দুঃখবিলাসী পর্ব ১২

দুঃখবিলাসী পর্ব ১২
তানিশা সুলতানা

কালো গোলাপ বরাবরই মাইশার পছন্দ। শিহাবকে কতো বলতো “আমাদের যখন নতুন বাড়ি হবে। সেই বাড়ির সামনে খানিকটা জায়গা জুড়ে কালো গোলাপ চাষ করবো। বাগান আমার একখানা। আমি গোধুলি বিকেলে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে বাগানের মাঝখানে বসে গোধুলি উপভোগ করবো”

আজকে মাইশা যে বাড়িতে পা রাখছে সেই বাড়ির সামনে বিশাল বড় জায়গা গুড়ে কালো গোলাপের বাগান। বাগানের মাঝখানে দোলনা। মাইশা স্বপ্ন সাজিয়েছিলো। তাদের যখন নিজের বাড়ি হবে। তখন সাদা এবং নীল রং দিয়ে দেয়াল রাঙাবে। এই বাড়ির দেওয়ালও সাদা এবং নীল রং দিয়ে রাঙানো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

গাড়ি থেকে নেমে মাইশা শুধু চারিদিকে তাকিয়ে দেখছে। স্বপ্ন না কি বাস্তব এটাই চিন্তা করছে। আবার এটাও ভয় পাচ্ছে এই সুখ নীড়ে কি একটুখানি সুখের হদিশ পাবে? সুখ কি এবার ধরা দিবে? না কি অভাগীর কপালে সুখ লেখা নেই?

“দাঁড়িয়ে পড়লে যে? চলো?
রিয়াদ মাইশার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে। মাইশা ঘাড় বাঁকিয়ে এক পলক তাকায় মাইশা রিয়াদের পানে। সাড়ে চার ঘন্টা জার্নি করে তারা এখানে এসেছে। এই জায়গার নাম কি জানা নেই মাইশার। শুধুমাত্র রিয়াদের ভরসায় চলে এসেছে। রিয়াদকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে ফেলেছে।
জানা নেই রিয়াদ ভরসার দাম দিতে পারবে কি না। তবে এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে মাইশার মনে হয়েছে “দ্বিতীয় বার কাউকে বিশ্বাস করে দেখি। ঠকলে ধরে নিবে নিয়তির লিখন”

“এটাই আমাদের বাড়ি। ঢাকাতে পাপার ব্যবসায়ের জন্য থাকতে হয়। গতকাল মাম্মাম এবং বোন চলে এসেছে। আজকে আমরা চলে আসলাম। এখন থেকক এখানেই থাকবো আমরা।
মাইশা মৃদু হেসে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে থাকে। পায়ের ব্যাথাটা এখনো তাজা। কাটা জায়গায় ব্যান্ডেজ লাগানো হয়েছে। রিয়াদের ইচ্ছে করছিলো মাইশার নরম তুলতুলে হাত খানা ধরে দু পা এগিয়ে দিতে। এতে বোধহয় মেয়েটার কষ্ট একটু কমতো। রিয়াদের সাপোর্ট এ একটুখানি শান্তিতে হাঁটতে পারতো।
কিন্তু অধিকার নেই।

হাঁটতে হাঁটতে একখানা কালো গোলাপ ছিঁড়ে নেয় মাইশা। কানের পিঠে গুঁজেও ফেলে। মনটা আজকে তার বেশ ফুরফুরে। ভীষণ ভালো লাগছে৷ মনের কোণে সুখ উঁকি দিয়েছে। প্রশান্তিতে বুকটা ভরে আসছে। এতো সুখ কেনো লাগছে?
বদ্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তি পেয়েছে বলে?
হবে হয়ত।

রিয়াদ দেখে মুগ্ধ হয়ে।
মেইন দরজার সামনে লেখা “সুখনীড়”
এটা কি সুখের রাজ্য? মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে মাইশার। ইচ্ছে করে রিয়াদকে শুধাতে। কিন্তু চেপে যায়।
রিয়াদ কলিং বেল চাপে। সাথে সাথেই দরজা খুলে যায়। হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আয়রা। মাইশাকে দেখেই জাপ্টে জড়িয়ে ধরে

“তুমি এসেছো। আমার সাথে থাকবে? আমার রুমেই কিন্তু থাকবে। এক সাথে ঘুমবো দুজন। গল্পও করবো ঠিক আছে?
মুচকি হাসে মাইশা। হাত বুলিয়ে দেয় আয়রার মাথায়।
” ঠিক আছে থাকবো। আয়রা ছাড়ে মাইশাকে। হাত ধরে টেনে ভেতরে ঢুকায়।
“মাম্মাম দেখো না। আপাই এসেছে।

রেহেনা বেগম খুন্তি হাতে বেরিয়ে আসে। মাইশা তাকিয়ে থাকে। ভীষণ সুন্দরী মহিলা। ওনার দুটো ছেলে মেয়ে আছে বোঝা মুশকিল। অমায়িক হাসি মহিলার।
তিনি মাইশার সামনে দাঁড়িয়ে এক গাল হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়
” মাশাআল্লাহ মা। তুমি অনেক সুন্দর।
জবাবে মাইশা সালাম দেয়। তিনি সালাম ফিরিয়ে বলেন
“আয়রা মাইশাকে ওর রুমে নিয়ে যাও।

ওর রেস্ট প্রয়োজন।
আয়রা মায়ের কথা মতো মতো মাইশার হাত ধরে তাকে নিয়ে চলে যায়।
মাইশা রুমে ঢুকতেই রেহেনা বেগম এগিয়ে গিয়ে রিয়াদ এর মুখোমুখি দাঁড়ায়।
” মেয়েটাকে আমি ততখনই যত্ন করবো যতখন সে শুধুমাত্র আশ্রিতা থাকবে। এর বাইরে একটু গন্ডগোল দেখলে হয় আমি ম র বো নয়ত মেয়েটাকে মা র বো।
বলেই তিনি চলে যায়। রিয়াদ অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে মায়ের চলে যাওয়ার দিকে।
অনুভূতি বুঝি কেউ বোঝে না?

শিহাব এর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে দুদিন পরে। এই দুই দিনে ইভা পাগলের মতো খুঁজেছে শিহাবকে। শিরিন কিছুতেই ইভাকে হাতের নাগালে পায় নি। কিডন্যাপ করানোর জন্য লোকও লাগিয়েছে কিন্তু কোনো ফয়সালা তারা করতে পারে নি। মনে মনে বেশ চটে আছে শিরিন। ইভাকে হাতের নাগালে পেলে মনের খায়েশ মিটিয়ে আগে মা রবে তারপর অন্য কথা।

হাসপাতালের বেডে অবচেতন অবস্থায় পড়ে আছে শিহাব। জ্ঞান ফিরে নি তার এই দুই দিন। একটা হাত ভেঙে গিয়েছে। মুখের অবস্থা ভয়াবহ। একটা পাশ পুরক গিয়েছে। মনে হচ্ছে গরম তেল ঢেলে দেওয়া হয়েছিলো তার মুখে।
ইভা স্তব্ধ হয়ে কিছু খন তাকিয়ে থাকে শিহাবের দিকে।

দুঃখবিলাসী পর্ব ১১

গোধুলি বিকেল। হাতে চায়ের কাপ নিয়ে বাগানের সেই দোলনায় বসে আছে মাইশা। মনটা তার ফুরফুরে।
এই বাড়ির মানুষ গুলো অসম্ভব ভালো। সত্যিই এটা সুখ নীর। কয়েকটা ঘন্টা এখানে এসেছে তাতেই হৃদয় শীতল হয়ে উঠেছে।
চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিতেই হঠ্যাং করে মাথা ঘুরে ওঠে মাইশার।

দুঃখবিলাসী পর্ব ১৩