দুঃখবিলাসী পর্ব ৯

দুঃখবিলাসী পর্ব ৯
তানিশা সুলতানা

নতুন বউকে রেখে বর লাপাত্তা। শিহাবের কোনো খোঁজ নেই। কবুল বলেই চলে বেরিয়ে পড়েছে। কারো কোনো কথা শোনো নি। ইভা শিহাবের পেছনে দৌড়ে গেইট অবদি এসেছিলো। তবুও ফিরে তাকায় নি শিহাব। পুরো বিয়ে বাড়িতে চলছে আলোচনা। কেউ কেউ শিহাবের দোষ দিচ্ছে তো কেউ কেউ ইভাকে দোষ দিচ্ছে।

মানুষের আর আজানা নয় যে এক জনের স্বামীকে নিজের স্বামী করার স্বপ্নে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো ইভা।
মজিবুর ভাবালেম ভাবে বসি ছিলো অনুষ্ঠান বাড়ির এক কোণে। মেয়েকে হারিয়ে লোকটা পাঠক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বউয়ের জোরাজোরিতে ছেলের দ্বিতীয় বিয়েতে তাকে বরযাত্রী আসতে হয়েছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তিনি পুরুষ মানুষ। কিন্তু আজ ওবদি বউয়ের মুখের ওপর কথা বলতে পারে নি। বউকে শক্ত হাতে স্বাশন করতে পারে নি। আর তার বউও কখনো তাকে পাত্তা দেয় নি। সারাজীবন এক হাহাকার কষ্ট নিয়ে সংসার কটে গিয়েছেন।
ইভা মজিবুরে পায়ের কাছে বসে পড়ে। তার মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গিয়েছে। শিহাব চলে গেলো এখন কি তাকে রেখেই বরযাত্রীর সকলে চলে যাবে?

সেই ভয়েই সে মুজিবুরের পাণে ছুঁটে এসেছে।
মজিবুর তাকায় ইভার দিকে। মেয়েটিকে তার কখনোই পছন্দ না। ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই তার সাথে। মাইশাকে দেখতে পারতো না। এবং সুমাইয়ার সাথেও বনিবনা হতো না। সেই হিসেবেই মেয়েটিকে তার অপছন্দ।
“আংকেল আমাকে রেখে যাবেন না প্লিজ। আমাকে নিয়ে যান।
ইভার কান্না ভেজা গলার অকুল বিনয়ের কথা শুনে মন গলে না মজিবুরের। সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে

” অমানুষ তো হতে পারলাম না। পারলে হয়ত মাইশা আমার বাড়িতেই থাকতো।
আমার মেয়েটাও বেঁচে থাকতো।
চিন্তা করো না। তোমার খালা ঠিকই তোমাকে নিয়ে নিবে। এতোটা ভয় পেয়ো না।
মজিবুরের তাচ্ছিল্য কথা শুনে ইভার কান্না খানিকটা দমে আসে। তাকে নিয়ে যাওয়া হবে এটা সে বুঝতে পেরেছে।
শিরিনের খুশির অন্ত নেই আজকে। পুরো রাজত্ব এখন তার দখলে। ইভা তার ছেলের বউ। এমনটাই চেয়ে আসছে সে অনেক আগে থেকেই। ছেলেটাকেও মানুষের মতো মানুষ করতে পেরেছে। তারই কথায় উঠে বসে। শুধু ঠিক ছিলো না মেয়েটা।

মেয়ের জন্য তার দুর্বলতাও নেই। এই যে মরে গেছে। একটুও আফসোস হচ্ছে না। বরং মনে মনে ভীষণ খুশি।
মেয়েটাকে কি বলা হয়েছিলো?
বিয়ে করতে।
শহরের সব চেয়ো ধনী ব্যক্তি জোগাড় করে এনেছিলো সে।
চতুর্থ বার বিয়ের পিরিতে বসলেই পারতো। জীবনো টাকা ছাড়া আছে কি?
কিন্তু বেয়াদব মেয়ে বিয়ে করবে না বলে গলায় দড়ি দিলো।

অবশ্য মরে ভালোই করেছে। এই বাড়ির সকল খবরাখবর পাচার করতো মাইশার কানে।
ছেলের বাসর ঘর কখনো মা সাজিয়েছে? কোথাও শোনা গিয়েছে এমনটা?
আজকে সাজাচ্ছে। শিরিন নিজে হাতে ছেলের বাসর ঘর সাজাচ্ছে। তাকে সাহায্য করছে শিহাবের চাচাতো দুই বোন রুমি এবং রিমি। দুজনই জমজ। বয়স সতেরো পেরিয়েছে।
নতুন বউ বাড়িতে ঢুকতেই শিরিন সাদরে তাকে বরণ করে নেয়। তার ঠোঁটের কোণা থেকে হাসি সরছেই না। কিন্তু হাসি নেই ইভার মুখে।

শিহাব এখনো ফিরলো না।
ইভার এমন মুখ দেখে শিরিন কানে কানে বলে
“চিন্তা কেনো করছিস?
শিহাবকে জব্দ করতে তোর দুই মিনিটও লাগবে না। পুরনো বউয়ের স্মৃতি মনে পড়েছে বোধহয় তাই ড্রিংক করে গিয়েছে।
ইভা জবাব দেয় না।
এতোদিন যেমনই ছিলো। আজকে সে ওর স্বামী।

মাইশার বাবা হাসপাতালে ভর্তি। যখন তখন প্রাণ হারাবে। এমন খবর মাইশার কানে পৌঁছেছে রিয়াদ। এতিম খানায় একটা টেলিফোন আছে। সেখানেই কল করে জানিয়েছে আবুলের কাছে। আবুল মাইশাকে জানিয়েছে।
রাত অনুমানিক দশটা কি এগারোটা। হাসপাতালের ঠিকানাটাও জানানো হয়েছে মাইশাকে। মানে রিয়াদ চাচ্ছে মাইশা হাসপাতালে যাক এবং তার বাবাকে দেখে আসুক।
কিন্তু মাইশার খটকা লাগছে।

প্রথমত রিয়াদ কেনো এতো রাতে তাকে একা হাসপাতালে যেতে বলবে? এতোটা ইরেসপন্সবল তো রিয়াদ নয়।
আর দ্বিতীয়ত মাইশার বাবার খবর রিয়াদ কিভাবে জানবে?
বাবা কখনো নিজের দায়িত্ব পালন না করলেও মাইশার তার প্রতি অঘাত দুর্বলতা রয়েছে। বাবাকে দেখতে মাইশার মনটা ছটফট করতে থাকে। ইচ্ছে করে এক পলক দেখতে। কিন্তু দেখা হয় না অনেক গুলো দিন হয়ে গেলো।
আজকে বাবার খবর শুনে মাইশা ঠিক থাকতে পারছে না। একটার পর একটা দুঃখ তার দরজায় হানা দিচ্ছে। জীবন তাকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের হতে দিচ্ছে না। শোক কাটিয়ে উঠতে পারছে না।

এভাবে জীবন চলে?
দুঃখবিলাসীরা কি কখনোই সুখের মুখ দেখতে পারে না?
চোখের পানি মুছে রুম থেকে বের হয় মাইশা৷ কখনো মন কু ডাকছে। যেতে না করছে। কখনো যেতে বলছে। না গেলে যদি বাবাকে শেষ বার না দেখতে পারে?
তখন সেই আফসোস সারাজীবন প্রীড়া দিবে। কি গেলে যদি নতুন কোনো বিপদ হানা দেয়?
দোটানা মন নিয়ে গুটিগুটি পায়ে এগোতে থাকে মাইশা। হাতে একটা টাকাও নেই। হেঁটেই তাকে হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে।

বড় মাঠ পেরিয়ে এতিম খানার মেইন গেইট খুলে বাইরে পা রাখতেই এক জোড়া শক্ত হাত আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে অরে মাইশাকে। এক হাতে কোমর পেঁচিয়ে আরেক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে।
তারপর
তারপর
মাইশা বেহুশ হয়ে লুটিয়ে পড়ে লোকটার বুকে। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে লোকটার। পরম যত্নে মাইশার মাথাটা বুকের মধ্যে চেপে ধরে। ফিসফিস গলায় বলতে থাকে
“মানুষ মরে গেলে মেনে নেওয়া যায়। হ্যাঁ সে মরে গিয়েছে আর কখনো ফিরবে না। তাকে দেখতে পারবো না। অনুভব করতে পারবো না।

কিন্তু জীবিত মানুষ বদলে গেলে?
মানুষটা আছে। কিন্তু আমার নেই। আমারই চোখের সামনে অন্য কারো সাথে খুনসুটি করছে অন্য কারো বুকে লুটিয়ে পড়ছে।
মেনে নেওয়া যায় না”
তোমার শেষ পরিনতি মৃ*ত্যু হবে মাইশা।

ফুল সাজানো খাটে ঘোমটা টেনে শিহাবের জন্য অপেক্ষা করছে ইভা। দীর্ঘ দুই ঘন্টা যাবত একই ভাবে বসে আছে সে। শিহাব এখনো ফিরলো না। ঘড়ির কাটায় রাত দুইটা ছুঁই ছুঁই। এতো রাত ওবদি কোথায় আছে সে?
চিন্তা হচ্ছে ইভার। কলও করেছে। কিন্তু বন্ধ বলছে।
অবশেষে ইভার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শিহাব চলে আসে। খট করে দরজা খোলার শব্দে ইভা ঘোমটা ফেলে বিছানা থেকে নেমে পড়ে

“কোথায় ছিলে তুমি?
শিহাব দরজা আটকে তাকায় ইভার দিকে। বাঁকা হাসে। ইভা ভেবেছিলো শিহাব ড্রিংক করে আসবে। কিন্তু নাহহ। একদম সুস্থ সবল। খানিকটা অবাকই হয় ইভা। ড্রিংক না করলে এতোখন ছিলো কোথায়?
শিহাব সেরোয়ানি খুলতে খুলতে এগিয়ে আসে ইভার দিকে।
ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে ইভার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে

” ইউআর লুকিং সো হট
ঠোঁট চৌকা করে বলে ওঠে শিহাব। মাথা নুয়িয়ে ফেলে ইভা।
শিহাব শেরোয়ানি ফেলে কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নেয় ইভাকে।
দুই হাতে ইভার মুখখান তুলে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে যায়। তখনই ইভার নজর পড়ে শিহাবের কপালে। সে ছিঁটা ছিঁটা রক্ত।

দুঃখবিলাসী পর্ব ৮

তাকায় হাতের দিকে হাতের রক্ত
ছিঁটকে দূরে সরে যায় ইভা।
শুকনো ঢোক গিলে বলে
“তো…..তোমার হাতে র…রক্ত কেনো? কাকে খু*ন করেছো তুমি?

দুঃখবিলাসী পর্ব ১০