তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৭

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৭
জাবিন মাছুরা

আমি কাগজের দিকে না তাকিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলে লাগলেন,
– ডিভোর্সের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। এই ত্বকির হাত থেকে তোর মুক্তি নেই। দরকার পড়লে তোকে একশো বার বিয়ে করব। আন্ডারস্টান্ড?(ত্বকি)

ভাইয়ার কথাগুলো যেন আমার মাথার উপর দিয়ে গেল। তার লাস্ট কথাটা শুনে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । হাত পা অবস হয়ে আসছে। মানুষ এক রাতের মধ্যেই এতোটা চেন্জ হয়ে যেতে পারে? যে লোক কাল রাতে বলল ডিভোর্স দিয়ে দিবে সেই কিনা এখন বলছে,দরকার পড়লে। একশো বার বিয়ে করবে।
আমার হাত পা থরথর করে কাঁপতে লাগলো। ভাইয়া আমাকে কাঁপতে দেখে দূরে সরে গেলেন। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– এই মেয়ে এত কাঁপছিস কেন? আমি কি কাঁপার মতো কিছু করেছি?(ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
ভাইয়া প্রতিটা কথায় আমাকে ভাবাচ্ছে। তার মাথা কি ঠিক আছে? পাগল হয়ে গেলেন না তো? ভয়ে আমি জানালার পর্দা ধরে ঠাই দাঁড়িয়ে আছি। ভাইয়া তার চেয়ারে বসে মোবাইল স্কোল করেছেন। হঠাৎ ভাইয়া বলে উঠলেন,
– দাড়িয়ে আছিস কেন? আমি কি তোকে বসতে নিষেদ্ধ করেছি? স্টুপিড,,(ত্বকি)
ভাইয়ার ধমক শুনে আমি চুপ করে যেয়ে ছোফায় গিয়ে বসে পড়লাম।

চুপ করে বসে আছি। এখনো হাত পায়ের কাঁপুনি কমে নেই। ভাই আর কোন কথা বলে নি। আমি বসে ভাইয়া কথা চিন্তা করছি। হঠাৎ একটা মেয়ের কন্ঠ স্বর পেলাম। মেয়েটি ভিতরে না ঢুকে বলে উঠলো,
– মে আয় কামিন স্যার? (মেয়েটা)
ভাইয়া মেয়েটির দিকে না তাকিয়ে বললেন,
– হুম। (ত্বকি)

মেয়েটির ভাইয়ার উওর পেয়ে ভিতরে ঢুকে ভাইয়াকে সালাম দিল। আমি পিছনে বসে থাকায় তাই হয়তো আমাকে দেখতে পায় নি। দেখতে বেশ সুন্দর, লম্বা গোলগাল। মেয়েটির পরনে নার্সের ইউনিফর্ম। তারমানে সে এই হসপিটালের একজন নার্স।
নার্স আপুটা নরম সুরে ভাইয়াকে বলতে লাগল,
– স্যার, এটা ২৩ নম্বর কেবিনের পেসেন্টের রিপোর্ট। (নার্স)
ভাইয়া টেবিলের উপর থেকে রিপোর্ট টা নিয়ে দেখতে লাগলেন।

নার্স আপুটা রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে আমাকে দেখতে পেয়ে হা করে তাকিয়ে রইলেন। আমি আপুটাকে আস্তে করে সালাম দিলাম। আপুটা আমার দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে বিষ্ময়ের সাথে ভাইয়াকে বলে উঠলো,
– স্যার, কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি? (নার্স)
– করুন। (ত্বকি)
অনুমতি পেয়ে আপুটা আর দেরি করলেন না।অস্থিরতার সাথে বলে উঠলো,
– স্যার এই মেয়েটা কে? আপনার ছোট বোন? (নার্স)
– না, আমার ওয়াইফ। (ত্বকি)
ভাইয়ার মুখ থেকে ওয়াইফ কথা শুনে আমি ধাক্কা খেলাম। সারা শরীর শিউরে উঠলো।অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।

নার্স আপুটা আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন,
– কেমন আছেন ভাবি? (নার্স)
– ভালো। আপনি কেমন আছেন আপু?(মেঘা)
– আমিও ভালোই আছি। (নার্স)
আমাদের কথার মাঝে ভাইয়া গম্ভীর গলায় নার্স আপুকে বলে উঠলো,
– মিস সারা, আপনাকে একটা কাজ দিব? (ত্বকি)
– জী স্যার অবশ্যই। (নার্স)

– বারোটার দিকে আমার একটা সার্জারি আছে। তাই আমি এখনে থাকতে পারব না। আপনি কিছুক্ষণ আপনার ভাবির কাছে থাকতে পারবেন?
– জী স্যার। থাকতে পারব। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। (নার্স)
– ওকে। (ত্বকি)
বলেই ভাইয়া আমার দিকে একপল তাকিয়ে এপ্রোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

ভাইয়ার বেরিয়ে যাওয়ার পর নার্স আপুটা আমার পাশে এসে বসলেন। মিষ্টি করে হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,
– ভাবি আপনার নাম কি? (নার্স)
– মেঘা। (মেঘা)
– খুব সুন্দর নাম। (নার্স)
আপুটা আমার আরও একটু কাছে এসে ঘেষে বসলেন। মিটমিট করে হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,
– ভাবি, আপনাদের কি লাভ মেরেন্জ? (নার্স)
আপুটার কথা শুনে আমি অনেক লজ্জা পেলাম। আমাকে যে কোনদিন এরকম কোন কথা শুনতে হবে কখনো ভাবিনি।

লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বললাম,
– না আপু। (মেঘা )
– আমারই বোঝা উচিত ছিল ত্বকি স্যারের মতো মানুষ কিভাবে লাভ মেরেন্জ করে। আচ্ছা ভাবি, স্যার তো অনেক রাগী। আপনার উপর ও কি রাগ করে? (নার্স)
আপুটার কথা শুনে আমি কি উওর দিব ভেবে পেলাম না। ভাইয়া তো কোনদিনও আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে নি। তাও আপুকে বললাম,
– না, একটু রাগ করে না। (মেঘা)
আপুটা আমার গাল টেনে দিয়ে বলে উঠলো,
– ভাবি আপনি তো অনেক কিউটি পিচ্চি তাই হয়তো স্যার রাগ করে না। (নার্স)
আপুর কথা শুনে আমি তার থেকে একটু পিছিয়ে বসলাম। তার গালে হাত দেওয়া আমার একদম ভালো লাগে নি।

অনেটা সময় আপুটার সাথে কথা বললাম। আপুটা একটু অন্যরকম হলেও অনেক ভালো। খুব তাড়াতাড়ি মিশতে পারে।

ভাইয়ার ওটি শেষ করে চলে আসার পর আপুটা চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালেন।
আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপরে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়ে বসলেন। আমার গালে চুমু খেয়ে বসলেন। আবারও গালে হাত দিয়ে বলতে লাগলেন,
– ভাবি, আপনি অনেক কিউট। আপনাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে।প্লিজ ভাবি, স্যারকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে যাবেন। আপনি গেলে আমি অনেক খুশি হবো।(নার্স)
আমি তো স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি। ভাইয়া বিরক্ত মুখ করে তাকিয়ে আছি। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আমার থেকে আপুটার কাজে সে বেশি বিরক্ত। মনে হচ্ছে গালটা আমার ছিল না ভাইয়া ছিল।

হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠেছি। ভাইয়া গম্ভীর মুখ করে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে লাগছি। ভাইয়া আমার কান্ড দেখে রাগী গলায় বলে উঠলো,
– এই মেয়ে কি করছিস? মুখে থেকে হাত সরা।(ত্বকি)
ভাইয়া কথা শুনে আমি আর মুখে হাত দিলাম না। মন খারাপ করে বসে রইলাম।

বাড়িতে এসেছি বিকেল বেলা। দুপুরে রেস্টুরেন্ট খাবার খেতে হয়েছে। তারপর ভাইয়া আমাকে কোচিংনের সব ক্লাসে করিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। তারপরে অনেকক্ষণ নানু মনির সাথে গল্প করেছি।
আমি প্রচুর ক্লান্ত।আজকের সব ঘটনাগুলো আমার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। ভাইয়া অদ্ভুত ব্যবহার আমাকে ভাবাচ্ছে। তার এত পরিবর্তন আমি মানতে পারছি না।

কিছুক্ষণ শাওয়ার নিয়েছি। একটু আগে তিথি আপু এসে বলে গেল আজকেও নাকি আমাকে শাড়ি পড়তে হবে। কারন আজকে নাকি ভাইয়ার চাচাতো বোন আমাকে দেখতে আসবে।

আমি ভাইয়ার রুমে খাটের উপর বসে আছি একদম নতুন বউ এর মতো। ভাইয়ার চাচাতো বোন মিশু আপু আমার সামনে বসে আছে, পাশে তিথি আপু। আপুর কোলে ছোট্ট তিন বছরের একটা বাচ্চা। বাচ্চাটা আমাকে দেখার পর থেকে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তিথি আপু আমার দিকে ইশারা করে মিশু আপুকে বলে উঠলো,
– আপু দেখ, আমাদের ভাবি। কেমন হয়েছে বল।(তিথি)
-আমার তো অনেক পছন্দ হয়েছে। ভাবিটা একটু ছোট কিন্তু অনেক সুন্দর। একদম পরীর মতো। (মিশু)
মিশু আপু আর তিথি আপুর সাথে অনেকক্ষণ কথা বললাম। কিন্তু চিন্তা হচ্ছে ভাইয়ার জন্য। সে এখানো আসেনি। যদি এসে দেখে আমি পড়া বাদ দিয়ে গল্প করছি তাহলে নিশ্চুই আমার খবর আছে।

আমার চিন্তা মধ্যে মিশু আপুর ছেলে রাফিন হঠাৎ করে আমার কোলে এসে বসে পড়ল। গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
– মামমি তুমি আমাল সাথে কুথা বুলো না কেনু? (রাফিন)
আমি রাফিকে কি বলব বুঝতে পারছি না। রাফিন অনেক কিউট। কিন্তু ওকে কোলে তোলা অনেক কষ্টের।ওর ওজন একটু বেশি হওয়াতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
– মামমি আমালে একটি গপ্পো শুনাও। (রাফিন)
রাফিনের কথা শুনে মিশু আপু বলে উঠলো,

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৬

– রাফিন সবসময়ই গল্প গল্প করো কেন? তোমার মামি এখন শোনাবে না। বুঝেছ? (মিশু)
মিশু আপুর ধমক খেয়ে রাফিন কান্না শুরু করে দিল। আমি ওর কান্না থামাতে বলে উঠলাম,
– শুনাব তো। বলো তুমি কিসের গল্প শুনতে চাও?
আমার কথা শুনে রাফিন কান্না থামিয়ে খিলখিল করে হেসে দিয়ে বলে উঠলো,
– গরুর গপ্পো শুনব। (রাফিন)
– শুরু কর মেঘা। আমিও একটু শুনি। (তিথি)

আমি তো পড়লাম মহা বিপদে। কখনো কোনদিন কাউকে গল্প শুনাতে হয় নি। গল্পও আমার কাছে একদম ভালো লাগে না।
তাও বাধ্য হয়ে গল্প মনে করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন গরুর গল্প মনে পড়ছে না।
– মামমি বলো না। না বললে আমি কিন্তু কান্না করে দিব। (রাফিন)
অবশেষে রাফিনের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম,

– এক দেশে ছিল একটা গরু। গরুর ছিল একটা হাত থুক্কু চার পা একটা লেজ,,
তারপরে একটু থেমে রাফিনের দিকে তাকালাম। রাফিন আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
– তারপরে কি মামমি? (রাফিন)
– একদিন না গরুটার অনেক পেটে ব্যাথা শুরু হয়। সবাই মনে করে গরুটার বাবু হবে। তাই সবাই হসপিটাল থেকে ডক্টর ডেকে নিয়ে আসে। ডক্টর এসে গরুটাকে নাপা খেতে দেয়। কিন্তু তারপরেও তার পেটে,,,, (মেঘা)
গল্পটা শেষ করার আগে একজনের চেনা পরিচিত কন্ঠে পেয়ে চুপ হয়ে গেলাম।
-স্টপ, (ত্বকি)

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৮