প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ২১+২২
শান্তনা আক্তার
সকালে ঘুম থেকে উঠে শান্তনা নিজেকে মেঘের বুকের সাথে আঁশটে পিষ্টে লেগে থাকতে দেখে অবাকের শেষ চূড়ায় পৌঁছে যায়।আরও বেশি অবাক হয় ওর গায়ে একটা টাওয়াল পেচানো দেখে।শান্তনা যেন স্তব্ধ হয়ে যায়, এরকম কিছুর সম্মুখীন হতে হবে তা ওর কল্পনার ও বাহিরে ছিল।কিছুক্ষণ পর ভাবনার জগৎ ভেদ করে বেরিয়ে এসে মেঘকে ধাক্কা দিয়ে জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে ওঠে।শান্তনার চিৎকার শুনে মেঘ লাফিয়ে ওঠে।তারপর ঘুমঘুম চোখে বলে,
এভাবে সাউট কেন করছো?
।
তো কি করবো?আপনি আম,,,পুরো কথা শেষ করার আগেই কান্না করে দিল শান্তনা।
।
এখানে কাঁদার কি হলো?
।
কাঁদবো না তো কি করবো?আপনি আমার সর্বনাশ করে এখন বলছেন কাঁদার কি হলো?
।
আমি তোমার কি সর্বনাশ করলাম?
।
দেখতে পারছেন না?নাকি কানা হয়ে গেছেন!এ্যাাাা এ্যাাাা……(কান্না করে যাচ্ছে অনবরত)
।
আরে কি দেখবো বলে মেঘ ওর আর শান্তনার দিকে তাকালো তারপর ওর রাতের সব কথা মনে পড়ে যায়।
।
কি ভাবছেন হুম?এখন আমার কি হবে আমি মানুষকে কিভাবে মুখ দেখাবো বলুন?
।
আজব তো!তুমি আর আমি হাসবেন্ড ওয়াইফ।এখানে মানুষ কে কিছু বলার?
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আমি তো আপনাকে আগে থেকেই নিষেধ করেছিলাম স্বামীর অধিকার না ফলাতে।আমার উপর কোনো প্রকার জোড় খাটাতে মানা করেছিলাম।
।
তো আমি কি তোমার উপর জোড় খাটিয়েছি নাকি?
।
তো জোড় না খাটালে এসব কি হুম?
।
তুমি নিজেই তো আমাকে তোমার কাছে টেনেছিলে তাইতো আমি নিরুপায় হয়ে,,,
।
মিথ্যে বলছেন আপনি।
।
মিথ্যা আমি কেন বলবো?আচ্ছা আমি প্রমাণ দিচ্ছি বলে মেঘ ওর ফোন হাতে নিয়ে কাল রাতে যা যা হয়েছিলো তার সব ভিডিও শান্তনাকে দেখালো।ভিডিও দেখে শান্তনার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।
।
এসব কি?আমি ওরকম কেন করছি?
তুমি কাল পার্টিতে ড্রিংক করেছিলে।তার প্রভাব এটা।এবার তো দেখলে আমার কোনো দোষ ছিলনা।ভাগ্যিস আমি গত রাতে আমার মাথায় ভিডিও করার আইডিয়াটা এসেছিলো,নইলে এখন আমাকে ফাঁসিতে চড়তে হতো।
।
কে বলেছে আপনার দোষ ছিলনা?আপনারই দোষ।আর শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে।
।
কিভাবে আমার দোষ ছিল?
।
আপনি জানতেন আমি আমার মধ্যে ছিলাম না তাও কেন আপনি আমার সাথে তাল মিলিয়েছেন?আপনার তো বোঝা উচিত ছিল আমি নিজের ইচ্ছেতে বা মাথা ঠিক রেখে কিছু বলনি বা করিনি।
।
তুমি আমাকে নেশায় ফেলে দিয়েছিলে তাই আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।সত্যি বলতে তোমার মতো আমিও নেশায় তলিয়ে গিয়েছলাম।পার্থক্য টা হলো তুমি মাদক নেশায় হারিয়ে গিয়েছিলে আর আমি প্রেম নেশায়।
আপনি আর একটা কথাও বলবেন না আমার সাথে।আর এই ভিডিও,,,শান্তনা ভিডিও টা ডিলিট করে দিল।
।
কি করলে?
।
ভিডিও টা ডিলিট করলাম নইলে আপনি এটা দিয়ে আমাকে ভবিষ্যতে ব্লেকমেইল করতেন আমি জানি।এই জন্যই ভিডিও করেছেন।খুব চালাক আপনি।এভাবে তাকাচ্ছেন কেন?ভিডিও ডিলিট করায় আপনার খেলা নষ্ট হয়ে গেল বুঝি?
।
কি বলছো কি তুমি বলোতো?আমার আবার কিসের খেলা!আচ্ছা ভালো করেছো ভিডিও ডিলিট করে।এবার তুমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।
।
আপনার সাথে আমার কোনো কথাই নেই।ভুল করেও আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না হাহ।এই বলে শান্তনা উঠে পড়ে।
।
যাহ বাবা!আমি আবার কি করলাম?এই মেয়েটা কে বোঝানোর সাধ্যি আমার নেই।
কুশাল ভাই দাঁড়ান।আপনার সাথে আমার একটা কথা আছে।
।
আপনি কে যেন?
।
শান্তনার ফ্রেন্ড রিমি।ওর সাথে একই,,
।
হ্যাঁ আর বলতে হবে না আমি চিনতে পেরেছি।কি বলতে চান তাই বলুন আমার তাড়া আছে।
।
আপনি শান্তনার সাথে সেদিন ওরকম মিসবিহেভিয়ার কেন করেছিলেন কুশাল ভাই?জানেন ও কতটা কষ্ট পেয়েছিল!
।
দেখুন আমি এ নিয়ে আপনার সাথে কোনো কথাই বলতে চাই না।খুব প্যারায় আছি।পিছু ডাকবেন না।আল্লাহ হাফেজ।
।
কিন্তু আপনাকে যে শুনতে হবে।আপনি জানেন না শান্তনা কোন সিচুয়েশনে আছে।আপনি নিশ্চয়ই ওর উপর অভিমান করে আছেন তাই সেদিন শান্তনাকে দেখাতে অন্য একটা মেয়েকে নিজের জিএফ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।কিন্তু আপনি এটা জানেন না শান্তনা ইচ্ছে করে মেঘ ভাইকে বিয়ে করেনি।ওকে ব্লেকমেইল করে বিয়ে করা হয়েছিল।
ইচ্ছে করে বিয়ে করেনি মানে?কি বলতে চাইছেন আপনি?
।
আসলে কুশান ভাই,,,রিমি কুশালকে সব কথা খুলে বলে এক এক করে।সব শুনে কুশাল বলে ওঠে,
।
আপনি যা বলছেন তার সবই কি সত্যি?
।
জ্বি ভাইয়া সব সত্যি।শান্তনা তো মেঘ ভাইকে এখনো মেনে নিতে পারেনি।এমনকি ওদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর মতো কোনো সম্পর্কই নেই।
।
ওহ নো আমি খুব বড় ভুল করে ফেলেছি তাহলে।আপনি কি আমাকে শান্তনার নাম্বার দিতে পারবেন?
।
ওকে নিন,019………..!
।
অসংখ্য ধন্যবাদ।আমাকে আরেকটা হেল্প করতে পারবেন?
।
চেষ্টা করবো বলুন শুনি।
আপনি যে আমার সাথে কথা বলেছেন তা শান্তনাকে বলবেন না প্লিজ।আমি নিজেই ওর সাথে কথা বলবো।
।
ওকে তাই হবে।আমি তাহলে এখন যাই ক্লাস আছে।
।
ওকে ধন্যবাদ।রিমি চলে গেলে কুশাল আশে পাশে তাকিয়ে ভয়ংকর এক হাসি দেয়।তারপর বলে,
শিকারি আবারও আমার চালে বাধা পড়বে হা হা হা হা।এবার আমি বড় থাবা মারবো।এতো ব্রেন্ড যে তুই কোথায় রাখিস কুশাল?সাব্বাশ কুশাল বলে নিজেই নিজের পিট থাপড়ায়।
প্রায় দুটো দিন অতিবাহিত হয়ে গেল শান্তনা মেঘের সাথে কথা বলেনি।মেঘ যতবারই কথা বলার চেষ্টা করেছে শান্তনা ততবারই ওকে এড়িয়ে গিয়েছে।মেঘ একের পর এক ফন্দি এটেও শান্তনাকে দিয়ে কথা বলাতে পারলো না।মেঘ ওর দাদিয়া মৌরিকে দিয়েও খুব চেষ্টা করেছিলো শান্তনাকে মানানোর,কিন্তু সেই প্লান টাও ফেল হয়েছে।এতো সব করেও যখন মেঘ শান্তনার মন গলাতে অক্ষম হলো,তখন শেষে মেঘ অন্য বুদ্ধি আটলো।
শান্তনা বিকেলে বই নিয়ে বসে ছিল।তখন মেঘ মিথ্যা ফোনের নাটক করে শান্তনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথা বলতে লাগলো।কথাগুলো কিছু এরকম ছিলো,
*হুম বলো টিনা!*কিহ তুমি আমার সাথে কাল দেখা করতে চাও?*ও আচ্ছা,আমার সাথে তোমার দরকারি কথা আছে।*আচ্ছা কাল লেকে দেখা করবো তাহলে।*কি,আমি তোমার দেওয়া সেই সুটটা পড়ে আসবো!ওকে তাই হবে।*তুমি ও কিন্তু কাল আমার দেওয়া শাড়িটা পড়বে।*রিয়ালি!*ওকে এখন রাখি বেবি আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে উম্মাহ।কথা শেষ করে মেঘ শান্তনার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল শান্তনা অগ্নিমূর্তি হয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মেঘের কাছে শান্তনাকে দেখে মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে মেঘ ওর শিকার,আর শান্তনা হচ্ছে একজন শিকারি যে এখন মেঘের উপর ঝাপিয়ে পড়বে শিকার করতে।কিন্তু শান্তনা সেরকম কিছু না করে রাগে কটমট করে রুম থেকে বেরিয়ে বাগানের দিকে চলে আসে।বাগানের ভেতর এসে একটা ফুলের টবে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে লাথি মারে।লাথি মেরে নিজেই ব্যাথা পেয়ে চিল্লিয়ে ওঠে।আর ফুলের টবকে যা ইচ্ছা বলে বকতে থাকে,
তুই মর শালা ফুলের টব।তোর ফুল সব কাউয়া চুরি করে নিয়ে যাবে।তোর ফুলের থেকে কেরোসিনেরর গন্ধ আসবে।তুই খুব খারাপ ঠিক ওই পাজি লোকটার মতো।তুই ও আমাকে ব্যাথা দিতে চাস ঠিক ওনার মতো।খুব পঁচা উনি আমাকে বিয়ে করে অন্য মেয়ের সাথে যাবে দেখা করতে।আমি কি এমন করেছি হুম?জাস্ট একটু রাগ করে কথা বলিনি সেই সুযোগে অন্য একজনের সাথে ডেট করার প্লান বানিয়ে নিল!হায়রে আমার পোড়া কপাল!কি করতে যাই আর কি হয়ে যায়। আমার সাথেই কেন হয় এটা!সব সময় কেন আমার সাথে উল্টো টাই হয়।আমার মনে হয় ওই টিনার সাথে আগে থেকেই ওনার এফেয়ার ছিলো আর আমি মাঝখান দিয়ে ব্যবহারের জিনিস ছিলাম।
এখন তো আমাকে ব্যবহার করা শেষ তাই ছুড়ে ফেলতে ওই টিনা শাকচুন্নি কে গলায় ঝোলাতে চাচ্ছে।কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা বান্দা।এতো সহজে আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছিনা।আমিও এর শেষ দেখে ছাড়বো।বিয়ে যখন করেছেনই এতো সহজে আপনার নিস্তার নেই আমার কবল থেকে।আমার স্বামীর সাথে পুতুপুতু করার চরম শাস্তি যদি ওই শাকচুন্নি কে না দেইনা,তাহলে আমিও বাপের বেটি না।অন্যের স্বামীর দিকে নজর দেওয়ার ফল হারে হারে টের পাবি তুই।কিন্তু কি করা যায়?কি করা যায়?
শান্তনা ভাবছে আর বাগানের পাইচারি করছে।
এভাবে কতক্ষণ পাইচারি করার পর একটা আইডিয়া চলেও এলো শান্তনার মাথায়।চট করে পুনরায় নিজের রুমে এলো।দেখলো মেঘ রুমে নেই।
-কি ব্যাপার!উনি রুমে নেই কেন?যাই হোক ভালোই হলো।ওনাকে দিয়ে তো আমার কোনো কাজ নেই।ওনার ফোনটা পেয়েছি এটাই অনেক বলে মেঘের ফোনটা নিয়ে পুনরায় বাগানে চলে আসে।
এদিকে মেঘ আড়াল থেকে বেরিয়ে ফিক করে হেসে ওঠে,
প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১৯+২০
আমি জানতাম পিচ্চি তুমি এই কাজটাই করবে।আমার ভাবনাকে সত্যি প্রমাণিত করে তুমি যে আমাকে কতটা ভালবাসো তার প্রমাণ দিয়ে দিলে আজ।এখন দেখবে আমি কিভাবে তোমাকে আমার ভালবাসার জালে ধরা দেওয়ার জন্য বাধ্য করি।তুমি যখন আমার ফোন চেক করে দেখবে আমি টিনার সাথে কোনো কথা বলিনি তখন এমনিতেই তোমার সব রাগ গায়েব হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে??
শান্তনা মেঘের ফোন হাতে পেয়ে মহা খুশি।এদিক ওদিক তাকিয়ে ফোনটা সামনে ধরল।তারপর বলতে শুরু করলো,
এবার ওই টিনার বারোটা আমি বাজাবো বলে ফোন অন করতেই কোনো লক না দেখে অবাক হলো শান্তনা।
-ফোনে কোনো লক নেই কেন?আগে তো ছিলো লক।এখন কেন নেই?যাই হোক আমার কি?আমার জন্য তো ভালোই হলো। আমি এখন কথা না বলে ওই ডাইনির নাম্বারটা দেখি বলে কললিস্টে গেল।কিন্তু টিনা নামে কোনো কল দেখতে পেলনা আজকের।আজকে কেন গত এক মাসের কলেও টিনা নামক কোনো নাম্বার নেই কললিস্টে।
একি!আজ তো শুধু দুজনের সাথে উনি কথা বলেছেন।দুটোই তার অফিসের লোক।মনে তো। হচ্ছেনা গত এক মাসে উনি টিনার সাথে কথা বলেছেন বলে।তাহলে একটু আগে যে উনি টিনার সাথে কথা বললেন সেটা কোথায়?ওওও বুঝেছি হয়তো ডিলিট করে দিয়েছে।আমিও খুব শেয়ানা জিনিস হুম,আমি আপনার কল রেকর্ডিং চেক করবো ওখানে তো নিশ্চয়ই কিছু পাবো।যেই বলা সেই কাজ শান্তনা এবার মেঘের কল রেকর্ডিং এ থাবা বসালো।কিন্তু সেখানেও তেমন কিছু পেলনা।শান্তনা এক এক করে সব রেকর্ডিং গুলো শুনতে লাগলো।আচমকা একটা রেকর্ডিং এ শান্তনার কান আটকে গেল।শান্তনা মনোযোগ দিয়ে রেকর্ডিং টা শুনতে লাগলো।রেকর্ডিং টা শুনে শান্তনার চোখ বেয়ে অনবরত নোনা পানি ঝড়তে লাগলো।শান্তনার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে আসলো,
-আপনি এমন!আমি তো এসব কথা জানতামই না।নাহ আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।আর না বলে চোখের পানি মুছে দৌঁড় লাগালো শান্তনা।
