আস্তে বিছানায় থেকে নেমে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম।
ভাইয়াকে রুমে দেখতে পেলাম না। তাই বেলকনিতে গিয়ে দেখলাম। কিন্তু বেলকনিতেও পেলাম না।ভাইয়ার কথা ভাবতে প্রচুর অভিমান হলো তার উপর। আমার সাথে কেন এমন করে সে। তার কথা চিন্তা করা বাদ দিয়ে, বই বের করে পড়তে বসলাম।

সকাল সাতটা বাজতেই পড়া বন্ধ করে দিলাম।এখনো ভাইয়া রুমে আসে নি। আয়নার সামনে গিয়ে ওড়না ভালোভাবে বেধে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।

রান্না ঘরে এসে দেখলাম ভাইয়ার আম্মু রান্না করছেন। আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই সে বলে উঠলো,
-মেঘা মা, তুই এখানে কেন?(ত্বকির মা)
আম্মুর কথা শুনে আমি বলে উঠলাম,
-আজকে থেকে আমি রান্না করব। (মেঘা)
আম্মু আমার কথা শুনে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
-মাইর চিনিস?(ত্বকির মা)
আমি নিচে দিকে তাকিয়ে রইলাম।
-যা ঘরে যা। তোর কয়েক দিন পড়ে পরীক্ষা মনে আছে? ত্বকি যদি জানে তুই রান্না ঘরে এসেছিস। তাহলে কি করব জানিস? (ত্বকি)
মামির বকা শুনে আমি আর কান্না থামিয়ে রাখতে পারলাম না। কাঁদতে কাঁদতে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। রুমে এসে বাথরুমে ঢুকে ইচ্ছে মতো কাঁদতে লাগলাম। সবাই আমার সাথে কেন এমন করে? কেন যে ভাইয়ার উপকার করতে গেলাম।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৭

কোচিং এ যাওয়ার আগে কোথায় থেকে যেন ভাইয়া চলে এলো।তাও আবার একদম পরিপাটি হয়ে।
এসেই আমাকে গাড়িতে উঠতে বললে। আমি রেডি হয়ে গাড়িতে এসে বসলাম।
ভাইয়ার সাথে আমার আর কথা হয় নি। সারারাত কোথায় ছিলো তাও যানিনা। জিজ্ঞেসাও করি নি।
আজকে করে সকালের আম্মুর রাগ নাস্তা খায় নি। আম্মু বুঝতে পেরেছে যে আমি রাগ করেছি তাই আর কিছু বলে নি। প্রচুর রাগ হচ্ছে ভাইয়ার উপর।

কোচিং এর সামনে এসে ভাইয়া গাড়ি থামালেন। আজকে আমি তার বলার আগেই গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। ভাইয়াকে না বলেই হাঁটতে শুরু করলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই কোচিং এর ইংলিশ টিচার হ্রদ স্যার আমার সামনে এসে দাড়ালেন। হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,

-মেঘা, কেমন আছো? এতদিন কোথায় ছিলে?পিছনের লোকটা তোমার কি হয়? (হ্রদ)
স্যারের এতোগুলো প্রশ্ন শুনে আমি বিরক্ত হয়ে উঠলাম। ভাইয়ার দিকে ইশারা করে বলে আমি বলে উঠলাম,
-আমার কাজিন হয়। (মেঘা)
এখন অনেকটা শান্তি লাগছে।কারন আমার মুখ থেকে কাজিন শব্দটা ভাইয়া আশা করে নি। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে কষ্ট পেয়েছে। রাগে তার ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে।আজকে নিশ্চই আমার খবর আছে,,,

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৯