তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৬

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৬
জাবিন মাছুরা

ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। কারন যে ব্যক্তি এত বার বার কল করেছিল সে আমার কন্ঠ পেয়ে ফোনটা কেটে দিল। কে ফোন দিয়েছিল? কেটেই বা দিল কেন?
ফোনটার দিকে তাকাতেই আমার বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো। আল্লাহ, আমি কি করলাম।ভাইয়াকে না বলে তার ফোন ধরলাম। সে যদি দেখে আমি তার ফোন ধরেছি তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে বকা দেবে।তাই তাড়াতাড়ি ফোন আগের জায়গায় রেখে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।

মামি আর আম্মু রান্না ঘরে রান্না করে । মামা ছোফায় বসে পেপার পড়ে। নানু আর ভাইয়ার মামি কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। তিথি আপু টিভিতে কার্টুন দেখে। সবাইকে দেখতে পেলেও একজনকে দেখতে পেলাম না। তারমানে ভাইয়া কি রাতে ফিরেনি? কোথায় গিয়েছে সে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সিরিতে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার কথা ভাবতে লাগলাম।হঠাৎ মামির কন্ঠে পেয়ে আমি ঘাবড়ে গেলাম। মামি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
– বৌমা, কয়টা বাজে শুনি? এখন তোমার ঘুম থেকে উঠার সময় হলো?(ত্বকির মামি)
মামির কথা শুনে আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। দেখলাম আটটার বেশি বাজে। সত্যি অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আমার কখনো এত দেরি হয় না কিন্তু কালকে রাতে জেগে থাকার জন্যে সকালে উঠতে পারিনি।
– কি হলো বৌমা কি ভাবছ? এত দেরি করে উঠলে সংসারের কাজ কে করবে শুনি? (ত্বকির মামি)
মামির কথা শুনে আমি কোন উত্তর দিলাম না। এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
নানু মনি মামিকে বলে উঠলেন,

– বৌমা, মেঘা মনি তো ছোট মানুষ। বড়ো হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।(ত্বকির নানু)
নানু মনির বলার সাথে সাথে মামি বলে উঠলেন,
– মা, আমারও এই বয়সে সংসার করে এসেছি। কোনদিন কি এত বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছি?(ত্বকির মামি)
মামির কথা শুনে তিথি আপু টিভি থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকাল। আপুর চোখে থাকা চশমাটা একবার নাড়া দিয়ে বলে উঠলো,
– মামি, আপনি কালকে না বললেন, মেঘা ছোট মানুষ, ত্বকি এত পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করেছে কেন?(তিথি)
তিথি আপুর কথা শুনে মামি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললেন। চুপ করে রুম থেকে চলে গেলেন।

আমি চেয়ার বসে মামির বলা কথাগুলো ভেবে চলেছি। আসলেই আমি কোন কাজ করি না। বউ হিসেবে কোন দায়িত্ব পালন করি না। মামির বলা কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগলেও প্রত্যেকটা কথাই সত্য। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম কালকে ঘুম থেকে উঠেই রান্না ঘরে চলে আসব।
– পুতুল মনি কি হয়েছে তোর? তোর কি মন খারাপ? (নানু)
নানুর কথা শুনে আমি হালকা হেসে বলে উঠলাম,

– না গো নানু। (মেঘা)
– দেখ, তোর মামির কথায় কিছু মনে করিস না। (নানু)
আমি কিছু বললাম না।তিথি আপু বলে আমাকে উঠলো,
– মেঘা ভাবি, তুই মাইর খাবি। (তিথি)
– কেন আপু? আমি কি কোন ভুল করেছি? (মেঘা)
– ভুল তো অবশ্যই করেছিস। (তিথি)
আপুর কথা শুনে নানু মনি বলে উঠলো,
– কি করেছে আমার পুতুল?(নানু)

আমি অতি আগ্রহ নিয়ে আপুর কথা শুনার জন্য প্রস্তুত হলাম। আপু ঠোঁট-ওল্টে আমার দিকে তাকিয়ে ন্যাকা কন্ঠে বলে উঠলো,
– এ্য, আমি ভেবেছিলাম যে ফুপি হতে চলেছি। আর আজকে মায়ের কাছে শুনলাম, আমার ভাতিজার মা নাকি কোনদিন প্রেগনেন্ট হয় নি। সবাই আমাকে ধোঁকা দিয়েছে।(তিথি)
আপুর কথা আগা গোড়া কিছুই বুঝতে পারলাম না। নানুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে মিটমিট করে হাসছে। আমি বোকার মতো আপুকে প্রশ্ন করলাম,

– মানে?(মেঘা)
আপু আমার মাথায় হালকা করে বারি দিয়ে বলে উঠলো,
– গাধী, আসলেই তুই একটা পিচ্চি।(তিথি)
আসলেই আমি বুঝতে পারলাম না। মামি খাবার বেড়ে দিয়ে তিথি আপুকে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
– তিথি, সবার সামনে সবকিছু বলতে হয় না বুঝেছিস।(ত্বকি মা)
– সরি আম্মু ।(তিথি)

মামা অফিসে চলে গেলেন। তিথি আপু খাওয়া শেষ করে তার রুমে চলে গিয়েছে।নানুও খাওয়া শেষ।
আমি রাতের কথা চিন্তা করে কিছু খেতে পারছি না। গলা দিয়ে খাবার নামছে না। শুধু হাত দিয়ে খাবার নেড়ে যাচ্ছি।
রান্না শেষ করে মামি এসে আমার পাশে বসলেন। আমার হাতের নিচে থেকে প্লেট নিয়ে খাবার মাখতে লাগলে,
– মেঘা আম্মু, তোমার কি মন খারাপ? (ত্বকির মা)
আমি ঠোঁট-ওল্টে বলে উঠলাম,
– না তো মামি।(মেঘা)
মামি আমার মুখে খাবার পুরে দিয়ে বলে উঠলেন,

– আমি কি তোর মামি হই? তুই কি কোনদিন ও আমাকে আম্মু বলবি না। (ত্বকির মা)
মামির কথা শুনে আমি বাচ্চাদের মতো বলে উঠলাম,
– সরি মামি থুক্কু আম্মু।এখন থেকে তোমাকে আম্মু বলে ডাকব।(মেঘা)
আমাদের কথার মাঝখানে আমার আম্মু এসে বলে উঠলো,

– মেঘা, তুই তো তোর মাকে ভুলে গিয়েছিস। একবারও আমার সাথে দেখা করিস না। তুই কি এখনো আমার উপর অভিমান করে আছিস? (মেঘার মা)
আমি আম্মু কথা শুনে ছোট করে উওর দিলাম,
– না। (মেঘা)
আমি আর আম্মু দিকে তাকালাম না। মামি খাইয়ে দিতে লাগলো চুপচাপ খেতে লাগলাম।
খাওয়ার মাঝে হঠাৎ ভাইয়া এসে হাজির। পরনে তার সাদা শার্ট ব্লাক প্যান্ট। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভাইয়া কোথাও যাবে, মনে হচ্ছে হসপিটালে যাবে। কিন্তু আমি বুঝলাম না যে কখন সে রুমে গিয়ে রেডি হলেন। সারারাত কোথায় ছিলেন।

ত্বকি ভাইয়া চুপচাপ গম্ভীর মুখ করে চেয়ার টেনে বসে পড়লেন। মামি তাকে খাবার বেড়ে দিয়ে গেলেন।
ভাইয়া খাবারের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ খাচ্ছে।মুখে তার রাগী ভাব। আমি একপল তার দিকে তাকাতেই রাতের কথা মনে পড়ে গেল। ভিতরে অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল।
হঠাৎ ভাইয়া খাওয়ার মাঝে বলে উঠলো,
– মেঘা, রেডি হ।(ত্বকি)
কথাটা শুনেই বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। ভাইয়া কি আজকেই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। তাই কি রেডি হতে বলছেন।
মামি আমাকে বললেন,
– যা মেঘা রেডি হয়ে আয়। (ত্বকির মা)
মামির কথা মতো রুমে চলে এসে রেডি হয়ে নিলাম। প্রচুর ভয় হচ্ছে। মাথাটা একদম কাজ করা বাদ দিয়ে দিয়েছে।

গাড়িতে উঠেছি পাঁচ মিনিট হলো।ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। ভাইয়া এক মনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। মুখে কোন কথা নেই।

হসপিটালের সামনে গাড়ি থামাতেই আমার ভয়টা একটু হলেও কমে গেল। ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে গম্ভীর গলায় আমাকে বলে উঠলো,
– নামবি? নাকি অন্য কিছু করব। (ত্বকি)
ভাইয়া কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নামলাম।
ভাইয়ার পিছু পিছু হাটতে শুরু করলাম।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৫

হসপিটালের ভিতরে ঢুকতেই সবাই আমার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রইল।

ভাইয়া আমাকে তার চেম্বারে নিয়ে এলো। আমি রুমটার এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি। অতিরিক্ত হাড়ে আমার হাত পা কাঁপছে।

ভাইয়া টেবিলের ড্রয়ার কি যেন একটা পেপার বের করে আমার হাতে দিল। ভয়টা যেন আরো দ্বিগুন বেড়ে গেল।প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। পেপারটা দিকে না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলাম,
– ভাইয়া এটা কি ডিভোর্স পেপার?(মেঘা)
কিছুক্ষণ ভাইয়া কোন আওয়াজ না পেয়ে আস্তে করে চোখ খুলল। দেখলাম ভাইয়া আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ ভাইয়া আশ্চর্য কান্ড করে বসল। আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল ।রাগী কন্ঠে বলতে লাগল,
– কি ভেবেছিস তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিব?স্টুপিড, কাগজের দিকে তাকা। (ত্বকি)
আমি কাগজর দিকে না তাকিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
– ডিভোর্সের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। এই ত্বকির হাত থেকে তোর মুক্তি নেই। দরকার পড়লে তোকে একশ বার বিয়ে,, (ত্বকি)

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব ৭