দ্যা বিউটি অফ লাভ গল্পের লিঙ্ক || রাকিবা ইসলাম আশা

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ১+২+৩+৪+৫
লেখিকাঃরাকিবা ইসলাম আশা

গাড়ি গিয়ে থামলো প্রসিদ্ধ এক বড়ো কাজী অফিসের সামনে।ভিতরে প্রবেশ করতেই সাদিতের পরিচিতো একজন অ্যাডভোকেড এসে দুজনের জন্য রেজিস্ট্রি পেপার নিয়ে এলো।অন্যদিকে সেই মুহূর্তে কাজী অফিসের বাইরে বেশ কিছু লোক মিস্টার সাদিত চৌধুরী ও তার নিউলি ম্যারিড ওয়াইফকে অভিবাদন জানানোর জন্যে।
দুজনেই রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করলো,বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হলো তারা।পুরো ব্যাপারটাই কেমন তাড়াহুড়ো করে হয়ে গেলো।
কিনারাকে দেখে মনে হচ্ছিলো ও যেনো সমুদ্রের স্রোতের সঙ্গে নিজের গা ভাসিয়ে দিয়েছে।
সাদিতের আলাদা রকম সুযোগ-সুবিধা আর পরিচিতি থাকার কারণে ম্যারেজ সার্টিফিকেট পেতে ওদের দুজনের খুব একটা দেরি হলো না।মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সার্টিফিকেট ওদের হাতে চলে এলো।নতুন জীবনের শুভ কামনা নিয়ে, একে একে সবাই এগিয়ে এসে ওদের অভিনন্দন জানাতে থাকে।

কিনারার সে সময় কিছুই ভালো লাগছিলো না।বড্ড অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিলো ওকে।বারবার ওর ভাইয়ের কথা মনে পড়ছিলো ওর।এতো লোকের মধ্যে সাদিত যেনো হারিয়ে গেলো,সবাই ওকে নিয়ে লাফালাফি করতেই ব্যস্ত।
অন্য দিকে কিনারা মাথা নিচু করে মন মরা হয়ে ছিলো।কিনারার ম্যারিজ সার্টিফিকেটের দিকে একবার চোখ মেলে তাকাতেই, কিনারার পুরো দুনিয়টা হঠাৎ করে যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলো।কিনারার কাছে সবকিছু তখনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে। পুরো ব্যাপারটাই যেনো ওর কাছে অদ্ভুত রকমের মায়াবী। কিনারা বার বার নিজেকে প্রশ্ন করলো,আমি কি সত্যিই এখন থেকে বিবাহিত। তার মানে আমি এখন থেকে মিস্টার সাদিত চৌধুরীর স্ত্রী। এটাই কি এখন থেকে আমার পরিচয়। কিনারা নিজের মনকে এসব প্রশ্ন করায় যেসব উত্তর ভিতর থেকে আসছিলো,তার কোনোটাই কিনারার পছন্দ হচ্ছিলো না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হ্যাঁ আজকে থেকে কিনারার পরিচয় এটাই, যে ও সাদিত চৌধুরীর স্ত্রী। এ কথাটা মেনে নিতে কিনারার কোথাও যেনো কষ্ট হলো।
আসলে এর আগে যতবার কিনারা মনে মনে নিজের বিয়ের কথা কল্পনা করছিলো, ততবারই স্বপ্ন গুলো অদ্ভুত রকমের মধুর ছিলো।ঠিক যেমন অন্য মেয়েদেরও একটা স্বপ্ন থাকে।কিন্তু শেষমেশ ওর বিয়েটা যে আর পাঁচ দশটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক হলো না।এরকম একটা ঝড় ঝাপটা কিনারার বিয়ের স্বপ্ন গুলো ওর জীবনের সবচেয়ে বড়ো দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠবে।তা কিন্তু নিঃসন্দেহে কিনারার ধারণার একদম বাইরে ছিলো।

এসব ভাবনার মধ্যে সাদিত এসে কিনারার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।এতোক্ষনে কিনারা সাদিতের মুখের দিকে ভালো করে তাকালো।কিনারা আর সাদিতের দৃষ্টি গিয়ে পড়লো একে অপরের উপর। দুজনে দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন, সেই সাদিতের সুদর্শন মুখ থেকে কিনারা তার চোখ কিছুতেই সরাতে পারছিলো না।তাকে দেখে কিনারার হার্টবিটের পারদটা আলাদায় মাত্রা ছাড়িয়েছিলো।ভিতর থেকে অদ্ভুত একটা অনুভুতি কাজ করলো কিনারার মধ্যে। কিনারা এ জীবনে এতো সুন্দর পুরুষ কখনো দেখেনি।তাই কিছুতেই সে সাদিতের থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলো না।সাদিতের উচ্চতা ছয় ফুটের বেশি, কিনারার উচ্চতা খুব একটা বেশি না হলেও,বেশির ভাগ মহিলার থেকে তুলনামূলক বেশি ছিলো।সাদিত তার সামনে এতোটাই লম্বা ছিলো যে তাকে দেখতে গেলেও কিনারাকে বারবার উঁচু করে দেখতে হচ্ছিলো।

তার সরু নাক, তীক্ষ্ণ চোখ, চাপা ঠোঁট,সবকিছু মিলে সাদিত৷ খুব অ্যাট্রাক্টিভ।সাদিতের মেজাজ ছিলো খুব আভিজাত্যপূর্ণ, তার আশেপাশে যে কোনো ব্যক্তিকে বশ করে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে।আর এ সম্পর্কে জ্ঞান অজর্ন করা কিনারার কাছে এক্কেবারে কঠিন কিছু ছিলো না। সাদিত আর কিনারা একে ওপরের একেবারে কাছে এসে দাঁড়িয়েছিলো,একে ওপরের এতোটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকার কারণে সাদিতের শরীর থেকে পুরুষালি সুবাস কিনারার দিকে ভেসে এলো।যা কিনারাকে মারাত্মকভাবে অ্যাটাক্ট করলো।কিনারা নিজেকে কোনো রকম কন্ট্রোল করে,কিনারা সাদিতের দিকে কোনো রকম তাকালো।ওর হার্টবিট টা খুব দূত ছুটতে থাকলো।কিনারা নিজেকে সামলাতে না পেয়ে সাদিতের থেকে দুকদম পিছিয়ে এলো।কিনারা লজ্জা পেয়ে আলতো ভাবে নিজের উপরের ঠোঁটের সঙ্গে নিচের ঠোঁটটা চেপে ধরলো।এবং হঠাৎ বলে উঠলো—মিস্টার চৌধুরী —-৷ কিনারা কিছু বলার আগেই সাদিত ওকে থামিয়ে বলে উঠলো— মিস কিনারা গাড়িতে গিয়ে বসুন।কিনারা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালো।

কিনারা আর সাদিত গাড়ির পিছনের সিটে গিয়ে বসলো আর ড্রাইভার ড্রাইভ করতে শুরু করলেন।
সাদিতের গাড়িতে উঠার পর কিনারাকে দেখে মনে হলো ও বড্ড আনমনা হয়ে রয়েছে। কিনারার পাশে তার সদ্য বিবাহিতো স্বামী সাদিত চৌধুরী বসে ছিলো সেদিকে কিনারার কোনো ভাবান্তর নেই।
তারপর কিছু মুহুর্ত সাদিত কিনারার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল।প্লিজ এমন হতাশ হয়ে বসে থাকবেন না।আপনি কিন্তু এটা মাথায় রাখবেন যে আপনি একজন রিচ এন্ড অনেস্ট মানুষকে বিয়ে করেছেন।যে আপনাকে সবরকমের সম্মান ও আফেকশন দিতে রাজি।যাতে আপনার কোনো ভাবেই এটা না মনে হয় যে আপনি শুধু মাত্র একটা শর্তের জন্য বিয়ে করেছেন।বিয়েটা যদিও সাদিতের ইচ্ছে মতেই হয়েছে,কিন্তু সাদিত কিনারার হতাশাপূর্ণ মুখ দেখে খুবই অস্বস্তিবোধ করছিলো।

কিনারা সাদিতের কথা শুনে ঘুরে তাকালো– সাদিতের সাইট ফিজ ছিলো আকৃষ্ট করার মতো।তার চোখ আলতো বন্ধ করে রাখা ছিলো।সাদিতের সেই স্কিন টাইট কালো শার্টের গলার কাছ থেকে কয়েকটা বোতাম খোলে রাখার কারণে, তার অ্যাট্রাক্টিভ গলার বোন চোখে পড়ছিলো বারোংবার।গাড়ির পেছনের গ্লাস দিয়ে বাইরের আলো গুলো ঠিকরে এসে সাদিতের সুন্দর মুখের গঠনটাকে গভীর থেকে গভীরো ভাবে ফুটে তুলছিলো।কিনারাকে এটা মানতেই হলো সাদিত খুব হ্যান্ডসাম।
কিনারাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাদিত জিজ্ঞেসা করলো আপনি কিছু বলবেন।

কিনারা মাথা নেড়ে বলল না।তারপর কিনারা মুখ ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকলো, কিনারা খুব ট্রায়ার্ড ছিলো।কিছুক্ষন বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে, কিনারার খুব ঘুম পেয়ে গেলো।একটু পর কিনারা গাড়ির জানালার কাঁচে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।রাস্তা কিছুটা ভাঙা থাকায় ঝাঁকুনিতে কিনারার মাথা গিয়ে ধাক্কা লাগে জানালার সাথে,কিন্তু কিনারা এতোটাই ক্লান্ত ছিলো যার জন্য অঘোরে ঘুমচ্ছিলো যে ও সেটা বুঝতেও পারলো না।কিন্তু কিনারা মাথা কাঁচে ধাক্কা খেতেই,সাদিত ওই আওয়াজ পেতেই সঙ্গে সঙ্গে কিনারার দিকে ঘুরে তাকালো।কিনারাকে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে সাদিতের মায়া হলো তাই ড্রাইভারের কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলল আস্তে গাড়ি চালান।
ড্রাইভার বলল আচ্ছা স্যার।সরি

তারপর সাদিত আস্তে আস্তে কিনারার কাছে গিয়ে বসে কিনারার মাথাটা আস্তে করে নিজের কোলের উপরে রাখলো যেনো কিনারার ঘুম না ভেঙে যায়।তারপর সাদিতের কোট টা খুলে কিনারার শরীরের উপর ঢাকা দিলো।তারপর কিনারার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।কিনারাকে ছোট শিশুর মতো ঘুমতে দেখে ওর মাথায় অলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।।
ঘন্টা খানিক যাওয়ার পরই গাড়িটা প্রবেশ করলো বিরাট এক বিলাস বহুল বাড়ির ভিতর।গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখা গেলো বাড়ির ভিতর রাস্তা দিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর ফুলগাছ লাগানো আছে। আর বাড়িটা যেনো আলোয় ঝলমলে করছে।
গাড়ি থামতেই ড্রাইভার এসে গাড়ির দরজা খুলে দিলো।কিনারা তখনো ঘুমে মগ্ন।ক্লান্তিমাখা চেহারা দেখে সাদিতের আর ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করলো না।তারপর সাদিত কিনারাকে ধরে কোনো রকম বাইরে বের করে ওকে কোলে তুলে নিলো। কিনারা তখনো ঘুমে মগ্ন। কিনারা যেনো সাদিতের গায়ে ঝুলে পড়েছে।সাদিত কিনারাকে কোলে নিয়েই ওদের বড়ো লিভিংরুমে প্রবেশ করলো।

সাদিতকে একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে ভিতরে ঢুকতে দেখে ওখানে থাকা বাড়ির কিছু হাউসমেইড খুব অবাক হয়ে গেলো। সাদিত কিনারাকে নিয়ে উপরে যেতেই হাউস মেইড দের ভিতর কানাখোসা শুরু হয়ে গেলো।আমি যেটা দেখলাম ওটা কি ঠিক দেখলাম।ছোট স্যার একটা মহিলাকে নিয়ে ঢুকলো।পাশ থেকে অন্য হাউসমেইড বলে উঠলো—শুধু তুমি একা দেখোনি আমরাও দেখেছি।, ছোটস্যারের তো মহিলাদের উপর এলার্জি। মহিলাদের থেকে তো দূরে থাকেন।তাহলে এই মহিলা কে যাকে উনি কোলে তুলে নিজের বেডরুমে নিয়ে গেলো।আর এ বাড়ির সবাই জানে সাদিতের বেডরুমে কারোর প্রবেশ নিষেধ। বাড়ির কোনো কাজের লোকও এতোদিনে সাদিতের বেডরুমের একঝলক ও দেখতে পারেনি।সাদিতের বেডরুমে মনির কাকা ছাড়া কেউ ঢুকতে পারেনা,মনির কাকায়ই সব পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখে।
সাদিত যে কিনারাকে নিয়ে বেডেরুমে গেলো।ব্যাপারটা সবার কাছে ঘোলাটেই থেকে গেলো।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ৩

কিনারা অঘোরে ঘুমচ্ছিলো,সাদিত কিনারাকে ওর নিজের বিছানায় নিয়ে শুয়িয়ে দেওয়ার পরেও ওর ঘুম ভাঙলোনা।সাদিতের ওই সুন্দর নরম বড়ো বিছানা কিনারাকে খুব ছোট্ট লাগছিলো।মনে হচ্ছিলো কোনো বাচ্চা মেয়ে শোয়ে আছে।ওর অর্ধেক মুখটা চুলে ঢাকা ছিলো।কিনারাকে দেখে এতোটাই ইনোসেন্ট লাগছিলো।ওকে ওই অবস্থায় দেখলে যে কারোরই মায়া হবে।সাদিত ওকে বিছানায় শোয়ে দিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসলো।কিনারার এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে কিনারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।কিছুক্ষন কিনারাকে একভাবে দেখার পর। সাদিত নিজের অজান্তেই আস্তে করে কিনারার ঠোঁটে চুমু খেলো।কিনারার৷ ঠোঁটের মিষ্টি সুবাস সাদিতকে পাগল করে দিলো। সাদিত জানতো না ওর মধ্যে এতোটা ইমোশন রয়েছে।

সাদিত এতোদিন নিজেকে ইমোশনলেস মনে করতো।সাদিত জানতো ওর সেল্ফ কন্ট্রোল অনেকটা বেশি।কিন্তু কিনারা ওর জীবনে আসার পর সবকিছু যেনো গেটে গেলো।সাদিত ভাবেনি কিনারার দিকে এতোটা আসক্ত হবে।আটাশ বছরের জীবনে সাদিতের মনে কেউ দাগ কাটতে পারেনি।এই প্রথম কোনো মেয়ে যে সাদিতের মনে দাগ কেটেছে।সাদিতের কখনো কোনো মেয়েকে ভালো লাগেনি।ও সবসময় মেয়েদের থেকে দূরে থাকতো।জীবনে এতো মেয়ের প্রপোজাল পেয়েছে আর এতো মেয়েকে ওর জন্য পাগলামি দেখেছে যা দেখে সাদিত অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ও আর মেয়েদের সহ্য করতে পারতো না। কিন্তু কিনারাকে প্রথম দেখেই সাদিত ভালোবেসে ফেলে।আর কিনারা যখন ওর কাছে আসলো, সাদিত কিনারাকে কাছে পাওয়ার সুযোগটা আর হাত ছাড়া করলো না,ওকে বিয়ের প্রপোজাল দিলো।

পরের দিন কিনারার ঘুম ভাঙলো,চোখ মেলে তাকাতেই ও নিজেকে একটা বিশাল বড়ো বেডরুমের একটা শৌখিন বিছানায় আবিষ্কার করলো।কিনারা বুঝতে পারলো না ও কোথায় আছে।তাই বুঝার জন্য আশে পাশে ঘুরে ফিরে দেখছিলো। তারপর কিনারা দেখলো ও যে রুমে শোয়ে আছে,সে রুমটা খুবই সুন্দর করে সাজানো গুছানো খুব দামি দামি ফার্নিচার।
তারপর কিনারা হঠাৎই করে খেয়াল করলো যে ওর জামা কাপড় পাল্টে গেছে। এবং একটা ঢোলা সাদা রঙের টিশার্ট পড়ে আছে।কিনারা বিছানার চাদরটা নিজের সাথে খাঁমচে ধরলো।তারপর ভাবলো আমি তো কাল মিস্টার চৌধুরীর সাথে গাড়িতে ছিলাম,তারপর আমাকে এই রুমে কে নিয়ে আসলো আর কেই বা জামা কাপড় চেঞ্জ করে দিলো।তারপর কিনারা ওর ফোনট হাতে নেয়,তারপর টাইম দেখতেই ধরফর করে বিছানা থেকে উঠে বসে পড়লো।আশেপাশে দেখতেই ওর ড্রেস সোফার উপর দেখতে পেলো,তারপর ড্রেস নিয়ে যতটা তারাতাড়ি সম্ভব ছুটে ওয়াশরুমের দিকে গেলো।

ওয়াশরুমের দিকে যেতেই খেলো এক ধাক্কা,ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই শক্ত কোনো কিছু কিনারাকে আঁকড়ে ধরে ছিলো ,কিন্তু কিনারা ভাবলো যে ও যেভাবে ধাক্কা খেলো এতোক্ষনে তো পড়ে যাওয়ার কথা, কই ব্যাথা পেলো না তো।কিনারা তা বুঝার জন্য চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো সাদিত ওর কোমর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সাদিত হয়তো সবে মাত্র সাওয়ার নিয়েছে,ওর চুলগুলো তখনো ভিজা ছিলো টপটপ করে পানি ঝরছে।সাদিতের ভিজা ঠোঁট, উন্মুক্ত ফর্সা বুকের ওই কালো লোমগুলো ভিজে বুকের সাথে লেপ্টে আছে।যা সাদিতকে খুবই আকর্ষণীয় করে তুলছে।

সাদিত কিনারাকে দাঁড় করিয়ে বলল কেয়ারফুললি চলাফেরা করা যায় না,আর একটু হলেই তো।
কিনারা বলল— আসলে আমি নিজেকে রুমে এভাবে দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তাই ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিতে চেয়েছিলাম।আর আপনি কি আমার জামা কাপড় বদলে দিয়েছেন।ভ্রুরু কুঁচকে কিনারা জিজ্ঞেসা করলো।
সাদিত বলল হ্যাঁ ওগুলো আমি বদলে দিয়েছি।
কিনারা চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আাসার উপক্রম। কিনারা চোখগুলো রসগোল্লা মতো বড়ো বড়ো করে সাদিতের দিকে তাকিয়ে বলল আপনি বদলে দিয়েছেন মানে— আপনি কেন বদলে দিয়েছেন।

সাদিত বলল ইয়েস,, ইউ আর মাই ওয়াইফ।শুধু আমি তোমাকে দেখতে পারি, আমার অধিকার আছে।তাই বদলে দিয়েছি।
সাদিতের কথাটা শুনে কিনারার গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
সাদিত কিনারার কাছে এসে বলল ওর গাল দুটো টেনে বলল,,,হয়েছে এতো লজ্জার কিছু নেয়।আজ না হয় কাল আমি সব দেখবো আর আমি আমার চোখটা বেঁধেই তোমার ড্রেস বদলে দিয়েছি।আর আমি ওতোটাও খারাপ না যা তুমি আমাকে ভাবো।
কিনারা সাদিতের কথা শুনে শ্বাস ফেলল।আর মনে মনে বলল যাক উনি তাহলে আমার সাথে কিছু করেনি।আমি তো আরও ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

তারপর সাদিত বলল,ওইযে কাবার্ড টা দেখছো,ওখানে অপাতত তোমার জন্য টুকটাক কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আর কিছু ড্রেস কাল রাতে আমি কিনিয়ে এনে রেখেছিলাম। বাট তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাই আর ডাকা হয়নি।যাও ওখান থেকে একটা ড্রেস নিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে আসো আমরা ব্রেকফাস্ট করে হসপিটালে যাবো ।আজ কায়ানের অপারেশন হবে মনে আছে।
কিনারা কিছু না বলে মাথা নেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

সাদিত আর কিনারা এক সাথে নিচে লিভিং রুমে আসলো।ওরা নিচে নামতেই আবার সব হাউসমেইডরা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ওদের কাছে ব্যাপারটা এখনো ঘোলাটে।ওদের ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাদিত সবার মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল–শুনো এ হলো তোমাদের নতুন ম্যাম,মিসেস সাদিত চৌধুরী। কেউ যদি উনার সাথে একটুও দুর্ব্যবহার করো তাকে এই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হবে। উনার খাতিরে যেনো কোনো অভাব না পড়ে। সবার মাথায় ঢুকেছে কথাটা।
কথাটা শুনে হাউসমেইডরা যারা ছিলো তারা বিশ্বাসই করতে পারলোনা।ওরা হা করে সাদিতের দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর হাউসমেইডরা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি।
তারপর সাদিত আর কিনারা ডাইনিং এ খেতে বসলো।খেয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।

কায়ান আর কিনারা দুই ভাই-বোন।কিনারা অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। আর কায়ান ক্লাস টেন এ পড়ে। ওদের বাবা মা দুজনেই একটা বাস এক্সিডেন্টে মারা যায় ভাগ্যক্রমে ওরা দুই ভাই-বোন বেঁচে যায়। দুজনেই দাদির কাছে বড়ো হয়েছে,কিনারার দাদুভাই উনি প্রাইমারি স্কুলের টিচার ছিলো ছিলো উনি মারা যাবার পর পেনশনের যে টাকা পেতো ওটা দিয়ে কিনারার দাদি কোনো রকম সংসার চালাতো।
কিন্তু সেদিন ছিলো কায়ানের স্কুলে বার্ষিক ক্রিয়া প্রতিযোগিতা।কায়ান দৌড় প্রতিযোগিতার মাঝ পথে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়।তারপর হসপিটালে এডমিট করার পর ডাক্তার জানায় কায়ানের জন্মগত হার্টব্লক সমস্যা রয়েছে।।দ্রুত অপারেশন না করলে প্রাণনাশকও হতে পারে।অাপাতত মেডিসিন দিচ্ছি দ্রুত অপারেশন করে ফেলবেন।
কিন্তু তখন কিনারার ফ্যামিলির পক্ষে অপারেশন করানো সম্ভব হয়ে উঠেনি আর্থিক কারণে ।
আজ আবার হুট করে দুমাস পর কায়ানের আবার প্রচন্ড বুকের ব্যাথা উঠে। অজ্ঞান হয়ে গেলে আবার ওকে হসপিটালে এডমিট করারনো হয়।

ডাক্তার বলে আপনার ভাইয়ের যে সময় অপারেশন করানোর কথা ছিলো ওই সময় পেরিয়ে গেছে।এখন হার্টের কন্ডিশন ভালো না। আজকালের মধ্যে অপারেশন না করলে।এটা আর ঠিক হবে না।আপনার ভাইয়ের মৃত্যুও হতে পারে।
কিন্তু কিনারা এতো তারাতাড়ি এতোগুলো অপারেশনের টাকা কিভাবে ম্যানেজ করবে।
পরে ডাক্তারকে অনেক রিকুয়েষ্ট করার পর উনি বলে হসপিটালের প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলতে,একমাত্র উনিই পারেন অপারেশনের ব্যবস্থা করে দিতে ।
তারপর কিনারা সাদিতের কাছে যায়।সাদিত কিনারাকে শর্ত দেয় বিয়ে করার বিনিময়ে ও ওর ভাইয়ের অপারেশনের ব্যবস্থা করে দিবেন।

বতর্মান——
প্রায় এক ঘন্টা পর ওটির রুমের দরজাটা খুলল।একে একে ডাক্তাররা বেরিয়ে আসছেন।প্রথম ডাক্তার বেরিয়ে আসতেই কিনারা জিজ্ঞাসা করলো আমার ভাই কেমন আছে ডক্টর। ডাক্তার বলল, এখন রুগীর অবস্থা স্থিতিশীল, অপারেশন সাকসেসফুল,,কায়ান এখন আউট অফ ডেঞ্জার।আর কোনো প্রাণনাশের ভয় নেই।
কিনারা ছলছল চোখে বলল তার মানে ভাই এখন বিপদমুক্ত।
ডাক্তার বলল হ্যাঁ —-
সাদিত বলল থ্যাঙ্ক ইউ ডক্টর।
ডাক্তার বলল ওয়েলকাম মিস্টার চৌধুরী।

কায়ানকে ওয়ার্ড চেন্জ করে দেওয়া হয়েছে।
কায়ানের তখনো সেন্স ফেরেনি।ভিআইপি ওয়ার্ডে একজন রুগীর জন্য আলাদা ঘর ছিলো।তার সাথে একটা বেডরুম একটা লিভিংরুম আর একটা বাথরুম।ওখানে কায়ানকে শিফট করে। সেন্স না ফেরা অবদি হসপিটালেই থাকতে হবে।ডাক্তার জানায় চব্বিশ ঘণ্টা পর কায়ানের সেন্স ফিরবে।এর আগে কেউ দেখা করতে পারবে না।
সাদিত হসপিটালের সকল সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কায়ানের কেবিনের জন্য নার্স আর ডাক্তার ঠিক করে রাখা হয়েছে । প্রত্যেক মুহুর্তের আপডেট যেনো ওকে জানানো হয়।
সাদিত আর কিনারা সন্ধ্যা অবদি হসপিটালে থেকে বাসায় ফিরে যায়।

কিনারা হসপিটাল থেকে ফিরে, ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই সাদিত পিছন থেকে কিনারাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে।সাদিত কিনারাকে জড়িয়ে ধরতেই কিনারা ভয়ে কেঁপে উঠে।কিনারার রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেনো এক উষ্ণ শিহরন বয়ে গেলো।
কিনারার চুলের গন্ধে সাদিত যেনো মাতোয়ারা হয়ে গেলো।
সাদিত কিনারার কাঁধে নাক ঘষে প্রশ্ন করলো —- আচ্ছা কিনারা তুমি কোন পারফিউম ইউস করো।তোমার এ গন্ধে আমি বার বার পাগল হয়ে যায়।নিজেকে কন্ট্রোল করা খুব দায় হয়ে যায়।

সাদিত কিনারাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছিলো।কিনারা যেনো অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।
তারপর কিনারা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল আমি কোনো পারফিউম ইউস করিনা।
কিনারা ওভাবে দাঁড়িয়ে আর থাকতে না পেয়ে,লজ্জা পেয়ে বলল—- মিস্টার চৌধুরী আমাকে ছাড়ুন।
সাদিত বলল–তুমি গতকাল সারারাত আমাকে জড়িয়ে ধরে শোয়ে ছিলে—-তো আমি কি এখন তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকতে পারবো না।
কিনারা খুব ঘাবড়ে গিয়ে বলল— আমিই —– গতকাল।

সাদিত কিনারার গালটা আস্তে করে টিপে বলল— হ্যাঁ তুমি—পুরো অক্টোপাস হয়ে গিয়েছেলে।আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলে।আমাকে কিছুতেই ছাড়ছিলেই না।কাল তুমি খুব ভালোভাবে ঘুমিয়েছিলে বাট তোমার জন্য আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি।
কিনারা সাদিতের কথা শুনে এতো লজ্জা পেলো,যে ওর পুরো মুখ লাল হয়ে ব্লাস করতে লাগলো।ও গতকাল এতো ট্রায়াড ছিলো যে — গাড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।তারপর থেকে ওর কিছু মনেও নেই। কিন্তু ওরা একবিছানায় শোয়েছিলো এটা ভেবে কিনারার হার্টবিট ভয়ে ছুটতে লাগলো।কিনারার মনে হলো,,ও আগে ঘুমিয়ে ভালোই করেছে।না হলে একি বিছানায় এক সাথে শোতে গেলে ও লজ্জায় মরেই যেতো।

অন্যদিকে সাদিতকে দেখে মনে হলো ও ওর সমস্ত শরীর ছেড়ে দিয়েছে।কিনারাকে জড়িয়ে ধরে যেনো শান্ত হয়ে গেছে।
গতকাল রাতে সাদিত নিজেকে প্রমিজ করেছিলো,যায়ই হয়ে যাক না কেন, ও সবসময় কিনারার সাথেই থাকবে।সাদিত অনেকদিন পর খুব ভালোভাবে ঘুমিয়েছে।
প্রায় একমিনিট কিনারা চুপ করে থাকার পর বলল— মিস্টার চৌধুরী আমাকে ছাড়ুন — আমার খুব খিদে পেয়েছে, আমি ডিনার করতে চায়।
সাদিত কিনারাকে ছেড়ে দিয়ে বলল– ওকে।চলো

রাতে ডিনার শেষে রুমে এসে কিনারা খাটের সামনে এসে বিড়বিড় করছে।মনে মনে বলছে আজও কি মিস্টার চৌধুরী সাথে ঘুমোতে হবে।কোথায় শোবো খাটের এই পাশে, না ওই পাশে।আজ কোনো ভাবেই মিস্টার চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো যাবে না।উনি তো আবার ঠোঁট কাঁটা স্বভাবের সকালে আবার এসব বলে আমাকে লজ্জায় ফেলবে। অন্যমনস্ক হয়ে এসব ভাবছে আর নখ কাঁমড়াছে।
এমন সময় সাদিত কিনারার কানের কাছে এসে ফুঁ দিতেই কিনারা ভয় পেয়ে পড়ে যাচ্ছিলো,আর আহ্ বলে সাদিতকে আঁকড়ে ধরে, সাদিতও নিজের অজান্তে কিনারাকে জড়িয়ে ধরে, দুজন দুজনার এক্কেবারে কাছাকাছি।একে অপরের শ্বাস অবদি শুনতে পারছে।কিনারার ভয়ে আত্মারাম উড়ে গেয়েছিলো।ও এতোটাই অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছিলো সাদিত ওভাবে এসে ওমন করায় ভিষণ ভয় পেয়ে যায় আর পড়ে যায়।

সাদিত কিনারাকে ছেড়ে দিয়ে ভ্রুরু কুঁচকে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল—ঠিকঠাক মতো খাওয়া-দাওয়া করো না নাকি,যে ফুঁ দেওয়ার আগেই পরে যাচ্ছিলে।এমন না খেয়ে খেয়ে হেঙ্গলা পাতলা হচ্ছো কেন।
কিনারা সাদিতের দিকে আঙুল তুলে বলল– দেখুন
সাদিত কিনারাকে ওর আঙুল ধরে আটকিয়ে —অন্য হাতে কিনারার কোমড় জড়িয়ে ধরে একদম কাছে টেনে এনে বাঁকা হেসে বলে উঠলো—-তুমি যাই দেখাবে আমি সেটাই দেখতে প্রস্তুত। তো বলো কি দেখাবে।বলে চোখ মারলো কিনারাকে।
কিনারা আমতা-আমতা করে বলে — আআমি কিককি দেখাবো — মানে।আমি তো বলতে চাচ্ছিলাম আপনি আমি মোটেও হেঙ্গলা না।আর আমি ঠিকঠাক মতো ঠিকই খাওয়া-দাওয়া করিই হুম ।

হ্যাঁ সেটো দেখতেই পারছি কতটা খাও।একটা ফুঁ তেই কাত।বলে কিনারাকে ছেড়ে হাসতে শুরু করলো।
কিনারা হাত দুটো মুটো করে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বিছানায় গিয়ে বসলো।
সাদিত হাসতে হাসতে ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসলো।
মিনিট পাঁচেক পর কিনারা একটা চাঁদর আর বালিশ নিয়ে নিচে বিছানা করলো।
সাদিত ল্যাপটপ থেকে মুখ সরিয়ে ভ্রুরু কুঁচকে কিনারার দিকে তাকালো। কি গো বউ নিচে বিছানা করলে যে।আমার এত্তো বড়ো বেডটা কি তোমার জন্য কম হয়ে গেছে। যে নিচে বিছানা করতে চলে গেলে।অবশ্য তুমি যদি চাও বেডটা কালই চেঞ্জ করবো।হেয়ালি করে সাদিত বলল।

কিনারা বিরক্ত গলায় বলল— বেড নিয়ে আমার কোনো প্রবলেম নেই, প্রবলেম আপনাকে নিয়ে। আমি আপনার সাথে এক বিছানায় শুতে পারবো না।কারণ আপনি একটা অসভ্য।
সাদিত কিনারার কাছে এসে সরাসরি কিনারাকে কোলে তুলে নিলো।তারপর কিছুটা রাগীলুক নিয়ে বলল কি জানি বলছিলে আমি অসভ্য।
কিনারা ভয়ে ঢুক গিললো না,সাদিত ওকে এভাবে কোলে৷ তুলে নেওয়াই কিনারা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।তারপর বলল আপনি অসভ্য হতে যাবেন কেন। আপনি তো অনেক ভালো।
তারপর সাদিত বলল তুমি এখন আমার সাথে বেডে ঘুমাবে,শুধু এখন না প্রত্যেকদিন আমার সাথেই ঘুমাবে মাইন্ড ইট।
কিনারা রাগ দেখিয়ে বললো পারবো না,কিনারার কথা শেষ না হতেই, সাদিত ওর হাতের বাঁধন আলগা করতেই, কিনারা পড়ে যাচ্ছিলো,চেঁচিয়ে উঠতেই সাদিত ওকে আবার ধরে নিলো।

আর কিনারা ভয়ে সাদিতের গলা জড়িয়ে ধরলো।তারপর শ্বাস ছেড়ে কিনারা বললো উফফ আর একটু হলেই তো আমি এখনি পড়ে যেতাম,আপনি এভাবে আমাকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলতে চান।
ইয়েস, এবার বাঁচিয়ে দিলাম,এরপর আমার কথা না শুনলে,,,,,,,,কিনারা ঝটপট করে বলে উঠলো,,,, এই না না আমি শুনবো, আমি শুনবো।তবুও আপনি আমাকে ফেলে দিবেন না প্লিজ।তারপর মেঝের দিকে তাকিয়ে বললো ওখান থেকে পড়ে গেলে আমার একটা হাড়ও আস্ত থাকবে না।
তারপর সাদিত জয়ের হাসি দিয়ে বলে,দ্যাটস্ লাইক এ গুড গার্ল।

কায়ান হসপিটালের বেডে শুয়ে টিভি দেখছিলো।এমন সময় দরজা খুলে প্রবেশ করলো সাদিত আর কিনারা।
কায়ান দেখলো ওর আপু একটা লম্বা,হ্যান্ডসাম, ও ব্যক্তিত্বপূর্ন মানুষের হাত ধরে ভিতরে প্রবেশ করলো।
কায়ান অবাক হয় তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো– আপু তুমি এসেছো।আর কে উনি।তোমার হাত কেন উনি ধরে রেখেছেন।
কিনারাকে চুপ করে থাকতে দেখে কায়ান আবার জিজ্ঞাসা করলো।কি হলো আপু বলো না।
কিনারা ইতস্ততবোধ করে বলল।আমি আর সাদিত বিবাহিত।
কায়ান বড় বড় চোখ করে বলল মানে।তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।
কিনারা মাথা নেড়ে বলল হুম।

কায়ান আবারো প্রশ্ন করলো।এসব কবে হলো।আমাকে জানাও নি কেন আপু।
কিনারা বলে উঠলো পরশুদিন।
কিনারার কথা শুনে কায়ান বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।হা হয়ে চোখ বড় বড় করে সাদিতের দিতে তাকাতেই।
সাদিত সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলল–হুম এখন থেকে আমি তোমার জামাইবাবু।তো শালাবাবু এখন তোমার শরীর কেমন।
কায়ান আবাক হয়েই বলল — আগের থেকে বেটার।
এভাবে কিছুক্ষন ওদের মধ্যে কথা হলো।
কায়ানের যেহেতু হার্টের সার্জারী হয়েছে সেহেতু ওকে ৩-৪ দিন হসপিটালেই থাকতে হবে।
ওরা কিছুক্ষন হসপিটালে থাকার পর হঠাৎ সাদিতের ফোনটা বেজে উঠলো।সাদিত ফোনটা বের করে একটা কিছু ভেবে ফোনটা রিসিভ করলো।কিছুক্ষন কথা বলে ফোনটা রেখে দিয়ে।কিনারা আর কায়ানের উদ্দেশ্যে বলল এক্সট্রিমলি সরি আমার একটা কাজ পড়ে গেছে অফিসে, আমাকে এখনি যেতে হবে।

তুমি যখন বাসায় যাবে আমাকে কল করবে আমি ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিবো।ও তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে।
তারপর সাদিত কায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে মিষ্টিভাবে বলে উঠলো — তুমি এখন রেস্ট নাও, আর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠো।আর কোনো কিছুর দরকার পড়লে আমাকে জানাবে কেমন।বলে সাদিত বেরিয়ে পড়লো।
কিনারা সারাদিন হসপিটালে থেকে সন্ধ্যার দিকে সাদিতকে কল করতেই ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিলো।
কিনারা বাসায়,ফিরলো।সাদিত তখনো অফিস থেকে বাসায় ফিরেনি।কিনারা সাওয়ার নিয়ে নিজেকে পরিপাটি করে খাটে বসলো।তারপর দাদিকে ফোন করলো,তারপর কিনারা ওদের বিয়ের ব্যাপারটা দাদিকে জানলো।যদিও প্রথমে কিনারার দাদি মন খারাপ করলেও৷ পরে কিনারার ভালোর কথা ভেবে বিয়েটাকে মেনে নেয়।অনেকক্ষন কথা বলে ফোনটা রেখে কিনারা নিচে গেলো।

আসলে পুরো বাড়িটা দেখা হয়নি কিনারার তাই ঘুরে-ফিরে দেখতে লাগলো।পুরো বাড়িই খুব সাজানো গুছানো।দামী দামী ফার্নিচার রয়েছে,এন্টেরিয়্যর ডিজাইনও তাঁক লাগানোর মতো।সুকেশগুলোও যেনো একদম নতুনের মতো ঝকমক করছে।সবগুলো ফার্নিচার কালো রঙের।নিচে দেখতে দেখতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছিলো,এমন চোখ ধাঁধানো জিনিস দেখে কিনারা অবাকের সাথে চারপাশটা দেখছিলো।এমন সময় সাদিত এসে কিনারাকে জড়িয়ে ধরে।কিনারা প্রথমে ভয় পেলেও পরে নিজেকে সামলে নেই। কারণ সাদিত ছাড়া এমন করার এ বাড়িতে কারোর সাহস নেই।তাই কিনারা নিজেকে সামলে সাদিতের থেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে। মিস্টার চৌধুরী ছাড়ুন আমাকে।

কিনারাকে ওমনভাবে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে দেখে সাদিত দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল—তুমি ততক্ষণ নিজেকে ছাড়াতে পারবে না যতক্ষণ না আমি চাইবো।এই বলে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
মিস্টার চৌধুরী ছাড়ুন আমাকে নিচে সবাই আছে। দেখছে তো ওরা।
সাদিতের যেনো কোনো কথায় কানে ঢুকলো না।
এদিকে কিনারা লজ্জায় ছটফট করতে শুরু করলো,কারণ কিনারা জানে নিচে হাউসমেইডরা আছে।
সাদিত অবশ্য এতোটা খেয়াল করেনি ও জানে না যে নিচে লিভিংরুমে কিছু হাউসমেইড দাঁড়িয়ে ছিলো,এসব দেখে হাউসমেইডরা ঘাবড়ে গেলো কি করবে বুঝতে পারছিলো না।শুধু একজন অন্য জনের মুখের দিকে দৃষ্টিগোচর করতে থাকলো।আর ভাবতে লাগলো দেখে যা মনে হচ্ছে স্যার ম্যামকে অনেক ভালোবাসে।

কিনারা এমন ছটফট করতেই এক সময় দুজনেই ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেয়ে,দুজনেই সিঁড়ি থেকে পড়ে গেলো।ভাগ্যিস কিনারা ৫ সিঁড়িতে ছিলো ,না হলে দুজনের কোমড়ই আজ গেতো।
সাদিতের পিঠে ব্যাথা লাগলো কারণ ও নিচে পড়ে ছিলো।সাদিত রেগে বলল তোমার জন্য আমার ব্যাথা লাগলো,এতো ছটফট করো কেন তুমি।রোমান্সের ছিটেফোঁটাও তো দেখছি জানো না।বরকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিলে এইভাবে।
কিনারা বলল— বাহ আপনি নিজেই তো আমাকে আটকে জড়িয়ে রেখেছিলেন।ঠিক হয়েছে এবার বুঝুন মজা।
সাদিত বলল ব্যাথা যখন তুমি দিয়েছো,ওটা ভালোও তোমাকেই করতে হবে।
দেখুন আমি মোটেও আপনাকে ব্যাথা দেয়নি।আপনি জোর করে আমাকে জড়িয়ে রেখেছিলেন সবার সামনে।আপনার দোষেই আপনি পড়েছেন।এতে আমার কোনো দোষ নেই।

সাদিত বলল— তুমি ছটফট করছিলে তাই তো পড়েছি।সব তোমার জন্য হয়েছে।প্রবলেমটা যেহেতু তোমার জন্যই হয়েছে সমাধানও তোমাকেই করতে হবে। আন্ডারস্টুড।
কিনারা কিছু বলতে গেলেই, সাদিত ওকে আটকে দিয়ে হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেলো।তারপর দরজা বন্ধ করে।বেড টেবিলের ডোয়ার থেকে কিছু একটা বের করলো।
কিনারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।সাদিত আস্তে আস্তে কিনারার দিকে এগিয়ে গেলো।
কিন্তু কিনারা হঠাৎই খেয়াল করলো—একি মিস্টার চৌধুরী আপনি আপনার শার্টের বোতাম খুলছেন কেন।
সাদিত একটা অন্যরকম রোমান্টিক মুডে আছে, তা ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।সাদিত এক পা এক পা করে এগোচ্ছে আর একটা করে শার্টের বোতাম খুলছে।

কিনারা খুবই অস্বস্তি পড়ে গেলো।এমন কেন করছেন উনি।
সাদিত কিনারার একদম কাছে গিয়ে দাঁড়ালো,একহাতে কিনারার কোমড়টা জড়িয়ে ধরে একদম নিজের কাছে টেনে আনলো।
কিনারার এতে হার্টবিটের পারদটা হুট করেই বেড়ে গেলো।দ্রুত শ্বাস উঠা-নামা করতে শুরু করলো,কিনারার মনে হচ্ছে ওর বুকের ভিতর কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে।
সাদিত অন্য হাত দিয়ে আলতো করে কিনারার ডান হাতটা ধরলো।কিনার চোখের দিকে তাকিয়ে,ওর হাতটা ধরে উপরে তুলল।তারপর একটা শিসি কিনারার হাতে তুলে দিয়ে বলল এই ওয়েলটা আমার পিঠে মাসাজ করে দাও।বলে কিনারাকে ছেড়ে দিয়ে সাদিত গিয়ে খাটে বসলো।

কিনারা ওয়েলের শিসির দিকে তাকিয়ে দম ফেলে শ্বাস নিলো।আর একটু হলেই তো ওর আত্মারাম উড়াল দিতো।মনে মনে বলল কি মানুষরে বাবারে বাবা আর একটু হলেই তো আমি দম আটকে মরে যেতাম।উনি যেভাবে শার্টের বোতাম খুলল,আমি তো ভেবেছিলাম উনি কি না কি করবেন।যাই বাবা ওয়েলটা মাসাজ করে দিয়ে আসি, না হলে বিশ্বাস নেই উনি যেকোনো সময় সত্যিই কিছু করে ফেলতে পারেন।তারপর একটা শ্বাস ছেড়ে সাদিতের দিকে এগিয়ে গেলো।

সাদিত কিনারাকে দেখে খাটে শোয়ে পড়লো।কিনারা সাদিতের উন্মুক্ত ফর্সা পিঠ দেখে, বুকের ধুকবুকনিটা বেড়ে গেলো।ক্রমাগত উঠা নামা করতে লাগলো।মনে মনে ভাবলো একটা ছেলে মানুষের ও যে পিঠ এতো সুন্দর হতে পারে তা উনাকে না দেখলে হয়তো বিশ্বাসই করতাম না।তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে খাটে বসলো সাদিতের পাশে।কিনারার হাত ভীষণ কাঁপছে। কিনারা নিজের হাতের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারছে না,, হাতটা অনবরত কেঁপে যাচ্ছে।কিনারা নিজেও জানেনা কেন এমন হচ্ছে। তবুও তেলটা কোন মতে হাতে নিলো।এবার মাখাতে গিয়েও দুইবার হাতটা পিছিয়ে নিলো,কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে। কেমন একটা অজানা অনুভূতি হচ্ছে কিনারার।
সাদিত বিষয়টা বুঝতে পেরেও বলল—কাম ওন কিনারা হারিআপ।
এবার কিনারা সাদিতকে স্পর্শ করলো,কিনারার হাতটা কেঁপে উঠলো।তারপর আস্তে আস্তে সাদিতের ঘাড় থেকে পিঠ অব্দি মাসাজ করলো।কিনারার চোখে মুখে তখনো ভয় আর লজ্জা।
সাদিতের ঠোঁটের কোণে হালকা মিষ্টি হাসি।

১৫ মিনিট পর কিনারা ছাড়া পেলো,মাসাজ করা হয়ে গেলে,কিনারা আর লজ্জায় সাদিতের দিকে তাকাতে পারছে না,ফর্সা গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। কিনারা আর সাদিতের সামনে থাকতে না পেয়ে, রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ৬+৭+৮+৯+১০