দুঃখবিলাসী পর্ব ১৪

দুঃখবিলাসী পর্ব ১৪
তানিশা সুলতানা

সময় কখনো থেমে থাকে না। সে তার নিজের নিয়মে চলতেই থাকবে। নভেম্বর গড়িয়ে ডিসেম্বর চলে এসেছে। শীতের তীব্ররতা বেড়েই চলেছে। তার সাথে বেড়ে উঠছে মাইশার অংশ। পাঁচ মাসে পা রেখেছে সে। কি করে তিনটে মাস চলে গেলো বুঝতেই পারলো না মাইশা৷

তিন মাসে তার বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা বেড়ে গিয়েছে দ্বিগুন। জীবন বুঝি এতোটাও সুন্দর হয়? এরই মধ্যে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিয়েছে শিহাবের কাছে। ডিভোর্সের সকল কার্যক্রম আমিনুল করেছে। গোপন রেখেছে মাইশার বাসস্থান। রেহেনা বেগম নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসে মাইশাকে৷ আদর করে বকে আবার যত্নও করে।
মায়ের আদর কেমন হয় ভালোই বুঝতে পারছে মাইশা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কুয়াশা মাখা সকাল। প্রচন্ড কুয়াশা পড়েছে আজকে। দূরের কিছুই দেখার জোও নেই। খুব ভোরেই ঘুম ভেঙে গিয়েছে মাইশার। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর ফলেই হয়েছে এমনটা। বিছানায় শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিলো না বলে গুটিগুটি পায়ে বের হয় রুম হতে। গায়ে পাতলা চাদর জড়িয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এই বাড়িতে মাইশার সব থেকে প্রিয় জায়গা হচ্ছে ছাঁদ। ছাঁদ থেকে কালো গোলাপের বাগানটা স্পষ্ট দেখা যায়। কি যে সুন্দর লাগে।

ছাদের দরজা খুলতেই মাইশার কপালে ভাজ পড়ে। খানিকটা অবাক হয়েছে সে। কারণ রিয়াদকে দেখা যাচ্ছে। সে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়াদের সাথে মাইশার কথা হয় না। দেখা হয় প্রায়ই। রিয়াদকে দেখা যায় মাইশার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বা বাগানে একদম মাইশার রুমের বেলকনি বরাবর দাঁড়াতে।
কখনো কখনো মাইশার খাওয়ার সময়ও সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।

মাঝেমধ্যে মাইশা লজ্জায় পড়ে যায়। বাবা মা ইদানীং মানে না রিয়াদ। রেহেনা বেগমও তেমন কড়া চোখে তাকায় না।
মাইশা অনেকবার ভেবেছে রিয়াদের সাথে খোলাখুলি কথা বলতে। আবার পিছিয়ে এসেছে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাইশা এগিয়ে যায়। রিয়াদের থেকে খানিকটা দূরে রেলিং ধরে দাঁড়ায়।

পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে রিয়াদ আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাইশার পানে তাকায়।
মেয়েটার মধ্যে জাদু আছেম অদ্ভুত সুন্দর এই মেয়ে। রিয়াদের চোখই ফিরতে চায় না মেয়েটার থেকে।
একটু মোটা হয়েছে আগের থেকে। তাতে সৌন্দর্য আরও বেরেছে। পেটটা অনেকটা উঁচু হয়েছে।
রিয়াদের খুব করে ইচ্ছে করে মেয়েটাকে একটু ছুঁয়ে দিতে। শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিতে। কিন্তু পারে না। অনুমতি নেই অধিকারও নেই।

“তোমার একটু মায়া হয় না মাইশা? একটুও মন গলে না? আমাকে তোমার একটুও ভালো লাগে না?
চোখে বোধহয় পানি চিকচিক করছে রিয়াদের। ছেলেটা একটু বেশিই ইমোশনাল। নিজের আবেগ লুকাতে পারে না।
” শুনো
তুমি যেটা ভাবছো বা চাচ্ছো সেটা যে সম্ভব নয়। এটা তুমি বুঝতে পারো না?
জীবন এতোই সহজ?

আমি একটা বিবাহিত মেয়ে। সরি ডিভোর্সি মেয়ে। আমি পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট। তোমাদের আশ্রিতা। ঠিকঠাক একটা পরিচয় নেই। এসব তুমি ভাবছো না?
তুমি কি বুঝতে পারছো না? আমার থেকে কিচ্ছু পাবে না তুমি। কি মিন করছি একটু বুঝে নাও।
রিয়াদ একটু সাহস কুড়িয়ে মাইশার ডান হাতখানা নিজের হাতের ভাজে নিয়ে নেয়। চোখে চোখ রেখে জবাবে বলে
“তোমার থেকে আমি কিচ্ছু চাই না। তুমি শুধু কাগজে কলমে আমার হয়ে থাকো। যাতে কখনো চলে যেতে চাইলে সেই কাগজটা তোমায় আটকে দেয়।

রিয়াদের থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয় মাইশা। চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
” আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড? হবু বউ?
হাত ধরার সাহস পাও কোথায় তুমি? তোমাদের বাড়িতে থাকছি বলে দুর্বল ভাবছো? সুযোগ নিতে চাচ্ছো?
মাথা নিচু করে ফেলে রিয়াদ।

“আ’ম সরি
নেক্সট টাইম ধরবো না।
” তোমার মা তোমার বিয়ে দিতে চাচ্ছে। মেয়ে দেখছে। চুপচাপ বিয়ে করে নাও।
বোধহয় একটু রেগেই যায় রিয়াদ।
“বিয়ে করে নিবো?

বাস্তবতা জানো তুমি? একা একা পারবে বাচ্চা মানুষ করতে? স্কুলে দিতে হবে তোমার বাচ্চাকে। তার একটা সুন্দর ভবিষ্যত দিতে হবে। তাকে সুস্থ ভাবে মানুষ করতে হবে।
একা পারবে তুমি?

আমি বিয়ে করে নিলে আমার মা তোমায় ভালোবাসবে না। আমার বাবা তোমার সাথে এতোটা ফ্রী হশে মিশবে না। ইন ফিউচার তোমাকে চলে যেতেও বলতে পারে। তখন?
ভবিষ্যত চিন্তা করো মাইশা।
মাইশার কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। বুদ্ধি মতি মাইশা কিছুটা আন্দাজ করে ফেলে। বুঝে ফেলে ওনেক কিছু। স্বার্থ ছাড়া এই দুনিয়াতে মানুষ দুটো আশ্রয় দেবে না সেখানে ওনারা পুরো তিন মাস ভালোবেসে আগলে রাখলো। এমনি এমনি?
অবশ্যই নয়।

তাচ্ছিল্য হাসে মাইশা। রিয়াদের এলোমেলো চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে দেয়। হুড়ির টুপি টেনে মাথায় তুলে দেয়। রিয়াদ শুধু দেখতে থাকে মাইশাকে। মাইশার এই টুকু ছোঁয়াতেই তার হৃদপিণ্ড কাঁপছে। হাত পায়েও বোধহয় কাঁপনের সৃষ্টি হচ্ছে।

” আমি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখি না। আল্লাহ আমাকে দুঃখ দেওয়ার জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছে। সুখের লোভ দেখিও না। আমি ভীষণ লোভী। না জানি কখন তোমার ফাঁদে পা দিয়ে ফেলি।
রিয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেলে। মায়াবতী নারীর মুখপানে বেশিখন তাকানো বারণ।
“আমাকে ছেড়ে যেও না মাইশা। এমন কিছু করিও না যাতে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।

সত্য কখনোই চাপা থাকে না। শিরিন নিখোঁজ তিন মাস হয়ে গেলো। শিহাব পাগলের মতো খুঁজেছে তার মাকে। প্রতিটা থানায় জিডি করেছে। পুলিশকে টাকা দিয়েছে তার মাকে খুঁজে দেওয়ার জন্য।
কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না। মাকে হারিয়ে শিহাব প্রায় পাগলপ্রায়। ইভা নিশ্চুপ। শিহাবের সাথে তাল মেলাচ্ছে।
কিন্তু মনে মনে তার ভয় হচ্ছে। যদি কখনো শিহাব জেনে যায়।

দুঃখবিলাসী পর্ব ১৩

গত কয়েকদিন যাবত শিহাব রুম বন্দী হয়ে আছে। মাইশা ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে। সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে মাইশার সাইন রয়েছে। শিহাব এখনো সাইন করে নি। করবেও না। মাইশাকে সে খু ন করবে তবুও ডিভোর্স দিবে না।

দুঃখবিলাসী পর্ব ১৫