প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ২৩+২৪

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ২৩+২৪
শান্তনা আক্তার

শান্তনাকে দৌঁড়ে আসতে দেখে মেঘ প্রথমে একটু অবাক হলেও পরে ভাবে হয়তো ওর প্লান কাজে দিয়েছে।তাই ভেবে মেঘ মুখে মুচকি হাসির রেখা টেনে শান্তনার সামনে গিয়ে বলে,
কিছু বলবে কি?

আপনি নিজেকে খুব মহান ভাবেন তাইনা?খুব মহান!
শান্তনার থেকে এরকম একটা উদ্ভট প্রশ্ন শুনবে বলে মেঘ হয়তো আশা করেনি।মেঘ এর কারণ জিজ্ঞেস করবে কি শান্তনা মেঘকে আটকে নেয়,
-চুপ করে থাকবেন।একটাও কথা বলবেন না।
আপনি খুব দয়ালু তাইনা!আপনি কি মনে করেন নিজেকে?বলুন কি মনে করেন নিজে কে?চুপ করে আছেন কেন?বলুন।

তুমি বলতে দিলে তো বলবো।নিজেই চুপ করে থাকতে বলছো আবার বলছো চুপ করে আছি কেন?আজব!

আচ্ছা এখন বলুন।

কি বলবো তাই বলো?আরে তুমি বলছো টাকি সেটা তো বুঝতে দাও আগে আমাকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কেন ভুল কি বলেছি হুম?আচ্ছা আপনি যে এটা করেছেন তা আমাকে একটাবার বলতে তো পারতেন।আপনি জানেন না আমি এটা নিয়ে কতটা টেনশনে ছিলাম।

কোনটা নিয়ে?আর আমি কি বলিনি?প্লিজ ক্লেয়ার করে বলো।

আপনি যে আব্বুকে জব দিয়েছেন আপনার বন্ধুর কোম্পানিতে সেটা আপনি আমার থেকে কেন লুকিয়েছেন?আপনার কি ধারণা আছে আপনি আমাকে কতটা টেনশনে রেখেছেন এতদিন!আব্বু জব পেল না পেল সেটা নিয়ে খুব টেনশনে ছিলাম,সেটা কি আপনি জানেন?

মেঘ শান্তনার মুখে এই কথাটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা।মেঘ অবাক হয়ে শান্তনার দিকে চেয়ে বললো,
তুমি এসব কিভাবে জানলে?

আপনার ফোনের কল রেকর্ডিং থেকে।আজ যদি আপনার ফোন না ঘাটতাম তাহলে তো জানতেই পারতাম না এতো বড় কথাটা।আজকে অনেক বড় একটা চিন্তা আমার মাথা থেকে বিদায় নিয়েছে।নইলে এটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে তো আমার মাথার সব চুল পেকে যেত।আর তার জন্য দায়ী হতেন শুধুমাত্র আপনি।

তুমি আমার ফোন কেন ঘেটেছো?এতো সাহস কি করে হয় তোমার!

আমার সাহস হবেনা তো কার হবে?ওই টিনা শাকচুন্নি টার?ওকে একটাবার কাছে পাই ওর চুল ছিড়ে চিংড়ি মাছের সাথে রান্না করবো।আর সেই রান্নাটা আপনাকে খাওয়াবো অন্য মেয়ের সাথে ডেট করার শাস্তিস্বরূপ।

তুমি তো আমাকে হাসবেন্ড বলে মানো না তাহলে তোমার জেলাস কেন হচ্ছে আমি অন্য মেয়ের সাথে ডেট করতে চাওয়ায়?উল্টে তোমার জন্য তো সুবিধা হলো।কারণ মুক্তি পাবে যে আমার থেকে।

আর একবার যদি এই কথাটা আপনার মুখ থেকে শুনি তো আমি বারান্দা দিয়ে ঝাপ দিয়ে নিজের জীবন দিয়ে দেব বলে দিলাম।

পাগলের মতো এসব কি বলছো?তুমি ঝাপ দিয়ে জীবন দিলে আমার জীবন কি পৃথিবীতে থাকবে হুম?আমি ওতো শেষ হয়ে যাব।

তাহলে মুক্তির কথা বলবেন না আর কোনোদিন।আমি চাইনা আপনার থেকে মুক্তি।কারণ আপনার সাথে যে আমার অনেক হিসেব বাকি আছে।তবে আপনি যদি ওই টিনাকে নিয়ে ভালো থাকতে চান,তাহলে আমাকে মুক্তি দিতে পারেন।

কিসের টিনা হুম,আমার লাইফে শুধু একটা মেয়েরই দখল আছে।আর সে হলো আমার পাগলী বউটা বলে দু বাহু ছড়িয়ে শান্তনাকে মেঘ ওর বুকের জমিনে প্রবেশের জন্য আমন্ত্রণ জানায়।শান্তনা অনুমতি পেয়ে এক লাফে মেঘের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।শান্তনা আর মেঘ দুজনই আজ পরম শান্তির সহিত প্রিয় মানুষটার অনুভূতি গুলোকে খুব কাছ থেকে অনুভব করছে।মেঘ শান্তনার থুতুনিতে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে তুললো।তারপর ধিরে ধিরে শান্তনার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।এক পর্যায়ে মেঘ শান্তনার ঠোঁটের মধ্যে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।প্রায় ২০ মিনিট ধরে মেঘ শান্তনার ঠোঁটের স্বাদ নিতে থাকে।যখন দেখলো শান্তনা হাপিয়ে উঠেছে তখন গিয়ে ছেড়ে দেয় শান্তনাকে।দুজনে খুব জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।দুজনের নিশ্বাস একে অপরের নিশ্বাসের সাথে বারি খাচ্ছে।মেঘ শান্তনার লজ্জামাথা মুখের দিকে চেয়ে অজানা এক ঘোড়ের মধ্যে চলে যায়।আচমকাই মেঘ শান্তনাকে পাজকোলে নিয়ে নেয়।তারপর ওরা কি করেছে তা আর জেনে আমাদের কাজ নেই।আমরা বরং আরেকটু সামনের দিকে যাই।

মেঘ শান্তনার সোনার সংসার খুব সুখেই কাটছিল কিন্তু বেশ কদিন ধরে শান্তনার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসছে।দিনে অন্তত ৫ বার কল আসবেই।শান্তনা খুব বিরক্তবোধ করে বারবার কল আসায়।একটা নাম্বার ব্লক করলে নিউ আরেকটা নাম্বার থেকে কল আসা শুরু হয়ে যায়।আননোন নাম্বার দেখে শান্তনার রিসিভ করার সাহস ও হয়না।মেঘকে যে বলবে সেই সাহস ও হয়ে উঠছে না শান্তনার।কারণ শান্তনার মনে ভয় ঢুকে আছে মেঘ যদি সব শুনে রেগে যায় সেই নিয়ে।তাই মেঘ বাসায় আসলে ফোন সাইলেন্ট করে রাখে শান্তনা।এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে শান্তনার শরীর ভেঙে পড়েছে কদিন ধরে।খুব শরীর লাগছে কদিন ধরে কারণ ওর মনের মধ্যে যে এক প্রকার অশান্তি বিরাজ করছে।মাঝে মাঝে মাথা ঘোড়ে আবার কখনো মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হয়।শান্তনা ওর বান্ধবীদের এসব কথা খুলে বলে।সব শুনে বান্ধবীরা শান্তনাকে কথা বলতে বলে সেই অজানা মানুষটির সাথে।শান্তনা ওদের কথায় সায় দিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে যায়।একে একে বাসায় সবাই চলে যায় কিন্তু শান্তনা আর রিমি বাদে।শান্তনা রিমিকেও চলে যেতে বলে কিন্তু রিমি বলে দেয় যে ও আজ শান্তনার সাথে কিছুক্ষণ থাকবে।শান্তনা আর রিমি এটা ওটা বলে গল্প করছিলো এমন সময় রিমি বলে ওঠে…..

শান্তনা তুই এখনো ওই লোকটার সাথে কিভাবে থাকছিস বলতো?
রিমির মুখে এমন প্রশ্ন শুনে শান্তনা ওর কপাল ঘুচিয়ে নেয়।তারপর পালটা প্রশ্ন করে,

কোন লোকটার সাথে?

তোর হাসবেন্ড মেঘের সাথে তুই কিভাবে থাকছিস বলতো?এক ছাদের নিচে এতোগুলো মাস তাও আবার অপছন্দের মানুষটার সাথে!কিভাবে পারছিস তুই?অসহ্য লাগছে না?বাবা,আমি হলে তো কবেই আমার বিএফের সাথে পালিয়ে যেতাম।
একনাগাড়ে বলে ওঠে রিমি।কথাগুলো বলে শান্তনার দিকে তাকাতেই রিমি প্রচন্ড বেগে ভয় পেয়ে যায়।কারণ শান্তনা রক্তচক্ষু নিয়ে রিমির দিকে চেয়ে ছিলো।এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল যে রিমি ভয় না পেয়ে কুল পেলনা।এভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর শান্তনা ক্রুদ্ধ সুরে বলে ওঠে,
তুই কে আমার হাসবেন্ড এর সম্পর্কে এরকম কুরুচিসম্পন্ন কথা বলার?তুই কে আমার হাসবেন্ড কে জাজ করার?বল তুই কে?

এভাবে রেগে যাচ্ছিস কেন?আমি তো ভুল কিছু বলিনি বল।তুইতো মেঘকে লাইক করিসনা।তুইতো কুশাল ভাই,,

জাস্ট শাট আপ।ওই নাম আমার সামনে আর কোনোদিন ও নিবি না।আমি ঘেন্না করি সেই নামের ব্যক্তিটিকে।আর একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ,আমি কুশালকে এখন আর ভালবাসি না।কারণ ওর মতো মানুষ ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়।আমি যদি কাউকে ভালবেসে থাকি সেটা মেঘকে, শুধুই মেঘকে।ওর মাধ্যমে আমি ভালবাসার আসল মানে খুঁজে পেয়েছি।ওই মানুষটা শুধু আমাকে পাগলের মতো ভালবাসে না সাথে আমার পরিবারের সকলের কথা চিন্তা করে।যাতে আমি ভালো থাকি।এরকম মানুষ পুরো দেশ ঘুরলেও একটা মেলা দায়।আর তুই কিনা ওনাকে!ছিহ,তুই না আমার ফ্রেন্ড।

সরি রে।আমি বুঝতে পারিনি তুই মেঘ ভাইকে নিয়ে ভালো আছিস।আমি তো ভাবতাম তুই আমাদের সামনে ভালো থাকার অভিনয় করতি কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।আমাকে মাফ করে দে প্লিজ। এইরকম ভুল আর সেকেন্ড টাইম হবে না।

ইটস ওকে,আমিও বেশি হাইপার হয়ে গিয়েছিলাম।আমাকেও মাফ করে দিস।

আমি আরেকটা ভুল করে ফেলেছি রে তার জন্য আমি খুব বেশি দুঃখিত।কদিন আগে আমি,,

থাক আমি বলেছি তো মাফ করে দিয়েছি।এটা নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই ভালো।

কিন্তু তুই শোন তো আগে,

মেঘ চলে এসেছে,আমি কাল শুনবো আজ বায়।কাল দেখা হবে বলে শান্তনা চলে যায়।

ইশ আমি যে কেন পাকনামি করতে গিয়ে কুশাল ভাইকে শান্তনার নাম্বার টা দিলাম কি জানি।বেচারি কতটা ডিপ্রেশনে আছে ফোন কলস নিয়ে।ওকে তো বলতেও পারলাম না যে ওই আননোন মানুষ টা কুশাল ভাই ছিলো।আমার কথাটা শুনে গেলে কি এমন হতো!আচ্ছা থাক কাল বলা যাবে বলে দু কদম যেতেই কুশালকে দেখতে পায় রিমি।কুশাল একেবারে রিমির সামনে এসে দাঁড়ালো।রিমি কিছু বলবে তার আগে কুশাল বলে ওঠে,

আপনার বান্ধবী তো কল রিসিভ ই করেনা।আপনি আমাকে কার নাম্বার দিয়েছেন এটা?

কুশাল ভাই আপনি শান্তনাকে ফোন দিয়েন না আর কখনো।

মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি?

আমি ভেবেছিলাম শান্তনা মেঘ ভাইকে নিয়ে ভালো নেই কিন্তু সেটা আমার ভুল ধারণা ছিলো।সত্যি বলতে শান্তনা মেঘ ভাইকে নিয়ে খুব ভালো আছে।ওরা একে অপরকে ভালবাসে।তাই আপনি ওদের জীবনে তৃতীয় ব্যক্তি হতে যেয়েন না প্লিজ।

কিন্তু আমি যে শান্তনাকে ভালবাসি তার বেলায়!

আমি জানি আপনি শান্তনাকে ভালবাসেন,কিন্তু এখন জিনিসটা অন্য দিকে মোড় নিয়েছে।আপনি নিয়তিকে মেনে নিন আর অন্য কারো সাথে জীবন শুরু করুন।

কিন্তু আমি কেন ত্যাগ করবো?আমার কি দোষ?

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ২১+২২

দোষ আপনার নয়।আসলে আপনার জন্য আরও ভালো কিছু ছিলো বোধয়,তাই আপনি শান্তনাকে পাননি।আর কিছুই বলার নেই আমার।পারলে ক্ষমা করে দিয়েন।ধন্যবাদ বলে রিমি একটা রিকশায় উঠে চলে যায়।
এদিকে কুশাল তার রাগ নিবারণ করতে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বড় একটা গাছে ঘুষি মারে সাথে সাথে হাত ফেটে রক্ত পড়তে থাকে।
আমি যে এতো সহজে তোমায় ছেড়ে দেবনা শান্তনা।তোমার ওই মেঘের সব প্রপার্টি আমি নিজের নামে না করানো অবধি আমার মনের আশা মিটবে না।কিন্তু তার জন্য আমাকে তোমায় যে করেই হোকনা কেন হাত করতে হবে।রিমির কথা শুনে ভেবেছিলাম তুমি এখনও আমার জন্য পাগল।কিন্তু না আমার ধারণা ভুল ছিলো।এখন আমাকে অন্য কৌশলে তোমার মন ভোলাতে হবে।কিন্তু তুমি যে আমার কলই রিসিভ করছো না।এখন আমি কি করবো?আমি বরং আরেকবার কল করে দেখি এবার রিসিভ করে কিনা বলে আবারও কল লাগালো শান্তনার নাম্বারে।কিন্তু কোনো লাভ হয়নি,কারণ শান্তনা আগের মতোই কল ধরেনি।তাই দেখে কুশাল বেশ রেগে যায় তারপর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে হাঁটা শুরু করে।

শান্তনাকে বাসায় ড্রপ করে মেঘ আবারও অফিসে চলে যায়।শান্তনা রুমে এসে ফোন চেক করে দেখলো আবারও সেই আননোন নাম্বার থেকে মিসড কল উঠে আছে।ফোন সাইলেন্ট করা ছিল বলে শান্তনা বুঝতে পারেনি যে কোনো কল আসছিল কি না।শান্তনা অত শত না ভেবে সেই আননোন নাম্বার টায় কল লাগায়।একবার রিং বাজার পরই কল রিসিভ হয়ে যায়।শান্তনা হ্যালো বলার সাথে সাথে ওপাশ থেকে কুশাল বলে ওঠে,

তুমি এতোদিন আমার কল কেন রিসিভ করনি পাখি?
সেই চেনা কন্ঠ টা শুনে শান্তনার বুক ধক করে উঠে।শান্তনা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

ক ক কে!

আমি তোমার কুশাল।চিনতে পারোনি আমায়!

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬