দুঃখবিলাসী পর্ব ১০

দুঃখবিলাসী পর্ব ১০
তানিশা সুলতানা

পিটপিট করে চোখ খুলতেই মাইশা অনুভব করে তাকে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার রুমটা। কোথা থেকে একটুও আলো বাতাস আসার জো নেই এই রুমে।
হাত নারাতে যেতেই ব্যাথা অনুভব করে। প্রচন্ড শক্ত করে বেঁধে রাখাতে ব্যাথা হয়ে গিয়েছে হাত জোড়া। পা নারাতে অনুভব করে পা দুটোও বেঁধে রাখা হয়েছে।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাইশা। মৃত্যুর জন্য সময় গুনতে থাকে। এখান থেকে সে বেঁচে ফিরতে পারবে না এটুকু সে বুঝে গিয়েছে। বাঁচিয়ে ফেরত পাঠানোর জন্য তো তাকে এতো কৌশলে এখানে বন্দি করা হয় নি৷
আশ্চর্য জনক বিষয় হলো মাইশার কান্না পাচ্ছে না। একটুও ভয় করছে না মরে যাবে বলে। হ্যাঁ একটু আফসোস পেটে থাকা নিষ্পাপ অংশটার জন্য। যাকে দুনিয়ার আলো দেখাতে ব্যর্থ মাইশা।
নিয়তি বড্ড নিষ্ঠুর।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মনে মনে নিজের ভাগ্য নিয়ে আফসোস করার মুহুর্তেই অনুভব করে রুমের দরজাটা খুলে যাচ্ছে।
এক ফালি আলো এসে ছুঁয়ে দেয় মাইশার গা। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে মাইশা। সকাল হয়ে গিয়েছে?
সকাল না হলে এতো আলো আসতো না নিশ্চয়।
কালো পোশাক পড়া একজন রুমে ঢুকে পড়ে। পরপর আবারও দরজা বন্ধ হয়ে যায়। মাইশা চোখ খুলে। অবয়নটা মাইশার মুখোমুখি বসে পড়ে হাঁটু মুরে। লোকটার ঘনঘন ত্যাগ করা নিঃশ্বাস মাইশা অনুভব করতে পারছে বেশ।
“মেরে ফেলতে চাও আমায়?

শুধায় মাইশা। লোকটা জবাব দেয় না। মাইশার হাতের ওপর হাত রাখে।
মাইশা তাচ্ছিল্য হাসে
” আমার নিঃশ্বাস কেড়ে নিয়ে যদি তুমি শান্তিতে শ্বাস টানতে পারো তাহলে আমার তোমার প্রতি কোনো অভিযোগ থাকবে না।
কিন্তু আমায় মারতে যদি তোমার হাত কাঁপে তাহলে আমার অভিশাপে সারাজীবন দাঁপড়াতে দাঁপড়াতে বাঁচবে তুমি।
মাইশার সুরে ক্রোধ স্পষ্ট। লোকটা অবাক হয়। চেপে ধরে মাইশার গাল। অন্য হাতে চুল গুলো মুঠো করে ধরে ফেলে।

ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠে মাইশা। চোখের কুর্নিশ বেয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
লোকটা দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে
“তোকে মে রে আমি কুকুর দিয়ে খাওয়াবো তোর লা শ।
মাইশা কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু দুই ঠোঁট এক করতে পারে না এতোটাই শক্ত করে লোকটা চেপে রেখেছে মাইশার মুখখানা।

হঠাৎ লোকটার ফোন বেজে ওঠে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে সে। মাইশাকে ছেড়ে দেয়। ফোনটা পকেট থেকে বের করতেই ফোনের আলোতে পুরোনো একটা আলমারি দেখতে পায় মাইশা।
আন্দাজ করতে পারে তাকে ঠিক কোথায় আটকে রাখা হয়েছে।
হাসি ফুটে ওঠে মাইশার ঠোঁটের কোণায়।

লোকটা ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই মাইশা চেঁচিয়ে বলে ওঠে
” রিয়াদ আমাকে এতিম খানার পেছনের ভাঙা গোডাউন এ আটকে রাখা হয়েছে। তুমি পুলিশ নিয়ে চলে এসো।
লোকটা আন্দাজও করতে পারে নি মাইশা এমন একটা কাজ করবে। ভেবাচেকা খেয়ে যায় সে। ফোনের ওপাশে রিয়াদ ছিলো এটা মাইশা জানলো কি করে?

পরপর ফোনটা কেটে যায়।
মাইশা হেসে ফেলে
“মরবো আমি।
তবে এখন নয়৷
তোমার গল্প শেষ করবো তারপরে।
লোকটা ক্ষেপে যায়। ফোনটা পকেটে পুরে তেড়ে এসে গলা চিপে ধরে মাইশার। ভেবেছিলো একটু রয়েসয়ে মারবে। কিন্তু এই মেয়ে ভাড়ি ধরিবাজ।

একে বাঁচিয়ে রাখা মানেই নিজের বিপদ।
দম বন্ধ হয়ে আসছে মাইশার। চোখ দুটো বড়বড় হয়ে গিয়েছে। হাত পা বাঁধা থাকাতে নিজেকে বাঁচানোর জন্য একটুও নরাচরা করতে পারছেনা।
মাইশা নামক অভাগীর গল্পটা বুঝি আজকেই শেষ হয়ে গেলো।
প্রতিশোধ নেওয়া হলো না।

কিছু মানুষকে শাস্তি দেওয়া হলো না।
নিরীহ মানুষই বুঝি সব সময় শাস্তি পায়? আর দোষীরা পার পেয়ে যায়।
দুনিয়া নামক জেলখানা থেকে বুঝি মাইশা নামক অপরাধীর নামটা মুছে গেলো।

সুমাইয়ার দ্বিতীয় স্বামী ইয়াসিন। নারী পাচার কারীর লিডার। শিরিন তার সাথে যুক্ত হয়েছে দশ বছর আগে। নিজের মেয়েকে প্রথম স্বামীর থেকে ছাড়িয়ে ইয়াসিনের সাথে বিয়ে দিয়ে ছিলেন শিরিন। কারণ ইয়াসিন বলেছিলো শিরিনকে লিডার বানাবে। এবং টাকার ভাগ বেশি দিবে।
দুই দিনও সংসার করে নি সুমাইয়া। ইয়াসিনের কিছু তথ্য জোগাড় করে তার বাড়ি থেকে চলে এসেছিলো। এবং শিরিনকে বলেছিলো তাকে ওই বাড়িতে যাওয়ার জন্য জোর করলে সব তথ্য পুলিশকে জানিয়ে দিবে।
ভয় পেয়ে মেয়েকে জোর করেন নি শিরিন।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের পাশে শিহাবকে পায় নি ইভা।
শিহাবের জামাকাপড় এখনো পড়ে আছে ফ্লোরে। ইভার শাড়িটাও পড়ে আছে। শরীরে ব্যাথা অনুভব করছে ইভা। অথচ এটা তাদের প্রথম মিলন নয়।
গতকাল রাতে অন্য রকম এক শিহাবকে আবিষ্কার করেছে ইভা। যে শিহাবের যেনো শুধু শরীরটাই প্রয়োজন।
নরক যন্ত্রণা অনুভব করিয়েছে ইভাকে।

এক রাতে মানুষ পাল্টে যায়?
বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত শিহাব তো অন্য রকম ছিলো। হঠাৎ এতোটা পরিবর্তন কেনো হয়ে গেলো?
কান্না পাচ্ছে ইভার। এ কোন নরকে এসে পড়লো?
তখনই শিরিনের গলা শুনতে পায় ইভা। উচ্চস্বরে ডাকছে এবং দরজা ধাক্কাচ্ছে
“ইভা উঠেছো? ফ্রেশ হয়ে এসো। কথা আছে।
শুকনো ঢোক গিলে ইভা।

দুঃখবিলাসী পর্ব ৯

চাদর পেছিয়ে বাথরুম ছুঁটে।
নিজের ইচ্ছে এই নরকে এসেছে ও।
শিরিন বিরক্ত হয়। ইভা কেনো আসছে না? মনে মনে নতুন ছক কষে ফেলেছে শিরিন। ইভার সাথেও সে গেম খেলতে নামতে চলেছে।

দুঃখবিলাসী পর্ব ১১