প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬
শান্তনা আক্তার

সেই চিরচেনা গলা শুনে শান্তনার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে সাথে কেমন যেন এক অজানা ভয় মনের ভেতর উঁকি দিয়ে যায়।কুশাল যে ওকে ফোন দিবে তা শান্তনা কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি।শান্তনা এসির মধ্যেও ঘেমে যাচ্ছে ওর হাত ও রীতিমতো কাঁপতে শুরু করেছে।ওদিকে কুশাল বারবার শান্তনাকে ডেকে চলেছে।শান্তনার কাছে কুশালের আওয়াজ বিষের মতো ঠেকছে।তাই বেশিক্ষণ ফোন কানে রাখতে পারলো না।শান্তনা কল কেটে দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো।এরই মাঝে আবারও কল আসে কুশালের।কিন্তু শান্তনা রিসিভ করে না।এভাবে ১০-১২ বার কল আসার পর শান্তনা বেশ রেগে গিয়ে ফোন রিসিভ করে।
কি সমস্যা আপনার!কেন বারবার বিরক্ত করছেন?

আমি তোমাকে ভালবাসি শান্তনা।আমি কিভাবে তোমাকে বিরক্ত করতে পারি বলো?

ভালবাসেন!ছিহ,আপনার মুখে জুতো মারা উচিত ভালবাসার মতো পবিত্র নামটা মুখে নেওয়ার জন্য।

তুমি এসব কি বলছো বাবু?

একদম ঢং করতে আসবেন না।লজ্জা করে না একজন বিবাহিতা মেয়েকে ভালবাসার কথা বলতে!

আমি জানি তুমি সেদিনের ব্যবহারটার জন্য আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে গিয়েছো কিন্তু বিশ্বাস করো আমি যা করেছি কিছুই নিজের ইচ্ছেতে করিনি।

আপনি আপনার বাজে কথা নিজের কাছেই রাখুন।আর আমার নাম্বার আপনি কোথা থেকে পেয়েছেন তাই বলুন?

তোমার বান্ধবী রিমির থেকে।ওইতো আমাকে বললো তুমিও আমার মতো ভালো নেই।তুমি আমাকে এখনো ঠিক সেভাবেই ভালবাসো যেভাবে আমি এখনো তোমায় ভালবাসি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কি বলছেন আপনি এসব!রিমি আপনাকে আমার নাম্বার দিয়েছে?কিন্তু কেন?

আমি চেয়েছিলাম।

ওর এতো বড় স্পর্ধা কিভাবে হলো আমার নাম্বার দেওয়ার।ওকে আমি কখনো মাফ করবো না এর জন্য।

তুমি এভাবে বলছো কেন শান্তনা?ওতো ভুল কিছু করেনি।তোমার কষ্ট দেখে ওর ভালো লাগছিলো না তাই ও আমাকে তোমার খবরটা এসে দিয়েছে।তাইতো আমি জীবনের পরোয়া না করে তোমাকে আবার কাছে টেনে নিতে ছুটে আসলাম।এখন আমি কারো হুমকি বা ব্লেকমেইলের শিকার হয়ে আর বেঁচে থাকবো না।

কি বলছেন আপনি?ব্লেকমেইল,হুমকি এসবের মানে?

হুম ঠিকই শুনেছো।আমি এতোদিন তোমার থেকে দূরে ছিলাম কারণ আমাকে ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখা হয়েছিলো।আর সেদিন যে একটা মেয়েকে আমার সাথে দেখেছিলে তাকে আমি চিনিই না।আমাকে জাস্ট বলা হয়েছিলো তোমার সামনে ওই মেয়েটাকে আমার জিএফ বলে পরিচয় দিতে আর তোমাকে অস্বীকার করতে।আমি যদি সেদিন তাই না করতাম তাহলে আমার মা বাবাকে খুন করে ফেলতো।আর আমার ছোট বোনটাকে বাজারের মেয়ে বানিয়ে ফেলতো।

এসব কে করিয়েছে?

নাম বললে তুমি বিশ্বাস করবে না তাই থাক আর বললাম না।

আমি আপনাকে তার নাম বলতে বলেছি।

তুমি আগে বলো তার নাম শুনলে তুমি রাগ করবে না।

আপনি বলুন আগে।

মেঘ।
মেঘের নাম শুনে শান্তনার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল।মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসলো।শান্তনার খুব কষ্ট হচ্ছে এটা বিশ্বাস করতে তাই ও কুশালকে জিগ্যেস করলো,
আপনি মেঘের নাম কেন বললেন?ওকে কেন টানছেন এখানে?

ওইতো সব করিয়েছে।যেদিন তোমাদের বিয়ে হয়েছিলো সেদিন মেঘই আমাকে আটকে রেখেছিলো কিছু লোক দিয়ে।

নাহহ!আপনি মিথ্যা বলছেন।আপনাকে সেদিন আটকে রেখেছিলো সেটা আমি জানি কিন্তু আপনাকে আমার সামনে খারাপ বানানোর জন্য অন্য একটা মেয়েকে আপনার জিএফ বানিয়েছে এটা আমি মানতে পারলাম না।আমার বিশ্বাস মেঘ এসব কিছুই করায়নি।

আমি সত্যি বলছি শান্তনা।আমি জানতাম তুমি বিশ্বাস করবে না তাই আমি সব কিছুর বন্দবস্ত করেই তোমার সাথে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।তুমি চাইলে আগামীকাল ওই মেয়েটার থেকে সব সত্যি জানতে পারো।

কোন মেয়েটা?

যার সাথে সেদিন আমায় দেখেছিলে ওই মেয়েটা।

ওকে,বলুন তাহলে কাল কোথায় আসবো আমি।

তোমার কলেজের পেছনের গলিটায় এসো।

ঠিক আছে।কখন আসবো?

তুমি যখন চাইবে তখন এসো।আমি সবসময় ফ্রি তোমার জন্য।

১০ টায় দেখা হচ্ছে বলে ফোন কেটে দেয় শান্তনা।
এশার নামাজ পড়ে খুব জলদি ঘুমিয়ে যায় শান্তনা। অবশ্য মিথ্যা ঘুমের অভিনয় করে কারণ মেঘের সামনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না শান্তনা।তাছাড়া শান্তনা জানে যে মেঘ যদি সব বুঝে যায় তাহলে ওকে কাল কলেজে নাও যেতে দিতে পারে।এই ভেবে ঘুমানোর ভান করে বিছানায় পড়ে থাকে।মেঘ এটা দেখে খুব অবাক হয়।ভাবে শান্তনার শরীর খারাপ হয়তো।তারপর ওর মনে পড়ে কদিন ধরে এমনিতেই শান্তনা বলছিলো ওর মাথায় খুব পেইন হচ্ছে।তাই আর মেঘ শান্তনাকে জাগিয়ে তোলেনি।মেঘ গিয়ে শান্তনার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,

কাজের চাপ এতোটাই বেশি যে আমার বউটাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে পারছি না।না এভাবে চললে তো হবে না।যেভাবেই হোকনা কেন সামনের ফ্রাইডেতে শান্তনাকে নিয়ে হসপিটালে যেতেই হচ্ছে এই বলে ফ্রেশ হতে চলে যায় মেঘ।মেঘ চলে যেতেই শান্তনা ওর চোখ মেলে ওর সকল ইমোশন নোনা পানি আকারে ছেড়ে দেয়।

এতো ভালবাসেন আমায়! তাই বলে ছলনার সাহায্যে ভালবাসা আদায় করলেন!প্রথমে আমাকে ব্লেকমেইল করে বিয়ে করলেন।এটা জানা সত্ত্বেও আমি কুশালকে ভালবাসতাম।শেষে আমার ভালবাসা পাওয়ার জন্য কুশালকে আমার চোখে দোষী বানিয়ে ছাড়লেন।
এটা আমি আশা করিনি আপনার থেকে।তবুও কেন যেন বিশ্বাস করতে পারছি না আমি যে আপনি এতোটা নিঁচু কাজ করতে পারেন।কি করবো বলুন?খুব বেশি মায়া জন্মেছে আপনার প্রতি,তাই মানতে পারছি না এতো সহজে।এখনতো আগামীকালের অপেক্ষা শুধু।কালই প্রমাণিত হবে আপনি কেমন।যদি কুশালের বলা সব কিছু সত্যি হয় তাহলে তখনই আমি নিজেকে শেষ করে দেব।

কারণ না আমি আপনার মতো বিশ্বাসঘাতকের সাথে থাকতে পারবো,আর না কুশালকে মনে জায়গা দিতে পারবো।কারণ আমি যে আপনাকে ভালবাসি এখন।শুধুই আপনাকে নিয়ে ভাবি।তাই আমি আমার সিদ্ধান্তকেই বেছে নেব।তবে আমি মনে প্রাণে চাইবো আপনি যেন নির্দোষ প্রমানিত হন।যদি তাই হয় তাহলে আমার থেকে খুশি আর কেউ হবে না।এরই মাঝে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ এসে বারি খায় শান্তনার কানে।শব্দ শুনে আবারও ঘুমের ভান করে শুয়ে পড়ে শান্তনা।কিছুক্ষণ পর মেঘ এসে শান্তনার পাশে শুয়ে পড়ে শান্তনাকে বুকে জড়িয়ে।শান্তনাও পরম তৃপ্তিতে মেঘের বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ে সব রাগ অভিমান ভুলে।হয়তো এই সুখটাই চেয়েছিলো ও।

ঠিক ১০ টার সময় শান্তনা কলেজের পেছনের গলিটায় গিয়ে উপস্থিত হয়।শান্তনা পৌঁছানোর পর পরই কুশাল ও চলে আসে।শান্তনার চোখে চোখ পড়তেই কুশাল বলে ওঠে,
কতটা শুকিয়ে গেছ তুমি।জানি আমার চিন্তায় একটা রাতও তোমার দু চোখের পাতা এক হয়নি।

বাজে কথা ছেড়ে কাজের কথায় আসুন।কোথায় সেই মেয়েটা?

তুমি আপনি করে বলছো জান!কলিজা খা খা করছে তোমার মুখ থেকে আপনাআপনি শুনে।

আমার কাছে সময় নেই এসব ফালতু কথায় টাইম ওয়েস্ট করার জন্য।মেয়েটা কে দেখছি না কেন তাই বলুন।

কোন মেয়ে?হা হা হা –কুশাল অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে।মনে হচ্ছে শান্তনা যেন ওকে মজার কোনো জোক শুনিয়েছে।শান্তনা কুশালের হাসার কারণ খুঁজে না পেয়ে জিজ্ঞেস করে,

এখানে হাসার কি এমন বলেছি আমি?

হাসবো না তোকি কাঁদবো?তুমি যে এতো সহজে আমার ফাদে পা দিবে ভাবিনি আমি।তাই খুশির ঠেলায় হাসি পেল।???

ফাদ মানে!

হুম ফাদ।আমি তোমাকে গতকাল ফোনে যা যা বলেছিলাম তার সবই মিথ্যে।

মানে আপনি মেঘের নামে মিথ্যা বলে আমাকে এখানে ডেকে এনেছেন!

একদম তাই।

কিন্তু এতে আপনার কি লাভ হলো?

লাভ হয়েছে শোনা,অনেক লাভ হয়েছে কথা বলতে বলতে একেবারে শান্তনার সামনে চলে গেল কুশাল।

একদম কাছে আসবেন আমার।

কাছে না আসলে তোমায় কিডন্যাপ কিভাবে করবো বলো!আর কিডন্যাপ না করলে তোমার ওই কোটিপতি স্বামীর কোটি টাকা কিভাবে হাতাবো বলো?

কিহ!আপনি আমাকে এখানে কিডন্যাপ করার জন্য নিয়ে এসেছেন।এতো বড় ট্র্যাপ! আপনি খারাপ লোক সেটা আমার বুঝতে দেড়ি হয়েছে ঠিক কিন্তু এতটা খারাপ সেটা আমার জানা ছিলো না।

ইয়েস শোনা আমি খুব খারাপ।সবাই যা ভাবে তার থেকেও বেশি খারাপ আমি।সবাই বলতে আমার এক্স জিএফ সমুহের কথা বলছি।

এক্স জিএফ?

হুম শোনা,আমার এক্সের সংখ্যা সেঞ্চুরি মেরেছে তার মধ্যে তুমিও আছো।

জঘন্য একটা লোক আপনি বলে হাঁটা দিচ্ছিলো তখন,

কোথায় যাও শোনা?তুমি গেলে কিভাবে হয় হুম।
ওই তোরা সবাই বেরিয়ে আয়।কুশালের কথায় রাস্তার পাশে থাকা কালো গাড়ি টা থেকে কিছু লোক বেরিয়ে এলো।লোকগুলো বখাটে টাইপ জামাকাপড় পড়া।তারা কাছে আসার আগেই শান্তনা ওর ব্যাগ থেকে পেপার স্প্রে বের করে প্রথমে কুশালের মুখে স্প্রে করে।পেপার স্প্রে কুশালের চোখে লাগা মাত্র ওর চোখ জ্বলতে শুরু করে আর ও চোখে হাত দিয়ে চিল্লাতে থাকে।এই সুযোগে শান্তনা দৌড় লাগায়।সাথে সাথে একটা লোক কুশালকে বলে,
স্যার মেয়েটা পালিয়ে যাচ্ছে।
লোকটার কথা শুনে কুশাল সেই লেভেলের রেগে যায়।

মেয়েটা পালিয়ে যাচ্ছে আর তোরা কি করছিস মাদারির বাচ্চা!যা গিয়ে ধর শালিকে।যদি ধরে আনতে না পারিস তাহলে একটা ফুটো পয়সাও দেবনা তোদের।এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন যাহহহহহহ!!
কুশাল খুব জোড়ে হুংকার দিয়ে ওঠে।কুশালের ধমক খেয়ে ভাড়া করা লোক গুলো শান্তনার পিছু করতে শুরু করে দেয়।ওরা পেছনে আর শান্তনা সামনে দৌঁড়ে চলেছে।এক পর্যায়ে ওরা শান্তনার খুব নিকটে চলে যায়।শান্তনা মেইন রোডের সামনে এসে থেমে গিয়ে চলতি গাড়ি গুলো থামার অপেক্ষা করে।

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ২৩+২৪

কিন্তু গুন্ডাগুলো ওর খুব নিকটে চলে আসায় কোনো উপায় না পেয়ে ও চলতি গাড়ির ভেতর দিয়েই দৌঁড় লাগালো।কিছুদুর যেতেই একটা প্রাইভেট কার এসে শান্তনাকে মেরে দেয়।শান্তনা চিৎকার দিয়ে ছিটকে কিছুটা দূরে গিয়ে পড়ে।সাথে সাথে একটা বাস ব্রেক কষে ফেলে,আরেকটুর জন্য শান্তনার উপর দিয়ে বাসটা উঠে যায়নি।শান্তনা রক্তাক্ত শরীরে রাস্তায় পড়ে থাকে।গুন্ডা গুলো শান্তনার এই অবস্থা দেখে পালিয়ে যায়। যেই প্রাইভেট গাড়ি টায় শান্তনার এক্সিডেন্ট হয়েছে তার ড্রাইভার বাহিরে বেরিয়ে আসে শান্তনাকে দেখার। লোকটি শান্তনার রক্তমাখা মুখটা দেখে শান্তনা বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।

তারপর তরিঘরি করে লোকটি শান্তনাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে শুইয়ে দিল।হসপিটালে পৌঁছে ডাক্তার ডাক্তার বলে চিৎকার করতে থাকে লোকটি।ইতোমধ্যে হাসপাতালের বেশ কিছু লোক ভিড় জমায় লোকটির চেচামেচি শুনে। ডাক্তার শান্তনার এতোটা ক্রিটিকাল অবস্থা দেখে নার্স ডেকে ইমিডিয়েটলি শান্তনাকে ইমারজেন্সি তে নিয়ে যেতে বলে সাথে অপারেশনের জন্য সব কিছু রেডি করতে বলে।কিছুক্ষণ পর একটা নার্স এসে লোকটিকে বলে,

AB পসজিটিভ ব্লাড নিয়ে আসুন জরুরিমুহুর্তে।

জ্বি আমার AB+,আপনি আমার রক্ত নিতে পারেন।

ঠিক আছে চলুন তাহলে।
তারপর লোকটিকে নিয়ে নার্স ভেতরে চলে যায়।
প্রায় পনে দু ঘন্টা পরে অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বাহিরে বের হয়ে আসে।ডাক্তার কে দেখা মাত্র……

প্রেম নেশা সিজন ২ শেষ পর্ব