দুঃখবিলাসী পর্ব ৬

দুঃখবিলাসী পর্ব ৬
তানিশা সুলতানা

“যদি সাধ্য থাকতো নিজেকে বিক্রি করে সুখ কিনে আনতাম”
সুমাইয়ার ডাইরির প্রথম পৃষ্ঠা খুলতেই এই লেখাটা চোখে পড়ে রিয়াদের।
বাকি পৃষ্ঠা গুলো না উল্টে একদম শেষ পৃষ্ঠায় চলে যায় রিয়াদ। শেষ পৃষ্ঠায় লেখা “চোখের পানি ফেলে কাউকে অভিশাপ দিলে না কি আল্লাহ কবুল করে নেয়?
অভিশাপ দিলাম না। দোয়া করে গেলাম। আল্লাহ তাদের অনেক ভালো রাখুক”
ব্যাস আর কিছুই লেখা নেই।

বিরক্ত হয় রিয়াদ। এসব জটিল বিষয় কখনোই তার মাথায় ঢোকে না। আমিনুলকে প্রয়োজন তার। কিন্তু এই মুহুর্তে আমিনুলের কাছে যাওয়া সম্ভব নয়। অফিসের চুরিকৃত ফাইলের খোঁজে আমিনুল চলে গিয়েছে শহরের বাইরে। ফাইল উদ্ধার করেই ফিরবে সে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মাইশা জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। প্রচন্ড কান্না করার ফলে তার চোখ মুখ ফুলে গেছে। এখনো হিঁচকি তুলে যাচ্ছে।
জীবনটা এমন কেনো? আল্লাহ বোধহয় মাইশার কপালে সুখ লেখেনি।
মা মাইশাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। অল্প বয়সেই মাকে হারালো। শিহাবও তাকে ভালোবাসতো। শিহাব বদলে গেলো। সুমাইয়া ছিলো মাইশার এক মাত্র বন্ধু। সেও চলে গেছে। মাইশা শেষ বার প্রিয় বান্ধবীর মুখখানা দেখতে পারলো না।

মাইশা যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলো। তখনই রিয়াদ চলে আসে। এবং আটকে দেয় মাইশাকে। কোনো ক্রমেই মাইশাকে যেতে দেয় না।
মাইশা ভীষণ রেগে আছে রিয়াদের ওপর। কেনো যেতে দিলো না?
রিয়াদ গিয়েছিলো মাইশার বাসায়। তালা ভেঙে ঢুকেছিলো ভেতরে। শিহাব বাসায় না থাকায় খুব একটা অসুবিধা হয় নি। রিয়াদের উদ্দেশ্য ছিলো প্রমাণ জোগাড়। কিন্তু শিহাবের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পায় নি। বা শিহাবের বাড়িতে তাদের অফিসের ফাইল পায় নি। কিন্তু পেয়েছে একটা ডাইরি।

রিয়াদ এখনো মাইশাকে ডাইরির বিষয়ে বলে নি। খুবই গোপনে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখেছে। মাইশা মাথা নিচু করে বসে আছে। রিয়াদ মাইশার থেকে কিছুটা দূরে বসে।
“তুমি বোধহয় আমার থেকে ছোটই হবে। তাই তুমি করেই বলছি।
রেগে যায় মাইশা।

” আপনি করে বলুন। বয়স মেটার করে না। ভদ্রতাই বেশি জরুরি।
হাসে রিয়াদ। এই মেয়েটা এখন তাকে ভদ্রতা শেখাবে?
“আচ্ছা আপনি করেই বলবো। আপনাকে যেতে দিলাম না। কারণ আপনি গেলে তারা জেনো যেতো আপনি কোথায় আছেন। যেটা আপনার জন্য খারাপ হবে।

মাইশা এবার জবাব দেয় না। বিষয়টা এখন তার মাথায় ঢুকেছে। সত্যিই তো। শিহাব যদি জেনে যেতো। তাহলে নিশ্চয় তাকে নিয়ে যেতো। এবং আবার তার বাচ্চাটাকে মারতে চাইতো।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাইশা। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। জীবনের হিসাব কষতে গেলে মাথা ঘুরে ওঠে। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসে।

সুমাইয়া কবর দেওয়া হয়েছে এলাকার একটা কবরস্থানে। মেয়েকে কবর দিয়ে বাড়ি ফিরে মজিবুর পাথরের মতো বসে পড়ে। শিহাবও বেশ ভেঙে পড়েছে। অকালে বোনকে হারাতে চায় নি সে।
সুমাইয়ার স্বামী সোহেল বসে আছে কবরের পাশে। এখন পর্যন্ত তার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানিও গড়ায় নি। কাঁদতে ভুলে গিয়েছে সে।

প্রাণ প্রিয় স্ত্রীর মৃত্যুতে প্রতিটি পুরুষই ভেঙে পড়বেন। হাউমাউ করে কেঁদে উঠবেন।
কিন্তু সোহেল
যতখন সুমাইয়া পড়ে ছিলো খাটিয়াতে। দুই চোখ ভরে দেখে গিয়েছে। তার ভালোবাসা।
এখনো সোহেলের মনে পড়ে যেদিন সুমাইয়া প্রথমবার বাবার বাড়িতে আসলো। কতো হাসিখুশি ছিলো মেয়েটা। সোহেলকে বার বার বলছিলো ” দুই দিনের বেশি কিন্তু আমি থাকবো না। দুইদিন পরেই আমাকে নিয়ে আসবে”
সোহেলও হেসে জবাব দিয়েছিলো “কালকেই নিয়ে আসবো তোমায়। বউ ছাড়া ঘুম আসবে না আমার”

কিন্তু বাবার বাড়িতে পা রাখতেই বদলে গেলো সুমাইয়া। ফিরলো না সোহেলের কাছে। কতোবার নিতে এসেছে সোহেল। প্রতিবারই অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। এমনও রাত গেছে সোহেল সুমাইয়াদের বাড়ির উঠোনে বসে থেকেছে।

এবার দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে সোহেল গাল বেয়ে। গুড়ি গুড়ি মাটি হাতে তুলে ডুকরে কেঁদে ওঠে। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে সে।
“আমার হয়ে থেকে গেলে না কেনো সুমাইয়া?
এতোদিন তোমায় দূর থেকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটিয়েছি। এখন আমি বাঁচবো কি করে?
আমায় ভালোবাসলে না কেনো?

আমায় একটু সুখ দিলে না কেনো সুমাইয়া?
কেনো আমাকে নিঃস্ব করে দিলে?
তুমি ঠিক করো নি।
অন্যায় করেছো তুমি।
কাঁদতে কাঁদতে শুয়ে পড়ে সোহেল।

মাইশার সাথে আবুল সকলের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। সবাইকে খেয়াল রাখতে বলেছে আবুল। রহিমা নামের রাধুনি মহিলাটি মাইশার খুব যত্ন করেন। যেমন কখন খাবে? কি খাবে? খাচ্ছে কি না? এসব দিকে নজর রাখেন।
মাইশা রহিমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। রহিমা মিশতে আসলে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। কারণ মাইশা বুঝতে পেরেছে রহিমা তাকে ভালোবাসতে চাইছে। কিন্তু মাইশা চায় না রহিমার থেকে ভালোবাসা।
এটা নিয়ে কিঞ্চিৎ মন খারাপ রহিমার।

এই এতিম খানায় মাইশার দ্বিতীয় দিন। রিয়াদ বেশ কিছু জামাকাপড় দিয়ে গিয়েছে মাইশাকে। সকাল বেলায় গোসল সেরে নতুন কাপড় গায়ে জড়িয়েছে মাইশা।
নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুম থেকে বের হতেই চোখ পড়ে ওই বাচ্চাটার দিকে।
নভেম্বরের মাঝামাঝি শীত পড়েছে ভালোই।

দুঃখবিলাসী পর্ব ৫

কিন্তু বাচ্চাটির গায়ে গরম কাপড় নেই। পায়ে জুতো নেই। মাটিতে বসে আছে সে। হাতে পাতা। হয়ত পাতা দিয়ে কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করছে।
মাইশা এগিয়ে যেতে নেয় মেয়েটির দিকে আর কখনই কোথা থেকে একটা বাঁশের কঞ্চি এসে গেঁথে যায় মাইশার..

দুঃখবিলাসী পর্ব ৭