দুঃখবিলাসী পর্ব ৭

দুঃখবিলাসী পর্ব ৭
তানিশা সুলতানা

“পুরুষ তুমি শান্ত মস্তিষ্কের একজন নিকৃষ্ট খু*নি”
কথাটা মানতে বাধ্য মাইশা। এই যে শিহাব কতো যত্ন করে তাকে ভেঙে গেলো। সুখের আশা দেখিয়ে দুঃখের সাগরের ডুবিয়ে দিলো। কতো সহজেই বদলে গেলো। একটা বারও ভাবলো না কতো সুন্দর ছিলো তাদের সম্পর্ক। কতো ভালোবাসা নিয়ে দুজন বিয়ে করেছিলো। কতো মধুর সময় পার করেছে দুজন। একবারও মনে পড়ছে না? বুকটা কেঁপে উঠছে না? মনে হচ্ছে না মাইশা নামক একটা পাগলী ছিলো?

বউ বাড়ি ছাড়া হয়েছে তিনদিন হলো। বোনটা মারা গিয়েছে দুই দিন হয়েছে৷ এখনই সে আবারও বিয়ের পিরিতে বসে গেলো। হ্যাঁ আজকে শিহাব এবং ইভার বিয়ে। খুবই জাঁকজমক ভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন ইভার বাবা জাফর ইকবাল। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। কয়েক ঘন্টার মধ্যে সব জোগাড় করে ফেলেছেন৷ বড়বড় কিছু মানুষকে ইনভাইট করেছেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সব খবরই মাইশার কানে চলে এসেছে। খবর দিয়েছে রিয়াদ নিজে। অক্ষরে অক্ষরে বলেছেন সবটা। মাইশা এতে রিয়াদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে না। বা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবে রিয়াদের ইচ্ছে করছে মাইশার থেকে একটু এটেনশন পেতে।
মাইশা আগেও যেমন ভাবালেশ ছিলো এখনো তেমনই আছে। শিহাবের বিয়ের খবর তার ওপর প্রভাব ফেলছে না।
একটা কথায় আছে

“তুমি তোমার প্রিয় মানুষটিকে মিস করছো?
তুমি কাঁদো
তুমি তাকে ভুলতে পারছো না?
তুমি কাঁদো
কিন্তু কখনো তাকে ফিরিয়ে আনতে কেঁদো না।
যে মানুষটা একবার বদলে গিয়েছে। তাকে কখনোই তুমি ফিরে পাবে না”

মাইশাও চায় না শিহাবকে ফিরে পেতে। তাই আপাতত শিহাব কি করছে না করছে এই বিষয়ে ভাবছে না। শিহাবকে সে ফিরে পেতে চায় না। তবে চায় শিহাব সুখী হোক। দুঃখ তাকে না ছুঁতে পারুক। আল্লাহ ভালো রাখুক।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাইশা।
রিয়াদ তাকিয়ে আছে মাইশার ডাগর ডাগর চোখের দিকে।
“মাইশা

কপালে ভাজ পড়ে মাইশার। ছোট ছোট চোখ করে তাকায় রিয়াদের দিকে।
রিয়াদ দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। বুঝে যায় মাইশা রেগে যাচ্ছে।
” আপনি বড্ড সহজ সরল মাইশা।
ঠোঁট মেলে একটু হাসে মাইশা। সহজ সরল? হুমম মাইশা সত্যিই সহজ সরল।

“আমাকে কাজ দিয়েছেন তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকবো। ঘনঘন এখানে আসবেন না। গায়ে পড়া মানুষ পছন্দ না আমার।
রিয়াদ অবাক হয়। সে কখন গায়ে পড়লো? তাছাড়া আগে আরও ঘনঘন আসতো এখানে। এখন অবশ্য কম আসে। আর মেয়েটা তাকে কি চরিত্রহীন ভাবছে?
রিয়াদ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। পিছিয়ে যায় কয়েকপা।
মাইশা উদাসীন দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে

” আপনি সেই ছেলে যে আমাকে পাঁচ বছর যাবত লুকিয়ে দেখে যাচ্ছেন। প্রপোজ করতে চেয়েছেন বহুবার। কিন্তু পরে যখন জানতে পেরেছে শিহাবকে ভালোবাসি আমি তখন পিছিয়ে গিয়েছেন।
আপনি এখন হয়ত মনে মনে আশা পুষে রাখছেন। আপনাকে একটা সুযোগ দিবো।
রিয়াদ অবাক হয়। মনের ভাষা বুঝে ফেললো মাইশা? কথাগুলো একান্তই রিয়াদের মনে চাপা ছিলো। তাহলে মাইশা কি করে বুঝলো?

“মানুষের মন পড়তে পারেন। তাহলে ভুল মানুষকে কি করে বেছে নিয়েছিলেন?
মাইশা তাকায় রিয়াদের দিকে। ছেলেটা সুদর্শন। তবে নজর কাড়ার মতো নয়। দাঁড়ি নেই। নিঃসন্দেহে একটা ছেলের সৌন্দর্য প্রকাশ পায় তার দাঁড়িতে।
” আমি মানুষ চিনতে ভুল করি নি৷ সঠিক মানুষটিকেই ভালোবেসেছিলাম। আমার ভাগ্য আমাকে এই পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এখানে ভালোবাসার কোনো দোষ নেই।
রিয়াদ জবাব দিতে পারে না।

“আপনি এখানে আসবেন না রিয়াদ। আমি কখনোই আপনাকে সুযোগ দিবো না। জীবন একটাই। এক জীবনে হাজারজনকে ভালোবাসা যায় না।
মাইশা বড়বড় পা ফেলে চলে যায় রান্না ঘরে। এখন তাকে রান্না করতে হবে। বাচ্চাদের রান্নার দায়িত্ব নিয়েছে মাইশা। অবশ্য তাকে এই কাজ করতে দিতে নারাজ রহিমা। কিন্তু মাইশা শুনবে না তার কথা। বাঁচতে হলে কাজ করতে হবে। অন্যের ঘাড়ে চেপে খাওয়ার মানুষ মাইশা নয়।

রিয়াদ মাইশার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে৷ রিয়াদ কখনোই চায় না মাইশাকে বিয়ে করতে বা দায়িত্ব নিতে। রিয়াদ শুধু এইটুকুই চায় মাইশা ভালো থাকুক। শত্রু চিনতে পারুক। স্টং হোক। এবং শত্রুর মোকাবেলা করুক। ব্যাস এইটুকুই।

সকালের ঘটনাও রিয়াদ জেনেছে। কেউ একজন ঢুকেছিলো এতিম খানায়। তার উদ্দেশ্য ছিলো মাইশাকে আক্রমণ করা। কিন্তু পারে নি। এটা নিয়েও সে চিন্তিত। রিয়াদ বুঝতে পারে না সামান্য একটা মেয়ে। যার রিলেটিভস পর্যন্ত নেই। তাকে মা*রার জন্য মানুষ কেনো এতো উতলা হয়ে উঠেছে? কি রহস্য আছে এই মাইশার মাঝে? যার জন্য তার প্রাণ কেড়ে নেওয়ারও ষড়যন্ত্র চলছে?

শিহাবের মনটা অস্থির হয়ে উঠেছে। বোনকে কবরে শুয়িয়ে রেখেছে চব্বিশ ঘন্টাও হলো না। এরই মধ্যে বিয়ে করতে হবে? বিয়েটা তাকে জোর করেই করানো হচ্ছে এক প্রকার। মায়ের কথা কখনোই ফেলতে পারে না শিহাব। বলা চলে মায়ের হুকুমের গোলাম সে।

শেরওয়ানি গায়ে চাপিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় শিহাব। মনে পড়ে মাইশার মুখখানা। তাদের সন্তানের কথা। বুকের ব্যাথা বাড়তে থাকে শিহাবের।
মাইশা কোথায় আছে?
এই দুনিয়ায় মাইশার যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাহলে কোথায় আছে?
ঠিক আছে?
বেঁচে আছে?

না কি মরে গিয়েছে?
বুকে হাত চেপে বসে পড়ে শিহাব। এতো উতলা কেনো লাগছে?
এই তো এখুনি ইভাকে বিয়ে করে নিবে এবং সমস্ত সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবে।
এখন তো শিহাবের হাসিখুশি থাকার কথা।

দুঃখবিলাসী পর্ব ৬

সোহেল মনে মনে কঠিন প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছে। সুমাইয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিবে সে। জীবনের প্রতি মায়া হারিয়েছে অনেক আগেই।
আঁচ পেয়েছে সুমাইয়া সুইসাইড করে নি। তাকে খুন করা হয়েছে।
সুমাইয়ার ডেট বডি দেখেই সোহেল বুঝেছিলো। রাতে শিরিন বেগমকে বোরকা পড়ে বাড়ি থেকে বের হতে দেখে শিওর হয়েছে।

দুঃখবিলাসী পর্ব ৮