দুঃখবিলাসী পর্ব ১৫

দুঃখবিলাসী পর্ব ১৫
তানিশা সুলতানা

কিছু পুরুষ মানুষের বাজে গুন হচ্ছে তারা মুক্ত করে দিতে জানে না। তারা চায় তাদের সবাই এটেনশন দিবে, তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখাবে, অবহেলা করার পরেও ছাড়বে না।
শিহাব ঠিক সেই কোয়ালিটির পুরুষ।

তার মনোবাসনা মাইশা তারই থাকবে ইভাও তারই হবে। মাইশাকে অবহেলা করবে, মা রবে, কা টবে তবুও মাইশা শিহাবের হাত ধরে থাকবে। দিন শেষে শিহাবের দুয়ারেই মাইশার শেষ ঠিকানা হবে।
শিহাবের মন পুরছে। ক্ষণে ক্ষণে ভয়ে শিওরে উঠছে। মাইশা বোধহয় ওই ছেলেটাকে বিয়ে করে ফেললো। বুঝি সংসার পেতে ফেললো? কিন্তু এমনটা কেনে করবে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শিহাব না হয় মাইশাকে ভালোবাসে নি। ঠকিয়েছে। কিন্তু মাইশা তো ভালোবেসেছিলো। তাহলে মাইশা কি করে পারে দ্বিতীয় বিয়ে করতে? রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে শিহাব। হাতে থাকা ডিভোর্স পেপারটা কুটি কুটি করে ছিঁড়ে ফেলে। মাইশা প্রেগন্যান্ট এটা গোপন রেখেই ডিভোর্সের কার্যক্রম করা হয়েছে।

চতুর শিহাব ভালো করেই বুঝতে পারে এসব ওই ছেলেটার কারসাজি। মাইশা কখনোই এতোটা সাহস পেতো না।
ছেলেটা এবং আমিনুলকে পথে বসানোর জন্য শিহাব কোম্পানির ইমপর্টেন্ট কিছু ডকুমেন্ট চুরি করেছিলো। কিন্তু সুবিধা করতে পারে নি। আমিনুল ঠিক উদ্ধার করেছে সব।

ইভা কয়েকবার উঁকি দিয়েছে দেখেছে শিহাবকে। ভেতরে ঢোকার সাহস হচ্ছে না তার। ইদানীং শিহাবকে চিনতে তার অসুবিধা হয়। আগের শিহাবকে একটু ছুঁয়ে দিলেই গলে যেতো। উম্মাদ হয়ে উঠতো।
কিন্তু এখনকার শিহাবকে ছুঁয়ে দিলে তেঁতে উঠে।

মাইশাকে বিয়ে করার ঠিক পাঁচ ছয় মাস পর থেকেই মাইশা এবং শিহাব পরোক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছিলো। রূপের জাদুতেই বশ করেছিলো শিহাবকে। অবশ্য বেশ কাঠখড় পুরাতে হয়েছিলো।
এক বুক সাহস নিয়ে খাবারের থালা হাতে ভেতরে ঢুকে ইভা। খাটের ওপর খাবারের থালা রেখে ফ্লোরে শিহাবের পাশে বসে। ডিভোর্স পেপারের এক টুকরো কাগজ হাতে তুলে নেয়।

“তুমি কেনো ওর জন্য কষ্ট পাচ্ছো? ও তো তোমায় ঠকিয়ে
বাকিটুকু শেষ করতে পারে না ইভা। শিহাব গলা টিপে ধরে তার। রক্তচক্ষু করে তাকায় ইভার পানে। দাঁতে ওপর দাঁত রেখে হাতের জোর বাড়িয়ে দেয়। গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করতে থাকে ইভা। ইতোমধ্যে চোখ দুটো বড়বড় হয়ে গিয়েছে। প্রাণপণে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে৷

” শান্তিতে ছিলাম আমি। মাইশার সাথে সংসার করতেছিলাম। আমার বাচ্চা আসতে চলেছে।
তুই সবটা নষ্ট করে দিয়েছিস। আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছিস তুই।
শেষের কথাখানা চিৎকার করে বলে ওঠে শিহাব। কেঁপে ওঠে বোধহয় পুরো বাড়ি। মজিবুর নিজের রুমেই পত্রিকা পড়ছিলো। ছেলের চিৎকারে এক প্রকার দৌড়ে আসে।

ছেলের রুমে এসে এই রূপ দেখে ভয় পেয়ে যান তিনি। দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে ছাড়ায় ইভার থেকে।
ইভা ছিঁটকে পড়ে ফ্লোরে। গলা ধরে কাশতে থাকে।
শিহাব জোরে জোরে শ্বাস টানছে।
মুজিবুর ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
“মাথা ঠান্ডা কর। এতোটা রেগে কেনো যাচ্ছিস?

জবাব দেয় না শিহাব। চোখ বন্ধ করে দুই হাতে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে।
তখনই উচ্চস্বরে কলিং বেল বেজে ওঠে। মুজিবুর ছেলেকে ছেড়ে ইভার কাছে যায়। হাত এগিয়ে দেয় ইভার দিকে। ইভা মজিবুরের হাত ধরে বসে।
” আমার সাথে চলো

ওকে একা থাকতে দাও
শিহাবের দিকে এক পলক তাকিয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে মজিবুরের পেছনে বেরিয়ে যায় ইভা। শিহাবও আর বসে থাকে না। সেও বেরিয়ে পড়ে দেখার উদ্দেশ্যে কে এলো।
মুজিবুর দরজা খুলে দিতেই হুরমুরিয়ে কয়েকজন পুলিশ অফিসার ঢুকে পড়ে ভেতরে। সাথে মহিলা অফিসারও রয়েছে।

শিহাবের কপালে ভাজ পড়ে। ইভার ভয় বেরে যায়। শরীরের কাঁপন বাড়তে থাকে।
“ইভা রোহমান ইউ আর আন্ডার এরেস্ট
শিরিন চৌধুরীকে খুনের অপরাধে আপনে গ্রেফতার করা হলো।
চমকে ওঠে শিহাব এবং মজিবুর। ইভা হতদম্ভ হয়ে যায়। পুলিশ জানলো কি করে? এটা তো কারোরই জানার কথা না।
শিহাব বলে

” কি বলছেন আপনি?
“ঠিকই বলছি। মাইশা চৌধুরী প্রমাণ সহ কেচ করেছে ওনার নামে।
ওনাকে এরেস্ট করছি আমরা। বাকিটা কোর্টে কথা হবে।
বলেই মহিলা কনস্টেবলকে ইশারা করেন। সাথে সাথে তারা ইভার দুই হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে। ইভা কিছু বলার চেষ্টা করছিলো কিন্তু কেউ শোনে না তার কথা।
শিহাব ভাবনায় পড়ে যায়। মাইশা প্রমাণ সহ কেচ করেছে? মাইশা?
তার মা বেঁচে নেই? ইভা মেরেছে? মাইশা দেখেছে? কোথায় মাইশা?

মাইশার মেজাজ তুরঙ্গে। রিয়াদ এক গুচ্ছ কালো গোলাপ এনে রেখে দিয়েছে মাইশার রুমে ঠিক বিছানার ওপর। এর আগেও এমন কাজ করেছে রিয়াদ। মাইশা সাফ সাফ জানিয়েছে ” গাছের ফুল গাছেই মানায় হাতে না” কিন্তু ছেলেটা শুনলে তো?

তবে আজকে মাইশা কড়া গলায় কথা শুনিয়ে দিবে। এটা ভেবেই মাইশা ওড়না কোমরে বেঁধে বড়বড় পা ফেলে রুম থেকে বের হয়। এই মুহুর্তে রিয়াদ খাচ্ছে।
মাইশা রিয়াদকে খেতে বসতে দেখেই রুমে এসেছিলো।
ধাপধাপ পা ফেলে খাবার রুমে গিয়ে দেখে ঠিকই রিয়াদ খাচ্ছে। তবে এখন আশেপাশে রেহেনা বেগমকে দেখা যাচ্ছে না।

মাইশা গিয়ে রিয়াদের পাশে দাঁড়ায়
“ফুল কেনো ছিঁড়েছো? না করেছি না তোমায়?
রিয়াদ জবাব দেয় না। চুপচাপ খেতে থাকে। মাইশার রাগ বেরে যায়। সে খানিকটা ঝুঁকে বলে
“আমি কথা বলছি কানে ঢুকছে না? শুনতে পাচ্ছো না তুমি? ফুল কেন

দুঃখবিলাসী পর্ব ১৪

বাকিটা শেষ করতে পারে না মাইশা। রিয়াদ খানিকটা রুটি ঢুকিয়ে দেয় মাইশার মুখে। মুখ ভর্তি রুটি। মাইশা বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে রিয়াদের দিকে।
রিয়াদ মাইশার নাক টেনে দিয়ে বলে
“আস্তে আস্তে কথা বলবা আর ধীরে ধীরে চলবা। এখন তুমি যেমন বিহেভিয়ার করবা তোমার বাচ্চাও তেমন বিহেভিয়ার করবে। বুঝলে টুনির মা?

দুঃখবিলাসী পর্ব ১৬