আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩৫

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩৫
Raiha Zubair Ripte

-“ কি রে তোরা এখানে যে?
আচমকা চিরচেনা পুরুষালি কন্ঠ শুনে পেছন ফিরে তাকায় অধরা আর চিত্রা। রাফিকে এখানে দেখে অধরা বলে উঠে
-“ ভাইয়া তুমি এখানে!
রাফি অধরা চিত্রার দিকে আগাতে আগাতে বলে-
-“ হ্যাঁ একটা দরকারে এসেছিলাম।
-“ ওহ্ আমি আর চিত্রা একটু কেনাকাটা করতে এসেছিলাম।
-“ তৃষ্ণা আসে নি?
-“ না ও বাসায়। বাসায় ফিরবে না এখন?
-“ না একটু দেরি হবে। তোরা যা তাহলে।

অধরা মাথা নাড়িয়ে চিত্রার হাত ধরে গাড়িতে উঠে বসে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। রাফি চলে যাওয়া গাড়ির পানে কিয়ৎ ক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে চলে যায়।
ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে তানিয়া বেগম আর তাসলিমা খাঁন। তার পাশেই জুবুথুবু হয়ে বসে আছে চিত্রা। তাসলিমা খাঁন তামিম খাঁন আর সামির খাঁনের ছোট বেলার দুষ্টুমির কথা বলছেন। নিজের রুমে বসে আছে তৃষ্ণা। অধরা রেডি হচ্ছে প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য। এর মধ্যে ঘামান্ত শরীর নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে রাফি। সোফায় বসে গা এলিয়ে দেয়। তানিয়া বেগম এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দেয়। রাফি ঢকঢক করে গিলে বলে-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ চাচি আজ রাতে আমার ফ্লাইট।
তানিয়া বেগম অবাক হয়ে বলে-
-“ তোর না কাল ছিল ফ্লাইট।
-“ না আজই। আমি আজকের ফ্লাইটের টিকিট বুক করেছি।
-“ ওহ্। ফিরবি কবে?
-“ এখনও তো যাই নি। যাওয়ার পর বুঝতে পারবো ফিরবো কবে।
-“ আচ্ছা রুমে যা ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে। আমি খাবার উপর পাঠিয়ে দিচ্ছি।

রাফি চলে যায়। তানিয়া বেগম খাবার প্লেটে সাজিয়ে তৃষ্ণা কে ডাক দেয়। তৃষ্ণা মায়ের ডাক শুনে হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামে। তানিয়া বেগম তৃষ্ণার হাতে খাবারের প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বলে –
-“ নিয়ে যাও।

তৃষ্ণা খাবারের প্লেট নিয়ে উপরে উঠে চলে যায়। রাফি ফ্রেশ হয়ে টি-শার্ট পড়ে বিছানায় বসে আছে। তৃষ্ণা দরজায় কড়া নাড়ে। রাফি এক নজর দরজার পানে তাকিয়ে বলে- কামিং।
তৃষ্ণা ভেতরে ঢুকে। খাবার টা বিছানায় রেখে বলে-
-“ আপনার খাবার এনেছি।
-“ হুম দেখেছি।

তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে রইলো। রাফি খাবারের প্লেট টা হাতে তুলে নিতে নিতে বলে-
-“ আমার ল্যাগেজ টা একটু গুছিয়ে দাও তো। রাতে ফ্লাইট।
তৃষ্ণা অবাক চিত্তে তাকিয়ে থাকে।
-“ আপনার ফ্লাইট রাতে!
-“ হুমম।
-“ কই আপনি যে বললেন আগামী কাল ফ্লাইট।
-“ হ্যাঁ ছিলো তবে সেটা বাতিল হয়ে আজ হয়েছে।
তৃষ্ণা ওহ্ বলে ল্যাগেজ গুছিয়ে দেয়।

রাত সাতটার দিকে রাফি বাসার সবার থেকে বিদায় নেয়। তৃষ্ণা কিয়ৎ ক্ষন অভিমান করে ছিলো কিন্তু বেশি দীর্ঘ হয় নি। রাফি বলেছে তাড়াতাড়ি কাজের পার্ট চুকে ফেরার চেষ্টা করবে। তুষার বাসায় নেই। অধরা এখনও ফিরে নি। বাসায় রয়েছে তানিয়া বেগম, তাসলিমা খাঁন, তরিকুল খাঁন, তামিম খান,তৃষ্ণা, চিত্রা আর সামির খাঁন। কিছুক্ষণ আগেই সামির খাঁন ছেলেকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়ে আসে।

অধরাকে এখনও বাসায় আসতে না দেখে অধরার নম্বরে ফোন করে তামিম খাঁন।
অধরার ফোন রিসিভ হয় না। হবে কি করে? এতো এতো সাউন্ডের মাঝে ফোনের রিংটোন যেনো বন্ধ ব্যাগের চারপাশেই আবদ্ধ রইলো।
অধরাকে না পেয়ে তামিম খাঁন এবার রাতুল কে ফোন করলো।

-“ হ্যালো রাতুল তুমি কোথায়?
রাতুল জবাব দিলো-
-“ আমি বিশ মাইল আছি।
-“ অধরা এখনও বাসায় ফিরে নি। একটু খোঁজ নাও তো৷ রাত হচ্ছে তো।
-“ আমি অধরার কাছেই যাচ্ছি। পৌঁছে দিয়ে আসবো বাসায় চিন্তা করবেন না।

তামিম খাঁন স্বস্তি পেলেন। রাতুল সোজা ভার্সিটিতে এসে অধরা কে খুঁজতে লাগলো। অধরা বলেছিল অমর একুশে চত্বরের ওখানে গেলে তাকে পাবে। রাতুল অধরার কথা মতে ওখানে গিয়ে দেখে অধরা বসে আছে। রাতুল দৌড়ে গিয়ে অধরার পাশে বসলো। অধরা চমকালো। চকিতে ঘাড় ঘুরিয়ে রাতুল কে দেখতে পেয়ে স্বাভাবিক হয়।
-“ অনেক্ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম।
-“ বাসায় যাবেন না? আপনার মামা অনেকবার ফোন দিয়েছিল আপনাকে। ফোন রিসিভ করেন নি দেখে আমায় দিয়েছে ফোন।

-“ শুনতে পারি নি এতো সাউন্ডের মাঝে।
-“ বাসায় চলুন তাহলে।
অধরা হুমম বলে উঠে দাঁড়ালো। তারপর রাতুলের সাথে বাসায় ফিরলো।
তুষার এসেছে রাত ১২ টার দিকে। সবাই তখন ঘুমে বিভোর। আর তন্দ্রা হীন হয়ে ছিলে কেবল চিত্রা। তুষার রুমে আাতেই চিত্রা খাবার গরম করে রুমে নিয়ে আসে। তুষার ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে আসে। আজ আর তুষারের জন্য অপেক্ষা করে নি চিত্রা। তানিয়া বেগম জোর করে চিত্রা কে খাইয়েছেন। তুষার খাওয়া আগে চিত্রা কে জিজ্ঞেস করলো খেয়েছে কি না। চিত্রা হ্যাঁ জানালো।

তুষার নিরবে খাবার টা খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে এঁটো হাত ধুয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেললো। এঁটো প্লেট ঢেকে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। রাত ১ টা অব্দি কাজ করলো তুষার। তারপর এলোমেলো পায়ে বিছানায় এসে চিত্রা কে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। চিত্রা যেনো এতক্ষণ এটার ই অপেক্ষায় ছিলো। তুষার কাছে আসতেই মনেমনে হাসলো। তারপর ঘুম দিলো।

নতুন সকাল নতুনত্বের আগমন নিয়ে হাজির হয়। রাফি কিছুক্ষণ আগে ফোন করে জানিয়েছে সে সুস্থ মতোই পৌঁছিয়েছে মালদ্বীপ। নামকরা একটা হোটেলে উঠছে। দুই একদিনের মধ্যে প্রজেক্টের কাজ শুরু করবে। সবাই স্বস্তি পেলো কথাটা শুনে।
তৃষ্ণা চিত্রা এক্সাম দিতে ভার্সিটি এসেছে। আজ তামিম খাঁন পৌঁছে দিয়ে গেছে। প্রায় তিনঘণ্টা এক্সাম দেওয়ার শেষে বাড়ি ফিরে তামিম খাঁনের সাথেই।

এভাবেই চলে কয়েকদিন। গরম পড়েছে,সোফায় ফ্যান ছেড়ে বসে আছে চিত্রা। এক্সাম শেষ হয়েছে দিন দুয়েক হলো। শরীর তার ভীষণ ক্লান্ত। ঠিকমতো খেতে পারে না। একটু কাজ করলেই হাঁপিয়ে যায়। এই তো শুধু সবজি কাটতে গিয়েই হাঁপিয়ে উঠেছে। তানিয়া বেগম একা একা রান্না করে টেবিলে খাবার সাজায়। চিত্রার পাশে এসে বসে বলে-

-“ এখনও খারাপ লাগছে?
চিত্রা উপর নিচ মাথা নাড়ায়।
-“ লেবুর শরবত করে দেই?
চিত্রা আচ্ছা বলে। তানিয়া বেগম ঠান্ডা পানি দিয়ে এক গ্লাস লেবুর শরবত তৈরি করে। চিত্রার হাতপ দেয় খাওয়ার জন্য। চিত্রা গ্লাস টা নিয়ে চুমুক দেয়। এক চুমুক খেয়েই দৌড়ে ছুটে যায় বেসিনে। মুখ খুলতেই পেট থেকে গড়গড় করে সব বেরিয়ে যায়। বুমি করতে করতে চিত্রার শরীর নেতিয়ে যায়। তানিয়া বেগম চিন্তিত হলো। চিত্রা কে ধরে নিয়ে রুমে শুইয়ে দিলো।

সন্ধ্যার দিকে তুষার ফিরতেই তানিয়া বেগম তুষার কে বলেন সব কথা। সব শুনে তুষার নিজেও চিন্তিত হয়। দুপুরের পর থেকে চিত্রার শরীর আরো খারাপ হয়েছে। তুষার রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো চিত্রা শুয়ে আছে। তুষার গিয়ে চিত্রার পাশে বসলো। মাথায় হাত বুলালো। কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে চোখ মুখ শুকিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। আস্তে করে চিত্রা কে ডাকলো। চিত্রা চোখ মেলে তাকালো। তুষার আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো-

-“ এখন কেমন লাগছে শরীর?
চিত্রা ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুধালো-
-“ ভালো না।
-“ খাবার খাও নি কেনো?
-“ খেতে পারছি না তো। বুমি আসছে।
-“ লাস্ট পি’রিয়ড হয়েছে কবে?
চিত্রা স্বাভাবিক হয়েই জবাব দিলে-
-“ দু মাস আগে।

তুষার কিছু একটা ভেবে আবার বাহিরে চলে গেলো। আধ ঘন্টার মধ্যে ফিরলো। হাতে প্রেগন্যান্সি কিট। চিত্রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল-
-“ পরীক্ষা করে আসো।
চিত্রা কিট টা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখে বলে-
-“ আপনার মনেও এটা এসেছে?
-“ হুমম।

চিত্রা অসুস্থ শরীর নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। সম নিয়ে কিট টা হাতে নিয়ে বের হলো। তুষার তখন বিছানায় বসে চিত্রার জন্য অপেক্ষা করছে। চিত্রা বেরিয়ে আসতেই তুষার বলে-
-“ রেজাল্ট কি এসেছে?

চিত্রা কিট টা মেলে ধরলো তুষার সামনে। তাতে টকটকে দুটো লাল দাগ ভেসে আছে। দুজনের মুখে ফুটে উঠলো হাসি। তুষার এগিয়ে আসলো৷ আলতো করে জড়িয়ে ধরলে চিত্রা কে। চিত্রা তখনও তাকিয়ে আছে লাল টকটকে দাগ দুটের দিকে। মুখ চেপে ধরা গলায় বলে-

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩৪

-“ উই আর প্রেগন্যান্ট!
তুষার চিত্রার এহেন কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠে। চুলের ভাজে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ উই আর প্রেগন্যান্ট শোনা।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ৩৬