ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ৯

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ৯
তাসনিম তামান্না

নিকষ কালো অম্বরিতে তারা গুলো ঝলমল করছে। শীতল বাতাস এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে দুই মানব-মানবীর দেহ। দুজনের মন মস্তিষ্কে ভয়েরা দানা বেঁধেছে। নিপার চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু ঝরছে। রুদ্রের চোখ বারবার ঝাপসা হয়ে আসছে। রুদ্র নিপা ল্যাবে গিয়ে ছোট বাচ্চাটা দেখে আঁ*তকে উঠল। ছোট্ট এইটুকু বাচ্চার মুখ থেঁতলে গেছে মুখটা বোঝা যাচ্ছে না। নিপা ভয়ে রুদ্রের হাত খা*মচে ধরলো। ইনস্পেকটর পলাশ হাতে থাকাটা ব্যাগের জামা দেখিয়ে বলল

— মি. রুদ্র এই বাচ্চাটার পরনে এই ড্রেস ছিল। এটা যদি চিনতে না পারেন তাহলে আমরা ডিএনএ টেস্ট করবো
নিপা সেটা দেখে সশব্দে কেঁদে উঠে অস্ফুটস্বরে বলল
— আমার মেয়ে…
রুদ্রেরও দম আটকে বলল
— ওকে কি একবার কোলে নিয়ে পারি?
— সরি মি. রুদ্র বাচ্চাটার পোষ্ট-ম*র্ডা*ন রি*পোর্ট করতে হবে কাল বাচ্চাটাকে নিয়ে যেতে পারবেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিপা জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো ফ্লোরে। রুদ্র নিজেকে সামলাবে না-কি নিপাকে সামলাবে বুঝে উঠতে পারলো না। নিপাকে ডক্টর দেখে বলল অতিরিক্ত এস্ট্রেজের জন্য জ্ঞান হারিয়েছে তার সাথে ঘুমের ইনজেকশন ও দিয়ে দিলো যাতে রাতে আর না জেগে উঠে। এসব খবর শুনে নিপার বাড়ি থেকে সকলে চলে এলো।
নিপার জ্ঞান ফিরতেই হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পাগলের মতো বিহেভ করতে লাগলো নীলিমা, নিপার মা, ভাবি কেউ নিপাকে সামলাতে পারছে না। রুদ্র অভিজিৎ গিয়েছে হৃদিট মৃ*ত দেহটাকে আনতে।

নিপা হৃদির মৃ*ত দেহটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে আবারও জ্ঞান হারালো। জ্ঞান ফিরে হৃদিকে দেখতে না পেয়ে আবারও পাগলামো করতে লাগলো। নিপার কথা শুনে আর কান্না দেখে সকলের মন নাড়িয়ে দিলো নিপা বার বার বিলাপ করতে লাগলো

— অভ্র আমি কাণ্ডজ্ঞানহীন মা। আমি তোমার রেখে যাওয়া শেষ ভালোবাসার সৃতি টুকু আগলে রাখতে পারলাম না। আমার জীবনটা এমন কেনো? আমার জীবন থেকে কেনো সকলে হারিয়ে যাচ্ছে আমি কি এতোই অপয়া। হ্যাঁ হ্যাঁ আমি অলক্ষি না হলে এমন কেনো হবে?…
নীলিমা বলল — এমন বলে না মা আমি জানি সন্তান হারানোর কষ্ট কতটা আমি জানি না আমাদের ওপর কার নজর লাগলো আমার সাজানো সংসার টা কে ধ্বং*স করে দিচ্ছে। কার এতো আমাদের ওপর শত্রুতা? দেখো তার বিনা*শ হবেই।

রুদ্রের চোখ লাল হয়ে গেছে এই প্রথম সে এতো কষ্ট উপলব্ধি করতে পারছে। আগে কখনো এতো কষ্ট পাইনি সে। মা’র ওপরে রাগ করে কাঁদলে ও আজকের কান্নাটা অন্য রকম ছিল। নিজেকে শূন্য শূন্য লাগছে। ভাইয়ের মৃ*ত্যু তখন খারাপ লাগলেও কাদেনি কিন্তু এখন কান্না পাচ্ছে।
সারাদিন এতো ধকলের পর রুমে এসে নিপা হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে দেখলো। রুদ্র ফ্রেশ হয়ে এসে বলল

— নিপা!
নিপা ছলছল চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল
— আমি আমার মেয়েটাকে বাঁচাতে পারলাম না রুদ্র আমি মা হিসেবে ব্যর্থ আমার মা হওয়ার কোনো যোগ্যতাই নেই…
— স্টপ নিপা। কি সব যাতা বলছ তোমার আইডিয়া আছে? এগুলো ভাইয়া, হৃদি ওপর থেকে শুনে কতটা কষ্ট পাচ্ছে যানো
নিপার কান্না থেমে গেলো। রুদ্রের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

— আমার মেয়েটা তার বাবার কাছে গিয়েছে তার বাবা মেয়ের প্রতি খুব সিরিয়াস ওখানে ওরা নিশ্চয়ই ভালো থাকবে। কিন্তু আমি? আমি কি নিয়ে বেঁচে থাকবো? আমার তো বেঁচে থাকার কোনো কিছু নেই।
রুদ্র কাতর কণ্ঠে বলল

— নিপা আমার জন্য বাঁচবে প্লিজ। তুমি চলে গেলে আমি ম*রে যাবো। আমি যে ভাইয়া আর হৃদিকে এতো ভালোবাসতাম আগে বুঝতে পারি নি কিন্তু এখন বুঝতে পারছি ওদেরকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসতাম। তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ আমি তাহলে বেঁচে ও মরে যাবো।
নিপা রুদ্রের মুখে আশ্চর্যজনক কথা শুনে থম মেরে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো রুদ্র বলল

— আমি ওদের মৃ*ত্যুর রহস্য খুঁজে বের করে যারা ওদের আমাদের কাছ থেকে কেঁড়ে নিয়েছে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিবো দেখো। তুমি আমার সাথে থাকবে তো?
নিপা ছলছল চোখে ওপর নিচ মাথা নাড়লো। রুদ্র নিপার মুখটা দু’হাতে ধরে চোখের পানিগুলো মুছে দিয়ে কপালে চু!মু খেলো। নিপা হতবিহ্বল হয়ে তাকালো রুদ্রের দিকে রুদ্র সেটা দেখে বলল
— ওদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য হলেও তোমাকে বাঁচতে হবে নিপা। এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না স্ট্রং হও।

— প্লান সংসেসফুল। সব পথের কাটা উপড়াতে পেরেছি। কেউ বুঝতেও পারবে না এর নাটেরগুরু কে? হা হা
লাল রাঙা আলোর রুমটায় উচ্চস্বরে হাসির শব্দ বার বার প্রতি ধ্বনি খেতে লাগলো।
— অভিজিৎ হলো পাকা খেলোয়াড় কোথাও কোনো ক্লু রাখতে পছন্দ করে না।
রাশেদ রুমে ডুকে বলল

— স্যার আমার টাকাটা…
— টেবিলের ওপরে চেক আছে নিয়ে যাও আর মনে আছে তো তোমার মুখ খুললে কি হতে পারে?
রাশেদ ভয়ে ভয়ে বলল
— জী স্যার কাউকে কিছু বলব না
— গুড বয় আর এখন যেতে পারো আমার চোখের সামনে না আসলেই খুশি হবো
রাশেদ চলে গেলো। রাশেদ আগে থেকেই ভেবে রেখেছিল এই পাপের কাজ আর করবে না। টাকাগুলো পেলে চলে যাবে অনেক দূরে ব্যবসা শুরু করবে বউ ছেলেকে নিয়ে শুরু করবে নতুন জীবন। সব কিছু নতুন ভাবে শুরু করবে।

দিন যায় নতুন দিন আসে নিপা ঘরবন্দী করে নিয়েছে নিজেকে রুদ্রের এতো এতো অনুপ্রেরণা মূলক বাণী নিপার মনে সাহস জোগালেও আবার মিয়িয়ে যায়। রুদ্র বুঝতে পারছে এসব কে করেছে শুধু মূলবান প্রমাণের জন্য কিছু করতে পারছে না। এদিকে নিপাকেও এসব কিছু বলতে পারছে না। এসব শুনে কি রিয়াক্ট করবে সেটা ভেবেই আর কিছু বলে নি।
সকালে নীলিমা খাবার দিতে দিতে রুদ্রকে বলল

— রুদ্র আমার মনে হয় তুমি আর নিপা কিছু দিন বাইরে থেকে ঘুরে আসো তোমার বাবাও একথার সাথে একমত হয়েছে। তোমরা…
— কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না আম্মু
— এমন বললে তো হবে না নিপার মাইন্ড ফ্রেশ করা দরকার মেয়েটা সারাদিন রুম বন্দী হয়ে থাকে এমন ভাবে থাকলে তো ও অসুস্থ হয়ে যাবে মেয়েটা। যা যাচ্ছে ওর ওপর দিয়ে এইটুকু বয়সে এতোগুলো ধাক্কা…
কথাগুলো বলে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো নীলিমা। রুদ্র কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল

— কোথায় যাবো?
— সিলেটে যাও ওখানে দেখার অনেক কিছুই আছে।
— কবে যাবো?
— সেটা তোমরা ডিসাইট করে নাও?
— নিপা যেতে রাজি হবে না তো…
— রাজি করাবে তুমি…
— আসছি আমি দেরি হয়ে যাচ্ছে

রুদ্র রাতে ফিরে এসে নিপাকে বলল
— নিপা আমরা বেড়াতে যাচ্ছি সব গুচ্ছিয়ে নিও
— আপনার কি মনে হয় আমি ঘুরতে যাওয়ার মুডে আছি?
— তাহলে এভাবে কতদিন থাকবে? মানসিক রুগী হয়ে যাচ্ছো তুমি
রুদ্রের কথায় নিপা তেমন রিয়াক্ট করলো না উল্টে শান্ত কণ্ঠে বলল
— আমি না অভ্র আর হৃদির কাছে যেতে চাই

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ৮

নিপার কথা শুনে রুদ্রের মনে ভয় জমলো নিপাকে হারিয়ে ফেলার রুদ্র নিপার বাহু ঝাকিয়ে বলল
— কি বলছ এগুলো? পাগল হয়ে গেছ তুমি? তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না ম*রে যাবো বুঝ না তুমি?
কথাগুলো বলে রুদ্র নিপাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। নিপা হকচকিয়ে গেল এতো বড় ছেলে কি-না কাঁদছে তাও কি-না তার ম*রার কথা শুনে? এটা কি তাহলে ভালোবাসা? নাকি মায়া? মায়া মানেই তো ভালোবাসা। আর ভালোবাসা মানেই মায়া। না-কি সবটা অভিনয়?

ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ১০