ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১১

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১১
তাসনিম তামান্না

— কি হয়েছে বলো তো তোমার এমন অস্থির হয়ে পায়চারি করছ কেনো?
— ফরিদা যদি কখনো জানতে পারো আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি। তখন কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?
ফরিদা রাশেদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল

— আমার সাথে এই রাতের বেলা তুমি মজা করছ?
— আমি মজা করছি না ফরিদা আমি সিরিয়াস। পৃথিবী গোল আমার পাপ আমার সামনে ঘুরছে
— কিসব আবল তাবল বকছ?
— আমি ঠিকি বলছি ফরিদা। আমি ১৮ বছর আগে একটা বাচ্চাকে তার মা’র থেকে আলাদা করেছি আর সেটা কে জানো? অমৃতার চাচাতো বোন মৃত্তিকা যার নাম হৃদি।
ফরিদা আঁতকে উঠে বলল

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— কি বলছ তুমি? একটা বাচ্চাকে তার মা’র কাছ থেকে আলাদা করেছ। এতো কত বড় অন্যায় অমানবিক নিষ্ঠুর কাজ তুমি করেছ?
— আমি ঠিকি বলছি ফরিদা এতো দিন পর আবার সবটা আসবে আমি ভাবতে পারি নি তাছাড়া তখন ঠিক ঐসময় দাঁড়িয়ে বাচ্চাটাকে মার কাছ থেকে আলাদা না করলে যে আমার ছেলেদের ক্ষ*তি করে দিত
— কি বলছ আগে কেনো বলো নি এসব? কিন্তু তুমি এতো বছর পর চিনলে কি করে ঔ মেয়েটাই সে
— তার চেহারা অবিকল রুদ্রের মতো
— রুদ্র কে?

— এদেশের শীর্ষ সাইন্টিস্ট তোমার ছোট ছেলের সাথে ওঠা বসা যার
ফরিদা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে বলল
— কি বলছ তুমি এসব আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
— আমি ঠিকি বলছি। তোমার ছেলে আজ ঐ মেয়েটাকেই চ*ড় মে*রেছে হয়ত ভালো করে দেখে নি ভালো করে দেখলেই কিছু একটা সন্দেহ করে বসবে

— এখন কি করবে?
— কিছু করার নাই সব ভাগ্যর ওপরে ছেড়ে দিয়েছি।
— তুমি সত্যিটা জানিয়ে দাও। মায়ের কোলটা পূর্ণ হোক। মেয়েটা তার আসল বাবা মাকে ফিরে পাক।
— না এটা করলে ফেঁ*সে যাবো …
— কিছু হবে না আমি বলছি

চন্দ্রহীন আকাশে গুটিকয়েক তারা মিটমিট করে জ্বলজ্বল করছে। আঁধার কালো অম্বরি জুড়ে মেঘেদের আনাগোনার শেষ নেই। শীতল বাতাসে বেলি ফুলের সুভাস ভেসে বেড়াচ্ছে। নিপা বারান্দায় একাকী কফি হাতে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছে। চশমাটা খুলে রেখে রেলিংয়ে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল
— কেমন আছো? আমার কথা তোমার মনে পড়ে? আমার কিন্তু তোমার কথা প্রতিমুহূর্তে মনে পড়ে।

তোমার সাথে কত কথা বলি তুমি তো শুননো না। আচ্ছা আমার মেয়েটা কত বড় হয়েছে গো কেমন দেখতে হয়েছে নিশ্চয়ই তোমার মতো? কি গো আজও আমার ওপরে রাগ করে থাকবে? আজ কি তোমার মনে নেই আজ আমাদের ২১ তম এ্যানিভারসেরি ভুলে গেলে? আজও রাগ করে থাকবে? আচ্ছা বলো না কথা কিন্তু আমি কিন্তু ঠিকি তোমার সাথে কথা বলে যাবো।

জানো তোমার ভাই রুদ্র আমাকে এতো ভালোবাসে কেনো? আমি ওকে বন্ধু ছাড়া কিছু ভাবতে পারলাম না এতো গুলো বছরেও। তুমি ই আমার স্বামীর জায়গায় থেকে গেলে। নিদ্র আমার আর রুদ্রের ছেলে দেখতে আমার মতো হলেও স্বাভাবে পুরোই রুদ্র। তুমি তো সবই জানো তাও আমার ওপরে রাগ করে থাকবে। ওরা কেউ বাসায় নেই আমার সবসময় নিজেকে একা মনে হয় তুমি ছাড়া আমার সব কিছু বৃথা…

নিচ থেকে গাড়ি শব্দ আসলো। দেখলো রুদ্র, নিদ্র ফিরেছে ঘড়ির দিকে সময় দেখলো ১২ঃ ৩৫ বাজে। নিপা নিচে এসে দেখলো বাবা ছেলে ড্রাইংরুমে বসে আছে সামনে একটা বক্স রাখা। নিপা গম্ভীর কণ্ঠে বলল
— এতোক্ষণ কোথায় ছিলে তোমরা এর চেয়ে বাসায় না আসলেই পারতে
রুদ্র হাসলো। নিদ্র মায়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল

— হ্যাপি এ্যানিভারসেরি আম্মু।
নিপা চমকে নিদ্রর দিকে তাকালো নিদ্র চোখ নামিয়ে নিলো। নিদ্র মা বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না কখনো এটা মানে নিপা বুঝতে পারে না। রুদ্র বলল
— হ্যাপি এ্যানিভারসেরি নিপা আর অভ্র ভাইয়া।
নিপা কাঠকাঠ গলায় বলল

— রুদ্র তোমাকে কত বার বলেছি এসব আমার পছন্দ না তাও তোমরা কেক আনছ?
— আম্মু আমি চাই তুমি কেকটা কাটবে এতে বড় আব্বু খুশি হবে সাথে আপি ও
নিপা না বলতে গিয়ে ও বলতে ইচ্ছে করলো না এবার না হয় ছেলের কথাই শোনা হোক কোনো বারই তো শোনা হয় না। নিপা এগিয়ে এসে বলল
— বের করো কেকটা

নিদ্রের মুখে এক চিলতে হাসি এসে ধরা দিলো। নিদ্র খুব বেশি একটা হাসে না। নিদ্র হাসি মাখা মুখ দেখে নিপার অশান্ত মনটা শান্তি এসে বিরাজ করলো। মুগ্ধ চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলো নিদ্রকে হাসলে কি সুন্দর লাগে। কিন্তু হাসে না। নিপার বলতে ইচ্ছে হলো ‘তুই আমার ছেলে হয়ে হাসিস না কেনো? হাসলে তোকে কত মিষ্টি লাগে। এবার থেকে আমার সামনে সারাক্ষণ হাসবি’।

কিন্তু সে কথা আর বলা হলো না।
ওপরে এসে শুয়ে শুয়ে নিপা অনেক জল্পনা কল্পনা করলো। রুদ্র আসতেই উঠে বসে বলল
— তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।
রুদ্র বালিশ ঠিক করতে করতে বলল
— বলো
নিপা কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল

— তোমার কি আগের মতো অভ্রের নাম শুনলে রাগ হয় না? কিন্তু কেনো?
রুদ্র বালিশ ঠিক করা থামিয়ে দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল
— এতো দিন পর হঠাৎ এ কথা…
— এমনি জানতে ইচ্ছে হলো। মানুষের জানতে ইচ্ছে হয় না? আর তুমি ই তো আগে আমি অভ্রের নাম নিলেই রেগে মা*রতে আসতে
রুদ্র হেসে বলল

— কেনো না আমি তাকে তখন চিনতে পারি নি। কিন্তু সে আমাকে সর্বদা ভালোবেসে আগলে রেখেছিল। কিন্তু আমি তার থেকে দূরে দূরে থাকতাম আমাদের দূরত্ব বেড়ে যায়। আমি একা থাকতে পছন্দ করতাম। আর আমি ভাবি ও মা’কে আমার থেকে কেড়ে নিচ্ছে।

— আচ্ছা এতো ভালোবাসো কেনো আমাকে?
— তুমি আর নিদ্র ছাড়া আমার আর কে আছে বলো। তোমাদের জন্যই বেঁচে আছি না হলে কবেই ম*রে যেতাম
— রুদ্র চুপ করো তো শুধু বাজে কথা
— তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না
— কে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি না? আমি তোমাকে বন্ধু হিসেবে ভালোবাসি। সংসারটা তো তোমার সাথেই করছি ভালো না বেসে কোথায় যাবো

— আচ্ছা ঘুমাও। কাল তুমি আর নিদ্র ও আমার সাথে ফুয়ানের বড় ভাইয়ের রিসিভশনে যাচ্ছো।
— সে কি আমরা আবার ওখানে গিয়ে কি করবো? তুমি আর নিদ্র না হয় যেও আমি যাবো না।
— না তা বললে কি করে হয়। আমার এদিনটা নিয়ে অন্য প্ল্যান ছিল। কিন্তু ফুয়ান, ফুয়ানের বাবা ফোন দিয়ে অনেক জোরাজোরি করলো না করে থাকতে পারলাম না
নিপা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল

— আচ্ছা যাবো। সত্যি বলতে ভিড়ভাট্টা, চিৎকার চেচামেচি ভালো লাগে না
— গেলে দেখবে ভালো লাগবে। অনেক দিন তো কোনো অনুষ্ঠানে যাওই না।
নিপা উত্তর দিলো না। রুদ্র ফের বলল
— কাল শাড়ি পড়বে?
— কেনো?

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১০

— তোমাকে শাড়িতে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে হঠাৎ
— রোজই তো কলেজে পড়ে যায় দেখো না
— হুম দেখি কিন্তু ভুলে গেছি কেমন দেখতে লাগে তোমাকে
— পাগল তুমি

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১২