প্রেম নেশা সিজন ২ শেষ পর্ব 

প্রেম নেশা সিজন ২ শেষ পর্ব 
শান্তনা আক্তার

ডাক্তার কে দেখা মাত্র মেঘ আর লোকটি ছুটে আসে।দুজনেই হুরমর করে এসে শান্তনার কথা এটা ওটা আস্ক করতে লাগলো।ডাক্তার তাদের শান্ত হতে বললো।
দেখুন সাইলেন্ট থাকুন একটু এটা হসপিটাল। পেসেন্ট প্রেগন্যান্ট অবস্থায় আছে আরেকটু দেড়ি হলে পেসেন্ট ও গর্ভের শিশুটি কাউকেই বাঁচানো যেত না।আল্লাহর রহমতে এখন তারা দুজনেই ভালো আছে।
ডাক্তারের কথা শুনে লোকটি উচ্চস্বরে কেদে ওঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,

আমার মেয়েটার এ কি অবস্থা করলাম আমি বাবা হয়ে।আজ যদি ওর কিছু হয়ে যেত তাহলে আমি সারা জীবন পাপী হয়ে থাকতাম।

আপনি পেসেন্টের বাবা হন?
ডাক্তার জিল্লুর রহমানকে জিজ্ঞেস করলেন।

জ্বি আমি ওর পাষাণ বাবা।

তারপর মেঘকে জিজ্ঞেস করলেন,
তো আপনি কি হন পেসেন্টের?
মেঘ এতক্ষণ ঘোড়ের মধ্যে আছে শান্তনার প্রেগন্যান্সির কথা জানতে পেরে, এদিকে ডাক্তার মেঘকে যে কিছু জিজ্ঞেস করছে সেদিকে মেঘের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই।মেঘের থেকে কোনো রেসপন্স না আসায় জিল্লুর রহমান বলে ওঠে,

উনি আমার মেয়ের স্বামী। আমার জামাই।
জিল্লুর রহমানের মুখে আমার জামাই কথাটা শুনে মেঘ ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তো আপনি আপনার প্রেগন্যান্ট ওয়াইফকে এভাবে মেইন রোডে কেন ছেড়ে দিয়েছেন?আপনার তো বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত ছিলো।

আসলে আমি জানতাম না আমার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট আর ওকে তো আমি কলেজে ছেড়ে এসেছিলাম।শান্তনা মেইন রোডে কেন গিয়েছে তা আমি জানি না।

তাহলে পেসেন্টের জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত ওয়েট করতে হবে আপনাদের।আর আপনি কেমন হাসবেন্ড! আপনার ওয়াইফ দু মাসের প্রেগন্যান্ট আর আপনি নাকি জানেনই না?

আমার ভুল হয়েছে ডক্টর। সরি।

সরি আমাকে নয় আপনার ওয়াইফকে বলবেন বলে ডাক্তার চলে যায়।
প্রায় এক ঘন্টা পর শান্তনার জ্ঞান ফেরে।শান্তনার জ্ঞান ফেরার খবর পেয়ে সবাই একসাথে ক্যাবিনে হামলা বসাতে নেয় কিন্তু নার্স একজন একজন করে যেতে বলায় সবার আগে জিল্লুর রহমান ক্যাবিনে প্রবেশ করেন।জিল্লুর রহমানকে দেখা মাত্র শান্তনা মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে নিয়ে যায়।

এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলি যে মা!বাবার দিকে তাকাবি না?

তুমি কেন এসেছো এখানে?আমি চাইনা আমার জন্য তুমি উল্টো পাল্টা কিছু করে বসো।তাই তুমি চলে যাও এখান থেকে।আমি জানি তুমি আমার দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এসেছো,মন থেকে নয়।

নারে মা,আমি যে আর পারছিলাম না তোর থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে।আমি নিজ থেকেই তোকে আর মেঘ বাবাকে কাছে টেনে নিতাম।আমি সব রাগ অভিমান ভুলেও গিয়েছিলাম।তোর মাকেও বলেছি ২-১ দিনের মধ্যে তোর শ্বশুর বাড়ি যাব কিন্তু আল্লাহর কি চমৎকার ইচ্ছে দেখ,তোর এক্সিডেন্ট হলো তাও কিনা আমার হাতে।আমি কতটা নিষ্ঠুর বাবা দেখেসিস তো!
শান্তনা ওর বাবার দিকে চেয়ে বললো,

না বাবা তুমি নিজেকে দোষ দিওনা।আমারই রাস্তার মধ্যে দৌঁড়ানো উচিত হয়নি।

তুই কেন ওভাবে দৌঁড়ালি মা?

পরে বলবো বাবা,আগে একটু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাওতো।
জিল্লুর রহমান মেয়ের মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।তারপর নিজের চোখের পানি মুছে বললেন,

ইশ আমি কতক্ষণ ধরে এখানে আছি! তোর মা আর সাফিন খুব রাগ করছে বোধয়।আমাকে বলে দিয়েছিল আমি যেন তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসি।আচ্ছা মা আমি আবার একটু পরে আসছি এখন তোর মা আর ভাই তোর সাথে দেখা করবে তারপর জামাই ওতো দেখা করবে।খুব ভেঙে পড়েছে ছেলেটা।
জিল্লুর রহমান বেরিয়ে আসলে সাফিন আর মিলি বেগম গিয়ে শান্তনার সাথে কথা বলতে লাগলো।এদিকে মেঘ যে সেই কখন থেকে ওর পিচ্চিকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে সেটা কেউ বুঝতে না পারলেও জিল্লুর রহমান বেশ বুঝতে পারে।তাই উনি মিলি বেগমকে বেরিয়ে আসতে বলেন শান্তনার ক্যাবিন থেকে।মিলি বেগম আর সাফিনকে বেরিয়ে আসতে দেখে মেঘ তরিঘরি করে শান্তনার ক্যাবিনে প্রবেশ করে।কিন্তু শান্তনার দিকে চোখ পড়তেই মুখ শক্ত করে নেয় রাগে।তাই দেখে শান্তনা বলে ওঠে,

বাব্বাহ এতো রেগে আছেন আপনি আমার উপর?

কোথায় রেগে আছি? আমি রাগ করলেও বা তোমার কি যায় আসে।

এভাবে বলছেন কেন?

তো কিভাবে বলবো?তুমি আগে বলো রাস্তায় দৌঁড় লাগিয়েছিলে কেন?তুমি সেখানে গেলেই বা কেন?

তুমি আগে শান্ত হয়ে বসো আমি তোমাকে সব এক এক করে বলছি।তবে সব শুনে তুমি কিন্তু আমার উপর রাগ করতে পারবে না বলে দিলাম।

আচ্ছা বলো দেখি।

কিছুদিন ধরে আমার ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসছিলো।গতকাল আমি জানতে পারি,,,,,,শান্তনা মেঘকে সব কথা এক এক করে খুলে বললো।সব শুনে মেঘ খুব বেশি রেগে যায় শান্তনার প্রতি।

তুমি আমাকে একটুও বিশ্বাস করতে পারলে না ?তুমি কিনা ওই কুশালকে বিশ্বাস করলে!

না,আমি ওকে বিশ্বাস করিনি কিন্তু ওই মেয়েটার কথা বললো তাই ভাবলাম মেয়েটার কাছ থেকেই নাহয় শুনবো। দেখি কি বলে মেয়েটা এই ভেবে গিয়েছিলাম কিন্তু কুশাল যে এতটা জঘন্য প্লান বানিয়েছিলো তা সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলো না,বিশ্বাস করো।

আজ তোমার ওই ভুলটার জন্য কি হয়ে যেত ভেবেছিলে একটাবার?আমার সাথে শেয়ার করলে কি এমন হতো?

সরি আমাকে মাফ করে দাও।দেখো আমার তেমন লাগেনি।

লাগেনি তাই দু মাস রেস্ট করতে বলেছেন ডক্টর।তুমি চিন্তা করেছো তো কতটা খারাপ কিছু হয়ে যেত আজ?

কিছু হয়নি তো।আচ্ছা,তুমি আমার দুর্ঘটনার খবরটা কার থেকে শুনেছো?

আমার ফ্রেন্ডের থেকে।যার গাড়ি আমার শ্বশুর আব্বু চালায় ও বলেছিলো।আমি খবরটা পেয়ে প্রায় দিশেহারা হয়ে যাই।জরুরি মিটিং ফেলে চলে আসি।

ওও,এখন তুমি কি দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি আমার পাশে এসে বসবেও?

দাঁড়াও আমি একটা কাজ করে নেই বলে মেঘ পুলিশকে ফোন করে কুশালের সম্পর্কে সব বলে আর ওকে খুব কড়া শাস্তির দেওয়ার জন্য বলে দেয়।পুলিশের সাথে কথা বলা শেষ করে মেঘ একটা চেয়ার টেনে শান্তনার পাশে গিয়ে বসে।

ঠিক করেছেন।আর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ গো।

কেন?

আমাকে জোড় করে বিয়ে করার জন্য।

তাহলে তো তোমাকে আমায় আরও ধন্যবাদ দেওয়া দরকার।

কেন,কেন?

জানো, তুমি তো আমার প্রপোসাল ফিরিয়ে দিতে বারবার।আর তার থেকে বড় কথা ওই কুশালের সাথে ঘুরে বেড়াতে। কলেজ যাওয়া আসা করতে একসাথে।একদিন আমার চোখে পড়ে যায় সেটা তারপর থেকে আমি রোজ তোমায় ফলো করতাম।তোমাদের আশে পাশে একটা থাকতাম আর সব শুনতাম।কিন্তু তুমি আমায় দেখতে না।তবে যেদিন তোমরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলে সেদিন আমার মাথা আর কোনো কাজ করেনি।কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই তুমি না চাইতেও আমি তোমাকে জোড় করে বিয়ে করে ফেলি।কি করবো বলো প্রথম যেদিন আমার শ্বশুর আব্বুর ফোনে তোমার পিক দেখি তখন থেকেই আমি তোমার প্রেমে পড়ে যাই।আর তখন থেকেই তোমায় আমার বউ বানিয়ে ফেলি।

আর তখন থেকেই আমাকে বিরক্ত করতে শুরু করে দেন।কিন্তু ভালোই হলো।নইলে আজ এই দিনটা দেখতে পেতাম না।ধন্যবাদ।

আচ্ছা এখন আমার বউ,বেবিটা আমার থেকে কি চায় তাই শুনবো।

বেবি মানে?আমাকে আপমার বেবি মনে হয় বুঝি?

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬

হুম,তুমিতো বেবিই।আমার পিচ্চি।কিন্তু আমি তোমার কথা বলিনি।

তো কার কথা বলেছেন?
মেঘ শান্তনার পেটে হাত রেখে বলে,

এখানে যে আছে তার কথা বলেছি।

মানে আমি!খুশিতে শান্তনার চোখ ভরে আসলো।

হুম,তুমি মাম্মি আর আমি পাপা হতে চলেছি।

এই জন্যই কদিন ধরে আমার শরীর ভালো লাগছিল না।

সরি আমি তোমার কেয়ার করতে পারিনি সেভাবে।তোমাকে ডক্টরের কাছেও নিয়ে যাইনি। কাজ কাজ করে আমি আমার ফ্যামিলির খেয়াল রাখিনি।কিন্তু এখন থেকে তা হবে না।আমি আমার পিচ্চি বউ আর অনাগত বেবির খুব খেয়াল রাখবো।এখন থেকে কাজ কমিয়ে দেব আর সব সময় আমার বউয়ের সেবা করবো।

আপনার সেবা মানে যতসব দুষ্টামি আমি খুব জানি।

হুম তাতো একটু করবোই নইলে আমার বেবিটা বলবে পাপা খুব বাজে আমার মাম্মিকে একটু ও আদর করেনা।তো কি চাও বলে ফেল।

শুধুই আপনাকে চাই।দেবেন নাকি?

হুম অবশ্যই,
বলেই মেঘ শান্তনাকে ওর দু বাহুর সাথে জড়িয়ে নেয়।শান্তনা সব ব্যাথা ভুলে গিয়ে মেঘের বুকে শান্তির খোঁজে তলিয়ে যায়।এখানেই যেন ওর সকল ব্যাথার ঔষধ মেলে।

( লেখাঃ শান্তনা আক্তার ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ১ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন