নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ১৮

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ১৮
Mousumi Akter

প্রান্তিক রজনীকে কে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এল। বাড়ির গেইটে বসে আছে প্রিয়তা,আঞ্জমান,মাহবুব,শ্রাবন, অন্ত। প্রান্তিক কে ফিরতে দেখেই সবাই হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। বাইক স্ট্যান্ড করতেই রজনী বাইক থেকে নামল। রজনীকে দেখে শ্রাবন আর অন্ত দু’জনেই হেসে দিল। শ্রাবন এগিয়ে গিয়ে বলল, ” ভাবি আসসালালামু আলাইকুম।”
অন্ত ও বলল, ” ভাবি আসসালামু আলাইকুম।”

রজনী দুজনের দিকেই রাগি চোখে তাকাল।আঞ্জুমান,মাহবুব, প্রিয়তা সবাই অবাক।প্রান্তিক শ্রাবন কে ইশারা দিয়ে বুঝাল বাড়ির সবাইকে বলতে।বলেই সদর দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল।মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। চোখ মুখে লজ্জার আভা প্রান্তিকের।শ্রাবন বলল,
“আন্টি এই সেই মেয়ে ভাই যার জন্য পা’গ’ল হয়ে গিয়েছে।”
মাহবুব আর আঞ্জিমান বেশ অবাক হল। এই সেই মেয়ে।এই সেই সৈয়দ মুনসুর আলীর মেয়ে।মেয়েতো দেখতে সত্যি মাসআল্লাহ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

প্রিয়তা লাফিয়ে উঠে বলল,” এই সেই মেয়ে যাকে ভাইয়ার জন্য দেখেছিলাম। আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড যাকে ভাবি বানাতে চেয়েছিলাম।উফফ আমার দোয়া এভাবে কবুল হল কীভাবে?”
রজনীর ভীষণ লজ্জা করছে। সবাই তার দিকে কি বিশ্রি ভাবে তাকাচ্ছে।এত লজ্জা সে আগে পায়নি।মাহবুব বলল, ‘ছেলের বউকে কিছু দিয়ে বরণ করব না?’

আঞ্জুমান সাথে সাথে নিজের গলার বড় হার খুলল রজনীকে পরানোর জন্য। কিন্তু রজনী বাঁধা দিয়ে বলল, ” প্লিজ আন্টি কিছু করলে আমার মা বাবার অনুমতি নিয়েই করবেন।আমি এটা নিতে পারব না।বেয়াদবি মাফ করবেন।আমি এখানে শুধু প্রিয়তার বন্ধু হিসাবেই এসছি।”
বুঝতে পারছি মা। তুমি একটু ও চিন্তা করোনা। এ বাড়িতে রিল্যাক্সে থাকতে পারবে তুমি।এই তোরা কেউ রজনীকে আর ভাবি ডাকিস না। তাহলে ওর আনইজি লাগবে।

অন্ত বলল, “প্রিয়তা তোমার একটা সুন্দরী ভাবি শ্রাবনের জন্য ও দেখো।”
প্রিয়তা রাগি চোখে তাকাল অন্তর দিকে।অন্ত বলল, ” আমাকে কি চোখ দিয়েই গিলে খে*তে চাও তুমি।।তুমি চাওনা আমরা মিঙ্গেল হই।প্রান্তিক ভাইয়ার জন্য তো এমনিই মেয়েরা ফিদা।আমাদের জন্য তুমি একটু ব্যবস্থা করো।”
” অন্ত ভাই আপনার জন্য ব্যবস্থা করতে পারি কিন্তু শ্রাবনের জন্য না বুঝলেন।”
“ভুল করছো তুমি মামাতো বোন ভুল করছো। একদিন বুঝবা।”
“কীসের ভুল আর কি বুঝব।!”
“আপনার সাথে কথা আছে আমার অন্ত ভাই।এইসব আজেবাজে কথা বলে আমার মাথা ঘুরাচ্ছেন আপনি।”
“কি কথা বলো।”

শ্রাবণের রা-গে সমস্ত শরীর টগবগ করছে।অন্ত কি একটু বেশী কথা বলছে না প্রিয়তার সাথে।
এইদিকে প্রিয়তা খুশিতে প্রায় পা-গ-ল। রজনিকে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে নাচ গান শুরু করল। এত আনন্দ প্রিয়তার আগে কখনো হয়নি। রজনীকে ধরে ধরে গান গাইছে আর নাচছে৷ প্রিয়তা বলল, “আমার জন্মদিনের বেষ্ট গিফট আজ পেয়ে গেছি আমি রজনী।”

রজনীর কোনো হেলদোল নেই। সে প্রান্তিক কে বুঝে উঠতে পারছেনা। এত মেয়ের সাথে সম্পর্ক অথচ তার জন্য সব মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে দু’বার ভাবছে না।উদ্দেশ্য কী প্রান্তিকের।
রজনীকে থম মেরে থাকতে দেখে প্রিয়তা বলল,, তুই এত অখুশি ক্যান রে রজনি। আমার ভাই এর বউ হবি তা খুশি না।”
“তুই যদি একাধিক নারীতে আসক্ত, মা-রা-মা-রি- করা কোনো ছেলের প্রপোজাল পাস খুশি হবি।”

প্রিয়তা রজনীকে খাটের উপর বুঝিয়ে বলল, ” ভাইয়া একাধিক নারীতে আসক্ত নয় পা-গ-লি।ড্যাশিং দেখতে ছেলেতো।লাইফে কেউ ছিলনা।এই মেয়ে সেই মেয়ে এসে গায়ে পড়ল।ভাইয়া দুই চারদিন কথা বলল এই যা।আর মা-রা-মা-রি কারণ ছাড়া করেনা।ট্রাস্ট মি!ভাইয়া যখন একবার বলেছে তোকে বিয়ে করবে দেখিস তোকে জীবন দিয়ে ভালবাসবে।তোর কল্পনার ও বাহিরে।”

“মানুষ কে এত বিশ্বাস করা ঠিক নয় প্রিয়তা।”
“শ্রাবণ কে দেখ,ওর ভালবাসায় ঘাটতি আছে।ও তো মা’রা’মা’রি করে।”
“ওভার কনফিডেন্স সামটাইমস কিল আস প্রিয়তা।”
এখন চল রেডি হতে হবে।শ্রাবণ একটা লাল শাড়ি প্রিয়তাকে দিয়ে প্রিয়তার রুমে পাঠিয়ে দিল।প্রিয়তা রুম থেকে বেরিয়ে গেল শ্রাবণের সাথে কথা বলতে। হঠাৎ রজনীর মনে হল কেউ একজন উঁকি দিয়ে তার কাপড় চেঞ্জ করা দেখছে।রজনী দেখছে দু’জোড়া কালো চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে।রজনী দ্রুত গায়ে কাপড় জড়িয়ে নিয়ে চিৎকার দিল। সেই চিৎকারে প্রিয়তা, শ্রাবণ, অন্ত, আঞ্জুমান, মাহবুব, প্রান্তিক সবাই এগিয়ে গেল। প্রিয়তা বলল, ” কি হয়েছে?”

” কেউ একজন ছিল, যে আমাকে দেখছিল।”
কথাটা প্রান্তিকের কানে যেতেই প্রান্তিকের শরীর দাউ দাউ করে উঠল।কেউ তার রজনী গন্ধ্যার শরীর দেখছিলো।প্রান্তিক ওয়ালের সাথে জোরে নিজের পা লা*থি মেরে বলল, “হুজ দ্যা বাস্টার্ড। ” কে ছিল।আমার রজনীগন্ধ্যার দিকে তাকিয়েছিলো। খোদার কসম আমি জিন্দা পুঁ*তে ফেলব এখনি। আমার রজনী গন্ধ্যার দিকে তাকাতে আমি।নিজেই ভয় যদি সুন্দর ফুল নষ্ট হয়ে যায়। কোন বাস্টার্ড ছিল এখানে।আমি আজই তার দুনিয়া দেখার শেষ দিন করে দিবো।
আঞ্জুমান বলল, ” মা তোমার ভুল হতে পারে।হতে পারে মনের ভ্রম।”

” না আমি নিজে দেখেছি।”
শ্রাবণ নিচে তাকিয়ে দেখল সিগায়ের ছাই।শ্রাবণ নিচু হয়ে বলল,
” ভাই কেউ ছিল এইখানে।সিগারেট এর ছাই।”
প্রান্তিক অবাক হয়ে বলল, ” সিগারেট তো আমি খাই।সিগারেটের ছাই কীভাবে আসবে।”
অন্ত বলল, ” তাহলে কি ভাই ডেকোরেশন এর কেউ।”

“”কু*ত্ত*র বাচ্চা সব গুলারে ডাক।” চোখ মুখ অগ্নিশিখার ন্যায় জ্বলছে প্রান্তিকের।এখনি এই পৃথিবীর সব লন্ডভন্ড করে ফেলবে।সে কল্পনাই করতে পারেনা রজনীর দিকে কেউ কুদৃষ্টি দিক।
ডেকোরেশন এর ছেলে গুলা এক এক করে আসল।প্রান্তিক কোনো কথা বার্তা না বলেই ডেকোরেশন এর ছেলেগুলোকে প্রচুর মা*র ধর করল।ছেলে গুলা বুঝতেও পারল না,” কেন মারল?”
মাহবুব, শ্রাবণ, অন্ত না আটকালে ওদের সবার ই জীবন শে*ষ হয়ে।
যেত।

প্রান্তিক আঙুল তুলে বলল, ” ও আমার বউ রজনীগন্ধ্যা। ওকে নিয়ে এই পৃথিবীতে কয়েকযুগ বেঁচে থাকতে চাই। তাই খু*ন করলাম না। আমি চাইনা আমার বউ কোনো খুনির সাথে সংসার করুক। কোনো কুত্তার বাচ্চারে যদি রজনীগন্ধ্যার দিকে তাকাতে দেখি পৃথিবী থেকে পুরুষ জাতিই বিলুপ্ত করে দিবো।
প্রান্তিক কে কোনো ভাবেই সামলানো যাচ্ছে না।
মাহবুব বলল, আমাদের বাড়িতে এত বড় জঘন্য ঘটনা কীভাবে ঘটল।
আঞ্জুমান বলছে, “মনে হচ্ছে রজনীর কোনো ভুল হচ্ছে।”

রজনীর চোখ ছলছল করছে। সে প্রান্তিকের দিকে সরল দৃষ্টিতে তাকাল।এর মানে আপনি অন্তত আমাকে বিশ্বাস করুন।আমি কোনো মিথ্যা বলছিনা। রজনির চোখের দৃষ্টিতে প্রান্তিক এমনিই নিজেকে হারিয়ে ফেলে।তাতে আজকের দৃষ্টি ছিল তাকে বিশ্বাস করানোর মত।প্রান্তিক একেবারেই ছারখার হয়ে গেল এই দৃষ্টিতে।

প্রিয়তা রজনীকে নিয়ে নিজের রুমে গেল।রজনীর বুক ধড়ফড় করছে। সে এটা কোথায় এসে পৌছালো।এখনি বাড়ি যেতে পারলে শান্তি পেত।এই বাড়িটা যে বেশ ভয়ংকর রজনী বুঝতে পারল।প্রিয়তা জন্মদিনের ড্রেস পরল।রজনী লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরল,শাড়িটা প্রান্তিক ই এনে দিয়েছে।অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরল। রজনীর থেকে কোনো ভাবেই চোখ সরানো যাচ্ছেনা।ডায়নিং এ মোটামুটি দশ বারো জনের আয়োজন। প্রিয়তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে প্রান্তিক,

রজনী,শ্রাবণ,অন্ত,সহ প্রান্তিকের কয়েকজন বন্ধু মিলে মোট ২০-২৫ জন মানুষ হয়ে গেল আস্তে আস্তে। প্রান্তিকের পরণে সাদা শার্ঠ কালো জিন্স,চোখে সানগ্লাস।সুদর্শন এক যবক। যাকে দেখেই প্রান্তিকের এক বন্ধুর বোন বার বার প্রান্তিকের পাশ ঘেষে দাঁড়াচ্ছে।কোনো এক সময় প্রান্তিকের সাথে ভাল কথা হত তার।কিন্তু প্রান্তিক সেদিকে খেয়াল দিচ্ছেনা।কেক কাটা পর্ব শেষ। অন্ত আর শ্রাবণ বলাবলি করছে আচ্ছা সিগারেট তো ভাই খায়।তাহলে কি কোনভাবে ভাই ভাবিকে দেখছিল।কথাটা রজনীর কানে যেতেই কেমন সন্দেহপ্রবন হয়ে উঠল।

তাইত।সিগারেট তো প্রান্তিক অ খায়।ছিঃ ওর চরিত্র এত খারাপ। প্রিয়তার পরণে শ্রাবণের দেওয়া পোশাক।সবাই সবাইকে কেক খাইয়ে দিচ্ছে।প্রান্তিকের বন্ধুর বোন প্রান্তিকের গালে কেকে মাখিয়ে দিল। সাথে সাথে প্রান্তুিক ভ*য়ে রজনীর দিকে তাকাল। অন্য মেয়ে প্রান্তিকের সসংস্পর্শে আসলেই প্রান্তিক ভ*য় পাচ্ছে। রজনী তাকে ভুল বুঝছে নাতো।প্রান্তিকের সেই ভ*য় সত্য হল।রজনী অদ্ভুত ভাবে তাকাল প্রান্তিকের দিকে।

প্রান্তিক গালের কেক মুছতে মুছতে বলল, ‘ ধ্যাৎ শালী আমি কি তোর জামাই লাগি।অন্যর জামাই এর গালে কেক মেখে ঢলাঢলি। আমার কাছ থেকে ৫০ হাত দূরে সর এখন যদি মুখ থেকে চামড়া তুলেও ফেলু ফেলি আমার বউ এই গাল আর স্পর্শ ও করবেনা।ভেবেছিলাম বউ এর সামনে মুখ নিয়ে গিয়ে বলব, ” সুইটহার্ট তোমার পবিত্র হাতের একটু আলত স্পর্শ দাও আমার গালে তার পিন্ডি চটকায় দিছে এই শালী।বউ নিয়ে চাঁদে জমি না কিনলে আমার সংসার টিকবেনা।”

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ১৭

“বিয়ের আগেই এত উতলা, এত ভ*য় পাও বউকে।”
“ইয়েস মাই ওয়াইফ মাই লাইফ।তাই লাইফ বাঁচাতে ওয়াইফ কে ভ*য় পেতেই হবে।”
এরই মাঝে কেউ একজন রজনীর পেটে হাতের আঙুল দিয়ে স্লাইড করছে।

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ১৯