ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১০

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১০
তাসনিম তামান্না

১৮ বছর পর…
সময় আর স্রোত কখনো কারোর জন্য থেমে থাকে না ওরা নিজস্ব গতিতে চলতে থাকে। দেখতে দেখতে কেটে গেছে অনেক গুলো বছর। সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুর। পেড়িয়ে গেছে ১৮ বছর।
নিপা একটা কলেজের ইংরেজি টিচার। এইচএসসি পরীক্ষার খাতা দেখছিল। তখনি রুদ্র কফি এনে নিপাকে দিয়ে বলল

— কফি খাও নিশ্চয়ই ঘাড় মাথা ব্যথা করছে। টিপে দি
নিপা গম্ভীর কণ্ঠে বলল
— নো নিড। তুমি ফুয়ানের ভাইয়ের বিয়েতে গিলে না কেনো এতো করে বলল ওরা
— নিপা ফুয়ান আমার পছন্দের স্টুডেন্ট বললেই যেতে হবে? আর আমার এসব হৈচৈ আমার পছন্দ না জানোই তো।
— রুদ্র তুমি কি জানো তুমি তোমার মতো নিদ্র আর ফুয়ানকে যান্ত্রিক বানিয়ে ফেলেছ। নিদ্র আমার ছেলে হয়ে এই টুকু বয়সে সারাক্ষণ ল্যাবে পড়ে থাকে এসব নিয়ে ওর আগ্রহের শেষ নেই
রুদ্র হেসে বলল

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— এসব তো ভালো কথা
— মোটেও ভালো কথা নয় ওর বয়স ই বা কত? কেবল টেনে উঠেছে। এই বয়সে ওর প্রাণোচ্ছল, চঞ্চল থাকার কথা আর তুমি ওকে যান্ত্রিক বানিয়ে ফেলেছ
রুদ্র কিছু বলতে যাবে তখনি ফুয়ানের ফোন আসলো। রুদ্র ফোন ধরে সালাম বিনিময় করলো।
— স্যার আপনি আসলেন না কেনো?
— রিসিভশনে আসবো।

বিয়ে বাড়িতে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চারিদিকে হইহট্টগোল করছে ছোটরা মিলে বড়কে নিয়ে বসানো হয়েছে স্ট্রেজে। মৃত্তিকা তাড়াহুড়া করে বরপক্ষের জন্য শরবত নিয়ে যাচ্ছিল। মাঝখানে থেকে লেহেঙ্গার পা বেঁধে শরবতসহ গিয়ে একটা পুরুষের সাথে ধাক্কা খেলো। মৃত্তিকা ধাক্কা সামলিয়ে উঠতেই গালে ঠা*স করে একটা চ*ড় পড়তেই সবটা শান্ত হয়ে গেলো। পুরুষালী হাতের চ*ড় খেয়ে ৪৫° এঙ্গেলে হেলে পড়লো। অপমানটা হজম করতে ঝট করে রক্ত চক্ষু নিয়ে মাথা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। মৃত্তিকার মস্তিষ্ক কথা বলে উঠলো

— এতো বরের ছোট ভাই। আমার এই ১৮ বছর বয়সের ফাস্ট ক্রাস। ওমাইগড কি হ্যান্সাম লাগছে মাইরি…
পাশ থেকে কাজিনরা বলল
— মৃত্তিকা তুই ঠিক আছিস?
মৃত্তিকা সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালো। কয়েকজন মিলে মৃত্তিকাকে ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো। অন্য কয়েকজন মিলে বড়দের কথাটা জানালো। বাড়ির বড়ছেলে দাউদ এসে বলল

— কার এতো বড় সাহস এ বাড়ির মেয়ের গায়ে হাত দেয়?
রাশেদ ছেলের দিকে রনমূর্তি ধারণ করে তাকিয়ে বকা-ঝকা করছিলেন। ছেলের তাতে কোনো হেলদোল নেই সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাউদের কথা শুনে রাশেদ বলল
— সরি বাবা আসলে আমার ছোট ছেলেটা একটু রাগচটা হুটহাট রেগে যায়।
— সেটা বললে তো হবে না আঙ্কেল। এভাবে যদি জনসম্মুখে একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলতে পারে তাহলে আমরা কোন বিশ্বাসে আমাদের মেয়ে আপনাদের হাতে তুলে দিবো?

— বাবা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু বিশ্বাস করো…
— যেটা হয়েছে সেটার পর আর বিশ্বাস আসছে না আঙ্কেল
বাড়ির কর্তা এসে গম্ভীর কণ্ঠে ফুয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো
— মা*রলে কেনো আমার মেয়েটাকে? ওটা তো অসাবধানতাবসত পড়ে গেছে ইচ্ছে করে তো করে নি।
ফুয়ান এতোক্ষণ পর মুখ খুললো

— জী আঙ্কেল। ওনি যাতে আর অসাবধানতাবশত কাজ না করে সেজন্যই মেরেছি।
দাউদ রেগে বলল
— ব্যস এইটুকুর জন্য তুমি আমার বোনের গায়ে হাত তুললে? এটা মটেও যুক্তিসংহত নয়। ওটা ও ইচ্ছে করে করে নি এমন ভুল হয়েই থাকে। বড়বাবা বাবা আমি আমার বোনকে কিছুতেই এ বাড়িতে বিয়ে দিবো না। এই টুকুর জন্য যদি মা*র খেতে হয় তাহলে আমার বোন একটু ভুল করলেই তাকে পদে পদে মা*র খেতে হবে।
রায়ান শান্ত কণ্ঠে বলল

— ভাইয়া কি বলছেন এসব একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য বিয়েটাই ভেঙে দিতে চায়ছেন? এটা তো বসে মিটমাট করে নেওয়া যায়।
— রায়ান এই ঘটনার পর আমি আমার বোনকে কোন বিশ্বাসে তোমার হাতে তুলে দিবো? যেখানে এটা আমার বোনের সারাজীবনের প্রশ্ন! ভাই হিসেবে আমি এতোটাও দায়িত্ব জ্ঞানহীন নই।
— ভাইয়া আমি মানছি আমার ভাইয়ের ভুল আছে এটার জন্য ও মৃত্তিকার কাছে ক্ষমা চাইবে।
ফুয়ান কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলল

— নো ওয়ে। এটা আমি কখনোই করবো না।
রাশেদ রেগে বলল
— ফুয়ান!
রায়ান বলল
— আমি একটু ফুয়ানের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই। ফুয়ান আসো আমার সাথে…
— তুমি কি চাও ফুয়ান আমার বিয়েটা ভেঙে যাক?
ফুয়ান নিশ্চুপ।
— ফুয়ান আমি তোমাকে ভালোবাসি। এছাড়াও আমি অমৃতাকেও ভালোবাসি ওকে ছাড়া আমি অসম্ভব। তোমার ভাইয়ের জন্য হলেও তুমি তোমার দোষ শিকার করবে…

— ঔ মেয়েটাই চিৎকার চেচামেচি করছিল গেট ধরে তার ওপরে আবার আমার গায়ে শরবত ফেলে দিয়েছে।
— ফুয়ান তুমি সাইন্টিস্ট হওয়ার সাথে সাথে কি হয়ে যাচ্ছো দিন দিন। সারাদিন পড়াশোনা নিয়ে থাকতে থাকতে তোমার আজ এই অবস্থা। ফুয়ান ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড বিয়ে বাড়িতে ছোটরা চিৎকার চেচামেচি বা এমন ছোট খাটো এক্সিডেন্ট হয়েই থাকে এতে এতো রিয়াক্ট করে তুমি একটা মেয়েকে চ*ড় মে*রে দিলে?

— ভাইয়া আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না তাই মে*রে দিয়েছি।
— সাট আপ ফুয়ান। তুমি গিয়ে সরি বলবে। আর এই বিয়েটা না হলে তুমি তোমার বড়ভাইকে হারাবে।
ফুয়ান আর রায়ান আবার ফিরে আসলো। ফুয়ান বলল
— সরি আঙ্কেল আসলে আমি আমার রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না তাই এমনটা হয়ে গেছে। ভাইয়ের বিয়েটা ভাঙ্গবেন না।
দাউদ বলল

— আঙ্কেল আপনার ছোট ছেলেকে সাইক্রিয়েটিস দেখান। এতো রাগ শরীরের জন্য ক্ষ*তিকর।
কথাটা শ্রবণ গ্রহণ করতেই ফুয়ানের রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ হয়ে গেলো। বিয়ের কার্যক্রম আবারও ফুল দমে শুরু হলো। ফুয়ান ভাইয়ের পাশে বসে আছে। অমৃতার অন্য কাজিন, ফেন্ডরা ফুয়ানের আশেপাশে যেতেই ভয় পাচ্ছে।
দাউদ বোনের কাছে গিয়ে দেখলো বোন গালে হাত দিয়ে ভাবনায় মসগুল। সেটা দেখে দাউদ মৃত্তিকার মাথায় হাত দিয়ে বলল

— বোন বেশি ব্যথা পেয়েছিস?
— উহুম প্রেমে পড়ে গেছি!
দাউদ আশ্চর্য রকমের কথা শুনে চিৎকার করে উঠে বলল
— হোয়াট?
মৃত্তিকা হকচকিয়ে গিয়ে বলল

— চিৎকার করার কি আছে?
— তুই কার প্রেমে পড়লি?
মৃত্তিকা স্বভাবসুলভ হেসে বলল
— বরের ছোট ভাইয়ের
— হোয়াট পাগল হলি তুই? ঔ ছেলে একটা পাগল
— হ্যাঁ ওনার প্রেমে পাগল হয়ে গেছি
মৃত্তিকার মা রুমে ডুকতে ডুকতে এসে বলল

— চ*ড় খেয়ে তুই প্রেমে পড়ে গেলি? তাও আবার বড় মুখ করে তুই তোর বরভাইকে বলছিস? কবে লাজ্জ লজ্জা হবে তোর? বুদ্ধি সুদ্ধি তো সব খেয়ে ফেলেছিস।
অমৃত মৃত্তিকাকে মারার কথা শুনে এতোক্ষণে এসে হাজির হলো চাচির পিছনে পিছনে মৃত্তিকার চাচির কথা শুনে বলল
— তোমার মেয়ের কবে লাজ্জ লজ্জা ছিল চাচি। ও তো জন্মগত ঠোঁ*টকা*টা-তা*লুকদার
মৃত্তিকা তেতে উঠে বলল

— এই আপু আমাকে ইনসাল্ট করবি না। বিয়ে করছিস বলে কি মাথা কিনে ফেলে যা খুশি তাই বলবি
— তাছাড়া কি বলবো রে। তুই শেষে কি-না একটা ছেলের হাতের চ*ড় খেয়ে প্রেমে পড়লো। প্রেমে পড়ার আর জায়গা পেলি না শেষ মেষ আমার দেবর!
মৃত্তিকা লাজুক হেসে বলল
— প্রেম কি বলে কয়ে আসে না-কি হুট করেই চলে আসে। আহা আমি এখন প্রেমের বাতাসে উড়ছি।
— চাচি তোমার মেয়েতো দেখছি প্রেমের পিএইচডি করে ফেলছে। এতোদিন আমি প্রেম করে কি করলাম? প্রেমের বাতাসে উড়তে পারলাম না আমার বি*ষ খাওয়া উচিত
দাউদ ধমকে উঠে বলল

— এসব কি কথা অমৃতা
মৃত্তিকার মা-ও সাই দিয়ে বলল
— এই শুভ দিনে এসব কথা বলতে নেই সোনা মা আমার। আর তুই এখানে কি করছিস চল এখনি কাজি চলে আসবে
— হ্যাঁ তারপরই তুই চলে যাবি। আর আমি সবার আদর একা খাবো
— চাচিম্মু দেখছত তোমার মেয়ে কি শ*য়*তা*ন
— মৃত্তিকা!
মৃত্তিকা বোকার মতো হাসলো। অমৃতা বলল

— চাচিম্মু বউয়ের সাথে তো বাড়ির একজন শশুড় বাড়ি যেতে হয়। তো আমি ভেবেছি মৃত্তিকাকে নিয়ে যাবো
— না ও ছোট ও গিয়ে কি-না কি করে বসবে। তোর সাথে তোর দাদিমা যাবে। আর ও কখন আমাকে ছাড়া থেকেছে না-কি গিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করবে
— আম্মু তুমি আমাকে অপমান্স করছ
দাউদ বলল
— তুই চুপ থাক। চাচিম্মু ঠিকি বলছে। ফুয়ান আবার তোকে মে*রে বসবে তখন তার আমরা থাকবো না ওখানে

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ৯

আসসালামু আলাইকুম। অনেকেই বলবেন কি লিখেছে কিছুই বুঝলাম না পড়তে থাকুন এক দুই পর্ব পর আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে তাই ধৈর্য হারা হবেন না।

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১১