দুঃখবিলাসী পর্ব ৮

দুঃখবিলাসী পর্ব ৮
তানিশা সুলতানা

জৈষ্ঠ্যমাসের মধ্যভাগ। কখনো আকাশ ফকফকে পরিষ্কার তো কখনো নীলাভ আসমানে কালো কালো মেঘের ভেলা।
আজকে সারাদিন কাঠফাঁটা রোদ্দুর ছিলো। মুহুর্তেই গাছপালা জ্বলছে দিচ্ছিলো। কড়া রোদের পিপাসা কান্ত করেছে কতশত কর্মজীবী মানুষদের।
কিন্তু এখন আসমানে কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। গুড়ুম গুড়ুম মেঘ ডাকছে। গাছের পাতা তীব্র গতিতে নরে জানান দিচ্ছে তীব্র বাতাস বইছে।

ধুলোবালি উড়ে এসে আসছে।
মাইশা জানালা খুলে প্রকৃতির এই পরিবর্তন খেয়াল করছে।
“বারো মাসে প্রকৃতি ছয় বার বদল হয়। সেখানে একটা মানুষ কি করে সারাজীবন একই রকম রয়ে যাবে?
প্রকৃতি তো শিক্ষা দেয় বদলে যাওয়ার”
তাচ্ছিল্য হাসে মাইশা।
মনে পড়ে পুরনো স্মৃতি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

যেদিন শিহাবের হাত ধরে পালিয়েছিলো সেইদিন এইরকম ঝড় ছিলো। রাস্তায় তারা দুজন ছাড়া একটা কুকুরও ছিলো না। তাদের থাকার মতো জায়গাও ছিলো না। কোথায় যাবে বুঝতে পারছিলো না। ভয়ে, কষ্টে, আতঙ্কে কান্না করে ফেলেছিলো মাইশা। শিহাব খুব যত্নে মাইশার মাথাটা বুকে চেপে ধরে আশ্বাস দিয়েছিলো
“আমি আছি তো। ভরসা রাখো। প্রাণ থাকতে তোমার কিছু হতে দিবো না”

সেই শিহাব আজকে কতোটা বদলে গেছে। প্রকৃতির মতো কি?
হয়ত তাই।
আজকে শিহাবের বিয়ে। এই ঝড় কি জানান দিচ্ছে মাইশা নামটা চিরোতরে মুছে গিয়েছে শিহাব নামক মানুষটির জীবন থেকে?
এই ঝড় কি জানান দিচ্ছে দুনিয়ার আলো না দেখা সত্তাটি কখনোই তার বাবার আদর পাবে না?
“মাইশা

হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে খানিকটা চমকে ওঠে মাইশা। পেছন ঘুরে তাকায়। আমিনুল দাঁড়িয়ে আছে। তারহাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। চেহারার মিলে জানান দিচ্ছে এই মেয়েটিই আমিনুল ইসলামের রাজকন্যা।
একটু হাসার চেষ্টা করে মাইশা। জানালা বন্ধ করে দিয়ে এগিয়ে আসে।
” মাইশা আপি

বলতে বলতে আইরা জড়িয়ে ধরে মাইশাকে। খানিকটা ভেবাচেকা খেয়ে যায় মাইশা। সাধারণত এই মেয়েটির মাইশাকে চেনার কথা না। আমিনুলের পানে তাকায় মাইশা। চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করে “আমি বলেছি”
মাইশা দুই হাতে আইরাকে আগলে নেয়।
“পাপা তোমার এতো এতো কথা বলেছে আমায়। দাভাইকে কতোবার বললাম তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে নিলোই না। পঁচা রিয়াদ। ওকে আর আমি দাভাই ডাকবোই না।
গাল ফুলিয়ে ফেলে আইরা।

মাইশা মুহুর্তেই আবিষ্কার করে ফেলে মেয়েটি মানসিক ভাবে অসুস্থ। গায়ে গতরে বড় হলেও বাচ্চামি স্বভাব যায় নি। আর হয়ত যাবেও না। এই ধরনের মানুষদের একটা নাম আছে। যে নামটা এই মুহুর্তে মাইশার মনে পড়ছে না।
আমিনুল বসে মাইশার খাটে। এক গাল হেসে মেয়েকে কাছে ডাকে
” মামনি ভাইয়া তোমার আপুকে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু তোমার আপি যায় নি।
বাবার কথা মানতে নারাজ আইরা। সে গাল ফুলিয়ে মাইশার হাত ধরে আছে। আমিনুল মেয়েকে বোঝাতে যায় না।
সে মাইশার দিকে মনোযোগ দিয়ে বলে

“তোমার সাথে কথা আছে আমার।
মাইশা সাবলীল ভাষায় জবাব দেয়
” বলুন
আমিনুল সোজাসাপ্টা শুধায়

“কে তুমি? তোমাকে কেনো মারতে চায় মানুষ? কি রহস্য আছে তোমার মধ্যে?
কোনো সাধারণ মেয়ে তুমি নও। পরিচয় কি তোমার?
কেনো মুখোশ পড়ে আছো?
আমিনুলের প্রশ্নে মাইশা ভয় পেয়ে যায় না। অথচ আমিনুল ভেবেছিলো মেয়েটি ভয়ে সিঁটিয়ে যাবে। নিজেকে বাঁচাতে চাইবে।

কপালে ভাজ পড়ে আমিনুলের। এই মেয়েকে আশ্রয় দিয়ে ভুল করে ফেললো না তো?
তার ফুলের মতো সংসার ভেঙে যাবে না তো?
মাইশাকে ভয় দেখাতে এসে ভয়ে নিজের বুকই কেঁপে ওঠে আমিনুলের।
মাইশা আইরার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
” আমি আপনাকে কখনো বলি নি আংকেল যে আমি সাধারণ মেয়ে। আমি অসাধারণ।

প্রচন্ড ঝড়ের কারণে বরযাত্রী আসতে দেরি হয়েছে দুই ঘন্টা। রাস্তায় গাছ পড়ে ছিলো সেই গাছ সরিয়ে তবেই আসতে হয়েছে।
কিন্তু এখানে আসতেই আরেক বিপত্তি ঘটেছে। গেইট আটকে দাঁড়িয়ে ছিলো ইভার কিছু কাজিন। এবং বর পক্ষের সাথে খুব কথা কাটাকাটি করছিলো। শিহাবের মেজাজ এতোটাই বিগড়ে ছিলো যে সে শরবতের গ্লাস উল্টে ফেলে দিয়ে চর বসিয়ে দিয়েছিলো কনে পক্ষের একটা মেয়েকে।

গোটা বিয়ে বাড়ি স্তব্ধ হয়ে যায়। বরের এহেম বিহেভিয়ার কেউ মানতে পারছে না।
বউ সেজে বসে থাকা ইভাও আর নিজের রুমে বসে থাকতে পারে না। চলে আসে গেইটের কাছে। শিহাবের চোখ মুখ দেখে শুকনো ঢোক গিলে। এখন কেউ কথা বললে শিহাব বিয়ের না করেই চলে যেতে পারে।
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ইভা বলে ওঠে

“ও….না দের আসতে দাও। ঝামেলা করো না।
কেউ কোনো কথা বলে না। গেইট ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। ইভা এগিয়ে গিয়ে শিহাবের পানে হাত বাড়িয়ে দেয়।
” এসো

দুঃখবিলাসী পর্ব ৭

শিহাব ইভার হাত না ধরেই হনহনিয়ে এগোতে থাকে। একটু কষ্ট পায় ইভা কিন্তু পাত্তা দেয় না। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে শিহাবের পেছনে হাঁটতে থাকে।

দুঃখবিলাসী পর্ব ৯