তোলপাড় গল্পের লিংক || শান্তনা আক্তার

তোলপাড় পর্ব ১+২
শান্তনা আক্তার

“নিজের বেস্টফ্রেন্ডের বাসরঘরে বউ সেজে বসে আছে রিমি।কিছুক্ষণ আগে ওর বান্ধবী স্রুতির জায়গায় ওর বিয়ে হয়েছে।স্রুতিকে তার প্রেমিকের সাথে পালাতে সাহায্য করার শাস্তিস্বরুপ ওকেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে।রিমি ওর বাবাকে ছোটবেলা থেকে ভয় পায়।তাই বাবার এক ধমকেই দুমদুমিয়ে বউ সেজে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে রিমি।আগাম ঝড়ের আভাস পাচ্ছে ও।দরজা লাগানোর শব্দ শুনে তীব্র ভয়টা বিশাল আকার ধারণ করে নিয়েছে ওর ভেতর। ফ্লোর কাঁপানো শব্দ করে কেউ একজন এগোতে লাগলো রিমির দিকে।রিমি বেশ বুঝতে পারছে লোকটি কে হতে পারে।বেচারি ঘোমটার নিয়ে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।ঘনঘন ঢোক গিলছে আর আল্লাহ নাম জোপে যাচ্ছে।

-নামো আমার বিছানা থেকে!
হুংকার দিয়ে বলায় রিমি চট করে মাথার ঘোমটা খুলে পিট পিট করে তাকায়।সামনের লোকটির রাগান্বিত চাহনি দেখে ভয়ে কেঁদেয় দেয় রিমি।কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না আহসান।আমি আসলে…রিমি পুরো কথা শেষ করার আগেই আহসান রিমির কথার মাঝে বলে,
-আমি সব জানি।লোভি মেয়ে তুমি।নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তুমি স্রুতিকে পালাতে সাহায্য করেছো,যাতে আমাকে বিয়ে করতে পারো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-না বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে বিয়ে করার জন্য কিছু করিনি।আমি স্রুতিকে পালাতেও সাহায্য করিনি।শুধু আমি জানতাম ও পালাবে।কিন্তু আমি বন্ধুত্বের খাতিরে বলিনি কাউকে।বরং আমি ওকে বারবার বলেছি ও যেন এমন কিছু না করে।
-শাট আপ!যতসব ছোটলোক,লায়ার,থার্ডক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে।ধমকের সুরে বলায় রিমি দু পা গুটিয়ে বুকের সাথে লাগিয়ে নেয়।আহসান খাটে লাথি মেরে বলে,আমি কি বলেছি কানে যায়নি!এবার রিমি উচ্চস্বরে কেঁদেই দেয়,এ্যাআয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া,,,
-এই থামো। ন্যাকাকান্না কাঁদতে হবে না। worthless মেয়ে কোথাকার।যাও সরো আমার চোখের সামনে থেকে। I say get out…আমি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তোমার মুখ যেন না দেখি বলে কাবার্ড থেকে একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।

(পরিচয়ঃআহসান তালুকদার হচ্ছে গল্পের হিরো।আহসান Australia থেকে ডাক্তারি পড়া শেষ করে বিডিতে ব্যাক করে।কিছুদিন আগে বাবার হসপিটালে জয়েন করেছে।এমবিবিএস বাবার একমাত্র ছেলে সে।আহসানের বাবার নাম রঞ্জিত তালুকদার এবং মায়ের নাম অপা তালুকদার।অপা হাউজওয়াইফ।ছেলের পেছনেই সারাদিন কেটে যায় ওনার।স্রুতি আহসানের ফুপির মেয়ে।স্রুতি আমজাদ শেখ এবং রুপা শেখের একমাত্র মেয়ে।আহসান ও স্রুতি কাজিন হওয়ায়, সেই সুত্রে ওদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।স্রুতি আর রিমি একে অপরের বেস্টফ্রেন্ড।ওরা সবসময় একই কলেজ ও ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছে।রিমিরা দু বোন।বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।আহসান ও স্রুতির মতো ওরা তেমন বিত্তবান নয়।রিমির বাবা নাজমুল হোসেন একজন পাবলিক কলেজের টিচার।ওর মা আম্বিয়া বেগমও পাবলিক হাই স্কুলের টিচার।রিমির বাবা মা দুজনই রিটায়ার করেছেন।রিমি মাস্টার্স কমপ্লিট করার পর জব করতে চেয়েছিল।এরই মধ্যে এসব হয়ে গেল।)

আহসান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে কোনো দিকে না তাকিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।সকালে আহসানের ঘুম ভাঙে কারো গোংরানির শব্দ শুনে।আহসান এদিক সেদিক তাকালো কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না।তারপর যেদিক দিয়ে আওয়াজ ভেসে আসছে সেদিকে পা বাড়ালো।আস্তে আস্তে বেলকনির দিকে যায় আহসান।সেখানে গিয়ে দেখে বেলকনির এক কোণে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে রিমি।কাঁপছে আর মুখ দিয়ে শব্দ করে যাচ্ছে অনবরত।মুখ যেন রক্তশুন্য হয়ে গেছে রিমির।ঠোঁটের লিপ্সটিক ছেতরে গেছে।কাজলটাও চোখ বেয়ে অন্যত্র লেপ্টে আছে।আহসানের কাছে রিমিকে উম্মাদের মতো লাগছে।রিমিকে এমন পরিস্থিতিতে দেখে মায়াও হচ্ছে।ও রিমির কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে।তারপর রিমিকে ডাক দেয়,

-এই মেয়ে শুনতে পারছো!তুমি এখানে কেন শুয়ে আছো?এই মেয়ে, এই বলে রিমির গালে হাত রাখতেই আহসান বেশ চমকে উঠে।আর বলে,ওহ নো!এর তো খুব ফিভার হয়েছে।অসহ্যকর।এখন যদি বাপি শোনে উনি বারান্দায় শুয়ে জ্বর বাধিয়েছে,তাহলে আমি শেষ।এই মেয়ে দেখছি বিপদের পর বিপদ খাড়া করে দিচ্ছে।শিট বলে রিমিকে পাজকোলে নিয়ে নেয়।তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বেড সাইড ড্রয়ার থেকে থার্মোমিটার বের করে রিমির মুখে ধরে।কিছুক্ষণ পর থার্মোমিটার চেক করে বলে,ওএমজি!এনার তো ১০২° ফিভার!

এনার তো খুব জ্বর এসেছে!এখন আমি কি করি?
খুব চিন্তায় পড়ে যায় আহসান।তারপর ওয়াশরুম গিয়ে এক বালতি পানি নিয়ে আসে।নিজের রেইনকোর্ট টা বের করে রিমির মাথার নিচে রেখে পানি ঢালতে শুরু করে।
– জাস্ট এনাফ ইজ এনাফ! সকাল সকাল ঘুমের বারোটা বাজিয়ে কিসব করতে হচ্ছে আমায়!একে বারে নেওয়া যাচ্ছে না।ডিজগাস্টিং।
কয়েক মিনিট পানি ঢালার পর সব কিছু সরিয়ে একটা রুমাল ভিজিয়ে রিমির মাথায় দিয়ে শাওয়ার নিতে চলে যায় আহসান।ফিরে এসে দেখে রিমি নড়েচড়ে উঠেছে।

-Don’t wake up,keep rest..
রিমি চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে উঠে বসে।তাই দেখে আহসান অগ্নিমুর্তি হয়ে কথার বাণ দিয়ে এ্যাটাক করে।
-এই তুমি কি কানে বধির?আমি কি বলেছি বঝোনি?আমি রেস্ট করতে বলেছি সো ঘুমোও।
ধমক খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে রিমি।আহসান এসে রিমির হাতে থার্মোমিটার দিয়ে বলে,চেক করো এখন জ্বর কতখানি।রিমি মুখে থার্মোমিটার ঝুলিয়ে নিলো।১০ মিনিট হয়ে গেল তাও বের করলো না।আহসান কপাল ঘুচিয়ে জিগ্যেস করে,আমি কি মুখে গুজে বসে থাকতে বলেছি!জ্বর মাপতে বলেছি আমি।

রিমি ভাঙা গলায় বলে,আসলে আমি ভেবেছিলাম আপনি বকা দিবেন তাই বের করিনি।
-তোমার তো দেখছি গলাটাও বসে গেছে।প্রথমে আদা দেওয়া চা খেতে হবে।এখন বলো জ্বর কতখানি?
রিমি থার্মোমিটার চেক করে বলল, ১০০° আছে এখন।
-কিছুটা কমেছে তবে পুরোপুরি নয়।এরই মাঝে দরজা খটখটানির শব্দ হয়।রিমি উঠে যেতে নেবে তখন আহসান বলে ওঠে,আস্তো বেকায়দার মেয়ে তো তুমি!আমি যখন দাঁড়িয়ে আছি, দরজাটা আমিই খুলছি ওকে?

রিমি ভয়ে মাথা নিচু করে নেয়।আহসান গিয়ে দরজা খুলতেই কাজের মেয়ে রুমি সাইড কেটে ডিরেক্ট রুমে ঢুকে যায়।
-গুড মানিং নুতান ভাবি।ছোটসাহেবের জন্য কফি আর আপনার জন্য চা বানাইয়া আনছি।
রিমি হালকা হেসে বলে,ওটা গুড মানিং নয়,গুড মর্নিং হবে।
-ওই একটা হইলেই হইলো।সেম টু সেম।আপনি কি চা খান?নাকি কফি নিয়া আসমু?
-না থাক,আমি চা কফি কোনোটাই খাইনা।
-ওমা গো!আপনার হাতে জ্বর মাপানি ক্যান?জ্বর আইছিলো নাকি?বলেই হেসে দিলো।
আহসানের ক্রোধ এবার রুমিকে গ্রাস করলো,এতো গল্প কিসের?জ্বর এসেছে এতে হাসার কি হলো?যাও গিয়ে একটা রঙ চা নিয়ে এসো।

-আর এই দুধচা ডা কি করবো?
-আমার মাথায় ঢালো।
রুমি মহল বুঝতে পেরে চুপচাপ দুধচা টা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।রুমি চলে গেলে আহসান রিমিকে বলল,তুমি চেঞ্জ করে নাও আর পারলে ফ্রেশ হয়ে আসো।রিমি এক দিকে মাথা কাত করে সম্মতি জানালো।তারপর এক কদম বাড়াতেই ওর মনে পড়ে যে ওতো কোনো কাপড় নিয়ে আসেনি এখানে।রিমিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহসান ধমক দিয়ে বলে,দাঁড়িয়ে আছো কেন?
-আ আ আসলে আমার তো কোনো জামা কাপড় নেই এখানে।গতকাল যেই ড্রেসটা পড়ে এসেছিলাম সেটা আপনার মায়ের রুমেই ফেলে এসেছিলাম।কারণ,,

-থাক বুঝেছি।তুমি এইসব ভাড়ি গহনা গুলো খুলে ওয়াশরুমে যাও আমি মমকে গিয়ে বলছি কিছু একটা ব্যবস্থা করতে।
-কোথায় দেখি তোমার নাকি জ্বর আসছে!
এক ঝাক আতংক নিয়ে অপা রুমে প্রবেশ করলো।
-মম আমি তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম।ওরতো কাপড় নেই এখানে।
-আমি রুমিকে দিয়েছি মাত্র, ও নিয়ে আসছে।দেখি মেয়েটার কি হাল হয়েছে।একি!তোমার মুখের এই অবস্থা হয়েছে কেন?জ্বর আসলো কিভাবে!

-খালা আপনি যে কি কন!নতুন বউয়ের জ্বর তো আইবোই।(পেছন থেকে রুমি বলে)
আহসান কিছু বলার আগেই অপা চোখ রাঙিয়ে বলে,তোকে কিছু বলতে হবে না।শাড়ি গুলো রেখে গিয়ে কাজ কর।
-জ্বি খালা বলে চলে যায়।
-কি হলো! বলো জ্বর কিভাবে আসলো?
রিমি আহসানের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,আসলে কাল রাত থেকে পেটে কিছু পড়েনি তাই হয়তো জ্বর এসেছে।
-ইশ,কাল এতো ঝড় ঝামেলার মধ্যে তোমাকে খাবার দেওয়ার কথাই ভুলে গিয়েছিলাম।তুমি ফ্রেশ হও আমি রুমিকে দিয়ে তোমাদের খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।

-নো মম,আমি এখনি হসপিটালে যাচ্ছি একটা ইমার্জেন্সি পড়ে গেছে।ওখানেই ব্রেকফাস্ট করে নেব।
-ও,ঠিক আছে।আর তুমি একটু তাড়াতাড়ি করো নইলে অসুখ সারবে না।জ্বর বসে যাবে।এটা কিন্তু ডাক্তারদের বাড়ি,রুলস রেগুলেশন্স খুব টাইমলি মেইনটেইন করে চলতে হবে।
রিমি মাথা কাত করে বলে,ওকে।
-গলাটাও দেখছি বসে গেছে।আমি রুমি কে দিয়ে আদা চা পাঠাচ্ছি বলে চলে যায় অপা।
রিমি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখে আহসান আয়নার সামনে চুল ঠিক করছে।আহসান আয়নার ভেতর থেকে দেখলো রিমি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

-এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?খাবার দিয়ে গেছে খেয়ে মেডিসিন নিয়ে নিন।আমি প্রয়োজনীয় মেডিসিন বিছানার উপর রেখে দিয়েছি,এই বলে ঘড়ি পড়তে পড়তে চলে যাচ্ছিলো তখন রিমি আহসানকে আটকে নেয়।
-আপনি তো টাইটা ঠিক করে বাঁধলেন না।
-মম বেঁধে দেবে।
-আমি পারি যদি কিছু মনে না করেন আমি বেঁধে দেই!
-কোনো দরকার নেই।বেশি বাড়াবাড়ি করতে আসবেন না এই বলে চলে যায় আহসান।

তোলপাড় পর্ব ৩+৪