ধূসর রঙের রংধনু গল্পের লিংক || তাসনিম তামান্না

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১
তাসনিম তামান্না

মৃ*ত স্বামীর ছোট ভাইয়ের বাসরঘরে বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে শব্দহীন বোবা কান্না করে চলেছে নিপা। এটা নিপার জীবনের দ্বিতীয় বাসতরাত তাও কি-না মৃ*ত স্বামীর ছোট ভাইয়ের সাথে এমন দিন আসবে কোনোদিন ভাবে নি নিপা। নিজের কাছে কেমন অস্থিকর ব্যপার।

এ বিয়েতে কারোই মতামত ছিল না কিন্তু শ্বশুর মশাই এর জেদের জন্য বিয়েটা করতেই হলো। অভ্র আর নিপার প্রেমের বিয়ে। দুই পরিবারের সম্মতিতেই ওদের বিয়ে হয়েছে। অভ্র একজন পুলিশ। সুখেই চলছিল সব কিছু। বছর ঘুরতে ই নিপার প্রেগন্যান্সির খবর পেয়ে বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে গেলো। কিছু সুখ বেশি দিন কপালে সইলো না। নিপার প্রেগন্যান্সির ৭মাস চলছে তখন অভ্রর গু*লি লাগে বু*কে ওখানেই মৃ*ত্যু হয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পরিবারের ওপর দিয়ে ঝড় উঠলো। নিপার পরিবার নিপাকে নিয়ে যেতে চাইলো। নিপার শ্বশুর অভিজিদ নিয়ে যেতে দিলেন না। ওনি জানালেন রুদ্রর সাথে নিপার বিয়ে হবে। নিপার মাথায় বা*জ প*ড়*লো। সে কিছু তেই এ বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দিলো। কিন্তু নিপার মা-বাবা নিপার সুখের জন্য বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। নিপাকেও নানান রকম কথা বলে প্রেসারক্রিয়েট করতে লাগলো।

অতঃপর নিপাকে হসপিটাল থেকে বাড়ি আনার পর নিপা দেখলো কাজী আর রুদ্র, শ্বশুরমশাই বসে আছে। নিপা বিয়ে করবে না বলে চিল্লাচিল্লি করতে লাগলো। কিন্তু বিশেষ লাভ হলো না। মা-বাবার চাপাচাপি তে বিয়েটা করতেই হলো। রুদ্রর এমন নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখে রুদ্রর ওপর রাগ বাড়তে লাগলো। নিপা জানে রুদ্র চাইলেই এ বিয়ে এখনি বন্ধ হতে পারে কিন্তু রুদ্র এমন কিছুই করছে না। তবে এর কারণ কি?

এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে নিপা কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলো। আচমকা মুখের ওপর নিশ্বাস পড়তেই ধপ করে চোখ খুলে রুদ্র ওর দিকে ঝুঁকে থাকতে দেখে রুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে বসে রাগান্বিত কণ্ঠে বলল
— কি করছিলেন?
রুদ্র ঘাবড়ালো না শান্ত কণ্ঠে বলল
— বাবুকে নিজের সাথে চেপে রাখছিলে। বাবুর কষ্ট হচ্ছিল তাই…
— আপনাকে আমাদের নিয়ে না ভাবলেও চলবে। আর একটা কথার উত্তর দিন তো আপনি চাইলেই বিয়েটা বন্ধ করতে পারতেন তাহলে কেনো বিয়েটা বন্ধ করলেন না কারণ কি?

— বাবাকে বুঝিয়ে ছিলাম বাবা বুঝে নি
— মিথ্যা বলছেন আপনি
— তাহলে সত্যি টা কি তুমি ই বলে দাও
রুদ্র মুখে ‘তুমি’ সম্মোধন শুনে নিপার রাগ বাড়লো।
— এই আপনি তুমি কাকে বলছে? আগে যেমন আপনি আর ভাবি বলতেন সেভাবেই কথা বলবেন
— আগে সম্পর্ক আর এখানকার সম্পর্ক আলাদা এখন তুমি আমার স্ত্রী
— অভ্রের মতো দেখতে বলে আপনি অভ্র হয়ে যাবেন না আর না আমি আপনাকে নিজের স্বামী হিসেবে মানি। আমার একমাত্র স্বামী অভ্র

— মানা না মানাই কিছু আসবে যাবে না সম্পর্কটা তো হয়ে গেছে না
নিপা চিৎকার করে উঠে বলল
— বললাম না মানি না এ সম্পর্ক। আমি অভ্রর বউ আর কারোর না
রুদ্র এতোক্ষণ শান্ত ছিল কিন্তু এখন আর শান্ত থাকতে পারলো না। তেড়ে এসে নিপার গা ল চে পে ধরে বলল
— হুঁশশশ। এই মুখে একদম অভ্রর নাম জেনো না শুনি। একদম জানে মে*রে দিবো।
নিপা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইলো রুদ্রর দিকে। রুদ্রকে কেমন হিং স্র দেখাচ্ছে। ফর্শা মুখ লাল হয়ে গেছে নীল রংয়ের শি রা গুলো ফু লে উঠেছে। নিপার মনে হলো এটা রুদ্র নয় রুদ্র তো শান্তশিষ্ট এমন তো কখনো রাগতে দেখে নি। নিপা কাপা কণ্ঠে বলল

— কে আপনি?
রুদ্রর মুখ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে লাগলো। নিপার গা ল ছেড়ে দিয়ে উল্টো দিকে ফিরে জোরে জোরে শ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল
— চিৎকার চেচামেচি না করে ঘুমিয়ে পড়লো তোমার সেলাইটা এখনো কাঁচা। এতো চেচামেচি ফলে তুমি অসুস্থ হয়ে যেতে পারো
নিপা ফের প্রশ্ন করলো

— বললেন না তো কে আপনি?
— আমি রুদ্র। আর আমাকে রাগিও না রাগানোর ফল ভালো হবে না। শুয়ে পড়ো
নিপা আর কথা বলার সাহস পেলো না। রুদ্রকে এখন ওর কাছে যথেষ্ট ভয় লাগছে। রুদ্র সোফায় শুয়েছে দেখে স্বতির নিশ্বাস ফেলে। চোখ বন্ধ করতেই রাজ্যর ঘুম চলে এলো। মাঝরাতে ঘুম ভাঙে গেলো। পাশে হাতড়ে বাবুকে না পেয়ে চোখ খুলে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো। দেখলো রুদ্রর কোলে বাবুকে নিয়ে রুমের মধ্যে পাইচারি করছে। নিপা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল

— আপনি ওকে কোলে নিয়েছেন কেনো?
— আমার মেয়ে কে আমি কোলে নিবো না?
— আপনার মেয়ে মানে? ও আমার আর অ…
নিপা নিজের কথারা শেষ করলো না। রুদ্র স্থির দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। নিপার ভয় হচ্ছে বাবুর না আবার কোনো ক্ষ তি করে ফেলে।
— ওকে আমার কাছে দিন।
রুদ্র বিনাবাক্য ব্যয় করে বাবুকে নিপার কাছে দিয়ে বলল
— ওর ক্ষুদা লাগছে মেবি কাঁদছিল খাইয়ে দাও

কথাটা বলে রুদ্র বেলকনিতে চলে গেলো সারারাত আর রুমে আসলো না। রুদ্রর এমন নির্বিকার ভঙ্গি নিপাকে ভাবাচ্ছে। রুদ্র কিভাবে সবটা মেনে নিলো?
সকালে ঘুম থেকে উঠে রুদ্রর টিকিটার ও দেখা মিললো না। নিপা ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। তখন ১০ বেশি বাজে। নিপার শ্বাশুড়ি নিলিমা আর কাজের লোক মিলে রান্নাঘরে কাজ করছে। নিলিমার মুখটা থমথমে হয়ে আছে। নিপা এর কারণ জানে তার আর রুদ্র বিয়ে টা শ্বাশুড়ি ভালো ভাবে নেয় নি। এটা নিয়ে তিনি চটে আছেন। নিপা ভয়ে ভয়ে রান্নাঘরে গিয়ে বলল
— মা আপনি রেস্ট নিন আমি কাজগুলো করে নিচ্ছি
নিলিমা গম্ভীর কন্ঠে বলল

— আমি করে নিতে পারবো
— আপনার মাজার ব্যথা বাড়বে আমি করে দিচ্ছি আপনি রেস্ট নিন
নিলিমা ধমকে উঠলেন
— একদম একাজে হাত দিবে না। হসপিটাল থেকে আসছো এতো লাফালাফি কিসের? যাও রুমে যাও। খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি খেয়ে নিবে। নিজে নড়তে পাড়ছে না আবার কাজ করতে আসছে।
নিপা নিভৃতে হাসলো। নিলিমাকে তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে তা নিপা বেশ ভালো করেই জানে। আর দাঁড়ালো না ওপরে চলে আসলো বাবু একা রুমে। নিপা রুমে আসার কয়েক মিনিট পর রুদ্র আসলো কিছু প্যাকেট নিয়ে বলল

— এগুলোতে বাবুর কিছু জিনিসপত্র আছে দেখ
বলে ফ্রেশ হতে গেলো। নিপা ওগুলো খুলে দেখলো ডাইপার, জনসন সাবান, লোশান, পাউডার, স্যাম্পু, বাবুর কয়েক সেট পোশাক, হাত মোজা, পা মোজা। রুদ্র বের হতেই বলল

— এগুলো কেনো আনছেন
— বাবুর এগুলো প্রয়োজন তাই আনছি
— তাই বলে এতো সব?
— তো?

নিপা কিছু বলল না। রুদ্র নিচে চলে গেলো। নিপার খাবার দিয়ে গেলে নিপাও খেয়ে নিলো। কিছুক্ষণ নিচে চিৎকার চেচামেচি আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। নিপার ভ্রু কুঁচকে গেলো বাবু জেগে আছে হাত পা নেড়ে খেলছে। বাবুকে একা রেখে যেতেও পারছে না। নিপা উঠে দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসলো। ঝড়ের বেগে নিপাকে টান দিয়ে দাঁড় করিয়ে চ ড় মা র তে ই নিপা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো সম বয়সী চাচা তো বোনের দিকে। হিং*স্র হয়ে বলল

— তুই আমার রুদ্রকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিস? আমার এতো বড় স র্ব না শ করার আগে ম র তে পারলি না?

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ২