দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ১১+১২+১৩+১৪+১৫

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ১১+১২+১৩+১৪+১৫
লেখিকাঃরাকিবা ইসলাম আশা

হঠাৎই পুরো রুম অন্ধকার হয়ে গেলো।এমন সময় একটা স্পষ্টলাইট সিঁড়ির দিকে ফোকাস করলো।সবাই দেখলো একজন কপোত-কপোতী সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে।
স্পট লাইট ফোকাস করতেই সাদিত কিনারার হাতে হাত রাখলো,সাদিত হাত রাখতেই,,কিনারা এ যেনো এক স্বর্গীয় সুখ অনুভব করতেই কিনারার বুক কেঁপে উঠলো।ওরা নিচে নামতেই সারা রুমের আলো আবার জ্বলে উঠলো।
কিনারা দেখলো—- পার্টির সব লোকদের দেখে মনে হচ্ছে হাই প্রফেশনাল।ছেলে মেয়ে উভয়ই।বেশিরভাগই গর্জিয়াস আর ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরিহিত।

কিনারা আর সাদিত নামতেই সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।কারণ এতো বছর এ ফ্যামিলির সাথে এদের এতো ভালো সম্পর্ক এতো যাতায়াত ছিলো কিন্তু সাদিতকে কখনো কোনো মেয়ের সংস্পর্শে যেতে দেখেনি।সবসময় সাদিতকে এভোয়েড করতে দেখেছে। সে কিনা একটা মেয়ের হাত ধরে আছে।সবার মনে এক প্রশ্ন কে এই মেয়ে।সাদিতের সাথে কি সম্পর্ক।
কিনারা আর সাদিত নেমে মিস্টার সাইফ চৌধুরী কাছে আসতেই উনি একটা মাইক নিয়ে বলতে শুরু করলো—

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আজকের এই সন্ধ্যায় আমাদের এই পার্টিতে এটেন্ড করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকে এটা কিসের পার্টি হচ্ছে এটা হয়তো অনেকে জানেন আবার অনেকে জানেন না। তো এখনি সবাই জানতে পারবেন।আজকের এই সন্ধ্যা আমার ছেলে সাদিত চৌধুরী ও তার নিউলি ম্যারিড ওয়াইফ মিসেস কিনারা চৌধুরীর জন্য। আসলে ওদের বিয়েটা হুট করেই হয় যার জন্য কাউকে তেমন ভাবে জানানোও হয়নি।তার জন্য আমি ভিষনভাবে দুঃখীত সবার কাছে। তো আপনারা ওদের জন্য দোয়া করবেন যেনো ওরা সুখী হতে পারে।আর একটু পর পার্টি শুরু হবে আপনারা এনজয় করুন।বলে মাইকটা রেখে দিলো।

এদিকে সবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, তারপর একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।আর বলাবলি শুরু করেছে।
সাদিত বলে উঠলো — আপনারা এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে যান খাওয়া-দাওয়া করুন আর পার্টিটসকে এনজয় করুন।
তারপর সবাই একে একে এসে সাদিত আর কিনারাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। এসব কিছুই কিনারার ভালে লাগছে না। কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে কিনারার।কখনো এমন পার্টিতে পার্টিসিপেট করেনি।পার্টি শুরু থেকে শেষ অব্দি কিনারা৷ অস্বস্তিতে ছিলো। সাদিতের তা চোখ এড়ালো না।

তাই পার্টি শেষ হতেই সাদিত কিনারার হাত ধরে গাড়ির পিছনে সিটে বসায় এবং নিজেও বসে।আর ড্রাইভারকে ড্রাইভ করতে দেখে কিনারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেসা করে —আমরা কোথায় যাচ্ছি এতো রাতের বেলায়।
সাদিত কিনারা কোমড় টেনে নিজের কাছে এনে বসিয়ে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে — হিসসসসসস কোনো কথা বলো না। চুপচাপ বসে থাকো।তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

সাদিত কিনারার ঠোঁটে ওর ঠান্ডা আঙুলটা রাখতেই কিনারার সারা শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে একটা শীতল শিহরন বয়ে গেলো।তার সাথে সাদিতের কড়া পারফিউমের গন্ধে কিনারা হঠাৎই মাতোয়ারা হয়ে আর কিচ্ছু বলল না চুপচাপ বসে রইলো।
গাড়ি গিয়ে থামলো একটা নদীর পাড়ে।সাদিত কিনারার হাত ধরে নামালো।।।কিনারা দেখলো পুরো আকাশ তাঁরাই ভারা, আজ আকাশে বিশাল বড়ো এক চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলোয় নদীর পানি গুলো চিকচিক করছে।বিশাল তাঁরা ভরা আকাশের নিচে খোলা নদীর পাড়ে সাদিত কিনারার জন্য ক্যান্ডেললাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছে,চারপাশ সাদা লাল নীল রঙের আলো দিয়ে সাজিয়েছে।একটু দূরেই একটা টেবিল চারপাশটা রঙিন কাপর দিয়ে ঘিরে ডেকোরেশন করা। টেবিলটা বেশ সুন্দর করে সাজানো।পুরো টেবিল মোম, ফুল দিয়ে সাজানোআর ছোট ছোট এলইডি লাইট। সবকিছু মিলে খুব সুন্দর লাগছে চারপাশের পরিবেশটা।

কিনারা এসব দেখে খুবই অবাক হয়ে গেলো। ও কি বলবে ভাষা খুঁজে পেলো না।শুধু হা হয়ে চারপাশটা দেখছে আর এতো সুন্দর পরিবেশটা কিনারা মিস করতে চায়না।তাই যতটুকু সম্ভব উপভোগ করছে।
সাদিত পাশ থেকে বলে উঠলো — বউ এবার যাওয়া যাক সামনে।
সাদিত কিনারার হাত ধরে টেবিলের কাছে এনে একটা চেয়ার টেনে বসতে বলল।
তারপর সাদিত ও বসে পড়লো।সাদিত বসতেই একটা লোক এসে টেবিলে খাবার রেখে গেলো।
কিনারা খাবারগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে আবার সাদিতের দিকে তাকালো।

কিনারা তাকাতেই সাদিত বলল৷ — আমি দেখেছি পার্টিতে তুমি অতো লোকের সামনে তেমন কিছুই খাওনি।তারপর ভাবলাম তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিলে কেমন হয়।তোমার জন্য আমার পক্ষ থেকে এই ছোট্ট প্রচেষ্টা।তো বলো কেমন লেগেছে সবকিছু পছন্দ হয়েছে তোমার।
কিনারা সাদিতের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো,কিনারার চোখে মুখে তখনও কৌতুহলের ছাপ, মুচকি হেসে বলল খুব পছন্দ হয়েছে।
সাদিত বলে উঠলো— তুমি পার্টিতে খাওনি জন্য আমারও আর কিছু খেতে ইচ্ছে করলো না।
সাদিতের কথা শুনে কিনারা চুপ হয়ে গেলো।কিনারা সে সময় খেয়াল করিনি সাদিত খেয়েছে কিনা।কিনারা ভেবেছিলো সাদিত হয়তো ওকে শুধু ট্রিক করতে চাইছে।কিন্তু না বিষয়টা যে অন্য। এসব ভাবতে ভাবতে কিনারার মুখখানা লাল হয়ে গেলো।ঠিক ওই সময় ও ঠিক কি বলবে তা বুঝে উঠতে পারছিলো না।

তারপর দুজন মিলে রাতের ডিনার শেষ করার পর সাদিত বলে উঠলো তোমার জন্য আরও একটা সারপ্রাইজ আছে।বলেই কিনারাকে কিছু বলতে না দিয়ে সাদিত কিনারার চোখটা ধরে সামনে কিছু দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর ছেড়ে দিলো।
কিনারা দেখলো একটা ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা, খুব সুন্দর করে নানান রঙের লাইটিং করা।আর ফুলে ফুলে সাজানো।কিনারা এক এক সারপ্রাইজ দেখে নিজেই শকড।কিনারা কখনো ভাবতে পারেনি এতো সুন্দর একটা রাত ও ওর লাইফে কাটাতে পারবে।এসব অবাক হয়ে দেখতেই ধ্যান ফিটে সাদিতের ডাকে।সাদিতে ওকে হাত ধরে খুব সাবধানে নৌকার কাছে নিয়ে বসিয়ে দিলো।
তারপর সাদিত নিজেই নৌকা বাইতে শুরু করলো।

কিনারা তো এবার শকড এর চরম শীর্ষে একি সেই সাদিত চৌধুরী, যে সবসময় নিজের অ্যাটিটিউড, বিজনেস, আর নিজের গাম্ভিত্বপূন নিয়ে থাকতো।সে কিনা আজ আমাকে খুশি করার জন্য এসব পাগলামি করছে।এসব ভেবেই চুপ করে রইলো।
কিনারা ততক্ষণ চুপ ছিলো যতক্ষন না সাদিতের সেই অ্যাকট্রাক্টিভ গলার স্বর শুনতে না পেলো।
কিনারা এতোই ভাবনায় মগ্ন ছিল যে কখন নদীর মাঝে চলে এসেছে খেয়ালই করেনি।
কিনারা দেখলো চাঁদের আলো আর চারপাশের পরিবেশটা খুবই মহনীয় লাগছিলো।কিনারা হঠাৎই দেখলো সাদিত ওর কাছে এসে বসতেই সাদিতের শরীরের আবার সেই মন মাতানো মিষ্টি সুবাস কিনারার নাকে এসতেই কিনারা কেমন একটা উম্মাদ হয়ে গেলো।
সাদিতকে এতো কাছাকাছি পেয়ে কিনারার হার্টবিটের পারদ পৌঁছলো অন্য মাত্রায়।

সাদিত কিনারার কোমড় জরিয়ে ওর আরও কাছে টেনে আনলো।কিনারা চমকে উঠে সাদিতের ছোঁয়া পেয়ে।কিনারার চকমকানো মুখ দেখে সাদিত মনে মনে হাসলো।
কিনারা ছাড়াতে ছাড়াতে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল — কি করছেন কি মিস্টার চৌধুরী। আমাদের বাড়ি যেতে হবে অনেক রাত হয়েছে।
সাদিত কিনারার ঠোঁটে আঙুল রেখে জোরে বলল—হিসসস
কিনারা চুপ হয়ে গেলো।

সাদিত কিনারাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তারপর কিনারার সেই গোলাপি টুসটুসে ঠোঁট দুটো নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো।কিনারা চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।কিছুক্ষন পর সাদিত কিনারার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে কিনারার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে,ছোট ছোট করে ঠোঁট ছোঁয়াতে লাগলো।কিনারা সাদিতের শার্ট আঁকড়ে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর কেঁপে কেঁপে উঠছে।সাদিত কিনারার বন্ধ চোখের পাতায় আর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ে সরে এলো।

তারপর কিনারা আস্তে আস্তে চোখ দুটো খুলে সাদিতের দিকে তাকালো।বড়ো বড়ো করে শ্বাস নিলো তখনো কিনারার হার্টবিট ছুটছে।সাদিত কিনারার এতো কাছে ছিলো যে কিনারা লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিলো।কোনো রকম কথা বলতে চাইলো না।ভিতরে ভিতরে খুব রাগ হলো কিনারার।সাদিতের হুটহাট করে কাছে চলে আসা কিনারার মোটেও ভালো লাগে না।
সাদিত কিনারার দিকে তাকিয়ে বলল তুমি আবার লজ্জা পাচ্ছো।আমি তোমার বিয়ে করা হাসবেন্ড আমি কাছে আসলে এতে লজ্জা কিসের হ্যাঁ।

কিনারা সাদিতের কথা শুনে ওর মুখটা তুলে সাদিতের দিকে তাকালো—সাদিতের রোমান্টিক চোখ দুটো দেখে কিনারার চোখের পলক আর সরলো না।
সাদিত কিনারার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। তারপর কিনারার থুতনিটা ধরে টেনে উপরে তুলল।সাদিত অ্যাকট্রাক্টিভ গলায় বলল— তুমি এভাবে চুপ থাকবে না।এরকম চুপ করে থাকলে কিন্তু তোমার ওই জোড়ালো ঠোঁট দুটো খেয়ে ফেলবো।
সাদিতের কথা শুনে কিনারার মুখের এক্সপ্রেসন চেন্জ হয়ে গেলো।

সাদিত কিনারার মুখের এক্সপ্রেসের দেখে বলল —হ্যাঁ ঠিকই শুনেছো।খেতেই পারি তো কারণ আফটার অল তুমি ওয়াইফ আমার আর আমি তোমার হাসবেন্ড।সাদিত তখনো কিনারার থুতনি টা চেপে ধরে আছে।আর একটু কিনারার কাছে আসতেই সাদিতের শরীরের৷ উষ্ণতা কিনারার শরীরে প্রবেশ করলো।সাদিতের আবার সেই মাতোয়ারা ঘ্রাণ কিনারার নাকে এসে পৌঁছলো।সেই গন্ধে কিনারার মন উতালপাতাল হতে শুরু করলো। সাদিত যা বলল সেই কথা গুলো কিনারাকে খুবই অ্যাট্রাক্ট করলো।সাদিতের ওই চোখ মুখ দেখে কিনারা ভুলেই গেলো,,ও একটু আগে সাদিতের উপর রেগে ছিলো।সাদিতেরে থেকে লজ্জায় নিজের মুখ সরিয়ে নিতে বাধ্য হলো কিনারা।আড়চোখে তাকিয়ে কিনারা বুঝতে পারলো যে সাদিত ওর দিকে এখনো এক ভাবে তাকিয়ে আছে। ঠিক ওই অবস্থায় কিনারার মুখ খানা লজ্জায় আরো লাল হয়ে গেলো।

সাদিতের চোখ দুটো ছিলো বড়ই মায়াবী, ওই পাগল করা দৃষ্টি দিয়ে সাদিত যেভাবে তাকিয়ে ছিলো।কিনারা যদি একটু কেয়ারলেস হয়ে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে।। তাহলে কিনারা সাদিতের চোখের দিকে তাকিয়ে
অথৈ সাগরে হারিয়ে যেতে বাধ্য।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ১২

“সাদিত হঠাৎই বলে উঠলো কিনারা তুমি কি এই বিয়েটাকে এখনো মন থেকে মেনে নিতে পারোনি???
কিনারা মুখ তুলে সাদিতের চোখের দিকে তাকালো—-সাদিতের ওই মায়াবী গভীর চোখের তীক্ষ্ণ চাহনি দেখে কিনারা কিছুটা ঘাবড়ে গেলো—-অস্ফুটে গলায় বলল হ্যাঁ হ্যাঁ মানি তো।কথাটা বলতেই লজ্জায় কিনারার চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো।
সাদিত কিনারার এতো কাছে ছিলে যে কিনারা ঠিক মতো নিশ্বাসও নিতে পারলো না৷।কিনারা নিজের চোখের সামনে সাদিতের মুখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলো না।

সাদিত কিনারার আরো কাছে গিয়ে বলল— ও তাই। ইতি মধ্যে কিনারা সাদিতের নিশ্বাসটা নিজের ঠোঁটের উপর অনুভব করতে পেলো।সাদিত নিজের আঙুল গুলো কিনারার থুতনিতে চেপে ধরে, সাদিত আস্তে করে বলল,,,,কিস মি—-এন্ড আই উইল বিলিভ ইউ।
কথা গুলো শুনে কিনারা ঘাবড়ে গিয়ে মাথাটা একটু সরিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে সাদিতের তাকালো।।।।।। তাকিয়ে বলল হোয়াট—-
সাদিত এক মুহূর্ত দেরি না করে কিনারার ঘাড়ে হাত রাখলো—-রেখে কিনারাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে –নিজের ঠোঁট দুটো কিনারার ঠোঁটের উপর রেখে কিনারাকে নিজের বুকের কাছে জড়িয়ে ধরলো। কিনারার নরম ঠোঁট দুটো সাদিতকে আলাদা অনুভূতি দিচ্ছিলো।
কিনারা নার্ভাস হয়ে সাদিতকে ঠেলে সারিয়ে দিলো। সাদিতকে সরিয়ে দিয়ে কিনারা সাদিতের থেকে একটু দূরে গিয়ে বসলো।এবং কিনারা একটু রেগে গেলো।হাঁপাতে হাঁপাতে কিনারা বলল মিস্টার চৌধুরী। আপনি কি পাগল নাকি, এভাবে কেউ —— সাদিতের এরকম বিহেভিয়ার দেখে কিনারা অবাক হয়ে যাচ্ছে ভিতরে ভিতরে অনেক রাগও হলো।কিনারা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। কিনারার মনে হলো এক্ষনি পারলে এই নৌকা থেকে নেমে পড়ি,কিন্তু তা সম্ভব হলো না কারণ নৌকাটা তখন মাঝ নদীতে।

এসব ঘটনার পর কিনারার চোখ মুখ কান লাল হয়ে গিয়েছিলো।শরীর থেকে আলাদা উষ্ণতা যেনো ঝড়ে পরছিলো।
এসব দেখে সাদিত আর কিনারার উপর জোর খাটাতে চাইলো না,কারণ সাদিত চাই না কিনারা ওকে ভয় পাক।
সাদিত ভাবলো সবে বিয়ে হয়েছে আমাদের অনেক সময় আছে এখনি এতো এগ্রেসিভ হওয়ার কোনো দরকার নেই।
তারপর সাদিত কিনারার থেকে কিছুটা দূরে বসে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল—ওকে চল এখন আমরা জোছনা বিলাস করি। বলে উঠে কিনারার পাশে বসে আকাশের দিকে একটা আঙুল তুলে বলল দেখো আকাশটাই আজ কত্ত সুন্দর কিউট একটা চাঁদ উঠেছে ঠিক তোমার মতোই।কিনারাও আকাশে তাকিয়ে চাঁদ দেখতে শুরু করলো।

তারপর সাদিত বলল জানো কিনারা চাঁদকে দেখে যে কারোর মন এমনি ভালো হয়ে যাবে,চাঁদের আসল সৌন্দর্য কেউ বুঝতে পারেনা,তোমাকে বুঝতে হলে চাঁদের আলোকে ফিল করতে হবে,তবেই তুমি চাঁদের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। চাঁদের ওই অপরুপ সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে শ্বাস নাও দেখবে মনের ভিতর আলাদা একটা প্রশান্তি কাজ করবে।যা তুমি অন্য কিছুতে পাবে না। আগে আমি প্রায়ই কাজ শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে যেতো,তো রাতে কাজ শেষ করে ছাদে চলে যেতাম,জোৎসনার দিকে তাকিয়ে থেকে মনটাকে রিফ্রেশ করে ঘুমাতে যেতাম।তখন ঘুৃমটা অনেক ভালো হতো।
কিনারা সাদিতের কথা মতো আকাশে ওই চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে শুরু করলো।

নৌকায় বসে নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে রাতের সৌন্দর্যকে উপভোগ করছে কিনারা আর তাঁর পাশে সাদিত ও বসে আছে ।আকাশে অনেক তারার মেলা, তার সাথে চাঁদের আলোয় চারপাশটা আলোকিত হয়ে আছে।মনে হচ্ছে চাঁদের সমস্ত সৌন্দর্য যেনো আজ প্রকৃতির মাঝে সবটা বিলিয়ে দিয়েছে।সেই সাথে পানির স্রোতের গুঞ্জন পরিবেশটাকে আরো মহনীয় করে তুলেছে, চারপাশটা দেখে কিনারার মনে হচ্ছে কেউ তাঁর মনের সমস্ত রং তুলি দিয়ে চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটা এঁকেছে। নদীর পাড়ে অনেক বাতাস, যাকে বলে শীত ধরানো বাতাস।এতো বাতাসের মধ্যে ও কিনারা উপলব্ধি করতে পারছে তার ঘাড়ে কারোর গরম নিশ্বাসের।

পাশে তাকাতেই কিনারা দেখলো সাদিত কিনারার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে।চাঁদের আলোয় সাদিতের মুখটা খুবই মায়াবী লাগছিলো। কিনারা সাদিতের দিকে ওভাবে কত ক্ষন তাকিয়ে সময় অতিবাহিত করেছে তা কিনারা নিজেও জানে না।এই প্রথম কিনারা সাদিতের দিকে এতো সময় ধরে তাকিয়ে ছিলো।সাদিত এতোটাই লম্বা যে মাথা রাখতেই কিনারার কষ্ট হচ্ছে । সাদিত ওর পুরো শরীরটা যেনো কিনার উপর ছেড়ে দিয়েছিলো।

কিনারা সাদিতকে ডাকতেই, সাদিত একটু নাড়াচাড়া করে কিনারার আরো কাছে এসে এক হাত কিনারার পেটের উপর রাখলো।এতে কিনারার মনে হচ্ছে ওর দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।ঘাড়ে গরম নিশ্বাস আর হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে আছে,কিনারা মনে মনে লোকটা এমন কেন।তারপর সাদিতের মুখের দিকে তাকিয়ে বড়োই মায়া হলো,তারপর ভাবলো থাকনা একটু ঘুমিয়ে ক্ষতি কি।তারপর মুচকি হেসে আকাশের পানে
আবার তাকালো।

কিছুক্ষন পর সাদিতের নাকে একটা মিষ্টি গন্ধ পেলো, মিষ্টি গন্ধে যেনো মম করেছে নাকের চারপাশ । আচ্ছা এটা কি পারফিউম গন্ধ নানা এটা তো মনে হচ্ছে কারোর শরীরের গন্ধ। সাদিত আস্তে আস্তে চোখ খুলল।তারপর যখন পুরো হুসে এলো,সাদিত বুঝতে পারলো ও কিনারার কাঁধে মাথা দিয়ে রেখেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।সাদিত বুঝতেই ঘাড়টা তুলে নিলো,সাদিতের পুরো ঘাড় ব্যাথা৷ হয়ে গেছে।কিনারার কি কাঁধ ব্যাথা করেছে না।

সাদিত কিনারার দিকে তাকাতেই দেখলো কিনারা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদিত আস্তে করে ডাকলো কিনারা।
কিনারা সাদিতের ডাকে ঘুরে তাকালো সাদিতের দিকে তাকিয়ে ভাবলো উনি কখন উঠে গেলেন।
সাদিত বলে উঠলো — কতক্ষন ওভাবে কাঁধে মাথা রেখে ছিলাম ডাকোনি কেন।তোমার কাঁধ নিশ্চয়ই এতোক্ষনে ব্যাথা হয়ে গেছে।
কিনারা বলল আপনি ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন আর৷ যদিও আমি আপনাকে একবার ডেকেছিলাম ৷ কিন্তু আপনি শুনেননি।পরে আর ডাকতে ইচ্ছে করেনি।

আসলে কখন৷ যে চোখটা লেগে গিয়েছিলো বুঝতেই পারিনি, তারপর সাদিত উঠে বলল চল এবার ফেরা যাক। অনেক রাত হয়েছে। চলো।
কিনারা মাথা নেড়ে হুম বলে,দাঁড়িয়ে গেলো।
দুজনে নদীর পাড় থেকে হেঁটে গাড়ির কাছে যাওয়া শুরু করলো।একটু পর আচমকাই সাদিত কিনারাকে কোলে তুলে হাঁটতে শুরু করলো।কিনারাকে কিচ্ছু না বলে।
আরে আরে করছেন টা কি ছাড়ুন আমাকে ,পড়ে যাবো তো,কখন না কখন ফেলে দেন তার ঠিক ঠিকানা নেই। আমাকে নামান বলছি।কিনারা বলে উঠলো

সাদিত কিনারার কথা শুনে — হেসে কিনারার দিকে তাকিয়ে বলল বিশ্বাস রাখতে পারো কখনো ফেলবো না।
— বলে কিনারাকে আরো একটু কাছে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
কিনারা বুঝতে পারলো ওর হাজার না মিস্টার চৌধুরী শুনবেন না।তাই উপায় না পেয়ে বাধ্য মেয়ের মতো সাদিতের গলা জড়িয়ে ধরলো।
ততক্ষণে কিনারা সাদিতকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।ছেলে মানুষ এত্ত ফর্সা হবে কেন।কিনারা ভাবলো আমিও যদিও ফর্সা কিন্তু মিস্টার চৌধুরীর থেকে কমই হবো।এই ভেবে কিনারার হিংসা হলো।
এতোকিছু ভাবনার মধ্যে গাড়ির কাছে এসে কিনারাকে নামিয়ে দিয়ে সাদিত বলল গাড়িতে উঠো।কিনারাও বাধ্য মেয়ের মতো উঠে পড়লো,তারপর দুজনে মিলে বাসায় ফিরে গেলো।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ১৩

সকালের হাস্যজ্জল রোদে ঘুমটা ভেঙে গেলো সাদিতের।।জানালার পর্দা সরে আসছে,আর সেই ফাঁক দিয়ে রোদের আলো সাদিতের মুখের উপর তীর্যক ভাবে পড়ছে।রোদের যেনো প্রধান কাজই সাদিতের ঘুম ভাঙিয়ে দেওয়া।সাদিত বেড-টেবিল থেকে ঘড়িটা হাতে নিয়ে টাইম দেখে উঠে পড়ে।তারপর সাদিত বিছানা ছেড়ে পর্দা টান দিতেই রোদ কিনারার মুখ বরাব পরেছে।কিনারা ভ্রু ঈষৎ কুঁচকে ফেলল।পর্দা টান দিয়ে ঢেকে দিতেই তা মিলিয়ে গেলো।সাদিত স্মিত হেসে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।
সাদিত ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে কিনারা বিছানায় কি জানি হাতরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই মুহুর্তে কিনারার চোখ খোলা নারাজ।।।।।।কিনারা কি খুঁজে বেড়াচ্ছে তা বোধগম্য হতেই সাদিতের মুখে প্রচ্ছন্ন হাসি ছেয়ে গেলো।তারপর সাদিত কিনারার পাশে শুতেই কিনারা সাদিতের বুকে লেপ্টে যেতে লাগলো বিড়ালছানার মতো।সাদিত জড়িয়ে ধরলো হাসিমাখা মুখ নিয়ে কিনারার কপালে চুমু খেলো একটা।

সাদিত অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছিলো।পিছনে কেউ আসছে দেখে সাদিত ঘুরে তাকালো —-তাকিয়ে দেখলো কিনারা দাঁড়িয়ে আছে।কিনারার চোখ সাদিতের চোখের উপর পড়তেই সাদিত ভ্রু কুঁচকে তাকালো—-
সাদিত কিনারার দিকে এমনভাবে তাকালো কিনারা ভয় পেয়ে গেলো।তখন কিনারার মনে হলো ও হয়তো কোনো ভুল করে ফেলেছে।
কিনারাকে দেখে সাদিত খুব গম্ভীরভাবে বলল—এদিকে এসো।

কিনারাও বাধ্য মেয়ের মতো সাদিতের দিকে এগিয়ে গেলো। কিন্তু সাদিতের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো। কিনারা সাদিতের সুন্দর মুখের দিকে তাকাতেই কিনারার হার্টবিট টা বেড়ে গেলো। কিনারা নিজেকে শান্ত করার জন্য একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলো মিস্টার চৌধুরী। আমার আপনাকে কিছু কথা বলার ছিলো।
কথাটা শুনে সাদিত খুব শান্ত ভাবে বলল–শিওর। বসো আগে খেয়ে নাও তারপর ।
কিনারা বলল হ্যাঁ খাবো তার আগে আমার কথা টা শুনুন।
হিসস আগে চুপচাপ খেয়ে নাও।

এদিকে কিনারাকে অন্য মনস্ক হয়ে থাকতে দেখে সাদিত বলে উঠলো — এদিকে এসো।ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছো।
কিনারা সাদিতের পাশের একটা চেয়ারে বসতে যাবে ।সাদিত ওর হাতটা বাড়িয়ে কিনারাকে জড়িয়ে ধরলো। সাদিত কিনারাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরলো এতে কিনারা একদম সাদিতের কোলের উপরে বসে পড়লো।সাদিত কিনারার কোমরে ওর হাতটা রেখে কিনারাকে আরো কাছে টেনে নিলো।দুহাতে কিনারার কোমড় আঁকড়ে ধরে কিনারার চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো,কিনারার চুলের গন্ধে সাদিত যেনো মাতোয়ারা হয়ে গেলো।

সাদিতের মা তখন ডাইনিং রুমে এসে দাঁড়াতেই ছেলের এরকম কান্ড দেখে লজ্জায় পিছন ঘুরে চলে যেতে যেতে আর মনে মনে ভাবলো ছেলেটা আমার কিনারা মাকে অনেক ভালোবাসে।যদিও কিনারা খুবই সুন্দরী, কিন্তু ও এখনো ছোট। পড়াশোনা করছে।সাদিতের মা ভাবেনি সাদিত এতো ছোট একটা মেয়েকে ভালোবাসবে।সাদিতের মা এটাও ভাবলো কিনারা সাদিতের মনে আলাদা একটা জায়গা নিয়ে আছে। যাক এতোদিনে যদি আমার কাজ পাগল ছেলেটার একটু স্বস্তি মিলে।সাদিতকে অনেকদিন পর এভাবে হাসি খুশি দেখলো।।এসব ভেবে সাদিতের মা আনন্দে প্রায় কেঁদেই দিলো।

সাদিত একহাতে কিনারার কোমড় জড়িয়ে ধরে, অন্য হাতে টেবিলের উপর রাখা একটা জুসের গ্লাস তুলে কিনারার মুখের কাছে এনে বলল হা করো আগে একটু জুস খেয়ে নাও।
কিনারা চুপ করে রইলো, কিনারা ওর মাথা টা ঘুরিয়ে নিলো।তারপর বলল আমি নিজে নিয়েও তো খেতে পারি।
সাদিত কিনারার কথা শুনে একটা বাঁকা হেসে বলল– ওহহ্— তোমার এভাবে থাকতে ভালো লাগছেনা বুঝি,আগে বলবে তো।
কিনারা সেই মুহুর্তে সাদিতের কথা শুনে আর একটা কথা বলারও সাহস পেলো না।তাই চুপচাপ কথা না বাড়িয়ে সাদিতের হাতে জুসটা খেয়ে নিলো।তারপর বাকি খাবারও সাদিতের হাতে খেলো।

ব্রেকফাস্ট করতে করতে কিনারার বুকটা ধুকপুক করছিলো।সাদিতের কিনারাকে খাইয়ে দিতে খুব ভালো লাগছিলো।
খাওয়া শেষে সাদিত কিনারার ঠোঁট টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে বলল — এবার বলো কি জানি বলতে চাচ্ছছিলে।
কিনারা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো —আপনি কাউকে বলে আমাকে একটু কলেজে পৌঁছে দিতে ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন।আসলে সামনে মাসে আমার ইয়ার চেন্স পরিক্ষা, তাই কলেজে যাওয়াটা আমার খুবই প্রয়োজন। আর আজকে আমার একটা ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে।
সাদিতকে কিছু বলতে না দেখে, কিনারা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল— মিস্টার চৌধুরী আপনি আমাকে বিয়ের আগে কথা দিয়েছিলেন,আপনি আমার সব দায়িত্ব পালন করবেন।এখন আপনি যদি আপনার কথা না রাখেন আর আমি যদি কলেজে না যেতে পারি আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।প্লিজ আপনি আমাকে কলেজে যেতে দিন।

সাদিত বলে উঠলো — আমি কি একবারও বলেছি যে তোমাকে যেতে দিবো না।তুমি যখন বলেছো,তো তুমি যাবে। আমি কি না করতে পারি।আর কলেজে যেতে ব্যবস্থা করে দিতে পারবো না তবে আমি নিজে তোমাকে কলেজে পৌঁছে দিতে পারি।বলে সাদিত ওর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল– এখন নয়টা চল্লিশ বাজে যাও রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি এসো। আমি তোমাকে কলেজে নামিয়ে দিচ্ছি।
কিনারা হালকা হেসে উপরে চলে গেলো।

প্রায় দশ মিনিট পর কিনারা রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলো।কিনারা একটা মেরুন কালার কুর্তি আর জিন্স পড়ে,স্কার্ফটা গলায় পেঁচানো ।মেরুন কালারটা যেনো এই ফর্সা শরীরে দারুণ মানিয়েছে। মাথার চুল গুলো উঁচু করে কাললি করে বাঁধা। আর কানের সাইট দিয়ে কয়েকটা চুল বের করা,মুখে কোনো মেকআপ নেই, ঠোঁটে গোলাপি লিপজেল হালকা করে দেওয়া। একদম ন্যাচারাল লুক ব্যাস এতেই কিনারাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
সাদিত কিনারারে এতোটাই মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো যে, কখন যে কিনারা ওর সামনে চলে এসেছে তা বুঝতেই পারলো না।ধ্যান ফিরলো কিনারার৷ ডাকে।

চলুন মিস্টার চৌধুরী অনেক দেরি হয়ে গেছে।বলে কিনারা লজ্জা মাখা মুখে মুচকি হাসলো।সাদিতের দিকে তাকালো
সাদিত সঙ্গে সঙ্গে,একহাত দিয়ে ওর নিজের বুক চেপে ধরলো।
এতে কিনারা ভয়ে ঘাবড়ে যায়,কিনারা সাদিতের কাছে গিয়ে সাদিতের হাতটা ধরে জিজ্ঞেসা করলো। কিকক-কি হয়েছে কি মিস্টার চৌধুরী।বুকে কোনো সমস্যা হয়েছে আপনার।চলুন আপনি সোফায় গিয়ে বসুন,আমি আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসছি,ডক্টরকে কল দিতে হবে।ছলছল চোখে বলে কিনারা তড়িঘড়ি করে চলে যেতে নিলেই সাদিত কিনারার হাতটা ধরে টেনে বুকের উপর ফেলে দিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে উঠলো — এভাবে কেউ হাসে আর একটু হলেই তো হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো।তোমার হাসিটা ঠিক এখানে গিয়ে লেগেছে, একটা আঙুল বুকের দিকে দেখিয়ে বলে উঠলো।

এতে কিনারা রেগে গিয়ে দু’হাতে ঠেলে সাদিতকে সরিয়ে দিয়ে —কিনারা কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলল আপনি আসলেই একটা যা-তা।বলে রেগে গজগজ করতে করতে চলে গিয়ে,সোজা সাদিতের গাড়িতে গিয়ে৷ বসলো।
সাদিত ও হাসতে হাসতে কিনারার পিছন পিছন গাড়িতে গিয়ে বসলো।
পুরো রাস্তা কিনারা৷ আর একটা৷ কথাও বলল না।সে তখনো রেগে ছিলো। কিনারার কলেজের সামনে গাড়ি দাঁড়াতেই, কিনারা দরজা খুলতে যাবে,এমন সময় সাদিত দরজাটা লক করে ফেলল—-
কিনারা রেগে সাদিতের দিকে তাকিয়ে বলল– এটা কি হলো–

সাদিত হাসতে হাসতে কিনারাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল বউ তোমার তো সাহস কম না।আমাকে না বলে আমার পারমিশন না নিয়েই তুমি নেমে যাচ্ছিলে।এখন আমি যতক্ষন না চাইবো তুমি গাড়ি থেকে নামতে পারবে না।বলে ঠোঁটটা কিনারার গালে স্পর্শ করার আগেই।
কিনারা সাদিতকে ঠেলে সরিয়ে বলে,এতে সাহসের কি আছে,আপনি তো নিজেই আমাকে কলেজে নামিয়ে দেওয়ার জন্যই এসেছেন।কলেজে যেহেতু পৌঁছে গেছি তাহলে তো নামতেই হবে তাই না,কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো কিনারা।
সাদিত কিনারাকে আবার নিজের কাছে নিয়ে এসে শক্ত করে কিনারাকে জড়িয়ে ধরলো। কিনারা কয়েকবার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সাদিতের সাথে পেয়ে উঠতে না পেয়ে ছাড়ানোর আশা ছেড়েই দিলো।

সাদিত কিনারাকে শান্ত হতে দেখে, সাদিত কিনারার নাকে আস্তে করে একটা কামুড় দিয়ে বলল– বাহ্ অনেক রাগতো আমার বউটার,আর এতো শক্তি পাও কোথা থেকে যা ছটফট করছিলে,বলে কিনারার দু গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো,
সাদিতের ছোঁয়া পেতেই হঠাৎই কিনারার হার্টের পারদটা হুট করেই বেড়ে গেলো, আর মুখে নেমে আসলো লজ্জার আভা।
সাদিত কিনারার গালটা আঙুল দিয়ে আস্তে করে টিপে বলল— তুমি আবার লজ্জা পাচ্ছো।
এতে কিনারার আরো বেশি লজ্জা পেলো। লজ্জায় মাথা টা নিচু করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে এবার তো যেতে দিন।দেরি হয়ে যাচ্ছে।
সাদিত কিনারার কপালে ঠোঁট ছোঁয়িয়ে ছেড়ে দিয়ে বলল– যাও এবার।আর শুনো কলেজ ছুটি হওয়ার আগেই, আমি ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দিবো।
তারপর সাদিত দরজার লক খুলে দিতেই —-
কিনারা আস্তে করে ওকে বলে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ১৪

কিনারা মন দিয়ে ক্লাস করছিলো,কিছু ক্ষন পর কিনারার ফোনে সাদিতের একটা ম্যাসেজ এলো।যেখানে লেখা ছিলো।তোমার কি এখনো ক্লাস চলছে।
কিনারা ম্যাসেজ পাঠালো—হ্যাঁ আমি ক্লাসে আছি,, সকালে দুটো ক্লাস হয়েছে তারপর ব্রেক দিয়েছিলো।এখন এই একটা ক্লাস হলেই শেষ আজকের মতো।
ওকে ক্লাস শেষ করে বের হও। আমি নিচে আছি।
কিনারা সঙ্গে সঙ্গে ম্যাসেজ করলো— আপনি নিচে মানে।
সাদিত বলল কাম ডাউন আমি তোমাদের কলেজের নিচে আছি। ক্লাস শেষ করে তাড়াতাড়ি এসো।
সাদিতের ম্যাসেজ দেখে কিনারা কিনার হকচকিয়ে গেলো।উনি কাজ ছেড়ে আমাকে নিতে কলেজে চলে এসেছে।কি আশ্চর্য।
কিনারা সঙ্গে সঙ্গে ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে বাইরের বারান্দায় আসতেই দেখলো।মেয়েদের কয়েকটি গ্রুপ বারান্দা থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিচে কাউকে একটা দেখছে আর বিরবির করে একে অপরকে বলা হচ্ছে — ওয়াও হি সো হ্যান্ডসাম।তাই না।এতো সুন্দর একটা ছেলে আমাদের কলেজে কি করছে।

কথা শুনেই কিনারা বারান্দা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলো সাদিত কলেজে ওদের ডিপার্টমেন্টের সামনে বড়ো পুকুরের পাশে একটা বড়ো গাছের ছায়ার নিচে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছায়ার মধ্য দিয়েও সূর্যের কিরণ এসে সাদিতের সুদর্শন চেহারার উপর পড়ে যেনো ওর মুখের অভিব্যক্তিকে অতন্ত্য চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।সোনালী রঙের একটা আভা ওর মুখের উজ্জ্বলতাকে আরো খানিকটা উজ্জ্বল করে তুলেছে । সাদিত যে স্কিনটাইট সুট টা পড়ে দাঁড়িয়ে ছিলো,সেই পোশাকে তা আরো স্পষ্টাভাবে সাদিতের গুটা শরীরের সৌন্দর্যের গঠন টা বুঝা যাচ্ছিলো। সাথে পারফেক্টলী ফিট্রেট ফর্মাল পেন্টের লম্বা পা টাকে একটা আরেকটাতে ক্রস করে রেখে সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো।

সবাই একটা লজ্জা মাখা হাসি নিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে থাকলো সাদিতের দিকে ।অনেকে আবার নিচে চলে গেলো।এসব দেখে কিনারার মনে হলো এক একটা যেনো শকুনের চোখ দিয়ে সাদিত কে গিলে খাচ্ছে।আরো দুটো মেয়ে তো রীতিমতো সাদিতের সাথে ফ্লাট করা শুরু করেছে।কিন্ত সাদিত যা অ্যাটিটিউড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো,তাতে সাদিত ওদের পাত্তা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
কিনারার মন চাইলো ওদের সবাইকে বলতে। সাদিত শুধু আমার দিকে অ্যাক্ট্রাকটিভ।এসব দেখে কিনারা এতোটাই বিরক্ত ছিলো যে ভিতরে ভিতরে জেলাস হতে লাগলো।

ওদিকে সাদিত ও এসব মেয়েকে হ্যাংলার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে।৷ বিরক্তিবোধ হলো।হঠাৎই সাদিত কি জানি ভেবে উপরে তাকালো।দেখলো কিনারা বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে সাদিতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।ঠিক যেই মুহূর্তে সাদিত আর কিনারা একে অপরের চোখের দিকে তাকালো।পরমুহূর্তেই সাদিতের মুখের শীতল বিরক্তি ছাপটা হঠাৎই মিলিয়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে সাদিতের মুখের এক্সপ্রেসন পাল্টে গেলো।মনে হলো একটা হলুদ আর লাল রঙের আভা কিনারার মুখের উপর পড়ে চেহারাটা আরো উজ্জ্বল বানিয়ে তুলেছে।

এদিকে সাদিতের চোখে চোখ পড়তেই মুহুর্তের মধ্যে কিনারার হার্টবিটের পারদটা হঠাৎই মাত্রা ছাড়িয়ে গেলো। কিনারা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে চলে এলো।
সাদিতের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলো সাদিত ওর হাতটা কিনারার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে রয়েছে।।যেনো কিনারাকে কাছে টেনে নিতে চাইছে।

কিনারাও ওসব মেয়েদের ভাবনা চিন্তায় পানি ঢেলে দিয়ে ইচ্ছে করেই কোনো হ্যাজিটেশন ফিল না করেই সাদিতকে জড়িয়ে ধরলো।
কিনারা সাদিতকে জড়িয়ে ধরতেই, সাদিত কিনারাকে দুহাতে আঁকড়ে ধরে কিনারাকে নিজের বুকের কাছে টেনে নিলো।
তারপর হঠাৎই কিনারার মুখ টা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো এটা ভেবে যে কলেজের মেয়ে গুলো ওদের দিকে তাকিয়ে যেনো গিলে খাচ্ছে।
তারপর কিনারা বলল— মিস্টার চৌধুরী আমাকে এবার ছাড়ুন কলেজের সবাই আমাদের দেখছে।সাদিত কিনারাকে যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিলো এতে কিনারার কোনো আপত্তি ছিলো না। কিন্তু কিনারা এটা নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলো সবাই ওদের দিকে কেমন যেনো হা করে তাকিয়ে রয়েছে।

হঠাৎই সবার চোখে যেনো প্রতি হিংসা নেমে এলো।ওরা মনে মনে ভাবলো এটা কে, কিনারার৷ বয়ফ্রেন্ড। কিনারার মতো মেয়ে এতো হ্যান্ডসাম ছেলে কিভাবে ডিজার্ভ করে।
তারপর সাদিত কিনারাকে ছেড়ে গাড়িতে বসতে বলে।আর কিনারাও লজ্জায় আর কোনো কথা না বলে সোজা গিয়ে গাড়ি তে বসে পড়লো।সাদিত গাড়িতে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো।
হঠাৎই সাদিত ড্রাইভারকে গাড়ি টা থামাতে বলল —-
গাড়ি থামাতেই কিনারা জিজ্ঞাসা করলো—-এখানে গাড়ি থামাতে বললেন কেন মিস্টার চৌধুরী।এখনো তো আমরা বাড়ি পৌঁছিনি।
সাদিত বলল এই যে তোমাকে ফুচকা খাওয়াবো জন্য।এইখানকার ফুচকা বেস্ট। আমি কখনো খাইনি তবে আমি খুঁজ নিয়ে শুনেছি।আর আমি জানি মেয়েদের নাকি ফুচকা খুবই পছন্দের। তাই আমি তোমার জন্য গাড়ি থামাতে বললাম, তোমারও পছন্দ হয়তো।
কিনারা এসব শুনে মুচকি হাসলো।

সাদিত বলল —তো চলো তোমাকে ফুচকা খাইয়ে নিয়ে আছি।
কিন্তু কিনারা কাচুমাচু করছে।এখনো গাড়ি থেকে নামছে না।
সাদিত কিনারাকে নামতে না দেখে বলল— কি হলো কিনারা নামছো না কেন।নাকি আমার জন্য অপেক্ষা করছো, আমি যেনো তোমাকে কোলে করে নামায় তার জন্য বসে আছো তাই না।মিটমিট করে হেসে সাদিত বলে উঠলো।
কিনারা বলল আসলে——
আসলে কি বউ——–সাদিত বলল

কিছু ক্ষন চুপ থেকে এক নাগাড়ে বলতে শুরু করলো আসলে আমি ফুচকা পছন্দ করিনা।
সাদিত বলল ও আচ্ছা এই ব্যাপার আগে বলবে তো।আমি তো আগেই বলেছি আমি তোমার ব্যাপারে তেমন জানিনা, আমাকে তো বলতে হবে নাকি না হলে জানবো কি করে।তো এবার বলো কি পছন্দ তোমার।
কিনারা মিষ্টি হেসে বলল —আইসক্রিম। আমার ভ্যানিলা ফ্লেভারের আইসক্রিম পছন্দ।যত খুশি দিবেন না নেই সব খেয়ে ফেলবো।তবে এসব ফুচকা-টুসকা আমার ভালো লাগে না।কিভাবে না কিভাবে বানায় দেখলেই গা ঘিনঘিন করে।
সাদিত কিনারার কথা শুনে একটা মুচকি হেসে বলল যাহা হুকুম মহারানী।

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ১৫

তারপর গাড়ি গিয়ে থামলো বড়ো একটা আইসক্রিম স্টলে।কিনারা আর সাদিত গিয়ে বসলো স্টলের ভিতরে।তারপর ওরা বসতেই একটা ওয়েটার মেনু কার্ড৷ নিয়ে এলো। সাদিত মেনু কার্ডটা হাতে নিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখে বলল ।ভ্যানিলা ফ্লেভারের একয়েকটা আইসক্রিম দিতে।

ওয়েটার কিনারা সামনে আইসক্রিম গুলো রাখতেই, কিনারা চট করেই আইসক্রিমের একটা বাটি টা নিয়ে গপ-গপ করে খেতে শুরু করলো।আইসক্রিম একটা খাওয়া শেষ করে আরেকটা হাতে নিয়ে অর্ধেক খাওয়া শেষ হতেই কিনারার মনে হলো পাশে সাদিত বসে আছে।মনে হতেই কিনারা নিজেই নিজেকে বকা দিতে শুরু করলো। এই কিনারা তুই কি রাক্ষস হ্যাঁ।মানলাম তোর আইসক্রিম পছন্দ কিন্তু তাই বলে দুনিয়া ভুলে খেতে শুরু করলি।পাশে যে একটা জলজ্যান্ত মানুষ বসা তার দিকে কি তোর খেয়াল আছে। এমন বেক্কলের মত একা একা গিলছিস।কি ভাবছেন উনি।নিশ্চয়ই রাক্ষস।আর ভাবলেই কি যা করলাম ভাবাটাই স্বাভাবিক।
কিনারা জোর পূর্বক হেসে সাদিতের দিকে তাকিয়ে বলল– আপনি খাচ্ছেন না কেন।খান অনেক মজা।
সাদিত কিনারার বাচ্চামো স্বভাব দেখে একটা মুচকি হেসে বলল বলল আমি আইসক্রিম খাইনা।তার থেকে বরং তুমি খাও আমি দেখি।
কিনারা এক চামচ আইসক্রিম সাদিতের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বলল– আরে হা করুন খেয়ে দেখুন।আপনিও এই ভ্যানিলা আইসক্রিমের প্রেমে পড়ে যাবেন।

সাদিত কিনারার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে খেয়ে নিলো।তারপর কিনারাকে বলল এবার তুমি খাও।
কিনারা তিন বাটি খেয়ে, আর এক বাটি খেতে নিতেই সাদিত কিনার বাটি টা নিয়ে রেখে দিয়ে,খেতে না করলো বলল একবারে এতো খেলে ঠান্ডা লেগে যাবে।তার থেকে ভালো ভ্যানিলা ফ্লেভারের সব আইসক্রিম বাসায় নিয়ে যাবো তারপর তুমি ফ্রিজ রেখে রেখে খেও কেমন।
সাদিতের কথা শুনে কিনারা হেসে গদগদ হয়ে বলল— ঠিক আছে চলুন এবার বলে উঠতে নিলেই সাদিত কিনারার হাতটা ধরে আাবার চেয়ারে বসিয়ে দিলো।

কিনারা সাদিতের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো—-তারপর চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল —কি
আরে কিনারা ওয়েট তোমার মুখে আইসক্রিমের ক্রিম লেগে আছে।এটা আগে ক্লিন করো।
কিনারা সাদিতের কথা শুনে চোখ মুখ কুঁচকে নিজের ফোনটা বের করে দেখলো সত্যিই মুখে আইসক্রিম লেগে আছে। তারপর সাদিতের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে আমতাআমতা করে বলল আসলে এতোগুলো আইসক্রিম আমার জন্য বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। তাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম, আর মন শুধু বাড়ি বাড়ি করছিলো।

সাদিত কিনারার কথা শুনে হুহু করে হাসতে শুরু করলো।তারপর হাসি থামিয়ে ঘোর লাগা চোখে কিনারার দিকে তাকিয়ে ভাবলো,,,এই প্রথম কিনারাকে এতো ছেলে মানুষী করতে দেখলাম।সত্যি একদম বাচ্চাদের মতো স্বভাবের।এতোদিন যেনো এক অন্য কিনারাকে দেখেছে,যে সবসময় চুপচাপ থেকেছে,প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতো না।কিন্তু আজ এই প্রথম সাদিত অন্যরকম কিনারাকে দেখলো।
কিনারা সাদিতের হাসি দেখে ঠোঁট উল্টে ফেলল।

তারপর একটা টিস্যু দিয়ে মুখটা মুছতে নিলেই সাদিত কিনারার হাতটা ধরে ফেলে।তারপর একটানে কিনারাকে কাছে টেনে নিয়ে কিনার মুখে লেগে থাকা আইসক্রিম গুলো সাদিত ওর ঠোঁট দিয়ে খেতে শুরু করলো।
সাদিতের এমন কান্ডে কিনারা যেনো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।মুহুর্তেই কিনারা কেঁপে উঠলো।কিনারার হাত থেকে টিস্যুটা পড়ে গেলো,কিনারা চোখ মুখ খিঁচে সাদিতের শার্টটা চেপে ধরলো।সাদিতের ঠোঁট কিনারার ঠোঁটের চারপাশে স্পর্শ করতেই কিনারার সারা শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেনো একটা উষ্ণ শিহরন বয়ে গেলো ।কিনারার বুকের ভিতর হার্টবিটটা বেমাত্রায় ছুটছিলো। ।কিনারা নিশ্বাস এত্ত ঘন হয়ে এলো যে কিনারা যেনো আর দম নিতে পারলো না।

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ৬+৭+৮+৯+১০

সাদিত বুঝতে পেয়ে কিনারার কাছ থেকে সরে এলো।তারপর একটা টিস্যু নিয়ে সুন্দর করে কিনারার মুখটা ক্লিন করে দিলো।
কিনারা তখনো চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখে দ্রুত শ্বাস ফেলছে।
সাদিত মুচকি হেসে বলল হয়ে গেছে চলো এবার।
কিনারার তখনো জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে লজ্জায় সাদিতের দিকে তাকাতে পারলো না।
তারপর ওরা বাসায় ফিরে এলো।

দুপুরে খাওয়ার পর কিনারার মাথাটা ভিষণ ব্যাথা করছে।তাই সাদিত ওকে ঘুমাতে বলল কিন্তু কিনারার দিনে ঘুমানোর অভ্যাস নেই,, তাই কিনারা ঘুমাতে নারাজ।এক সময় সাদিত কিনারাকে জোর করে কোলে তুলে খাটে শুইয়ে নিজেও কিনারার পাশে শুয়ে বুকের উপর নিয়ে বাধ্য করলো কিনারাকে ঘুমাতে ।সাদিত কিনারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো।

সাদিত আর কিনারা কতক্ষন ঘুমালো ভাবনা অতীত।সন্ধ্যার পর কিনারা অনুভব করলো নরম কিছুর উপর শুয়ে আছে।তারপর কিনারা ভাবলো কই উনার বুক তো শক্ত এতো নরম তো না৷ তাহলে কিসের উপর শুয়ে আছি।কিনারা ঘুম ঘুম চোখে সাদিতকে ধরার চেষ্টা করলো কিন্তু হাত দিয়ে পেলো না।বিষয়টা বুঝার জন্য কিনারা চোখ মেলো তাকালো।চোখ মেলে নিজেকে বালিশের মধ্যে আবিষ্কার করলো কিনারা।আর খাটের এক পাশেই সাদিত বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। তা দেখে হঠাৎই কেন জানি কিনারার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো।আমি উনার বুকে ঘুমিয়ে ছিলাম আর উনি আমাকে বালিশে শুইয়ে দিয়েছে। উনার কাছে উনার কাজ আগে তো, আমি কে।আমি তো কেউ না।কয়দিন পর আমাকে ছুড়ে ফেলে দিবে তা বুঝতে পারছি আমি শুধু উনার মোহ।এসব ভাবতে ভাবতে রেগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

দ্যা বিউটি অফ লাভ পর্ব ১৬+১৭+১৮+১৯+২০