দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ২৬+২৭+২৮+২৯+৩০

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ২৬+২৭+২৮+২৯+৩০
লেখিকাঃরাকিবা ইসলাম আশা

কিনারা অজ্ঞান হবার পর ডাক্তারকে কল করা হলে।ডাক্তার এসে কিনারাকে একটা ইনজেকশন দেয়।ইনজেকশন দেওয়ার পর কিনারা এখন একটু স্বাভাবিক হয়ে ঘুমাচ্ছে।
ডাক্তার সাদিতকে ডেকে নিয়ে বলে —- মিস্টার চৌধুরী আপনার স্ত্রীর কি আগে থেকে শ্বাসকষ্ট ছিলো নাকি।আপনার স্ত্রীর শ্বাস কষ্টের কারণ টা বলতে পারবেন।তাহলে আমার প্রেসক্রিপশন করতে সুবিধা হবে। সাদিত মাথা নেড়ে না বলল।ও জানে না ঠিক কিনারার শ্বাস কষ্ট আছে কিনা।

আপনার স্ত্রী কি অস্বস্তি,,ভয় বা কোনো রকম দুঃচিন্তা মধ্যে ছিলো।এটা রুদ্ধশ্বাস থেকেও শ্বাস কষ্ট হতে পারে।যদি প্রয়োজনের থেকে শ্বাস নেওয়া কম হয়,তার জন্য রক্তে কার্বনডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে গেলে শ্বাস কষ্ট হয়।যার ফলে অজ্ঞানও হতে পারে।আপনার স্ত্রীর চোখ ভিষণ লাল হয়ে ছিলো,উনি কি কোনো কারণে ভয়ে ছিলেন।এখন আপনার স্ত্রীকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে,এখন আর ভয়ের কারণ নেই, কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উনার শ্বাস কষ্টের কারণ টা বের করার জন্য,যে পরিক্ষা গুলো লেখে দিচ্ছি এগুলো দ্রুত করে ফেলবেন।আর আপনি চিন্তা করবেন না মিসেস চৌধুরী ঠিক হয়ে যাবে।আগে উনার শ্বাস কষ্টের কারণ টা বের করুন আর নিয়মমাফিক চললে শ্বাস কষ্ট কম দেখা দিবে।

ডাক্তার চলে যাওয়ার পর সাদিত কিনারার পাশে শুয়ে এক দৃষ্টিতে কিনারার ক্লান্ত মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।সাদিতের খুব খারাপ লাগছে কিনারার এমন ফ্যাকাশে মলিন মুখ দেখে।আজ একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। কিন্তু সাদিত বুঝতে পারেনা, কিনারার হঠাৎত করে এমন শ্বাস কষ্ট উঠে যাবে।কিন্তু কিনারা ওর সামনে আসলে ও নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে।চাইলেও যে সাদিত নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনা।এসব ভাবছে আর কিনারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কিনারার পাশেয় ঘুমিয়ে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কিনারার ঘুমের মধ্যে হঠাৎত মনে হলো,,দুটো উষ্ণ ঠোঁট ওর কপাল স্পর্শ করলো।কিনারা চোখ দুটো খুলে পিটপিট করে তাকালো।কিনারা অনুভব করলো।ওর মাথাটা হালকা ধরে আছে।তবে ঘুমটা বেশ হয়েছে।চারপাশে তাকাতেই দেখলো দুটো সুন্দর চোখ স্থীর চোখে তাকিয়ে আছে।স্থীর সেই চাহনি যেনো হাজার বছরের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।
সাদিত কিনারার কপালে হাত দিয়ে ছোঁয়ে দিতেই কিনারা ভয়ে কিছুটা সরে গেলো।হ্যাঁ ঠিক আছে কিনারা সাদিতকে ভালোবাসে,কিন্তু সাদিতের কন্ট্রোললেস আচরণকে কিনারা এখন খুব ভয় পায়।

কিনারার ছোট্ট থেকেই অল্প দমেই শ্বাস কষ্ট উঠে যায়।কিনারার তখনকার বাথরুমের কথা মনে হতেই সারা গায়ে কাঁটা দিলো।কি করে পারলো সাদিত তখন ওর সাথে ওমন করতে,সাদিত নাকি আমাকে ভালোবাসে।যে ভালোবাসে সে তার ভালোবাসার মানুষের বলা না বলা কথা গুলো অল্পতেই বুঝে যায়,কিন্তু আমি যখন নিশ্বাস নিতে না পেয়ে বাথরুমে বাঁচার ছটফট করছিলাম তখন ও আমাকে না বুঝে আবার আমার শরীর নিয়ে মেতে উঠতে কি করে পারলো। সাদিত যখন ওকে এগ্রেসিভ ভাবে কিস করছিলো,কিনারার তখন এমন অবস্থা হয়েছিলো,যেনো দম না পেয়ে মৃত্যুকে ও সামনে থেকে দেখছে।সাদিতকে ভালোবাসলেও ঠিক এই মুহুর্তে কিনারার একটা চাপা অভিমান আর রাগ কাজ করচ্ছে। কিনারার সাদিতের এমন আচরণ সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতো মনে হচ্ছে না,এখন সাদিতকে দেখলেই কেমন কিনারার সাইকো মনে হয়।

আবার সাদিত কিনারাকে ধরতে গেলে কিনারার কি যেনো হয়ে গেলো। চট করে মাথায় আগুন ধরার মতো অনুভূত হলো।সে এখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে আজ সাদিতকে খুব কঠিন গলায় কথা বলবে।
ডোন্ট টার্চ মি।আপনি আমাকে আর ধরবেন না।আপনার এসব পাগলামি এখন আমাকে রীতিমতো ভয় পাইয়ে দেই।আমি আপনাকে ভয় পাই।যখন ইচ্ছে তখন,,হাগ,, কিস,শারিরীক সম্পর্কে মত্ত থাকতে হবে।শরীর টাই কি সব।যখন তখন আপনার এই লাভ টর্চার আমি আর বহন করতে পারছি না।প্রত্যেক জিনিসের একটা লিমিট আছে মিস্টার চৌধুরী।হ্যাঁ আপনি আমার কাছে আসবেন, আপনার আসার অধিকার আছে,কিন্তু আপনি কাছে আসার পর ভালোবাসা নামে যে পাগলামি গুলো করেন না আমি আর ট্রলারেট করতে পারছিনা। আমি হাঁপিয়ে গেছি এসবে।আমি জাষ্ট নিতে পারছি না আপনার এইসব কিছু।একটা বর্বর জানুয়ারের মতো ঝাঁপিয়ে পরেন যখন ইচ্ছে হয় তখন।একবার ও আমার মত অমতের ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন, চাননি।আপনার ইচ্ছে টাই সব।কখনো জানতে চেয়েছেন আমি কি চাই।আমাকে আপনারার যখন ইচ্ছে হয় আপনি জোর করেন।কেন বলতে বলতেই কিনারা কেঁদে দিলো।

সাদিত কিনারার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে।এই মুহূর্তে ওর ঠিক কি বলা উচিত ও বুঝতে পারছে না।তার চেয়েও বড় কথা কিনারা তার সম্পর্কে এই সব ধারণা পোষণ করে রেখেছে।কিনারা তাকে কি বর্বর জানুয়ার ভাবে।সত্যিই কি আমি এরকম।সাদিত নির্বাক হয়ে গেছে।কষ্ট হচ্ছে এখন তার।খুব কষ্ট হচ্ছে যা অসহনীয়।সাদিত হাত মুঠো করে চোখ বন্ধ করে রইলো।নিজেকে ধাতস্ত করে নিলো সাদিত।তারপর ঠান্ডা বরফ গলায় বললো —
আমি তোমার সাথে কি এমন করেছি হ্যাঁ। যার জন্য তোমার মনে আমার সম্পর্কে এরকম ধারণা হয়েছে।।আমি তোমার সামনে নিজেকে এভাবে তুলে ধরি কারণ তুমি যেনো একটু হলেও বুঝো আমি তোমাকে ভালোবাসি।
কিনারা চুপ করে আছে।

সাদিত আবার বলে উঠলো।তোমার প্রতি মুহুর্তের এমন নিস্তব্ধতা আমাকে যে কুরে কুরে খাচ্ছে।কষ্ট আর বিরক্তি মাখা মুখে সাদিত বলে উঠলো।
রিয়্যেলি আমার নিস্তব্ধতা আপনাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।কিনারা হালকা হেসে বললো।
কিনারার এই প্রত্যাশিত হাসিতে সাদিতের বিরক্তি বোধ টা বেড়ে গেলো।
মানে কি বলতে চাও তুমি সেটা পরিষ্কার করে বলো না।

আপনি এমনভাবে আপনাকে আমার সামনে তুলে ধরেন আমি নেগেটিভ ভাবতে বাধ্য হয়।কথা গুলো থেমে থেমে কিনারা বলছে।
সাদিত বুঝতে না পেয়ে প্রশ্নোত্তর মুখে তাকিয়ে রইলো।আরে চুপ করে আছো কেন পরিষ্কার করে বলো কি বুঝাতে চাচ্ছো।
কিনারা এবার আস্তে ধীরে উঠে বসলো।তারপর সাদিতের দিকে তাকিয়ে বলল– আমার সামান্য চুপ করে থাকাকে আপনি সহ্য করতে পারছেন না। কিন্তু আপনি যে সব সময় আমাকে ভালোবাসার দোহায় দিয়ে আমার সারা শরীর সাতরাচ্ছেন। সেটা সহ্য করা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না তাই না।।আমার যে কষ্ট হয় এটা আপনি সেটা বুঝতেই চাননি।ভালোবাসা মানেই কি শুধু শরীরের চাহিদা। কখনও কি আমার শরীর ছাড়া অন্যকিছুতে আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন।তা করেননি।সবসময় জোর খাটিয়েই এসেছেন।আমার মনে আপনার জন্য যতটা না ভালোবাসার ফিলিংস জন্ম নেয় তার থেকে বেশি আপনি আমার মনে ভয় ঢুকিয়ে দেন।

কিনারার কথা শুনে এবার সাদিতের রাগ উঠে গেলো।ওর সারা শরীরে যেনো জ্বালা ধরে গেলো।ওর পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো এবার।সাদিত কিনারার সামনে এসে মুখটা হালকা চেপে ধরে বলল ——তোমার সাহস হয় কি করে,আমাকে এসব বলার।আর তোমার মনে সত্যিই কি এটাই ধারণা, যে আমি তোমার শরীরের জন্য এসব করছি।এতোকিছুর পরও কি করে পারো কি করে পারো এসব বলতে।কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে ফেলল সাদিত।
সাদিত কিনারাকে এভাবে চেপে ধরায়,,,,কিনারা ব্যথা পেয়েও তা প্রকাশ না করে বলল—– সে প্রশ্নটা নিজেকে করেন না,উত্তর পেয়ে যাবেন।কথাগুলো কিনারা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো।

সাদিত মাথা নাড়িয়ে বলল— না আমি তোমার কাছে জানতে চাইছি।আমাকে বলো তোমার কি সত্যিই মনে হয়।আমি তোমাকে ব্যবহার করতে চাইছি।কখনো কি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখোনি,,,,কখনো কি বুঝতে পারোনি,আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা।এতোগুলো দিন আমার সাথে থাকার পর ও তোমার এ ধরনের ধারণা কি করে হয় আমার সম্পর্কে।কথা গুলো সাদিত কিনারার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল।
কিনারা সাদিতের চোখের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে না পেয়ে ,সাদিতের চোখের থেকে নিজের চোখ টা নামিয়ে নিয়ে, মাথা নিচু করে রইলো।

সাদিত আবার কিনারার থুতনিটা ধরে,আবার মাথাটা উচু করে, কিনারার চোখে চোখ রাখলো।রেখে সাদিত বলল—- কেন পারছোনা কিনারা আমার চোখে চোখ রাখতে।ভয় করছে তোমার।সত্যিটা বলো।
কিনারা কান্না করছে,ওর চোখ বেড়ে পানি পড়ছে।ও আসলে সাদিতকে এসব মন থেকে বলতে চায়নি।হঠাৎই একটা চাপা অভিমান আর রাগ থেকে সাদিতকে এসব বলে ওর নিজেরও কষ্ট হচ্ছে।কেন এমন করেন আপনি। আমাকে ভালোবেসে কেন কাছে আসেননা।কেন আপনি জোর করে সবসময় আপনার পুরুষত্ব তুলে ধরেন।
কিনারাকে চুপ থাকতে দেখে। সাদিত কিনারাকে জড়িয়ে ধরলো।।

কিনারা এবার সত্যিই অবাক না হয়ে পারলো না।কিনারা মনে মনে আবার ভাবলো।সাদিত আমি আপনার সম্পর্কে এমন কোনো ধারণা আমি আমার মনে আনতে চায়না,কিন্তু আপনি আমাকে বাধ্য কেন করেন।সবসময় আমাকে কেন এটা বুঝান যে ভালোবাসা বলতে শরীরটা চাই।কিনারা দুহাতে সাদিতকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
কিন্তু সাদিত কিনারাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল — উম্মহুম তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর যতক্ষন না দিবে আমি তোমাকে এভাবেই ধরে থাকবো।

প্লিজ সাদিত এভাবে জোর করে কাছে আসা বন্ধ করেন।
বলে কিনারা যত চেষ্টা করছে সাদিত কে সরিয়ে দিতে,কিন্তু সাদিত ওকে তত জোরে চেপে ধরে।
সাদিত কিনারাকে জড়িয়ে ধরে বলল —-কিনারা ভালোবাসি তোামাকে।কেন বুঝতে পারছোনা তুমি।আমি তোমার শরীরকে না তোমাকে চাই।
কিনারা সাদিতকে বলল ও আচ্ছা তাই নাকি।বলে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।
সাদিত এবার নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেয়ে কিনারার ঠোঁট কামড়ে দিলো।
কিনারা আহহ্ বলে ঠোঁটে হাত দেয়,কিনারার নরম ঠোঁট দুটো কেটে রক্ত ঝড়ছিলো , সাদিতের দিকে তাকিয়ে বলল– একটু আগেই না আপনি বার বার জানতে চেয়েছিলেন।কেন আমি আপনাকে ওই কথা গুলো বলেছি।তখন আমার মনে হচ্ছিলো কোথাও একটা ভুল করছি।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না কথাটা কিছু হলেও সত্য।আপনি আসলেই জানোয়ারের চেয়েও জঘন্য বলে কাঁদতে কাঁদতে হাত দিয়ে নিজের ঠোঁটের রক্তটা মুছে ফেলল কিনারা।
সাদিত কিনারার সামনে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ২৭

রাত এগারোটা……
কিনারা চোখ বন্ধ করে,আধশোয়া হয়ে বিছানায় বালিশে হেলান শোয়ে ছিলো।সাদিত সেই সন্ধ্যায় বেরিয়ে গেছে আর ফেরার কোনো নাম নেই। কিনারা কয়েকবার সাদিতের ফোনে কল করেছে বাট সুইচ অফ।কিনারার মনে কু ডাকছে।প্রচুর টেনশন হচ্ছে।সাদিত কি রাগের মাথায় কিছু করে বসলো,এখনো কেন বাড়ি ফিরছেনা।যদি কিছু করে ফেলে,তাহলে তো কিনারা নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা।এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কিনারা ওভাবে শুয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই চোখটা মাত্রই লেগে এসেছিলো।এরি মধ্যে গলার আওয়াজে চোখ মেলে তাকালো কিনারা।

আমি তোমাকে ব্যবহার করছি।আমি শুধু তোমার শরীরটাই চিনি।কথাগুলো খুব শান্ত গলায় সাদিত বলে উঠলো।।
সাদিতের এই অতন্ত্য শান্ত গলার স্বর শুনে—- কিনারা বিষমিত হয়ে উঠে বসলো।সাদিতের হঠাৎত এ অত্যন্তিক শান্ত রুপ সাথে হিমশীতল স্বর কিনারার মনে রীতিমতো ভয়ের সৃষ্টি হলো।কিনারার মনে বিপদের ঘন্টা বাজতে শুরু করলো।কিনারা দেখলো সাদিত ওর ডান হাতটা পিছনে লুকিয়ে রেখেছে।তার উপর সাদিতের গলার আওয়াজে মনে হচ্ছে ও নেশা করেছে।কিনারার মনের ভয় আরো দৃঢ় হতে শুরু করলো।কিনারা বুঝতে পারলো সাদিত মারাত্মক কিছু করতে চলেছে।
সাদিত কিনারার দিকে এগিয়ে আসতেই পড়ে যেতে নিলেই আবার নিজেকে সামলে নেই।
কিনারা উঠে গিয়ে সাদিতকে ধরতে চায়,কিন্তু সাদিত কিনারাকে এক হাত দিয়ে আটকিয়ে আবার বলে উঠলো —– আমি তোমাকে ব্যবহার করি তাইনা।

কিনারা সাদিতের সামনে দাঁড়াতেই সাদিতের কথা বলার সময় নেশার ঝাঁঝালো বাজে গন্ধ কিনারার নাকে এসে তাল দিলো।কিনারা বুঝতে পারলো সাদিত নিজের হুসে নেই। এই মুহুর্তে যেকোনো কিছু করে ফেলতে পারে।তাই একহাত দিয়ে সাদিতকে ধরার চেষ্টা করে বলল—- নানাআআ — আপনি কেন আমাকে ব্যবহার করতে যাবেন।আমি তখন ভুল বলেছি।আমার আসলে ওসব বলা উচিত হয়নি তখন। কিনারা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠলো।
আমি সবসময় তোমার শরীর নিয়েই মেতে থাকি।তোমাকে ভালোবাসি না।
কিনারা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো —- নাআআ আসলে আমার বুঝার ভুল।
আমি বর্বর জানোয়ার,ও সরি আমি তো, জানোয়ারের চেয়েও জঘন্য তাইতো।

কিনারা সাদিতের এমন শান্ত কথায় ভয় পাচ্ছে,সাদিত যদি উল্টা-পাল্টা কিছু করে বসে।তাই কিনারা বলল সাদিত আমার ভুল হয়ে গেছে। আপনি শান্ত হন প্লিজ।আমি আসলে বুঝতে পারিনি আপনাকে।শান্ত হন প্লিজ,আমি ক্ষমা চাইছি।বলে হাত জোর করলো।
ক্ষমাআআ—–বলে হালকা হেসে আবার বলল,ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত। কিন্তু দেখো সেই ক্ষমা চাওয়ার যোগ্যতাও আমার নেই।
কিনারা বললল প্লিজ চুপ করুন।আমি আপনাকে তখন রেগে ওসব বলেছি।
ইউ নো কিনারা,,,আমি জানোয়ারের চেয়েও জঘন্য। আমি তোমার লাইফে সব চেয়ে বড়ো কালপিড হয়ে দাঁড়িয়েছি।আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করছি।সাদিত হিমশীতল গলায় বলল।

কিনারা কান্না পাচ্ছে খুব, আসলে রেগে এতোগুলা কথা না শুনালেও পারতো।কিন্তু ওগুলো তো কিনারা ইচ্ছে করে বলেনি রাগের মাথায় চলে এসেছিলো৷ কথাগুলো।সাদিত যা শুরু করেছিলো তাই কিনারা ভেবেছিলো সাদিতকে একটু কড়া গলায় কথা শুনাবে কিন্তু তা যে এতোটূ কঠোর হয়ে যাবে কিনারা ভাবতে পারেনি।আসলে সিচুয়েশনটাই ওমন হয়ে গেছিলো।কিনারা কান্না মিশ্রিত গলায়৷ বলল—- না সাদিত, কখনোই না।

হ্যাঁ কিনারা হ্যাঁ। আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করছি।আরে আমার মতো জানোয়ারের তো বেঁচে থাকারই কোনো অধিকার নেই।আর দেখো আমি কিনা দিব্যি ঘুরে বেরাচ্ছি।আমার তো মরে যাওয়া উচিত কথা টা রাগে ক্ষোভে চিৎকার দিয়ে বলল সাদিত।
সাদিতের শান্তগলা থেকে হঠাৎত এমন জোরে চিৎকারে কিনারা কেঁপে উঠলো।
নিস্তব্ধত রাতে এই চিৎকারটা যেনো চারপাশে প্রতিক্রিয়া হতে শুরু করলো।
সাদিত কথাগুলো বলে পিছন থেকে হাতটা বের করে একটা রিভলবার নিজের মাথায় ঠেকালো।

কিনারা সাদিতের দিকে তাকিয়ে ভয়ে আতংকে উঠলো।কিনারা এতোক্ষন এরকম কিছুরই আশঙ্কা করেছিলো।সাদিতের ওমন শান্ত রুপ দেখে।কিনারা তখন রাগের মাথায় যায়ই বলুক না কেন।সাদিতকে তো ভালোবাসে।চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষকে এই অবস্থা দেখলে যে কারোরই ভয়ে গলা শুকিয়ে যাবে।কিনারা ঢুক গিলে। জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে বলল—-আপনার পায়ে পড়ছি।প্লিজ এমন পাগলামি করবেননা।প্লিজ সাদিত প্লিজ।আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ রিভলবারটা ফেলে দিন প্লিজ। কিনারা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কাঁদতে শুরু করলো।।তারপর কাঁদতে কাঁদতে হাত জোর৷ করে সাদিতের পায়ের কাছে বসে পড়লো।হাত জোর করে সাদিতকে রিভলবার টা ফেলে দিতে কিন্তু তাতে কোনো ফল হলো না। কিনারা বুঝতে পারলো সাদিত ওর কোনো কথায় শুনবে না।কিনারা সাদিতের পায়ের কাছে মেঝেতে বসেই দেখতে পেলো।সাদিত ওর আঙুল দিয়ে রিভলভারের ট্রিগারটা চাঁপতে যাচ্ছে। তা দেখে কিনারার হার্টবিট তীব্র গতিতে বাড়তে শুরু করলো।সারা শরীরের রক্ত এলোপাতাড়ি প্রবাহ করতে শুরু করলো।কিনারার মাথার ভিতরটা ভোঁ ভোঁ করে উঠলো।সাদিতের আঙুল ট্রিগার স্পর্শ করে ফেলেছে।কিনারা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে উঠে দাঁড়িয়ে সাদিতের হাত থেকে রিভলবার টা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।

তারপর সাদিতকে একটা সপাটে চর দিলো,চর দিয়ে সাদিতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।পাগল হয়ে গেছেন আপনি কি করতে চাচ্ছিলেন।আর একটু হলে তো —
ছাড়ো কিনারা,ছাড়ো আমাকে।
কিনারা কাঁদতে কাঁদতে সাদিতের বুকে নাক ঘষে মাথা নাড়ালো।না আমি ছাড়বোনা।ছাড়বোনা আপনাকে।ছাড়বো না।বলতে বলতে হেঁচকি উঠে গেলো কিনারার।
দেখেছো আমি আবার তোমাকে কাঁদালাম।আমি বেঁচে থাকলে তোমার জীবনে শুধু কষ্ট আর কষ্টই।কখনো তোমাকে আমি সুখে রাখতে পারবোনা।
প্লিজ চুপ করুন।চুপ করুন

সাদিত কিনারাকে দুহাতে ছাড়িয়ে সামনে দাঁড় করালো,তারা আঙুল দিয়ে কিনারার চোখ মুছে দিয়ে বলল —-আচ্ছা ঠিক আছে, এইযে আমি চুপ।ঠিক আছে তবুও তুমি কান্না করোনা প্লিজ।তোমাকে কান্না করতে দেখলে এখানে ব্যথা করে, মনে হয় ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে,বুকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে সাদিত বলল।সাদিত দাঁড়াতে পারছিলো না হেলেদুলে পড়ছিলো,তবুও নিজের ব্যালেন্সটা কোনমতো আটকিয়ে কিনারাকে আবার বলল আচ্ছা শুনো তুমি আজ থেকে মুক্তি কেমন।তোমাকে আমি আর কোনো রকম জোর জবরদস্তি করবো না।ঠিক আছে কিন্তু কিনারা তোমাকে আমাকে একটা কথা দিতে হবে হ্যাঁ —প্লিজ কখনো আমার কাছ থেকে দূরে যাবেনা—- প্লিজ। বিশ্বাস করো প্রমিজ গলায় হাত দিয়ে বলল—— আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবোনা।সবসময় তুমি যা বলবে তাই, সব কিছু তোমার মর্জি মতো হবে।আমি শুধু তোমাকে সবসময় আমার সামনে দেখতে চাই।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবে কথা দাও —— কথা দাও —— কথা দাও—কথা গুলো পাগলের মতো ঢুলছিলো আর বলছিলো।

কিনারা কিছু বলার আগেই সাদিত পাশে খাটের উপর পড়ে গেলো।
সাদিতের পড়ে যাওয়া দেখে কিনারা ভয় পেয়ে যায়।ও তাড়াহুড়ো করে সাদিতের পাশে বসে।সাদিতকে ডাকতে থাকে।কিন্তু ততক্ষণে সাদিত ওর নিজের হুসে নেই।গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।আর একটু পরপর ঠোঁট নাড়িয়ে কি জানি বিরবির করছে।কিন্তু তা কিনারার কান অব্দি পৌঁছালোনা।কিনারা বুঝতে পারলো সাদিত ঘুমিয়ে গেছে।
কিনারা উঠে রিভলবারটা লুকিয়ে রাখলো।কিন্তু তবুও কিনারার ভয় করছে।সাদিত একটু নড়াচড়া করলেই কিনারা সর্তক হয়ে উঠছে।
কিনারা সাদিতের পাশে আবার বসলো।।।কিনারা দেখলো সাদিত হোয়াইট কালারের একটা শার্ট পড়ে আছে।উপরের বাটন গুলা অর্ধেক খোলা,সাদিতের চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।কিছু চুল কপালে লেপ্টে আছে।কিনারা ডানহাত দিয়ে সাদিতের কপালে আসা৷ চুল গুলো ঠিক করে দিলো।সাদিতের ঘুমন্ত মুখে কষ্টের ছাপগুলো স্পষ্ট বুঝা গেলো।চোখের গড়িয়ে যাওয়া পানি গুলো শুকিয়ে দাগ হয়ে আছে।

কিনারা সাদিতের মুখের দিকে তাকাতেই কষ্ট হলো।এই কি সেই সাদিত চৌধুরী।যে কিনারা এতো মেয়ের ক্রাশ।যার জন্য হাজার হাজার মেয়ে পাগল।সে কিনা একটু আগে আমার জন্য নিজেকে শেষ করতে চাচ্ছিলো, আর একটু হলে তো,, কথাটা ভাবতেই কিনারার বুকে মুচড় দিয়ে উঠলো।না না—— একটা মানুষ কতটা কষ্ট পেলে মরতে চাই।এসব ভাবতেই কিনারার নিজেকে অনেক ছোট মনে হচ্ছে। সাদিত ওর এসব ব্যবহারে ওকে ক্ষমা করবে তো, নাকি ওকে—– নাআ— কিনারা ঠিক করলো কাল সাদিতকের কাছে ক্ষমা চাইবে,এতে সাদিত যা ইচ্ছে তাই ভাবুক।ভালোবাসার মানুষের কাছে হাজার ক্ষমা চাইলেও মানুষ ছোট হয়না। এসব ভাবতে ভাবতে কিনারা আস্তে করে সাদিতের মাথাটা নিজের কোলের উপর রাখলো।মাথাটা কোলে রাখতেই,,, সাদিত ঘুমের ঘোরে ডান কাত হয়ে কিনারার পেটে মুখ গুঁজে দিলো।মুখ গুঁজে দিতেই কিনারা একটু শিহরিত হলো সাদিতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,আর এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিচ্ছিলো।কিনারার মাথায় হাজার রকম কথা আর চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো।

★★★★পরেরদিন সাকালে ★★★★
কিনারা সারা রাত সজাগ ছিলো।কারণ ওর ভয় করছিলো।যদি ও ঘুমিয়ে যায় আর সাদিত আবার উল্টা-পাল্টা কাজ করে বসে।তাই কিনারা ঘুমায়নি। হঠাৎই সাদিত চোখ মেলে তাকালো— —–সাদিতের ঘুম ভেঙে গিয়েছে।সাদিত চোখ খুলে কিনারার দিকে তাকালো।
সাদিতের চোখের দৃষ্টিতে গভীর কষ্ট,যা কিনারার বুকে তীরের মতো বিঁধতে থাকলো।
সাদিত খেয়াল করলো ও কিনারার কোলের উপর শুয়ে আছে।তারপর সাদিত আরও খেয়াল করলো ও খাটের মাঝ বরাবর শুয়ে আছে,তাহলে কিনারা ঘুমায়নি কি।তার মানে কিনারা কাল সারারাত ঘুমায়নি।সাদিত উঠে বসলো,উঠে বসতেই মাথায় হালকা ব্যাথা অনুভব করলো।কাল রাতে রুমে কিভাবে আসলো তা মনে করতেই মাথায় চিনচিন ব্যাথা শুরু হলো।সাদিত পরমুহূর্তেই সে ভাবনা বাদ দিলো।

সাদিতকে উঠতে দেখে কিনারা জিজ্ঞাসা করলো——তোমার ঘুম হলো।
সাদিত কিনারার সে উত্তর না দিয়ে বিস্ময়সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেসা করলো—-তুমি সারারাত ঘুমোয়নি।
কিনারা কোনো উত্তর না দিয়ে সাদিতের দিকে তাকিয়ে রইলো—–কিনারা সাদিতের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।কিনারার ইচ্ছে হলো সাদিতকে একবার জড়িয়ে ধরতে।কিনারা উঠে গিয়ে সাদিতকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু সাদিত আর কোনো কথা না বলে কিনারাকে ছাড়িয়ে সরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
তখন কিনারার মন বলে উঠলো—- ওর সত্যিই যেনো অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।তা না হলে এতোদিন ও সাদিতকে এতোবার দূরে ঠেলে দিয়েছে,কিন্তু সাদিত ততবার ওর কাছে ফিরে এসেছে।কিন্তু আজ যখন কিনারা ওর কাছে আসতে চাইলো,তখন সাদিত নিজেই ওর দূরে সরে গেলো।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ২৮

কিনারা শুয়ে শুয়ে ভাবছে,সাদিতের মনে যে কষ্টটা দিয়েছে তা দূর করার জন্য ওকে যা যা করতে হবে তাই করবে।সাদিতকে আর কষ্ট দিয়ে ওর জীবনটা নষ্ট করতে চায়না।এমন সময় হুট করে একটা আওয়াজে কিনারা ধরফরিয়ে উঠে বসে।
সাদিত বাথরুম থেকে বেরিয়েছে।একটা তোয়াল জড়ানো।ভিজে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।সারা শরীরে এখনো অল্প ভিজে আছে।সাদিত এমনি অনেক সুদর্শন।ওর এমন আকর্ষনীয় বডির জন্য সব মেয়েরা পাগল।আজ এই আধ ভিজে সাদিতকে দেখে কিনারার মনে যেনো আগুন জ্বলে উঠলো।সাদিত বাথরুম থেকে বেরিয়ে কার্বাডের কাছে গেলো।
কিনারাও গেলো পিছন পিছন।সাদিত পিছন ঘুরে কিনারাকে ভ্রুরু কুঁচকে জিজ্ঞেসা করলো-

হোয়াট?
কিনারা মাথা নেড়ে কিছু না বুঝালো।
সাদিত আবার কাজে মনোযোগী হয়ে কার্বাডে কাপড় বের করতে শুরু করলো।
কিনারা এবার সাদিতকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
সাদিত কিনারাকে ছাড়িয়ে বলল রেডি হও।
কিনারা বলল কেন।আমরা কোথাও কি যাচ্ছি নাকি।
সাদিত ড্রেস হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বলল হুম।
কোথায় যাচ্ছি আমরা।
উফফ এত্ত কথা না বলে আগে রেডি হও তো।

কিনারা একটা ডার্ক গ্রীন কালারের শাড়ি পড়ে,গোল্ডের হালকা কিছু গহনা পড়ে,চোখে কাজল আর ঠোঁটে ডার্ক পিংক লিপস্টিক পড়ে সাদিতের সামনে এসে দাঁড়ালো।
কিন্তু সাদিত কিনারার দিকে একবারও না তাকিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে,আর ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই কিনারাকে বলছে রেডি তুমি।
কিনারা ছোট্ট করে একটা হুম বলল।
কিনারা সাদিতের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু সাদিত একবারও ওর দিকে তাকালো না।কিনারা ভেবেছিলো এতো সুন্দর করে সেজেছে, সাদিত পাগল হয়ে যাবে,কিন্তু সে কিনা একবারও তাকানোর প্রয়োজন অব্দি মনে করলো না, কিনারা অধৈর্য্য হয়ে সাদিতের গা ঘেঁষে বসে পড়লো।এমন ভাবে চেপে বসলো সাদিতের হাত থেকে ল্যাপটপটা একটুর জন্য পড়লোনা।
সাদিত ভ্রুরু কুঁচকে কিনারাকে ধমক দিতে যাবে,তখনি খেয়াল করলো কিনারা খুব সুন্দর করে সেজেছে,সাদিতের রাগ নিমিষেই চলে গেলো সাদিত তো পুরাই হা হয়ে গেলো।সাদিতের ইচ্ছে করছে কিনারার গালে একটা চুমু দিতে।সাদিত সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখটা বন্ধ করে ইচ্ছেটাকে ধামাচাপা দিয়ে ভারী একটা নিশ্বাস ফেলে,কিনারার দিকে রাগী লুকে তাকালো——–

আমরা কি বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি।
বিয়ে বাড়ি,আজ কারোর বিয়ে নাকি সাদিত,আপনি তো আমাকে আগে বলেননি।
বলিনি যেহেতু তাহলে এমন বিয়ে বাড়ির মতো সাজ দিয়েছে কেন।
যাহ বাবা কই বিয়ে বাড়ির মতো সাজলাম। জাষ্ট একটু কাজল আর লিপস্টিকই তো দিয়েছি।
সাদিত ছোট্ট করে একটা ঢুক গিলে বলল—ওই একি এতো সাজার কি আছে,আমরা ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছি,বিয়ে খায়তে না।যে এমন সাজতে হবে।
সাদিতের এমন কথায় কিনারার মন খারাপ হলো।একটু সেজেছি না হয় তার জন্য বারবার এভাবে বলার কি আছে, আমি তো উনার জন্যই সেজেছি,ওভাবে না বলে একটু প্রসংশা করা যেতো তো নাকি তা না উল্টো কিভাবে বললেন।
কিনারা বলল ডক্টর দেখাতে কেন,আপনার শরীর খারাপ।

না আমার শরীর খারাপ হবে কেন , আমি কি তোমার মতো দুর্বল নাকি একটু কিস এর লোড সহ্য করতে না পেরে সেন্সলেস হবো।
আমি মুটেও দুর্বল না।আপনিই তো কাল–কিনারা চুপ হয়ে গেলো আর কিছু বললো না,কারণ এসব নিয়ে আর মন খারাপ করতে চায়না,,যাই করুক না কোন সারাটা জীবন এই মানুষটার সাথেই কাটাতে চাই সে।তারপর চুপচাপ সাদিতের সাথে বেরিয়ে গেলো।
ডক্টর কিনারাকে চারটা টেস্ট দিয়েছিলো,ওগুলার রিপোর্ট কাল এসে নিয়ো যেতে বলেছে।আর এতো সময়ের মধ্যে সাদিত প্রয়োজন ছাড়া কিনারার সাথে কথা বলেনি,কিনারা কিছু বললে শুধু তার টুকটাক উত্তর দিতো।কিনারা আগ বাড়িয়ে সাদিতের সাথে নরমাল হতে চাচ্ছে কিন্তু সাদিত বরাবরই ওঁকে আর ওর কথাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।বলতে গেলে পুরো পুরি ইগ্নোর করছে।

সাদিতের এমন নিশ্চুপ হয়ে থাকায় কিনারার ভিতরটা যেনো জ্বলে যাচ্ছে,,, আর কাল রাতের জন্য খুব আফসোস করছে।তো কি আমাকেও তো সুযোগ দিতে হবে নাকি সবকিছু ঠিক করার৷ জন্য।একটা চান্স কি আমার পাওনা নয়।অবশ্য এটা আমি ডিজার্ভ করি।কালকের ঘটনার পর উনার সম্পুর্ন অধিকার আছে আমাকে ইগ্নোর করার।আমি চাই আবার সব আগের মতো হয়ে যাক।সাদিতের এই ব্যবহারের সাথে আমি পরিচিত না।আসলে রোজকার করা ব্যবহারে আমি কখন যে অভ্যস্ত হয়ে গেছি নিজেও বুঝিনি।আগে জ্বালাতন করতেন বলে বিরক্ত হতাম আর জ্বালাতন করেন না জন্য বিরক্ত।কি অদ্ভুত তাই না।এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরে এলো।
সাদিত গাড়ি থেকে নেমে কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা রুমে এসে দাঁড়ালো,কিনারা নেমেছে কিনা সেদিকে খেয়ালই করেনি।অথচ আগের মতো হলে হইতো দুষ্টুমি করে কোলে করে নামিয়ে আনতো কিংবা জ্বালাতো। দাঁড়িয়ে হাতে রিমোটটা নিয়ে এসিটা অন করে দিলো —–সাদিত শার্টের একটা বাটন খুলতে খুলতে বলছে উফফ আজ কাল যা গরম পড়েছে।

কিনারা বেড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে সাদিতের সামনে ধরলো,এটা খেয়ে নিন ভালো লাগবে।
সাদিতের তৃষ্ণা পেলেও কিনারার হাত থেকে নিলো না, বলল রাখো পরে খাচ্ছি, আগে শার্টটা খুলি।
কিনারা গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে সাদিতের গা থেকে শার্টটা খুলে দিতে যাবে,তখনি সাদিত ভ্রুরু কুঁচকে কিনারার দিকে তাকালো।তাকিয়ে বলল—- কি করছো তুমি।
আপনার তো গরম লাগছে,এতো রোদের মধ্যে বাইরে থেকে আসলেন অনেক টার্য়াড আপনি তাই একটু আপনাকে হেল্প করছি।
লাগবে না আমার হেল্প, ভালো লাগছে না,সরো তুমি আমার হাত আছে আমি খুলতে পারবো।সরো প্লিজ।
আরে আমি আপনাকে হেল্প করবো এতে ভালো না লাগার কি আছে,স্ত্রী স্বামীকে হেল্প করলে সওয়াব হবে।আর আপনি বলছেন ভালো লাগছেনা।

হুম বুঝলাম সওয়াব হবে, এখন সরো খুলতে দাও।
উম্ম আমি খুলে দিলে সমস্যা কোথায়।
শুঁড়-শুঁড়ি লাগে।
উম হয়েছে,হাত সরান তো।
সাদিতের শার্টের বাটন গুলো খুলে দিতে দিতে বলল—- সাদিত আই এম স্যরি।কাল রাতের জন্য জন্য। আসলে–
সাদিত কিনারাকে থামিয়ে বলল —- ঠিক আছে।সত্যিই তো দেখো আমার মধ্যে মন বলতে কিছুই নেই,শুধু শরীরটাই আছে।তাই তো তোমাকে ব্যবহার করে জ্বালা মেটাচ্ছি।সাদিত তিক্ততার সাথে কিনারাকে কথাগুলো বলল।
কিনারা করুন ভাবে বলল— আই এম সো সো সো সো স্যরি সাদিত।আমি জানি আমার প্রত্যেকটা কথা আপনাকে খুব কষ্ট দিয়েছে।আমি আমার দোষটা বুঝতে পারছি।সে জন্যই তো ক্ষমা চাচ্ছি।কিনারা কষ্ট মেশানো স্বরে বলল।
ইউ নো হোয়াট কিনারা— কখনো কখনো আমরা এমন কিছু বলে ফেলি যা ক্ষমার অযোগ্য হয়।সাদিত যেনো ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো। ক্ষনিকের জন্য ভুলে গেলেও মন থেকে সেই কটু কথায় যে দাগ কাটে সেটা মুছে যায় না।
প্লিজ সাদিত একবার তো ক্ষমা করে দিন।কিনারা এবার কেঁদেই বলে ফেললো।

সাদিত খুব রুক্ষভাবে বলল নাহ।
কিনারা শার্টটা খুলে হাতে নিয়ে নিচু হয়ে চোখের পানি ফেলতে শুরু করলো।
পরক্ষনেই সাদিতের মনটা নরম হয়ে গেলো,সাদিতের মনে হলো এক্ষনি কিনারাকে জড়িয়ে ধরে ওর চোখের পানিগুলো মুছে দিতে, চোখের পাতায়. টুপ করে চুমু খেতে আর বলতে যে কেঁদো না কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়।তোমার মতো মেঘবতীদের কাঁদা মানায় না কিন্তু সাদিতের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো।সাদিত ভাবলো এতো সহজে তোমাকে কাছে টেনে নিবোনা।আমিও দেখতে চাই আমার জন্য তুমিকি করতে পারো।সাদিত আরো রাগ করার অভিনয় করে বলল।হয়েছে তোমার শার্ট খোলা।যদি হয়ে থাকে তাহলে চলে যাও আমার সামনে থেকে।

কিনারা হেঁচকি তুলতে তুলতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।ওর চোখের পানি আর আটকাচ্ছে না।অঝোরে পড়তেই আছে।
কিনারাকে এমন চুপচাপ কেঁদে চলে যেতে দেখে সাদিতের মনের মধ্যে কষ্ট হতে লাগলো।আজ কঠোরতা টা একটু বেশিই দেখিয়ে ফেলেছি।তবুও এটা ভেবে ভালো লাগলো,কিনারা ওকে বুঝতে পেরেছে।নিজে থেকে ওর কাছে এসেছে,ক্ষমা চেয়েছে।

বিকালে আকাশটা হঠাৎই খারাপ করেছে,বৃষ্টি নামবে নামবে প্রায়,কিছুক্ষন পর ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি নামা শুরুও করলো।কিনারা বারান্দায় গিয়ে দেখে আসলো ভালোয় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে,কিনারার মনটা খারাপ কিন্তু বৃষ্টি দেখে কিনারার মনটা ভালো হয়ে গেলো,বৃষ্টির এমন ঝুমঝুমিয়ে পড়া দেখে ওর ইচ্ছে হচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজার।কিনারা কখনো বৃষ্টিতে গোসল করিনি,ওর ভিজা বারণ কিন্তু আজ কেন জানি ভিষণ ইচ্ছে করছে। সাদিতকে না বলে ভিজতেও ইচ্ছে করছে না।

সাদিত ল্যাপটপে কাজ করতে ব্যস্ত,কিনারা সাদিতের সামনে গিয়ে দেখে সাদিত কাজে ডুবে আছে।কিনারা সরাসরি সাদিতের সামনে গিয়ে ওর কোলে বসে সাদিতের গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে চলেন না আমরা বৃষ্টিতে ভিজি।
সাদিত ভ্রুরু কুঁচকে কিনারার দিকে তাকিয়ে বলল৷ পাগল নাকি, এমনি তোমার প্রবলেম,এখন যদি বৃষ্টিতে ভিজো পরে যদি আবার শ্বাস কষ্ট উঠে যায় তা আমি চাইনা।কাল আগে রিপোর্টটা দেক তারপর বুঝা যাবে বাকিটা।এখন উঠো আমার কাজ আছে।
কিনারা সাদিতের গলা আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো।
সাদিতের ভালো লাগলেও একটু মজা নেওয়ার জন্য বলল—আশ্চার্য এমন চিপকে ধরে আছো কেন,আশেপাশে কি জায়গা নেই, আমার কোলেই বসতে হবে, এমনিতেই যা গরম।

না সরবো না, আর এই যে মিস্টার শুনুন,,,,আপনাকে শুধু জড়িয়ে ধরা কেন আরো অনেক কিছু করার রাইট আমার আছে।
সাদিত কিনারাকে জোর করে উঠিয়ে খাটে বসিয়ে বলল,,,আমাকে মেইলটা সেন্ড করতে দাও।
সাদিত এভাবে কিনারাকে উঠিয়ে দেওয়াই কিনারার মন খারাপ হলো,,, ও চুপচাপ খাটে এক কোণায় বসে রইলো।
সাদিত মিনিট দশেক পর পিছনে তাকালো দেখলো কিনারা রুমে নেই,সাদিত ভাবলো কিনারা আবার ওকে না বলে ভিজতে চলে গেলো না তো।সাদিত ল্যাপটপ টা বিছানায় রেখে নিচে গেলো,দেখলো রিতা কিচেনে কাজ করছে,সাদিত রিতার কাছে গিয়ে বলল তোর ভাবিকে দেখেছিস।

হুম ভাইজান ভাবি একটু আগে এসে বলল আমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে,কিন্তু আমি তো একটু আগেই গোসল করে রান্না করতে এলাম।তাই না করলাম। কিন্তু ভাবি তো একা একা ছাদের দিকে চলে গেলো।
সাদিতের রাগ হলো এতোবার না করার পরও বৃষ্টিতে ভিজতে চলে গেলো।সাদিত রেগে ছাদের দিকে পা বাড়ালো।
সাদিত ছাদে গিয়ে দেখলো—- কিনারা ছাদের মাঝ বরাবর দুহাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে।
সাদিত ছাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে জোরে ডাক দিলো,কিনারা ভিতরে আসো,তোমাকে ভিজতে না করেছিনা,তবুও কেন এসেছো,একটা কথা বললে কি কানে যায়না।

উম্ম না, পাঁচ মিনিটও হয়নি বৃষ্টিতে নেমেছি,আর একটু ভিজবো,ভালোয় লাগছে।
সাদিত এবার রেগে বলল ভালোয় ভালোয় বলছি,ভিতরে আসো,আমি গেলে কিন্তু তুলে নিয়ে আসবো।
আপনি আমার কাছে আসবেন না তো, আমাকে ভিজতে দিন বলে দুহাত মেলে ঘুরতে লাগলো।আর জোরে জোরে বলতে লাগলো আমি এখন রোমান্টিক মুডে আছি,বৃষ্টির প্রত্যেকটা ফোঁটা আমি উপভোগ করছি,এখন আপনি যদি আমার কাছে আসেন আমি কিন্তু আপনার সাথে উল্টা-পাল্টা কিছু করে বসবো।আমি বেহায়া হতে চাচ্ছি না কিন্তু আপনি আসলে এমনি বেহায়া হয়ে যেতে ইচ্ছে করবে চাইলেও আটকে রাখতে পারবো না নিজেকে।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ২৯

সাদিত কিনারার কোনো কথা না শুনে কিনারার কাছে গেলো,কিনারা দুহাত মেলে ঘুরছিলো সাদিত কিনারার হাত ধরে থামিয়ে দিলো।সাদিত কিনারাকে থামিয়ে হাত ধরে টান দিয়ে ভিতরে নিয়ে যেতে নিলেই কিনারা ওর জেদকে অনড় রাখতে সাদিতের থেকে হাতটা সরিয়ে জড়িয়ে ধরলো ওঁকে।
কিনারা সাদিতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল আপনাকে বলেছিলাম না সাদিত আমার কাছে না আসতে।এখন যদি আমি আপনার সাথে কিছু করে বসি।তখন কিন্তু বাধা দিতে পারবেন না।কিনারা কথা গুলো বলছিলো আর পা উঁচু করে সাদিতের কানের লতিতে নিজের অধর যুগল ছুঁয়ে দিচ্ছিলো বার বার।

সাদিত চপ্রথমে জড়িয়ে না ধরলেও এখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না,সাদিতও শক্ত করে কিনারাকে জড়িয়ে ধরলো।অবশেষে সাদিতও বৃষ্টির কাছে হার মেনে গেলো। সাদিত কিনারাকে বলল আমরা এখন ভিতরে যায়,তারপর না হয় আমাকে যত ইচ্ছে জড়িয়ে ধরো,এখন এভাবে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে।পরে তোমার প্রবলেম হবে।ফিসফিস করে নেশালো কন্ঠে বললো।
সাদিতের ঘন নিশ্বাসের সাথে ফিসফিসালো কন্ঠে যেনো কিনারা আরও পাগল হয়ে যাচ্ছে।কিনারা সাদিতকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল—না যাবো না, হোক না আমার প্রবলেম তাতে আপনার কি,আমি তো খারাপ,তাই তো আপনি আমাকে ক্ষমা করেননি।তাই আমি আমার মনের কষ্ট গুলো বৃষ্টির সাথে শেয়ার করছিলাম।সরি সাদিত আমাকে ক্ষমা করে দিন না।আমি কখনো আর আপনাকে ওভাবে কিছু বলবো না, আপনাকে কষ্ট দিবো না।একবার আমাকে সুযোগ দিন আপনাকে ভালোবাসার।প্লিজ সাদিত,প্লিজ। আমি যে ভুল গুলো করেছি একটা সুযোগ কি আমাকে দিবেননা।আমার ভুল গুলো শুধরানোর।কি করবো বলেন হাত জোর করবো নাকি পায়ে পড়বো।কিনারা ঘন পল্লভ ফেলে সাদিতের গলা জড়িয়ে ধরলো ওর মুখ টা আরও কিছুটা এগিয়ে নিয়ে গেলো।কিনারার যেনো সাদিতের চোখের মাঝে অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছে।

সাদিত ও যে তার প্রেয়সীর এই চাহনি উপেক্ষা করতে পারছে না।যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না কিনারার বলা কথা গুলো।কিন্তু ওর চোখ যে মিথ্যা বলছে না।আজ কিনারার চোখে তাকে পাওয়ার তৃষ্ণা দেখতে পাচ্ছে।তাকে কাছে পাওয়ার তৃষ্ণা যেটার জন্য তার মধ্যে কাতরতা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছে সাদিত।
কিনারার যেনো বিলম্ব সইছেই না।ইচ্ছে করছে এখনি সাদিতের ঠোঁট জোড়া কে নিজের ওষ্ঠ্য দিয়ে ঢেকে দিতে।কিনারা আস্তে আস্তে সাদিতের চোখ এক হাতে ঢেকে দিয়ে নিজের ওষ্ঠ্যে সাদিতের ওষ্ঠ্যে মিলিয়ে দিলো।শুষে নিতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো সাদিতের ঠোঁটে বৃষ্টির পানি।এই যে ধরেছে মিনিট পাঁচেক হয়ে গেছে কিন্তু কিনারার সাদিতকে ছাড়ার নাম নেই।
এবার সাদিত কিনারাকে ছাড়িয়ে দিলো নিজ দায়িত্বে।যদিও কিনারা ছাড়তে চাইছিলো না কিন্তু সাদিত কিনারার কথা ভেবেই ওঁকে ওর থেকে ছাড়িয়ে দিলো।কি করছো কিনারা। তোমার তো শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।আর এসব কি বলছো টা কি তুমি পাগল হয়ে গেলে নাকি।ভারী নিঃশ্বাসের সাথে বললো সাদিত।

কিনারা কোনো কথা না শুনে আবার ও নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু সাদিতের বাধা পেয়ে থেমে গেলো।আজ যেনো কিনারা লজ্জার মাথা খেয়ে বেহায়া বেশি করে, বেশি করেই বেহায়া হতে ইচ্ছে করছে আর সে করছেও তাই।
তাহলে বলুননা আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন।কি হলো বলুন।বলুন।আর না বললে আমি কিন্তু আবারও সেইম কাজ করবো।
হ্যাঁ বাবা ক্ষমা করেছি তো।সাদিত বুঝতে পারলো,কিনারা শুনবে না ওর কথা,তাই সাদিত কিনারাকে কোলে তুলে নিলো।কোলে তুলে বলল—ঠিক আছে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিতে পারি,কিন্তু তোমাকে আমায় কথা দিতে হবে।কখনো আমার ভালোবাসাকে অবিশ্বাস করতে পারবেনা আর আমাকে কখনো ভুল বুঝবেনা।তুমি আমার লাইফে এমন একটা অংশ হয়ে গেছে যে,তোমাকে কখনো যদি হারিয়ে ফেলি,তাহলে আমি মরেই যাবো।কিনারা তুমি তো আমার নিজের।একান্তই নিজের,,নিজের মানুষ হয়েও যদি না বুঝো তাহলে আমি কোথায় যাবো বলো,কি করলে বুঝবে বলো কতটা ভালোবাসি তোমায় , অনেক ভালোবাসি তোমায়।আই লাভ ইউ সো মাচ।

কিনারাও সাদিতের কথা শেষ না হতেই বলল আই লাভ ইউ টু সাদিত।অনেক অনেক ভালোবাসি আপনাকে,কিন্তু আমি তা কখনো প্রকাশ করতে পারিনা শুধু।আমি আর আমার আল্লাহ জানে কতটা ভালোবাসি আপনাকে।প্রতিটা সেকেন্ড আপনাকে ফিল করি।আপনি যখন আমাকে একটু জন্য ইগনোর করা শুরু করেছিলেন তখন আমার নিশ্বাস- প্রশ্বাস গুলো বিষাক্ত হয়ে উঠেছিলো।একের পর এক কথাগুলো কিনারা বলে যাচ্ছে। আকাশের বৃষ্টির সাথে কিনারার চোখের পানি মিশে যাচ্ছে।কাঁদতে কাঁদতে কিনারা সাদিতের গলা জড়িয়ে ধরলো। প্রেমময় এই চোখের পানি গুলো বড্ড বেশি প্রশান্তি লাগছে।সাদিত বুঝতে পারলো কিনারা আরো বেশি ইমোশনাল হয়ে পড়ছে।তাই কিনারার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে বলে হিসস অনেক কেঁদেছো আর না।আমার মায়াময়ীর চোখের পানি মানায় না।বলে ছাদ থেকে ভিতরে চলে আসলো।কিনারা ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে পড়ার পর সাদিত চলে গেলো ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

সাদিত এরি মধ্যে রিতাকে বলে দিয়েছিলো কড়া করে মশলা চা বানিয়ে দিতে,যেনো কিনারার ঠান্ডা না লাগে।সাদিত বের হতেই রিতা চা রুমে রেখে গেলো,সাদিত দেখলো পুরো রুমে কিনারা নেই।বারান্দায় গিয়ে দেখলো বারান্দার দোলনায় চুপচাপ পা তুলে বসে আছে। সাদিত চায়ের একটা কাফ কিনারাকে দিয়ে,চেয়ার টেনে কিনারার মুখোমুখি সামনে বসলো।কিছুক্ষনের জন্য দুজনেই স্তব্ধ। কারোর মুখে কোনো কথা নেই,দুজনেই চুপচাপ চা খেতে ব্যস্ত।নিস্তব্ধতা কাটিয়ে সাদিত বলে উঠলো আই এম সো সরি কিনারা।
কিনারা চায়ের কাফ রেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,কিসের জন্য।
সাদিত বলল প্রায় একটা দিন তোমাকে ইগনোর করার জন্য।তোমাকে কাঁদানোর জন্য।

আরে আপনি কেন সরি বলছেন।আসলে আমি যা ব্যবহার করেছি আপনার সাথে এইকটু ইগনোর আমি ডিজার্ভ করি।আপনার কোনো দোষ নেই সব দোষ তো আমার,আমি যদি অতগুলো কথা না শুনাতাম তাহলে তো আপনি ওমন করতেন না।মলিন হেসে বলল কিনারা।
এরকম ভাবে বলোনা কিনারা আমি জানি আমি একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম কাল তোমার সাথে।কিন্তু আমি তো অন্য কাউকে ভালোবাসি না,তোমাকে ভালোবাসি তাই তো শুধু তোমার কাছেই যেতে ইচ্ছে করে।
কিনারা সাদিতের ঠোঁটে আঙুল রাখলো—– হিস আজকে এইমুহূর্তের পর থেকে ভুলেও আমরা এসব নিয়ে আর কিছু বলবো না। এসব কথা বলে কেউই মন খারাপ করতে চায়না।যদি কখনো শুনি তাহলে কিন্তু আমি আপনাকে আচ্ছা করে বকে দিবো বলে দিলাম।
সাদিত মুচকি হেসে বলল ঠিক আছে।

কিনারা সাদিতের ঠোঁটের উপর থেকে আঙুল সরিয়ে পুনরায় সাদিতের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দিয়ে সাদিতের কোলের উপর বসে পড়লো।তারপর সাদিতের সারা গলায় চুমু খেতে লাগলো।আবার সাদিতের ঠোঁটের দিকে ঝুঁকে যেতেই -_——-(যা কিছু হোক এরা দুজন প্রেম করতে ভুলবে না?)
সাদিত কিনারা কপালে চুমু খেয়ে বলল—- হয়েছে আজ আর নই।সাদিত নিজের সব ইচ্ছেটাকে কন্ট্রোল করে কিনারাকে বলে উঠলো।
কিনারা ভ্রুরু কুঁচকে বলল কেন।

আজ কোনো কিছু হবেনা।আজ শুধু আমরা গল্প করবো।বলে সাদিত নিজেকে জাগতে দিলোনা।কিনারাকে দূরে সরিয়ে দিলো কারণ সাদিত কিনারার ভুলটা ভাঙানোর জন্য।কিনারাকে এইটুকু বুঝানোর জন্য যে,আমি তোমার শরীরটাকে চাইনা, তোমার ভালোবাসা চাই,।যেখানে কোনো ভুল বুঝাবুঝি থাকবে না।

থাকবে শুধু অফুরন্ত ভালোবাসা।সাদিত কিনারাকে ঘুরিয়ে কোলে বসালো,সাদিত নিজের ডানহাত টা কিনারার কাঁধের উপর দিয়ে কিনারার বুকের উপর রাখলো,তারপর কিনারার বাম কানের কাছে ঠোঁট টা এনে বলল,,,আমি শুধু তোমার পাগল, আমি তোমার সাথে সারাটি জীবন এভাবেই কাটাতে চায়,আর কখনো আমার প্রতি তোমার কোনো অভিযোগ আসতে দিবোনা।কিনারা চোখ বন্ধ করে, সাদিতের এই ফিসফিস কথা গুলো ফিল করছিলো,কথাগুলোর মাঝে কেমন অদ্ভুত এক শিহরণ ছিলো,যা কিনারার শিরদাঁড়া বেড়ে সারা শরীরে শিহরিত হলো,কিনারা ঘোরের মাঝে চলে গেলো।

তারপর কিনারাকে আবার নিজের দিকে ঘুরালো,কিনারা আস্তে আস্তে নিজের চোখ খুলল।কিনারার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলোনা।সাদিত ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কিনারার চোখে চোখ রাখলো।কিনারার চোখে মায়াবী নেশার কষ্ট সাদিতকে অবশ করে দিলো।সাদিত নিজের ডান হাত কিনারার গলায় রেখে বলল, আজ ঠোঁট দিয়ে৷ ঠোঁট কে নয়।আজ মন দিয়ে মনকে চিনতে চায়।কে তুমি আর কে আমি।
কিনারা নিজের ঠোঁটটা হালকা করে নাড়িয়ে বলল—- সাদিত আমি তো আপনাকে আগেই চিনে গেছি।
সাদিত কিনারার চোখের চোখ রেখেই আবদ্ধ হয়ে বলল—নো কিনারা নো।যতটা তুমি ভাবো তার থেকে বেশি ভালোবাসি আমি তোমাকে।
কিনারা সাদিতকে জড়িয়ে ধরে বলল তা আমি জানি সাদিত।

সাদিত তারপর বলল চলো আমার সাথে
কিনারা প্রশ্ন করলো কোথায়।
চলো গেলেই বুঝতে পারবে।
সাদিত কিনারার হাতটা ধরে রাস্তায় নেমে পড়লো।আজ রাতে আমরা বৃষ্টি ভিজা রাস্তায় হাঁটবো।
ওরা হাঁটতে হাঁটতে একটা চায়ের দোকানে এসে দাঁড়ালো।সাদিত চায়ের দোকানের লোকটাকে বলল চা হবে।
মহিলা হেসে বলল হুম আছে।
সাদিত বলল আপনি দুকাপ চা দিন,সাদিতের কথা শেষ না হতেই কিনারা বলল না চাচা আপনি এককাপ চা দিন আমরা শেয়ার করে খাবো।

লোকটি কিনারার কথা শুনে হেসে৷ বলল ঠিক আছে মা।লোকটি মাটির একটা কাপে চা দিলো।বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা
চারপাশে মাটি ভেজা গন্ধ সাথে ধোঁয়া উঠানো গরম চা।কিনারা এক চুমুক দিয়ে বলে উঠলো আহহহ্।
সাদিত তো কিনারাকে দেখতে ব্যস্ত, এমন সময় সাদিত বলে উঠলো—কি হলো খাচ্ছেন না কেন।
সাদিত দেখলো কিনারা ওই চায়ের কাপটা হাত বাড়িয়ে ধরে আছে।
আবার কিনারা বলে উঠলো কি হলো ঠান্ডা হয়ে যাবে খেয়ে নিন।
সাদিত কিনারার হাত থেকে কাপটা নিয়ে কিনারা যেখানে ঠোঁটের স্পর্শ করে খেয়েছে সেখানে ঠোঁট লাগিয়ে চুমুক দিলো।সাদিত আয়েশ করে আরেক চুমুক দিতেই কিনারা সাদিতের হাত থেকে চায়ের কাপটা কেঁড়ে নিলো।আপনাকে পুরোটা খেতে বলেছি আমাকেও খেতে দিন।

এদিকে দোকানের লোকটা হা হয়ে ওদের কান্ড দেখছিলো।আর মুচকি মুচকি হাসছিলো।সাদিত লোকটাকে টাকা দিতেই লোকটি বলল — বাবা তোমারা বিয়ে করেছো,
সাদিত মুচকি হেসে বলল — জি চাচা দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
লোকটি হেসে হেসে বলল হুম বাবা,আর তোমারা চিরকাল তোমাদের সম্পর্কটা এমন থাকে, সারাজীবন এমনি হাসি খুশি থেকো।কেউ কখনো আবার পাল্টে যেওনা।
সাদিত আর কিনারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে,সাদিত মুচকি হেসে কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিনারা ইশারা দিয়ে বারণ করে দিলো।তারপর লোকটার কাছ থেকে বিদায় নিলো।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ৩০

রাত নয়টা বাজে,বৃষ্টির দিন জন্য আশেপাশে তেমন লোকজন নেই বললেই চলে,কিন্তু একটু পরপর রাস্তা দিয়ে ব্যস্ত গাড়ি ছুটে চলেছে।কিনারা আর সাদিত হাঁটতে হাঁটতে একটা লেকের পাড়ে এসে দাঁড়ালো।সাদিত একহাত দিয়ে কিনারার কাঁধ টার উপর হাত রাখলো ,সাদিত হাত রাখতেই কিনারা ওর একহাত দিয়ে সাদিতের কোমড়ের একটু উপরে রেখে জড়িয়ে ধরলো।সাদিত কিনারার এমন কাজে মুচকি হাসলো।
বৃষ্টির দিন জন্য রাস্তার আলোগুলোও ঠিকঠাক মতো জ্বলছেনা,মিটমিট করে হালকা আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে চারপাশ,আলোটা বেশি না থাকলেও চারপাশের সব ভালোয় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।তবে এই আবছা আলোয় যেনো পরিবেশটা বেশি ভালো লাগছে ।সন্ধ্যায় বৃষ্টি হবার পর পরিবেশটা যেনো সজাগ,সতেজ হয়ে উঠেছে,ওরা দুজনে রাতের লেকের সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত,একটু পরপর দমকা হাওয়ার ঝাপটা এসে গায়ে লাগছে।

এমন সময় বাতাসে কিনারার চুল গিয়ে আটকালো ওর সাদিতের শার্টের বাটনের সাথে।কিনারা সাদিতের দিকে হয়ে ওর চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।কিন্তু কিনারা ছাড়াতে পারলো না ওর দিক দিয়ে উল্টা হওয়াই কিনারার অসুবিধা হচ্ছে চুলটা ছাড়াতে।কিনারা সাদিতের দিকে তাকালো —দেখলো সাদিত ওরদিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে,কিনারা মুচকি হেসে বলল— কি হলো আপনি এভাবে তাকিয়েই থাকবেন নাকি চুলটা ছাড়িয়ে দিবেন।

সাদিত কিনারার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলো কিনারা যে ছাড়াতে পারছেনা এটা সাদিত খেয়ালিই করেনি,সাদিত কিনারার কথায় ধ্যান ভেঙে বলল- হ্যাঁ হ্যাঁ এখনি খুলে দিচ্ছি। সাদিত নিজের শার্টের বোতাম থেকে কিনারার চুল আস্তে করে ছাড়িয়ে দিলো।
দুজনে মিলে আবার হাঁটতে শুরু করলো লেকের পাড়ে,রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় গাছ থেকে টুপটাপ করে পানির ফোঁটা এসে ওদের গায়ে পড়ছে ।হঠাৎত সাদিত রাস্তার পাশে একটা গাছে সাদা ফুল দেখতে পেলো,সাদিত একটা লম্বা লাফ দিয়ে একগুচ্ছ ফুল পেরে আনলো।তারপর দুজনেই গাছে জড়িয়ে থাকা বৃষ্টির পানিতে সঞ্চিত হলো।
কিনারা রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি সাদিতের হাতের ফুল দেখে চুপ হয়ে গেলো।
সাদিত ফুলগুলো কিনারার কানে গুঁজে দিয়ে,পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল—এবার একদম আমার মায়াময়ী লাগছে।ইউ আর রিয়েলি সুইট হার্ট,ইউর লুকিং সো গর্জিয়াস।
কিনারা একটু লাজুক হাসি দিয়ে বলল থ্যাংকস বলে সাদিতের হাতটা ধরলো,চলুন হাঁটি এবার আমার খুব ভালো লাগছে তারপর দু’জনে চুপচাপ হেঁটে চলল।

পরেরদিন রাতে
সাদিত সেই সন্ধ্যার একটু পর থেকেই কিনারাকে ধরে এনে নিজের পাশে শুইয়ে রেখেছে।কিনারা উঠতে চায়লে উঠতে দিচ্ছে না,বলছে শুয়ে থাকতে হবে।সাদিত লাইট ওফ করে রেখেছে। কিছুক্ষন শুয়ে থাকার পর কিনারা বিরক্ত হলো।এই অসময়ে কে শুয়ে থাকে বলুন তো।
সাদিত কিনারার কথা না শুনে বলল চুপচাপ শুয়ে রেস্ট নাও।
কিন্তু কিনারা ভালো লাগছে না এইসময়ে শুয়ে থাকতে।আর আপনি কিনা—–এমন সময় কিনারা খেয়াল করলো জানালা দিয়ে চাঁদের কিরণ এসে রুমে ডুকেছে।পুরো রুমটা চাঁদের আলোয় আলোকিত।কিনারা জানালার থাই গ্লাস দিকে তাকালো দেখলো চাঁদ টা আজ অনেক বড়ো,আর সুন্দর হঠাৎই কিনারা মনটা খুশিতে ভরে গেলো।কিনারা এতক্ষন খেয়ালই করেনি বাইরে এত্তো সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে।কিনারা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল চলুন না চাঁদ দেখতে ছাদে যায়।

সাদিত গম্ভীর কণ্ঠে ধমকের স্বরে বলে উঠলো।না চুপচাপ শুয়ে থাকো।
কিনারা সাদিতের কথায় ঠোঁট উল্টিয়ে বলল— আপনি কি জানেন —???
সাদিত কিনারার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল— কি
আপনি একটা অসভ্য পঁচা বর।শুধু অসভ্য না চরম পর্যায়ের অসভ্য বর।
সাদিত কিনারাকে নিজের বুকের উপর টেনে এনে বলল— জানি, প্রতিটা ছেলেই তার বউ প্রেমিকার কাছে অসভ্য। আর তুমি জানো কি মেয়েরা অসভ্য ছেলে বেশি পছন্দ করে।

কিনারা মুখ মুখ ভেঙিয়ে বলল মোটেও না।মেয়েরা অসভ্য ছেলেদের পছন্দ করেনা।
তার মানে তুমি আমাকে পছন্দ করোনা সাদিত বলল
কিনারা হা হয়ে বলল আমি কখন বললাম, আমি আপনাকে পছন্দ করিনা।মিথ্যা কেন বলছেন।কিনারা মন খারাপ করে বলল
তুমিই তো বললে বললে মেয়েরা অসভ্য ছেলেদের পছন্দ করে না,তুমিও তো মেয়ে তাই বললাম আরকি।
আপনি সবসময় আমাকে আপনার কথার প্যাচে ফেলান।মুখ ফুলিয়ে কিনারা বলে উঠলো।
ও আচ্ছা তাহলে ধরে নিবো তোমার আমাকেও পছন্দ আর অসভ্যতমাকেও,এখন একটু তাহলে অসভ্যতামো করি।কি বলো।
কিনারা মাথা নেড়ে না করে সরে যেতে নিলেই, সরে যাওয়ার আগেই সাদিতের ঠোঁট কিনারার ঠোঁট দুটোকে নিজের আওতায় নিয়ে ফেলেছে।কিনারাও সমান তালে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে।মিনিট পাঁচেক পর কিনারা ছাড়া পেয়ে সাদিতের বুকে মাথা রাখলো দুজনেই জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে।কিনারা সাদিতের বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেলো।হঠাৎই কিনারার মনে হলো ও যেনো হাওয়ায় ভাসছে,চোখ মেলো দেখলো ও সাদিতের কোলে আর সাদিত ওকে নিয়ে সিড়ি বেড়ে ছাদের দিকে যাচ্ছে।
আরে সাদিত আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।হিস চুপ থাকো।

উফফ সেই সন্ধ্যার পর থেকেই উনাকে কিছু জিজ্ঞেসা করলেই,ধমক দিচ্ছে না হয় — চুপ থাকো চুপ থাকো বলছে।ভাল লাগে না।যান আপনার সাথে আর কোনো কথায় বলবো না।মুখ ফুলিয়ে কিনারা বলে উঠলো।
সাদিত হালকা হেসে উত্তর দিলো তুমি তো সেদিন আমাকে অপমান করেছিলে তাই তার প্রতিশোধ নিবো, তোমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবো।হিহি
কিনারা সাদিতের এমন উত্তরে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলো,আসলেই সেদিন সাদিতকে অনেক অপমান করেছিলো সত্যিই এটার প্রতিশোধ নিচ্ছে —-না আমার উনার প্রতি বিশ্বাস আছে,যাকে ভালোবাসা যায় তাকে নির্দ্বিধায় তার সাথে যাওয়া যায়,তবুও কেমন জানি একটা খুঁতখুঁত ভাব রয়েই গেলো,সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে তো কিনারা বলেই দিলো মানে কি,,আপনি আমাকে ফেলে দিবেন।
সাদিত আবারও বলল হিস চুপপ।সাদিত কিনারাকে কোলে করে ছাদে নিয়ে এলো।

কিনারাকে ছাদে দাঁড় করাতেই
হঠাৎত ছাদের লাইট গুলো জ্বলে উঠলো।
পিছন থেকে সাদিত কিনারাকে জড়িয়ে ধরে বলল হ্যাপি বার্থডে বউ।মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দা ডে।হ্যাপি বার্থডে মাই লাভ।
আজ আমার বার্ডডে আপনি জানতেন
সাদিত কিনারার মাথায় নিজের মাথা দিয়ে ঠুকা দিয়ে বলল ইয়েস মাই লাভ।
কিনারা পুরো ছাদ ঘুরে ঘুরে ছাদের ডেকোরেশন দেখলো
,দেখতে দেখতে বলল ওয়াও সাদিত,ইট’স লুকিং আমেজিং।
সাদিত কিনারাকে ছেড়ে বলল —তোমার থেকে বেশি না।

কিনারা সাদিতের দিকে ঘুরে থ্যাংকস বলতে যাবে–কিন্তু সাদিত কিনারার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে গিভ মি ওয়ান হাগ প্লিজ।
কিনারা জড়িয়ে ধরলো সাদিতকে।কিনারা মুখটা গুঁজিয়ে দিলো সাদিতের বুকে।সাদিতের বুকে মাথা রাখতেই সাদিত হেয়ার ব্যান্ডটা খোলে দিলো। সাদিতের৷ চোখের সামনে এখন কিনারার অগ্রস খোলা চুল।নাকে মনমাতানো শ্যাম্পুর ঘ্রাণ।
কিনারা থিরথির করে কাঁপছিলো।সাদিতের না কাটা দাঁড়ি ঘষে যাচ্ছিলো কিনারার কাঁধে,গলায়,ঘাড়ে এবং কি গালে।
বেশকিছু ক্ষন পর সাদিত কিনারাকে ছেড়ে বলল চলো কেকটা কাটো।
ওয়াও চকলেট কেক।আপনি এসব কখন করলেন।
এইতো সেই সন্ধ্যা পর থেকে রিতা আর ডেকোরেশনের লোক মিলে সাজিয়েছে।তাই তো তোমাকে রুমে আটকে রেখেছিলাম।ডেকোরেশনের লোক আসা যাওয়া করছিলো তোমাকে আটকে না রাখলে তো দেখে ফেলতে।তখন তোমাকে সারপ্রাইজ দিতাম কি করে।

কি দরকার ছিলো এতো কিছু করার।
কই এতো কিছু জাস্ট একটু এটা তেমন কিছুই তো করা হয়নি।বিয়ের পর এটা ফাস্ট তোমার জন্মদিন।আর দেখো আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারলাম না।তাই আমার পক্ষ থেকে এই ছোট্ট একটা প্রচেষ্টা। তোমার পছন্দ হয়েছে।
কিনারা খুশিতে সাদিতের গালে একটা চুমু বসিয়ে দিলো।হ্যাঁ অনেক পছন্দ হয়েছে।থাঙ্কু থাঙ্কু থাঙ্কু এতগুলো থাঙ্কু।
সাদিত কিনারার হাতটা ধরে কেকটা কাটালো।এবং একটু খানি কেক কিনারাকে খাইয়ে দিলো।কিনারা সাদিতের হাত থেকে বাকি কেকটা নিলো।সাদিতকে খাওয়ানোর জন্য কিন্তু তা সাদিতকে না খাইয়ে সাদিতের গালে লাগিয়ে দিলো।
সাদিত কপাল কুঁচকে কিনারাকে বলল এটা কি হলো—-

কিনারাও সাদিতের সাথে সাথে বলল — এটা কি হলো বলে সাদিতের গাল থেকে কেকটা খেয়ে বলল— এটা হলো হিহি।
সাদিত কিনারাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল —- না হবে না তুমি আমাকে কেক খাওয়ানোর বদলে নিজে খেয়ে নিয়েছো,এটা হবে না, আমাকেও খাওয়াও।
কিনারা সাদিতকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলল ওকে ওয়েট এখনি খাওয়াচ্ছি।
বলে কেকের কিছু অংশ কেটে নিয়ে সাদিতের সামনে ধরলো।সাদিত দুহাতে কিনারার কোমড় আঁকড়ে ধরে বলল — এবার খাওয়াও।
কিনারা হেসে বলল আচ্ছা।বলে সাদিতের মুখের সামনে কেকের টুকরো টা ধরলো —সাদিত একটু খেয়ে,কপাল চামড়া ভাজ করে নাক কুঁচকালো,নাক মুখ কুঁচকিয়ে বলল কেকটা কেমন একটা,ভালোনা।স্বাদটাও কেমন জানি।
কিনারা আবার একটু খেয়ে বলল— কই ঠিকই তো আছে,চকলেট ফ্লেভার এর কেক এমনি হয় তো।কই খারাপ অনেক মজা বলে আবার একটু খেলো।

সাদিত দুষ্টু হাসি দিলো—-কিনারার হাতটা একহাত দিয়ে তুলে ধরলো মুখের সামনে,কিনারার হাত ধরে নিয়ে কিনারার ঠোঁটের উপর কিছু কেক এর ক্রিম লাগালো।
তারপর সাদিত নিজের মুখটা কিনারার মুখে কাছে নিয়ে,নিজের জিব্বা দিয়ে লেহন করে নিলো কিনারার ঠোঁট দুটো।
কিনারা এতে লজ্জায় কেঁপে উঠলো।

সাদিত কিনারার হাতটা ধরে মুখের সামনে নিয়ে কিনারার হাত থেকে বাকি অংশ টুকু খেতে শুরু করলো।উম্ম আসলেই কেকটা অনেক মজার।কিন্তু এতোক্ষন স্বাদ টা কোথায় যেনো চাঁপা পড়ে ছিলো।ওহ হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি,তোমার ঠোঁটের ছোঁয়াই কেক এর স্বাদটা অতুলনীয় হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে খাবারের টেস্ট বাড়ানোর জন্য তোমার ঠোঁটের সাথে এপ্লাই করতে হবে।
কিনারা সাদিতের এমন কথায় আবারো লজ্জা পেলো।
ও সাদিতকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতেই সাদিত বলে উঠলো—–আরে আরে যাচ্ছো কই।এখনো তো খাওয়া বাকিই আছে,শেষ করতে দাও।

কিনারা নিজের হাত দেখিয়ে বলল কই হাতের সব কেক তো খাওয়া শেষ।দাঁড়ান আবার কাটছি।বলে ঝুঁকতে গেলেই সাদিত আবার বাঁধা দিয়ে বলল—- আরে হাতের গুলোই তো এখনো শেষ হয়নি।বলে কিনারার আঙুলে লেগে থাকা ক্রিমগুলো খাওয়ার জন্য কিনারার একটা একটা করে আঙুলগুলো মুখে পুরে নিলো।আর আঙুল গুলো চেটেপুটে খেতে শুরু করলো।বলল এবার কমপ্লিট।
কিনারা যেনো এতক্ষন একটা ঘুরের মধ্যেই চলে।গিয়েছিলো।নিজেকে সামলে নিয়ে কিনারা বলল এমা ছি এভাবে কেউ খাই।
হুম তোমার বর খায়।বলে আবার কিনারা ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।।

পরের দিন রাতে সাদিত ছোট খাটো একটা পার্টির আয়োজন করলো।পার্টি হচ্ছে সাদিতের বাংলোতে।জাস্ট অফিসের লোকজন।
কিনারা রুমে গেলো রেডি হওয়ার জন্য।বাথরুমের দিকে যেতে ধরে ও আবার ফিরে এলো দেখলো বিছানার উপর একটা বক্স।কিনারা বক্সের কাছে গেলো,বক্সটা খুলতেই কিনারা দেখলো ভিতরে একটা ব্লাক কালারের শাড়ি।সাথে একটা কাগজ। কাগজ টা খুলতেই দেখলো সাদিতের হাতের লেখা একটা নোটস্।হেই সুইট হার্ট।চটপট এটা পড়ে নিচে চলে এসো।আইএম ওয়েটিং ফর ইউ।
কাগজটা পড়ে মুচকি হেসে শাড়িটা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।
সবাই টাইম মতো একসাথে এলো।পার্টিতে সবাই কিনারাকে উইস করলো।সারা পার্টি উইস করা গিফট পাওয়া, কেক কাটা খাওয়া দাওয়া এসবের মাঝে চলে গেলো।

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ২১+২২+২৩+২৪+২৫

খাওয়ার সময় এক স্টাফের ওয়াইফ খেতে পারছিলোনা।উনার কোলে বাচ্চা ভিষন রকমের কান্না শুরু করে দেয়।কিনারা বেশ কিছুক্ষব ধরে এটা লক্ষ্য করছে।না পেয়ে মহিলার কাছে গেলো,,আপু বাবুকে দিন আমাকে আর আপনি খেয়ে নিন। আমি ওকে একটু ঘুরিয়ে আনছি।মহিলা যেনো স্বস্তি পেলো ও কিনারাকে বাবুটাকে দিয়ে দিলো।
কিনারা বাবুটাকে নিয়ে ঝাঁকতে ঝাঁকতে সাদিতের পাশে এসে দাঁড়ালো —-সাদিত একটা লোককে বিদায় দিয়ে কিনারার দিকে তাকালো—- এটা কার বাচ্চা বউ।কিনারা বলল ওইযে ওই আপুটার। আসলে উনি বাচ্চা কোলে নিয়ে খেতে পারছিলোনা,আমার কাছে বিষয়টা খারাপ লাগছিলো,তাছাড়া আমার তো খাওয়া শেষ তাই বাবুটাকে কোলে নিলাম।
ও আচ্ছা বলে সাদিত বাবুটাকে কোলে নিলো,বাচ্চা কখনো কোলে নেয়নি, তবুও আজ কেন জানি নিতে ইচ্ছে করলো সাদিতের।সাদিত বাবুটাকে কোলে নিয়ে কথা বলছিলো—- আর বাবুটা হুম হা বলে আওয়াজ করছিলো।সাদিত যেনো এতে মহা খুশি।সাদিত বাবুকে নিয়ে৷ ঘুরে ঘুরে খেলতে লাগলো। সাদিতকে এরকম খুশি দেখে কিনারা সাদিতের পাশে এসে দাঁড়ালো — বলল আপনার বেবি অনেক ভালো লাগে।

সাদিত বাবুটাককে কিস করে বলল না আগে কখনো বাচ্চা কোলে নেয়নি,কিন্তু দেখো এই বাবুটা কত্ত কিউট দেখেই কোলে নিতে ইচ্ছে করলো।আর কেমন দুষ্টুমি করে দেখো আর কেমন হুম হাও বলে।বলে সাদিত বাবুটার সাথে খেলতে শুরু করলো।
সাদিতকে এতো খুশি দেখে কিনারা বলল—-বার্ডডে গিফট হিসেবে আপনি আমাকে একটা বাচ্চা দিবেন সাদিত।
সাদিত বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে খেলতে খেলতে বল—- কি বলছো তুমি মাথা ঠিক আছে।ভেবে বলছো তো।
কিনারা মাথা নেড়ে বলল হ্যাঁ আমার মাথা ঠিক আছে, আর ভেবেই বলছি।
সাদিত হেসে উড়িয়ে দিলো।
এখন হাসলেও আমি যেটা বললাম মাথায় রাখবেন।

দ্যা বিউটি অফ লাভ শেষ পর্ব