দুঃখবিলাসী পর্ব ১৩

দুঃখবিলাসী পর্ব ১৩
তানিশা সুলতানা

সুন্দর একটা জীবন সব মেয়েই আশা করে। ভালো ভাবে দুদিন বাঁচবে। স্বামী সন্তান নিয়ে দুটো দিন সুখে থাকবে। এটাই তো কামনা করে সকল নারী।
মাইশাও তেমনটাই চেয়েছিলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সে ভালো থাকতে পারে নি। সুখের নাগাল পায় নি। জন্ম থেকেই দুঃখের সাথে বসবাস করে আসছে।
অবশেষে হয়ত সুখের দেখা পেলো?

এই যে এই বাড়ির মানুষ গুলো কি সুন্দর আগলে রাখছে মাইশা। রেহেনা বেগম মেয়ের মতো ভালোবাসা দিচ্ছে। খাইয়ে দিচ্ছে, মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে, সময় মতো ঔষধ দিচ্ছে। নিজ দায়িত্বে মাইশাকে সুখের রাজ্যে ঘুরিয়ে আনছে। আমিনুল ইসলাম অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় মাইশা এবং আয়রার জন্য বিভিন্ন ধরণের খাবার নিয়ে আসে। বিকেলে ওদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়।
শুধু রিয়াদের সাথেই মাইশার দুরত্ব। রিয়াদ খুব একটা আসে না মাইশার আশেপাশে। দেখা হয়ে গেলেও কথা বলে না তেমন। মাইশা শুধু হাসে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মায়ের কড়া স্বাশনে সে মাইশার কাছে আসছে না এটা ভালোই জানে মাইশা।
আজকে শুক্রবার। অফিস বন্ধ। মাইশার এই বাড়িতে আসার ৬ দিন হলো।
রেহেনা বেগমের কাজ বেশি। সে রান্না করায় ব্যস্ত। মাইশা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় রান্না ঘরে।
“আন্টি আমি সাহায্য করবো?

রেহেনা বেগম তরকারি কাটায় মনোযোগ দিয়ে কড়া গলায় জবাব দেয়
” কোনো দরকার নেই। ওখানে দুধ রেখেছি চুপচাপ খেয়ে রেস্ট নাও।
মাইশা দ্বিতীয়বার কিছু বলার সাহস পায় না। ওনাকে মাইশা খুব ভয় পায়। এ বাড়ির গিন্নি উনি। যদিও মাইশাকে ভালোবাসে তারপরও ভয়। যদি কখনো বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। কোথায় যাবে সে?
মাইশা দুধ টুকু খেয়ে নেয়। রেহেনা অগোচরে হাসে। মায়া পড়ে গেছে মেয়েটার ওপর।

“কফির মগটা রিয়াদকে দিয়ে রেস্ট নাও গিয়ে।
আমার হাত জোরা
যেতে পারছি না।
মাইশা মাথা নারিয়ে কফির মগটা হাতে তুলে নেয়।
এই বাড়িতে আসার পর থেকে মাইশার জামাকাপড়ের সংখ্যা বেরে গিয়েছে। শাড়ি ছেড়ে সালোয়ার কামিজ পড়া শুরু করেছে। এসব অবশ্য আমিনুল ইসলাম এনে দিয়েছে। তবে রিয়াদের পছন্দ করা প্রতিটা ড্রেস সেটা মাইশার জানা।
দোতালার দ্বিতীয় কামড়া রিয়াদের। এই ৬ দিনে কখনোই রিয়াদের রুমে ঢুকে নি মাইশা। ঢোকার কোনো কারণও ছিলো না।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ ইতস্তত বোধ করতে থাকে। শত হোক রিয়াদ ছেলে মানুষ।
মাথার ঘোমটা আরও একটু টেনে দরজায় টোকা দেয়। ভেতর থেকে কোনো শব্দ আসে না।
” ভেতরে আসবো? তোমার জন্য কফি পাঠিয়েছে আন্টি।

এবারও কোনো শব্দ আসে না। মাইশা বুকে সাহস জমিয়ে দরজা ধাক্কা দেয়। সাথে সাথেই খুলে যায়। ভেতরে ঢুকে পড়ে মাইশা। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে রিয়াদ। কোমর ওবদি কম্বল টানা। পেশিবহুল ফর্সা পিঠ দেখা যাচ্ছে।
দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে মাইশা। খাটের পাশে থাকা ছোট টেবিলে কফির মগ রাখে।
বুঝতে পারে রিয়াদ গভীর ঘুমে আছন্ন। কফিটা নিয়ে যাবে কি না দোটানায় পড়ে যায় মাইশা। রেখে গেলে রিয়াদ জেগে উঠতে উঠতে ঠান্ডা হয়ে যাবে।

এসব চিন্তা করে কফির মগে হাত দিয়ে যেতেই একটা গম্ভীর নেশালো কন্ঠস্বর ভেসে আসে মাইশার কানে
“আমাকে ভালোবাসতে দেবে মাইশা? তোমার সাথে বাঁচার অনুমতি দিবে? ট্রাস্ট মি কখনো কষ্ট দিবো না।
বুক কেঁপে ওঠে মাইশার। হাত থেমে যায়। ধীর দৃষ্টিতে তাকায় রিয়াদের পানে। রিয়াদ বসে পড়েছে ইতোমধ্যে। চোখ দুটো অন্য রকম লাগছে। উসকোখুসকো চুল। ড্রিংক করে ফিরেছিলো রাতে এবং এখনো তার প্রভাব কাটে নি বিচক্ষণ মাইশা ঠিক বুঝতে পারে।

” নেশা করেছো কেনো? আংকেল দেখলে কতোটা কষ্ট পাবে।
নরম গলায় বলে মাইশা।
রিয়াদ মাথা নুয়িয়ে ফেলে
“তুমি আমার সাথে একটু ভালো করে কথা বললে আমি আর কখনোই ড্রিংক করবো না।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাইশা।
” কথা রাখতে শিখো।

“তোমার অভাবে মরে গেলে কথা রেখে কি হবে? তোমাকেই তো পাবো না।
” এরকম কথা বললে আমি চলে যাবো এই বাড়ি থেকে। দুর্বল ভেবো না।
কড়া গলায় বলে ওঠে মাইশা। ভয়ে মুখখানা চুপসে যায় রিয়াদের।
চোখে পানি টলমল করে ওঠে।

“আমি আর কখনো এসব বলবো না। তুমি থেকো যাও প্লিজ। তোমাকে দেখেও এক অদ্ভুত শান্তি পাই আমি।
আর এক মুহুর্তও দাঁড়ায় না মাইশা। চলে যায় রিয়াদের রুম থেকে। রিয়াদ ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
পুরুষ মানুষ সহজে কাঁদে না। কিন্তু রিয়াদ কাঁদে। কষ্ট পেলে সে কান্না আটকে রাখতে পারে না।
রাতে বাজে স্বপ্ন দেখেছে। সে দেখেছে মাইশা হারিয়ে যাচ্ছে। মাইশা রিয়াদ এবং ছোট্ট পরি। তিনজনে ঘুরতে গিয়েছে। হঠাৎ কোথা থেকে শিহাব এসে নিয়ে যায় মাইশাকে। একা পড়ে রয় রিয়াদ এবং ছোট্ট পরি। পরিটা মা মা বলে কাঁদতে আর রিয়াদকে বলছে ” পাপা মা এনে দাও”

কিন্তু রিয়াদ মনেই করতে পারছে না শিহাব মাইশাকে নিয়ে কোথায় গিয়েছে।
এক অদ্ভুত দেয়াল রিয়াদকে বন্দি করে রেখেছে।

ভাগ্য কখন কার বদলে যাবে কেউ বলতে পারে না। কার সময় কখন পাল্টে যাবে টেরও পাবে না।
এই যে শিরিন বেগম। দীর্ঘ দশ বছর যাবত নারী পাচার কাজে নিয়োজিত। অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। ছেলে মেয়ে কিংবা নিজের পেছনে একটা টাকাও ব্যায় করে নি। ছোট বেলা থেকে অভাবের সাথে লড়াই করতে করতে বড় হয়েছেন। বিয়ে করে স্বামীর বাড়িতে পা রেখেও অভাব দেখেছেন। জীবনে একটাই জেদ ছিলো টাকা দেখবে। এবং দেখেছেও টাকা। স্বামী এবং সন্তান নিয়ে আলাদা সংসার পেতেছেন। মুজিবুরকে কখনোই তার পরিবারের কাছে যেতে দেয় নি। বলা বাহুল্য বউকে তিনি ভয় পায়।

ছেলেকেও নিজের মতো তৈরি করে নিয়েছেন শিরিন। তবে ছেলে জানে না তার এই নারী পাচারের কেচ্ছা। এটা অবশ্য শিরিন জানাতেও চায় না।
ইভাকে নিয়ে বেরিয়েছিলো শিরিন বেগম। উদ্দেশ্য ইভাকে দিয়ে আসবে তার আস্তানায়। এমনিতে কখনোই ইভা আসতো না। শিরিন গহনা কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
শিহাবকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। এখন ওবদি শিহাব একটা কথাও বলে নি। ডাক্তারের মতে উনি একদম ঠিক আছে। এবং ইচ্ছে করেই কথা বলছে না।

শহর পেরিয়ে গ্রামের রাস্তায় ঢুকে পড়ে অটোরিকশা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। এইদিকের পথ ঘাট একদম ফাঁকা। মানুষজনের চলাচল নেই বললেই চলে। যমুনা ব্রিজের ওপর দিয়ে অটোরিকশা যাওয়ার সময় ইভা তার হাতে লুকানো চা কুটা ঢুকিয়ে দেয় শিরিন বেগম এর বু কে। শব্দ করে ওঠে শিরিন। থেমে যায় অটোরিকশা। ড্রাইভার নেমে আসে। এবং ইভার সাথে মিলে শিরিন বেগম এর হাত পা বেঁধে গলা বরাবর ছু ড়ি চালিয়ে নদীতে ফেলে দেয় শিরিন বেগমের দেহ খানা।

দুঃখবিলাসী পর্ব ১২

ঠোঁট মেলে হাসে ইভা। ড্রাইভারের সাথে হাত মেলায়।
“আমার শরীরে তোমারই র ক্ত বইছে। ভুলে যাও কি করে? স্বার্থপরতা আমার র ক্তে মিশে আছে। এবার তুমিও শান্তিতে থাকো এবং আমাকেও শান্তিতে থাকতে দাও।

দুঃখবিলাসী পর্ব ১৪