দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ১৬+১৭+১৮+১৯+২০

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ১৬+১৭+১৮+১৯+২০
লেখিকাঃরাকিবা ইসলাম আশা

কিনারা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে সাদিত তখনো কাজে ডুবে আছে।
কিনারা আয়নার সামনে গিয়ে চুল টা ঠিক করে ওড়না টা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।তারপর আবার রুমে উঁকি দিলো—-এইবার কিনারার কান্না পেয়ে গেলো।আমি রুম থেকে বেরিয়ে অব্দি গেলাম আর উনি আমার দিকে একবার ও তাকানোর প্রয়োজন মনে করলেন না।
থাকুন আপনার কাজ নিয়ে মনে মনে সাদিতকে বকতে বকতে চলে গেলো।

সাদিত পাশে তাকিয়ে দেখলো কিনারা নেই, মনের ভুল ভেবে আবার তাকালো।দেখলো সত্যিই কিনারা নেই। আশ্চর্য মাত্র কিছুক্ষন আগে বালিশের উপর কিনারাকে শুইয়ে, একটা ইম্পর্টেন্ট মেইল আসছে তা চ্যাক করতে ছিলাম এরমাঝে কই গেলো।ওয়াশরুমে যায়নি তো।কিন্তু না ওয়াশরুমেও নেই। তারপর সাদিত ল্যাপটপ টা অফ করে নিচে চলে গেলো,গিয়ে দেখলো কিনারা কোথাও নেই। তারপর সাদিত ছাদের দিকে পা বাড়ালো।

সন্ধ্যে হতেই একে একে ব্যস্ত নগরীর সব আলো গুলো জ্বলে উঠতে লাগলো।।রাস্তা দিয়ে গাড়ি গুলো রঙিন আলোয় ছুটছে।অবশ্য আকাশ আজ মেঘের গুমুট বেঁধে আছে, যেকোনো সময় বর্ষণ হতে পারে।হঠাৎই এতো বাতাস শুরু হলো মনে হচ্ছে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।কিনারা ছাদের রেলিং এ দুহাত দিয়ে ধরে দাঁড়ালো। আর গুন গুন করে বলতে শুরু করলো————–
তুমি চাইলে বৃষ্টি, মেঘও ছিলো রাজি,
অপেক্ষা সুদূর বর্ষনের।
মাতাল হাওয়া বইছে, দূরের পাখি গাইছে গান।
বৃষ্টি তোমার আহ্বান।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হঠাৎই কিনারা কাঁধে কারোর ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো,তারপর মাথা পিছনে ঘুরে তাকাতেই কারোর বুকের সাথে মাথা টা লেগে আছে।সেই বুকের হার্টবিটের ধুকবুকানো কিনারা শুনতে পাচ্ছে,কিনারার আর বুঝতে বাকি রইলো না মানুষটা কে।
সাদিত বলল কখন ছাদে এলে,আমাকে বললে না কেন আমিও আসতাম তোমার সাথে ।তারপর সাদিত আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল–কিনারার হাত ধরে টেনে বলল– কিনারা বৃষ্টি শুরু হবে নিচে চলো—-
কিনারা কথা শুনে ও না শুনার মতো করে,সাদিতের থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
সাদিত কিনারার হাতটা আবার ধরে বলল—-কি হলো চলো, বৃষ্টি নামবে —- ভিজবা তো তখন আবার তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে ।কিছুটা রাগ নিয়ে কিনারাকে বলল—সাদিত রেগে বললেও কিনারার মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো।
কিনারা রাগী লুক নিয়ে বলল— আমি যাবো না।

সাদিত কিনারার হাতটা ছেড়ে বলল— আচ্ছা ঠিক আছে যেতে হবে না।
কিনারা মনে মনে ভাবলো আজব লোক তো আমি যাবোনা বলেছি জন্য উনি আমাকে জোর করবে না।ওকে করতে হবে না।কেন করবেন কে হয় আমি। বুঝি তো ওসব ভালোবাসা টালোবাসা কিচ্ছু নেই, সব মিথ্যে।উনি এসব মৌহের জন্য বলে, মৌহ যতদিন আছে উনি আমার কাছে ততদিনই আসবে।তারপর মৌহ যেদিন শেষ হয়ে যাবে তখন উনি চলে যাবেন।এসব ভাবতেই কিনারার চোখ ছলছল করতে লাগলো।

তারপর কিনারা আবার ভাবলো আমি এতো ইমোশনাল হয়ে পড়ছি কেন।উনি যা ইচ্ছে করুক আমার কি।আমার যতটুকু দায়িত্ব সেটাই না হয় পালন করি। এতো ভেবে আমার কাজ নেই ।উনি আমাকে এতোগুলো টাকা দিয়ে হেল্প করলো আমি উনার জন্য এইটুকু করতেই পারি।বলে আবার রেলিং ধরে সামনে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাতের পিঠ দিয়ে চোখের পানিটা মুছলো।
সাদিত কিনারার কাছে গিয়ে কিনারাকে দুহাতে কোমড় আঁকড়ে ধরে কিনারার কাঁধে,পিঠে ঠোঁট বুলিয়েই যাচ্ছে।
ঠান্ডা বাতাস তার সাথে সাদিতের উষ্ণ স্পর্শ, কিনারা আর সহ্য করতে না পেয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।কিনারা কিছু না বলে চুপ করে রইলো।

সাদিত কিনারার কাঁধে মুখ ডুবিয়ে দিতেই, কিনারা আস্তে আস্তে ওর চোখ দুটো খুলল—-
কিনারার হৃদস্পন্দন টা তখনো এতো জুড়ে ছুটছিলো যে,এর থেকে বেশি ছুটলে হয়তো কিনারা তা সহ্য করতে পারবে না।একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে সামনের আকাশে দিকে তাকিয়ে সাদিতকে উদ্দেশ্য করে বলল —-
মিস্টার চৌধুরী আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি।
সাদিত কিনারাকে আঁকড়ে ধরেই বলল— হুম সিওর।হোয়াই নট।
কথাটা শুনে কিনারা একটু আড় চোখে পিছনে দেখে আবার আকাশের দিকে তাকালো।এতো জন থাকতে আপনি কেন আমাকেই কেন বেছে নিলেন বিয়ে করার জন্য। হোয়াই মি।কিনারার চোখে মুখে তখনো ভাবনা আর কৌতুহলের ছাপ——–

কিনারা আবার প্রশ্ন করলো —-আপনার মতো সম্মানীয় ব্যক্তির কাছে আরও অনেক অপশন রয়েছিলো।তার সত্বেও কেন আমাকেই বিয়ে করলেন???? কিনারা নিজের মনে মনে ভাবতে লাগলো মিস্টার চৌধুরী কেনই বা ওকে বেছে নিলো,এর পিছনে কারণ টা কি ছিলো।মিস্টার চৌধুরী জায়গায় যদি অন্য কেউ থাকতো তাহলে কোনো রেন্ডম মেয়েকে বেছে নিতো।কিন্তু কিনারা জানে ওকে সুন্দর দেখতে,সেটা নিয়ে বরাবরই কিনারা আত্মবিশ্বাসী। তা সত্বেও কিনারার মনে হয়নি ওর এমন সৌন্দর্য দেখে সাদিতের মতো অতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে কিনারার মতো একটা মেয়েকে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়তে পারে।সাদিতের মতো এমন পার্সোনালিটির মানুষের অসংখ্য সুন্দরী মেয়ে থাকার কথা। তাহলে তো৷ মিস্টার চৌধুরী অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখেছে।তা সত্বেও মিস্টার চৌধুরী আমাকে কেন বেছে নিলো।কিনারার মনে এসব চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো।

কিনারার কথা শুনে সাদিত কিনারার দিকে আড় চোখে তাকালো —- তুমি সত্যিই জানতে চাও।
কিনারা মাথা নেড়ে বলল হ্যাঁ জানতে চাই —-
সাদিত বলতে শুরু করলো—-তুমি একমাত্র মেয়ে যাকে দেখে আমার ভালো লেগেছিলো।আমি আমার লাইফে যতগুলো সুন্দরী ও যোগ্যতা সম্পূর্ণ মেয়ে দেখেছি সবাই,আমার দিকে অন্য চোখে তাকিয়ে থাকতো,এবং আমার সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করতো।কিন্তু তুমি যেদিন আমার এনজিও হয়ে আমার অফিসে সাহায্যের জন্য এলে,একমাত্র তুমিই যে মেয়ে যার সামনে এত্তো হ্যান্ডসাম ও এত্ত হাই প্রফেশনাল ব্যক্তি থাকা সত্বেও, সে ব্যক্তিকে দেখেও তুমি একবারও আমার দিকে সেভাবে তাকিয়ে কথা বলোনি।প্রত্যেকটা কথা তুমি আমার সামনে মাথা নিচু করে বলেছো। তারপর হুট করে আমার মাথায় বিয়ের ব্যাপারটা এলো আর তোমাকে আমাকে বিয়ে করার কন্ডিশন দেয়। এখন তুমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে আমার কাছে এলে ভালো লাগে না। এরকম আমি আগে কখনো ফিল করিনি।

তাই বলে টাকার এমাউন্ট ধরার মতো একটা কন্ডিশন দিলেন।যে আমি আপনাকে বিয়ে না করলে আমার ভাইয়ের অপারেশন করতে সাহায্য করবেন না এরকম একটা কন্ডিশন কেন??আপনি তো এটাও বলতে পারতেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন বা প্রথম দেখাই আমাকে ভালো লেগেছে আমাকে কিংবা বিয়ে টা তো পরেও করতে পারতেন তাই না।
কারণ আমার এটা মনে হয়নি, আমি যদি বলতাম তোমাকে,, আমি এক দেখায় তোমাকে ভালো লেগেছে, এটা তুমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে না,ভাবতে আমার মৌহ এটা।আর পরে তোমাকে বিয়ে করতে চাইলেও তুমি রাজি হতে না।যেমন এখন তোমার মনে হয় তুমি আমার শুধু মোহ।আমি এটা বুঝতে পারি যে তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাও এই সব ভেবেই তাই না।

কথা গুলো শুনে কিনারা চুপ করে রইলো — ওর মুখ থেকে একটা কথা ও বের হলো না।কিনারা নিরব হয়ে ভাবলো তাহলে সত্যিই মিস্টার চৌধুরীর আমাকে ভালো লাগে।একটু চুপ থেকে কিনারার আবার বলল — আপনার আমাকে বিয়ে করা উচিত হয়নি।আপনার উচিত আপনার মনের মতো কাউকে বিয়ে করার।এখন আপনি সেরকম কাউকে না পেলেও—-ভবিষ্যতে আশা করি পেয়ে যাবেন।
সাদিত কিনারার কথা শুনে রেগে গেলেও সেটা প্রকাশ করলো না তাই চাপা ঠোঁটে বলল মনের মতো সেটা আবার কিরকম —-আর বুঝবো কি করে সে আমার মনের মতন।কিনারাকে ছেড়ে হাত দুটো পকেটে ঢুকিয়ে কিনারার দিকে প্রশ্নসূচক করে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।

কিনারা৷ মাথা নিচু করে বলল— আজ্ঞে মনের মতোন মানেএএএ —-আপনি যখন তাকে মিস করবেন, তাকে দেখার পর আপনি এতোটাই খুশি হবেন, সেটা আপনার চোখে মুখে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে।তাকে দেখা মাত্রই আপনি তার কাছে আসতে চাইবেন।আপনি যখন কোনো ব্যাপারে খুব খুশি হবেন।সেটা আপনি আগে তাকে জানাতে চাইবেন।যখন আপনি খুশি থাকবেন না।সেটাও আপনি সবার আগে তাকে জানাবেন।আপনার সমস্ত সুখ দুঃখের কথা তার সাথে শেয়ার করবেন।যদি আপনার তাকে মন থেকে ভালো লাগে তাহলে তাকে দেখলেই আপনার হার্টবিট বেড়ে যাবে।আপনি নার্ভাস হয়ে যাবেন।তখন আপনার চোখ মুখ ব্লাস করতে করতে লাল হয়ে যাবে।এতোগুলো কথা একসাথে বলতে বলতে কিনারার গলা শুকিয়ে উঠলো।ও কাশতে শুরু করলো।
সাদিত কিনারার কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল রিলেক্স, দম ফেলে কথা বলো।আমি আছি এখানে কোথাও যাচ্ছি না যে সব এখনি বলে ফেলতে হবে।বলে মুচকি হাসলো।

কিনারা কাশতে কাশতে ভাবলো—-এ কথা গুলো আমি কি মরতে যে বলতে গেলাম।কারণ মিস্টার চৌধুরীকে দেখে তো আমার নিজেরই হার্টবিট বেড়ে যায়।উনাকে দেখলেই আমি নার্ভাস হয়ে যায়।তার মানে কি আমি মিস্টার চৌধুরী কে পছন্দ করি—-এসব ভেবে কিনারা আরো কাশি বাড়তে শুরু করলো। না না না এ হতে পারে না।কাশতে কশতে একটু শান্ত হতেই সাদিতের হ্যান্ডসাম মুখের দিকে তাকাতেই আবার কিনারার হার্টবিট বেড়ে গেলো।তারপর আমতাআমতা করে বলল আমি কিছু মিন করে বলতে চাই নি।আমি নিজের মনে এতো গুলো কথা বলে ফেলেছি।ডোন্ট টেক এ পার্সোনালিটি। আপনি এটা নিয়ে এতো ভাববেন না প্লিজ।
সাদিত মুচকি হাসতে হাসতে কিনারার দিকে তাকিয়ে ছিলো।তারপর খুব গম্ভীর ভাবে বলল —তোমার কথা যদি কিছু হলেও সত্যি হয় —- তাহলে এটাই দাঁড়ায়, আমার তাকে মন থেকে ভালো লাগে। তাই তো।

সাদিত কিনারার কাছে গিয়ে ওর হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে কিনারার চোখের দিকে তাকিয়ে বললল —– আমি তোমাকে মিস করি।তোমার কাছে গেলেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। যখন তোমাকে আমার সামনে দেখতে পায়না তখন অস্থির হয়ে যায়।তোমাকে দেখলেই আমার তোমার কাছে যেতে ইচ্ছে করে, আদর করতে ইচ্ছে করে,, ভালোবাসতে ইচ্ছে করে যতোটা ভালো বাসা যায় তার থেকেও বেশি উজাড় করে ভালোবাসতে মন চাই। তাহলে কিনারা এর মানে কি তোমাকে আমার মন থেকে ভালো লাগে।প্লিজ বলো।আমি তোমার মুখ থেকে এই উত্তর টা জানতে চাই।আমার প্রশ্নের উত্তর কি আছে তোমার কাছে??

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ১৭

কথা গুলো বলার সময় সাদিত কিনারার মুখের এতোটাই কাছে চলে এসেছিলো যে, সাদিতের মুখের গরম নিশ্বাস গিয়ে আঁছড়ে পড়ছে কিনারার ঠোঁটের উপর।
এসব শুনে কিনারা এতোটাই ঘাবড়ে গিয়েছিলো যে,ও আসলে এসব কিছু ভাবেনি।কিনারা ভেবেছিলো—সাদিত ওকে কন্ডিশন দিয়ে বিয়ে করেছে এটার বিনিময়ে কিনারাকে ইউস করবে হয়তো।কিনারাও এটা মেনে নিয়েছিলো।কিন্তু আজ কিনারার ধারণা কি ভুল,,,মিস্টার চৌধুরী যা বলেছে তা যদি সত্যি হয়।কিনারা খুব অবাক হয়ে কিছুক্ষনের জন্য চুপ করে রইলো কিনারার চোখ মুখ লজ্জায় এতোটাই লাল হয়ে গেলো,মনে হলো কেউ ওর মুখে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সে অবস্থাতে সাদিতকে জিজ্ঞাসা৷ করলো,,,মিস্টার চৌধুরী আপনি কি আমার সাথে ইয়ার্কি করছেন। প্লিজ ইয়ার্কি করবেন না।এটা ইয়ার্কি করার সময় নয়।

সাদিত কিনারার মুখ টা নিজের দু’হাতের মধ্যে নিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল–কিনারা আমি একদম ইয়ার্কি মারছিনা।আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমি ইয়ার্কি মারছি।সাদিত একটু চুপ করে থেকে —– আবার বলল—কিনারা আমি শুধু তোমাকেই চাই।তোমার সাথে সারাটা জীবন কাটাতে চাই।সারা জীবন তোমাকেই ভালোবাসতে চাই। আমার অন্য কাউকে চাই না৷।
কথাটা শুনে কিনারা যেনো আকাশ থেকে পড়লো।সে আদৌও ঠিক শুনছে কিনা।কিনারা তা বুঝতে পারলো না।বার বার কিনারা ঢুক গিলতে থাকলো।গলা শুকিয়ে আসতে থাকলো।কিনারা কেমন জানি অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলো।

কিনারা সাদিতের দিকে তাকাতেই দেখলো,সাদিতের ওই গভীর কালো তীক্ষ্ণ চোখ দুটোতে এতো নেশাময় হয়ে আছে,যে ওকে এখনি গিলে খেয়ে ফেলবে।কিনারা খুব ভয় পেয়ে ছাদ থেকে নিচে চলে যেতে চাইলো——
ঠিক এমন সময় ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি পড়া শুরু করলো,বৃষ্টির ফোঁটা গুলো এতোটাই বড়ো আর জুড়ে পড়ছিলো যে সাদিত আর কিনারা দৌড়ে চিলেকোঠায় পৌঁছাতেও প্রায় অর্ধেক ভিজেই গেলো।
তখন চারপাশটায় গভীর অন্ধকার নেমে এলো, আকাশে তুমুল বৃষ্টি আর মেঘের গর্জন শুরু হলো,সাথে হিম ছড়ানো শীতল বাতাস, মুহুর্তের মধ্যেই কিনারার সারা শরীর লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেলো।রীতিমতো কাঁপতে শুরু করলো।
কিনারা সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালেই সাদিত কিনারার বাহু ধরে দাঁড় করিয়ে দেয়।

কিনারা সাদিতের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল– আমি নিচে যাবো চেন্জ করবো,দেখুন কেমন ভিজে গেছি।কেমন খিতখিতে ভাব লাগছে।
সাদিত চিলেকোঠার লাইটের আলোয় দেখলো কিনারার মাথার চুল সহ সারা শরীর প্রায় ভিজে গেছে, ভেজা চুলের পানি টুপ টুপ করে কিনারার কপাল বেড়ে,, চোখ মুখ নাক দিয়ে নেমে কিনারার ঠোঁটের উপর এসে পড়ছে। ঠান্ডা লাগার কারণে কিনারার ঠোঁট টা পরপর কেঁপে উঠছে।কিনারার গাল আর গলা বেয়ে বৃষ্টির পানি বুকের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।কিনারার ওড়না বুকের সাথে লেপ্টে রয়েছে।কিনারার হালকা গোলাপি কামিজ টা ভিজে পেটের নাভি দৃশ্যমান হয়ে রয়েছে।

সাদিতের চোখটা গিয়ে আটকে পড়লো কিনারার নাভির উপর।সাদিত কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো সাদিত চাইলেও চোখটা সরাতে পারছে না,সাদিতের নিশ্বাস ঘন হয়ে এলো।আর জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে শুরু করলো
কিনারা সাদিতকে লক্ষ্য করে পেটের দিকে তাকাতেই কিনারা দেখলো ওর নাভি একদম স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। কিনারা এক হাত দিয়ে পেট টা চেপে ধরে, লাফ দিয়ে সাদিতের থেকে কিছুটা সরে গিয়ে বলল—একি আপনি অভাবে আমার পেটের দিকে তাকিয়ে আছেন কেন।

সাদিত কিনারার বোকা বোকা কথা শুনে মুচকি হেসে দুষ্টু মাখা ফেস করে বলল তোমার ওই পেটের বিউটিস্পর্ট।
কিনারা নাভির পাশের গাঢ় বড়ো কুচকুচে কালো তিলটা দেখেই পেট চেপে ধরেই বলল লুচু একটা।
সাদিত কিনারার কাছে গিয়ে কোড়র জড়িয়ে ধরে বলে,,,,তাহলে একটু লুচুগিরি করি।বলেই কিনারার ঠোঁটের দিকে যেতে,,, কিনারা হাত দিয়ে সাদিতের বুকে চাপ দিয়ে মুখটা খানিকটা সরিয়ে নিয়ে বলল—- আমি ভিজে গেছি। নিচে যাবো প্লিজ ছাড়ুন।আমার বৃষ্টিতে ভিজা বারণ আছে।তবুও ভিজে গেছি, এখন যদি ঠান্ডা লেগে যায়।তাহলে আমার প্রবলেম হবে।

সাদিত তখন বলল— তোমাকে বৃষ্টি নামার আগেই বলেছিলাম, চলো নিচে যায়।কিন্তু তুমি তো তোমার জিদ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে,এতো জুড়ে বৃষ্টি নামলো যে এখানে আসতেই ভিজে গেলে।এবার বুঝো মজা।
কিনারা কাচুমাচু ফেস করে বলল— কে জানতো এতো জোরে বৃষ্টি নামবে।এবার তো ছাড়ুন।
সাদিত হেসে বলল আচ্ছা ঠিক আছে,,,তার আগে আমাকে একটা কিস করতে হবে।তারপরই আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো।
কিনারা সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কে উঠে বলল —না।আমি পারবো না, প্লিজ ।

কথাটা শেষ করতেই সাদিত কিনারাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।সাদিত কিনারার কোনো বারণ না শুনেই—–সাদিত কিনারার ঠোঁটের উপর নিজের ঠোঁট রেখে।কিনারার ছোট্ট শরীরটা সাদিতের বুকের আর কাছে টেনে নিলো।হঠাৎই সাদিত কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো। নিজেকে আর যেনো সংযত করে রাখতে পারলো না।সাদিত নিজেকে সামলাতে পারলো না।আর কিনারাকে ছাড়তে চাইলো না।তখনো সামনে তুমুল বৃষ্টি পড়ছে,মেঘের গর্জন,ছাদের বৃষ্টিভেজা ঘ্রাণ,, তার সাথে কিনারার শরীরের মিষ্টি গন্ধ,,, চারপাশের পরিবেশ তখন আলাদা রুপ ধারণ করেছে।ওদের নিশ্বাস-প্রশ্বাস ওদের দুজনকে আরও পাগল করে তুলছিলো।

কিনারার গুটা চোখমুখ তখন লাল হয়ে গেছে।ঠিক ওই মুহূর্তে কিনারা সাদিতের শার্টটা টেনে ধরলো।
সাদিত আরো যেনো পাগল হয়ে গেলো।সাদিত কিনারাকে জড়িয়ে ধরে,, কিনারা৷র সারা শরীর স্পর্শ করতে চাইলো।
সঙ্গে সঙ্গে কিনারা খুব ভয় পেয়ে গেলো।কিনারা পেনিক করতে শুরু করলেই সাদিতকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো।
কিনারা সাদিতকে ধাক্কাটা মারতেই সাদিত যেনো নিজের হুসে ফিরে এলো।
তারপর সাদিত হিংস্র পশুর মতো কিনারার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে রইলো।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ১৮

সাদিত হিংস্র পশুর মতো কিনারার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে রইলো।সাদিত জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে প্রশ্ন করলো—কি হলো তুমি আমাকে দূরে সরিয়ে দিলে কেন??
কিনারা ভয় পেয়ে সাদিতের দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল– কি হলো মানে টা কি—–
সাদিত কিনারার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল– আই এম সো হাংরি।

কিনারা সাদিতের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল– হাংরিইইই-_—–তারপর ভয়ে ভয়ে বলল আচ্ছা আপনার খুদা পেয়েছে আগে বলবেন তো। চলুন নিচে আমি এখনি আপনাকে খাবার দিতে বলছি।পুরো কথাটা শেষ না করেই কিনারা চুপ করে গেলো।কারণ কিনারা ততক্ষণে বুঝতে পারলো সাদিত আসলে ঠিক কি বুঝাতে চাইছে।এসব ভেবে কিনারা প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়েছিলো।কিনারা কথা ঘুরানোর জন্য বলল মিস্টার চৌধুরী এবার তো নিচে চলুন।আমার খুব খারাপ লাগছে।এভাবে থাকতে আর ভালো লাগছে না।আমি নিচে যেতে চাই।
তারপর সাদিত কিনারার কাছে এসে হাতটা ধরে বলল—কিনারা তুমি এতো ঘাবড়ে যাচ্ছো কেন,আই লাইক ইউ বিকস্ আই লাভ ইউ সো মাচ।যে কারণে আমি বার বার এরকম করি।তাই তো তোমার কাছে পাগলের মতো ছুটে আসি।কিনারা প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো।আর আমি তোমাকে কথা দিতে পারছি না এরপর কি হবে।।তা আমি নিজেও জানিনা।

কিনারা সাদিতের এসব কথা শুনে,কিনারা ভয় পেয়ে গেলো।একটুও নড়াচড়া করলো।কিনারা যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো।
এদিকে কিনারাকে ভয় পেতে দেখে সাদিত কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।
সাদিত কিনারার দিকে তাকিয়ে বলল।।এত্ত কি ভাবো তুমি সব সময়। নিচে চলো এবার।
কিনারা রুমে গিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।তারপর গরম পানি দিয়ে গোসল করে বেরিয়ে পড়লো।কিনারা বের হতেই সাদিত ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো।

আয়নার সামনে নিজেকে পরিপাটি করে, তোয়ালেটা নিয়ে বারান্দায় গেলো।তারপর তোয়ালেটা মেলে দিয়ে বারান্দার দরজা টা লাগাতেই, দরজার পর্দাটার কিছু অংশ দরজায় আঁটকে যায়।কিনারা পর্দাটা বের করার জন্য টান৷ দিলো কিন্তু বের হলো না তারপরএকটু জোরে টান দিতেই। পর্দার স্টিকটা খোলে কিনারার মাথায় পড়তেই।।।। কিনাটা আউচচচচ বলে মাথায় হাত দিয়ে বুলাতে থাকে।মাথায় হাত দিয়ে বুলাতে বুলাতে বিরবির করে বলল —কিনারা তুই তো মহা বোকা পর্দাটা আটকে গেছে ভালো কথা ওটা টানাটানি করার কি আছে৷ টানাটানি না করে দরজা খুলে বের করলেই তো হতো।যাহ্ বাবা আমি বোকামি যখন করেছি এটা আমাকেই লাগাতে হবে না হলে মিস্টার চৌধুরী আবার যদি আমাকে বকে।উনি তো ঘর অগোছালো একদম পছন্দ করেনা।তার থেকে ভালো উনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে পড়ার আগেই আমি এটা লাগিয়ে ফেলি।যেই ভাবা সেই কাজ। আশে-পাশে তাকাতেই ঘরের এক কোণে একটা ছোট্ট টুলের মতো কাঠের টেবিল দেখতে পেলো,তো ফুলদানি গুলো নিচে নামিয়ে কিনারা এ নিয়ে এসে একা একা অনেক কষ্টে পর্দা লাগালো।অবশেষে পর্দাটা লাগিয়ে হাত দুটো ঝাড়া দিয়ে কোমরে হাত দিয়ে পর্দার দিকে তাকিয়ে বলে ফাইনালি লাগাতে পারলাম।এমন সময় পিছন থেকে একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো——-

খাম্বার মতো টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে কি করছো তুমি —-সাদিত ইয়ার্কি করে বলে উঠলো ——
কিনারা পিছন ফিরে সাদিতকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে টেবিল থেকে লাফ দিয়ে নামতে যাবে, কিন্তু ঠিক ওই সময়ে দুর্ভাগ্য বসতো কিনারার প্লাজুতে পা আটকে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেলো।
সাদিত ধরতে যাবে কিন্তু তার আগেই কিনারা মেঝেতে পড়লো।ঘটনাটা টা এতো তাড়াতাড়ি সাদিতের চোখের সামনে ঘটে গেলো যে সাদিত না বুঝতে পারলো না কিছুই করতে পারলো।

কিনারা পড়ার পর সাদিত এসে ধরতেই, কিনারা আস্তে আস্তে চোখ টা খোলে দেখলো সাদিতের উম্মক্ত লোমশ পা, একটা তাওয়াল পড়া।সাদিতের উম্মুক্ত বুকের লোমগুলো ভিজে বুকের সাথে লেপ্টে আছে সাথে পেশিবহুল চেহারা তা কিনারার নজর এড়ালো না।কিনারা ব্যাথা ভুলে সাদিতকে দেখতে ব্যস্ত।এ চেহারা যেকোনো নারীকে আকর্ষণ করতে যথেষ্ট।
এসব সাত পাঁচ ভাবতেই সাদিত কিনারাকে কোলে তুলে নিয়ে খাটে বসালো।তখনো কিনারা সাদিতকে দেখতে ব্যস্ত।
সাদিত কিনারাকে রেখে একটা ফার্স্ট এইড বক্স এনে বলে।কিনারার হাতের উপর হাত রেখে বলে ওতো উপর থেকে পড়েছো নিশ্চয়ই ব্যাথা পেয়েছো।দেখি কোথায় ব্যাথা পেয়েছো।আর টেবিলের উপর উঠে ঠিক কি করছিলে শুনি।দরজার পর্দা কখনো দেখো যে টেবিলের উপর উঠে পড়লে তা দেখার জন্য কিছুটা রেগে বলল সাদিত—-

সাদিত কিনারার হাতে হাত রাখতেই কিনারা হাতের কব্জিতে ব্যাথা অনুভব করতেই চোখগুলো ছোট করে আস্তে করে বললল—-আসলেএএএ
সাদিত কিনারা ফেস দেখে বুঝলো ও হাতে ব্যাথা পেয়েছে।তাই কিনারাকে বলল হয়েছে আর আসলে আসলে করতে হবে না পরে শুনছি।আগে হাতটাতে স্প্রে করতে দাও — বলে সাদিত কিনারার কব্জি দিকে ইশারা করতেই কিনারা মাথা নাড়ালো—-আর সাদিত পেইন কিলার স্প্রেটা কিনারা স্প্রে করে দিলো।

স্প্রে করতেই কিনারার মনে হলো ওর হাতটা জ্বলে যাচ্ছে,চোখ বন্ধ করে বেডসিট টা চেপে ধরলো,রীতিমতো চোখে পানি চলে এসেছে।।সাদিত কিনারার হাতটা মুখের সামনে নিয়ে আস্তেকরে একটা চুমু ফুঁ দিতে শুরু করলো।
কিছুক্ষন পর জ্বালা কমে গেলে কিনারা চোখ মেলে তাকায়।

হঠাৎই কিনারা হাঁটুতে হালকা চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো।কিনারা ব্যাথা অনুভব করতে তা বুঝার জন্য উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু কিনারা উঠে দাঁড়াতেই পায়ে প্রচন্ড ব্যাথায় আহহ্ বলে একহাত দিয়ে হাঁটু ধরে অন্য হাতে সাদিতের কাঁধটা চেপে ধরলো।
সাদিত সঙ্গে সঙ্গে ভয় পেয়ে কিনারার হাত ধরে বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো কিনারা সাবধানে।বলে কিনারা হাতটা ধরে আবার খাটে বসিয়ে দিলো।এবার সাদিত প্রচন্ড রেগে গেছে।মেঝেতে বসতে বসতে কিনারাকে বকতে শুরু করলো—- পায়েও ব্যাথা পেয়েছো দেখছি।একটু সাবধানে চলাফেরাও তো করতে পারো,কি দরকার ছিলো ওখানে ওঠার।আর ওঠেছেও যখন একটু সাবধানে নামলেও তো হতো।কি দরকার ছিলো লাফ দেওয়ার,তোমার লাফালাফি ছটফট না করলেই কি নয়, না জানি কতত————–

সাদিত আর বলতে পারলো না।ততক্ষণে সাদিত কিনারার প্লাজুটা হাটু অব্দি উঠিয়ে ফেলেছিলো।কিনারার উম্মুক্ত সাদা ধবধবে ফর্সা পা দেখে সাদিত অবাক হয়ে গেলো। কিনারা যথেষ্ট সাদা ফর্সা কিন্তু ওর পা ছিলো মুখের থেকে অধিক বেশি ফর্সা,কোমলীয় ও লোমহীন নজরকাড়া।সাদিত রীতিমতো একটা ঢুক গিললো।কিনারার পা এভাবে দেখে সাদিতের গলা শুকিয়ে যাচ্ছিলো।সাদিত বুঝতে পারলো এভাবে আর কিছুক্ষন থাকলে সাদিত ওর নিজের অজান্তেই নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবে।কিন্তু সাদিত এই মুহুর্তে ওমন কিছু করতে চাচ্ছে না।তাই লম্বা একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে জাগতে দিলো না।তারপর কিনারার হাঁটুতে স্প্রে করে দিয়ে ফুঁ দিতে শুরু করলো।
তারপর কিনারাকে খাটে বসিয়ে রেখে সাদিত নিচে চলে গেলো খাবার আনতে।
কিছুক্ষন পর সাদিত একটা ট্রেতে করে খাবার নিয়ে রুমে ঢুলো।

সাদিত খাবার গুলো বিছানার উপর রাখতেই কিনারা প্লেট টা নিতে ধরলো কিন্তু সাদিত হাত দিয়ে আটকিয়ে বলল— কোনো দরকার নেই আমি খাইয়ে দিচ্ছি এমনি হাতে ব্যাথা পেয়েছো খেতে পারবে না তুমি।আর এক প্লেটে খাবার আনলাম তো তোমাকে খাইয়ে আমি খাবো।
কিনারা মনে মনে ভাবলো উনি এক প্লেটে খাবার এনেছেন আমি খেয়ালই করিনি। এখন তো নাও করতে পারবো৷ না।
সাদিত বলল দেখি বউ হা করো
কিন্তু কিনারা মুখ খুলছিলো না।

তা দেখে সাদিত বাঁকা হেসে বলল কি বউ মুখ খুলবেনা তাই তো।ঠিক আছে।তুমি এখনো আমাকে চিনোনি, তো আমি কি তোমার কাছে আসবো আবার ঠিক তখনকার মতো।এবার আসলে কিন্তু অন্য কিছু হবে বলে দিলাম।তখন কিন্তু আমার দোষ দিতে পারবে না।
সাদিত কথাটা বলতে দেরি কিন্তু কিনারার হা করতে দেরি হয়নি।ফট করে হা করে সাদিতের হাতে খেতে শুরু করলো।
সাদিত আবার খাবার মাখতে মাখতে বলল দ্যাটস লাইকে গুড গার্ল
কিনারা সাদিতের মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারলো না।সাদিতের মুখের দিকে তাকিয়ে খেতে শুরু করলো।
সাদিত কিনারার মুখে খাবার পুরে দিতেই সাদিতের আঙুল গুলো ভিজা অনুভব করতেই সাদিতের শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল একটা শিহরন বয়ে গেলো।

সাদিত কিনারাকে খাবার গুলো খাইয়ে দিয়ে, পানির গ্লাসটা কিনারার সামনে ধরলো—–
কিনারা তখনো সাদিতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তা সাদিতের চোখ এড়ায়নি।
সাদিত কিনারার ধ্যান ভাঙার জন্য টিটকারি স্বরে বলল—এভাবে তাকিয়ে দেখার কিছু নেই বউ। আমি এমনি সুদর্শন বুঝলা।তুমিই খালি চিনলা না আমাকে।আমার ভালোবাসা বুঝলা না।আর এভাবে দেখলে তো আমি শুকিয়ে যাবো।
সাদিতের এমন কথায় কিনারা বিষম খেলো।
তারপর সাদিতের হাত থেকে ফট করে গ্লাস টা নিয়ে পানিটা খেতে শুরু।
সাদিত কিনারার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে কিনারার জন্য মাখা খাবারগুলো নিজে খেতে শুরু করলো।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ১৯

পরের দিন সন্ধ্যার পর কিনারা পড়তে বসে,কারণ আজই কলেজে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে সামনে মাসে এক্সাম।
সাদিত আজ কিনারার সাথে কলেজ গিয়ে সব ফী দিয়ে এসেছে।

সাদিত আর কিনারা স্টাডিরুমে মুখো-মুখী হয়ে বসে আছে।কিনারাকে পড়তে বসিয়ে সাদিত ল্যাপটপে কাজ করছে। টানা দেড় ঘন্টা বসে পড়তে পড়তে কিনারার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে।কিনারা কখনো একটানা পড়েনি।সবসময় পড়া ফাকি দিতো।তবুও কোনো রকম পাশ করতো।কিন্তু আজ বাধ্য হয়ে সাদিতের জন্য পড়তে হচ্ছে। এই দেড় ঘন্টায় কিনারা নানান বাহানা দিয়ে উঠার চেষ্টা করেছিলো টেবিল থেকে বাট কোনো লাভ হয়নি।কারণ বলার আগেই সাদিত বুঝে যেতো।কিনারার এখন ইচ্ছে করছে এখান থেকে এখনি দৌড়ে পালিয়ে যেতে কিন্তু কিনারা এটা ভালো ভাবে জানে এখান থেকে পালিয়েও লাভ নেই। রাক্ষস টা আমাকে বাঘের মতো খপ করে ধরে এনে আবার টেবিলে বসিয়ে দিবে।তার থেকে ভালো উনাকে বলে দেখি,ভাবার সঙ্গে সঙ্গে কিনারা সাদিতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো —মিস্টার চৌধুরী অনেক ক্ষন থেকে পড়ছি এবার তো আমাকে উঠতে দিন প্লিজ আমার কোমড় খুব ব্যাথা করছে,।

সাদিত কিনারার কথায় কান না দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করেই যাচ্ছে।
কিনারা আবার বলে উঠলে—-
সাদিত খানিকটা জোরে বলে উঠলো —- মাত্র দেড় ঘন্টা যাবত পড়েছো কিনারা।এতেই এমন করছো।আমরা এক্সামের সময় সারা রাত জেগে পড়তাম।কি করলে এক্সাম ভালো হবে সেটাই করতাম।কিন্তু তোমার যে এক্সাম এতে তোমার কোনো মাথা ব্যাথায় নেই দেখছি।—–উল্টা কি করছো তুমি পড়ায় কি করে ফাঁকি দিতে হবে তার বাহানা খুঁজে বেড়াচ্ছো।

কিনারা সাদিতের কথা শুনে মুখ ভেঙচি দিয়ে বলে উঠলো —-আমি মুটেও পড়াশোনায় ফাকি দেয়না,বুঝলেন। আমার যখন ইচ্ছে হয় আমি তখনি পড়তে বসি।আর জোর করে পড়তে বসলে আমি পড়ায় মনোযোগী হতে পারিনা।আমি পড়ি ঠিকি কিন্তু কিছুই মনে থাকেনা।তো মিস্টার চৌধুরী শুনুন না।এভাবে বসে থাকলে তো আমার কোমড়ের সব হাড় খুলে যাবে।তার থেকে বরং আপনি আমাকে একটু বিরতি দিন।এভাবে কেউ একটানা পড়ে।আমি একটু পর আবার পড়তে বসবো।বলে মনে মনে কিনারা ভাবতে শুরু করলো—- একবার শুধু রুম থেকে বের হতে পারলে বাঁচি।আজকের বারের মতো আর মিস্টার চৌধুরীর সামনে ভুলক্রমে আসছি না।কিনারার ভাবনার মধ্যে সাদিত বলে উঠলো ——-

হুম তার জন্য তো প্রত্যেক পরিক্ষায় ডাব্বা পেতে।টেনে টুনে পাশ করতেই হিমসিম খেতে।সে খোঁজ কি আমি রাখিনি।তুমি কি ভেবেছো আমি তোমার সম্পর্কে না জেনেই বিয়ে করেছি।কখনোই না।আমি তোমার সম্পর্কে সব ইনফর্মেশন জেনে শুনে তবেই বিয়ে করেছি। কিন্তু এইবার তা হবে না।আমি চাই ইন্টারে যেনো তুমি ভালো রেজাল্ট করে কোনো ভালো ভার্সিটিতে চান্স পাও। অাফটার ওল মিস্টার সাদিত চৌধুরীর স্ত্রী বলে কথা। আর যে সবসময় স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে টপ হতো। স্কলার্শিপেও যার বেস্ট পারফরম্যান্স ছিলো। তার বউ কিনা টেনে-টুনে পাস করে——- হাউ ফানি!

কিনারা কাচুমাচু মুখ করে ভাবলো—- উনি এটা জানলেন কি করে,তারপর গলাটা ঝেড়ে কিছুটা দম নিয়ে বলল এই এই আপনি কি আমাকে অপমান করছেন।
না অপমান করবো কেন।আর অপমান করতে চাইও না। আমি তোমাকে বুঝাতে চাচ্ছি কারণ তুমি যেনো আমার কথা শুনে, পড়ায় একটু হলেও,, আগের থেকে বেশি মনোযোগী হতে পারো। তার জন্য বলছি।তো এখন যে পড়া গুলো দিয়েছি সব কমপ্লিট করে দ্যান উঠতে পারবে।

কিনারা আর দশ মিনিট পড়ার পর কিনারা বইটা অফ করে৷ তারপর দাঁড়িয়ে, বলে দূর বাবা ভালো লাগছে না।এতো পড়াশোনা করে কি হবে।পাশ করলেই তো হলো। আর সেই তো আমার বিয়েই হয়ে গেছে, এখন সংসার করার সময়।তো সংসার করবো তা না, আমাকে আইনস্টাইন বানাবে।
বলে চলে যেতে নিলে —- সাদিত কিনারার হাতটা ধরে টেনে কাছে নিয়ে এসে, কিনারাকে কোলে তুলে নিলো।
সাদিত কিনারাকে এমন ভাবে কোলে তুলে নিয়েছিলো যে কিনারার কানটা সাদিতের বুকের সাথে লেগে ছিলো।যার কারণে কিনারার সাদিতের হার্টবিটটা অনুভব করতে পারছিলো।সাদিতের হার্টবিট শুনে কিনারার মনে হচ্ছিলো।কেউ ওর বুকে হাতুড়ি মারছে।
তারপর সাদিতের মুখটা কিনারার মুখের একদম কাছে এনে বলে,তুমি সংসার করতে চাও।আগে বলবে তো। তুমি কি জানো সংসার করতে হলে বাচ্চা-কাচ্চা নিতে হয়।চলো এখনি এই মুহুর্তে আমরা ফ্যামিলি প্ল্যানিং করে ফেলি।

কথাগুলো বলতে বলতে সাদিত কিনারার মুখের একদম কাছে চলে এসেছে, সাদিতের ঘন ঘন নিশ্বাস কিনারার মুখে উপর পড়ছে,সাদিত কিনারার এতোটা কাছে চলে এসেছিলো যে কিনারা ভয় আর লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
কি হলো এখন লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছো কেন।তোমার না কত্ত শখ সংসার করার, অহ নাকি এখানে লজ্জা পাচ্ছো বেড রুমে যেতে চাও।ওকে তাই হবে।
এই লোকটা এরকম কেন। সব সময় বেফাস হয়ে কথা বলে ফেলে ,,,,সব সময় আমাকে নিজের কথার জালে ফাসাই।বেটা বজ্জাত।মুখে লাগাম দিতে পারে না বেহায়া।এমন ঠোঁট কাঁটা কেন উনি।আমি ভাবছি কি করে এখান থেকে পালানো যায় আর উনি ফ্যামিলি প্ল্যানিং করছে বেটা উজবুক।

এদিকে সাদিত সেই কথা বলেই কিনারাকে কোলে তুলে বেডরুমের দিকে নিয়ে যেতেই কিনারা চেঁচিয়ে উঠলো এইনা না আমি পড়াশোনা করবো।আমি এখনি বাচ্চা নিতে চায়না।প্লিজ আমাকে নামিয়ে দিন, আমার সামনে এক্সাম আমাকে পড়তে হবে।
যাক লাইনে এসেছো,এরপর যদি আমার কথা না শুনো আর কখনো যদি পড়ায় ফাকি দিয়েছো তো এর থেকেও বেশি কিছু হবে।তখন তোমাকে এমন সংসার করাবো। বাচ্চার পর বাচ্চা,, বাচ্চার পর বাচ্চা নেওয়ার প্ল্যান করবো। আমিও দেখবো তখন তুমি সংসার আর বাচ্চা কিভাবে সামলাও।

কিনারার চোখ বিস্ময়ে ছানা বড়া হয়ে গেলো সাদিতের কথা শুনে,!রীতিমতো ভয়ে একটা ঢুক গিলে। তারপর মনে মনে ভাবলো—-উনাকে তো বিশ্বাস নেই ,উনি যা বলে তাই করে।এখন আরো একটা বাহানা পেয়েছে।আল্লাহ মালুম না জানি সত্যি এখনি আমাকে বাচ্চা না দিয়ে ফেলে।তারপর হঠাৎই কিনারার চোখের সামনে ভেসে উঠলো——-কিনারা একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে খাবার বানাচ্ছে, ,আর একটা বাচ্চা কিনারার পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে কিনারার জামা ধরে টানছে আর কান্না করছে,অন্য দিকে সাদিত অফিসে যাবে তাই খাবারের জন্য তাড়া দিচ্ছে আর কোলে একটা বাচ্চা নিয়ে ফিটার খাওয়াচ্ছে ।আর এদিকে মিসেস সাদিয়া চৌধুরী চিল্লাহ-চিল্লিহ করছে ঘর কেন নোংরা করে রেখেছে। অন্য দিকে সাইফ চৌধুরী এতো বেলা হয়েছে তবুও কেন সকালের চা দেওয়া হয়নি তার জন্য রাগারাগি করছে।এসব ভেবে কিনারা চিৎকার দিয়ে বলে উঠে নাআআআআআ।আমাকে নামিয়ে দিন আমার অনেক পড়া বাকি আছে। ওগুলো সব শেষ করতে হবে।
সাদিত কিনারার কপালে চুমু দিয়ে বলে দ্যাটস লাইকে গুড গার্ল।যাও পড়তে বসো।

এভাবে দেখতে দেখতে কিনারার ইয়ার চেন্স এক্সাম শেষ হয়।এতো দিনে সাদিত কিনারাকে তেমন ভাবে জ্বালায় নি।কিনারার পুরো মনোযোগ যেনো পড়াশুনার দিকে থাকে সাদিত সবসময় সেভাবেই চলেছে।কিনারা ইয়ার চেন্স এক্সামে ক্লাস টপ হয়।
তারপর কিনারা ফাইনাল ইয়ারের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে সাদিতের কথা মতো।
কিনারার হয়েছে জ্বালা এ যেনো এক্সাম আসেনি,ওর যম এসেছে।এখন একটুও সাদিত ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলে না সবসময় শাসন করে,আর খাওয়া-দাওয়া ওয়াশরুম, আর ঘুমানো ছাড়া টেবিল থেকে উঠা নিষেধ।
যদিও কিনারা কম বাহানা দেখায়না,মাঝে মাঝে না পড়ার কিন্তু তাতে সাদিতের কোনো হেলদোল হয়নি ওর জাস্ট একটা চোখ রাঙানোয় কিনারা শেষ।আর সেদিনের কথা ভাবলে কিনারা আরও বেশি মুশরে যায় বেশি বারাবাড়ি করে না।ভয়েই আরো পড়তে বসে্।

সাদিত নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হলেও তবুও এক্সামের আগে কিনারাকে কোনো মেন্টালি ট্রমার মধ্যে ফেলতে চায়না।যার প্রভাব ওর এক্সামের উপর পরুক।

-কিনারার ইন্টার ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম খুব ভালো ভাবে শেষ হয়েছে,তার পুরো ক্রেডিট সাদিতের।কারণ সাদিত কিনারাকে শাসন না করলে এতো ভালো এক্সাম কখনোই দিতে পারতো না।প্রত্যেকবার এক্সামের পর কিনারার টেনশন হতো রেজাল্ট নিয়ে। কিন্তু আজ কিনারার মনটা ফুরফুরে লাগছে।কারণ সবগুলো এক্সাম অনেক ভালো হয়েছে।বাকিটা আল্লাহ হাতে।।

এতোদিনের সাদিতের কেয়ারিং আর ভালোবাসা কিনারার মনে অন্য রকম একটা প্রভাব ফেলেছে।এখন কিনারা মনে সাদিতের জন্য অদ্ভুত একটা ফিলিংস কাজ করে।কিন্তু কিনারা নিজেও জানে না এ ফিলিংস৷ টা আসলে কিসের।।।। আদৌ সাদিতকে ভালোবাসে কিনা।এর উত্তর কিনারার জানা নেই।কিন্তু এতোদিন যে সাদিত কিনারার কাছে কম আসতো কেন জানি কিনারা সাদিতকে খুব মিস করতো কারণে-অকারণে কিনারার মন খারাপ হতো।সব সময় কিনারার মন চাইতো সাদিত ওর কাছে আসুক,ওকে ভালোবাসুক।এসব কিনারার মন কেন চাইতো তা কিনারা বুঝতে পারেনা।তবে কিনারা সাদিতের উপর রাগ করে থাকতে পারেনি।কারণ কিনারা ভালো করে জানতো সাদিত যা করেছে ওর ভালোর জন্য করছে।

আজ কিনারার লাস্ট এক্সাম ছিলো—- সবে মাত্র এক্সাম শেষ করে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।কারণ প্রত্যেকদিন সাদিত নিজে ওকে কলেজ নামিয়ে দিয়ে যায় এবং নিতে আসে।আজ নামিয়ে দেওয়ার সময় পইপই করে সাদিত বলে গেছে।ও না আসা অব্দি যেনো কোথাও না যায়।

এমন সময় ব্লাক কালারের একটা গাড়ি কিনারার সামনে দাঁড়াতেই কিনারার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।
সাদিত নেমে কিনারার কাছে এসে হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়ে কিনারাকে জড়িয়ে ধরে।কিনারাও কেন জানি আজ নিরদ্বিধায় সাদিতকে জড়িয়ে ধরলো।আজ কিনারাকে জড়িয়ে ধরতে দেখে খুশিতে সাদিত নিজের দুহাত দিয়ে কিনারাকে আরো নিজের কাছে টেনে নিলো।এমন ভাবে সাদিত কিনারাকে আঁকড়ে ধরে আছে মনে হচ্ছে কিনারার শরীরটা ওর শরীরের সাথে মিশিয়ে ফেলতে চাইছে।কিনারার হার্টবিটা অনেক জুড়ে ছুটছিলো।আর সাদিত নিজের শীতল বুকের সাথে কিনারাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর কিনারাকে ছেড়ে দিলো।

তখন আশে পাশে মেয়ে ভাবছিলো সত্যিই সাদিত চৌধুরী একজন অসামান্য মানুষ, সাদিত কলেজে আসলেই সব মেয়ের চোখ যেনো ওর ওপর চলে যায়।একে তো হ্যান্ডসাম, তারপর এমন পুরুষালি চেহারা প্রত্যেকদিন কলেজে আসে কিনারার সাথে।কিনারার উপর জেলাসটা আরো যেনো বেড়ে গেছে। এক এক মেয়ে গুলো যেনো হিংসায় ফেটে যাচ্ছিলো।মেয়েগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মনে মনে ইমেজিং করতে লাগলো যদি কিনারার জায়গায় ওরা এই হ্যান্ডসাম ছেলেটার সাথে থাকতো তাহলে কেমন হতো—-ভেবেই খুশি হলেও কিনারার দিকে তাকিয়ে মুখ টা কালো করে ফেলে।

এদিকে সাদিত কিনারাকে ছেড়ে বলল— জানো এই দিনটার জন্য সেই কবে থেকে অপেক্ষা করছিলাম।কবে তোমার এক্সাম শেষ হবে।কবে তোমার কাছে যখন ইচ্ছে, তখন যেতে পারবো।জানো তোমাকে কত মিস করেছি।তা বলে বুঝানো যাবে না।
কথাটা শুনেই কিনারার হার্টবিটের পারদটা আরো বেড়ে গেলো,কিনারা “মিস” কথাটা শুনেই ভাবতে ভাবতে লজ্জায় লাল হয়ে পেনিক করতে শুরু করলো —তারপর বুঝতে পারলো সাদিত ও ওর মতো ওকে খুব মিস করছিলো।সঙ্গে সঙ্গে কিনারা সাদিতের মুখের দিকে করুন ভাবে তাকালো।সে সময় কিনারার চোখে মুখে একটা লজ্জা আর কৌতুহলের ছাপ।ঠিক ওই সময় কিনারা কি বলবে তা বুঝে উঠতে পারছিলো না।কিনারা তখন আরো লজ্জায় পড়ে গেলো।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ২০

সাদিত কিনারাকে কোলে তুলে নিলো।তখনি আশ-পাশ থেকে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা ভেসে এলো ওদের কানে,সেদিকে সাদিত কান দিলো না।কিনারা নিজেও লজ্জায় পড়ে গেলো।সকলের সামনে সাদিত ওকে এভাবে কোলে তুলে নিলো।কিনারা সাদিতের হাত থেকে অনেকবার ছড়ানোর চেষ্টা করলো।
কিন্তু তখনি সাদিত নিজের মখটা কিনারার মুখের সামনে নিয়ে গিয়ে খুব গম্ভীর গলায় বলল—-একদম নড়াচড়া কারার চেষ্টা করো না—–না হলে কিন্তু সকলের সামনে কিস করে দিবো বলে রাখলাম।
সাদিতের এমন বেফাঁস কথা শুনে কিনারা শান্ত হয়ে গেলো।কারণ এতো দিন সাদিতের সাথে থেকে একটু হলেও ধারণা হয়েছে।আসলে মিস্টার সাদিত চৌধুরী কেমন।

ওখানে থাকা সকল মেয়েগুলো যেনো আরো হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে। ওরা ভাবছে সাদিত চৌধুরীর মতো একজন মানুষ আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।কিন্তু এখন যেনো সাদিতকে অন্য রকম লাগছে।
কিনারার সাদিতের বুকের উপর হাত রেখে একটু চাপ দিয়ে বলল— কি হচ্ছে মিস্টার চৌধুরী। আমাকে নামিয়ে দিন। এখানে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।কি করতে চাচ্ছেন আপনি।
সাদিত যেনো কিনারার কথা শুনে একটু বিরক্তভঙ্গিতে বলল—–দেখছে তাতে আমার কি।ওরা যদি আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখে তাহলে আমি এখন কি করতে পারি।ইউ আর মাই ওয়াইফ।এখন আমি যদি আমার বিবাহিত স্ত্রীকে কোলে না তুলি, তাহলে কাকে তুলবো।শেষের কথা গুলো একদম লো ভয়েসে বলল সাদিত।

সাদিতের কথা গুলো যেনো কিনারার কানকে অবশ করে দিয়েছিলো।কিনারা কোনো রকম নিজেকে সামলে বলে উঠলো —-কিন্তু মিস্টার চৌধুরী আমি তো ঠিক আছি।আমি হেঁটে যেতে পারবো।কিনারার গাল দুটো গোলাপি হয়ে গেলো।কিনারার এতো দিনেও বুঝে উঠতে পারলো না —–সাদিত যখনি ওর সামনে এসে দাঁড়ায় ও কেন এতো ব্লাস করতে থাকে।এর আগেও যতবার সাদিত ওর কাছে এসেছে ততবারই কিনারার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যেতো।

সাদিতের শরীর থেকে অদ্ভুত একটা সুগন্ধ ভেসে কিনারার নাকে আসছিলো যা কিনারাকে বারবার মাতোয়ারা করে দিচ্ছিলো।গন্ধটা যেনো যে কাউকে পাগল করার জন্য যথেষ্ট।
গাড়ির কাছে চলে আসতেই ড্রাইভার মাথা নিচু হয়ে গাড়ির দরজা টা খোলে দিলো। সাদিত কিনারাকে নিয়ে খুব সাবধানে গাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।এবং কিনারাকে খুব যত্ন সহকারে গাড়িতে বসালো।গাড়ির দরজা বন্ধ হতেই সাদিত কিনারাকে কাছে টেনে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। ড্রাইভারকে সামনে দেখে কিনারা যেনো অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।তারপর বলল মিস্টার চৌধুরী আমাকে ছাড়ুন। সাদিত কিনারাকে ছেড়ে একহাতে কিনারার কাঁধটা জড়িয়ে ধরলো।

-দুইদিন পর বিকালবেলা

এখন কিনারার কোনো বাড়তি চাপ নেই, একদম ফুরফুরে মনে ঘুড়ে বেয়ায়।যা ইচ্ছে হয় তাই করে কারোর কোনো শাসন নেই।
আগে পড়ার প্যারা ছিলো কিন্তু এখন আর সেটা নেই, আহা কি শান্তি কি শান্তি।বলে রিলেক্স মুডে ডয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলো।কতদিন পর প্রিয় সিরিয়ালগুলো দেখতে পারছে।
এমন সময় সাদিত নিচে নামলো—–কেমন একটা অদ্ভুত চিন্তিত ফেস করে কিনারার কাছে গেলো।তারপর খুব গম্ভীর গলায় বলল—-কিনারা রুমে এসো কথা আছে।
কিনারা টিভির দিক থেকে চোখ সরিয়ে সাদিতের উপর পরতেই ওমন গম্ভীরমুখ দেখে ভয় পেয়ে গেলো।আর মনে মনে ভাবলো—–উনার কথাটা শুনেই কেমন ভয় ভয় লাগছে,কি এমন বলবেন উনি।যেটা এখানে বলা যাচ্ছে না রুমেই কেন যেতে হবে—–কিনারার আর কিছু না ভেবে উপরে চলে গেলো।

কিনারা রুমে গিয়ে দেখলো সাদিত রুমে নেই, তারপর বারান্দার দরজার কাছে দাঁড়াতেই দেখলো সাদিত মুখ ফুলিয়ে দোলনায় বসে আছে। কিনারা দরোজায় দাঁড়িয়ে বলল—-মিস্টার চৌধুরী আমাকে ডাকলেন যে,কি বলবেন বলুন।
সাদিত দোলনার এক সাইডে সরে বসে,গম্ভীর গলায় কিনারাকে বলল এখানে এসে বসো,তারপর বলছি।
কিনারা সাদিতের গম্ভীরভাব দেখে কিছু বুঝতে না পেয়ে ভয়ে ভয়ে সাদিতের সামনে এসে দাঁড়ালো।
সাদিত কিনারাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,ধমক দিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো —-কি হলো এখানে বসতে বললাম তো।
কিনারা ভয়ে ভয়ে সাদিতের পাশে বসে পড়লো।।
কিনারা বসতেই সাদিত বলতে শুরু করলো —-

কি হলো তোমার সমস্যা কোথায়,এমন কেন করছো আমার সাথে। আমি কি তোমাকে মারধর করি।না বকা দেই,নাকি ঝগড়া করি।তোমাকে ভালো রাখার জন্য সব করি, কি করলে তুমি হাসিখুশি থাকবে সব সময় সে চেষ্টায় করে গেছি।তবুও কি আমায় ভালোবাসা যায়না।সমান্য একটুও কি ভালোবাসা যায়না।আমি কি মানুষ হিসেবে এতোটাই খারাপ।।
কিনারা চুপ করে আছে
সাদিত আবার বলতে শুরু করলো —-কিনারা সত্যি করে বলো তো— তোমার কি আমার সঙ্গ পছন্দ না,নাকি আমার ছোঁয়া পছন্দ নই।আমি কি এতো গুলো দিন তোমার উপর নিজের জোর খাটিয়েছি।তোমার কি কোনো ইচ্ছে ছিলো না।তোমার সাথে কি খুব বেশি অন্যায়,করে ফেলেছি।

কিনারা আপাতদৃষ্টিতে সাদিতের দিকে তাকিয়ে আছে, সাদিতের কথা গুলো যুক্তিসংগত মনে হলেও।কিনারা কি বলবে বুঝতে পারছে না।কিনারা মনে মনে বলল—মিস্টার চৌধুরী আমিও আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু তা কখনো আমি বলিনি।এতোদিনে কখন যে আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।আমি নিজেও জানিনা।তবে আপনার মতো এতো পাগলামি আমার আসেনা।আপনার মতো হুট হাট করে বলতে পারিনা,আপনাকে ঠিক কতটা চাই। আপনার মতো এতো কথাও আমি বলতে পারিনা।কিন্তু আপনি কি জানেন।আমারও না আপনাকে কিছু বলার আছে। এত্ত কথা জমে আছে, বলতে ইচ্ছে করে আপনাকে৷ নিয়ে আমার সকল অনুভূতির কথা। কিন্তু বলতে পারিনা আমার অনেক জড়তা কাজ করে ।আমি শুধু একটা কাজই করতে পারি।আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে,আপনার মিষ্টি মনোমুগ্ধকর কথা গুলো শুনতে।কিন্তু আপনার ওই গভীর কালো তীক্ষ্ণ চোখের দিকে তাকাতেই বলা তো দূরের কথা উল্টো গলা শুকিয়ে যায়।

সাদিত কিনারাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল—কি হলো চুপ করে আছো যে—–কিনারা আমি তোমাকে পুরোপুরি চাই। অপেক্ষা জিনিসটা খুব খারাপ কিনারা।রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। অনেক তো অপেক্ষা করলাম আর কতো কিনারা,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এইবার তো বলো আমাকে ভালোবাসো।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছে,আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে আটকে রেখেছি।তাহলে কি আমি তোমাকে মুক্তি করে দেওয়া ব্যবস্থা কর————-সাদিত আর বলতে পারলো না।কিনারার নরম ঠোঁট দুটো সাদিতের ঠোঁট দুটোকে আস্তে করে আলিঙ্গন করে নিলো সাদিত যেনো ওর উত্তর পেয়ে গেলো।

কিনারা ঠোঁট টা সরিয়ে নিতেই, কিনারা কিছু বলার আগেই সাদিতের ঠোঁট গিয়ে পড়লো কিনারার ঠোঁটের উপর।সাদিত খুব এগ্রেসিভভাবে কিনারাকে কিস করতে শুরু করলো।মনে হলো সাদিত কিনারাকে আর ছাড়বে না।
কিন্তু মিসেস সাদিয়া চৌধুরী তখনি রুমে প্রবেশ করলো, সাদিয়া চৌধুরী রুমে কাউকে না পেয়ে বারান্দায় উঁকি দিতেই মিসেস চৌধুরী খুবই লজ্জায় পড়ে গেলো।সঙ্গে সঙ্গে সাদিয়া চৌধুরী রুমে থেকে বেরিয়ে পড়লো। উনি ভাবেনি ওরা দরজা এভাবে খোলে এমন কিছু করতে পারে।উনি এসেছিলেন সাদিতের কাছে, একটা লোক সাদিতকে কিছু পেপার দিতে বলে গেলো।তাই উনি ওগুলো সাদিতকে দিতে এসেছিলেন।কিন্তু এই অবস্থায় উনি আর ভিতরে প্রবেশ না নিজের রুমের দিকে রওনা হলো।মিসেস চৌধুরী ভাবছেন যেসব দৃশ্য আজকাল উনার চোখে পড়ছে,তাতে করে এটাই মনে হচ্ছে। চৌধুরী পরিবারে অতি তাড়াতাড়ি কোনো নতুন সদস্য আসতে চলেছে।এসব ভাবতে ভাবতে মুচকি হেসে চলে গেলেন।

দোলনায় বসে তখন কিনারার জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা, সাদিত এতোটাই এগ্রেসিভ হয়ে কিনারার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছিলো।যে কিনারা নিশ্বাস ও নিতে পারছিলোনা।কিনারা নিশ্বাস নিতে না পেয়ে চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো।আর একটু ওভাবে থাকলে কিনারা দম আটকে মারা যাবে। এদিকে সাদিতের কোনো হেলদোলই নেই, ও ওর মনের মতো কিনারার ঠোঁট শুষতেছিলো।কিন্তু কিছুক্ষন পর কিনারার অবস্থা খুবই করুন,কিনারা আর না পেয়ে সাদিতের বুকে হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে সাদিতকে সরিয়ে দিলো—কিনারা সরিয়ে দিলে সাদিত আবার কিস করতে যেতে ধরলে কিনারা সাদিতের বুকে হাত দিয়ে আঁটকে বলে—- কি করছেন কি মিস্টার চৌধুরী, পাগল হয়ে যান নাকি।ছাড়ুন আমাকে।কিনারা যেনো এতো ক্ষনে দম নিয়ে বাঁচলো।কিনারা রাগ পেলেই কিছু বলতে পারছে না।ও ঠিকমতো দম নিতে পারছেনা।

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ১১+১২+১৩+১৪+১৫

সাদিত যেনো কিস করতে করতে কিনারার মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলো।কথাটা শুনে সঙ্গে সঙ্গে সাদিত চোখ খুলে কিনারার দিকে তাকালো।কিনারার দিকে তাকাতেই দেখলো কিনারার সারা চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।সাদিতও শ্বাস নিতে পারছিলো না। কিছুক্ষন পর সাদিত স্বাভাবিক হয়ে, কিনারার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল– কিনারা তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে, আমি তোমার থেকে দূরে থাকতে পারছিনা।যখনি দূরে যাচ্ছি আমার মনে হয় আবার কখন তোমার কাছে আসবো।তোমার সাথে থাকলে কেমন নিজেকে শান্ত অনুভব করি।সমস্ত ক্লান্তি যেনো দূরে সরে যায়।

এদিকে সাদিতের কথা শুনে কিনারা কোনো উত্তর দিলোনা কারণ কিনারার শ্বাস নিতে পারছেনা।কিনারার প্রচুর শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।কিনারার বুকে ব্যাথার অনুভব করছে।কিনারা যেনো শ্বাস নিতেই আরো বেশি হাঁপিয়ে যাচ্ছে। কিনারার শ্বাস নিতে এতোটাই কষ্ট অনুভব হচ্ছে কিনারা ঘামতে শুরু করলো।কিনারা দোলনায় বসে আস্তে করে মাথাটা নিচু করে দুহাত দিয়ে ধরে শ্বাস নিতে শুরু করলো।

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ২১+২২+২৩+২৪+২৫