দুঃখবিলাসী পর্ব ১১

দুঃখবিলাসী পর্ব ১১
তানিশা সুলতানা

দুয়ারে দুঃখ হানা দিলে প্রতিটা জীব মৃ ত্যু কামনা করে। অথচ তারা চিন্তা করে না মৃ ত্যু ঠিক কতটা যন্ত্রণা দায়ক।
মৃ ত্যুর দুয়ার হতে ফিরে আসা মানুষটিই অনুভব করতে পার মৃ ত্যু যন্ত্রণা।
যেমন আজকে মাইশা করছে। নিজেকে বাঁচানোর অনেকটা চেষ্টাই করে গিয়েছে সে। বাঁধা হাত পা ছটফট করতে গিয়ে রসি আরও শক্ত হয়ে গিয়েছে। বা পায়ের অনেকটা অংশ কেটেও গিয়েছে।

জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে মাইশা। চিৎকার করে কেঁদেছে অনেক। মনে হচ্ছে মৃ ত্যু যন্ত্রণা ভোগ করছে। কিন্তু আজকে অনুভব করতে পারছে সেটা কোনো কষ্টই ছিলো না। সেটা ছিলো ক্ষণিকের মন খারাপ।
যেই মুহুর্তে মাইশা মৃত্যুকে বরণ নিচ্ছিলো। ভেজা আঁখি পল্লব বন্ধ করে নিঃশ্বাস বেরিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করছিলো সেই মুহুর্তেই দমকা হাওয়ার মতো উপস্থিত হয় রিয়াদ। লোকটাকে মাইশার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ছাড়া পেতেই মাইশা হা করে ঘন ঘন শ্বাস টানতে থাকে। কাশি উঠে যায়। কাশতে কাশতে মুখে রক্ত চলে আসে। তাকিয়ে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।
নজর জোড়া বন্ধ করার আগে ঠোঁট নারিয়ে রিয়াদকে বলতে চাচ্ছিলো “ওকে মেরো না”
কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না। বেরিয়ে আসে র ক্ত। অনেকটা চেষ্টা করেও রিয়াদকে মা রতে না করতে পারে না মাইশা।

নিলজ্জ মাইশা।
যে মানুষটা তার প্রাণ কেড়ে নিচ্ছিলো সেই মানুষটার আঘাতে তার ভেতরটা ফেঁটে যাচ্ছে।
রিয়াদ থামে না। মারতেই থাকে। শক্তপোক্ত রিয়াদের সাথে পেরে ওঠে না শিহাব। একটা আঘাতও ফেরত দিতে পারে না রিয়াদকে।

মা রতে মা রতে ক্লান্ত হয়ে থামে রিয়াদ। হাঁটু ভাজ করে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে থাকে। ফ্লোরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে শিহাব।
রিয়াদ পেছনে ফিরে। বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে তার।

শিরিন বেগম ৩০ জন মেয়ের কন্টাক্ট নিয়েছে। কিন্তু ২৯ জন মেয়ে জোগাড় করতে পেরেছে। শিরিন এর পরিকল্পনা ওই একটা মেয়ের জায়গায় ইভাকে দিয়ে দিবে। দেখতে বেশ সুন্দরী ইভা। তারাও পছন্দ করে নিবে।
ইভা নিজেকে গুটিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে রুম থেকে বের হয়। ড্রয়িং রুমে মুজিবুর বসে খবরের কাগজে নজর বুলাচ্ছে। মানুষটার চোখেট কোণায় পানি চিকচিক করছে। আশ্চর্য জনক ভাবে ইভার ভীষণ খারাপ লাগছে।
ছোট বেলা থেকেই ইভা তার খালামনির স্বভাবের সাথে পরিচিত। সে জানে সবটা। সব সময় খালামনিকে উৎসাহ দিয়ে এসেছে। এক মুহুর্তের জন্যও মনে হয় নি তার খালামনি ভুল করছে।

এমনকি সুমাইয়াকক তৃতীয় বিয়ে দিয়েছিলো ইভা চক্রান্ত করে। সুমাইয়া এবং সোহেল এর বিচ্ছেদ এ ইভারও হাত রয়েছে। ইভার চাচাতো ভাই রকির সাথে সুমাইয়ার তৃতীয় বিয়ে হয়।
ঘুমন্ত সুমাইয়ার রুমে রকিকে পাঠিয়েছিলো ইভা। এবং পরে লোক জড়ো করে সুমাইয়াকে বদনাম দিয়ে বিয়ে দিয়েছিলো। এতে অবশ্য শিরিন এরও হাত রয়েছে।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ইভা। এগিয়ে গিয়ে মুজিবুর এর পাশে বসে।
“বাবা শিহাব কল করেছিলো? কোথায় গেছে?
জবাব দেয় না মুজিবুর। প্রয়োজন মনে করে না।
ইভা হতাশ হয়। তাকিয়ে থাকে মুজিবুর এর মুখের দিকে। নিঃসন্দেহে লোকটা ভালো মানুষ। সুন্দর একটা সংসার উনিও ডিজার্ভ করে।

” বাবা আমি জানি আমি অনেক অন্যায় করেছি। আমি সত্যিই রিয়েলাইজ করতে পারছি কতোটা খারাপ কাজ করেছি আমি।
সব ভুলে ভালো ভাবে বাঁচতে চাই আমি।
তাচ্ছিল্য হাসে মুজিবুর।
“অন্যের সংসার নষ্ট করে এই মেয়ে ভালো ভাবে বাঁচবে” আল্লাহ সয্য করবে?
“আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক
বলে মুজিবুর পেপারে মনোযোগ দেয়। ইভা খানিকটা অপমানিত বোধ করে।
মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়ায়।

পিটপিট করে চোখ খুলতেই মাইশা নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করে। যাকক তাহলে বেঁচে গিয়েছে? দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথা ঘোরাতেই কপালে ভাজ পড়ে মাইশার। কারণ রিয়াদ তার হাত ধরে ঘুমিয়ে আছে। দুই বার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে মাইশা। কিন্তু পারে না। শক্তি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিতে মন সায় দিচ্ছে না। লোকটা ঘুমাক একটু। মুখখানা দেখেই আন্দাজ করা যাচ্ছে ভীষণ ক্লান্ত সে।

মনে মনে মাইশা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। অনেকটা দূরে চলে যেতে হবে। এই শহরে আর না।
এই শহরের স্বার্থ পর মানুষ গুলো তাকে বাঁচতে দিবে না। কিন্তু মাইশাকে বাঁচতে হবে। নিজের জন্য না হোক। যে আসছে তার জন্য হলেও তাকে বাঁচতে হবে। “বাঁচতে হলে মায়া কমাতে হবে”
মায়া খুব বাজে একটা রোগ। যা একটা জীবিত মানুষকে মৃ*ত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
এইসব ভাবনার মাঝেই রিয়াদ জেগে ওঠে। মাইশার হাত ছেড়ে দেয়। যেনো স না জেনে ভুল করে ফেলেছে। হাঁসফাঁস করতে থাকে। মাইশা গভীর দৃষ্টিতে দেখে রিয়াদকে।

“ভেরি ভেরি সরি। নেক্সট আর কখনোই এমন হবে না। ট্রাস্ট মি আমি ইচ্ছে করে
না মানে কখন কিভাবে
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ঘুমের ঘোরেই বোধ হয়। ক্ষমা করে দিও।
মাথা নিচু করে বলে রিয়াদ।।

মাইশা জবাব দেয় না। চুপচাপ রিয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাইশার থেকে জবাব না পেয়ে রিয়াদ ঠিক আন্দাজ করতে পারে না মাইশা রেগে আছে কি না। তবে মাইশার সাথে কথা বলা জরুরি।
তাই অনেকটা অস্বস্তি নিয়েও মনের কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নেয়। জীবনে এই প্রথমবার নার্ভাস হচ্ছে রিয়াদ। হাত পা বোধহয় মৃদু কাঁপছে।
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলতে শুরু করে

” মাইশা শুনো
পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সহজ বিষয় নয়। আর তুমি এখন একা নও। তোমার মধ্যে আরও একটা প্রাণ বেরে উঠছে। তুমি কিন্তু তাকে একা কখনেই সুস্থ ভাবে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারবে না।
তোমার কারোর সাহায্য দরকার। তোমার বর বা পরিবার কেউ কিন্তু তোমায় সাহায্য করবে না। তারা সুযোগ পেলেই তোমার ক্ষতি করে দিবে।

আই এম সরি আমি তাদের দুর্নাম করছি না। জাস্ট তোমায় বোঝাচ্ছি। তুমি আমায় বন্ধু ভাববে?
আমার পাপাকে বিশ্বাস করবে? আমাদের সাথে থেকে তোমার বেবিটাকে সুস্থ ভাবে দুনিয়াতে আনবে?
কথা দিচ্ছি কখনোই তোমার সুযোগ নিতে চাইবো না। তোমায় বিয়ে করতে চাইবো না। এই ভয়টা পেয়ো না।
রিয়াদ থামতেই মাইশা ভাঙা গলায় বলে ওঠে

দুঃখবিলাসী পর্ব ১০

“আমায় অনেকটা দূরে নিয়ে যাবে রিয়াদ? যেখানে আমার অতীত আমাকে তাড়া করবে না। যেখানে আমি শান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবো। যেখানি নির্ভয়ে দু পা চলতে পারবো। প্রাণ খুলে একটু হাসতে পারবো।
পারবে?

দুঃখবিলাসী পর্ব ১২