দুঃখবিলাসী পর্ব ১৬

দুঃখবিলাসী পর্ব ১৬
তানিশা সুলতানা

শিহাবের ললাটে চিন্তার ভাজ। অবাকের চুরান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছে সে। মুজিবুরও অবাক হয়েছে। স্ত্রী চলে যাওয়ার শোকের থেকে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বেশি আবেগপ্রবল করেছেন তাকে।
সবটা মাইশা করেছে।

ইভা ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। হাতে তার হাত কড়া। পাশে সেই ড্রাইভার। সামনে ল্যাপটপের স্কিনে চলছে কিছু দৃশ্য। সেই দৃশ্য দেখছে কয়েকজন পুলিশ অফিসার শিহাব মুজিবুর সোহেল ইভা এবং সেই ড্রাইভার।
শিরিনের নারী পাচার করার ব্যবসায়। নারীদের স্বীকারোক্তি। এবং ইভা শিরিনকে গলায় ছু ড়ি চালিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়ার দৃশ্য।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নিখুঁত ভাবে ভিডিও করা সবটা। কে করেছে এমনটা?
কেচ ফাইলে মাইশার সাইন।
শিহাব দুই হাতে চুল খাঁমচে ধরে বসে পড়ে। মায়ের মৃত্যুর থেকে মায়ের পেশাটা তাকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে। মুখ থেকে ছিহহ শব্দটা বেরিয়ে আসছে।
হঠাৎ রিয়াদের মনে পড়ে মাইশা কোথায়?
“অফিসার মাইশা এসেছিলো এখানে?

পুলিশ অফিসার জবাব দিতে পারে না। জবাব দেওয়া বারণ তাদের।
তিনি গলা খাঁকারি দিয়ে বলে
” পার্সোনাল কথা কাউকে শেয়ার করা বারণ। মাইশা ম্যাম নিজেকে আড়াল রাখতে চাচ্ছে।
সোহেল ভ্রু কুচকে বলে ওঠে

“কিন্তু আমার কেনো মনে হচ্ছে মাইশা এসব কিছুই জানে না। আপনারা কিছু লুকচ্ছেন।
পুলিশ অফিসার হাসে। মাথা চুলকে জবাব দেয়
” মাইশা ম্যাম এর মেয়ে বেবি হতে যাচ্ছে। ম্যাম ইনভাইট করেছেন আপনাদের সহ আমাকে৷ সময় হলে সবাইকে নিয়ে যাবো।

শিহাব হিসাব মিলায়। মাইশার তো প্রেগন্যান্সির ছয় মাস চলে। তার কন্যা সন্তান আসতে চলেছে? কোল জুড়ে ফুটফুটে বাবু আসবে?
ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে শিহাব এর।
বিরবির করে বলে
“আমার মেয়ে হবে?
বাবা তোমাকে ঠিক নিয়ে আসবে সোনা। আমার মেয়ে আমার সাথে থাকবে।

কিছু প্রশ্নের উওর থাকলেও কখনো মুখের ওপর উওর দেওয়া যায় না। এই যে মাইশাকে প্রশ্ন করা হয়েছে “সে রিয়াদকে বিয়ে করতে চায় কি না”
মাইশা চাইলেই কড়া গলায় জবাব দিতে পারে। “নাহহহ; আমি ওনাকে বিয়ে করতে চাই না” কিন্তু মাইশা পারছে না।
কারণ গতকাল রাতে মাইশা ঘুমানোর আগে একটু বাইরে বেরিয়েছিলো পানি খেতে। তার রুমে পানি ছিলো না। তখন মাইশা রেহেনা বেগম এর রুমে কথার আওয়াজ পায়। নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে এগিয়ে যায় শুনতে। দরজার পাশে দাঁড়াতেই মাইশার চোখ পড়ে রুমের ভেতরে।

রিয়াদ তার মায়ের পা জড়িয়ে কাঁদছিল এবং বলছে “আমি মাইশাকে ছাড়া বাঁচবো না। জীবনে তোমাদের কাছে কিচ্ছু চাই না। যা বলেছো তাই করেছি শুনেছি। শেষ বারের মতে মাইশাকে চাচ্ছি। আমাকে ভিক্ষা দাও”
নিজের চোখে এমন আকুলতা দেখে মাইশা দিশেহারা হয়ে গিয়েছে। কি করবে? বা করা উচিত? বুঝতে পারছে না।
রেহেনা বেগম বিরক্ত হয় মাইশার চুপ থাকা দেখে। আমিনুল শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সময় দিচ্ছে মাইশাকে ভাবতে।

অশান্ত রিয়াদ। হাত পা কাঁপছে তার। ডিসেম্বরের হাড় কাঁপানো শীতে সে ঘেমে যাচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। একটু পানির প্রয়োজন অনুভব করছে। স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছে না সে। একবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে তো আবার বসে যাচ্ছে।
“ওর থেকে অনুমতি নেওয়ার কি আছে? আমার ছেলের মতো ছেলে সে গোটা দুনিয়া খুঁজলেও পাবে না। তুমি আংটি বানিয়ে আনো। পড়িয়ে রাখবো। বাচ্চা হয়ে গেলে বিয়ে হবে।

রেহেনার শক্ত জবাব। বুক কেঁপে ওঠে মাইশার। দ্বিতীয় বার বিয়ে করার ইচ্ছে তার নেই। রিয়াদ যথেষ্ট ভালো ছেলে কিন্তু ভালো বর সে কখনোই হতে পারবে না। আবেগের বসে লাফাচ্ছে এখন। কিন্তু যখন বুঝতে পারবে বা আবেগ কেটে যাবে তখন আফসোস করবে। অন্যের সন্তানকে নিজের সন্তান পরিচয় দেওয়া কি এতোই সহজ?
কখনোই না।
স্ত্রীর মন্তব্যে বিরক্ত বোধ করে আমিনুল। বিয়েটা মাইশার। সিদ্ধান্ত মাইশার। এখানে কোনো প্রকার জোর তিনি করতে চায় না।

” মাইশা তুমি নির্ভয়ে জবাব দেও। কোনো চাপ দেওয়া হবে না তোমায়। রিয়াদ তোমাকে ভালোবাসে। তাছাড়া বাকিটা জীবন তুমি একা কাটাতে পারবে না। তোমার কাউকে প্রয়োজন পড়বেই। তোমার বাচ্চার একটা ঠিকঠাক পরিচয় দরকার।
বাকিটা তুমি ভাবো।
আমিনুলের কথার পিঠে মাইশা বলে ওঠে

“আমি রিয়াদকে বিয়ে করতে রাজি। তবে এখন নয়। আমার ডিভোর্সটাও হয় নি এখনো। যতই প্রেগন্যান্সি গোপন রেখে ডিভোর্স পেপার বানানো হোক না কেনো। ডিভোর্স কিন্তু হয় নি। আর আমি জানি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে শিহাব সেটা কোর্টে জমা দেয় নি।
প্রোপারলি ডিভোর্সটা হোক। তারপর আমার বাচ্চা দুনিয়ার আলো দেখুক। তখন যদি রিয়াদ বাচ্চাকে নিজের মনে করতে পারে আমি বিয়ে করবো।

মাইশার জবাবে সন্তুষ্ট আমিনুল। রেহেনারও ভালো লেগেছে জবাব। তার ছেলেকে রিজেক্ট করে দিলে এই মুহুর্তে এই মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দিতো রেহেনা।
মাইশা এবার রিয়াদের চোখে চোখ রেখে বলে
” তুমি কথা রাখতে পারো না রিয়াদ। কথার খেলাপ করা মানুষদের আমার পছন্দ না।
বলেই মাইশা চলে যেতে নেয়। রিয়াদ বলে ওঠে

দুঃখবিলাসী পর্ব ১৫

“আমাকে তোমার কখনোই পছন্দ ছিলো না।
একটা কথা শুনে রাখো
আমার আমাদের বেবিকে লাগবে। আমি তোমাকে আর তাকে সুন্দর একটা জীবন দিবো।

দুঃখবিলাসী শেষ পর্ব