দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ৬+৭+৮+৯+১০

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ৬+৭+৮+৯+১০
লেখিকাঃরাকিবা ইসলাম আশা

জানালা দিয়ে হালকা সূর্যের একটা আলো ওদের গায়ের উপর এসে পড়লো।পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনা যাচ্ছে।কিনারার ঘুমটা ভেঙে গেলো,ও দেখলো সাদিত ওকে জাপ্টে ধরে শোয়ে আছে,সাদিতের গরম নিশ্বাস কিনারার ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে।সাদিত একদম কিনারার কাঁধের কাছে নিজের মুখটা রেখে ঠিক ওর পাশেই ওকে জড়িয়ে ধরে শোয়ে আছে। সাদিত যেভাবে কিনারাকে নিজের কাছে৷ টেনে নিয়েছে,তাতে কিনারার ছোট্ট শরীরটা আরও গুটিয়ে-শুটিয়ে ছোট্ট শিশুর মতো হয়ে আছে। সাদিতের প্রতিটা নিশ্বাস যখন কিনারার কাঁধের উপর আছড়ে পড়ছে তখন মনে হচ্ছে কেউ নিজের আঙুল দিয়ে, কিনারার কাঁধে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

কিনারা একটু নড়ে উঠতেই, সাদিত ঘুমের ঘোরে ওকে বুকের কাছে টেনে এনে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
কিনারা ভাবলো সাদিত হয়তো জেগে আছে, তাই ওকে ছাড়ানোর জন্য আস্তে করে ডাক দিলো,মিস্টার চৌধুরী, মিস্টার চৌধুরী। বাট সাদিতের কোনো রেসপন্স পেলো না,কিনারা দেখলো সাদিত তখনো কিনারাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েই আছে,হয়তো সত্যিই ঘুমের ঘোরে জড়িয়ে ধরেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কিনারা দেখলো সাদিতের ব্রাউন কালারের চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কপালের সাথে লেপ্টে আছে,তারপর হঠাৎই কিনারার চোখ পড়লো সাদিতের চেরির মতো লাল টুকটুকে ঠোঁটের উপর।ইসস একটা ছেলের এতো সুন্দর ঠোঁট কখনো হয় নাকি।শুধু ঠোঁট কেন উনার সবকিছুই সুন্দর, কিনারা নিজেও যথেষ্ট সুন্দরী, যে কেউ দেখলেই পাগল হবে,তবুও সাদিতের সৌন্দর্যের কাছে কিনারা যেনো কিছুই না।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে কিনারার হাতটা সাদিতের ঠোঁটের উপর চলে গেছে কিনারা বুঝতেই পারলো না।যখন কিনারার হুস ফিরলো তখন সাথে সাথে হাতটা সরিয়ে নিলো,তারপর মনে মনে ভাবলো,এই রে কি করতে যাচ্ছিলাম।মিস্টার চৌধুরী যদি জেগে যেতেন,তাহলে তো৷ আমাকে আবার লজ্জায় ফেলতেন।।যাই বাবা ভালোয় ভালোয় এখন উঠে পড়ি, উনি এখনো ঘুমিয়ে আছেন।এই ভেবে কিনারা আস্তে করে নিজের উপর থেকে সাদিতের হাতটা সরালো,তারপর খুব সাবধানের সাথে উঠে বাথরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

বাথরুম থেকে বের হতেই কিনারা দেখলো সাদিত কার সাথে জানি ফোনে কথা বলছেন।কিনারা অতো গুরুত্ব না দিয়ে বারান্দায় গিয়ে তোয়ালেটা মেলে দিলো,তারপর রুমে প্রবেশ করতেই সাদিত বলে উঠলো — কিনারা
জি বলুন মিস্টার চৌধুরী।
বলছি কি আজ বাবা মা লন্ডন থেকে দেশে ব্যাক করবেন। আমি চাই আমাদের বিয়েটা যেভাবেই হোক উনারা যেনো তা জানতে না পারে।আমি উনাদের জানিয়েছি আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছি আর উনারা তা মেনে নিয়েছেন।তো তুমি উনাদের নিজের বাবা মার মতো সম্মান করবে।

কিনারা মাথা নেড়ে হুম বলল।তারপর কিনারা নিচে চলে গেলো।
সাদিত অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো,এমন সময় কিনারা কফি নিয়ে রুমে ঢুকলো।তারপর সাদিতকে উদ্দেশ্য করে বলল আপনার কফি। বলে কফির মগটা টেবিলের উপর রাখলো।
সাদিত কফির মগটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে —

সাদিত ওর ডেবিট কার্ডটা কিনারার হাতে ধরিয়ে দিয়ে। স্নেহের সঙ্গে কিনারার হাতের মুঠোর উপর চুমু খেলো। খেয়ে বলল এই কার্ড টা তোমার কাছে রাখো,আজ থেকে এটা তোমার।এটা দিয়ে তুমি যত খুশি খরচ করতে পারবে,তোমার যখন যা প্রয়োজন হবে এটা দিয়ে খরচ করতে পারবে।যদি আরও দরকার পড়ে অবশ্যই আমাকে জানিও কেমন।
কিনারা কার্ডটার দিকে তাকিয়ে বলল মিস্টার চৌধুরী এটা আপনার কাছে রাখুন। আমার প্রয়োজন নেই। আমি এতো টাকা দিয়ে কি করবো।আমার তেমন দরকার পড়বে না,তার থেকে বরং আপনি এটা আপনার কাছে রেখে দিন।
দেখো কিনারা তুমি যদি আমার টাকা পয়সা খরচ করতে না চাও তাহলে আমি এরকম একজনকে রাখতে পারি যে তোমাকে শিখিয়ে দিবে কিভাবে ব্যয়বহুল হতে হয়।

সাদিতের এধরণের কথা শুনে কিনারা একটি চমকে গেলো,, মনে মনে ভাবলো–এটা এবার কি ধরনের কথা আমাকে এখন অন্যের থেকে শিখতে হবে যে কিভাবে ব্যয়বহুল হতে হয়।
কিনারাকে চুপ করে থাকতে দেখে সাদিত বলে উঠলো — দেখো কিনারা একজন পুরুষ এটা ভেবে উপার্জন করে যে,,,তার উপার্জনের উপর তার স্ত্রী যাতে সম্পূর্ণ অধিকারটা থাকে।সে যাতে নিজের জন্য কিছু খরচা করতে পারে।আর এখন যদি তুমি সে উপার্জন থেকে খরচা না করো।তাহলে আমার মনে হবে, আমি আমার জীবনে যে টুকু অর্থ উপার্জন করেছি তা হয়তো যথেষ্ট নয়,তার পাশাপাশি আমার এটাও মনে হবে যে তুমি হয়তো এখনো আমাকে স্বামী হিসেবে এখনো মেনেই নিতে পারোনি।

সাদিতের কথা শুনে কিনারা যে ঠিক কি উত্তর দিবে।ভেবে পেলো না।তাই কিনারা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
সাদিত কিনারাকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে, সাদিত কিনারার কাছে গিয়ে কিনারার মাথাটা বুকে টেনে নিলো।সাদিত ওকে কাছে টেনে নিতেই কিনারা সাদিতের শরীরের সেই উষ্ণতা আবারো অনুভব করলো। সাদিতের শরীরের সেই সুবাস আবারো কিনারার নাকে পৌঁছাতেই যেনো কিনারাকে উম্মাদ বানিয়ে দিলো।
কিছুক্ষন পরে কিনারা সাদিতের এক্ট্রাকটিভ গলার আওয়াজে ধ্যান ফিরল।

সাদিত বলল তুমি ঘাবড়ে যাবে না, তুমি এখন সাদিত চৌধুরীর স্ত্রী। তুমি এসব কিছুর যোগ্য,তুমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে তুমি কাকে বিয়ে করেছো।তোমার এখনো অনেক কিছু পাওয়ার বাকি।আমার যা আছে সবই তোমার।আস্তে আস্তে ব্যাপার গুলো সয়ে যাবে তোমার।কথা গুলো যেনো সাদিত কিনারার একদম কানের কাছে গিয়ে বলল।সাদিতের নরম ঠোঁট দুটো কিনারার কানকে স্পর্শ করলো।
কথা গুলো বলার সময় সাদিতের গরম নিশ্বাস কিনারার কাঁধের উপর এসে পড়লো।কিনারার কানে সাদিতের ঠোঁট দুটোর ছোঁয়া লাগতেই, কিনারার সারা শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ যেগে উঠলো।
সাদিত আর কিনারা একে অপরের খুব কাছাকাছি থাকার কারণে, সাদিতের শরীর থেকে এক সুন্দর সুবাস কিনারার নাকে এসে পৌঁছলো, গন্ধটা পেতেই কিনারা যেনো মাতোয়ারা হয়ে গেলো। কিনারা ভাবতে লাগলো সাদিত ঠিক কোন পারফিউম ইউস করে।গন্ধটা যেনো কিনারাকে এক্কে বারে পাগল করে দিচ্ছে।

সাদিত এতো কাছে আসায় কিনারা যেনো নিজেকে সামলাতে পারছিলো না।কিনারার হার্টবিট এতো জোরে ছুটছিলো যে কিনারা নিজেরই তার গতি ফিল করতে পারছিলো না।কিনারার নিজের বুকেরই ধরফরানি যেনো কিনারার কানে এসে পৌঁছে ছিলো।কিনারা এ অবস্থায় নিজেকে ঠিক কিভাবে সামলাবে তা বুঝে উঠতে পারছিলো না।কিনারা একটু ঘুরে গিয়ে সাদিতকে সরে যেতে বলবে।ঠিক এমন সময় একটা কান্ড ঘটলো।সাদিত কিনারার এতোটাই কাছে ছিলো।কিনারা সাদিতের দিকে ঘুরতেই কিনারার ঠোঁট গিয়ে পড়লো সাদিতের গালে।ব্যাপারটা যদিও অনিচ্ছাকৃত তবুও সাদিতের কাছে ব্যাপারটা বেশ ভালোই লাগলো।

কিনারা ঘাবড়ে গিয়ে এক লাফে খাটে গিয়ে বসলো।কিনারা খুব অবাক হয়ে গেলো ওর মুখ থেকে আর একটা কথাও বের হলো না।—–
যবে থেকে সাদিত কিনারাকে জানিয়েছে যে ওর বাবা মা আসবে। তখন থেকেই কিনারা কেমন জানি নার্ভাস ফিল করছে।মনের ভিতর কেমন জানি ধুকপুক করছে।সন্ধ্যার পর কিনারা ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ফল খাচ্ছে আর টিভি দেখছে।এমন সময়,কলিং বেলটা বেজে উঠলো।সঙ্গে সঙ্গে কিনারার মনে ধক করে উঠলো।ফলের প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে ঘুরে তাকালো,দেখলো একজন মধ্য বয়সের একটা লোক, বয়স খুব জোর বেশি হলে ৬০ হলেও দেখতে খুবই ইয়াং।খুব সুন্দর ভাবে সেজে রয়েছে ভদ্রলোকটি।টিকালো নাকের উপর একজুড়া সোনালি ফ্রেমের চশমা,কালো সুট সাদা শার্ট।ভিষন জেন্টাল।

তার পিছু পিছু একটা ভদ্র মহিলা এসে দাঁড়ালেন।উনার বয়স হবে ৫০ কিংবা তার একটু বেশি।বয়স বাদ দিয়ে দেখলে ভদ্র মহিলা খুবই সুন্দরী বলা যায়।এ বয়সে যেমন সুন্দর উনার মুখ, তেমন সুন্দর উনার ত্বক।কিনারা জীবনে অনেক মধ্য বয়ষ্ক মহিলা দেখেছে কিন্তু এনার মতো কাউকে দেখে নি।এ বয়সে উনার সৌন্দর্য আর ফিট খুব কম মানুষেরই হয়।
এনাদের পিছনে সাদিত এসে দাঁড়াতেই কিনারার আর বুঝতে বাকি রইলো না, এনারা সাদিতের বাবা মা।
উনারা কিনারার কাছে এসে দাঁড়াতেই কিনারা মিস্টার সাইফ চৌধুরী (সাদিতের বাবা) আর সাদিয়া চৌধুরীকে (সাদিতের মাকে) সালাম করলো।আসসালামু আলাইকুম আব্বু। আসসালামু আলাইকুম আম্মু।

উনারা কিনারাকে দেখে ভ্রুরু কুচকে সালামের উত্তর দিলেন ওয়ালাইকুম আসসালাম।
কিনারা উনাদের মুখের এক্সপ্রেসন দেখে ঘাবড়ে গেলো।কিনারা কেমন জানি আনইজি ফিল করতে শুরু করলো।
কিনারাকে এমন কাচুমাচু করতে দেখে মিস্টার সাইফ চৌধুরী আর সাদিয়া চৌধুরী হেসে উঠলেন।
সাদিয়া চৌধুরী বলে উঠলেন — বাহ আমার ছেলেটার চয়েস আছে বলতে হবে।এতোদিন বিয়ে না করে দেখছি ভালোয় করেছিস।এতো দিন এতো বিয়ে করার জন্য এত্তো তাড়া দিয়েছি,বলেছি আমাদের বিজনেসের জন্য তোর পাপার সাথে বাইরে থাকতে হয়।একা একা তুই, তোকে টেককেয়ার করার জন্য কাউকে প্রয়োজন বিয়ে কর।কিন্তু ছেলেটা যে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতো তা আমরা বুঝতে পারিনি।
ঠিক বলেছো সাদিয়া,সাদিত কিনারার ব্যাপারে যা বলেছিলো,ও তার থেকে বেশি মিষ্টি একটা মেয়ে। আমাদের কাজ পাগল ছেলে এতোদিনে একটা কাজের কাজ করেছে।

উনাদের কথা শুনে কিনারা কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো।
সাদিত বলল হয়েছে হয়েছে, এসে যখন পড়েছো কথা বলার অনেক টাইম পাবে,এখন উপরে যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
তারপর উনারা উপরে চলে গেলেন।

সবাই রাতে খেতে বসলো। খেতে খেতে সাদিতের বাবা সাদিতের উদ্দেশ্যে বলল——- সাদিত তোরা হঠাৎই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলি হুট করে। আমাদের তো জানাতে পারতি।আমরা কি মেনে নিতাম না। আমরা তোদের ধুমধামে বিয়ে দিতাম।আমাদের একমাত্র ছেলে তুই তোর বিয়ে নিয়ে আমাদের কত্ত স্বপ্ন।কত্ত লোকজনকে ইনভাইট করা হতো৷ বলতো।সেখানে কেউই জানেনা। আমার ছেলে বিয়ে করেছে।
সাদিত বলল সমস্যা নেই, সামনে বছর বিয়ের আর আমাদের বাচ্চার একসাথে ধুমধামে সেলিব্রেট করবা।
সাদিত কিনারার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বলল–বলে খাবার মুখে দিলো।
এদিকে সাদিতের এমন কথা শুনে কিনারা বিষম খেলো।আর মনে মনে বলল মিস্টার চৌধুরী কি একটুও ভদ্র ভাবে কথা বলতে পারেনা।মুখে যা আসে তাই বলে দেই।একবার বুঝতে ও পারেনা।এতে সবাই কি ভাববে।কিনারা বিষম খেয়ে কাশতে কাশতে সাদিতের দিকে একটু ভ্রুরু কুঁচকে তাকালো।

সাদিয়া চৌধুরী একবার কিনারার দিকে তাকিয়ে আবার সাদিতের দিকে তাকালো তাকিয়ে বলল– সাদিত একটু নরমাল ভাবে কথা বলা যায়না।এতো বড়ো হয়েছিস আর এটা জানিস না যে কখন কোথায় কি কথা বলতে হয় বুঝিস না নাকি।
সাদিত খেতে খেতে বলল — কেন আমি কিছু ভুল বললাম নাকি।বিয়ে যেহেতু করেছি আজ না হয় কাল বাচ্চা তো হবেই।এটাকে নরমাল ভাবে নিলেই তো হয়।
সাদিত কিনারার দিকে তাকাতেই দেখলো,কিনারা একটু রেগে গেছে।রাগে কিনারার গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। তাও ওকে খুব মিষ্টি দেখতে লাগছে।

সাদিত খেতে খেতে কিছুক্ষন একভাবে কিনারার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
মিসেস সাদিয়া চৌধুরী বিষয়টা ঠিক বুঝতে পেয়ে,কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলেন।
খাবার শেষে কিনারা রুমে এসে রাগে গজগজ করছে।আসলে সাদিতের বাবা মার সামনে বাচ্চার কথাটা বলাই
কিনারা ভিষণ লজ্জা পেয়েছে,সাদিত উনাদের সামনে কিনারাকে লজ্জায় ফেলায়, সাদিতের উপর রেগে যায় কিনারা।
সাদিত রুমে এসে দেখলো কিনারা পায়চারি করছে,আর একা-একা বকবক করছে। কিনারার রাগীলুক দেখে সাদিত কিনারার কাছে গিয়ে এক হাতে কোমড় জড়িয়ে এক টানে কাছে টেনে নিলো।সাদিত কিনারাকে কাছে টেনে নিতেই কিনারার খোপা খোলে সারা পিঠ চুলে ভরে গেলো।কিনারার লম্বা হালকা কার্লি চুল কোমড় ছড়িয়ে গেছে।যা কিনারাকে খুবই মায়াময়ী লাগছে।সাদিত কিনারার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে, ওর একটা হাতের আঙুল দিয়ে কিনারার মুখের উপর আসা চুল গুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলল কিনারা তুমি কি জানো রাগলে তোমায় ভিষণ মিষ্টি লাগে।

কিনারা নিজেও জানে ও যতই রেগে যাক না কেন ওকে দেখতে মিষ্টি লাগে ।ও যেনো ছোট্ট এক বিড়াল ছানার মতো, যতই রেগে থাকুক,লোকজন তাও ওকে আদর করবে।
সাদিত আবার বলে উঠলো — ইচ্ছে করে তোমার ওই লাল টুসটুসে গাল দুটো আপেলের মতো কামড়ে খেয়ে ফেলি।
এসব কথা শুনে কিনারার মুখখানা আরও লাল হয়ে গেলো।খুব লজ্জামিশ্রিত একটা স্বরে কিনারা নিজের মুখ লুকিয়ে উত্তর দিলো উফফ প্লিজ— আপনি এসব ঠোঁট কাঁটা কথা বলা প্লিজ বন্ধ করুন।
সাদিত যেভাবে কিনারাকে ধরে, এসব কথা বলছিলো তাতে কিনারা খুব লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিলো।
সাদিত আর একটা কথা না বলে, কিনারাকে ছেড়ে দিলো।

সাদিত গিয়ে শোয়ে পড়লো,কিছুক্ষন পর কিনারাও মুখ ঘুরিয়ে বেডসীট টা গায়ে জড়িয়ে শোয়ে পড়লো।কিনারা শোতেই সাদিত ওকে টেনে একদম নিজের কাছে এনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল বাব-বাহ্ বউটার দেখছি অনেক লজ্জা।
কিনারা কিছু না বলে সরে যেতে নিলেই, সাদিত কিনারার হাত ধরে আটকায়।।আটকিয়ে বলে উঠলো— চুপচাপ আমাার বুকে ঘুমাও।
কিনারা বলল — আপনি ছাড়ুন, আমার এভাবে ঘুম আসতে কমফোর্টেবল না।ঘুম আসবে না আমার।ছাড়ুন আমাকে।
হিসসস—চুপ একদম নড়বে না,,তুমি এখানেই ঘুমাবে আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে।না ঘুমালে অভ্যাস হবে কি করে।তো চুপচাপ ঘুমাও।

কিনারা এতোবার বলার পরও সাদিত ওকে ছাড়লো না।
কিছুক্ষন পর সাদিতের প্রতিটা নিশ্বাসের আওয়াজ কিনারার কানে ভাসছে। তার সাথে হালকা ড্রিম লাইটের আলোটা যেনো আরও স্বপ্নের মতো করে দিয়েছে।
কিনারা সাদিতের দিকে লক্ষ্য করে দেখলো সাদিতের হাতের যে ওজন,তা মনে হচ্ছে কিনারাকে পুরোপুরি পিষে ফেলবে।সাদিতের হাতের মাসলগুলোর কতো ওজন হবে তা কিনারা গননা ও করতে পারলো না।কিছুক্ষন একভাবে দেখে,কিনারার মনে হলো এভাবে কেউ ঘুমায়,আমাকে জড়িয়ে ধরার সময় উনার একবারও মনে হয়নি যে ওর হাতের ওজন কতখানি, কিনারা আদৌও সহ্য করতে পারবে কিনা।
কিনারার মনে হলো সাদিতকে এক ধাক্কায় ঠেলে সারিয়ে দিতে,বাট সাদিতের যা বডি ওর হাতটা সরানোর শক্তিটাও কিনারার নেই।
তাই কিনারা সাদিতকে ডাক দিলো মিস্টার চৌধুরী — ঘুমিয়ে পড়েছেন।কিনারা আবার ডেকে উঠলো।
বাট সাদিতের কোনো হেলদোল নেই।

কিনারা সাদিতের মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ মেলে দেখতে থাকলো।কিনারা দেখলে সাদিতের এই শরীরের কাছে অন্যান্য ছেলের জিম করা বডিও হার মানবে।তারপর সাদিতের মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বুঝলো সত্যিই সাদিত হয়তো ঘুমিয়ে গেছেন।উনার কোনো রকম হেলদোল নেই। দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন পর এমন শান্তিতে ঘুমিয়ে রয়েছে।
কিনারা কিছুক্ষন ওভাবেই থেকে সাদিতের বুকেই ঘুমিয়ে গেলো।
পরদিন সাদিত রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো।কিনারা সাদিতকে দেখে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।সাদিত একটা দামী সুট পড়ে নিচে নামলো।ওই সুট টা সাদিতকে খুবই অ্যাট্রাক্টিভ লাগছিলো।ওর থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছিলো না।ওর কাঁধ, কোমড়,পা সবকিছু যেনো একদম পারফেক্ট লাগছিলো।ঠিক যেরকম মডেলদের দেখতে লাগে। সাদিতের সুন্দর মুখটার দিকে তাকাতেই কিনারার৷ আবার হার্টবিট বেড়ে গেলো।

ঠিক সেই মুহূর্তে ড্রাইভার এসে বলল,স্যার গাড়ি রেডি আছে।সাদিত সুটের বোতাম লাগাতে লাগাতে কিনারার কাছে এসে বলল— চল বেরোনো যাক, তোমাকে আমি হসপিটালে ছেড়ে দিচ্ছি।
কিনারা মিসেস সাদিয়া চৌধুরীকে বলে বেরিয়ে পড়লো। আজ কিনারা হসপিটাল থেকে কায়ানের সাথে ওদের বাসায় যাবে,আজ থাকবে ওখানে।
সাদিত ছাড়া রাস্তা চোখ বন্ধ করে রইলো।কিনারা বুঝতে পারলো না সাদিত কেন চোখ বন্ধ করে রয়েছে।কাল রাতে কি ঘুমাতে পারেনি নাকি অন্য কোনো কারণ আছে।
সাদিতকে ওভাবে চোখ বন্ধ করতে দেখে, কিনারা বার বার সাদিতের দিকে তাকিয়ে দেখছিলো।
গাড়িটা হসপিটালের সামনে এসে দাঁড়ালো।গাড়ি থামতেই কিনারা সাদিতকে বাই বলার জন্য তাকালো— দেখলো সাদিত আস্তে আস্তে ওর চোখটা খুলছে।

সাদিত চোখটা খুলে খুব আস্তে করে বলল — আমরা পৌঁছে গেছি।
কিনারা মাথা নেড়ে বলল হ্যাঁ।পৌঁছে গেছি।আমি তাহলে আসছি।এক্কেবারে কাল দেখা হবে।কথাটা বলে কিনারা গাড়ির দরজাটা খুলতে যাবে।ঠিক সেই সময় সাদিত গম্ভীরভাবে বলল— আমি তোমাকে যেতে বলেছি।
কিনারা সাদিতের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো। কি বলবে বুঝতে না পেয়ে, খুব আস্তে করে বলল তাহলে—
সাদিত ওর হাত বাড়িয়ে বলল– এদিকে এসো।

কিনারা অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলো।কিন্তু তাও কিনারা নিজের অজান্তেই সাদিতের কাছে নিজের শরীরটা এগিয়ে দিলো।
কিনারা একটু এগোতেই সাদিত কিনারার হাতটা ধরে টেনে ওকে জড়িয়ে ধরলো।
কিনারা কিছু বুঝার আগেই সাদিতের ঠোঁট কিনারার ঠোঁটের উপর এসে পড়লো। কিনারার দম বন্ধ হওয়ার ঠিক আগের মুহুর্তে সাদিত ওকে ছেড়ে দিলো।সাদিত কিনারার ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে বলল ইট ওয়াজ এ গুড বাই কিস।
তারপর সাদিত আবার বলল একটু পর ড্রাইভার পাঠিয়ে দিচ্ছি, তোমাদের বাসায় নামিয়ে দিবে।
কিনারা আস্তে করে বলল ওকে তারপর কিনারা কিছুটা লজ্জা আর অস্বস্তি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।
কিনারাকে চলে যেতে দেখে সাদিত অন্য মনস্ক হয়ে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।
ঠিক সেই মুহূর্তে ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করলো,স্যার আমরা কি অফিসের দিকে যাবো।
সাদিত গম্ভীর হয়ে বলল হ্যাঁ চলো।

কিনারা কায়ানকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো৷সাদিত কায়ানের বাসার জন্য এক্সট্রা নার্স আর ডাক্তার ঠিক করে রেখেছে।কায়ান পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া অবদি সেবা করবেন এনারা।।কায়ানকে রুমে শোয়ে দেওয়া হলো।
কিছুক্ষন পর কায়ান বলে উঠলো আচ্ছা আপু—একটা কথা বলার ছিলো। সাদিত ভাইয়ার সাথে তোমার কতদিনের সম্পর্ক।তোমরা কি আগে থেকেই পরিচিত আর উনার সাথে তোমার আলাপই বা হলো কি করে। কায়ানের মনের ভিতর যে পরিমাণ কৌতূহল জেগে উঠেছে।কারণ কায়ান তার জামাইবাবুর ব্যাপারে সব জানতে চাই।
কিনারা ওর ভাইয়ের জন্য কিছু ফল কেটে দিচ্ছিলো।এসব শুনে কিনারা কায়ানকে ফলগুলো দেওয়ার আগে একটু ইতস্ততবোধ করে সব বলল কায়ানকে।

কায়ান যা শুনলো– ও ভাবতে পারেনি তার আপু তাকে সুস্থ করার জন্য নিজের কথা না ভেবে এরকম একটা ডিসিশন নিয়ে নিবে।সাদিতের মতো বড়ো মাপের কাউকে বিয়ে করে ফেলবে।বড় বড় মানুষের আবার বড় বড় ব্যাপার লুকিয়ে থাকে।যা সব সময় প্রকাশ্যে আসে না।তাই কায়ানের নিজের বোনের জন্য চিন্তাটা আরও বেড়ে গেলো। কায়ান সুস্থ হয়ে উঠলেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।

কিনারা কায়ানকে ভাবতে দেখে বলল– তোকে এসব ব্যাপারে একদম চিন্তা করতে হবে না। আমার কাছে যেটা সব থেকে বেশি চিন্তার ব্যাপার সেটা হলো তোর সুস্থতা। তোকে কিভাবে তাড়াতাড়ি সুস্থ করা যাবে এটা নিয়েই আমি গুটা দিনরাত চিন্তা করছি।
কায়ান ওর আপুকে বলার মতো আর৷ কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না। ওর আপু ওর জন্য এতো বড় সেক্রিফাইস করলো।
রাতে কিনারা কায়ানকে খাইয়ে,গল্প করতে করতে প্রায় অনেক রাতই হলো।কারণ এতোদিন পর ভাইকে পেয়েছে ওকে ছাড়তেই ইচ্ছে করলো না। তারপর নিজে খেয়ে,সব কিছু গুছিয়ে রুমে গেলো।তখন প্রায় রাত বারোটা বাজতে চলল।কিনারা ফোনটা হাতে নিলো,দেখলো সাদিতের কোনো ফোন বা মেসেজ নেই,আসার পর একটা ফোন করে জিজ্ঞাসাও করার সময় পেলো না,কিনারা একটা শ্বাস ফেলে, ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হলো।শোয়ার জন্য খাটের ওখানে গিয়েও থেমে গেলো।দেখলো বারান্দার দরজাটা খোলাই আছে।কিনারা দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।

অনেক রাত হয়ে যাওয়াই বারান্দার লাইট গুলো তেমন ভাবে জ্বলছিলো না।একটু অন্ধকার ছিলো,কিন্তু কিনারা বারান্দায় কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।দেখলো লোকটি কালো শার্ট পড়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।ওই অল্প আলোতে তার মায়াবী চোখ গুলো থেকে যেনো রশ্মি বেরিয়ে আসছিলো।কম আলোতেও তার মুখের সমস্ত স্ট্রাকচার বুঝা যাচ্ছিলো।সে এমনভাবে কিনারার দিকে তাকিয়ে ছিলো যে যা দেখে কিনারার সারা শরীর কেঁপে উঠলো।তাছাড়া অন্ধকারে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে যে কেউই ভয়ে কেঁপে উঠবে।
কিনারা সাদিতকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।কিনারা তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। মি-মি-মিস্টার চৌধুরী!!!!আ-আআ-আপনি।
আপনি এখানে কি করছেন।

সাদিত কিনারাকে এভাবে অবাক হতে দেখে, সাদিত একটু হেসে কিনারার দিকে এগিয়ে গেলো। কিনারাকে কোমড় থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,তুমি আমাকে দেখে খুশি হওনি।
কিনারা চুপ করে রইলো।সাদিতকে দেখে কিনারার৷ হার্টবিট ঘোড়ার মতো ছুটতে লাগলো। কিনারার চোখের পাতা পড়ছেনা।কিনারা বুঝতে পারছে না ও কি ঠিক দেখছে।নাকি স্বপ্ন।
আপনি এখানে,এভাবে কেন এসেছেন।মিস্টার চৌধুরী।
সাদিত কিনারাকে জড়িয়ে ধরে আরো কাছে টেনে নিলো,একদম সাদিতের বুকের কাছে,যেনো মনে হলো সাদিত কিনারার শরীরটাকে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে দিতে চাইছে।
সাদিত কিনারাকে জড়িয়ে ধরে বলল তোমাকে খুব মিস করছিলাম।তারপর কিনারার শরীরের মিষ্টি সুবাসটা পেতেই সাদিত কিনারার কাঁধে শ্বাস ফেলে,কিনারার কানের কাছে নিজের ঠোঁট দুটো এগিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করলো— কিনারা তুমি কি আমাকে একবারের জন্য ও মিস করেছো।

সেই মুহূর্তে কিনারা অনুভব করতে পারলো,সাদিত ওকে ঠিক কতটা কাছে টেনে নিয়ে শক্তভাবে নিজের শীতল বুকের সাথে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।কিনারার ছোঁয়া পেয়ে সাদিতের সারা শরীরে হঠাৎই একটা উষ্ণতা নেমে এলো।সাদিত কিছুটা গম্ভীরভাবে জিজ্ঞাসা করলো — কিনারা তুমি কি আমাকে মিস করেছো।
কিনারা কি বলবে ভেবে পেলো না।কিনারা নিজেও জানেনা সাদিতকে কি মিস করেছে কিনা।
তাই কিনারা বলল,আমি আপনাকে মিস কেন করতে যাবো, বলে সাদিতের কাছ থেকে সরে আসতে চাইলো।
কিনারা প্লিজ ডোন্ট মুভ।সাদিত কথাটা বলা মাত্রই কিনারাকে আরো কিছুটা কাছে টেনে নিয়ে কিনারার কাঁধের উপর নিজের ঠোঁটটাকে আস্তে ছোঁয়ে দিলো। আমি আজ ভিষন টায়ার্ড।প্লিজ আর একটা মিনিট। তারপরই ছেড়ে দিবো।
কিনারা সাদিতের স্বরে একটা ক্লান্তি ভাব অনুভব করতেই, কিনারা কোনো হ্যাজিটেশন ছাড়াই, নিজের শরীরটাকে সাদিতের শরীরের সাথে আরো নম্রভাবে মিশিয়ে দিলো।কিনারা বুঝতে পারলো এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মিস্টার চৌধুরী হয়তো ছোঁয়াটাকে ভিষণভাবে অনুভব করছে।

প্রায় মিনিট পাঁচেক পর—–
কিনারা সাদিতকে বলল আপনি রাতে ডিনার করেছেন।
সাদিত কিনারাকে ছেড়ে মাথা নেড়ে বলল না,এখনো করিনি।
কিনারা বলল ওকে।আপনি বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
আমি আসছি।বলে কিনারা সাদিতকে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
সাদিত রুমটাকে একবার চোখ বুলিয়ে চারপাশটা দেখে নিলো।

বাড়িটা দুতলা হলেও বেশ অনেক পুরোনো। কিনারার রুমটা বেশি বড়ো না।একপাশে সিঙ্গেল একটা খাট, সাথে পড়ার টেবিল,আর চেয়ার।অন্য পাশে একটা পুরোনো মডেলের আলমারি। একটা বুকসেল্ফ বইয়ে ভরা।আর একটা বারান্দা। তার পাশের দেওয়া একটা বড়ো ফ্রেমের ছবি।ছবিতে একজন ভদ্রলোক আর মহিলা—ছোট্ট ছেলেটি লোকটির কোলে আর ছোট্ট মেয়ের কাঁধে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে মহিলাটি।সাদিতের বুঝতে অসুবিধা হলো না। এটা কিনাটার ফ্যামিলি ফটো।কারণ কিনারার ছোট্ট কালের মুখের সাথে এখনো অনেকটা মিল আছে। তারপর সাদিত ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো কিনারা একহাতে খাবারের প্লেট আর অন্য হাতে এক গ্লাস পানি এনে টেবিলের উপর রাখলো।
সাদিত কে দেখে কিনারা বলল—আপনার জন্য খাবার এনেছিলাম।যদিও আপনি এসব খাবার খাননা। তবুও যদি একটু কষ্ট করে খেয়ে দেখতেন। ভালোই হয়েছে রান্না,দাদি রান্না করেছে।জানেন দাদির হাতের রান্না, মাছের ঝুল,ডাল সাথে আলু ভাজা।হেব্বি খেতে।
সাদিত কিনারার কাছে গিয়ে বসলো।তারপর খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে কিছু খাবার মেখে কিনারার মুখের সামনে এক লুকমা ধরলো।ধরে বলল হা করো।

কিনারা বলল– আমি খেয়েছি আপনি খেয়ে নিন।
সাদিত বলল — খেয়েছো ভালো করেছো।এখন দুই লুকমা খাবার খেলে মরে যাবে না।বলে কিনারাকে কিছু বলতে না দিয়ে ওর মুখে খাবার পুরে দিলো।
কিনারা খাবার চিবতে চিবতে, হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের পানিটা মুছলো।
সাদিত খাবারের প্লেটটা রেখে — কিনারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠলো — একি তুমি কাঁদছো কেন।
কিনারা হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে উঠলো — জানেন মিস্টার চৌধুরী — ছোট বেলায় মা ঠিক এইভাবেই খাইয়ে দিতো।আমি খেতে চাইতাম না, মা ও ঠিক এভাবে জোর করে মুখে খাবার দিয়ে দিতো।আজ মাকে খুব মনে পড়ছে।

সাদিত কিনারার চোখের পানি অন্য হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বলল—এখন থেকে প্রায় আমি তোমাকে এভাবে খাইয়ে দিবো কেমন।
এভাবে গল্প করতে করতে সাদিতের খাওয়া৷ শেষ হবার পর সাদিত গিয়ে কিনারার বিছানায় শোয়ে পড়ে।।
কিনারা খাটের কাছে গিয়ে বলল আপনি কি৷ আজ বাসায় ফিরে যাবেন না।
সাদিত উঠে এসে কিনারাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল —৷ বউ আমি আজকে রাতে কোথাও যাচ্ছিনা।আমি আজ এখানেই থাকবো। ঠিক আছে।

আপনি এখানে থাকবেন।বাট এমন খাটে আপনার থাকা অভ্যাস নেই। এতো ছোট খাটে আপনার থাকতে কষ্ট হবে।
সাদিত সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো —হ্যাঁ,,,,,আমি থাকতে পারবো।কারণ আমি থাকতে চাই।আর তুমি যদি ওখানে থাকতে পারো আমি পারবো না কেন।
সাদিতের কথাটা শুনেই কিনারার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। সাদিতের প্রতিটা নিশ্বাস-প্রশ্বাস কিনারার ঘাড়ের ওপর পড়াই,কিনারা কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো।
সাদিত কিনারাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে বলল—ভয় পেয়ো না বউ, আমি তোমার সাথে কিচ্ছু করবো না। বলে কিনারার মাথায় চুমু দিয়ে ছেড়ে দিলো।

কিনারা সাদিতকে খাটে ঘুমাতে বলে কারণ অতো ছোট সিঙ্গেল খাটে দুজন ঘুমানো অসম্ভব, কিনারা নিজে গিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লো।কিনারা ফ্লোরে শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই কিনারা অনুভব করলো ও যেনো শূন্যে ভাসছে।চোখ খুলতেই দেখলো,ও সাদিতের কোলে, পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেয়ে সাদিতের গলা জড়িয়ে ধরলো।ততক্ষণে সাদিত ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে।
বউ তোমার কি মনে হয় তুমি ফ্লোরে গিয়ে ঘুমালে, আমি বিছানায় খুব শান্তিতে ঘুমাতে পারবো।একটা কাজ করো তুমি বিছানায় ঘুমাও আমি ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়বো।অসুবিধা নেই।

কিনারা একবার ফ্লোর দিকে তাকালো,তারপর ভাবলো,মিস্টার চৌধুরীর তো ফ্লোরের শক্ত বিছানার ঘুমানোর অভ্যাস নেই। উনি ঘুমাতেও পারবেন না।তারপর কিনারা সাদিতের দিকে তাকালো–
সাদিত এমনভাবে কিনারার দিকে ঝুঁকে ছিলো৷ যা দেখে কিনারা মুখটা কাচুমাচু করতে শুরু করে।মনে মনে ভাবে মিস্টার চৌধুরী কি করতে চাইছে,উনার সাথে এভাবে এই খাটে ঘুমাতে হবে।
কিনারার মুখ দেখে সাদিত বলে উঠলো —-

বউ প্লিজ বউ তোমার কাছে একটু থাকতে দাও,ভয় পেয়ো না, আমি তোমার সাথে কিচ্ছু করবো না।এসব বলতে বলতে কিনারার কানের কাছে যতই এগিয়ে যাচ্ছিলো,ততই সাদিতের গলা অ্যাক্ট্রাকটিভ লাগছিলো,কিনারা কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গেলো।আর সাদিতকে কিচ্ছু বলতে পেলো না।কিন্তু লজ্জায় ওর মুখখানা হঠাৎই গোলাপি হয়ে উঠলো।কিনারা ভাবলো উনি একটু ঘুমাতেই তো চেয়েছেন,এর থেকে বেশি কিছু না।এই ভেবে নিজেকে কিছুটা শান্ত করলো।

সাদিত কিনারার পাশে শুয়ে, কিনারার কোমড়টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,এক ঝটকায় নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।সেই অবস্থায় কিনারার মুখটা সাদিতের মুখের সামনে থাকার কারণে– কিনারা লজ্জা পেয়ে নিজের নিশ্বাস আর ফেলতে না পেয়ে,মাথা টা নিচু করে ফেলল।
সাদিত কিনারার মুখের দিকে তাকিয়ে দুটো আঙুল থুতনির কাছে ধরে, কিনারার মিষ্টি লাজুক মুখখানা ওর মুখের সামনে তুলে ধরলো।কিনারার চোখের দিকে তাকিয়ে একটা চার্মিং হেসে সাদিত বলল—কিনারা আমি তোমাকে যদি একটু জড়িয়ে ধরে ঘুমায়, আমার ঘুমটা ভালো হবে।এই দুইরাতে আমি যখন আমার বাড়িতে,, তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলাম, তুমি আমার বুকের সাথে খুব পারফেক্টলি ফিট হয়ে গিয়েছিলে।তোমার ছোট্ট কমল পুতুলের মতো শরীরটা ছাড়তে আমার একটুও ইচ্ছে করছিলো না।আজকের রাতটাও প্লিজ আমাকে সেভাবেই ঘুমাতে দাও।বলে ঘোর লাগা চোখে কিনারার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে গেলো।

কিানারা সাদিতের ওই কালো রঙের তীক্ষ্ণ চোখটার দিকে তাকাতেই কিনারা প্রচন্ড নার্ভাস ফিল হলো।ওই চোখের গভীরতা বুঝতে গিয়ে কিনারার ঠোঁট আচমকাই কেঁপে কেঁপে উঠলো।
ততক্ষণে সাদিতের ঠোঁট কিনারার ঠোঁটকে আঁকড়ে ধরে ছিলো।কিনারার শরীর থেকে যে মিষ্টি সুবাসটা আসছিলো সেটা সাদিতকে মাতোয়ারা করতে যথেষ্ট ছিলো। সাদিত কিনারার ঠোঁট দুটো এমন ভাবে আঁকড়ে ধরে কিস করছিলো যে,কিনারার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।কিনারার মনে হলো আর একমিনিট এভাবে থাকলে ও মারা যাবে, তাই কিনারার আর থাকতে না পেয়ে সাদিতকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলো।

অবশেষে যেনো কিনারা প্রাণ ফিরে পেলো।কিনারার চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছিলো।আর ভয়ে কাঁপছে।কিনারা সাদিতের দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো
সাদিত কিনারার দিকে তখনো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,
তখন কিনারার সাদিতের ওই দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছিলো,কোনো হিংস্র পশুর সামনে কোনো নিরিহ প্রাণী শিকার হিসেবে ধরা পড়েছে।আর ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।
কিনারা উঠে বসে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল—-এটা কি হলো।
সাদিত স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠলো কই কি হলো।

কিনারা রেগে বলল কেন আপনি জানেন না,কি করলেন
সাদিত ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠলো — না কি হয়েছে বউ
আপনি আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন,,,আপনি বললেন কিছুই করবেন না। আর একটু হলেই তো আমি দম আটকে মরে যেতাম।
সাদিত আবার বলে উঠলো — কেন কি করেছি
দেখুন একদম ঢং করবেন না,মনে হচ্ছে উনি কিছুই জানেন না।
সাদিত হালকা হেসে বলল আমি কি করলাম, তুমি রাগ করেছো বউ।
আপনি তো একটা যা তা, আপনি আমাকে এভাবে কিক………………কিনারা লজ্জায় মুখ চেপে ধরলো।বলবো না।
কি হলো বউ বলো—-আরে না বললে বুঝবো কি করে।
বলে সাদিত হাসতে হাসতে শুয়ে পড়লো।

এই এই আপনি একদম হাসবেন না।আপনার হাসি দেখে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে।কিনারা সাদিতের দিকে ঝুঁকে গিয়ে বলল—-
সাদিত কিনারার হাতটা ধরে এক টানে বুকের উপর ফেলে দিয়ে বলল — বউটা আমার শুধু সাপের মতো ফুসফুস করে।একটুও তো আদর করেনা।আমি করলেও সেটার নেগেটিভ মানে বের করে।আমি কেন তোমাকে মারতে যাবো।
আপনি তো আমার দম বন্ধ করতে যাচ্ছিলেন।তাই তো।আমিইই—–
সাদিত কিনারার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে বলল–হিসসসসস চুপ।তারপর সাদিত কিনারার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল– সরি বউ একটু বেশিই ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।যার ফলে নিজের কন্টোল হারিয়ে ফেলেছিলাম।সরি এখন ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে, বলে কিনারার মাথায় একটা চুমু খেলো।
এতোক্ষনে কিনারা একটু শান্ত হলো।তারপর আস্তে আস্তে সাদিতের বুকে ঘুমিয়ে পড়লো।

পরের দিন কিনারার ঘুম ভাঙতেই দেখলো ও বালিশে ঘুমিয়ে ছিলো আর গায়ের উপর বেডসিট টা দেওয়া।ঘুম ভাঙতেই সাদিতকে দেখতে না পেয়ে হঠাৎই কিনারার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।উনি কি চলে গেছেন।আমাকে তো একবার ডেকে বলেও যেতে পারতেন।তারপর কিনারা ভাবলো,মিস্টার চৌধুরী আমাকে বলবে কেন,আমাকে বলার প্রয়োজনই বা কি উনার,উনি তো শুধু থাকার জন্যই আমাকে বিয়ে করেছেন।আর আমি এতো কিছু ভাবছিই বা কেন আমার যতটুকু স্ত্রীর দায়িত্ব সেটাই সেটাই না হয় পালন করবো।অন্য দিকে কিনারা এটাও ভাবলো থাকলো হয়তো সাদিতের সাথে ওর বিয়েটা বেশিদিন স্থায়ী হবেনা।মিস্টার চৌধুরী হয়তো আমাকে পেয়ে এখন খুবই উৎসাহিত পরবর্তী হয়তো আমাকে একঘেয়েমি ও লাগতে পারে।সে কারণ বসতো আমাদের ডিভোর্সও হতে পারে।কি জানি বলা যায়না,বড়ো লোকদের বিশ্বাস করতে নেই, উনারা তো শুধু শরীরটাকেই চিনে।
তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাথরুমে চলে গেলো।
সারাদিন ওদের বাড়ি থাকার পর বিকালে কিনারা চৌধুরী ম্যানশন চলে গেলো।

কিনারা রুমে বেডে বসে ওর জামা-কাপড় গুলো ভাঁজ করছিলো—-
এমন সময় মিসেস সাদিয়া চৌধুরী দরজাতে নক করলেন।
কিনারা মা আসবো রে—–
আরে আম্মু এসো এসো—-তোমার বাড়ি তোমার রুম আর তুমি রুমে ঢুকতে আমার কাছে পারমিশন চাইছো।
মিসেস চৌধুরী হাসতে হাসতে রুমে এসে বেডে বসতে বসতে বলল —- আরে সে যাই হোক— ছেলে মেয়ে বড়ো হলে রুমে লক করেই আসতে হয়।তোদেরও তো একটা পার্সোনালিটি আছে।
কিনারা বেডের উপর ভাঁজ করা কাপড় গুলো আলমারিতে রাখতে রাখতে বলে— হয়েছে,সে যাই হোক তোমার একলিস্ট আমি রুমে থাকলে পারমিশন নিতে হবে না।

মিসেস চৌধুরী কিনারাকে বলল ঠিক আছে, এখন এদিকে আয় দেখ তোর জন্য কি এনেছি।
কিনারা বেডে বসতে বসতে বলল — কি এনেছো আম্মু।
কিনারা দেখলো মিসেস চৌধুরী হাতে একটা ডার্ক পিংক কালালের উপর গোল্ডের জরি সুতার আর পুঁতির চোখ ধাঁধানো নকশা করা কাজ। আর তার সাথে একটা বক্স।
মিসেস চৌধুরী ওগুলো কিনারার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল— কাল সন্ধ্যায় একটা পার্টির অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছি।সেখানে তোর পাপার কিছু ফ্রেন্ড সার্কেল আর আমাদের কাছের কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনদের বলা হয়েছে।
আসলে তোদের বিয়ের কথা এখনো তো কেউ ঠিক ওইভাবে জানে না।এদের না জানালে না হয়,,,তাই তোর পাপা ঠিক করেছেন ছোট খাটো একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা জানাতে।
কিনারা শাড়ি আর বক্সের দিকে তাকিয়ে বলল– ঠিক আছে তা বুঝলাম কিন্ত এই বক্স ভিতর কি আছে আম্মু।
মিসেস চৌধুরী বললেন, এখানে কাল পার্টিতে পড়ার শাড়ির সাথে কিছু জুয়েলারি।আমার পছন্দ অনুযায়ী সব কেনা।আশা করি তোরও পছন্দ হবে।

এভাবে কিছুক্ষন গল্প করে মিসেস চৌধুরী চলে গেলেন।
পরের দিন বাড়িটাকে সুন্দর করে আর্টিফিসাল ফুল,এলইডি লাইটিং করে সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হলো ।সন্ধ্যে হতেই একে একে সব মেহমানরা পার্টিতে আসতে শুরু করলো।পুরো বাড়ি আলোয় ঝলমল করছে।
সাদিত আজ কালো শার্ট,কালো পেন্ট আর কালো সুট আর হাতে ব্র্যান্ডের ব্লাক ওয়াচ পড়েছে।ফর্সা সুঠাম শরীরে এই কালো রঙটাতে সাদিতকে একদম হিরোর কোনো অংশে কম লাগছে না,এরকম হ্যান্ডসাম লুক দেখে যেকোনো মেয়েই ফিদা হতে বাধ্য। সাদিত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটাকে সেটিং স্প্রে দিয়ে সেট করছিলো,এমন সময় বাথরুমের দরজা খুলে কিনারা বের হলো।
সাদিত দেখলো কিনারা শাড়িটা কোনো মতো শরীরে পেচিয়ে বের হয়েছে। সাদিত কিনারার সামনে দাঁড়িয়ে বলল কি হলো তুমি এখনো রেডি হওনি।সেই কখন থেকে ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকে ছিলে কি করছিলে,এদিকে বাড়িতে সব মেহমান আসা শুরু করেছে।মম এসেছিলো একটু আগে।

কিনারা তোতলাতে তোতলাতে বলল আসলে
সাদিত কিনারা কি কি বলবে তা বুঝতে পেয়ে দুষ্ট হেসে বলল আসলে কি বউ—–
কিনারা বলল মানে হলো—
সাদিত এবার বলল— কি কখন থেকে তোতলাচ্ছো কি বলতে চাও বলো তো।
আমি আসলে শাড়ি পড়তে পারি না,যদিও এতোক্ষন ইউটিউব এর টিউটোরিয়াল ভিডিও দেখে ট্রাই করছিলাম তবুও—-চোখ বন্ধ করে বলে ফেলল কিনারা।
কিনারা চোখ বন্ধ করেই আছে,কিন্তু সাদিত কিছুই বলছে না জন্য কিনারা আস্তে আস্তে চোখটা খুলে তাকালো, দেখে সাদিত ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মুখের কোনো ভাবমূর্তি নেই। রাগ করেছেন কিনা তাও বুঝতে পারছে না কিনারা।

সাদিত হাসতে হাসতে বলল এই কথা বলতে এতো সংকোচ তোমার —-সাদিতের হাসি যেনো থামছেই না।কোনো রকম হাসি থামিয়ে সাদিত বলে উঠলো — শুনো কিনারা আমাদের সম্পর্কটা নতুন।তোমার ব্যাপারে অনেক কিছুই আমি জানিনা।তুমিও আমার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানোনা।একজন মানুষ একটা জিনিস নাই পারতে পারে।আমাদের সম্পর্ক গাঢ় করতে আমাদের দুজন দুজনকে সময় দিতে হবে।একজন অন্য জনকে সাহায্য করতে হবে।তুমি কি পারো না পারো,তুমি কি পছন্দ-অপছন্দ করো তা আামকে জানতে হবে।তোমার ক্ষেত্রেও সেইম।তার জন্য আমাদের একে অন্যের প্রবলেমটা নির্দ্বিধায় শেয়ার করতে হবে। না হলে বুঝবো কি করে।আর আমি কাউকে পাঠিয়ে দিচ্ছি এসে তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে যাবে।

কিনারা হা করে এক দৃষ্টিতে সাদিতের দিকে তাকিয়ে আছে—-ইসসস কত সুন্দর করে উনি কথা বলতে পারেন।কত সুন্দর করে আমাকে বুঝিয়ে বললেন।উনার কথা বলার ধরণ দেখে যে কেউই হুটহাট করে প্রেমে পড়ে যাবে।
তো ওয়েট আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। বলে সাদিত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
তারপর একটা মহিলা এসে কিনারাকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিলো।তারপর কিনারা হালকা মেকআপ করে,মিসেস চৌধুরীর দেওয়া গহনা গুলো পড়েনিলো।

এমন সময় সাদিত দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করতে করতে বলল— কিনারা তোমার হয়েছে।
কিনারা মুখ ঘুরিয়ে সাদিতের দিকে তাকিয়ে বলল–হ্যাঁ হয়েছে আর একমিনিট।
আর সাদিত বলেই হা করে তাকিয়ে রইলো—
কিনারা কাল মিসেস চৌধুরীর দেওয়া শাড়িটা পড়েছে,মুখে হালকা মেকআপ লুক আর ঠোঁটে শাড়ির সাথে ম্যাচিং করা ডার্ক পিংক কালারের লিপস্টিক।।চুলটা ছেড়ে রেখেছে,তা কোমড় ছড়িয়ে আছে ।তাতেই কিনারাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
কিনারা আয়নার সামনে থেকে উঠে এসে সাদিতের কাছে এসে বলল চলুন।বলে চলে নিতে ধরলেই
সাদিত পিছন থেকে কিনারাকে খুব রোমান্টিক মুডে ডাকলো,কিনারা লিসেন টু মি—-

কিনারা এগিয়ে গিয়েও ফিরে এসে শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতে সাদিতের সামনে দাঁড়িয়ে বলল—৷ জি বলুন।
কিনারা দেখছে শাড়ির কুঁচি আর সাদিত দেখছে কিনারাকে।সাদিত কিছু বলছে না দেখে কিনারা মুখ তুলে অধৈর্য হয়ে বলল — কি হলো ডেকে কিছু বলছেন না যে।তাড়াতাড়ি বলুন নিচে সবাই অপেক্ষা করছে।
সাদিত কিনারার হাতটা টেনে কাছে নিয়ে আসলো,ওরা দুজন দুজনের একদম কাছাকাছি,একজনের নিশ্বাস অন্য জনের উপর এসে পড়ছে।সাদিত খুব রোমান্টিক মুডে আছে।কিনারা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো,,ছটফট করতে শুরু করলো,কি করছেন কি ছাড়ুন আর নিচে চলুন।

সাদিত বলল হ্যাঁ যাবো তো তার আগে আমার কথা শুনো।তারপর বাকি কাজ।তারপর সাদিত কিনারার হাতটা ধরে ড্রেসিংটেবিলের আায়নার সামনে এনে দাঁড় করালো।তারপর ডোয়ার থেকে কাজল টা বের করে কিনারার সামনে ধরলো।তারপর ইশারায় কিনারাকে পড়ে নিতে বলল—
কিনারা বুঝতে পারলো না কিনারা জানে ও কাজল পড়েছে,সাদিত আবার বলতে কিনারা আবার বুঝলো না।
এবার সাদিত নিজে কিনারাকে কাজলটা পড়িয়ে দিলো।
বলল তুমি কাজল পড়েছো ঠিক আছে কিন্তু কাজলটা গাঢ় করে পড়লে তোমাকে আরো বেশি মায়াময়ী লাগবে।বলে কিনারার ঠোঁটের উপর আস্তে করে একটা চুমু খেলো।

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ১+২+৩+৪+৫

কিনারা ভাবতে পারেনি সাদিত এই মুহূর্তে এমন কিছু করতে পারে।তাই কিনারা হা হয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে সাদিতের দিকে তাকালো।
কিনারা সাদিতের ওই গভীর তীক্ষ্ণ চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো।সাদিত কিনারাকে দেখতে ব্যস্ত আর কিনারা সাদিতকে।
কিনারা দেখলো সাদিতকে এই কালো রঙের পোষাকে বেশ মানিয়েছে।কিনারা তাকিয়ে তাকিয়ে সাদিতের মুখের বর্ণনা করছে, সাদিতদের এমন ফর্সা মুখ সরু টিকালো নাক, গোলাপি ঠোঁট সব মিলিয়ে একদম চকলেট বয় লাগছে।কিনারার মনে ইচ্ছে হলো সাদিতের ঠোঁটটা চকলেট ভেবে টুপ করে খেয়ে নিতে।কিন্তু পরক্ষনেই কিনারা ভাবলো— ছি ছি কি সব ভাবছি।তারপর হঠাৎই কিনারার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো।নিতান্তই ছেলে মানুষির বুদ্ধি —

সাদিতের দিকে তাকিয়ে বলল– জানেন মিস্টার চৌধুরী আমরা যখন গ্রামে থাকতাম।তখন কেউ সুন্দর করে সাজলে তার কপালে টিপ পড়িয়ে দেওয়া হতো, যাতে কারোর নজর না লাগে।অবশ্য আপনাকে প্রত্যেকদিনই সুন্দর লাগে,কিন্তু আজ আপনি একটু বেশি সুন্দর করে সেজেছেন যার জন্য অন্য দিনের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে।।আজ তো অনেক লোক আসবে যদি আপনার নজর লেগে যায়।তখন তো আপনার শরীর খারাপ করবে।তার চেয়ে আসুন আপনাকে একটা নজর টিপ দিয়ে দেয়।
এই বলে কিনারা সাদিতের কানের কাছে চুলের নিচে কাজল লাগিয়ে দিলো।এবার ঠিক আছে আর কেউ নজর দিতে পারবে না।বলে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

সাদিত পিছন থেকে ডেকে উঠলো কিনারা—-
কিনারা ততক্ষণে চলে গেছে।
কিনারা বেরিয়ে যেতেই সাদিতের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।আর বলল পুরাই পাগলী।

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ১১+১২+১৩+১৪+১৫