দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ২৩

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ২৩
তাসফিয়া হাসান তুরফা

পারভীন বেগমের বাসায় ফিরতে দেরি হলো। টেনশনে দোলার মন আনচান করতে লাগলো। না জানি কি কথোপকথন হচ্ছে ওখানে কে জানে? মা-কে যে একবার ফোন দিবে সেটাও করার সাহস পাচ্ছেনা সে। এসব ভেবেই ব্যস্ত ভাবে পায়চারি করছিলো রুমের মধ্যে। এরই মাঝে দোলার ফোনে কল এলো। বিছানায় বাজতে থাকা ফোনের দিকে চেয়ে দোলা ভাবতে লাগলো, এ সময় ফোন কে দিয়েছে ওকে? মা নয়তো আবার?

দ্রুত পায়ে বিছানা থেকে ফোন তুলতেই ও দেখলো, মামির নাম্বার থেকে কল এসেছে ওর ফোনে। দোলা চমকে উঠলো! যেখানে ওর মা-ই একবারো ফোন দিলোনা সেখানে কিনা মামি ফোন দিচ্ছে? এটা কি করে হলো? বিয়ে ভাঙার কথা শুনে কি তবে মামি ওকে গা’লমন্দ করার জন্য ফোন দিয়েছেন?
ও ভয়ে ভয়ে ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে শায়লা বেগমের কণ্ঠ ভেসে এলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

—দোলা বলছিস?
মামির স্বাভাবিক কণ্ঠে মেয়েটা বিস্মিত হলেও তা চেপে উত্তর দিলো,
—হ্যাঁ, মামি বলো।
—তোর মা এসেছিলো আমাদের এখানে তোদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে। আচ্ছা, তুই কি সত্যিই এ বিয়েতে রাজি না?
দোলা চোখ বুজে ফেললো। যেটার ভয় করেছিলো সেটাই হয়েছে। তবু সাহস করে বললো,

—না, মামি। আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা।
অপারে কিছুক্ষণ নিরবতা। খানিকবাদে শায়লা বেগম বললেন,
—আচ্ছা, তোর সব কথা আমি মানলাম। কিন্তু আমার ছেলেটা তোকে সত্যিই খুব পছন্দ করে রে, মা। তুই কি আরেকটু সময় নিয়ে ভেবে দেখবি? একবার না হয় দেখা কর ওর সাথে? দুজনে মিলে কথা বলে তারপর ফাইনাল কোনো সিদ্ধান্তে আয়…

মামির কথা শুনেই দোলা আঁতকে উঠে। রাকিবের সাথে দেখা করে কথা বলবে? তাও বিয়ের ব্যাপারে? পাগল নাকি সে? আর মামিও বা কিভাবে সব জেনেশুনে ওকে এসব বলছে? সে প্রতিবাদি কণ্ঠে বললো,
—আমি রাকিবের সাথে দেখা করতে চাইনা, মামি। বিয়ের ব্যাপারে আর কোনো কথাই আমি বলতে চাইনা। যা বলার ছিলো মা তো বলেই দিয়েছে আপনাদের। তবু কেন…

—দেখ দোলা, একটা কথা বলি। এতদিন কখনো বলিনি কিন্তু আজকে বলতে বাধ্য হচ্ছি। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি যে, তোর মামা কিন্তু আজ পর্যন্ত তোদের জন্য কম করেনি। কিন্তু তার বিপরীতে তুই আর তোর মা যথেষ্ট অকৃতজ্ঞের ন্যায় আচরণ করছিস। আমি কি খারাপ কিছু বলেছি, হ্যাঁ? আমি তো ভালো করেই বললাম যে তুই আর রাকিব শুধু একবার দেখা কর। দুজনে বসে নিরিবিলিতে যৌথ ভাবে বিয়েতে অমত দিলে আমাদেরও আর আপত্তি থাকবেনা। আমি নিশ্চিত এ ব্যাপারে তোর মায়েরও কোনো অমত থাকবেনা।

এতকিছু বলার পর কিছুটা থামলেন শায়লা বেগম। এদিকে লজ্জায়-অপমানে দোলার চোখে পানি এসেছে, মুখ থমথমে হয়ে এসেছে। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে ওর বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের চাকরি ম্যানেজ করে দেওয়া থেকে শুরু করে অনেককিছুই ওর মামা করেছেন ওদের জন্য। কিন্তু তার বিনিময়ে ওদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব ওর মা এবং ওরা সবাই মামা-মামিকে শ্রদ্ধা করেছে। কোন প্রয়োজনে যেভাবে পারে ওরা এগিয়ে এসেছে। কিন্তু আজ সেই উপকারের বিনিময়ে মামি এমন কিছু চেয়ে বসবে ওর ধারণায় ছিলোনা। তাই স্তব্ধ দোলা খনিকের জন্য থমকে যায়। ওর পক্ষ থেকে কোনো জবাব না আসায় মামি ওপাশে হাসফাস করেন কিছুক্ষণ। পাশে কারও সাথে কথা বলার চাপা গুঞ্জন শুনা গেলো। দোলা ধরে নিলো ওর মামার সাথে কথা বলছেন হয়তো।

—হ্যালো? তুই লাইনে আছিস? দোলা, হ্যালো?
মামির কথায় দোলা সম্ভিত ফিরে পেলো। একবার ভাবলো এত অপমান সহ্য করেও সে মানা করে দিবে। কিন্তু পরক্ষণেই মামার কথা মনে পড়ে দোলা আর মানা করতে পারলোনা। ওর মামা ওর দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষ। বাবা-মার পর যে মানুষটাকে ও সবচেয়ে বেশি সম্মান করে। মামির সাথে যেহেতু মামাও জড়িত আছেন, সুতরাং মামার প্রতি সম্মানার্থে এক্ষেত্রে মামির এ শেষ অনুরোধটা আর উপেক্ষা করতে পারলোনা সে।
মৃতপ্রায় কণ্ঠে জবাব দিলো,

—ঠিক আছে, মামি। কখন কোথায় দেখা করবো জানাবেন।
দোলার জবাব শুনে মামি প্রসন্ন হলেন বোধহয়। অন্তত উনার গলা শুনে সেরকমই লাগছে। অহংকার মিশ্রিত কণ্ঠে বললেন,

—যাক। অন্তত এবার তো তুই বুদ্ধিমত্তা দেখিয়েছিস শুনে খুশি হলাম। দেখ দোলা, তোর অনেক সৌভাগ্য আমার ছেলেটা তোকে এত পছন্দ করে, যে ওর কাছে হাজারো অপশন থাকলেও ও তোকেই ভেবে দেখার আরেকটা সুযোগ দিতে চায়। আশা করছি এবার আগেকার মতো বোকামি না করে ঠান্ডা মাথায় দুজনে মিলে বুঝেশুনে শেষ সিদ্ধান্তটা নিবি।

দোলা কোনো জবাব দেয়না। দাঁতে দাঁত চেপে চুপ থাকে। এর মাঝে মামি ফোন কেটে দেয়। দোলা ফোন ছুড়ে ফেলে বিছানায়। কেন যে ফোনটা ধরতে গেলো! কে জানতো মামি এভাবে ওর দূর্বলতায় আঘাত করে ওকে বাধ্য করবে রাকিবের সাথে শেষবার কথা বলতে? কিন্তু দোলার মনোভাব তবু দমলোনা। আজ কথাবার্তা যতই হোক, সে তো নিজ সিদ্ধান্তে অটল। মা-কে দু’বার ফোন করেও তার কোনো হদিস পাওয়া গেলোনা। ফোন সুইচড অফ বলছে, হয়তো চার্জ নেই উনার ফোনে!

এর মাঝে রাকিবের নাম্বার থেকে টেক্সট এলো। দোলা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। রাকিব জানে সে দোলাকে ফোন দিলেও ও ধরবেনা তাইতো মেসেজেই লোকেশন পাঠিয়ে দিয়েছে। পরিশেষে দোলা জানিয়ে দিলো ও দুপুর বেলায় দেখা করতে যাবে। কেননা, দেখা যখন করতেই হবে তখন যত তাড়াতাড়ি এসব শেষ করা যায় তত ভালো! এখন দিন ছোট, সন্ধ্যে-বিকেল এর আগে আগেই বাড়ি ফিরে আসা উচিত।

বেরোনোর আগে দোলা শিমুলকে বলে গেলো মা এলে তাকে জানিয়ে দিতে যে, ও রাকিবের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। যদিও শিমুল দোলার সাথে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু মায়ের কাছে এখন চাবি নেই। একটা চাবি দোলা নিয়ে যাচ্ছে। উনার চাবি কামিনি নিয়ে চলে গেছে তাই শিমুলকে বাড়িতে রেখেই অগত্যা সে একাই চলে গেলো উল্লেখিত ঠিকানায়।

ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে রাকিবের মুখোমুখি বসে আছে দোলা। যার চোখেমুখে ঘৃণা ও বিরক্তির ছাপ বেশ স্পষ্ট। কিন্তু রাকিবের সেদিকে বিশেষ খেয়াল নেই, সে একমনে ফোন টিপছে ও নিজের অর্ডার করা কফি গিলছে। দোলা কিছু নেয়নি বিধায় ও চুপচাপ ধৈর্য ধরে বসে ছিলো। কিন্তু, মিনিট দশেক এভাবেই অতিক্রম হওয়ার পর আর ধৈর্য কুলোতে না পেরে মেয়েটা তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললো,

—তোমার সমস্যা কি, রাকিব? কথা বলার জন্য এসেছো অথচ কোনো কথাই বলছোনা। ফাইজলামি শুরু করেছো আমার সাথে?
রাকিব এবার ফোন টিপা বন্ধ করলো। থেমে সরাসরি দোলার দিক তাকালো, ওর দৃষ্টি কেমন হিসহিসে। দোলার অস্বস্তি বাড়লো। সে আবারো বললো,

—তোমার যদি কোনো কথা বলার থাকে তবে বলে ফেলো। নইলে আমি উঠলাম। কারণ আমার তোমার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। আমি আমার আগের সিদ্ধান্তেই আছি। আমি এ বিয়ে করতে পারবোনা। এটা মামা-মামির সাথে তুমিও যত তাড়াতাড়ি স্বীকার করবে তাতেই ভালো!
কথাগুলো বলে দোলা চেয়ার ঠেলে উঠতে নিলেই রাকিবের মুখ খোলে। সে অলসতা ঝাড়ার ভংগিতে কৌতুকপূর্ণ কণ্ঠে বলে,

—আরে আরে, মাত্রই না এলে। এত জলদি পালাচ্ছো কোথায়? এখনো তো কিছু শুরুই হয়নি।
—মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?
দোলা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে। রাকিব ক্রুর হাসে। মাথা নাড়িয়ে বলে,
—একটুপরেই বুঝবে। তার আগে কিছু গল্প করা যাক নাকি?
—তোমার সাথে গল্প করায় আমার কোনো ইন্টেরেস্ট নেই। কাজের কথা থাকলে বলো নয়তো বিদায়।
পরপর দু’বার অপমানে এবার রাকিবকে সিরিয়াস হতে দেখা গেলো। কাপে লেগে থাকা কফিটুকু শেষ করে দোলার উদ্দেশ্যে বললো,

—ঠিক আছে চলো। এবার আসল কথায় আসি। ফাইজলামি আমি করছি না তুমি? সবার সামনে আমায় এভাবে রিজেক্ট করে আমার মান-সম্মান শেষ করার আগে মাথায় আসেনি তোমার?
—মান-সম্মান? এক্সকিউজ মি? কিসের মান সম্মানের কথা বলছো তুমি। আমার জানামতে যে পুরুষ রাতের গভীরে পরনারীর রুমে ঢুকে যেতে পারে সে পুরুষের আর কিছু থাকুক না থাকুক, অন্তত মান-সম্মান ও পুরুষত্ব তো নেই!
দোলার অপমানসূচক কথায় রাকিবের গায়ে আগুন জ্ব’লে যায় যেন। দোলার দিকে হাত বাড়াতে গিয়ে একবার আশেপাশে তাকায়। অতঃপর চেয়ার থেকে উঠে দোলাকে বলে,

—লোকজনের সামনে সিন ক্রিয়েট করতে চাইছিনা। আমার কি আছে না আছে, বাইরে গিয়ে বুঝাচ্ছি চলো!
—আমার কোনো শখ নেই তোমার সাথে আর কথা বলার। আমার জবাব যেটা ছিলো ওটাই আছে, রাকিব। আমি তোমায় বিয়ে করবোনা। সারাজীবন একা থেকে মরে গেলেও করবোনা। মামিকে এ কথাটা বলে দিও!

কথাগুলো বলে দোলা হনহন করে বেরিয়ে যায় রেস্টুরেন্টে থেকে। রাকিবের মতিগতি ওর ভালো লাগছেনা, কখন কি করে বসে কে জানে? আগেভাগে কেটে পড়া ভালো! রাকিব বিল মিটানোর মাঝে দোলা তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে রিকশা ডাকার জন্য সামনের গলির দিকে ছুটতে থাকে। রাকিব বেরোনোর আগে এদিক ঢুকে গেলে আর ওকে দেখতে পাবেনা। কিন্তু গলির ভেতর ঢুকতেই দোলার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে বাইক নিয়ে রাকিব ওর সামনে চলে আসে। আচমকা এমন হওয়ায় মেয়েটা ভয় পায়! এবার কি করবে ভাবার মাঝেই রাকিব হিংস্র কণ্ঠে বলে,

—কি বললি যেন তুই? আমার পুরুষত্ব নেই? বেশি সাহস বেড়ে গেছে না তোর? আছে কি না দেখাবো তোকে?
দোলা ওর কথার ধরনে ভয় পেয়ে যায়। একা আসাটা উচিত হয়নি একদমই। এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সে। কিন্তু এখন উপায় নেই আর। রাকিবের হাত থেকে তো পালাতে হবে! তাই আর কোনোকিছু না ভেবে উল্টোপথে দৌড়ানো শুরু করে সে। রাকিবও বাইক ঘুরিয়ে কিছুক্ষণের মাঝেই এদিকটায় চলে আসে এবং সুযোগ বুঝে বাইক থামিয়ে দৌড়ে গিয়ে দোলার হাত ধরতেও সক্ষম হয়ে যায়। হাত ছাড়ানোর মাঝে দোলা পড়ে যায় রাগে ঘৃণায় দোলা চিৎকার করে,

—আমার হাত ছাড়, রাকিব। আমায় চলে যেতে দে, নয়তো ভালো হবেনা।
—কেন ছাড়বো হাত? খুব তো বাহাদুরি দেখাচ্ছিলি? এখন কি হলো তবে? আমি ভালো মানুষ সেজে তোকে বিয়ে করতে চাইলাম সেটা হজম হলোনা তাইনা? এখন তো বাধ্য করলি আমায় আসল রুপ দেখাতে! চল তোকে আজ দেখাবো আমি কি চাই। একটা রাত তোকে পাবো বলে…

রাকিব আর কথা বলার আগেই চোখে প্রচন্ড ঝাঁঝ অনুভব করলো। ওর মনে হলো যেন মরিচ জাতীয় কিছু ওর চোখে পড়েছে হুট করে। তীব্র ব্যথা ও চিৎকারে সে দোলার হাত ছেড়ে চোখ ডলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এরই মাঝে দোলা একছুটে পালিয়ে গেলো ওখান থেকে। ভাগ্যিস বাসা থেকে বেরোনোর আগে মনে করে পেপার স্প্রে এনেছিলো ব্যাগে করে। বিপদে কাজে লেগে গেছে! পেছনে তাকিয়ে দৌড়ানোর মাঝে অসাবধানতাবশত একটি রিকশার সাথে লেগে দোলার বাহু অনেকখানি ছিলে যায়৷ কিছুটা রক্তও বের হলো বোধহয়।

সাথে রিকশাওয়ালার বকবকানি তো আছেই। কিন্তু এখন ওসব দিকে পাত্তা দেওয়ার ওর সময় নেই। কারণ, ও দেখলো ততক্ষণে এক লোক রাকিবের কাছে পানির বোতল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। চোখে পানি ঢাললে তো কিছুক্ষণের মাঝেই ও ভালো হয়ে যাবে আর ততক্ষণে দোলা এখান থেকে পালাতে না পারলে তো আজ সর্বনাশ নিশ্চিত! তাই হাতের ব্যাথা ভুলে মেইন রাস্তায় চলে এলো দোলা।

কিন্তু ব্যস্ত রোডে রিকশা, সিএনজি কোনোটাই ফাকা নেই বললেই চলে। তবে সামনে একটা ভার্সিটি আছে, ওদিকটায় কিছু খালি রিকশা/সিএনজি পেতে পারে এ আশায় দোলা যত দ্রুত সম্ভব ছুটে গেলো সেদিকে। একসাথে, একটু পরপর পেছনে তাকাচ্ছে রাকিব চলে আসছে কিনা দেখতে!
মায়ের নাম্বারে ফোন করে আবারো সুইচড অফ শুনায় মেজাজ বিগড়ে গেলো ওর এ মুহুর্তে। মা কি বাসায় আদৌ গেছে? উনি কি জানেন সে এ মুহুর্তে কতটা বিপদে আছে?

নিজের উপর অত্যন্ত রাগ হলো মেয়েটার। কে বলেছিলো পাকনামি করে মামির কথায় রাজি হয়ে একা একা এখানে আসতে? সে কি জানতোনা রাকিব কেমন? এখন কাকে জানাবে সে এ বিপদের কথা? কে ওর সাহায্য করবে! সিএনজির আশায় ছুটন্ত দোলা খানিক দম নেওয়ার জন্য থামতেই সামনে তাকাতে প্রচন্ড চমকে যায়। না, রাকিব নেই ওর সামনে। বরং, ভার্সিটির সামনে রাস্তার ওপারে টং এর দোকানে স্বয়ং নিশীথ বসে আছে!

হুট করে এ অন্ধকার আচ্ছন্ন সময়ে নিশীথকে দেখে যেন মেয়েটা আশার আলো খুজে পায়! সে কি এই ভার্সিটিতে পড়ে? একিসাথে মনে মনে আশা জাগে, যদিও সে এখনো নিশীথকে কোনো জবাব দেয়নি তবু অন্তত মানবিকতার খাতিরে হলেও নিশীথ ওকে সাহায্য করবেই! এটুকু তো দোলা এতদিন বুঝেছে!

মনে মনে এসব ভাবার মাঝেই, দোলার ভাবনা হাওয়ায় মিলিয়ে যায় যখন সামনে তাকিয়ে দেখে ওর রাস্তা পার হওয়ার আগেই নিশীথ দোকান থেকে বের হচ্ছে। ফোনে কথা বলতে বলতে ভার্সিটির দিকে হাটছে। দোলা গলা উচিয়ে বারখানেক ডাকলো নিশীথকে। কিন্তু ওর চিকন গলা ব্যস্ত রাস্তার এত আওয়াজ উপেক্ষা করে নিশীথের কানে পৌঁছায়না। সে নিজের মতোন হাটতে লাগে ভার্সিটির দিকে।

এবার দোলার ঘাম ছুটে যায়। রাকিব যেকোনো মুহুর্তে চলে আসবে অথচ একটা ফাকা রিকশা সিএনজি পাওয়া যাচ্ছেনা যে সে কোনোটাই উঠে বসবে! দরকারের সময় কিছুই পাওয়া যায়না! এ কোন বিপদে পড়লো সে তবে? বহুকষ্টে চলন্ত যানবাহনের মাঝ দিয়ে কোনোমতে রাস্তা পার হওয়ার মাঝেই নিশীথ ভার্সিটির ভেতর ঢুকে গেলো।

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ২২

এবার দোলার মনে হলো সে একূল ওকূল দুটোই হারালো! এটা রং সাইড, এদিকটায় গাড়ি ওর বাসার দিকে যাবেনা। আর নিশীথ চলে যাওয়ায়, এখন তো সে চাইলেও আইডি ছাড়া ভার্সিটির ভেতরে ঢুকতে পারবেনা! তবে নিশীথকে খুজবে কিভাবে? এবার ওর কি হবে? এই শীত শীতে ভাবের মাঝেও দোলা দরদর করে ঘামতে শুরু করে!

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ২৪